Daffodil International University

Faculties and Departments => Faculty Sections => Topic started by: Nayeem on March 11, 2020, 03:28:45 PM

Title: কোহ-ই-নূর এর ইতিহাস
Post by: Nayeem on March 11, 2020, 03:28:45 PM
যীশুর জন্মের প্রায় ৩০০০ বছর আগে অন্ধ্র প্রদেশের গোলকোণ্ডা নামক জায়গাটার ছোট্ট গ্রাম কল্লুরে কোন এক গরীব বালক কিভাবে ‘সাম্যন্তক’ নামে অদ্ভুত জেল্লা ছড়ানো, স্বচ্ছ সাদা পাথরটা পেয়েছিল তা আমাদের জানা নেই। তবে এর ‘অভিশাপ’ যুগের পর যুগ ধরে কতো যে অনাচার ঘটিয়েছে, কতো প্রাণ কেড়ে নিয়েছে তা আমাদের অনেকেরই জানা।

এই গরীব ছেলেটি ছিল আদি-ককেটু জাতির অধিবাসী। সে পাথরটা পেয়ে তাদের রাজার কাছে এটা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল, এবং রাজা এর বিনিময়ে তাকে নিজের পালক পুত্র করে নিয়েছিলেন। কিন্তু পাথরের ঐশ্বর্য্য বেশিদিন উপভোগ করতে পারেননি তিনি, অচিরেই সেই পালক পুত্র বড় হয়ে তার পিতাকে হত্যা করে নিজেই রাজা হয়ে বসে। তবে পুত্রেরও কপালে বেশিদিন সুখ সয়নি, কালান্তক ব্যাধিতে তার মৃত্যু হয়। পালক পিতার মতোই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে ‘সাম্যন্তক’ নামক পাথরটাকে পরম যত্নে লালন করেছিল।

সেই ছিল শুরু। এরপর থেকে আজ, এই পাঁচ হাজার বছরে প্রায় প্রত্যেক পুরুষ শাসকই এই পাথর ব্যবহারে অভিশাপে অপঘাতে মৃত্যুবরণ করেছে। অন্তত স্বাভাবিক মৃত্যু তাঁদের কারও হয়নি, এটা বলা যেতে পারে। আমরা ইতিহাস ঘুরে আসি, দেখা যাক এ কথাটা কতোটা সত্যি।




অবশ্য ব্যবহার শব্দটারও ব্যাখ্যা প্রয়োজন। যেসকল পুরুষ শাসকেরা তাঁদের পরিধানের অলঙ্কারের মধ্যে এ পাথরকে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন, কিংবা এর মাধ্যমে নিজের জৌলুস জাহির করতে চেয়েছেন, এর জন্যে যুদ্ধ-বিগ্রহে জড়িয়েছেন, তারাই মূলত মৃত্যুবরণ করেছেন অপঘাতে।

সাম্যন্তক পাথরের সবচেয়ে পুরনো, কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য এবং বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায় সম্রাট বাবুরের জীবনী ‘বাবুরনামা’-তে। সেই ককেটু জাতি থেকে মুঘল সাম্রাজ্যে কিভাবে পাথরটি এল তা ঐতিহাসিকদের কাছে বেশ ধোঁয়াটে ব্যাপার, তবে এ ব্যাপারে কিছু হাইপোথিসিস আছে।

তারমধ্যে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য ঘটনাটি হল- প্রায় ৩০০০ বছর সাম্যন্তক ককেটুদের সাম্রাজ্য কাকাটিয়াতেই ছিল। কিন্তু ১০০০ শতকের শেষদিকে এসে সেটা কাকাটিয়ার কোষাগার থেকে চুরি হয়ে চলে যায় মালওয়ার রাজার কাছে। ১৩০৬ সালে ককেটু রাজা প্রতাপরুদ্র পুনরায় সাম্যন্তক মালওয়া থেকে উদ্ধার করেন। প্রতাপরুদ্র ককেটুদের সাম্রাজ্যের যেমন বিস্তৃতি ঘটিয়েছিলেন, তেমনি রাজ্যকে সুসংহত করেছিলেন।

১৩২৩ সালে দিল্লীর সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক শাহ তাঁর সেনাপতি উলুঘ খানকে পাঠান কাকাটিয়া জয় করতে। প্রথমবার ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় উলুঘ খান কাকাটিয়া দখল করেন, এবং বিপুল পরিমাণ মণি-মাণিক্য কয়েকশ’ হাতি, উট, ঘোড়ার পিঠে করে দিল্লী নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে সাম্যন্তক মণিও ছিল।

এরপর থেকে ১৫২৬ সাল পর্যন্ত দিল্লী শাসন করে সৈয়দ ও লোদী বংশ। এর মধ্যে একবার পাথরটি হাতছাড়া হয়ে চলে যায় কচ্ছের রাজা বিক্রমাদিত্যের কাছে। তাঁকে পরাজিত করে সিকান্দার লোদী কচ্ছ জয় করেন ও সাম্যন্তক পুনরূদ্ধার করেন। পাথরটা মুঘল সাম্রাজ্যের স্থপতি বাবুরের কাছে আসে ১৫২৬ সালে। পানিপথের প্রথম যুদ্ধে লোদী সাম্রাজ্যের শেষ রাজা ইব্রাহিম লোদীকে পরাজিত করে দিল্লীতে মুঘল সাম্রাজ্যের সূচনা করেন বাবুর। এ যুদ্ধে বাবুরের সেনাপতি ছিলেন তাঁর ১৭ বছরের পুত্র হুমায়ূন, যে ইব্রাহিম লোদীর শয়নকক্ষে ঢুকে নিজ হাতে পাথরটা উদ্ধার করেন। খুশি হয়ে বাবুর পুত্রকেই পাথরটা পুনরায় উপহার দেন।

বাবুরনামায় কিন্তু একে ‘বাবুরের হীরা’ নামে অভিহিত করা হয়েছে, যেখান থেকে আমরা নিশ্চিতভাবে জানতে পারি সাম্যন্তক মূলত একটি হীরা, যে-সে পাথর নয়! বাবুরনামা অনুসারে, বাবুরের হীরার মূল্য দিয়ে সমস্ত পৃথিবীর আড়াইদিনের খরচাপাতি চালানো যাবে! বোঝাই যাচ্ছে মুঘলদের কাছে এর মূল্য কতো বেশি ছিল।

হুমায়ূনের পাথরটা বেশ প্রিয় ছিল, তিনি তাঁর চরম দুরাবস্থার সময়ও সেটা হাতছাড়া করেননি। রাজ্যহারা হুমায়ূন একবার এক রাজ্যে কিছুদিনের জন্যে আশ্রয় চাইলে সেখানকার রাজা আশ্রয়ের বিনিময়ে হীরাটা চান। তখন হুমায়ূন ক্রুদ্ধস্বরে বলেন, “এই অমূল্য রত্ন কোন কিছুর বিনিময়ে কেনা যায় না নির্বো্ধ, তলোয়ারের ঝলসানি দিয়ে একে জয় করতে হয়, কিংবা খোদার রহমতের মাধ্যমে এ রত্ন অর্জন করা যায়”।

তবে হুমায়ূন শেষ পর্যন্ত পাথরটা দিয়েছিলেন দুর্দিনে তাঁর সবচেয়ে বড় আশ্রয়দাতা পারস্যের রাজা শাহ তামাস্পকে, উপহার হিসেবে। তামাস্প এ হীরা নিয়ে তেমন আবেগী ছিলেন না, তিনি এটা উপহার দিয়েছিলেন আহম্মেদনগরের শাসক বুরহান নিজাম কে। তবে পাথরটা শেষ পর্যন্ত নিজামের কাছে পৌঁছায়নি; কেননা তার আগেই সেটার বাহক মেহতার জামাল পথিমধ্যে খুন হয়, এবং বাবুরের হীরা চুরি হয়ে যায়।

এভাবেই প্রথমবারের মতো মুঘলদের হাতছাড়া হয়ে যায় বাবুরের হীরা। এগুলো মোটামুটি ১৫৪৭ সালের দিকের ঘটনা। এরপর থেকে ১৬৩৯ সাল পর্যন্ত এর ইতিহাস কেবলই ধোঁয়াশা।

১৬৩৯ সালে বাবুরের হীরার পুনরায় আবির্ভাব এর জন্মস্থান গোলকোণ্ডা রাজ্যে, সেখানকার মন্ত্রী ও হীরক ব্যবসায়ী মীর জুমলার মাধ্যমে। গোলকোণ্ডার তৎকালীন রাজার মায়ের সাথে অবৈধ সম্পর্কের কারণে তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়, তিনি এসে পৌঁছান দিল্লীতে। গোলকোণ্ডার কোষাগার থেকে বহু মূল্যবান মণি-মুক্তা তিনি চুরি করে নিয়ে আসেন। দিল্লীতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর এক কর্মচারীর মাধ্যমে তিনি সম্রাট শাহজাহানের সাথে দেখা করেন, এবং তাঁকে ও শাহজাহান পুত্র আওরঙ্গজেবকে বহু মূল্যবান মণিমুক্তা উপহার দিয়ে প্রলুদ্ধ করেন গোলকোণ্ডা দখল করার জন্যে। তাঁর আশা ছিল গোলকোণ্ডা মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্গত করতে পারলে হয়ত তাঁকে সেখানকার শাসক বানিয়ে দেয়া হবে।

শাহজাহানকে দেয়া উপহারগুলোর মধ্যে ৬ মিশকাল ওজনের একটা হীরাও ছিল। সেটাই সম্ভবত বাবুরের হীরা। তবে গোলকোণ্ডার কোষাগারে এই হীরা কিভাবে গিয়েছিল, তার কোন সদুত্তর নেই। এবং মীর জুমলা সম্ভবত জানতেন, এই হীরাই সেই বহুমূল্য বাবুরের হীরা। যদিও তিনি শাহজাহানকে আলাদা করে এর নাম উল্লেখ করেননি।

শাহজাহান সেই হীরাকে বাবুরের হীরা নামে চিনতে পেরেছিলেন কিনা, তা এক বিরাট প্রশ্ন। তবে শাহজাহানের কাছে ১৬৩৭ সালে গোলকুণ্ডা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আনুগত্য স্বীকার করেন, এবং ১৬৮৭ সালে আওরঙ্গজেব গোলকোণ্ডা দখল করেন। শাহজাহান সেই হীরাটিকে তাঁর বিখ্যাত ময়ূর সিংহাসনে স্থাপন করেছিলেন, এবং আওরঙ্গজেব এটিকে তাঁর লাহোরের বাদশাহী মসজিদে সংরক্ষণ করেছিলেন।



শাহজাহান ও তাঁর ময়ূর সিংহাসন

শাহজাহান শেষ জীবনে পুত্র আওরঙ্গজেবের হাতে আগ্রার কেল্লায় বন্দী হন। তাঁর সমস্ত মণিমুক্তা আওরঙ্গজেবের কাছে গেলেও বাবুরের হীরাসহ আরও কিছু মূল্যবান হীরা শাহজাহান নিজের কাছে গচ্ছিত রেখেছিলেন। তবে তাঁর মৃত্যুর পূর্বে আওরঙ্গজেব সেগুলোও কেড়ে নিয়েছিলেন।

১৬৬৫ সালে ফ্রেঞ্চ পর্যটক ও পাথর বিশেষজ্ঞ জিন ব্যাপ্টিস্ট ট্যাভের্নিয়ার কে আওরঙ্গজেব একটি অতি চমৎকার হীরা দেখান যেটি ছিল এবড়োখেবড়ো, যার ওজন ৬ মিশকাল-এর মতো, যার ঔজ্জ্বল্য আকাশের তারার মতো, এবং যার আকৃতি প্রায় পায়রার ডিমের সমান। ট্যাভের্নিয়ার এই পাথরকে উল্লেখ করেন ‘দ্য গ্রেট মুঘল’ নামে। তবে এই পাথরই বাবুরের হীরা কিনা, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত ছিলেন না। আরও দুটি পাথরের দেখা তিনি আওরঙ্গজেবের দরবারে পান, যাদের নাম তিনি দেন ‘অর্লভ’ এবং ‘দ্য গ্রেট টেবল’। অর্লভ ছিল সবুজাভ নীল এবং দ্য গ্রেট টেবল ছিল হালকা গোলাপী রঙের। এ তিনটির ওজনও ছিল মোটামুটি একই রকম।



আওরঙ্গজেবের দরবারে দেখা ট্যাভের্নিয়ারের হীরাগুলো। প্রথম তিনটি যথাক্রমে দ্য গ্রেট মুঘল, অর্লভ এবং দ্য গ্রেট টেবল

এরপর বেশ কিছু সময় হীরাগুলো মুঘলদের কাছেই ছিল। ১৭৩৯ সালে পারস্যের রাজা নাদির শাহ ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন, এবং মুঘল সম্রাট মুহম্মদ শাহকে কর্ণালের যুদ্ধে পরাজিত করে উপমহাদেশে মুঘল শাসনের পতন ঘটান। ময়ূর সিংহাসন, দ্য গ্রেট মুঘল, দ্য গ্রেট টেবল, অর্লভ ইত্যাদি অতি মূল্যবান মুঘল সংগ্রহ তিনি পারস্যে নিয়ে যান।

নাদির শাহ তাঁর কনিষ্ঠা কন্যার কথা অনুযায়ী দ্য গ্রেট মুঘলের নাম রাখেন ‘কোহ-ই-নূর’ বা ‘জ্যোতির পর্বত’ এবং দ্য গ্রেট টেবলের নাম রাখেন ‘দরিয়া-ই-নূর’ বা ‘জ্যোতির সমুদ্র’।

এরপরের ইতিহাস শুধুই হানাহানির। পারস্যে ফিরে যাওয়ার পর অত্যাচারী, অহংকারী নাদির শাহ ক্ষমতাচ্যুত হন এবং মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর ভাতিজা আলী কুলী এরপর আদিল শাহ নাম নিয়ে সিংহাসনে বসেন, এবং তাঁর সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন, বিশেষ করে নাদির শাহ-এর ১৪ বছর বয়স্ক নাতি শাহ রুখ কে। কিন্তু অচিরেই আদিল শাহ তাঁর অন্ধ ভাই দ্বারা খুন হন(যাঁর চোখ তিনি নিজ হাতে উপড়ে নিয়েছিলেন) এবং শাহ রুখ মাত্র ১৬ বছর বয়সে সম্রাট হন। তিনি প্রায় ৫০ বছর সুষ্ঠুভাবে রাজত্ব পরিচালনা করেছিলেন। ধন-সম্পত্তির প্রতি তাঁর তেমন আকর্ষণ ছিল না, মৃত্যুর পূর্বে তিনি তাঁর সেনাপতি আহমেদ শাহ আবদালীকে বীরত্বের পুরস্কার হিসেবে কোহ-ই-নূর উপহার দেন। উল্লেখ্য, এ শাহ আবদালীই পরবর্তীতে কাবুল অধিপতি হন, এবং পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে মারাঠাদের পরাজিত করেন।
Title: Re: কোহ-ই-নূর এর ইতিহাস
Post by: Raihana Zannat on March 12, 2020, 11:35:55 AM
very helpful post
Title: Re: কোহ-ই-নূর এর ইতিহাস
Post by: Shahrear.ns on November 01, 2020, 06:29:11 PM
Good to know... THanks for sharing
Title: Re: কোহ-ই-নূর এর ইতিহাস
Post by: Al Mahmud Rumman on November 23, 2020, 02:24:58 AM
Thanks for sharing!
Title: Re: কোহ-ই-নূর এর ইতিহাস
Post by: Anta on June 01, 2021, 09:17:54 PM
Thanks for sharing  :)