Daffodil International University

Entertainment & Discussions => Story, Article & Poetry => Topic started by: kekbabu on January 21, 2019, 04:56:26 PM

Title: গ্যাস সিলিন্ডারজনিত দুর্ঘটনা রোধ (কালের কণ্ঠ, ২১ জানুয়ারি, ২০১৯)
Post by: kekbabu on January 21, 2019, 04:56:26 PM
গ্যাস সিলিন্ডারজনিত দুর্ঘটনা রোধ
ড. কুদরাত-ই-খুদা বাবু
২১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০

পত্রিকার পাতা খুললে কিংবা টিভির পর্দায় চোখ রাখলে প্রায়ই দেখা যায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহতের খবরাখবর। আমাদের দেশের অনেক মানুষ রান্নার কাজে এই গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যা এলপিজি বা এলপি গ্যাস হিসেবে পরিচিত। লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি অথবা এলপি গ্যাস) অর্থাৎ চাপে শীতলীকৃত জ্বালানি গ্যাস। এসব নামে প্রোপেন বা বিউটেনকে বা এদের মিশ্রণকেও নির্দেশ করা হয়। এটি মূলত দাহ্য হাইড্রোকার্বন গ্যাসের মিশ্রণ এবং জ-ালানি হিসেবে রান্নার কাজে, গাড়িতে ও ভবনের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন কাজে সিএফসি গ্যাসের বিকল্প হিসেবে এলপিজি ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে বায়ুমণ্ডলের ওজোনস্তরের ক্ষয় রোধ করা যায়। এ ছাড়া যখন গাড়িতে এলপিজি ব্যবহার করা হয় তখন ‘অটো গ্যাস’ নামে পরিচিত হয়। ১৯১০ সালে আবিষ্কৃত হওয়ার পর ১৯১২ সালে এ গ্যাস বাণিজ্যিকরূপে উৎপাদন শুরু হয়। এটি জ-লে শেষ হলে কোনো অবশেষ থাকে না এবং সালফার নির্গত হয় না। এটি গ্যাসীয় হওয়ায় কোনো পানিদূষণ বা ভূমিদূষণ ঘটে না। এ গ্যাসের স্ফুটনাঙ্ক, কক্ষ তাপমাত্রার নিচে থাকে বিধায় দ্রুতই চাপমুক্ত হয়ে বাতাসে মিশে যায়। তাপ বেড়ে গিয়ে যাতে বিস্ফোরণ না হয় সে লক্ষ্যে স্টিল নির্মিত আধারে সর্বোচ্চ চাপ সহনের মাত্রা পূর্ণ করার বদলে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ পূর্ণ করা যায়। এলপিজি প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো নয়, বরং বাতাসের চেয়ে ভর বেশি হওয়ায় এটি নিচু স্থান ও বেইসমেন্টে জমে থাকতে পারে। এর বিপদগুলো হলো বাতাসের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ার পর আগুনের সংস্পর্শে জ-লে ওঠে এবং অক্সিজেনের স্থান দখল করে অক্সিজেনের অভাবে শ্বাস রোধ করতে পারে। অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য বিশ্বের অনেক দেশে রান্নার কাজে এলপিজি ব্যবহার করা হয় এবং জ-ালানির উৎস হিসেবে কোনো কোনো দেশে এটি চাহিদার প্রথমে থাকে। বাংলাদেশেও বিশেষ করে শহরাঞ্চলে এর ব্যবহার বেশ উল্লেখযোগ্য। বলা বাহুল্য, দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ কমে যাওয়ার কারণে সিলিন্ডারে বাজারজাত এলপি গ্যাসের চুলায় রান্নাবান্নার প্রচলন দিন দিন বেড়ে চলছে। শহরাঞ্চলের অনেক বাসাবাড়ি, হোটেল, রেস্তোরাঁসহ অনেক প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় রান্নার কাজে সিলিন্ডারের গ্যাস ব্যবহার করা হয়। বর্তমান যুগে গ্রামাঞ্চলের মানুষের আয় বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে অনেক পরিবারই এখন কাঠ, লতাপাতাসংবলিত জ-ালানি চুলার পরিবর্তে গ্যাসের চুলায় রান্না করছে, যা নিশ্চয় দেশের উন্নতি ও অগ্রগতির চি ডিগ্রি বহন করে। কিন্তু সিলিন্ডার গ্যাসের চুলা ব্যবহারে যে ঝুঁকি আছে এবং সেই ঝুঁকি এড়ানোর জন্য যে ধরনের সচেতনতার প্রয়োজন, তার ঘাটতি রয়েছে। ফলে আমাদের দেশে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে প্রায়ই মানুষ মারা যাচ্ছে, গুরুতরভাবে দগ্ধ হয়ে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারাচ্ছে। যারা গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করে, তাদের অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে অনেক সময় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনা রোধে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের কিছু নিয়ম-কানুন আছে, যা ব্যবহারকারীদের অবশ্যই মেনে চলা উচিত।

সিভিল ডিফেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সদ্য বিদায়ী ২০১৮ সালে দেশে গ্যাস দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৭৮টি, যা ২০১৭ সালের চেয়ে অনেক বেশি। ২০১৬ সালে দেশে গ্যাস দুর্ঘটনা ঘটে ১৩১টি। আর ২০১৫ সালে ৮০টি গ্যাস দুর্ঘটনা ঘটেছিল। বলার অপেক্ষা রাখে না, কারিগরি ত্রুটি, অসচেতনতা ও অসতর্কতার ফলে দেশে এ ধরনের গ্যাস দুর্ঘটনা ঘটছে এবং দিন দিন তা বেড়েই চলেছে, যা রীতিমতো উদ্বেগের বিষয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে বা নেবে বলে মনে হয় না। দেশে গ্যাস দুর্ঘটনা বা অগ্নিকাণ্ডের খবর পেলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেখানে ছুটে যান। কিন্তু একটি কথা সবারই জানা আছে, ‘Prevention is better than cure.’ অর্থাৎ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। দেশে এ ধরনের দুর্ঘটনা যেন না ঘটে, সে বিষয়ে যথাযথ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত জনস্বার্থে একটি রিটও করেছিলেন। সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুলও জারি করেন। প্রাকৃতিক গ্যাস বিতরণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে বিবাদীদের ব্যর্থতাকে কেন ‘আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত’ বলা হবে না এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল ওই রুলে। জ-ালানি বিভাগ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ করে একটি পরিপত্র জারি করেছে। ওই পরিপত্রে তিনটি ধাপে সতর্কতা অবলম্বনের উপায় বলে দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো—১. সিলিন্ডার রাখার জন্য নিরাপদ জায়গা নির্ধারণ করা; ২. রান্না শুরুর আগে ও শেষ হওয়ার পর গৃহীত সতর্কতা এবং সিলিন্ডার রাখার সতর্কতামূলক ব্যবস্থা; ৩. রেগুলেটরসহ সিলিন্ডারের খুঁটিনাটি সব পরীক্ষা করে রান্নাঘরে যথাযথভাবে বাতাস আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এটি একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ। এর পাশাপাশি পরবর্তী সময় নিশ্চয়ই আরো বড় উদ্যোগ নেওয়া হবে; যেমন—সিলিন্ডার ব্যবসার লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা; সব সিলিন্ডার ব্যবসায়ীকে এ ধরনের আদেশ দেওয়া যে সিলিন্ডার বিক্রি বা সিলিন্ডারের সঙ্গে তা ব্যবহারের নিয়ম-কানুন ও প্রয়োজনীয় সতর্কতাসংবলিত লিফলেট বিতরণ করতে হবে ইত্যাদি।

গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারকারীর সর্বদা স্মরণ রাখা উচিত যে গ্যাস সিলিন্ডার সর্বদা সোজা বা খাড়া করে রাখতে হবে, বাঁকা বা শুইয়ে রাখা যাবে না; টিউব, রেগুলেটর কিংবা অন্য কোনো অংশ লিকেজ হয়েছে কি না, তা চেক করতে ম্যাচের কাঠি বা লাইটার অথবা আগুন জ-ালানো যাবে না; সিলিন্ডার ও চুলার সংযোগ পাইপের সঙ্গে কোনো কিছু প্যাঁচানো যাবে না; একটি সিলিন্ডার থেকে একাধিক সংযোগ দেওয়া যাবে না; নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা থেকে সর্বদা বিরত থাকতে হবে; গরম টিউব ব্যবহার না করা, টিউব গরম হলে তা দ্রুত পরিবর্তন করা; সিলিন্ডারের আশপাশে মোবাইল ফোন, ক্যামেরা ও অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার না করা, অনাকাঙ্ক্ষিত আগুনের সূত্রপাত হলে তা নিভিয়ে ফেলতে হবে। এ ক্ষেত্রে হাতের কাছে সর্বদা দু-এক বালতি পানি রাখা শ্রেয়। পরিস্থিতি বিবেচনা সাপেক্ষে দ্রুত বাসার বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি কাছের গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অথবা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া প্রয়োজন। গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা ওপরের সতর্কতা ও নিয়ম-কানুন সঠিকভাবে মেনে চললে দেশে গ্যাস সিলিন্ডারজনিত দুর্ঘটনা রোধ করা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আন্তর্জাতিক সদস্য
kekbabu@yahoo.com

Link: http://www.kalerkantho.com/print-edition/muktadhara/2019/01/21/728208?fbclid=IwAR05MMpLOarSV1YSRSDcsERjQ1xLv9LYTW2LgRze0aI--vZoY8UCT0SYZRE