Daffodil International University

Help & Support => Common Forum/Request/Suggestions => Topic started by: ashraful.diss on May 03, 2021, 11:31:27 PM

Title: পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর-এর ফযীলত
Post by: ashraful.diss on May 03, 2021, 11:31:27 PM
পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর-এর ফযীলত

আর মহান আল্লাহর বাণীঃ ‘‘নিশ্চয়ই আমি নাযিল করেছি এ কুরআন মহিমান্বিত রাত্রিতে। আর আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রাত্রি কী? মহিমান্বিত রাত্রি হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সেই রাত্রে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ এবং রূহ তাদের প্রতিপালকের আদেশত্রুমে অবতীর্ণ হয়। সেই রাত্রি শান্তিই শান্তি, ফজর হওয়া পর্যন্ত।’’ (আল-কদর [ক্বদর]ঃ ১-৫)

ইবনু ‘উয়ায়না (রহ.) বলেন, কুরআন মাজীদে যে স্থলে (مَا أَدْرَاكَ) উল্লেখ করা হয়েছে আল্লাহ তা‘আলা সে সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে অবহিত করেছেন। আর যে স্থলে (وَمَا يُدْرِيكَ)  উল্লেখ করা হয়েছে তা তাঁকে অবহিত করাননি। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রমাযানে ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় সওম পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয়। সুলায়মান ইবনু কাসীর (রহ.) যুহরী (রহ.) হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
 
ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কতিপয় সাহাবীকে স্বপ্নের মাধ্যমে রমাযানের শেষের সাত রাত্রে লাইলাতুল ক্বদর দেখানো হয়।এ শুনে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমাকেও তোমাদের স্বপ্নের অনুরূপ দেখানো হয়েছে। (তোমাদের দেখা ও আমার দেখা) শেষ সাত দিনের ক্ষেত্রে মিলে গেছে। অতএব যে ব্যক্তি এর সন্ধান প্রত্যাশী, সে যেন শেষ সাত রাতে সন্ধান করে।

আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে রমাযানের মধ্যম দশকে ই‘তিকাফ করি। তিনি বিশ তারিখের সকালে বের হয়ে আমাদেরকে সম্বোধন করে বললেনঃ আমাকে লাইলাতুল ক্বদর (-এর সঠিক তারিখ) দেখানো হয়েছিল পরে আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতে তার সন্ধান কর। আমি দেখতে পেয়েছি যে, আমি (ঐ রাতে) কাদা-পানিতে সিজদা করছি। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ই‘তিকাফ করেছে সে যেন ফিরে আসে (মসজিদ হতে বের হয়ে না যায়)। আমরা সকলে ফিরে আসলাম (থেকে গেলাম)। আমরা আকাশে হাল্কা মেঘ খন্ডও দেখতে পাইনি। পরে মেঘ দেখা দিল ও এমন জোরে বৃষ্টি হলো যে, খেজুরের শাখায় তৈরি মসজিদের ছাদ দিয়ে পানি ঝরতে লাগল। সালাত শুরু করা হলে আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কাদা-পানিতে সিজদা করতে দেখলাম। পরে তাঁর কপালে আমি কাদার চিহ্ন দেখতে পাই।
 
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযান মাসের মাঝের দশকে ই‘তিকাফ করেন। বিশ তারিখ অতীত হওয়ার সন্ধ্যায় এবং একুশ তারিখের শুরুতে তিনি এবং তাঁর সংগে যাঁরা ই‘তিকাফ করেছিলেন সকলেই নিজ নিজ বাড়িতে প্রস্থান করেন এবং তিনি যে মাসে ই‘তিকাফ করেন ঐ মাসের যে রাতে ফিরে যান সে রাতে লোকদের সামনে ভাষণ দেন। আর তাতে মাশাআল্লাহ, তাদেরকে বহু নির্দেশ দান করেন, অতঃপর বলেন যে, আমি এই দশকে ই‘তিকাফ করেছিলাম। এরপর আমি সিদ্ধান্ত করেছি যে, শেষ দশকে ই‘তিকাফ করব। যে আমার সংগে ই‘তিকাফ করেছিল সে যেন তার ই‘তিকাফস্থলে থেকে যায়। আমাকে সে রাত দেখানো হয়েছিল, পরে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। (আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন)ঃ শেষ দশকে ঐ রাতের তালাশ কর এবং প্রত্যেক বেজোড় রাতে তা তালাশ কর। আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, ঐ রাতে আমি কাদা-পানিতে সিজদা করছি। ঐ রাতে আকাশে প্রচুর মেঘের সঞ্চার হয় এবং বৃষ্টি হয়। মসজিদে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাতের স্থানেও বৃষ্টির পানি পড়তে থাকে। এটা ছিল একুশ তারিখের রাত। যখন তিনি ফজরের সালাত শেষে ফিরে বসেন তখন আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখতে পাই যে, তাঁর মুখমন্ডল কাদা-পানি মাখা।

আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযানের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করতেন এবং বলতেনঃ তোমরা রমাযানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর [ক্বদর] অনুসন্ধান কর। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমের সূরা ক্বদরে ঘোষণা করেছেন- লাইলাতুল ক্বদর হাজার মাসের (ইবাদাতের) চেয়েও উত্তম। সহীহ শুদ্ধ হাদীস থেকে জানা যায় যে, লাইলাতুল ক্বদর রমাযানের শেষ দশ দিনের যে কোন বিজোড় রাত্রিতে হয়ে থাকে। বিভিন্ন সহীহ হাদীসে ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখে লাইলাতুল ক্বদর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা উল্লেখিত আছে। হাদীসে এ কথাও উল্লেখিত আছে, যে কোন একটি নির্দিষ্ট বিজোড় রাত্রিতেই তা হয় না। (অর্থাৎ কোন বছর ২৫ তারিখে হল, আবার কোন বছর ২১ তারিখে হল এভাবে। আমাদের দেশে সরকারী আর বেসরকারীভাবে জাঁকজমকের সঙ্গে ২৭ তারিখের রাত্রিকে লাইলাতুল ক্বদরের রাত হিসেবে পালন করা হয়। এভাবে মাত্র একটি রাত্রিকে লাইলাতুল ক্বদর সাব্যস্ত করার কোনই হাদীস নাই। লাইলাতুল ক্বদরের সওয়াব পেতে চাইলে ৫টি বিজোড় রাত্রেই তালাশ করতে হবে।
 
বর্তমানে রাত্রি জাগরণের জন্য মসজিদে সকলে সমবেত হয়ে বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলের যে ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে সেটিও নবাবিষ্কৃত কাজ। কারণ আল্লাহর নাবী (সাঃ) তাঁর সময়ে সাহাবীদের নিয়ে মসজিদে জাগরিত হয়ে বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতিতে ইবাদাত না করে নিজ নিজ পরিবারকে জাগিয়ে কিয়ামুল লাইল পালন করতেন

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তা (লাইলাতুল কদর [ক্বদর]) রমাযানের শেষ দশকে অনুসন্ধান কর। লাইলাতুল কদর [ক্বদর] (শেষ দিক হতে গণনায়) নবম, সপ্তম বা পঞ্চম রাত অবশিষ্ট থাকে।
     
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তা শেষ দশকে, তা অতিবাহিত নবম রাতে অথবা অবশিষ্ট সপ্তম রাতে অর্থাৎ লাইলাতুল কদর [ক্বদর]। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে অন্য সূত্রে বর্ণিত যে, তোমরা ২৪তম রাতে তালাশ কর।

উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে লাইলাতুল কদরের (নির্দিষ্ট তারিখ) অবহিত করার জন্য বের হয়েছিলেন। তখন দু’জন মুসলিম ঝগড়া করছিল। তা দেখে তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেরকে লাইলাতুল কদরের সংবাদ দিবার জন্য বের হয়েছিলাম, তখন অমুক অমুক ঝগড়া করছিল, ফলে তার (নির্দিষ্ট তারিখের) পরিচয় হারিয়ে যায়। সম্ভবতঃ এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তোমরা নবম, সপ্তম ও পঞ্চম রাতে তা তালাশ কর।

আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রমাযানের শেষ দশক আসত তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত্র জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।