Daffodil International University

Bangladesh => Business => Capital Market/Share Market => Topic started by: Badshah Mamun on September 04, 2021, 09:52:51 AM

Title: চাঙ্গা বাজারে ভালো শেয়ার নির্বাচনের উপায়
Post by: Badshah Mamun on September 04, 2021, 09:52:51 AM
চাঙ্গা বাজারে ভালো শেয়ার নির্বাচনের উপায়

অনেক চড়া-উৎেরাই পেরিয়ে দেশের পুঁজিবাজারে অবশেষে চাঙ্গাভাব ফিরেছে। রমরমা এই বাজারে কয়েক গুণ বেড়েছে অনেক শেয়ারেরই দাম। কিন্তু আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারের অবস্থা যখন খারাপ হয় তখন তারা শেয়ারবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আবার যখন শেয়ার দর অতি মূল্যায়িত হয় তখন আমাদের দেশের ৯০ ভাগ বিনিয়োগকারী (সম্ভবত আরো বেশি) শেয়ার কেনার কথা ভাবা শুরু করেন! একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বর্তমানে বাজারে লেনদেন হওয়া অধিকাংশ শেয়ারই অতিরিক্ত দামে লেনদেন হচ্ছে।

স্বল্প মূলধনী কোম্পানি শেয়ার নিয়ে আমাদের দেশের শেয়ারবাজারে কারসাজি বেশি হয়। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কারসাজি চক্র বাজারকে ম্যানুপুলেট করার জন্য এসব কোম্পানিগুলোকে টার্গেট করে। পরবর্তীতে তাদের স্বার্থ হাসিলের পর তারা সব শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে সটকে পড়ে। তখন বিপদে পড়েন মৌসুমী ও স্বল্প অভিজ্ঞতার বিনিয়োগকারীরা।

ঠিক এসময়টাতেই আমাদের দেশের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর বাড়তে দেখে সেসব শেয়ারে বিনিয়োগ করে। আর একই সময়ে কারসাজি চক্র সেসব শেয়ার থেকে বের হয়ে যায়। পরিণতিতে বাজার আবারও পতনের ধারায় ফিরে আসে। এতে বিনিয়োগকারীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। শেয়ারবাজারের প্রতি তাদের ধারণা পাল্টাতে থাকে।

কিছুকাল ধরে দেশের শেয়ারবাজার স্থিতিশীল করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক সব ধরনের বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্টরা যার যতটুকু সাধ্য তা নিয়ে চেষ্টা করছেন। কিন্তু তারপরও কোথাও যেনো একটি গলদ থেকে যাচ্ছে এবং বাজার উঠতে গেলেই একটি অদৃশ্য শক্তি সূচকের পেছন থেকে নিচের দিকে টেনে ধরে।

মূলত এই অদৃশ্য শক্তিটিই ১৯৯৬ সালে রাস্তার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজি নিয়ে খেলা করেছে। সেই একই শক্তি বিনিয়োগকারীদের হতাশ করে আবার ২০১০ সালে শেয়ারবাজারকে অনেক পেছনে ফেলেছে। অনেকেরই সন্দেহ সরকারের যাবতীয় নীতি সহায়তা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সর্বোচ্চ উদারনীতি নিয়ে বাজার ওঠানোর এত চেষ্টার পরও ওই শক্তিটিই এখন স্বল্প মুলধনী কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এমন খেলাধুলা শুরু করেছেন। যাতে করে শেয়ারবাজার আর কিছুতেই সামনের দিকে এগোতে না পারে। মূলত ২০১০ সালের ধস পরবর্তী সময়ে বিপর্যস্ত বাজারে যতবার আশার আলো দেখা গেছে এই চক্রটির কারণেই সেই আলো আর বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।

ধারনা করা হচ্ছে স্বলমূলধনী কোম্পানিগুলোই হচ্ছে ওই গ্রুপটির বর্তমার সময়ের টার্গেট। আর কোন কিছু না বুঝেই সেই টার্গেটের শিকার হচ্ছেন সাধারণ ও কম অভিজ্ঞতার বিনিয়োগকারীরা।

এরই মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেস্বর) শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০ কোটি টাকার কম পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানির সার্বিক অবস্থা যাচাই ও করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গঠিত কমিটিকে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দাখিল করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে গঠিত কমিটিকে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোর জন্য কারণীয় নির্ধারণে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা বিএসইসি উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে অতিমূল্যায়িত বা Overpriced শেয়ার কিনে যাতে আমরা বেকায়দায় না পড়ি, সেজন্য কিছু পরামর্শ আমরা অনুসরণ করতে পারি-

১। ভাল প্রবৃদ্ধিঃ আমাদেরকে প্রথমেই ভালো প্রবৃদ্ধির কোম্পানিগুলো শনাক্ত করতে হবে। তারপর কোম্পানির গত ৫ বৎসরের আয় ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে কিনা দেখবো। আমাদেরকে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেখতে হবে, তা হলো কোম্পানীর পরিচালনা পর্ষদ। কারণ দক্ষ পর্ষদ একটি কোম্পানিকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে। কোম্পানী যে সব পণ্যের উৎপাদন বা ব্যবসা করে তার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কি এবং কেমন হতে পারে তা অনুমান করতে হবে। এছাড়াও কোম্পানির PE রেশিও, RSI, Growth in operating profit, NPAT, এবং EPS দেখলেই আমরা নিজেরাই ভাল কোম্পানিগুলো শনাক্ত করতে পারবো।

২। কম দায়ঃ আমাদেরকে কোম্পানি নির্বাচনের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখতে হবে কোম্পানির দায়। এই দায় কোম্পানির লাভ খেয়ে ফেলে। ফলে প্রতিষ্ঠান ভাল ব্যবসা করলেও ঋণ দায়ের কারণে ভালো ডিভিডেন্ড বা লভ্যাংশ দিতে পারে না। অবশ্যই কোন কোম্পানির দায় সম্পদের বেশি হওয়া যাবে না। যদি হয় তাহলে বিনিয়োগ তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।

৩। বড় বাজারঃ প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্যের টার্গেট কতটা বড় খেয়াল রাখতে হবে। কোম্পানিটি মোট মার্কেটের কতো শতাংশ হোল্ড করে তা দেখতে হবে। ভবিষ্যতে সম্ভাব্য বাজার কতো বড় হতে পারে তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ ব্যবসায় আগ্রগতি তার উপর নির্ভর করে।

৪। উচ্চ রিটার্নঃ আমাদেরকে সর্বদা উচ্চ রিটার্ন দেওয়া কোম্পানিগুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেসব কোম্পানি গত ৫ বৎসর যাবৎ ভালো ডিভিডেন্ড দিয়ে আসছে, সেসব কোম্পানি নির্বাচন করতে হবে। নিচের পদ্ধতিগুলো দেখে বুঝতে হবে কোনটি High Return দেওয়া কোম্পানি।

ক. Return on Equity (ROE): এর ক্ষেত্রে অনুপাত ১০ বা তার বেশি হওয়া উচিত।

খ. Return on Asset (ROA): এই পদ্ধতিতে কোম্পানির বর্তমান সম্পদ ভিত্তিক রিটার্ন কী জানা যায়। মোট আয়কে মোট সম্পদ দ্বারা ভাগ করে বের করতে হয়। একটি কোম্পানি মোট সম্পত্তির তুলনায় কতটা লাভজনক তার সূচক। এ সূচক যত বেশী হবে কোম্পানির অবস্থা ততো ভালো।

৫। যোগ্য নেতৃত্ব্ঃ আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে কারা কোম্পানিটি পরিচালনা করছে। কারণ যোগ্য নেতৃত্বের কারণে কোম্পানিটির সফলতা অনেকাংশে নির্ভরশীল। নেতৃত্বের সঙ্কটে থাকা কোম্পানিগুলো কখনো ভালো ফলাফল দিতে পারে না।

৬। প্রতিযোগিতাঃ বিনিয়োগের পূর্বে আমাদেরকে জানতে হবে বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কোম্পানিটির প্রতিযোগী কারা কারা রয়েছে। পূর্ণ প্রতিযোগিতামুলক বাজারে টিকে থাকার জন্য ভাল গুনগতমান সম্পন্ন পণ্যের ও পণ্যের ডাইমেনশন নিয়ে ভাবতে হবে। নির্বাচিত পণ্যের Advantage গুলি কী কী আছে তা বের করে দেখতে হবে তার বাজার সম্ভাব্যতা।

৭। পরিচালকদের মালিকানার অনুপাতঃ কোম্পানির ডিরেক্টরদের অবশ্যই ৪৫ থেকে ৬০ শতাংশ শেয়ার ধারন করতে হবে। তাহলেই কোম্পানির গ্রোথ ভালো হওয়ার সম্ভবনা থাকে। আর পরিচালকদের মালিকানা কম হলে সে কোম্পানির গ্রোথ ভালো হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে।

৮। সেক্টর নির্বাচনঃ ভবিষ্যতে কোন খাতে ব্যবসা বাণিজ্য ভালো হতে পারে তার উপর ভিত্তি করে কোম্পানির শেয়ার নির্বাচন করতে হবে।

৯। নগদ প্রবাহ ও দায়ঃ আমাদেরকে অবশ্যই কম দ্বায় সম্পন্ন অর্থাৎ ০.৫০ শতাংশ শতাংশের কম Loan বা দায় গ্রহনকারী কোম্পানির শেয়ার নির্বাচন করতে হবে। অন্যদিকে যে সকল কোম্পানির দায় বেশী তাদের লাভ থেকে ঋণের সুদ বেশী খরচ হয়ে যায়। যে সকল কোম্পানির নগদ প্রবাহ বেশী তারা অন্যান্য কোম্পানির থেকে অনেক বেশী স্থিতিশীল হয়।

১০। অবমুল্যায়িতঃ আমাদেরকে অবশ্যই অবমুল্যায়িত কোম্পানিগুলোর শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে। নিন্মোক্তভাবে অবমুল্যায়িত কোম্পানির শেয়ার নির্বাচন করতে হবেঃ

ক. Price Earning Ratio (PE Ratio): পিই রেশিও ১৫ বা তার আশেপাশে থাকা স্টকগুলো নির্বাচন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, শেয়ারের পিই যতো বেশি হবে, ঝুঁকিও ততো বেড়ে যাবে। আর লোকসানি বা নেগেটিভ পিই রেশিওর শেয়ার অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। যদি না চলেন, তাহলে ভাববেন আপনি হাতে আগুণের ফুলকি নিচ্ছেন। যা আপনার হাততে পোড়াবেই।

খ. Price to Book Value ( PB Ratio): শেয়ারের ক্রয় মূল্য যেন কোনভাবেই NAV এর তিন গুনের বেশী না হয়। শেয়ারের মূল্য সম্পদ মূল্যে কাছাকাছি থাকাটা সবচেয়ে নিরাপদ। মনে রাখতে হবে, শেয়ারের মূল্য সম্পদ মূল্যের অনেক বেশি হলে, তা অবশ্যই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে।

গ. Price earning to Growth (PEG): কোম্পানির শেয়ার নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই ১৫ এর উর্ধে কোম্পানির স্টক ক্রয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। পিই রেশিও ১৫ এর মধ্যে থাকলে ভালো। ওয়ারেন বাফেট বলেন “১৫ পিই রেশিও এর উর্ধে্র শেয়ারে বিনিয়োগ কখনও ভালো বিনিয়োগ হতে পারে না।” বিনিয়োগকারী হিসেবে সফলতা পেতে হলে সকল পুঁজি একটি কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ না করে একাধিক ভাল কোম্পানি নির্বাচন পূর্বক বিনিয়োগই আপনার জীবন পাল্টে দিতে পারে।

Source: https://www.sharenews24.com/article/39265/index.html