Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - Md. Siddiqul Alam (Reza)

Pages: 1 2 [3] 4 5 ... 13
31
প্রশ্ন : অজু করে মসজিদে যাওয়ার সময় খারাপ ছবিযুক্ত পোস্টার চোখে পড়লে বা কোনো সচিত্র পত্রিকা দেখলে কি অজু ভেঙে যায়?
আলী আহাদ, করিমগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ।
উত্তর : অজু ভাঙার সুনির্দিষ্ট কারণগুলো আপনি কোনো আলেম বা ইমামের নিকট থেকে জেনে নিতে চেষ্টা করুন। কোনো দৃশ্য বা ছবি দেখলে অজু ভঙ্গ হয় না। খারাপ ছবিযুক্ত পোস্টার বা সচিত্র পত্রিকা চোখে পড়লেই অজুু ভেঙে যায় না।
প্রশ্ন : রাজধানী ঢাকার ট্রাফিক সিগন্যালে যে সমস্ত ভিক্ষুক হাত পাতে, তাদের ভিক্ষা দেয়া ঠিক কি না? কারণ শুনেছি এদের ভিক্ষা শেষে চাঁদাবাজ ও গডফাদাররা নিয়ে যায়। তা ছাড়া অনেক ভিক্ষুক নাকি বেশ পয়সাওয়ালা। আমাদের চেয়েও ধনী। এ বিষয়টি বিস্তারিত বলবেন।
রুবাইয়া, উত্তরা, ঢাকা।
উত্তর : ভিক্ষুককে ভিক্ষা দেয়া শরিয়ত এসব কারণেই নিরুৎসাহিত করে থাকে। জাকাত-ফিতরা দেয়ার সময় প্রাপক-এর যোগ্য কি না, তা জেনেশুনে দেয়া ওয়াজিব। অন্যথায় জাকাত আদায় হয় না। সাধারণ দানের ব্যাপারেও প্রকাশ্য দরিদ্র, প্রতিবন্ধী, এতিম-বিধবা, অথর্ব ইত্যাদি দেখেই দেয়া উচিত। নিজের চেনা-জানা ভিক্ষুককে দান করা উত্তম। গ্রামে বা বিচ্ছিন্ন জায়গায় যেখানে টাকা পয়সার লেনদেন কম, সেখানকার ভিক্ষুককে দান করা উত্তম। রাজধানীর ট্রাফিক সিগন্যালে অস্থিরতার সময় দান করা সমীচীন নয়। এতে যে কোনো দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। যারা শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে তারা নিজেরাই হারাম কাজে লিপ্ত। তাদের দান করলে দাতার কোনো সওয়াবই হবে না। তা ছাড়া স্বল্প আয়ের মানুষ যে সামান্য দান-খয়রাত করেন খবর নিলে দেখা যাবে, একজন ভিক্ষুক তার চেয়ে বেশি আয় করে। এখানে ব্যাপারটি কেমন তা আপনি নিজেই চিন্তা করুন। আর পঙ্গু ভিখারি যদি সামান্য থাকা খাওয়ার বিনিময়ে কোনো চাঁদাবাজ গডফাদারের টাকা কামানোর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে তখন এ ধরনের ব্যবসা নির্মূল করার জন্যই যত্রতত্র দান না করা উচিৎ। কোনোকিছুই না জেনে দৃশ্যত একজন অভাবীকে সাধারণ দান করলে আল্লাহ অবশ্যই সওয়াব দেবেন। তবে উপরে আলোচিত প্রশ্ন যেখানে থাকবে, সেখানে বুঝেশুনে দান করাই দাতার কর্তব্য।
-আল্লামা মুফতী উবায়দুর রহমান খান নদভী

32
তারা মিথ্যা শ্রবণে অত্যন্ত আগ্রহশীল এবং অবৈধ ভক্ষণে অত্যন্ত আসক্ত। তারা যদি তোমার নিকট আসে তবে তাদেরকে বিচার নিষ্পত্তি কর না, অথবা তাদেরকে উপেক্ষা কর না। তুমি যদি তাদেরকে উপেক্ষা কর তবে তারা তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আর যদি বিচার নিষ্পত্তি কর তবে তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার কর; নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালবাসেন।সূরা মায়েদা : আয়াত ৪২

33
বাংলাদেশসহ পৃথিবীব্যাপি করোনাভাইরাস মহামারী চলমান। এমন মহামারীতে প্রিয়নবী মুহাম্মদ সা. কি বলেছেন, আসুন তা থেকে একখানা হাদিস জেনে নিই।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে কোনো ব্যক্তি মহামারীর সময় নিজেকে ঘরে রুদ্ধ রাখবে ধৈর্যসহকারে, সওয়াবের আশায় এবং এই বিশ্বাস নিয়ে যে, আল্লাহ তার ভাগ্যে যা লিখেছেন এর বাইরে কিছুই ঘটবে না, সে শহীদের মর্যাদা ও বিনিময় লাভ করবে।''
বুখারী শরীফের শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকার হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি এই হাদীসের ব্যাখ্যায় লেখেন, ধৈর্য সহকারে, সওয়াবের আশায় ও আল্লাহর উপর ভরসা- এই তিনটি বিষয় ধারণ করে যে ব্যক্তি মহামারীর সময় ঘরে থাকবে, তিনি শহীদের মর্যাদা পাবেন। মহামারীতে তিনি মারা যান অথবা না-ই মারা যান।
-ফতহুল বারী শরহে বুখারী, ১৯৪/১০।

34
এক আল্লাহকে যারা বিশ্বাস করে, যারা মুমিন, যারা সঠিক পথের অনুসারী; তারা তো কিছুতেই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে না। হযরত ইবরাহিম (আ.) ও হযরত ইয়াকুব (আ.) ছিলেন পার্থিব বিপদের শিকার। একজন সন্তানহীন অবস্থায় পুরো জীবন কাটিয়ে বার্ধক্যে পৌঁছে গেছেন, আরেকজন এক সন্তানের শোকেই যখন পাথর হওয়ার অবস্থা, তখন হারালেন আরেক সন্তান! তবুও তাঁরা আল্লাহর অসীম কুদরতের কাছে আশাবাদী ছিলেন। হতাশা তাদের স্পর্শ করতে পারেনি।

পরিশেষে তাঁরা উভয়েই এই পৃথিবীতে থেকেই এর ফল ভোগ করে গেছেন। মুমিনের শান এমনই হওয়া উচিত। যতকাল বেঁচে থাকবে, আল্লাহর রহমতের কাছে আশাবাদী হয়েই সে বেঁচে থাকবে। সাধ্যে যতটুকু কুলায়, চেষ্টা করে যাবে। একবারের চেষ্টা ব্যর্থ হলে আবার করবে। বারবার করবে। কবি যেমনটি বলেছেন : ‘পারিব না এ কথাটি বলিও না আর/ একবার না পারিলে দেখ শতবার।’
হযরত ইয়াকুব (আ.) দুই সন্তান হারিয়ে চরম সঙ্কটের মুহূর্তেও ছেলেদের বলছেন, তোমরা গিয়ে ইউসুফ ও তার ভাইয়ের সন্ধান করো! অর্থাৎ তিনি নিজেও আশাবাদী, আশা পোষণ করছেন। অন্যদের মনেও আশার সঞ্চার করতে চাচ্ছেন।

বিখ্যাত সাহাবি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.), নবীজী সা. তাকে বলেছেন, ‘হাবরু হাযিহিল উম্মাহ’- এই উম্মতের বিদ্বান ব্যক্তি। তিনি বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে শিরক করা, আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া আর আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়া।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক : হাদিস ১৯৭০১)।

বিপদে পড়লে মানুষ যে কিভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এর কিছু বর্ণনা পবিত্র কোরআনেও আছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমি মানুষকে যখন কোনো নিয়ামত দেই তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও পাশ কাটিয়ে যায়। আর যদি কোনো অনিষ্ট তাকে স্পর্শ করে তাহলে সে সম্পূর্ণ হতাশ হয়ে পড়ে!’ (সূরা বনী ইসরাঈল : ৮৩)।
নানা কারণেই মানুষ হতাশায় আক্রান্ত হতে পারে। বিপদে যদি কেউ ধৈর্য ধারণ করতে না পারে তখন দেখা যায়- সামান্য সঙ্কটেই সে ভেঙে পড়ে। কখনো হতাশাগ্রস্তদের সঙ্গও আরেকজনকে হতাশ করে দেয়। আরবিতে প্রবাদ আছে- ‘মানুষ তার বন্ধুর আদর্শই গ্রহণ করে থাকে।’ এটাই স্বাভাবিকতা। তাই কেউ যদি হতাশাগ্রস্তদের সঙ্গে ওঠাবসা করে, তাহলে এই হতাশায় একসময় সেও আক্রান্ত হবেই। কখনো আবার প্রত্যাশার পাহাড়ও মানুষকে হতাশ করে।

নিজের জীবন নিয়ে কিংবা জীবনের কোনো দিক নিয়ে যখন কেউ নিজ সামর্থ্যরে বিবেচনা না করে অনেক উঁচু স্বপ্ন দেখতে থাকে, এর পরিণতিতেও সে হতাশাগ্রস্ত হতে পারে। একের পর এক যখন আশাভঙ্গ হতে থাকে, তখন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে সে। আবার এমনও হয়- আকস্মিক কোনো বিপদ কাউকে এতটাই ঝাঁকুনি দেয়, যার ফলে সে আর মাথা সোজা করে সামনে এগিয়ে চলার হিম্মত করতে পারে না। পরিণামে কেবলই হতাশা।

হতাশা যে কেবল পার্থিব বিষয়াদিকেই আক্রান্ত করে এমন নয়, দ্বীনি ও পরকালীন বিষয়েও মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়। কারও যখন পাপের পরিমাণ বেশি থাকে, সারাদিন যখন কেউ বড় বড় পাপে ডুবে থাকে, যখন নিজেও পাপ করে, অন্যকেও পাপের দিকে ডাকে। মোটকথা, দিনের পর দিন মাসের পর মাস ধরে কেউ যখন কেবলই পাপই করে চলে, এমতাবস্থায় কেউ যদি দয়াময় প্রভুকে স্মরণ করতে চায়, তখন একরাশ হতাশা তাকে ঘিরে ধরতে পারে- আমার যে এত এত পাপ, আমারও কি এখান থেকে মুক্তি সম্ভব?

গোনাহের পঙ্কিলতা থেকে পরিচ্ছন্ন হওয়ার সম্ভাবনা যতটুকু থাকে, তাও এ হতাশার আঘাতে শেষ হয়ে যায়। আবার এমন গোনাহগার কাউকে দেখে দ্বীনদার লোকেরাও অনেক সময় হতাশ হয়ে পড়ে- একে মনে হয় আর ভালো পথে আনা যাবে না! কথা কী, এ উভয় হতাশাই আল্লাহ তায়ালার রহমত সম্পর্কে অজ্ঞতার ফল। আল্লাহর রহমত যখন ভাগ্যে জোটে, তখন তো ইসলামের চরম দুশমনও মুহূর্তের ব্যবধানে অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হয়।

https://www.dailyinqilab.com/article

35
গোটা বিশ্ব এখন কাঁপছে করোনাভাইরাসের প্রকোপে। চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস মহামারী রূপ নিয়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে বিশ্বজুড়ে। মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে ইউরোপের দেশ ইতালি, স্পেন ও ফ্রান্সকে। আমেরিকায়ও চালাচ্ছে ধ্বংসযজ্ঞ। শিগগিরই মৃতের সংখ্যার শীর্ষে উঠবে আমেরিকা।

প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের  চিকিৎসায় এখনও কার্যকর ওষুধ বা ভ্যাকসিন মেলেনি। তবে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে, বিভিন্ন ট্রায়াল চলছে।

সম্প্রতি অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির দিয়ে ক্লিনিকাল ট্রায়াল করা হয়েছে। ট্রায়ালের প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গেছে, রেমডেসিভির ওষুধে মারাত্মকভাবে অসুস্থ কোভিড -১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসা করা হয়। এতে ৬৮ শতাংশ রোগীর অবস্থার  উন্নতি হয়েছে, ১৫ শতাংশে অবস্থা খারাপ হয়েছে। আর ১৩ শতাংশ মারা গেছেন।
এক কথায় বলা যায়, ম্যাজিকের মতো কাজ করছে এই ওষুধ। অ্যান্টি-ভাইরাল ওই ওষুধ ‘রেমডেসিভিরে’ দুই তৃতীয়াংশ রোগীই সুস্থ হয়েছেন।

নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এর এক প্রতিবেদনে  এ কথা বলা হয়েছে।

তবে এই গবেষণার কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলেও জানানো হয় এই প্রতিবেদনে।

শুক্রবার রিপোর্টে জানা গেছে, পরীক্ষার ফলাফল ‘পরামর্শ দেয় যে গুরুতর কোভিড -১৯ এর রোগীদের ক্ষেত্রে রেমডেসিভির ক্লিনিকাল সুবিধা পেতে পারে।’

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গুরুতর কোভিড -১৯ এর ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে যারা রেমডেসিভির দিয়ে চিকিৎসা করেছিলেন, তাদের মধ্যে (ক্লিনিকাল) উন্নতি দেখা গেছে। ৫৩ রোগীর মধ্যে ৩৬ জন বা ৬৮ শতাংশ সুস্থ হয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কার্যকারিতা পরিমাপের জন্য রেমডেসিভির থেরাপির চলমান প্রক্রিয়া এলোমেলো। এতে প্লাসেবো নিয়ন্ত্রিত ট্রায়ালগুলোর প্রয়োজন হবে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই পরীক্ষায় ৮ রোগী বা ১৫ শতাংশের অবস্থা খারাপ হয়েছে। আর ৭ রোগী বা ১৩ শতাংশ মারা গেছেন।

গিলিয়েড সায়েন্সেসের পৃষ্ঠপোষকতায় এই পরীক্ষাটি চালানো হয়েছে। এটা দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২২ জন, ইউরোপ বা কানাডায় ২২ জন এবং জাপানে ৯জন রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছিল। এতে ভেন্টিলেটরের ব্যবহার বা পরিপূরক অক্সিজেন গ্রহণ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রিমডেসিভির একটি ব্রড-স্পেকট্রাম অ্যান্টি-ভাইরাল ড্রাগ, যা ইবোলা, সার্স এবং এমইআরএস এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। সূত্র: স্পূটনিক

বিডি প্রতিদিন/কালাম

36
বিশ্বব্যাপী মহামারী আকার ধারণ করেছে করোনাভাইরাস। প্রতিদিন নতুন করে হাজারো মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। এই ভাইরাস থামানোর মতো নেই কোনো ভ্যাকসিন কিংবা দাওয়াই এখন পর্যন্ত নেই। তাই রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রগুলি নির্দিষ্ট উপায়ে মুখে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু গ্লাভস কি কোনো সুরক্ষা দেয়?

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এনপিআর-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশেষজ্ঞদের মতে গ্লাভস পরা অর্থবহ না। বরং খালি হাত ব্যবহার করে ভালোমতো ধুয়ে ফেলাই শ্রেয়।

ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোর মেডিসিন হাসপাতালের এপিডেমিওলজিস্ট এবং সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এমিলি ল্যান্ডন বলেন, ‘মানুষের ত্বক হাইড্রোফোবিক আনরণের মতো দুর্দান্ত। যার অর্থ এটি অনেকটা মোমের মতো যা আর্দ্রতা প্রতিরোধ করে।’

‘অর্থাৎ আপনি যখন কোনো জিনিস স্পর্শ করেন তখন তা আপনার হাতের সঙ্গে লেগে থাকে। পরে আপনি আপনার হাত ধুয়ে সেগুলো থেকে মুক্ত হতে পারেন’, তিনি যোগ করেন।

ডা. এমিলি ল্যান্ডন বলেন, ‘অন্যদিকে, গ্লাভস পরা আপনার জন্য অস্বাস্থ্যকর হতে পারে। কারণ আপনি হাত ধোয়ার পরিবর্তে নোংরা গ্লাভস বারবার পরে চলেছেন। গ্লাভসগুলি কেবল তখনই কার্যকর যখন আপনি এগুলি সঠিক উপায়ে এবং অর্থবহ উপায়ে ব্যবহার করবেন।’

যেমন হাসপাতালগুলোতে গ্লাভস ব্যবহার করা হয় নির্দিষ্ট উদ্দেশে এবং পরে তা ফেলে দেওয়া হয়। ডা. ল্যান্ডন বলেন, ‘আমরা যখন স্যাঁতসেঁতে বা দূষিত কোনো জিনিসকে স্পর্শ করি তখন গ্লাভস ব্যাবহার করি। এরপর সঙ্গে সঙ্গে আমরা তা খুলে ফেলে দেই। পরে আমরা ভালো করে হাত পরিষ্কার করি। কারণ ১০-১৫% সময়ে দেখা যায় দূষিত জিনিস ধরার পর গ্লাভস খুলে ফেললেও সেই দূষিত জিনিসে অনেকে আক্রান্ত হন।’

তাই গ্লাভস পরে থাকার চেয়ে হাত ধোয়া এবং হাতকে স্বাস্থ্যকর রাখা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ।


http://www.dainikamadershomoy.com

37
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আঘাত হেনেছে। গত সাড়ে তিন মাস ধরে বিশ্বব্যাপী এই ভাইরাসে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় এক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ লাখের বেশি। কিন্তু এতেই এতেই থেমে নেই এ ভাইরাসের দৌরাত্ম্য।

গবেষকরা বলছেন, মানবদেহে প্রবেশের পর ভাইরাসটি দ্রুতগতিতে বিবর্তিত হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে তিন ধরনের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চলছে। গত বুধবার পিনাস সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় চাঞ্চল্যকর এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

প্রকাশিত ওই গবেষণার বরাতে দ্য ডেইলি মেইলের খবরে বলা হয়েছে, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা প্রায় আড়াই মাস ধরে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের জিনগত ইতিহাস নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন। এতে তারা কাছাকাছি পর্যায়ের কিন্তু তিনটি ভিন্ন ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ দেখতে পেয়েছেন। এদের টাইপ-এ, টাইপ-বি ও টাইপ-সি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে।

এই গবেষণা অনুসারে, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি হারে বিস্তার লাভ করছে টাইপ-বি ভাইরাস। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মূল ভাইরাস বা টাইপ-এ ভাইরাসটি বাদুড় থেকে পাঙ্গোলিনসের মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করেছে। তবে চীনে এই ভাইরাসের হার ছিল তুলনামূলক কম। বরং সেখানে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে টাইপ-বি ভাইরাসের সংক্রমণ। এই ভাইরাসটি ক্রিস্টমাসের মৌসুমে বিস্তার লাভ করেছিল।

গবেষণায় দেখা গেছে, টাইপ-এ ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি অস্ট্রেলিয়া এবং সর্বাধিক করোনা আক্রান্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। ইতিমধ্যে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখ ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে।

গবেষকরা বলছেন, করোনা আক্রান্ত মার্কিনিদের সংগৃহীত নমুনার দুই-তৃতীয়াংশের মধ্যে টাইপ-এ ভাইরাস পাওয়া গেছে।

ক্যামব্রিজের ম্যাকডোনাল্ড ইন্সটিটিউট অব আর্কিওলজিক্যাল রিসার্চের ফেলো ও প্রজননবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ড. পিটার ফরস্টার ও তার দল সার্স-কভ-২ ভাইরাসের প্রজনন ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেছেন।

তারা জানান, যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে টাইপ-বি ভাইরাস। সেখান থেকে সংগৃহীত নমুনার তিন-চতুর্থাংশের মধ্যেই এই ক্যাটাগরির ভাইরাস ধরা পড়েছে। এ ছাড়া সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসেও এই টাইপ-বি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা গেছে।

এদিকে, টাইপ-সি ভাইরাস বিবর্তিত হয়েছে টাইপ-বি থেকে। এটি সিঙ্গাপুর হয়ে ইউরোপে ছড়িয়েছে। বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, সার্স-কভ-২ নামের এই ভাইরাসটি মানবদেহের প্রতিরোধ ক্ষমতার বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকতে নিজের বিবর্তন ঘটাচ্ছে। স্থানভেদে সে বিবর্তন হচ্ছে ভিন্ন রকমের।

এই গবেষণায় হতভম্ব হয়ে গেছেন বিজ্ঞানীরাও। জানুয়ারির মধ্যেই টাইপ-এ ও টাইপ-বি উভয় ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণই বিদ্যমান ছিল। চীনে টাইপ-বি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেশি থাকলেও যুক্তরাজ্যের পশ্চিম উপকূলে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে টাইপ-এ ভাইরাসের সংক্রমণ।

গবেষণাটি বিস্তৃত পরিসরে করতে না পারায় এর কারণ সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি গবেষকরা। প্রাথমিকভাবে বিশ্বজুড়ে মাত্র ১৬০ জন আক্রান্তের নমুনার ওপর ভিত্তি করে এই গবেষণা করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তাতে যোগ করা হয় আরও এক হাজারের বেশি নমুনা।

http://www.dainikamadershomoy.com/

38
ইতিহাসের শিক্ষাই এই যে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না’—বহুল ব্যবহৃত এ কথাটা মনে রেখেই ত্রাসসঞ্চারী করোনাভাইরাস পৃথিবীকে যেভাবে বুঝিয়ে দিল, প্রকৃতির ওপর মানুষের অত্যাচারের ফল কী হতে পারে, কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গসহ জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আন্দোলনকারী হাজার হাজার কণ্ঠের আকুতি তা পারেনি। আমরা কেবল কোটি কোটি অর্থ ব্যয় করে নিয়মিত জলবায়ু সম্মেলন করেছি, জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেছি, বাস্তবায়ন হবে না জেনেও কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। পশ্চিমা ধনী দেশগুলোর বিলাসী জীবনের উপকরণ জোগাতে প্রকৃতিকে ধ্বংস করেছি, বায়ুমণ্ডলকে বিষিয়ে তুলেছি। আমরা কি এখন বুঝতে পারছি যানবাহন কম চলাচল করলে বা আকাশে বিমান কম ওড়াউড়ি করলে প্রকৃতি কত সুন্দর ও নির্মল হয়ে ওঠে?

সভ্যতার বিকাশ ও মানুষের ভোগবিলাসের জোগান দিতে আমরা প্রকৃতির ওপর অনেক অত্যাচার করেছি। সর্বংসহা ধরিত্রী এত দিন মুখ বুজে সব সহ্য করেছে। এবার যা ঘটছে, তা হচ্ছে প্রকৃতির প্রতিশোধ। প্রকৃতির কাছে আমরা কত অসহায়! এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার কেবল মানুষের নয়, পশু-পাখি, গাছপালা, নদী-সমুদ্র, বন উপবন, জীব-জন্তু সবারই সমান অধিকার আছে এ পৃথিবীতে আপন আপন নিয়মে বসবাস করার। এ সত্যটি কম আমরা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি না?


গোটা পৃথিবীর মানুষের মতো বাংলাদেশেও আমরা এখন বন্দী জীবন যাপন করছি। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, ইতিমধ্যে অনেকেই আমরা এমন জীবনে হাঁপিয়ে উঠেছি। আমরা জানি না, কত দিন এ অবস্থা চলবে। কেবল একটাই জানি, এভাবে থাকা ছাড়া বাঁচার উপায় নেই। হতাশার মাঝেও আমাদের আশা এ কৃষ্ণপক্ষের অবসান একদিন হবেই।

আমাদের এখন প্রধান করণীয় গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষদের রক্ষা করা। একা সরকারের পক্ষে এ বিরাট কাজ করা সম্ভব নয়। সমাজের শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফোনে আলাপ–আলোচনা করে নিজ নিজ এলাকায় সমন্বিত সহায়তা কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। ত্রাণ বিতরণেও নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। ত্রাণ বিতরণের ছবি কাগজে বা ফেসবুকে প্রকাশের লজ্জাজনক মানসিকতা পরিহার করতে হবে। যাঁরা গোপনে মানুষকে সাহায্য করেন, তাঁদের আমি নতমস্তকে কৃতজ্ঞতা জানাই।

আমাদের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে এমন মানুষেরাও আছেন, যাঁদের আশু আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। আমরা যদি নিজ নিজ সংগঠন থেকে এর তালিকা করে কেন্দ্রীয়ভাবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটকে জানাই, তবে একটা ব্যবস্থা করা যাবে। গোলাম কুদ্দুছ ইতিমধ্যে একটা তালিকা করে আসাদুজ্জামান নূরকে দিয়েছেন; নূর এ ব্যাপারে সমন্বয় করবেন।

সম্প্রতি পোশাকশিল্পের মালিকেরা হাজার হাজার কর্মীর সঙ্গে যে অমানবিক আচরণ করলেন, এর দায় কে নেবে? কোনো সমন্বয় ছাড়াই কেন এমন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো? শ্রমিকেরা এত কষ্ট করে কারাখানায় পৌঁছে দেখলেন, কারখানা বন্ধ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের ওই দিন মার্চ মাসের বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেত না? পোশাকশিল্পের মালিকেরা কী এমনই বিত্তহীন যে মাস দু–তিনেক তাঁরা কর্মচারীদের নিজেদের তহবিল থেকে বেতন দিতে পারেন না?

এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের অর্থনীতি চালু রাখার জন্য যে প্যাকেজগুলো ঘোষণা করেছেন, তা অত্যন্ত সুবিবেচনাপ্রসূত। সেখানেও কিন্তু সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন পোশাকশিল্পের মালিকেরা। এ প্যাকেজের টাকা যেন কেবল কর্মীদের বেতন দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়, তার জন্য কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা রাখতে হবে। দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত বলে পোশাকশিল্পের মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা সহ্যের সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে।

আবারও বলি, এ সংকট একদিন কাটবেই। পৃথিবী নির্মল হবে, পাপমুক্ত হবে। বাংলা নববর্ষের প্রাক্কালে আমরা গাইতে চাই:

‘তাপস নিঃশ্বাস বায়ে
মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে...
বৎসরের আবর্জনা
দূর হয়ে যাক যাক যাক...
এসো এসো...
এসো হে বৈশাখ...’

অমানিশা শেষে আবারও ভোর হবে জানি। আসবে নতুন পৃথিবী এক। নতুন সে পৃথিবীতেও মানুষ ঠিকই হেসে-খেলে-নেচে-গেয়ে উদযাপন করবে জীবনের জয়গান।

নববর্ষের আগাম শুভেচ্ছা।

https://www.prothomalo.com/opinion/article

39

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এখন ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা হলেন সারা দেশের স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাঁরা যথেষ্ট বীরত্বের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের সেবা–শুশ্রূষায় ইতিমধ্যে ৩৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, বেশি পরীক্ষার কারণেই প্রথমবারের মতো এক দিনে শতাধিক আক্রান্ত ব্যক্তির খোঁজ মিলেছে। দেশ ব্যাপকভাবে সংক্রমণের মুখোমুখি, তাই একে রুখে দিতে সব ক্ষেত্রে ‘যার যা কিছু আছে’ তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার কোনো বিকল্প নেই।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি এখন যে পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে, তাতে এর আরও সংক্রমণ ঠেকাতে এখন কী করণীয়, কী অগ্রাধিকার, সে বিষয়ে আমরা গত কয়েক দিনে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছি। নিচের পুরো আলোচনা প্রধানত তাঁদেরই মতামতের ভিত্তিতে।


আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ নিশ্চিত করেছেন যে মহামারিতে টেস্টের বিষয়টি খুব জরুরি নয়, লক্ষণ দেখে চিকিৎসকেরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন—সেটাই পথ। আর পরীক্ষায় নেগেটিভ মানেই শতভাগ ক্ষেত্রে নেগেটিভ নয়। পজিটিভ মানেও পজিটিভ নয়। যিনি আজ নেগেটিভ, তিনি কাল পজিটিভ হতে পারেন। তবে এমন ঘটনা অল্পই ঘটবে। এই ভয়াবহ ছোঁয়াচে রোগটি মানুষকে ভোগাবে যত বেশি, প্রাণ কাড়বে সেই তুলনায় অনেক কম মানুষের। ১০০ জন মানুষ আক্রান্ত হলে ৮০ জনেরই হয়তো কোনো ওষুধ লাগবে না। দিন কয়েক সর্দি, কাশি, জ্বর ইত্যাদিতে ভুগে সেরে উঠবেন। চিন্তা হলো বাকি ২০ ভাগ নিয়ে। বিশ্বব্যাপী করোনায় গড় মৃত্যুর হার এখনো পাঁচজনের নিচে।

২.

হাসপাতাল বা যেখানেই করোনার সেবা মিলবে, সেটা যেখানেই হোক, চিকিৎসক থাকলেই হলো। সেখানে আক্রান্ত মানুষ ছুটবে। সেই কারণে দেশের ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যকর্মী কারা, তার একটা তালিকা করা এখন জরুরি। দেশের আনাচকানাচে যত ওষুধের দোকান, প্যাথলজিক্যাল টেস্ট, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ এককথায়, যত ধরনের চিকিৎসা–সংশ্লিষ্ট জায়গা আছে, তার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সবার একটা প্রশিক্ষণ লাগবে। প্রত্যেককে পিপিই ও মাস্ক দিতে হবে। কারণ, আক্রান্ত মানুষ প্রথমেই এসব স্থাপনায় ছুটবে, সুতরাং এসব জায়গার কর্মীদের বড় ভূমিকা থাকবে।

সরাসরি চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক, নার্স ও আয়াদের (অ্যাটেনডেন্ট) মানসম্পন্ন পিপিই ও মাস্ক (এন-৯৫ বা সমতুল্য) লাগবে। কিন্তু বাদবাকি যাঁরা আছেন, তাঁদের সাধারণ সুরক্ষাসামগ্রী হলেই চলবে। তাঁরা দরকার হলে কাপড়ের তৈরি পিপিই ও মাস্ক পরবেন। প্রশিক্ষিত পরিচ্ছন্নতাকর্মী প্রতিদিন এটা ধুয়ে দেবেন। যাতে এটা তাঁরা বারবার ব্যবহার করতে পারেন।

৩.

যদি পিসিআর (বর্তমানে সরকারিভাবে চলমান ব্যবস্থা) দিয়ে আইইডিসিআরের মতামত সাপেক্ষে টেস্ট করানোর পরিস্থিতি না থাকে, সে ক্ষেত্রে দেশের অন্যান্য স্থানে নতুন খোলা সরকারি ল্যাবগুলোর পক্ষেও পেরে ওঠা কঠিন হবে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দাবি যথার্থ হলে রোগী শনাক্তে একটা বড় অগ্রগতি হবে। কিন্তু পিসিআরের মতো এই র‍্যাপিড টেস্টব্লটের সীমাবদ্ধতা থাকবে। বরং ফলস নেগেটিভের হার সরকারি টেস্টের চেয়ে এখানে আরও বেশি হতে পারে। আবার করোনা সংক্রমণের অন্তত শুরুর তিন দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দেহে কিট কাজই করবে না। এরপরও কম খরচে ও দ্রুততম সময়ে ফল জানার কারণে যে উপকার পাওয়া যাবে, সেটা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে লক্ষণ বা উপসর্গ দেখেই অভিজ্ঞ চিকিৎসকেরা যা বোঝার বুঝে যাবেন। উন্নত বিশ্বের কিট পিসিআর কিংবা গণস্বাস্থ্যের ডটব্লট যদি নেগেটিভও বলে লক্ষণ থাকে, তবে চিকিৎসককে করোনার ব্যবস্থাপত্রই দিতে হবে।

করোনা সংক্রমণের চিকিৎসা যেখানেই থাকবে, সেখানে সেবাপ্রার্থীর লাইন লম্বা হবে। সেখানকার পিপিই পরা গেটকিপারকে সিরিয়াল রক্ষায় ঘাম ঝরাতে হবে। সাধারণ নিয়মে চিকিৎসকেরা প্রথম দর্শনে লক্ষণ শোনেন, এরপর টেস্ট দেন। রোগী বা তাঁর আত্মীয়, এরপর ল্যাবে ছোটেন। পরে আরেক তারিখে টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে আসেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারি ও বেসরকারি সব ক্ষেত্রেই চিকিৎসা ও পরীক্ষার ক্ষেত্রে একটা সৃজনশীল ফিল্টারিং করার উদ্যোগ নিতে হবে এবং এটা সম্ভব। এতে ফ্রন্টলাইনে থাকা চিকিৎসকদের ওপর চাপ অনেকটাই কমবে।

দিন তিনেকের জ্বর ও কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট থাকা (কিছু ক্ষেত্রে ডায়রিয়া) হলো করোনার মূল উপসর্গ। এখন এমন লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিরা চিন্তিত হবেন। অন্য সময় হলে এসব অনেকেই উপেক্ষা করেন। অন্যান্য অসুস্থতার কারণেও উল্লিখিত লক্ষণ দেখা দিতে পারে। ফলে সাধারণ কিছু টেস্টের মাধ্যমেও চিকিৎসকেরা ক্ষেত্রবিশেষে সিদ্ধান্তে আসতে পারবেন। এসবের মধ্যে রয়েছে টোটাল ব্লাড কাউন্ট অ্যান্ড লিম্ফোসাইট লেভেল, লিভারের কার্যকারিতা, সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন (শরীরে জ্বলুনি বেশি হলে রক্তে প্রোটিনের মাত্রাও বেশি হবে), ফেরেটিং (আয়রন জটিলতা অনুধাবন) এবং ডি-ডাইমার (বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্টের কারণ নির্ণয়) করাবেন। চিকিৎসক যদি প্রথম চারটি উচ্চ মাত্রার পান, তাহলে তাকে বেশি সন্দেহ করবেন। এর সঙ্গে রোগী যদি বুকের এক্স-রে ও সিটি স্ক্যান রিপোর্ট নিয়ে আসতে পারেন, তাহলে প্রায় ১৬ আনাই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যেতে পারেন।

উল্লিখিত টেস্টগুলোর প্রায় সবটাই (সিটি বাদে) প্রতিটি উপজেলায় আছে। জেলাগুলোতে এর সবটাই ভালোভাবে আছে। সুতরাং সরকার ল্যাবের মালিকদের সঙ্গে বসে এ–সংক্রান্ত টেস্টের ফি কমিয়ে দিতে পারে। চিকিৎসকের সহকারীরা আগে রিপোর্ট দেখবেন এবং সেই অনুযায়ী তাঁরা সিরিয়ালের সমন্বয় করবেন। অবশ্য সম্ভব ক্ষেত্রে চিকিৎসক দেখিয়ে টেস্ট করানোই শ্রেয়।

৯ এপ্রিল ডব্লিউএইচও–সমর্থিত নতুন সরকারি নির্দেশনায় উল্লিখিত টেস্টগুলোরও উল্লেখ রয়েছে। ডিজিএইচএসডটগভডটবিডিতে ঢুকে ‘করোনা’তে ক্লিক করলে আপনি ৩৫ পৃষ্ঠার গাইডলাইন পাবেন। এতে প্রথমবারের মতো নির্দিষ্টভাবে করোনার ওষুধ হিসেবে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ও অ্যাজিথ্রোমাইসিনের নাম উল্লেখ করা আছে। এর সীমাবদ্ধতার কথাও অবশ্য বলা আছে। তবে দায়িত্বশীল একজন বললেন টেস্ট ও ওষুধ চিকিৎসকদের বিষয়। তাই তাঁরা ব্রিফ করেননি। এটা ভুল নীতি। পরিষ্কার বাংলায় কোথায় কত টাকায় টেস্ট ও ওষুধ মিলবে, তা মানুষকে ব্যাপকভাবে জানানো দরকার।

৪.

আগেই বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তিদের মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশের হাসপাতালে চিকিৎসা লাগে। কিছু ক্ষেত্রে রোগীকে আইসিইউতে রাখতে হয়। এই ব্যবস্থা বাংলাদেশে কতজন রোগীর জন্য করা যাবে, সেটা এক বড় প্রশ্ন। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেলে এ ক্ষেত্রে আমাদের যা সামর্থ্য, তা চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য হিসেবে বিবেচিত হবে। সাধারণভাবে ভেন্টিলেটর ও আইসিইউর সুবিধা আমাদের দেশে ব্যয়বহুল এবং সচ্ছলেরাই এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন। বর্তমান বাস্তবতায় আক্রান্তের সংখ্যা যেহেতু বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাই সেই বিবেচনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে জরুরি ভিত্তিতে কম খরচে নেগেটিভ ফ্লো রুম (যেখানে শুধু এক্সজস্ট ফ্যান দিয়ে দূষিত বাতাস বাইরে যাবে) তৈরি করা প্রয়োজন। আর লাগবে প্রচুর অক্সিজেন। হাসপাতালে আসা করোনা সংক্রমিত রোগীদের ৫ ভাগের আইসিইউ লাগবে। কিন্তু বাকি ১০ ভাগের দরকার পড়বে সিলিন্ডারে অক্সিজেন। সিলিন্ডারে আইসিইউ চলে না। সেন্ট্রাল এসি সিস্টেম লাগে। সুতরাং দেশের সর্বত্র অক্সিজেন পৌঁছাতে হবে। নেগেটিভ ফ্লো রুম এবং অক্সিজেন ছাড়া করোনা রোগীর সুচিকিৎসা অসম্ভব।

৫.

মরদেহ দাফন ও সৎকারের বিষয়ে সারা দেশে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের সমন্বয়ে প্রশিক্ষিত কর্মী দরকার। নারায়ণগঞ্জে একজন বেহালাবাদকের লাশ প্রায় ৯ ঘণ্টা রাস্তায় পড়ে থাকা, নরসিংদীতে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে দাফনে বাধাদানের ঘটনা সতর্ক হওয়ার জন্য যথেষ্ট। ইউএনডিপি ও আইসিআরসি শুধু ঢাকার জন্য আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের অনধিক ১০০ কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেবে। সারা দেশে মসজিদভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী গঠন করে তাঁদের প্রশিক্ষণ ও পিপিই দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে।

সর্বশেষে বলব, চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোবল আরও দৃঢ় করার উদ্যোগ নিতে হবে। বিমার মতো প্রণোদনা ছাড়াই একাত্তরে জাতি মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল। তবে করোনায় ত্রাণ দিতে গিয়ে আহত একজন সহকারী কমিশনারকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হয়েছে। সিলেট থেকে করোনায় আক্রান্ত একজন স্বনামধন্য চিকিৎসককে (সহকারী অধ্যাপক) আনা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই বলছেন, তিনি কমিটির সভাপতি। অথচ তাঁকে না জানিয়েই সিদ্ধান্ত হয়। এসবই গভীর সমন্বয় ও প্রস্তুতিহীনতার নির্দেশ করে। সরকারকে অবশ্যই এমন অবস্থা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে হবে এবং তা দ্রুতই করতে হবে।

মিজানুর রহমান খান: প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক
mrkhanbd@gmail.com

40
ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সবচেয়ে পুরোনো সদস্য সে, এ নিয়ে আমাদের গর্বিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। গণতন্ত্র যেমন সবাইকে কথা বলার সুযোগ দেয়, তেমনি অনেক ব্যবহারিক সুবিধাও দেয়। সে জন্য জিজ্ঞাসা করা সমীচীন, দেশ যখন ভয়াবহ স্বাস্থ্যসংকটের মুখে, তখন কি আমরা এই গণতন্ত্রের সদ্ব্যবহার করছি?

প্রথমে কিছুটা ইতিহাসের দ্বারস্থ হই। ব্রিটিশ রাজের অবসানের পর পর নতুন আসা গণতন্ত্র তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের অনেক ফল দিয়েছে। দুর্ভিক্ষের কথাই বলা যায়, যা কর্তৃত্বপরায়ণ ব্রিটিশ জমানায় কিছুদিন পরপর আবির্ভূত হতো, গণতান্ত্রিক ভারত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর হঠাৎ করেই তার অবসান হয়। ব্রিটিশ-ভারতের শেষ দুর্ভিক্ষ ছিল ১৯৪৩ সালের বাংলার মন্বন্তর। আমি তখন ছোট, তবু স্বাধীনতার অব্যবহিত আগের সেই স্মৃতি এখনো জাগরুক। এই দুর্ভিক্ষের মধ্য দিয়ে ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান হয়। এরপর ভারতে আর কখনো দুর্ভিক্ষ হয়নি। স্বাধীনতার পরপর যখন দুর্ভিক্ষ মাথা তোলার চেষ্টা করেছে, তখনই সেই মাথা ছেঁটে ফেলা হয়েছে।


এখন কথা হচ্ছে, এটা কীভাবে হলো? গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধের জোর প্রণোদনা দেয়। একদিকে থাকে নির্বাচন এবং অন্যদিকে গণ-আলোচনা। এই দুই কারণে সরকারকে দ্রুত মানুষের চাহিদা আমলে নিতে হয়। তবে শুধু নির্বাচনী ব্যবস্থা এটি নিশ্চিত করতে পারে না। গণতন্ত্র কখনোই শুধু অবাধ নির্বাচনের বিষয় নয়, আবার নির্বাচন যে সব সময় সময়মতো হয়, তা নয়। অনেক সময় এক নির্বাচন থেকে আরেক নির্বাচনের মধ্যে অনেক সময় বয়ে যায়। আবার কখনো কখনো তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক প্রাপ্তির উত্তেজনার কারণেও জনমত ভেসে যায়। উদাহরণ হিসেবে ১৯৮৩ সালের ব্রিটিশ নির্বাচনের কথা বলা যায়। ১৯৮২ সালের ফকল্যান্ড যুদ্ধের আগে প্রাক-নির্বাচনী সব জরিপে মার্গারেট থ্যাচার পিছিয়ে ছিলেন, কিন্তু যুদ্ধের কারণে তিনি অনেকটাই এগিয়ে যান এবং ১৯৮৩ সালের নির্বাচনে ভালোভাবে জিতে যান।

আবার সংসদীয় ব্যবস্থায় সাধারণ নির্বাচনের মানে হলো, সংসদের নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করা। ভোটের ব্যবস্থায় সংখ্যালঘুদের আগ্রহ বা অধিকারবিষয়ক আনুষ্ঠানিক বিধি নেই। এই পরিস্থিতিতে সব মানুষ যদি ব্যক্তিগত ইচ্ছানুসারে ভোট দেন, তাহলে দুর্ভিক্ষের ভুক্তভোগীদের বাঁচানোর ক্ষেত্রে উদ্ধারকর্তা হিসেবে নির্বাচন খুব একটা শক্তিশালী নয়। কারণ, দুর্ভিক্ষে খুব কমসংখ্যক মানুষই প্রকৃত অর্থে না খেয়ে থাকেন। তবে মুক্ত গণমাধ্যমের কল্যাণে এবং গণ-আলোচনার মধ্য দিয়ে অরক্ষিত দরিদ্র মানুষের দুর্দশা ও বিপদ গণপরিসরে ভালো প্রচারণা পায়। ফলে যে সরকার এই ধরনের বিপর্যয় ঘটতে দেয়, তার ভিত্তি নড়ে যায়। আবার সরকারে যাঁরা থাকেন, তাঁদেরও তো মানবিক বোধ ও সহানুভূতি থাকতে পারে; ফলে গণ-আলোচনায় যেসব বিষয় আলোচিত হয় বা যেসব তথ্য উঠে আসে, তাতে তাঁরাও সরাসরি প্রভাবিত হতে পারে।

দুর্ভিক্ষে কমসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হলেও গণ-আলোচনা ও মুক্ত গণমাধ্যমে প্রচারের কল্যাণে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী এ সম্পর্কে অবগত হতে পারে। এতে সরকারের ব্যবস্থা নিতে হতে পারে। এটা আবার দুইভাবে হতে পারে—প্রথমত, সরকারের সহানুভূতির কারণে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বিপদগ্রস্ত মানুষ সম্পর্কে জানতে পারে; দ্বিতীয়ত, সরকারের সহানুভূতির অভাবের কারণেও ব্যাপারটা ঘটতে পারে। জন স্টুয়ার্ট মিল তো গণতন্ত্রকে ‘আলোচনাভিত্তিক শাসনব্যবস্থা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এই তত্ত্বের আলোকে দুর্ভিক্ষের হুমকিতে থাকা মানুষেরা মুক্ত গণমাধ্যম ও অবাধ আলোচনার মধ্যে উদ্ধারকর্তা খুঁজে পেতে পারেন।

সামাজিক দুর্যোগ মোকাবিলা করা যুদ্ধের মতো নয়। যুদ্ধের সময় তো নেতা নিজ ক্ষমতাবলে ওপর থেকে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়, সেখানে আলোচনার জায়গা নেই। এর বিপরীতে সামাজিক দুর্যোগের সময় অংশগ্রহণমূলক শাসন ব্যবস্থা ও সচেতন গণ-আলোচনা দরকার। দুর্ভিক্ষের ভুক্তভোগীরা হয়তো তুলনামূলকভাবে সচ্ছল জনগোষ্ঠী থেকে সামাজিকভাবে পৃথক থাকেন, অন্যান্য সামাজিক দুর্যোগেও হয়তো তা-ই হয়। তবে গণ-আলোচনা শুনলে নীতিপ্রণেতারা অন্তত বুঝতে পারেন, তাঁদের কী করা দরকার। নেপোলিয়ন হয়তো শোনার চেয়ে নির্দেশ দিতে বেশি সিদ্ধহস্ত ছিলেন। এটা কিন্তু তাঁর সামরিক সফলতায় বাদ সাধতে পারেনি, রাশিয়া অভিযানের কথা বাদ দিলে। তবে সামাজিক দুর্যোগ মোকাবিলার সময় কথা শোনাটা খুবই প্রয়োজনীয়।

মহামারির সময়ও একই কথা প্রযোজ্য। এই সময়ে অধিক সচ্ছল মানুষেরা হয়তো রোগাক্রান্ত হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হন, যেখানে অন্যদের আবার এর সঙ্গে আরেকটি চিন্তাও করতে হয়: আয়-উপার্জন ঠিক রাখা (রোগ বা লকডাউনের মতো রোগ প্রতিরোধে নেওয়া পদক্ষেপে যা বিঘ্নিত হয়)। আর অভিবাসী শ্রমিকদের তো এই দুটির সঙ্গে ঘরে ফেরার চিন্তাও করতে হয়। একেক শ্রেণি একেক রকম ঝুঁকির মধ্যে থাকে, এদের সবার কথাই চিন্তা করতে হবে। অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকলে এই প্রক্রিয়া অনেকটাই সহজ হয়, বিশেষ করে যদি গণমাধ্যম মুক্ত ও গণ-আলোচনা অবাধ থাকে এবং সরকারের নীতিপ্রণেতারা মানুষের কথা ও আলোচনা শুনে সিদ্ধান্ত নেন।

কোভিড-১৯-এর সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার যে রোগের বিস্তার ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তা ঠিকই আছে। রোগের বিস্তার ঠেকানোর কৌশল হিসেবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার যে কৌশল ভারতীয় নীতিপ্রণেতারা নিয়েছেন, তা-ও ঠিক। সমস্যাটা হলো, রোগের বিস্তার ঠেকাতে এ রকম একমুখী নীতি নেওয়ার ফলে অন্যান্য নীতির কী ফল হতে পারে, আমরা তা ভাবি না। বিকল্প নীতির মধ্যে কোনোটি কোটি মানুষের জীবনে বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে, কোনোটি আবার মানুষের দুর্ভোগ ঠেকাতে পারে।

গরিব মানুষের মূল উদ্বেগ হচ্ছে কাজ ও আয় নিয়ে। সে কারণে এই দুটি হুমকির মুখে পড়লে সুরক্ষা দেওয়াটাই হচ্ছে নীতি প্রণয়নের মূল লক্ষ্য। এমনকি ক্ষুধা বা দুর্ভিক্ষের সঙ্গে অপর্যাপ্ত আয় ও গরিবদের খাদ্য কেনার সক্ষমতার অভাবের যে নৈমিত্তিক সম্পর্ক আছে, এই পরিপ্রেক্ষিতে সেটা খেয়াল রাখা উচিত। হঠাৎ করে সব অবরুদ্ধ করার ফলে লাখ লাখ শ্রমিকের আয়-উপার্জন বন্ধ হয়ে যায়। এতে কিছু মানুষ ভুখা থাকবে—এ আশঙ্কা অমূলক নয়। এমনকি স্বাধীন ব্যক্তি উদ্যোগের স্বর্গভূমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও বেকার ও গরিবদের সরাসরি টাকা দিচ্ছে ফেডারেল সরকার। ভর্তুকি দিচ্ছে। তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ রকম সামাজিক সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পেছনেও গণ-আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে, বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির পরামর্শও আছে।

ভারতে যদি গরিবদের বঞ্চনা থেকে রক্ষা করতে হয়, তাহলে তার অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবেই ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে কিছু কিছু সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া খুব কঠিন কিছু নয়: গরিবদের কল্যাণে আরও সরকারি ব্যয় বরাদ্দ, যেমন জাতীয় পরিসরে খাবার-দাবার দেওয়া এবং ফুড করপোরেশন অব ইন্ডিয়ার গোডাউনে অব্যবহৃত পড়ে থাকা ৬ কোটি টন চাল ও গম ব্যবহার। এ ছাড়া দুর্দশাগ্রস্ত অভিবাসী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে দেওয়া, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, অসুখ ও স্বাস্থ্যসেবার প্রতি নজর দেওয়া—এসবও অনেক চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার, যা কঠোরভাবে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার বদলে ভুক্তভোগীদের কথা সতর্কতার সঙ্গে শোনাটা দাবি করে।

সামাজিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সবার কথা শোনা সরকারের মূল কাজের অংশবিশেষ হয়ে যায়। সমস্যাটা ঠিক কী, ঠিক কোথায় সবচেয়ে বেশি আঘাত এসেছে, কীভাবে তা ভুক্তভোগীদের আক্রান্ত করে, এসব বিষয় শুনে বুঝতে হবে। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ না করে বা ভিন্নমতাবলম্বীদের হুমকি না দিয়ে গণ-আলোচনার মধ্য দিয়ে শাসনব্যবস্থা অনেকটাই উন্নত করা যায়। মহামারি সামাল দেওয়া যুদ্ধের মতো মনে হতে পারে, কিন্তু এটা সামাল দিতে আমাদের যুদ্ধের চেয়ে অনেক বড় কর্মযজ্ঞে নামতে হবে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে
অমর্ত্য সেন: অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ। থমাস ডব্লিউ ল্যান্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও দর্শনের অধ্যাপক।

অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন

41
নতুন করোনাভাইরাস সম্পর্কে যত জানব, তত নিরাপদ থাকব। শত্রুকে পরাজিত করতে হলে তাকে চিনতে হবে।

২০০২ সালে সার্স-করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়। সে সময় আক্রান্ত ৮ হাজার মানুষ শনাক্ত হয়েছিল। মারা গিয়েছিল ৮০০ মানুষ। মৃত্যুহার ছিল ১০ শতাংশ। ওই ভাইরাস বাদুড় থেকে প্রথমে সিবেট নামের ছোট্ট প্রাণীর দেহে যায়। সিবেট থেকে মানুষে।


২০১২ সালে মধ্যপ্রাচ্যে মার্স-করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়। এই ভাইরাস বাদুড় থেকে উটে গিয়েছিল। উট থেকে মানুষের শরীরে। আড়াই হাজার আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছিল। মারা গিয়েছিল ৮৫০ জন। মৃত্যুহার ছিল ৩৪ শতাংশ।

Lifebuoy Soap
২০১৯ সালে দেখা দিল নতুন ভাইরাস। এটিও বাদুড় থেকে প্রথমে কচ্ছপের মতো প্রাণী প্যাঙ্গোলিনে যায়। প্যাঙ্গোলিন থেকে এটা মানুষে আসে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মৃত্যুহার ৩ শতাংশ বলা হলেও তা বাড়িয়ে বলা হবে। কারণ, আক্রান্ত অনেকেই চিহ্নিত হচ্ছেন না। তবে মৃত্যুহার ১ বা ১.৫ শতাংশ ধরে নেওয়া যায়।

ছোট এই ভাইরাসের কাছে সবাই পরাজিত। সমস্যা হচ্ছে, এটি অতি দ্রুত ছড়ায়। মানুষের শরীরে ছাড়া এই ভাইরাস এক থেকে দুই দিন বাঁচতে পারে। এটা বাতাসে ছড়ায়। তবে হাঁচি-কাশির মাধ্যমে বেশি ছড়ায়। টেবিল, দরজার হাতল, মুঠোফোন, কম্পিউটারের কি-বোর্ড থেকেও তা মানুষে সংক্রমিত হতে পারে।

এখন কথা হলো, এই ভাইরাসের কাঠামো কেমন? চরিত্র কী? যদি এটা আমাদের না মারত, তাহলে এটা দেখে মনে হতো, আহা, এ তো ফুলের মতো বা এ তো কানের দুলের মতো।

ভাইরাসটির ওপর স্পাইক আছে। স্পাইক হচ্ছে এস প্রোটিন। আমাদের কোষে এসিই-২ প্রোটিন আছে। আমাদের এসিই-২ প্রোটিনকে সে রিসেপ্টর হিসেবে ব্যবহার করে। সেখানে একটির পর একটি স্পাইক লেগে যায়। এরপর তা আমাদের কোষে ঢোকে। এই স্পাইক ফিউরিন প্রোটিনকে বেশি পছন্দ করে। ফিউরিন প্রোটিন থাকে আমাদের শ্বাসতন্ত্রে, আমাদের ফুসফুসে। তাই এই ভাইরাস শ্বাসতন্ত্রে বাসা বাঁধে। অন্য ভাইরাস রক্ত বা অন্য কোথাও চলে যায়, কিন্তু করোনাভাইরাস ওখানেই থেকে যায়। এরপর সে আমাদের কোষের ভেতরে ঢুকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়।

আস্তে আস্তে ফুসফুস দুর্বল হয়, কার্যক্ষমতা হারায়। ফ্লুইড এসে ফুসফুসে জমা হয়। আমাদের জ্বর হয়, শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হয়। এর প্রভাব পড়ে হৃৎপিণ্ডে, যকৃতে, কিডনিতে। হয়তো ঢুকেছিল একটা ভাইরাস। পরে অসংখ্য কপি হয়ে তারপর বের হয়।

সাধারণভাবে এরা স্বাধীনভাবে এক থেকে দুই দিন বাঁচতে পারে। ওরা বাঁচে আসলে আমাদের শরীরে। এক শরীর থেকে অন্য শরীরে ছড়ায়। সুতরাং আমাদের দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি। দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুরসহ কিছু দেশ ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। অনেক দেশ ছড়িয়ে পড়ার কথা চিন্তাই করেনি, তাই নিয়ন্ত্রণের পথে যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রথম সংক্রমণ শুরু হয়। তারা গুরুত্ব দিয়েছিল, নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। কিন্তু নিউইয়র্ক শুরুতে গুরুত্ব দেয়নি। তারা মূল্য দিচ্ছে।

ভাইরাসটির সংক্রমণের ধারা-রেখার একটি হচ্ছে পিক (উচ্চ শিখর), অন্যটি হচ্ছে ফ্ল্যাট (সমতল)। ইতালি, ফ্রান্স পিকের উদাহরণ। আর ফ্ল্যাটের উদাহরণ হচ্ছে সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া। কিন্তু আমরা আমাদের রেখাটি জানি না, দেখতে পারছি না। আমাদের পরীক্ষা হচ্ছে সীমিত পর্যায়ে। এখন ‘সোশ্যাল ডিসটেন্সিং’ বা সামাজিক দূরত্বের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

কত দিন আমরা এই দূরত্ব বজায় রেখে চলব? আমরা জানি না সংক্রমণরেখা ফ্ল্যাট থাকবে বা পিকে উঠবে কি না। নাকি প্রাকৃতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে? আমাদের সবার কোভিড-১৯ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হবে কি না, তা-ও জানি না।

এখন নতুন যেসব ওষুধের কথা শোনা যাচ্ছে, সেগুলো খুব বেশি পরীক্ষিত নয়। অন্যদিকে ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে কোনো টিকা আশা করতে পারি না। এই মহামারি বজায় থাকাকালে টিকা পাব, এমন মনে হয় না।

একটি আলো দেখাচ্ছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং। এটি আরএনএ ভাইরাস। বিজ্ঞানীরা এমআরএনএ টিকা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। ভারতের একটি গবেষণা বলছে, এই অঞ্চলে ভাইরাসটি কম মারাত্মক হবে। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরাও কাজ শুরুর অপেক্ষায় আছেন।

র‍্যাপিড টেস্টের প্রসঙ্গ সামনে আসছে। এ নিয়ে আমার দুশ্চিন্তা আছে। এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন জরুরি। মাত্র একটি কিটের অনুমোদন আছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেই কিট যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যাবে না। ভারতে ১০টা ভিন্ন ধরনের র‍্যাপিড কিট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। গ্লোব বায়োটেক একটি পিসিআর তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে, যা দ্রুত ফলাফল জানাবে।

যাহোক, আপাতত ভাইরাস মারার জন্য সাবানই যথেষ্ট। সাবান ভাইরাসের ওপর থাকা লিপিড মেমব্রেন একটা একটা করে ভেঙে ফেলে, তাসের ঘরের মতো। এত বড় শত্রু অল্প পয়সার সাবানের কাছে পরাস্ত হচ্ছে। তাই বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার কথা বলা হচ্ছে।

মহামারি থেকে আমরা অনেক কিছু শিখব। আমরা একা কিছু করতে পারব না। সবাই মিলে সবার সঙ্গে কাজ করতে হবে। দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করতে হবে। স্বার্থপর হলে সমস্যার সমাধান হবে না।

https://www.prothomalo.com/bangladesh/article

42
বিভিন্ন প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি দূরারোগ্য ব্যধি কিংবা মহামারী থেকে একমাত্র আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়াটাই সর্বোত্তম পন্থা।

এমন পরিস্থিতিতে সব সময় এ দোয়াটি পড়ার অভ্যাস করা সমীচীন, যা রাসুল (সা) শিখিয়ে দিয়েছেন:

اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَ الْجُنُوْنِ وَ الْجُذَامِ وَمِنْ سَىِّءِ الْاَسْقَامِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাসি ওয়াল জুনুন
ওয়াল ঝুজাম ওয়া মিন সায়্যিল আসক্বাম।’
-সূনানে আবু দাউদ, সূনানে তিরমিজি

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমি শ্বেত রোগ থেকে আশ্রয় চাই। মাতাল হয়ে যাওয়া থেকে আশ্রয় চাই। কুষ্ঠু রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই। আর দূরারোগ্য ব্যাধি (যেগুলোর নাম জানিনা) থেকে আপনার আশ্রয় চাই।’

তিরমিজিতে এসেছে, আরও একটি দোয়া পড়তে বলেছেন রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামঃ

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ وَ الْاَدْوَاءِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ায়ি, ওয়াল আদওয়ায়ি।’

অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার কাছে খারাপ (নষ্ট-বাজে) চরিত্র, অন্যায় কাজ ও কুপ্রবৃত্তির অনিষ্টতা এবং বাজে অসুস্থতা ও নতুন সৃষ্ট রোগ বালাই থেকে আশ্রয় চাই।’ _সূনানে তিরমিজি

বিডি প্রতিদিন/কালাম

43
আল্লাহ চান বান্দা তাঁর কাছে দোয়া করুক। আল্লাহ বান্দার মনোবাঞ্ছা পূরণে উন্মুখ থাকেন। তবে সে দোয়ার সঙ্গে পবিত্রতার সম্পর্ক থাকতে হবে। বান্দার কোনো অপবিত্র দোয়া আল্লাহর কাছে কাম্য নয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ পূতপবিত্র এবং তিনি কেবল পবিত্র জিনিসই কবুল করেন। আর আল্লাহ মুমিনদের ওই বিষয়েরই হুকুম দিয়েছেন, নবী রসুলদের তিনি যে বিষয়গুলো সম্পর্কে হুকুম দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, হে রসুলগণ! পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং নেক কাজ করুন। তিনি বলেছেন, হে মুমিনগণ! তোমরা পবিত্র বস্তুসামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদের রিজিক হিসেবে দান করেছি। তারপর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দীর্ঘ সফর করেছে, তার মাথার কেশ অবিন্যস্ত, শরীরও ধূলিমলিন। সে আকাশের দিকে হাত উঠিয়ে বলছে, হে আমার রব! হে আমার রব! কিন্তু তার আহার্য হচ্ছে হারাম, পানীয় হারাম, পোশাকও হারাম। হারাম খেয়েই তার বয়োবৃদ্ধি ঘটেছে। তাই তার দোয়া কীভাবে কবুল হবে? মুসলিম। কোন কোন বান্দার দোয়া কবুল হয় এ বিষয়ে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বর্ণনা পাওয়া যায়। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, ‘পাঁচটি দোয়া রয়েছে, যেগুলো কবুল হয়- ১. মজলুমের দোয়া, যে পর্যন্ত সে প্রতিশোধ গ্রহণ না করে ২. হাজীর দোয়া, যে পর্যন্ত সে বাড়িতে ফিরে না আসে ৩. আল্লাহর পথের মুজাহিদের দোয়া, যে পর্যন্ত সে জিহাদ থেকে বসে না পড়ে ৪. অসুস্থ ব্যক্তির দোয়া, যে পর্যন্ত সে সেরে না ওঠে ৫. কোনো মুসলমান ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে অন্য মুসলমান ভাইয়ের দোয়া। তারপর তিনি বললেন, এগুলোর মধ্যে আবার সবচেয়ে দ্রুত কবুল হয় কোনো মুসলমান ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে কৃত দোয়াটি।’ বায়হাকি। এ হাদিসে এক মুসলমান যাতে অন্য মুসলমানের অনুপস্থিতিতে দোয়া করে সে ব্যাপারে উৎসাহ জোগানো হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিন ধরনের লোকের দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না- ১. রোজাদার যখন ইফতার করে ২. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া ৩. মজলুমের দোয়া। মজলুম ব্যক্তির দোয়াকে আল্লাহ মেঘমালার ওপর উঠিয়ে নেন এবং এজন্য আসমানের সব দরজা খুলে দেওয়া হয়। আল্লাহ বলেন, আমার ইজ্জতের কসম! আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব, যদিও তা কিছুকাল পরে হয়।’ তিরমিজি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বেশি বেশি দোয়া করার তৌফিক দিন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।


বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

44
‘করোনা’ভাইরাস কোনো জীবিত জীব নয়, তবে লিপিড (ফ্যাট)-এর সুরক্ষামূলক স্তর দ্বারা আচ্ছাদিত একটি প্রোটিন অণু (ডিএনএ/আরএনএ), যা যখন চোখ, নাক  বা মুখের মিউকোসার কোষ দ্বারা শোষিত হয়, তখন তাদের জিনগত কোড পরিবর্তন করে আরও আক্রমণাত্বক এবং বহুগুণ শক্তিশালী রূপ ধারণ করে। যেহেতু ভাইরাস কোনো জীব নয়, তবে একটি প্রোটিন অণু, তাই এটি হত্যা করা যায় না। বিচ্ছিন্নতার সময়টি এটি তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং যে ধরনের পদার্থের রয়েছে তার ওপর নির্ভর করে।

ভাইরাসটি খুব ভঙ্গুর :

এটি রক্ষা করে এমন একমাত্র জিনিসটি হলো চর্বিযুক্ত পাতলা বাইরের স্তর। যে কারণে কোনো সাবান বা ডিটারজেন্ট হলো সর্বোত্তম প্রতিকার, কারণ ফেনা চর্বিকে গলিয়ে দেয়। এ জন্য কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড হাত ধুলে প্রচুর ফেনা তৈরি হয়ে চর্বির আস্তর ভেঙে ফেলতে সহায়তা করে চর্বির দেয়াল বা স্তর দ্রবীভূত করার মাধ্যমে, প্রোটিনের অণু ছড়িয়ে যায় এবং এটি নিজে নিজেই ভেঙে যায়।
তাপে চর্বি গলে :  এ জন্য হাত, কাপড় এবং সমস্ত কিছুর জন্য ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে পানি ব্যবহার করা ভালো। তদতিরিক্ত, গরম পানি আরও ফেনা তোলে এবং এটি আরও কার্যকর হয়ে বাইরের চর্তোবির আস্তর গলিয়ে ফেলে।

* ৬৫% অ্যালকোহল বা অ্যালকোহলসহ যে কোনো মিশ্রণ চর্বি গলিয়ে ফেলে, বিশেষত ভাইরাসটির বহিরাগত লিপিড স্তর।

* ১ ভাগ ব্লিচ এবং ৫ ভাগ পানির সঙ্গে মিশ্রণ  ভাইরাসের প্রোটিন দ্রবীভূত করে, ফলে এটি ভিতরে থেকে ভাইরাসকে ভেঙে দেয়।

* অক্সিজেনযুক্ত পানি সাবান, অ্যালকোহল এবং ক্লোরিন, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড প্রোটিনকে দ্রবীভূত করে (তবে এটি আপনার ত্বকের ক্ষতি করতে পারে)।

* ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার মতো জীবিত জীব নয়; এন্টোবায়োটিকের সাহায্যে মেরে ফেলা যায় না।

* ব্যবহৃত বা অব্যবহৃত পোশাক, চাদর বা কাপড় ঝাঁকুনি বা ঝাড়া না দেওয়া ভালো। এটি ছিদ্রযুক্ত পৃষ্ঠে আটকানো অবস্থায় ৩ ঘণ্টা (ফ্যাব্রিক) ৪ ঘন্টা (তামাতে) আটকিয়ে থাকে ও নিজে নিজে এটি বিভাজিত হয়।  এছাড়া ২৪ ঘণ্টা (পিচবোর্ড), ৪২ ঘণ্টা (ধাতু) এবং ৭২ ঘণ্টা (প্লাস্টিক) থাকতে পারে। তবে ঝাঁকানোর কারণে ভাইরাসের অণুগুলো বাতাসে প্রায় ৩ ঘণ্টা ভাসতে থাকে এবং নাকের মধ্যে আটকে যেতে পারে।

* ভাইরাসের অণুগুলো বাহ্যিক ঠান্ডায় খুব স্থিতিশীল থাকে (ঘর এবং গাড়িগুলো)। স্থিতিশীল থাকতে বিশেষত অন্ধকার এ আর্দ্রতার প্রয়োজন হতে পারে। অতএব, dehumidified, শুষ্ক, উষ্ণ এবং উজ্জ্বল পরিবেশ এটি দ্রুত হ্রাস করতে পারে।

* UV আলোক হালকা ভাইরাস প্রোটিনকে ভেঙে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি মাস্ককে জীবাণুমুক্তকরণ এবং পুনরায় ব্যবহারে ব্যবহার করা যেতে পারে।  তবে UV কোলাজেন (যা প্রোটিন) ভেঙে দেয়, ত্বকের ক্যান্সার সৃষ্টি করে, সে জন্য সাবধান থাকা ভালো।

* ভাইরাস সুস্থ ত্বকের মধ্য দিয়ে যেতে পারে না।

* ভিনেগার কার্যকর নয় কারণ এটি চর্বির প্রতিরক্ষামূলক স্তরটি ভেঙে দেয় না।

* আলকোহল বিশেষ করে (৬৫%) ভাইরাসের চর্বির আস্তর ভেঙে দেয়।

* গরম পানি ও লবণ দিয়ে গড়গড়া করা বাঞ্ছনীয়। সঙ্গে Liesterine ব্যবহার করা যেতে পারে।

* সীমাবদ্ধ জায়গাতে ভাইরাসের ঘনত্ব বেশি হতে পারে। যত বেশি উন্মুক্ত বা প্রাকৃতিকভাবে বাতাস চলাচল করা হবে তত কম।

* বাথরুম ব্যবহার করার সময় এবং শ্লেষ্মা, খাবার, তালা, নক, সুইচ, রিমোট কন্ট্রোল, সেলফোন, ঘড়ি, কম্পিউটার, ডেস্ক, টিভি ইত্যাদি স্পর্শ করার আগে এবং পরে আপনার হাত ধুতে হবে।

* এগুলো ধোয়া থেকে আপনাকে হ্যান্ডস ড্রাই করতে হবে, কারণ অণুগুলো মাইক্রো ফাটলগুলোতে লুকিয়ে থাকতে পারে। ঘন হ্যান্ড ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে।

* নখ সংক্ষিপ্ত রাখুন যাতে ভাইরাসটি সেখানে লুকায় না। বর্তমান পরিস্থিতিতে সমিষ্টিগতভাবে বিশ্বের এই মহা ক্রান্তিলগ্নে সবাইকে শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে। যত দ্রুত  এর সংক্রমণ ঠেকাতে পারব তত তাড়াতাড়ি আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব। আমরা অপেক্ষায় সেই আলোকিত ভোরের ‘রবির’ যা বিশ্বের এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মুক্তি দিবে।

লেখক: ইনিটারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট, এভারকেয়ার (এ্যাপোলো) হসপিটাল, ঢাকা।

বিডি-প্রতিদিন/সিফাত আব্দুল্লাহ

45
কভিড-১৯ করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে হাত পরিষ্কার রাখায়। আর হাত পরিষ্কারের জন্য সাবান-পানি ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হয়। জেনে নিন হ্যান্ড স্যানিটাইজার কীভাবে ব্যবহার করে হাত জীবাণুমুক্ত রাখবেন:
 
• স্যানিটাইজার ব্যবহারের আগে হাত শুকিয়ে নেবেন
• হাতের তালুতে আধা চা চামচ স্যানিটাইজার নিন
• এবার দু’হাতের তালুতে ঘষুন
• আঙুলের মধ্যে এবং উলটো পিঠে ঘষুন
• দুই হাতের তালুতে ভালো করে ঘষুন
• আঙুলের পেছনেও ঘষুন
• স্যানিটাইজার ব্যবহারের পরে হাত ধোবেন না
 
প্রসঙ্গত, হ্যান্ড স্যানিটাইজার হাতের জীবানু ধ্বংস করে। তবে সবধরনের জীবানু ধ্বংসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার যথেষ্ট নয়। এজন্য সাবান-পানিই যথেষ্ট। আমেরিকার সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন হাতের জীবানু প্রতিরোধে সাবান-পানি দিয়েই হাত পরিষ্কারের ওপর অধিকতর গুরুত্বারোপ করেছে।
 
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

Pages: 1 2 [3] 4 5 ... 13