Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - mahmudul_ns

Pages: [1] 2 3
1
পাকস্থলীতে আলসার বা গ্যাস্ট্রিকের জন্য বর্তমানে যে জীবাণুটিকে দায়ী করা হয় তার নাম হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি। এই ব্যাকটেরিয়াটি পাকস্থলীকে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়। ধারণা করা হয়, ‘ও’ ব্লাড গ্রুপধারী তাদের গ্যাস্ট্রিকে আক্রান্ত হওয়ার বেশি ঝুঁকি থাকে। পাকস্থলীর ক্যান্সারের জন্যও অনেকাংশে দায়ী এই ব্যাকটেরিয়া। যেভাবে ছড়ায় : এই ব্যাকটেরিয়াটি সাধারণত ঘিঞ্জি এলাকায় বাস করে এমন মানুষের মধ্যে বেশি ছড়ায়। একজনের মুখ থেকে অন্যজনের মুখে যায়। শিশুদের ক্ষেত্রে মুখ ও পায়ুপথে ছড়াতে পারে। তবে মানুষের মলমূত্র, পানি, খাবার ও অন্য কোনো প্রাণীতে এ জীবাণুর অস্তিত্ব এখনো প্রমাণিত হয়নি। রোগের লক্ষণ : প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে। প্রধান উপসর্গগুলো হচ্ছে বমি বমি ভাব, বমি, বুকজ্বালা, নাভীর ওপরে পেটব্যথা। এই ব্যাকটেরিয়া পাকস্থলী ও তার ওপরের অংশ ডিওডেনামে আলসার বা ক্ষতের সৃষ্টি করে। এর ফলে পেটের ভেতরে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। নিশ্চিতকরণ পরীক্ষা : পাকস্থলী ও ডিওডেনামে হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি দিয়ে আলসার হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য এন্ডোসকোপিক বায়োপসি বা ইউরিয়া ব্রেদটেস্ট করা হয়। যদি জীবাণুটিকে ধরা যায় তবে প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর যেমন ওমিপ্রাজল ও দু’টি অ্যান্টিবায়োটিক যেমন ক্ল্যারিথ্রোমাইসিন ও মেট্রোনিডাজল দিয়ে একসাথে নির্দিষ্ট সময় ধরে চিকিৎসা করলে অসুখ ভালো হয়ে যায়। এ পদ্ধতিকে বলে ট্রিপল থেরাপি। চিকিৎসা না করালে জটিলতা : যেহেতু আলসার হলে পেটে রক্তক্ষরণ হয় তাই এ রক্ত পায়খানার সাথে বেরিয়ে আসে। এই কালো রক্তযুক্ত পায়খানাকে বলে ‘মেলেনা’। এ অবস্থা চলতে থাকলে রোগীর মারাত্মক রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া পাকস্থলীর শেষ প্রান্ত সঙ্কুচিত হয়ে খাবার চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে। লেখক : মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। - See more at: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/105738#sthash.jFmLAZJc.dpuf

2
ইসরায়েল মাত্র দুই সময়ে আরব হত্যা করে: শান্তিতে ও যুদ্ধে। গাধা যখন বোঝা বয় তখনো সে গাধা, বোঝা নামিয়ে রাখলেও সে গাধাই থাকে। শান্তি ও যুদ্ধে একই ভাষা ইসরায়েলের: চুক্তিভঙ্গ এবং দখল ও হত্যা। যুদ্ধ ঘোষণা ছাড়াই এই দফায় তারা হত্যা করেছে ৫০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে। হামাসের রকেট দেখা যাচ্ছে না, দেখা যাচ্ছে স্বতঃস্ফূর্ত গণপ্রতিরোধ। তৃতীয় ইন্তিফাদা শুরুর আলামত দেখতে পাচ্ছে বিশ্ব গণমাধ্যম। ইন্তিফাদা মানে সর্বাত্মক গণ-অভ্যুত্থান। প্রথম ইন্তিফাদার অর্জন ছিল স্বায়ত্তশাসিত ফিলিস্তিন, দ্বিতীয়টি নিষ্ফলা। তৃতীয় ইন্তিফাদার ফল যা-ই হোক, ফিলিস্তিনিদের সামলাতে পারছে না ইসরায়েল। পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ কারও হাতে নেই। ফিলিস্তিনিদের পূর্ব জেরুজালেম বেহাত। এরই মধ্যে জনতার জান্তব জেদ আর ইসরায়েলি যুদ্ধমেশিন মুখোমুখি।
ইসরায়েল সুনির্দিষ্ট সীমানাহীন এক চলমান রাষ্ট্র। সুতরাং তার সেনাবাহিনীকেও চলমান থাকতে হবে। আলেকজান্ডার, হিটলার ও ইসরায়েলের ইতিহাসের মিল এখানেই। এই দফায় তারা জেরুজালেমের আল–আকসা মসজিদ চত্বরে ইহুদি সিনেগগ বানানোর লক্ষ্যে ফিলিস্তিনি বিতাড়ন শুরু করেছে। ইসরায়েলের আবাসনমন্ত্রী আল–আকসা চত্বরে সিনেগগ বানানোর ঘোষণা দিয়েছেন (http://bit.ly/1Ad3T9f) । অথচ ঐতিহাসিক কাল থেকেই জেরুজালেম তিন একেশ্বরবাদী আরব ধর্মেরই তীর্থকেন্দ্র। কিন্তু ইসরায়েল এর পুরোটাকেই ইহুদীকরণ করতে চায়। তাই পূর্ব জেরুজালেমের ফিলিস্তিনিরা অবরুদ্ধ ও নির্যাতিত হচ্ছে প্রতিদিন। জেরুজালেমের পূর্ণ দখল উদ্দেশ্য হলেও জায়নবাদীরা ছলাকলায় দুর্দান্ত। তারা চায় ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতটা ধর্মযুদ্ধের চেহারা নিক। যেন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাসংগ্রাম ইসরায়েলের মতোই ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক হয়ে পড়ে। আর তা হলে ইসরায়েলের বর্ণবাদী দখলদারি স্বার্থ ও তার মুখটা ইহুদি বনাম মুসলিম ধর্মযুদ্ধের মুখোশে ঢাকা থাকবে। আর আরামসে বাজানো যাবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বহুব্যবহৃত দামামা। এতে ইহুদি ও মুসলিম হিংসাবাদীদেরই সুবিধা হবে। এভাবেই ইয়াসির আরাফাতের উদার অসাম্প্রদায়িক ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদী লড়াইকে মডারেট আর ইসলামিস্ট ভাগে বিভক্ত করা গেছে। মনে রাখা দরকার, ফিলিস্তিনের মুক্তি আরবের মুক্তির প্রথম শর্ত।
কয়েক যুগ ধরে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ, হত্যা, নির্যাতনের পরও ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার’ যুদ্ধ আর শেষ হয় না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গণহত্যার শিকার ইহুদিরা তাদের অস্তিত্ব নিয়ে দারুণ ভীত। ইয়াসির আরাফাত থেকে শুরু করে হামাস নেতৃত্ব পর্যন্ত সবাই আজ জবরদখলি পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠিত ইসরায়েলকে মেনে নিয়েছে। ম্যান্ডেলা যেমন বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ প্রভুদের ক্ষমা করে তাদের নিয়ে দেশ গড়েছেন। আরাফাতও তেমনি অসলো চুক্তির মাধ্যমে ফিলিস্তিনের বিরাট অংশ দখলকারী ইসরায়েলকে মেনে নিয়ে শান্তি আনতে চেয়েছেন। আরাফাতের এই অহিংসা ও উদারতা বাস্তবতার শিক্ষা যেমন, তেমনি মহান ত্যাগও বটে! তারপরও ম্যান্ডেলা পান ভালোবাসা, অথচ আরাফাত আজও পশ্চিমাদের অনেকের কাছে সন্ত্রাসী মুসলিম!
ইসরায়েেলর মনস্তত্ত্ব বুঝতে এই গল্পটাই যথেষ্ট: এক ইহুদি তরুণ যুদ্ধে যাচ্ছে। তো তার মা ছেলেকে বোঝাচ্ছে: বাবা, বেশি খাটবি না। একটা করে আরব মারবি আর জিরিয়ে নিবি।
ছেলে: কিন্তু ওরা যদি আমাকে মারে?
মা: তোকে মারবে কেন, তুই তাদের কী ক্ষতি করেছিস?
এই যাদের মানসিকতা, তারা অপরিণামদর্শী হবেই। ইসরায়েলের ভিতে চতুর্দিক থেকে ধস নামছে। ১. ফিলিস্তিন এখন জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং পোপস্বীকৃত বৈধ রাষ্ট্র। সুতরাং আন্তর্জাতিক আইনে ইসরায়েল দখলদার ও যুদ্ধাপরাধী রাষ্ট্র হওয়ার যোগ্য। ওদিকে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু চুক্তি হতে পারাই প্রমাণ করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাধর ইসরায়েলি লবির ক্ষমতা কমেছে। পরম বন্ধু সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র এবং চতুর তুরস্ক ব্যস্ত সিরিয়ায় রাশিয়াকে সামলাতে।
২. ইসরায়েলের বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত আগের থেকে জোরদার। বেশ কিছু কোম্পানি, দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় ইসরায়েলকে বয়কট করছে। পশ্চিমা লেখক-অধ্যাপক-শিল্পীরা ইসরায়েলকে এড়াচ্ছেন। ইউরোপের রাজধানীগুলোতে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ বাড়ছে। সম্প্রতি বিখ্যাত গায়ক রজার ওয়াটার্স আরেক বিখ্যাত গায়ক বন জোভিকে ইসরায়েলে গান না গাওয়ার অনুরোধ করেছেন। নেদারল্যান্ডসের কোম্পানি পিজিজিএম ইসরায়েলের পাঁচটি বৃহত্তম ব্যাংক থেকে সব ধরনের বিনিয়োগ উঠিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডেনমার্কের ডান্স্কে ব্যাংকও একই পথ ধরেছে। ঘটনা আরও আছে। ইউরোপ হলো ইসরায়েলি উচ্চ প্রযুক্তিপণ্যের প্রধান বাজার। ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী ইয়াইর লাপিদও স্বীকার করেছেন, ‘ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে মীমাংসা না হলে প্রত্যেক ইসরায়েলির পকেটে টান পড়বে।’ তাঁর হিসাবে ‘সীমিত মাত্রার বয়কটে বছরে ক্ষতি হবে পাঁচ বিলিয়ন ডলার এবং চাকরি হারাবে লাখো ইহুদি।’
৩. ইসরায়েল অনেক ইহুদির চোখেও আর বাইবেলে প্রতিশ্রুত পবিত্র ভূমি থাকছে না। সেখানে ইহুদিদের অভিবাসন কমে গেছে। অন্যদিকে গত দুই দশকে প্রায় ১০ লাখ অর্থাৎ প্রতি সাতজনে একজন ইসরায়েলি দেশ ছেড়েছে। ৬০ শতাংশ ইসরায়েলি বিদেশে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টায় জড়িত বা তাতে ইচ্ছুক (ফরেন পলিসি, ২০১১)।
৪. তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্লোমো স্যান্ড নিজেকে আর ইহুদি ও ইসরায়েলি ভাবতে নারাজ। তাঁর দ্য ইনভেনশন অব জুয়িশ পিপল বইটি বেশ কয়েক মাস ইসরায়েলে বেস্ট সেলার ছিল। তিনি ইতিহাস, প্রত্নতাত্ত্বিক ও নৃতাত্ত্বিক প্রমাণের জোরে দাবি করেছেন, ৭০ খ্রিষ্টাব্দে ইহুদিদের জেরুজালেম থেকে বিতাড়নের ঘটনা অসত্য। তাঁর দাবি, আদি ইসরায়েলি হিব্রু জাতির বর্তমান বংশধর খোদ ফিলিস্তিনি মুসলিম ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়। মানে দাঁড়াল, ইউরোপীয় ইহুদিদের দিয়ে আরব ভূমিতে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার কোনো ঐতিহাসিক ও যৌক্তিক ভিত্তি নেই। এটা সম্পূর্ণতই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিজেতা পরাশক্তিদের ভূরাজনৈতিক প্রকল্প। ক্রমেই এই চিন্তার জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
এই চারটি কারণে ইসরায়েল নৈতিকভাবে আক্রান্ত বোধ করছে। অস্থিরতা পেয়ে বসছে এর নেতাদের। ইসরায়েলি শান্তিবাদী লেখক ইউরি আভনেরির ভাষায় ইসরায়েলিরা অস্থির এবং অপরিণামদর্শী আর আরবরা সহনশীল। উট আরবদের প্রিয় প্রাণী। উটের আছে কষ্ট সহ্যের ক্ষমতা এবং আরবদের আছে ধৈর্য এমনকি ভুল করার ব্যাপারেও। ২০১৪ সালের গাজা আগ্রাসন এবং তার আগের লেবাননে হামলার ঘটনাতেই ইসরায়েলি নেতাদের অপরিণামদর্শিতা বোঝা গেছে। গাজায় তারা হারিয়েছে নৈতিক অবস্থান আর লেবাননে পরাজিত হয়েছে সামরিকভাবে।
ইতিহাস বড় লীলাময়। ইহুদি কিশোর ডেভিড ফিলিস্তিনি বীর গোলিয়াথকে হারিয়েছিলেন। আজ ফিলিস্তিনি কিশোর-তরুণেরাই যেন ডেভিডের ভূমিকায়। আর ইসরায়েল নিজেই আধুনিক গোলিয়াথ। ইতিহাসও তাদের বিপক্ষে। খ্রিষ্টধর্মের প্রবক্তা যিশুর জন্ম ফিলিস্তিনের বেথলেহেমে, এবং তিনি যে ভাষায় কথা বলতেন তা সে সময়কার ফিলিস্তিনি ও সিরীয়রাও বলত। এ কারণে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসসহ অনেকেই যিশুকেও একজন শহীদ ফিলিস্তিনি মনে করেন। গত বছর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পোপের সামনে দাবি করে বসেন যে যিশু হিব্রু ভাষায় কথা বলতেন। পোপ ফ্রান্সিস বাধা দিয়ে বলেন, ‘না, তাঁর ভাষা ছিল আর্মাইক’ (সূত্র: রয়টার্স, মে, ২৬, ২০১৪)। আর্মাইক ভাষার সঙ্গে আরবি ভাষার সম্পর্ক ভাইবোনের। নতুন পোপ যিশুর জন্মভূমিতে মানব-হত্যা দেখতে চান না।
মানবতার কান্না সবার আগে কবিই কাঁদেন। চার শ বছর আগে এক মহাকবি লিখেছিলেন, ‘আমি একজন ফিলিস্তিনি। একজন ফিলিস্তিনির কী চোখ নেই? নেই হাত, অঙ্গ, ভাব, অনুভূতি, বোধ ও ভালোবাসা? তুমি-আমি একই খাবার খাই, আহত হই একই আঘাতে। একই অসুখে আমরা ভুগি এবং সেরে উঠি একই ওষুধে। ইহুদিদের মতোই একই শীত ও গ্রীষ্ম আমাদেরও ওম দেয় আর ঠান্ডায় কাঁপায়। তুমি যদি খোঁচাও, আমার কি রক্ত ঝরে না? তুমি যদি কৌতুক করো, আমি কি হাসি না? এবং তুমি যদি অন্যায় করো, আমি কি তার প্রতিশোধ নেব না? সবকিছুতেই যদি আমরা তোমাদের মতোই হই, তাহলে তুমি যা আমার প্রতি করছ; আমিও তা-ই করব। হয়তো তা হবে তোমার থেকেও কঠিন, কারণ আমি তো তোমার কাছ থেকেই শিখছি!’
কথাগুলো আসলে শেক্সপিয়ারের মার্চেন্ট অব ভেনিস নাটকের ইহুদি চরিত্র শাইলকের সংলাপ। এর ‘ইহুদি’ শব্দের জায়গায় ‘ফিলিস্তিনি’ শব্দ বসালেই তা হয়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের ফরিয়াদ। ইসরায়েল এক হাতলহীন তলোয়ার, একে নিরস্ত করা সমগ্র মানবতার দায়। মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির প্রধান শর্ত আরব-ইসরায়েল মৈত্রী। তার জন্য ওই এলাকায় আরাফাতের মতো, ম্যান্ডেলার মতো নেতা চাই। সেই নেতা আসবেন জনগণের ভেতর থেকে। কেননা, অমানবিকতার বোঝাটা জনগণকেই সবচেয়ে বেশি সইতে হয়।
সিরীয় যুদ্ধ এবং তৃতীয় ইন্তিফাদা ঘনিয়ে ওঠার মুখে মধ্যপ্রাচ্য আবার এসে দাঁড়িয়েছে শূন্য সময়ের শূন্য ডিগ্রিতে।
ফারুক ওয়াসিফ: সাংবাদিক ও লেখক।
 20.10.15 the daily prothom alo

3
ক্যানসার মোকাবিলায় চিকিৎসকদের সহায়তার জন্য এবার ভারতে তৈরি হয়েছে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। এই মোবাইল অ্যাপে ৬৫ রকমের ক্যানসার ও তার চিকিৎসার নির্দেশনা রয়েছে। ফলে গ্রামগঞ্জে কর্মরত চিকিৎসকেরাও ক্যানসার রোগ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে ও রোগীদের পরামর্শ দিতে পারবেন। ক্যানসারের চিকিৎসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের একটি যুগ্ম কমিটির সঙ্গে ভারতের মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের ক্যানসার চিকিৎসকদের যৌথ উদ্যোগে টিএনএম অ্যাপটি তৈরি করেছে। টাটার হাসপাতালে ক্যানসারের চিকিৎসকদের হাতে ‘হ্যান্ডবুক’ হিসেবে তুলে দেওয়া হবে এই অ্যাপটি।
হাসপাতালের পরিচালক রাজেন্দ্র বাদউই সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘প্রায় ৬৫ রকমের ক্যানসার, তার উপসর্গ, রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে এই অ্যাপ থেকে। ফলে ক্যানসার-সম্পর্কিত রোগনির্ণয় ও নিরাময়ে চিকিৎসকদের সাহায্য করবে এই অ্যাপটি।’ এটি একবার নামিয়ে নিলে ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই ব্যবহার করা যাবে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের চিকিৎসকেরা এই অ্যাপ সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে ডাউনলোড করতে পারবেন। আপাতত ১৯টি দেশে প্রকল্পটি কার্যকর করা হবে। শুধু চিকিৎসকই নন, এই অ্যাপ রোগী আর তাঁর আত্মীয়দের ক্যানসার সম্পর্কে জানাতে সাহায্য করবে। তিনি আরও বলেছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এই অ্যাপের কার্যক্রম শুরু করা হবে।

20.10.15 the daily prothom alo

4
লা জবাব। আর প্রতিবছরই তার নিত্যনতুন গুণাগুণ জানছে বিশ্ব। কিন্তু বিশ্বের ইলিশপিয়াসীদের মন খারাপ করার মতো সংবাদও আছে। ইলিশ আছে—বিশ্বের এমন ১১টি দেশের মধ্যে ১০টিতেই ইলিশের উৎপাদন কমছে। একমাত্র বাংলাদেশেই ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে।

মাছবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরতীরের ভারত-মিয়ানমার, আরব সাগরতীরের বাহরাইন-কুয়েত, পশ্চিম মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরের পাশে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায়, মেকং অববাহিকার ভিয়েতনাম-কম্বোডিয়া, চীন সাগরের পাশে চীন ও থাইল্যান্ডে ইলিশের বিচরণ কমছে। আর বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন প্রতিবছর ৮ থেকে ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে।
ওয়ার্ল্ড ফিশের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বিশ্বের মোট ইলিশের ৬৫ শতাংশ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। ভারতে ১৫ শতাংশ, মিয়ানমারে ১০ শতাংশ, আরব সাগর তীরবর্তী দেশগুলো এবং প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগর তীরবর্তী দেশগুলোতে বাকি ইলিশ ধরা পড়ে।
বাংলাদেশে নদী ও সাগরে কেন ইলিশ বাড়ছে, তা জানতে ইলিশ আছে—এমন দেশগুলোর আগ্রহ বাড়ছে। বাংলাদেশ ২০০২ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে ইলিশের ডিম পাড়া ও বিচরণের স্থানগুলো চিহ্নিত করেছে। সেখানে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ, বছরের আট মাস জাটকা ধরা নিষিদ্ধ করেছে। ডিম পাড়ার ১৫ দিন সব ধরনের ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করেছে। ইলিশ ধরেন—এমন ২ লাখ ২৪ হাজার জেলেকে পরিচয়পত্র দিয়ে তাঁদের বছরে তিন মাস সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে এসেছে।

বাংলাদেশে ইলিশের আহরণ প্রতিবছর ৮ থেকে ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় তো বটেই, বিশ্বের প্রভাবশালী গবেষণা সংস্থাগুলো বাংলাদেশের ইলিশ রক্ষার এই কৌশল খুবই কার্যকর হয়েছে চিহ্নিত করেছে। এসব উদ্যোগের ফল হিসেবে গত এক যুগে বাংলাদেশে ইলিশ ধরার পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে বলে মনে করছে তারা। মৎস্য অধিদপ্তর বলছে, এসব উদ্যোগের ফল হিসেবে এ বছর চার লাখ টন হবে।

রাজশাহীর পদ্মায় ৫০ বছর পর ইলিশ
বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়ার এই কৌশল অনুসরণ করছে ভারত ও মিয়ানমার। ইলিশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ আছে বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী দেশগুলোতে। এ জন্য বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারকে একই সময়ে মা ইলিশ ও জাটকা ইলিশ ধরা বন্ধ রাখতে হবে। এতে শুধু বাংলাদেশ নয়, এই অঞ্চলের সব দেশে ইলিশের সংখ্যা বাড়বে।
বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির কৌশল বুঝতে সুদূর কুয়েত ও বাহরাইনের মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। বাংলাদেশের মতোই ওই দেশগুলো ইলিশের নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র চিহ্নিত করে ডিম পাড়া ও বাচ্চা বড় হওয়ার সময় মাছ ধরা বন্ধ রাখার উদ্যোগ নিয়েছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও ইলিশ গবেষক সুগত হাজরা এ ব্যাপারে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের পদ্মা ও মেঘনার মিষ্টি পানির প্রবাহ এখনো ভালো থাকায় এবং প্রয়োজনীয় খাবার থাকায় ইলিশের সংখ্যা বাড়ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ২০০৫ সাল থেকে অভয়ারণ্য করে ইলিশের ডিম পাড়ার স্থান করে দিয়েছে এবং জাটকা বড় হতে দিচ্ছে।
ভারতের মৎস্য বিভাগের হিসাবে, ২০১১ সালে সে দেশে ইলিশ ধরা পড়েছিল ৮০ হাজার টন। ২০১৪ সালে তা নেমে এসেছে ১৪ হাজার টনে। আর বাংলাদেশে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ও বঙ্গোপসাগরে ২০০৯-১০-এ ইলিশ ধরা পড়েছিল দুই লাখ টন। ২০১৪ সালে তা বেড়ে হয় ৩ লাখ ৮৫ হাজার টন। এ বছর জেলেদের জালে চার লাখ টন ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা করছে মৎস্য অধিদপ্তর।
২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল থেকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার বাংলাদেশের পথ অনুসরণ করে ভাগীরথী (গঙ্গা) নদীর ফারাক্কা থেকে মোহনা পর্যন্ত অংশের তিনটি এলাকাকে ইলিশের নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করেছে। এগুলো হলো সুন্দরবনের পাশে গদখালী, এর কিছু দূরে কাটোয়া থেকে হুগলি ঘাট এবং ফারাক্কার পাশে লালবাগ। এসব এলাকায় ১৫ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করেছে পশ্চিমবঙ্গ।
সুগত হাজরা বলেন, পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের দেখাদেখি তিনটি এলাকাকে নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করলেও সেখানে মা ইলিশ ও ছোট ইলিশ ধরা বন্ধ করতে পারেনি। জেলেদের বেশির ভাগই দরিদ্র হওয়ায় বাংলাদেশ তাঁদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, যা পশ্চিমবঙ্গ এখনো পারেনি, ফলে এখানে ইলিশের সংখ্যা বাড়ছে না।
চাঁদপুরের মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের ইলিশ গবেষক আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ইলিশ কোনো রাষ্ট্রের সীমানা মানে না। প্রতিদিন এরা ৭০-৭৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে। ফলে বাংলাদেশ এককভাবে ডিম পাড়ার মৌসুমে ইলিশ না ধরলেও অন্য দেশগুলো যদি একই উদ্যোগ না নেয়, তাহলে ইলিশের সংখ্যা আশানুরূপ বাড়বে না। বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমার যৌথভাবে যদি একই সময়ে ইলিশ ধরা বন্ধ রাখে, তাহলে এই তিনটি দেশেই ইলিশের সংখ্যা বাড়বে। যার সুবিধা এই তিন দেশের মানুষই পাবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ইলিশের অবদান ১ শতাংশ। দেশের মোট মাছের ১১ শতাংশ উৎপাদন আসে ইলিশ থেকে। পাঁচ লাখ জেলে সরাসরি ইলিশ ধরার সঙ্গে জড়িত। আরও ২০ লাখ লোকের জীবিকার প্রধান উৎস ইলিশ।
মাছ গবেষণাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশের মতে, ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ইরানসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশের উপকূলে ইলিশ ধরা পড়ে। তবে ডিম ছাড়ার জন্য তারা বেছে নিয়েছে গঙ্গা অববাহিকা বাংলাদেশকে। বর্ষায় এ দেশের নদীগুলো মা ইলিশে ভরে ওঠে ডিম ছাড়ার জন্য। মোহনা থেকে নদীর ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার উজানে ও উপকূল থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত সমুদ্রে ইলিশ পাওয়া যায়। দিনে ৭০ থেকে ৭৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ায় ইলিশ সাগর থেকে যতই নদীর মিষ্টি পানির দিকে আসে, ততই এর শরীর থেকে লবণ কমে যায়, স্বাদ বাড়ে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক আবদুল ওয়াহাব ইলিশের নতুন গুণ আবিষ্কৃত হওয়ার দিকে আলোকপাত করে বলেন, ইলিশ মাছের মধ্যে ওমেগা-৩ নামে একধরনের তেল আছে, তা হৃদ্রোগসহ বেশ কিছু রোগের ওষুধ হিসেবে বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকটি মাছে এই তেল রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইলিশ মাছের স্যুপ অনেক দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে বিশ্বের সব দেশই ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে চাইছে। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
প্রতি বছর উৎপাদন বাড়া সত্ত্বেও দেশের বাজারে ইলিশের দাম বেশি, এ অভিযোগ আছে। তবে ইলিশ মাছের জাতীয় সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক জাহিদ হাবিব এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, পৃথিবীর যেকোনো দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও সুস্বাদু খাবারের দাম একটু বেশিই থাকে। ইলিশ আমাদের জন্য সেরকম সুস্বাদু খাবার, তবে সেই তুলনায় এর দাম বেশি বলা যাবে না। অন্যান্য আকর্ষণীয় খাবারের সঙ্গে তুলনা করলে ইলিশের দাম গত চার-পাঁচ ধরে স্থিতিশীল আছে। উৎপাদন যদি না বাড়ত তাহলে ইলিশ শুধুমাত্র ধনীদের শখের খাবার হিসেবে থাকত। আজকে মধ্য ও উচ্চ মধ্যবিত্তরা ইলিশের স্বাদ পাচ্ছেন উৎপাদন বাড়ার কারণেই।

ইফতেখার মাহমুদ |  অক্টোবর ২০, ২০১৫ the daily prothom alo

5
১৯০৫ সালে বাংলাকে ভাগ করে পূর্ববঙ্গ ও আসাম নিয়ে একটি আলাদা ‘প্রভিন্স’ গঠন করেছিলেন ইংরেজ সরকার। কিন্তু বাংলা ফুঁসে উঠেছিল এর বিরুদ্ধে, বিশেষ করে কোলকাতা। নবগঠিত প্রভিন্সের প্রশাসনিক অবকাঠামো হিসেবে ঢাকায় অনেক স্থাপনা তৈরি করা হয়। লাটসাহেবের বাসভবন এবং আমলাদের বাড়ি এর অন্যতম।

১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়ে গেলে ইংরেজ সরকার লক্ষ্য করেন যে, পূর্ববঙ্গের মুসলিম বাঙালিদের মধ্যে এটি গভীর মনোবেদনার কারণ হয়েছে। এরই ক্ষতিপূরণ হিসেবে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়, যার নাম দেওয়া হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’। কোলকাতার বুদ্ধিজীবীদের বিবিধ উষ্মামূলক মন্তব্য ছিল এ রকম: ওখানে অধিকাংশ মানুষ চাষবাস করে খায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে কে পড়বে? কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক নিয়ন্ত্রণ এলাকা কমে যাওয়ায়ও তাদের ছিল আপত্তি। সে সব নিষ্পত্তি করে ইংরেজ সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে।

লক্ষ্য করার বিষয় হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি প্রদেশ না পাওয়ার ক্ষতিপূরণ হিসেবে। আর এর মাধ্যমেই এর আপতিক গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। নতুন প্রভিন্স পরিচালনার জন্য যত রকম পুরকর্ম করা হয়েছিল– লাট সাহেবের বাসভবন থেকে মন্ত্রী-আমলাদের বাড়ি– সবই দেওয়া হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন দেশ পাওয়ার আগেই এই অঞ্চলের মানুষ এ বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছে। আর এই বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র করেই নিজেদের জীবনমান ও ভাগ্যোন্নয়নের স্বপ্ন দেখেছে পূর্ববঙ্গের মানুষ। এখানে পড়াশুনা করেই পূর্ববঙ্গের বাঙালিদের মধ্যে একটি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ ঘটে। এই শ্রেণি তাদের অধিকারের চেতনায় শাণিত হয়ে শ্রমিক, কৃষককে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তান থেকে পৃথক হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সফল হয়।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তাঁর পূর্ববঙ্গ-কেন্দ্রিক রাজনীতি শুরু হয় এটি কেন্দ্র করেই। এখানকার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তিনি বহিষ্কৃত হন। অন্য বন্ধুরা মুচলেকা দিয়ে বেরিয়ে এলেও তিনি আসেননি। কিন্তু নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর প্রতি বঙ্গবন্ধুর অটুট শ্রদ্ধা ছিল। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩’– যে আইনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন এবং শিক্ষকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়– তাও তাঁরই সদিচ্ছার প্রতিফলন। অনুরূপ আইন চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রণয়ন করেছেন তিনি।

পাকিস্তান আমলে শিক্ষকদের উপর প্রচলিত নানা ধরনের সরকারি চাপের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বাধীন চিন্তার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই এটা করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি, শিক্ষকদের যে কোনো বৈধ সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ও মতপ্রকাশের অধিকারও দেওয়া হয় এর আওতায়। [ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩, ধারা ৫৬ (২); রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট, ১৯৭৩, ধারা ৫৫ (২); চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট, ১৯৭৩, ধারা ৫৫(২); জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট, ১৯৭৩ ধারা ৪৪(২)]

শুরুতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খ্যাতি পায় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে, তার স্থাপত্য সৌন্দর্য ও আবাসিক চরিত্রের জন্য। জ্ঞানের মাত্রায় এটি কখনও অক্সফোর্ডের সমতুল্য ছিল না। সত্যেন বসু নামে কোলকাতার এক উজ্জ্বল তরুণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক তাঁর অসাধারণ তাত্ত্বিক কাজের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে তুলে এনেছিলেন বিশ্ব-বিজ্ঞানের আঙিনায়।

১৯২১ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানপীঠ হিসেবে সমাজে অবদান রেখেছে। শিক্ষকদের পাণ্ডিত্যপূর্ণ কাজ, ছাত্রদের নিবেদিতপ্রাণ জ্ঞানচর্চা বিশ্ববিদ্যালয়কে সমাজের চোখে একটি বাতিঘরের জায়গায় অধিষ্ঠিত করে রেখেছিল। সত্যেন বসু, কাজী মোতাহার হোসেন, রমেশ চন্দ্র মজুমদার, মোহিতলাল মজুমদার, হরিদাস ভট্টাচার্য, ড. মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, আবদুর রাজ্জাক, আবদুল্লাহ ফারুক, আবু মহামেদ হবিবুল্লাহ, মমতাজুর রহমান তরফদার, মোজাফফর আহম্মদ চৌধুরী, আহমদ শরীফ, এ এম হারুন উর রশিদ, কামাল উদ্দিন, রঙ্গলাল সেন, খোন্দকার মোকাররম হোসেন, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, খান সারয়ার মুর্শিদ, আনিসুজ্জামান হয়ে এ এক দীর্ঘ তালিকা।

এছাড়া ষাটের দশকে জাতি পেয়েছে একদল উজ্জ্বল ছাত্র-নেতৃত্ব, যাঁরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণের ভ্যানগার্ড। পূর্ব বাংলার মানুষের বঞ্চিত হওয়ার ‘দুই অর্থনীতি তত্ব’এর নির্মাতাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই প্রসঙ্গে সর্বাগ্রে নাম করতে হয় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমানের।

এছাড়া ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৭০এ প্রতিষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল অবদান রয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণে– সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের ইতিহাস একদিকে রাখলেও। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোশারফ হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আখলাকুর রহমানের তাত্বিক অবদান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের উপাচার্য আবু সায়ীদ চৌধুরী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ আর মল্লিকের সাংগঠনিক অবদান অসাধারণ। আর শহীদ ছাত্র-শিক্ষকদের অবদান তো ছিলই।

একাত্তরের পর গোটা সত্তর দশক জুড়েই মেধা ও ব্যক্তিত্বে সমুজ্জ্বল উপাচার্য এবং পণ্ডিত শিক্ষকদের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানচর্চা অব্যাহত ছিল। কিন্তু আশির দশকে এরশাদের স্বৈরশাসনের সময় অযাচিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে একাডেমিক শৃঙ্খলা নষ্ট করা হয়। যার ফলে তৈরি হয় সেশন জট এবং এর রেশ আজকের দিন পর্যন্ত চলছে।

পাশাপাশি সামরিক এবং বেসামরিক আমলাতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে মেতে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয় ‘ডাকাতদের পাড়া’, ছাত্ররা ‘সন্ত্রাসে লিপ্ত’, শিক্ষকরা ‘রাজনীতি করেন’, বিশ্ববিদ্যালয় ‘রাষ্ট্রের ভিতর আরেকটি রাষ্ট্র’– এ সব সমালোচনা দাঁড় করানো হয়। মূল উদ্দেশ্য, শিক্ষক এবং ছাত্রদের সামরিক শাসনবিরোধী অবস্থান পরিবর্তনের জন্য মানসিক চাপ তৈরি করা। আজকের দিন পর্যন্ত বেসামরিক আমলাতন্ত্র এই প্রচারণা চালাচ্ছে।

আসলে অত্যন্ত সীমিত সম্পদ ও ব্যক্তিগতভাবে চাকরির অনেক কম সুবিধাদি সত্বেও সাধারণ শিক্ষকরা তাদের একাডেমিক কাজ করে যাচ্ছেন। যদি গ্র্যাজুয়েটদের সংখ্যাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটপুট বলে মনে করা হয়, তাহলে এত কম সম্পদের ব্যবহার করে এত বেশি সংখ্যক গ্র্যাজুয়েট তৈরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রাষ্ট্রের সবচেয়ে দক্ষ প্রতিষ্ঠান বলতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল সাধারণ শিক্ষক যে বেতন পান তা জীবনধারণের সাধারণ মানের জন্যও যথেষ্ট নয়। একটি চাকরি, যেখানে আর কোনো লজিস্টিক সাপোর্ট নেই, পর্যাপ্ত আবাসন ও পরিবহন সুবিধা নেই, ব্যক্তিগত স্টাফ না থাকার কারণে প্রয়োজনীয় ফটোকপি থেকে শুরু করে একটি চিঠিও নিজ হাতে নিকটবর্তী পোস্ট অফিসে দিয়ে আসতে হয়, সেই চাকরিতে বেতন যদি সাধারণ চাকুরেদের মতো হয় তাহলে জ্ঞানের মতো উচ্চতর সেবা আশা করা বাতুলতা। সেখানে গবেষণা তো সুদূরপরাহত।

যারা মনে করছেন শিক্ষকরা নিজেদের মতো সময়ে অফিসে আসেন, তাদের মনে রাখা উচিত যে, শিক্ষকতা ফাইল-ওয়ার্ক নয়। একজন শিক্ষক নিজেই নির্ধারণ করেন তাঁর লেকচারের মান কী হবে। সে জন্য প্রয়োজনীয় পড়াশুনা এবং ক্লাসের প্রস্তুতি তিনি অন্তত আগের রাত থেকেই করেন। তাহলে সেই সময়টা হিসাবের বাইরে থাকবে?

শিক্ষকতার পেশা আর দশটা পেশার মতো ভাবলে চলবে না। এখানে শিক্ষক নিজেই নিজেকে কাজ দেন, নিজেই সেটি সঠিকভাবে করার জন্য নিজের উপর চাপ অব্যাহত রাখেন। এটি নিজের কাছে দায়বদ্ধ একটি পেশা। যে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁর ছাত্ররা তাঁকে আজীবন মনে রাখে। একজন শিক্ষকের কাজে গোটা জাতি উপকৃত হয়। তাঁর দেওয়া জ্ঞান প্রজন্মের পর প্রজন্ম প্রবাহিত হয়। অনেক সময় জগতজোড়া খ্যাতিপ্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকে গোটা জাতির।

শিক্ষকতা পেশা হিসেবে নেওয়ার জন্য একজন মানুষের বিশেষ ধরনের মনের গড়ন চাই, যা তৈরি হয় সারাজীবন। ‘বিসিএস পছন্দক্রমের শীর্ষে ছিল ফরেন সার্ভিস; পরে নিয়োগ পেলাম আনসারে’– এই রকম চাকরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা নয়। যারা শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা থাকা সত্বেও অন্য চাকরি করছেন এটা তাদের রুচি ও সমস্যা। শিক্ষককে সমালোচনা করার অধিকার তাদের রয়েছে বলে মনে করি না।

সব শিক্ষক একই রকম মানসম্মত জ্ঞানচর্চা করেন, সবার মেধা এবং জ্ঞান-উদ্যোগ সমান, বিষয়টি তা নয়। যে কোনো প্রতিষ্ঠানের ভেতরেই এ ধরনের অসন্তুষ্টি প্রকাশের মতো ব্যতিক্রমী কর্মী পাওয়া যাবে। কিন্তু উচ্চতর জ্ঞান-কেন্দ্র হিসেবে রাষ্ট্র যদি অবকাঠামো, গবেষণা ও বেতন খাতে প্রয়োজনীয় প্রণোদনা তৈরি না করে, তাহলে উচ্চতর জ্ঞানচর্চা ব্যাহত হবে মারাত্মকভাবে এবং হচ্ছেও।

পাকিস্তান আমলে সঠিক প্রণোদনার অভাবে অনেক মেধাবী লোকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষা দিয়ে সিএসপিএর সদস্য হয়ে সরকারি চাকরি করেছেন। এমনকি বেতন বেশি বলে অনেকে সরকারি কলেজের চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। অনেক সাধারণ সরকারি চাকরিও আকর্ষণীয় লেগেছে অনেকের কাছে। এতে জ্ঞানচর্চা ব্যাহত হয়েছে। কবি জসীম উদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একটি সাধারণ নন-ক্যাডার চাকরি করেছেন সারাজীবন।

বোঝা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি সে যুগেও পরিবার চালানোর জন্য কতটা অসুবিধাজনক ছিল। আর সিএসপিদের তালিকা তো অনেক দীর্ঘ, যারা কিছুদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েই এই চাকরি ত্যাগ করেছিলেন।

এত সব অসুবিধার মধ্যেও যারা নিবেদিতপ্রাণ হয়ে জ্ঞানচর্চা করেছেন, জ্ঞান বিতরণ করেছেন, তাদেরকে সমাজ ও রাষ্ট্রের দিক থেকে যথোপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে বলে মনে করি না। সরকারি হাসপাতালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিভাগীয় চেয়ারম্যান এবং সিনিয়র অধ্যাপকের জন্য একটি সিট পাওয়া যায়নি তা নিজ চোখে দেখেছি। অথচ সরকারি কর্মচারি পরিচয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের উপ-রেজিস্ট্রারকে আলাদা কেবিনে থাকতে দেখেছি।

সরকারি দপ্তরের একজন সাধারণ কর্মকর্তা যেখানে অফিসিয়াল পাসপোর্ট ব্যবহার করেন, সেখানে বিশেষ প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকারি আমলাতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদেরকে সাধারণ নাগরিকদের মতো সবুজ পাসপোর্ট ব্যবহারে বাধ্য করেছে। দূতাবাসের লাইনে দাঁড়ানো এবং অন্যান্য কাগজপত্র জমা দিতে গিয়ে বাইরে ওয়ার্কশপ-কনফারেন্সে যাওয়া বিঘ্নিত হয়।

অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের লাশ দীর্ঘদিন জার্মানির মিউনিখে একটি মরচুয়ারিতে পড়ে ছিল। একজন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকের মরদেহ ফেরত আনার জন্য সরকারের দিক থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শিক্ষক সমিতি ও পরিবারের ব্যবস্থাপনায় তাঁর লাশ ফেরত আনা হয়।

এখন বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে সরকারি চাকরিতে যাওয়ার প্রবণতা না থাকলেও, বিদেশে গিয়ে ফিরে না আসার প্রবণতা বেড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জাতি।

১৯২১ সাল থেকে ১৯৮০ দশক পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা বেতন নিয়ে কোনো আন্দোলন করেননি। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পি জে হার্টগকে বিশেষ বেতনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য পদে নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রফেসর আবদুর রাজ্জাকের বয়ানে পাওয়া যায় যে, কাজী মোতাহার হোসেনের মতো পণ্ডিত ব্যক্তি দুশ টাকা বেতনে পঁচিশ বছর চাকরি করেছিলেন। বেতন বাড়েনি এক টাকাও।

আশির দশকে এরশাদের স্বৈরশাসনের সময় শিক্ষকরা প্রথম বেতন বৃদ্ধির আন্দোলন করেন, যা সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের চাপে সফল হয়নি। বেতন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জাতীয়ভিত্তিক বড় আন্দোলন হয়েছিল ১৯৮৬-৮৭ সালে। শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতৃত্বেই এটি হচ্ছিল। তখন ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কে এম সাদউদ্দীন এবং মহাসচিব ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মইনুল ইসলাম। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনু মুহাম্মদ। এই আন্দোলন সম্পর্কে অধ্যাপক মইনুল ইসলাম লিখেছেন:

“ওই আন্দোলনের সময় আমরা ৪২ দিন শিক্ষক ধর্মঘট চালাই এবং তদানীন্তন এরশাদ সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পাঁচটি সভায় আলাপ-আলোচনা করি। ফেডারেশনের একটি প্রতিনিধিদল খোদ রাষ্ট্রপতি এরশাদের সঙ্গেও বৈঠকে মিলিত হয়েছিল। এরশাদ নীতিগতভাবে আলাদা বেতন স্কেল দিতে তাঁর আপত্তি নেই বলে ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, সিভিল আমলাতন্ত্রের আপত্তি রয়েছে আলাদা স্কেলের ব্যাপারে। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আলাদা বেতন স্কেল দেওয়া হলে চাকরির প্রারম্ভিক স্তরে তুলনামূলকভাবে একই শিক্ষাগত যোগ্যতা ও মেধার অধিকারী সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তারা নাকি নিজেদের বঞ্চিত মনে করবেন।..

আমাদের সঙ্গে আলোচনায় সরকারের প্রতিনিধিদলে যে চার জন জাঁদরেল আমলা নেতৃত্ব দিতেন, তাঁরা হলেন তদানীন্তন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুবুজ্জামান, অর্থ সচিব সাইদুজ্জামান, স্বরাষ্ট্র সচিব শামসুল হক চিশতি ও শিক্ষা সচিব আজহার আলী। ওই আলোচনায় প্রতিবেশি দেশগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন স্কেল থাকার বিষয়টি নজির হিসেবে আমরা নথিপত্রসহ উপস্থাপন করেছিলাম, যেখানে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার উদাহরণ আমাদের জন্য প্রযোজ্য হওয়ার ভালো যুক্তি রয়েছে। ভারতে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসরের সর্বোচ্চ বেতন দুই লাখ ভারতীয় রুপিরও বেশি।’’

১৯৮৬-৮৭এর এই আন্দোলন নিয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ লিখেছেন:

“এর আগে বেতন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জাতীয়ভিত্তিক বড় আন্দোলন হয়েছিল ১৯৮৬-৮৭ সালে। সামরিক স্বৈরতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি তখন বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার আন্দোলন বিস্তৃত হচ্ছিল। শিক্ষকদের আন্দোলনও তখন বেশ শক্তিশালী আকার নিয়েছিল। …

সে বছরই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের উদ্যোগে এ বিষয়ে একটি জাতীয় সেমিনার হয়েছিল। সেখানে উপস্থাপনের জন্য প্রবন্ধের কাজ করতে গিয়ে আমি দেখেছিলাম, শিক্ষকদের বেতন ১৯৭২ সালের তুলনায় আর্থিক পরিমাণে বেড়েছে, কিন্তু প্রকৃত আয় হয়ে গেছে তিন ভাগের এক ভাগ। আরও দেখেছি, সমাজে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মধ্যে সামাজিক অবস্থান যাঁর যত কম, প্রকৃত আয় হ্রাস তাঁর তত বেশি। …

আলোচনা হয়েছিল বটে, কিন্তু পরিষ্কার বোঝাই যাচ্ছিল সচিবেরা এ বিষয়ে কথা বলতে বা শুনতে খুবই অনিচ্ছুক, এরশাদ সরকারের লোক দেখানো কর্মসূচির অংশ হিসেবে তাঁরা আলোচনা করলেন, তাই তার কোনো অগ্রগতি হয়নি।…

গত প্রায় তিন দশকে বেতন নিয়ে আর সে রকম দাবিদাওয়া সংগঠিত হয়নি। এর মধ্যে নিয়মমাফিক একাধিক বেতন স্কেলে শিক্ষকদেরও বেতন কিছু বেড়েছে। কিন্তু প্রকৃত আয়ের ক্ষেত্রে বারবার অন্য অনেকের মতোই হোঁচট খেয়েছেন শিক্ষকেরাও।

কাঠমান্ডুতে এক সেমিনারে যোগ দিতে গিয়ে পাকিস্তান, ভারত ও নেপালের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তাঁরা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না বাংলাদেশের পাবলিক বা সর্বজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন এত নিচে; কোথাও তাঁদের তিন ভাগের এক ভাগ, কোথাও অর্ধেক।’’

শিক্ষকদের কম বেতন দেওয়া বিষয়ে যেসব খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করানো হয় তার একটি হল, আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংএ বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম অনেক নিচের দিকে। শিক্ষকদের বেশি বেতনের দাবি মেধাবীদের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করার জন্য। তাছাড়া যেহেতু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষকদের জন্য গাড়ি, পিয়ন ইত্যাকার লজিস্টিক সাপোর্ট নেই, তাই মোট বেতন বাড়িয়ে দিলে শিক্ষক নিজেই এ সব ব্যবস্থা করে নেবেন।

যে সব মানদণ্ডের ভিত্তিতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিং তালিকায় উঠে আসে এর মধ্যে সর্বাগ্রে রয়েছে গবেষণা। এ জন্য আলাদা অর্থ-বরাদ্দ দিতে হবে। শিক্ষককে যত বেশি বেতনই দেওয়া হোক না কেন, তাতে গবেষণা হবে না। এ যুগে গবেষণার আর্থিক ব্যয় অনেক বেশি, এমনকি সমাজবিদ্যা কিংবা মানববিদ্যার গবেষণাতেও; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিষয়ে তো অনুমেয়। যারা মনে করেন শুধু কাগজ কলম থাকলেই গবেষণা করা যায়, তাদের এ বিষয়ে ধারণা নেই। তবু, স্বল্প সুবিধার মধ্যেও শিক্ষকরা গবেষণা করে চলেছেন। আন্তর্জাতিক জার্নালে তাদের প্রকাশনা থাকছে।

উন্নত দেশগুলোতে গবেষণা যে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ই করে তা কিন্তু নয়। রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত বড় বড় গবেষণাগারেও অনেক ভালো গবেষণা হয়। যেমন, ভারতের CSIR, BARC, পাকিস্তানের AQ Khan Laboratories, PCSIR, অস্ট্রেলিয়ার CSIRO, যুক্তরাজ্যের National Physical Laboratory যুক্তরাষ্ট্রের NASA, Los Alamos National Laboratory ইত্যাদি। বাংলাদেশের একই ধরনের গবেষণাগার BAEC, BCSIR, BARC, BLRI, BRRI, এই সমস্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বাজেট দেখলেই বুঝা যায় সরকার গবেষণার অর্থ-বরাদ্দের বিষয়ে কতটা অনুদার। সেখানে বিজ্ঞানীদের বেতন-কাঠামোও সাধারণ চাকরিজীবীদের মতো।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নেতিবাচক সমালোচনার জোয়ালের নিচে রাখলে নিজেদের শাসন শিক্ষকদের সমালোচনামুক্ত রাখা যায়, এটা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলো ও তাদের বশংবদ আমলা-জোটের পুরনো কৌশল। শিক্ষকদের একাংশকে তখন কেনা যায় ধমক ও সামান্য সুবিধা দিয়ে। জনগণের করের পয়সায় আমলাতন্ত্রের উদরপূর্তি আর উন্নয়ন-উন্নয়ন খেলার নামে দলীয় ক্যাডার ও ব্যবসায়ীদের উদরপূর্তির সংস্কৃতি চলছে বহু দিন।

কিছুদিন আগেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের বেতন ছিল তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি বা ড্রাইভারের বেতনের সমান। স্বভাবতই একজন আমলা একজন প্রাথমিক শিক্ষককে তাঁর ড্রাইভারের চেয়ে বেশি সম্মান দেবেন না। একটি উন্নত সমাজের দিকে এটি কি একটি ভুল যাত্রা নয়?

যে ছেলেটি মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক হিসেবে খাটলে তাঁর পাঠানো ডলারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যাপ্ত রিজার্ভের অহংকারে সরকারগুলো ফেটে পড়ে, সেই ছেলেটির গ্রামের স্কুলের শিক্ষককে সরকার বেতন দিতে দ্বিধা করে। যে আমলারা নিজেদের কর্মদক্ষতার বয়ান গেয়ে সরকারের কাছ থেকে অধিক বেতন আদায় করে নিতে চান তাদের সম্পর্কে মূল্যায়ন করেছেন আমাদের আরেক সহকর্মী। তিনি সাবেক আমলা ড. আকবর আলী খানের Gresham’s Law Syndrome and Beyond: An Analysis of the Bangladesh Bureaucracy বইয়ের বরাতে লিখছেন:

“বিশ্ব ব্যাংক পৃথিবীর ২০৯ টি দেশের আমলাতন্ত্রকে তিন ভাগে ভাগ করেছে, যার মধ্যে প্রথমটি হল ‘খুবই কার্যকর আমলাতন্ত্র’ যার মধ্যে পড়েছে ৭০ টি দেশের আমলাতন্ত্র। দ্বিতীয়টি হল ‘মোটামুটি কার্যকর আমলাতন্ত্র’ যার মধ্যে পড়েছে বিশ্বের ৭১ টি দেশের আমলাতন্ত্র এবং শেষটি হল ‘অকার্যকর আমলাতন্ত্র’ যার মধ্যে পড়েছে ৬৮ টি দেশের আমলাতন্ত্র। এখানে বাংলাদেশের অবস্থান ‘অকার্যকর আমলাতন্ত্র’ ক্যাটাগরিতে এবং র‌্যাংকিং হল ১৬৮ (প্রাপ্ত নম্বর ১০০ তে ২০) এবং দক্ষিণ এশিয়ার র‌্যাংকিংএ বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের অবস্থান অন্য সব দেশের নিচে (গভর্নেন্স ম্যাটারস, ২০১২)।’’

ড. আকবর আলী খান লিখেছেন:

‘‘সরকারের কার্যকারিতার সূচক বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে খারাপ। সারা পৃথিবীতে মাত্র ৩৯টি দেশ বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ করেছে এবং বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিস দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল এবং গোটা পৃথিবীর নিকৃষ্টতমগুলোর একটি।’’

মনে রাখা জরুরি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা স্বউদ্যোগে নিজস্ব যোগাযোগের মাধ্যমে বদেশের অর্থ খরচ না করেই পিএইচডি বা উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে আসেন, অল্প কিছু কমনওয়েলথ বৃত্তির কথা বাদ দিলে। এতে উপকৃত হয় জাতি। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ছুটিকালীন পূর্ণবেতন প্রদানের বিধানও নেই। সরকারি আমলারা বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, অস্ট্রেলিয়ান এইড, এসব বৃত্তির মাধ্যমে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে যান পূর্ণ বেতনে। এদের বিরাট অংশেরই উচ্চতর ডিগ্রির জন্য ভর্তির যোগ্যতাও থাকে না।

অষ্টম বেতন স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদেরকে যেভাবে আগের প্রাপ্য বেতন থেকেও দুধাপ নিচে বেতন প্রস্তাব করা হয়েছে তা কোনোভাবেই তাদের মেধা, যোগ্যতা ও অবদানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, এটি চূড়ান্ত অপমানজনক। সিনিয়র সচিব ও কেবিনেট সচিবের পদ বিবেচনা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের পদের অবনমন ঘটেছে অন্তত চার ধাপ। কোনো পেশার মর্যাদা অবনমন মানে হচ্ছে সমাজে এটি অপ্রয়োজনীয় এমন বার্তা প্রদান। এই বার্তা গোটা সমাজের মূল্যবোধ, চেতনা ও অগ্রগতির দিক থেকে নেতিবাচক একটি বিষয়।

অর্থমন্ত্রী অধিক অধ্যাপকের সংখ্যা বিষয়ে যে অভিযোগ উত্থাপন করে শিক্ষকদের ‘দুর্নীতিবাজ’ বলেছেন তাও তথ্য-উপাত্তে প্রমাণিত হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ে ১৯৭০ জন শিক্ষকের মধ্যে অধ্যাপকের সংখ্যা ৬৮৯, অর্থাৎ ৩৫ শতাংশ। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক মাত্র দুজন। বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক মাত্র ১ জন করে। ওদিকে ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ও কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকের সংখ্যা মোট শিক্ষকের ৪৮ শতাংশ।

সচিবালয়ে অতিরিক্ত সংখ্যক যুগ্ম সচিব, উপ-সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে যে পরিস্থিতির তৈরি করা হয়েছে তাতে গোটা আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা সংকটাপন্ন। উপ-সচিবের ৮৩০ টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১২৯৪ জন। যুগ্ম সচিবের ৩৫০ পদের বিপরীতে ৯১৭ জন, অতিরিক্ত সচিবের ১২০ পদের বিপরীতে ৪২৯ এবং সচিবের ৬০ টি পদের বিপরীতে ৭২ জন রয়েছেন।

শিক্ষকদের সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ গোটা সমাজকেই বিষণ্ণ করবে, তৈরি করবে আস্থাহীনতার পরিবেশ। তাই বিষয়টির আশু মীমাংসা জরুরি।

জহিরুল হক মজুমদার: সহযোগী অধ্যাপক, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

6
কোনো শব্দ বা বাক্যের ছবি তুললে বা তুলে দিলে এখন তা অনুবাদ করে দিতে পারবে যান্ত্রিক অনুবাদ-সুবিধা গুগল ট্রান্সলেট। এই ‘ভিজ্যুয়াল’ অনুবাদ-সুবিধা এখন পাওয়া যাবে আরবি, ইংরেজি, পর্তুগিজ, জার্মানসহ ২০টি ভাষায়। বাংলা ভাষার জন্যও এ সুবিধা চালু হয়েছে। এ কাজটি করা যাবে আইফোন ও অ্যান্ড্রয়েড-চালিত যন্ত্রে ‘গুগল ট্রান্সলেট’ অ্যাপ ব্যবহার করে। গুগল জানিয়েছে, অনুবাদের ক্ষেত্রটি নিয়ে গুগল অনেক দিন ধরে কাজ করছে। নানা ভাষার অনুবাদের বিষয়টিও সহজ হয়ে গেছে।
গুগল ট্রান্সলেটের সফটওয়্যার প্রকৌশলী ওটাভিও গুড বলেন, আরবি ভাষার অনুবাদ কিংবা কাজ করাটা কারিগরিভাবে বেশ কষ্টসাধ্য। তাই সবার আগে এ ভাষার অনুবাদকে সহজ করার বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ শুরু করি। আর শুরুতে তাই এ ভাষার ভিজ্যুয়াল অনুবাদ-সুবিধাও চালু হলো।
গুগল ট্রান্সলেটে ভিজ্যুয়াল অনুবাদ চালুর পাশাপাশি নতুন মডেলের আইপ্যাডেও চালু হয়েছে স্প্লিট ভিউ-সুবিধা। এর মাধ্যমে একই সময়ে দুটি অ্যাপ পাশাপাশি ব্যবহার করা যাবে। গুগল ট্রান্সলেটের পণ্য বিভাগের প্রধান বারাক তুরভিস্কি বলেন, ‘আপনি যদি অনুবাদের সহায়তা নিয়ে কাউকে ই-মেইল বা বার্তা পাঠাতে চান, তা এখন একসঙ্গে করতে পারবেন।’ স্প্লিট ভিউ-সুবিধার মাধ্যমে একই সময়ে পাশাপাশি ই-মেইলের ইনবক্স ও গুগল ট্রান্সলেট অ্যাপ চালু রেখে কাজটি করা যাবে। অ্যান্ড্রয়েড-চালিত যন্ত্রেও সুবিধাটি চালু হয়েছে বলে জানান তিনি।

ভিজ্যুয়াল অনুবাদের জন্য গুগল ট্রান্সলেট অ্যাপটি খুলে ক্যামেরায় ক্লিক করতে হবে। ব্যবহারকারী যে শব্দ বা বাক্যটি অনুবাদ করতে চান, সেটির ছবি তুললেই পর্দায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেটির অনুবাদ দেখাবে। এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট-সংযোগ কিংবা মুঠোফোনের ইন্টারনেট ডেটা কোনোটিই লাগবে না।

গুগল ট্রান্সলেট ব্লগ
17.10.15 the daily prothom alo

7
দীর্ঘ পাঁচ বছর গোপনে আলাপ-আলোচনার পর আন্তপ্রশান্ত মহাসাগর সহযোগিতা চুক্তি (ট্রান্স পার্টনারশিপ প্যাক্ট, টিপিপি) চূড়ান্ত হলেও যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে-বাইরে এর বিরোধিতা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ১১টি দেশ এই চুক্তির মাধ্যমে তাদের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধির এক নতুন সহযোগিতা-কাঠামো নির্মাণে সম্মত হলেও এটি কার্যকর করতে অংশগ্রহণকারী ১২টি দেশের আইন পরিষদ কর্তৃক তা অনুমোদিত হতে হবে।
যাঁরা এই চুক্তির বিরোধী, তাঁরা বলছেন, এতে জাতীয় স্বার্থ উপেক্ষিত হবে এবং বহুজাতিক করপোরেশনগুলো বিপুলভাবে লাভবান হবে। বাংলাদেশের মতো যেসব রাষ্ট্র রপ্তানির বাজারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর কিছুটা নির্ভরশীল, সেসব দেশ এই চুক্তির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এই চুক্তির বিস্তারিত বিবরণ এখনো প্রকাশিত না হওয়ায় এ বিষয়ে বিতর্ক আরও বাড়ছে।
তবে সরকারিভাবে বলা হয়েছে, এই চুক্তির মূল লক্ষ্য চুক্তিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি। এ লক্ষ্যে প্রায় ১৮,০০০ ক্ষেত্রে শুল্ক প্রত্যাহার করার কথা। এর ফলে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি ও সেবা আদান-প্রদানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। চুক্তির প্রবক্তারা দাবি করেছেন, চুক্তিভুক্ত দেশগুলোর সাধারণ ভোক্তা আগের তুলনায় অধিক সস্তায় বিভিন্ন পণ্য কিনতে সক্ষম হবে। এ ছাড়া পুঁজি বিনিয়োগের সুযোগ বাড়বে এবং এক দেশ থেকে অন্য দেশে মুনাফা হস্তান্তর সহজতর হবে। একই সঙ্গে এই চুক্তির ফলে শ্রম আইন, পরিবেশ সংরক্ষণ, ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসা ও ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টির মালিকানা প্রশ্নে অভিন্ন মানদণ্ড প্রতিষ্ঠিত হবে।
বিশ্বের বৃহত্তম এই বাণিজ্যিক চুক্তির সদস্য যে ১২টি দেশ, তাদের সম্মিলিত মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি প্রায় ২৮ ট্রিলিয়ন ডলার, যা বিশ্বের জিডিপির ৪০ শতাংশ এবং বিশ্বের মোট বাণিজ্যের এক-তৃতীয়াংশ। বাংলাদেশ, ভারত বা দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশে আপাতত এই চুক্তির সদস্য নয়। চীনও এই চুক্তির বাইরে, যদিও বেইজিং ইঙ্গিত দিয়েছে, সে চুক্তিতে যোগ দিতে আগ্রহী।
যাঁরা এই চুক্তির বিরোধী, তাঁরা যুক্তি দেখিয়েছেন, এই চুক্তির ফলে বহুজাতিক করপোরেশনগুলো তাদের স্বার্থ রক্ষা হয়, এমন নানা শর্ত বিভিন্ন দেশের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে, যার ক্ষতিকর প্রভাব অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশগুলোর পক্ষে বহন করা কঠিন হবে। ‘বিনিয়োগকারী-রাষ্ট্র বিবাদ মীমাংসা’ (আইএসডিআর) এই নামে পরিচিত চুক্তিভুক্ত শর্ত অনুসারে কোনো দেশের জাতীয় আইনের কারণে তাদের মুনাফা ব্যাহত হলে কোনো বহুজাতিক সংস্থা সে দেশের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা ও মেক্সিকোর মধ্যে সম্পাদিত নাফটা উন্মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে অনুরূপ একটি ধারা অন্তর্ভুক্ত আছে, যা ব্যবহার করে একাধিক বহুজাতিক কোম্পানি ক্ষতিপূরণ আদায় করে নিয়েছে। ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে যেসব আইনকানুন বর্তমানে চালু আছে, এই চুক্তির মাধ্যমে তার অনেকগুলোর পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই চুক্তির কারণে ওষুধ প্রস্তুতকারক বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের উদ্ভাবিত ওষুধসামগ্রীর পেটেন্টের ওপর মালিকানা দীর্ঘায়িত করতে সক্ষম হবে। ফলে ক্যানসার ও অন্যান্য দুরারোগ্য ব্যাধির প্রতিষেধক সস্তা ‘জেনেরিক’ ওষুধ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন কঠিন হয়ে পড়বে। এ ছাড়া কম্পিউটারের সাহায্যে কেউ যদি বহুজাতিক করপোরেশনগুলোর অবৈধ কার্যকলাপের কথা ফাঁস করে দেয়, তারা অপরাধী বলে সাব্যস্ত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইলেকট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, এই চুক্তির ফলে চুক্তিভুক্ত দেশগুলো বহুজাতিক করপোরেশনের স্বার্থে ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতা খর্ব করে আইন চালু করতে পারে।
বাংলাদেশ এই চুক্তির অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় তার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর ঋণাত্মক প্রভাব পড়তে পারে বলে যেসব বিশেষজ্ঞ অভিমত প্রকাশ করেছেন, তাঁরা বলছেন যে তৈরি পোশাক খাতে সে ইতিমধ্যেই ভিয়েতনামের কাছ থেকে তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। এই চুক্তিতে অন্তর্ভুক্তির সুবাদে ভিয়েতনামের তৈরি পোশাকশিল্প লাভবান হবে। বর্তমানে ভিয়েতনাম সাত বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পিটারসন ইনস্টিটিউটের এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, শুল্কের পরিমাণ যদি শূন্য শতাংশ হয়ে আসে, তাহলে আমেরিকায় ভিয়েতনামে তৈরি পোশাক বিক্রি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অবশ্য ডেনভার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ হায়দার আলী খান প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, টিপিপির ফলে বাংলাদেশ যে খুব বেকায়দায় পড়বে, সে ধারণা সত্য না-ও হতে পারে। বাংলাদেশের বাণিজ্য ইতিমধ্যে যথেষ্ট উন্মুক্ত, রপ্তানি ক্ষেত্রে শুল্কের পরিমাণও এখন তেমন বেশি নয়। তিনি মনে করেন, টিপিপির সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব এড়ানোর জন্য বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদন করতে পারে। সে লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপে নেওয়া হয়েছে। অধ্যাপক খান মনে করেন, এসব দ্বিপক্ষীয় চুক্তির প্রভাব অনেক দীর্ঘপ্রসারী হতে পারে। তাঁর মতে, টিপিপির ফলে বহুজাতিক সংস্থাগুলোর দাপট বহুগুণে বৃদ্ধি পেলেও এই চুক্তির বাইরে থাকায় বাংলাদেশের ওপর তার প্রভাব পড়বে না।
অধিকাংশ পর্যবেক্ষক একমত যে চুক্তিটির আসল লক্ষ্য চীন। বাণিজ্যিক ও সামরিকভাবে চীন এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যেভাবে তাদের প্রভাব দ্রুত সম্প্রসারিত করছে, যুক্তরাষ্ট্রকে তা উদ্বিগ্ন করেছে। রক্ষণশীল মার্কিন সাময়িকী ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট মন্তব্য করেছে, এই চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মোট অর্থনৈতিক সুফল তার জিডিপির মাত্র ০ দশমিক ৫ শতাংশ। সাময়িকীটি বলছে, ‘অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য নয়, আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে (চীনের বিপরীতে) নিজের আধিপত্য সংহত করাই’ এই চুক্তির আসল লক্ষ্য।
এই চুক্তির ফলে আমেরিকার সাধারণ শ্রমিকদের কোনো লাভ হবে না, বরং অনেক চাকরি বিদেশে চলে যাবে—এই যুক্তিতে আমেরিকার শ্রমিক ইউনিয়নগুলো এই চুক্তির বিরোধিতা করছে। ইতিপূর্বে মেক্সিকো ও কানাডার সঙ্গে সম্পাদিত নাফটা চুক্তির ফলে শুধু মার্কিন চাকরিই নয়, আমেরিকান পুঁজিও মেক্সিকো চলে গেছে। আমেরিকার বাইরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শ্রমিক ও মানবাধিকার সংস্থা চুক্তির বিরোধিতা করে আন্তর্জাতিক স্বাক্ষর অভিযান শুরু করেছে। এই চুক্তির ফলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে ও ইন্টারনেট স্বাধীনতা বিঘ্নিত হবে—এই অভিযোগে আমেরিকার কয়েক শ প্রযুক্তিনির্ভর কোম্পানিও তাদের বিরোধিতার কথা জানিয়েছে।
হিলারি ক্লিনটন ও একাধিক ডেমোক্রেটিক রাজনীতিক যেভাবে চুক্তিটি চূড়ান্ত গোপনীয়তার মধ্যে সম্পাদিত হয়েছে, তার সমালোচনা করেছেন। তবে রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত মার্কিন কংগ্রেসে এই চুক্তি অনুমোদন পাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

8
যাকে পাঠানোর কথা তাকে না পাঠিয়ে ভুল করে আরেকজনকে ই-মেইল করেছেন? অথবা আপনি চাইছেন আপনার পাঠানো বার্তা প্রাপক পড়ার পরই যেন মুছে যায়! আবার এও চাইতে পারেন, আপনার মেইলটি প্রাপকের কাছে যেন রক্ষিত না থাকে। এসব চাওয়া পূরণ করতে পারে, ডিমেইল নামের ছোট্ট একটি প্রোগ্রাম, আর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই।
ডিমেইল বা সেলফ-ডেস্ট্রাক্টিং ই-মেইল হলো গুগল ক্রোমের একটি এক্সটেনশন; যা ব্যবহার করে পাঠানো মেইলকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে ফেলা যাবে। এ জন্য কম্পিউটারে গুগল ক্রোম ইনস্টল করা থাকতে হবে। না থাকলে https://goo.gl/c3G9sa ঠিকানার ওয়েবসাইট থেকে নামিয়ে নিয়ে কম্পিউটারে ইনস্টল করে ব্রাউজার চালু করে নিন।
ডিমেইলের প্রোগ্রামটি ক্রোম ব্রাউজারে যুক্ত করতে https://goo.gl/Xczi6J ওয়েব ঠিকানায় যাবেন এবং এখানে থাকা Add to Chrome বোতাম চাপতে হবে। পপ-আপে একটি বার্তা আসবে Add extension বোতাম চাপলেই সেটি আপনার ব্রাউজারে যোগ হয়ে যাবে। অর্ধেক কাজ শেষ।
এবার আপনার ব্যবহৃত জিমেইল অ্যাকাউন্টটি ব্রাউজারে লগ-ইন করুন। Compose-এ ক্লিক করুন। এখানে নিচে Dmail বোতাম পাবেন। এর সঙ্গে On ও Off করার বোতামও আছে। তার পাশে Destroy-এর অধীনে থাকা মেনুতে ক্লিক করলে Never, 1 Hour, 1 Day, 1 Week নামের চারটি আলাদা অপশন পাওয়া যাবে। মেইল পাঠানোর আগে প্রয়োজনমতো যেকোনো একটি নির্বাচন করে রাখুন। মেইল পাঠানোর এক ঘণ্টা পর তা মুছে ফেলতে চাইলে Destroy এর 1 Hour নির্বাচন করে To তে প্রাপকের মেইল এবং সাবজেক্টে প্রয়োজনীয় বার্তা লিখে Send বোতাম চাপুন। এবার প্রাপক মেইল পাওয়ার এক ঘণ্টা পর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে যাবে।

রাকিবুল হাসান |  অক্টোবর ১৫, ২০১৫ the daily prothom alo

9
স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া কোনো কঠিন বিষয় নয়। এরজন্য দরকার ভালো অভ্যেস।

খেতে ভালোবাসেন, তবে স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হলে পছন্দের অনেক খাবারই এড়িয়ে চলতে হয়। আর তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা কঠিন হয়ে যায়। তবে কিছুটা নিয়ম করে প্রতিদিনের স্বাস্থ্যকর খাবারের একটি তালিকা তৈরি করে নিলে আর এতটা কঠিন মনে হবে না।

দৈনন্দিন জীবনে খাদ্যাভ্যাসে কিছুটা পরিবর্তন আনা গেলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে।

অভ্যাস নিয়ে প্রকাশিত হতে যা্ওয়া ‘বেটার দেন বিফোর’ বইয়ের লেখক গ্রেচেন রুবিন বলেন, “আমি ভালো অভ্যাসের গোপন রহস্য উপলব্ধি করতে পেরেছি। পুষ্টি বা অন্যকিছুর জন্য আগে নিজেকে জানতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কিছু মানুষ সব ধরনের লোভ ত্যাগ করে ভালো থাকে আবার অনেকেই পরিমিতভাবে ইচ্ছাপূরণের মাধ্যমে ভালো থাকে। কোন পদ্ধতি ভালো কাজ করবে তা নিজেকেই ভেবে বের করতে হবে।”

প্রকাশিত প্রতিবেদনে সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু অভ্যাসের বিষয় উল্লেখ করা হয়।

স্বাস্থ্যকর খাবারের মজুদ রাখা :

শহুরে জীবনে বাড়ির আশপাশে যা পাওয়া যায় তাই সাধারণত আমারা খেতে অভ্যস্ত। তাই বাজার থেকে টাটকা খাবার বাসায় মজুদ করে রাখা ভালো।

যেসব খাবার সহজে যোগাড় করা যায় সেগুলো সংগ্রহ করা উচিত। সেটা হতে পারে সবজি এবং ফলমূল।

এছাড়া সাদা রুটিরজাতীয় খাবারের চাইতে শস্য বা আঁশজাতীয় খাবার খা্ওয়ার অভ্যেস করতে হবে। এসব খাবারের মধ্যে আছে ওটমিল, বাদামি চাল, গমের রুটি।

প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য বাদাম ও বীজজাতীয় খাবার (ডাল) এবং ডিম কেনা যেতে পারে।

সোডা, বিস্কুট ও চিনি যুক্ত সিরিয়াল ঘরে না রাখাই ভালো।

বসে খাওয়া :

সাধারণত বসে খাবার খেলে, ধীরে খাওয়া হয়। এতে খাওয়ায় তৃপ্তি আসে। আর কম খেয়েও খা্ওয়া শেষ করা যায়।

তবে দাঁড়িয়ে খেলে প্রায় সময়ই মনে হয় খাবার খাচ্ছি না। যদি আইসক্রিমও খান তবে কোথাও বসে সেটা উপভোগ করুন। আর অনেকের সঙ্গে খাওয়া হলে এক ধরনের সামাজিকতাও রক্ষা হয়।

তরল ক্যালোরির পরিবর্তে পানি :

কোমল পানীয়তে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি থাকে। যা নিয়মিত পান করা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আবার ডায়েট কোমল পানীয় শরীরের কোনো কাজে আসে না। ওজনও কমায় না। তাই শুধু মিষ্টি স্বাদের জন্য এই ধরনের পানীয় পান করার কী দরকার!

এর চেয়ে সাধারণ পানি খাওয়ার অভ্যেস করুন। এতে শরীর আদ্র থাকবে। আর খাবার বা স্ন্যাক্স খাওয়ার আগে অন্তত এক গ্লাস পানি পান করা ভালো। এতে কম খেয়েও পেট ভরানো যাবে।

চিপসের পরিবর্তে ফল :

হাতের কাছে থাকলে ফল খাওয়া খুবই ভালো। তাই হালকা খাবার হিসেবে চিপসের পরিবর্তে ফল খা্ওয়ার অভ্যেস করা উচিত। তবে হাতের কাছে পাওয়া যায় বলে চিপস খাওয়া হয় বেশি। এজন্য ফল কোথায় ভালো পাওয়া যায় সেটা জেনে রাখা দরকার। পাশাপাশি বাসায় ফেরার পথে ফল কিনে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন।

বাড়ি থেকে বের হলে, অফিস যাওয়ার সময় একটি আপেল বা কমলা ব্যাগে নিয়ে বের হন। মধ্য বেলা বা বিকালের নাস্তায় ফল খাওয়ার অভ্যেস তৈরি হয়ে যাবে।

রঙিন শাকসবজি ও সালাদ :

সালাদ খাওয়ার অভ্যেস করুন। শরীর ক্যালরি ছাড়াই পুষ্টি পাবে। বিভিন্ন রঙের শাকসবজিতে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি রয়েছে। তাই রঙিন সবজি খাওয়া খুবই ভালো।

বাড়তি খাবার এড়িয়ে চলা

খাবারের সামনে বসে থাকা মানেই, খাবার বলবে ‘আমাকে খাও!’ খাবারের সামনে বসে থেকে এরকম ‘প্রলুব্ধ’ হওয়ার কি দরকার।

তাই বেঁচে যাওয়া খাবারের সামনে বসে না থেকে উঠে পড়ুন।

10
ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বা টিপিপি বলে একটি চুক্তি সই হয়েছে গত সোমবার। এই চুক্তি সইয়ের যেসব খবর বের হয়েছে, তাতে অনেক গণমাধ্যমে এই চুক্তিকে ‘বিতর্কিত’ বা ‘বহুল বিতর্কিত’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। চুক্তিটি সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য হচ্ছে, এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১২টি দেশ এই চুক্তিতে সই করেছে। এই দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ব্রুনাই দারুস সালাম, কানাডা, চিলি, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, পেরু, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম। চুক্তিটির ফলে এই দেশগুলো বিনা শুল্কে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য-সুবিধা পাবে। এই ১২টি দেশ বর্তমানে বিশ্ব বাণিজ্যের ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। এসব তথ্য থেকে আমরা চুক্তির গুরুত্ব সম্পর্কে অনেকটাই আঁচ-অনুমান করতে পারি।

আরও তথ্য হচ্ছে এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ, এই শিল্পে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রে তার তৈরি পোশাক পাঠানোর ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা, অর্থাৎ শুল্ক ছাড়া প্রবেশের সুযোগ পাবে। শুধু তা-ই নয়, টিপিপিতে ‘বাণিজ্য-সংক্রান্ত মেধা’ যুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশ বিপদে পড়বে। কারণ, এর ফলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে উন্নত প্রযুক্তি কিনতে হবে। বাংলাদেশের কৃষি খাত ও ওষুধশিল্প এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাণিজ্য ও অর্থনীতির এই দিকগুলো নিয়ে নিশ্চয়ই সামনে আরও বিশ্লেষণ হবে, আমাদের বিশেষজ্ঞদের মতামতও পাব। আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকেরা এসব বিবেচনায় নিয়েই হয়তো কৌশল নির্ধারণ করবেন।

সাধারণভাবে টিপিপি একটি বাণিজ্য বা ‘মুক্ত বাণিজ্য’ চুক্তি হিসেবে বিবেচিত। সে কারণেই এই চুক্তি সইয়ের খবরটি আমরা পড়েছি প্রথম আলোর বাণিজ্য পাতায়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকা এই চুক্তির ব্যাপারে মূল সমালোচনা হচ্ছে এটা আসলে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নয়। এর খসড়া নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। টিপিপির বিরোধিতা করে ‘এক্সপোজ দ্য টিপিপি’ নামে একটি বৈশ্বিক আন্দোলনও দাঁড়িয়ে গেছে। তারা বলে আসছে, টিপিপির খসড়ায় যে ২৯টি অধ্যায় রয়েছে, তার মধ্যে মাত্র পাঁচটি প্রথাগত বাণিজ্য-বিষয়ক। তারা বলছে, টিপিপি নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ওপর হামলা হিসেবে বিবেচিত হবে, কারণ চুক্তি সই করা দেশগুলোর দেশীয় আইনকে টিপিপির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। তারা বলে আসছে, টিপিপি কার্যকর হলে একটি পরিবারের গার্হস্থ্য বিষয়াদিকেও টিপিপির নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে—খাদ্যনিরাপত্তা, ইন্টারনেটের স্বাধীনতা, ওষুধের দাম, আর্থিক বিধিবিধানসহ আরও অনেক কিছু।

বড় আরও এক বিপদের তথ্য হচ্ছে টিপিপি ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, ইন্টারনেটের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে এক বড় হুমকি হিসেবে হাজির হতে যাচ্ছে। এই চুক্তি ইন্টারনেটের ওপর ‘সবচেয়ে বড় নজরদারির’ পরিস্থিতি তৈরি করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন এর সমালোচকেরা। আগেই বলেছি, এই আইনের খসড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা ও তর্ক-বিতর্ক চলেছে। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের সান্ড্রা ফুলটন বেশ আগেই এই আইনকে ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মেধাস্বত্বের ওপর নজিরবিহীন হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

টিপিপি অনুযায়ী, ইন্টারনেটে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রাহকদের ওপর সব ধরনের নজরদারির কাজে লাগানো যাবে। তারা গ্রাহকদের গতিবিধি খেয়াল রাখবে এবং তাদের ইন্টারনেটের সব ধরনের তথ্য সংরক্ষণ করতে পারবে। এমনকি কোনো গ্রাহককে তাঁর তৈরি কোনো কনটেন্ট (তথ্য উপাদান, যেকোনো ডকুমেন্ট, অডিও বা ভিডিও) ব্যবহার করা থেকেও তারা বিরত রাখতে পারবে। দরকার পড়লে গ্রাহককে ইন্টারনেট সংযোগ থেকে বঞ্চিতও রাখা যাবে। সহজভাবে বললে, এই চুক্তির ফলে মানুষ ইন্টারনেট বা নিজের কম্পিউটারে বসে কী করছে, তার ওপর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ করা আইনগতভাবে আরও সহজ হয়ে যাবে।

এই চুক্তির সূত্র ধরে সামনে নানা বিপদের কথা আলোচিত হচ্ছে। অনেকে বলছেন, ফেসবুক বা ইউটিউবের মতো মাধ্যমে দেওয়া কোনো কনটেন্ট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আপত্তি করলে তা তাদের তুলে নিতে হবে। কারণ, এসব প্রতিষ্ঠানের অফিস যুক্তরাষ্ট্রে। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে কার্যত ইন্টারনেটের মতো একটি বৈশ্বিক মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি জোরদারের বিষয়টিই প্রতিষ্ঠিত হবে।

এই চুক্তির সূত্র ধরে সামনে নানা বিপদের কথা আলোচিত হচ্ছে। অনেকে বলছেন, ফেসবুক বা ইউটিউবের মতো মাধ্যমে দেওয়া কোনো কনটেন্ট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আপত্তি করলে তা তাদের তুলে নিতে হবে। কারণ, এসব প্রতিষ্ঠানের অফিস যুক্তরাষ্ট্রে
কপিরাইটের বিষয়টি জোরালো হওয়ায় ব্যক্তিগত বা শিক্ষামূলক কোনো কাজে অন্য ভিডিও থেকে ক্লিপ নিয়ে তৈরি করা ভিডিও আইন লঙ্ঘনের আওতায় পড়বে। এবং তা অনলাইন থেকে সরিয়ে ফেলা যাবে। অথবা কপিরাইট করা উপাদান অবাণিজ্যিক কারণে ডাউনলোড করা হলেও তার জন্য বাধ্যতামূলক জরিমানা গুনতে হবে। ‘এক্সপোজ দ্য টিপিপি’-এর মতে এসব কারণে নতুন কিছু সৃষ্টি ও সৃষ্টিশীলতার বিনিময় কঠিন হয়ে পড়বে, সৃজনশীলতার পথে বড় বাধা তৈরি হবে। তারা বলছে, বৈধ কারণে ডিজিটাল লক ভাঙা হলেও (যেমন লিনাক্স ব্যবহার) ব্যবহারকারীদের বাধ্যতামূলকভাবে জরিমানা দিতে হবে। ডিজিটাল লকের কারণে অডিওযুক্ত বিষয়বস্তু ও ক্লোজড ক্যাপশনে প্রবেশ বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং সে কারণে অন্ধ ও বধির মানুষেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। টিপিপি অনুযায়ী কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানের তৈরি করা যেকোনো বিষয়বস্তু ১২০ বছরের জন্য কপিরাইটের সুরক্ষা পাবে।

বলা হচ্ছে, বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষা ও নানা বিপদ থেকে তাদের বাঁচানোই এই চুক্তির লক্ষ্য। টিপিপি অনুযায়ী, ‘কম্পিউটার সিস্টেমের মাধ্যমে’ কোনো নাগরিক কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানের অপকর্ম প্রকাশ করলে তা এই আইনে দেওয়া ‘ট্রেড সিক্রেট’-এর সুরক্ষা ভঙ্গ করার দায়ে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। গত মে মাসে কয়েক শ টেক কোম্পানি ও ডিজিটাল অধিকার গ্রুপ এই আইনের বিরুদ্ধে কংগ্রেসে যে চিঠি লিখেছে, তাতে বলা হয়েছে, এ ধরনের বিধানের ফলে জনগণকে ক্ষতি করছে এমন কোনো জরুরি ইস্যুতেও গণমাধ্যমে তাৎক্ষণিক প্রতিবেদন প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

টিপিপির ফলে সদস্য ১২টি দেশের জনগণ কিসের মধ্যে পড়তে পারে তার একটি ভাষ্য দিয়েছেন উইকিলিকসের জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। বলেছেন, ‘চুক্তি হয়ে গেলে টিপিপির আইপি (ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি) ব্যক্তি অধিকার ও মুক্তবাককে পায়ে মাড়িয়ে যাবে, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সৃজনশীল সাধারণ মানুষের জন্য তা হবে নির্মম অত্যাচারের শামিল। আপনি যদি পড়েন, লেখেন, কোনো কিছু প্রকাশ করেন, চিন্তা করেন, নাচেন, গান করেন বা আবিষ্কার করেন, যদি আপনি চাষ করেন বা ভোগ করেন, যদি আপনি এখন অসুস্থ হন বা ভবিষ্যতে কোনো দিন অসুস্থ হন, তাহলে আপনি টিপিপির বন্দুকের নিশানার মধ্যে চলে আসবেন।’

টিপিপির ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে সরাসরি এর কী প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সরাসরি বাণিজ্যের বিষয় নয়, এমন দিকগুলোও আমাদের জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। মেধাস্বত্ব বিষয়টি সব পর্যায়ে আমাদের জন্য বড় এক সমস্যা হয়ে দেখা দেবে। এর আরও কী প্রভাব আমাদের ওপর পড়তে পারে, তা হয়তো সামনের দিনগুলোয় আরও পরিষ্কার হবে। তবে ইন্টারনেটে ‘নজিরবিহীন’ নজরদারির উদ্যোগ বা ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’র সমস্যাটিকে শুধু চুক্তি স্বাক্ষরকারী ১২ দেশের নাগরিকদের জন্য বিপদের কারণ বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। আমরাও এর বাইরে থাকতে পারব না। আর খারাপ বাতাস ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগে না।

এ কে এম জাকারিয়া: সাংবাদিক।

11
কতটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হলে সাইনবোর্ডে, প্যাডে ও ভিজিটিং কার্ডে গ্রুপ বা গ্রুপ অব কোম্পানিজ ব্যবহার করা যায়—এ বিষয়ে কোনো নিয়ম নেই। কোম্পানি আইনে গ্রুপ বলতে কোনো শব্দও নেই। দেশে কী পরিমাণ ব্যবসা ও শিল্প গ্রুপ বা গ্রুপ অব কোম্পানিজ আছে, এমনকি সেই হিসাবও নেই সরকারের কাছে।
যৌথ মূলধন কোম্পানিজ ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয় (আরজেএসসি) সূত্রে জানা গেছে, একটি বা দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েও একশ্রেণির ব্যবসায়ী গ্রুপের মালিক হিসেবে দাবি করছেন। ব্যাংকঋণ পেতে বা সমাজে প্রভাব খাটানোর প্রবণতা থেকে তাঁরা এ পথ বেছে নিয়েছেন বলে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা মনে করছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকও এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ও আনোয়ার গ্রুপের পরিচালক হোসাইন খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনও দেখা গেছে, কোম্পানির নিবন্ধন হয়েছে, কার্যক্রম নেই। কিন্তু একশ্রেণির ব্যবসায়ী নিবন্ধন পাওয়া কোম্পানিটিরই মালিক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। এটা অনৈতিক।’ আর্থিক খাতের এক সংস্থার তথ্যের সঙ্গে আরেক সংস্থার তথ্যের সংযোগ না থাকার কারণেই এ ধরনের কাজ হতে পারছে বলে মনে করেন তিনি।
এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণে অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক চিন্তা করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সভাপতিত্বে বছরে চারবার আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর যে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়, একাধিক সভায় বিভিন্ন গ্রুপ এবং গ্রুপ অব কোম্পানিজের যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গ্রুপের সব কোম্পানির তথ্য নেওয়া এবং সেই তথ্য ঋণ প্রদানকারী ব্যাংককে দেওয়াসহ কাজটি স্বচ্ছতার সঙ্গে করতে সভাগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংক তাগিদ দিয়েছে আরজেএসসিকে।
ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পেতে চাইলে কোম্পানিকে তার পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের ব্যাংকঋণ-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য দিতে হয়। তথ্য সত্যায়িত হতে হয় আরজেএসসি থেকে। কিন্তু কাজটি যথাযথভাবে হচ্ছে না। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) তথ্যভান্ডার সংশোধনের কাজেও সমস্যা হচ্ছে বলে বৈঠকগুলোতে প্রসঙ্গ তোলে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ঋণ নেওয়ার পর কোম্পানির কোনো পরিচালক পদত্যাগ করতে চাইলে বা শেয়ার বিক্রি করতে চাইলে এ তথ্য ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে জানানোর নিয়ম রয়েছে। আবার ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক একই তথ্য পাঠিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে, যা সংরক্ষিত থাকে সিআইবিতে। ব্যাংকের পর্ষদ অনুমোদন করার পর পদত্যাগ বা শেয়ার বিক্রির তথ্য কোম্পানির পরিচালকদের জমা দিতে হয় আরজেএসসিতে। তবে দুটি বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা যাচ্ছে, আরজেএসসির তথ্য ও ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকের তথ্যের মধ্যে ব্যাপক গরমিল রয়েছে। এতে সিআইবির তথ্যভান্ডার সংশোধনের কাজে সমস্যা হচ্ছে। আরজেএসসির উচিত হবে কেউ জালিয়াতি বা ভুয়া স্বাক্ষর দিয়ে শেয়ার বিক্রি বা হস্তান্তর করছে কি না, সে ব্যাপারে আরও বেশি সতর্ক থাকা।
সমন্বয় সভার একটি বৈঠকে আরজেএসসির নিবন্ধক বিজন কুমার বৈশ্যর কাছে জানতে চাওয়া হয়, কোনো গ্রুপের শুধু একটি কোম্পানির তথ্যের পরিবর্তে পুরো গ্রুপের তথ্য দেওয়া সম্ভব কি না। জবাবে আরজেএসসির নিবন্ধক বৈঠকে জানান, সফটওয়্যার সমস্যার কারণে তা সম্ভব নয়। তা ছাড়া তাদের জনবলও নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক তখন এ ব্যাপারে আরজেএসসিকে সফটওয়্যার দিয়ে সহযোগিতা করবে বলে অঙ্গীকার করে।
জানতে চাইলে বিজন কুমার বৈশ্য প্রথম আলোকে বলেন, কোম্পানি আইনে গ্রুপ বলতে কিছু নেই। তবে জাল-জালিয়াতি রোধে তাঁরা আগের চেয়ে সতর্ক। আর সফটওয়্যার পাওয়া গেলে দেশের সব শিল্প ও ব্যবসায়ী গ্রুপের একটি তালিকা করা যাবে।
সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আরজেএসসি সফটওয়্যার চেয়ে এখনো কোনো আবেদন করেনি। আর সমন্বয় সভার আগামী বৈঠকে গ্রুপ বা গ্রুপ অব কোম্পানিজ শব্দগুলোর ব্যবহার ও অপব্যবহার নিয়ে বিশদ আলোচনা হবে এবং একটা সমাধানও বেরিয়ে আসবে।

ফখরুল ইসলাম | অক্টোবর ০৮, ২০১৫ the daily prothom alo

12
দীর্ঘদিনের এক তাত্ত্বিক বিতর্কের অবসান ঘটাতে চাইছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বিতর্কটি মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ে। বিশেষ করে মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা হলে রপ্তানিতে কী প্রভাব পড়ে, তা নিয়ে নানা মতভেদ আছে। থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ, অনেক আগেই উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন, ‘দুজন অর্থনীতিবিদ থাকলে সর্বদা দুটি মত পাওয়া যাবে। আর যদি সেখানে জন মেনার্ড কেইনস থাকেন, তাহলে মতামত পাওয়া যাবে তিনটি।’
অর্থনীতির তত্ত্ব বলে, অবমূল্যায়ন হলে রপ্তানি বাড়ে। আর অতিমূল্যায়ন হলে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু বাস্তবে কী পরিমাণ এর লাভ-ক্ষতি, তা নিয়ে নানা মতভেদ ছিল। আইএমএফ এ নিয়ে গবেষণা করে এর ফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে। আইএমএফ বলছে, একটি দেশের মুদ্রামানের ১০ শতাংশ অবমূল্যায়ন করা হলে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৫ শতাংশ রপ্তানি বৃদ্ধি পায়।
বিশ্ব অর্থনীতি এখন টালমাটাল অবস্থায়। বিশ্বজুড়ে এখন চলছে মুদ্রাযুদ্ধ। চীন গত আগস্টে হঠাৎ করে তাদের মুদ্রা ইউয়ানের বড় ধরনের অবমূল্যায়নের পর শুরু হয় এই মুদ্রাযুদ্ধ। বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে দেশগুলো যখন যার যার মুদ্রার অবমূল্যায়নের প্রতিযোগিতায় নামে, তখনই শুরু হয় মুদ্রাযুদ্ধ। ইউয়ান ও ডলারের এই মুদ্রাযুদ্ধ ২০০৯ সাল থেকে শুরু হলেও এটি জোরালো হয়েছে মূলত গত আগস্ট থেকেই।
বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তি চীন তাদের রপ্তানির প্রবৃদ্ধি টিকিয়ে রাখতে আগস্টে পরপর দুই দিন ইউয়ানের অবমূল্যায়ন ঘটায়। অন্যদিকে এক নম্বর অর্থনীতির দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট শক্তিশালী থাকায় দেশটির ডলারও তেজি। ফলে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে অনেক দেশকেই মুদ্রার মান কমাতে হয়েছে।
২০০৪ থেকে এই সময় পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে ইউরো ও ইউয়ানের বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হয়েছে। এর বাইরে এই মুদ্রাযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে ভারতের রুপি, রাশিয়ার রুবলসহ প্রায় সব দেশের মুদ্রাই। মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা হলে রপ্তানি বাড়াতে উৎসাহ পান উদ্যোক্তারা। এতে আগের চেয়ে ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা বেশি পান তাঁরা। ফলে সব দেশই আগ্রহী অবমূল্যায়নে। আর এমনই এক সময়ে আইএমএফ সুনির্দিষ্ট করে জানাল অবমূল্যায়নের লাভ-ক্ষতি। বিশ্বজুড়ে মুদ্রাযুদ্ধের এই সময়ে বাংলাদেশই কেবল এর বাইরে।
গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান বেড়েছে ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আর ডলারের বিপরীতে ভারতের রুপির অবমূল্যায়ন হয়েছে ৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ। বিজিএমইএ বলছে, ডলার ও ইউরোর ওঠানামার কারণে বাংলাদেশ গত অর্থবছরে ৩৮ কোটি ডলারের রপ্তানি হারিয়েছে।
ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধরে রাখার কাজ পরোক্ষভাবে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক গত এক বছরে ডলারের চাহিদা ধরে রাখতে ৩৫০ কোটি ডলার কিনেছে। এতে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত যেমন বেড়েছে, তেমনি টাকা রয়ে গেছে তেজি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর মজুত ছিল ২ হাজার ৬৩৭ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। এর ফলে ডলারের দর এখন ৭৭ টাকা ৮০ পয়সায় ধরে রাখা হয়েছে।
স্থানীয় মুদ্রা শক্তিশালী হলে আমদানিকারকেরা লাভবান হন। কারণ আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য কিছুটা কম দামে তাঁরা ডলার কিনতে পারেন। যেমন, এখন যদি ডলার কিনতে হয় প্রায় ৭৮ টাকায়, অবমূল্যায়ন হলে সেটি ৭৯ বা ৮০ টাকা হতে পারে। প্রতি ডলার কিনতে তখন আমদানিকারকদের বাড়তি অর্থ ব্যয় হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানি ব্যয় কমানোর দিকেই বেশি আগ্রহী। এমনিতেই বিশ্বব্যাপী প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম কমে গেছে। টাকা শক্তিশালী রেখে আমদানিতে আরও বাড়তি সুবিধা নেওয়া হচ্ছে। ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ কমানোর লক্ষ্যও এর মাধ্যমে অর্জিত হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের।
বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে ভারত ও চীন থেকে। আর দেশ দুটিতে রপ্তানি করে সামান্যই। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানি ছিল ৬৫০ কোটি ডলার, রপ্তানি প্রায় ৫৩ কোটি ডলার। একই সময়ে চীন থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৮২২ কোটি ডলারের পণ্য, রপ্তানি করেছে মাত্র ৭৯ কোটি ডলারের পণ্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, এ অবস্থায় আমদানিতেই বেশি লাভবান হচ্ছে বাংলাদেশ।
যদিও অর্থনীতিবিদদের বড় অংশ এবং ব্যবসায়ীরা চান দ্রুত টাকার অবমূল্যায়ন হোক। বিশেষ করে চলতি অর্থবছরে রপ্তানি ও প্রবাসী-আয়ের প্রবৃদ্ধিতে ওঠানামার কারণে দাবিটি জোরালো হয়ে উঠেছে। এখন পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশেরও কম। জুলাই-আগস্ট সময়ে প্রবাসী-আয়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হলেও ঈদের কারণে সেপ্টেম্বরে বেড়েছে। ফলে অবমূল্যায়নকে একেবারেই বাতিলের খাতায় ফেলতে হয়তো পারবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশেষ করে আইএমএফের গবেষণার পর বাংলাদেশ ব্যাংক কী করবে সেটাই এখন প্রশ্ন।

শওকত হোসেন  অক্টোবর ০৮, ২০১৫ the daily prothom alo

13
একটি দেশে কেন জঙ্গিবাদ বা সহিংস উগ্রপন্থা বিস্তার লাভ করে, কেন এ ধরনের আদর্শ মানুষকে আকর্ষণ করে, কারা জঙ্গিবাদের প্রতি আকর্ষিত হয়? কয়েক দশক ধরেই সমাজবিজ্ঞানী, নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও নীতিনির্ধারকেরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন। প্রকৃতপক্ষে এই প্রশ্নগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে গত শতকের ষাটের দশকে, যখন সমাজতান্ত্রিক আদর্শের প্রতি মানুষের আকর্ষণ তৈরি হয় এবং বিভিন্ন দেশে কমিউনিস্ট পার্টি সশস্ত্র বিপ্লবের পথে সাধারণ মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। কিন্তু তার আগেও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অংশ হিসেবে সহিংসতার ব্যবহারকে (যেমন: আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি, বাস্ক গেরিলাদের সংগঠন) বোঝার জন্যও একই ধরনের প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। সত্তরের দশকে ইতালির রেড ব্রিগেড, জার্মানির বাদের-মেইনহফ, জাপানে রেড আর্মিকে যাঁরা অনুসরণ করেছেন, সেসব গবেষকও এই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন। ফলে এ বিষয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে কখনোই ঘাটতি ছিল না।
এই প্রশ্নগুলো নতুন করে শক্তিশালী হয়ে ওঠে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের পর; আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আল-কায়েদার আবির্ভাব, আফগানিস্তানে তালেবানের গ্রহণযোগ্যতা এই প্রশ্নগুলোতে নতুন মাত্রা যোগ করে দেয়। এই পর্যায়ে রাজনৈতিক আদর্শের প্রশ্নের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে ধর্মের প্রশ্ন। কেউ কেউ এই প্রশ্নও তোলেন যে রাজনৈতিক আদর্শ ও ধর্মের মধ্যে কোনো বিভাজন টানা উচিত হবে কি না।
রাজনৈতিক ইসলামের মধ্য থেকে একটি ধারা আগেও সহিংসতাকে তাদের কৌশল হিসেবেই শুধু বেছে নিয়েছিল তা নয়, তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় একেই একমাত্র পথ বলেও বিবেচনা করে সে পথেই অগ্রসর হয়েছে। তালেবান সেই ধারার প্রতিনিধিত্ব করে। ২০০১ সালের ঘটনাবলির কারণে তাদের প্রতি মনোযোগ আকর্ষিত হয়। এই ধারার লক্ষ্য সীমিত বলেই বিবেচিত হওয়া দরকার, কেননা নিজস্ব রাষ্ট্রের মধ্যেই তারা তাদের আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং চেয়েছে। অন্যপক্ষে, আমরা দেখতে পাই ইসলামের রাজনৈতিক দিককে আশ্রয় করে আরও সংগঠনের আবির্ভাব বা পুনরুত্থান ঘটে, যাদের লক্ষ্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত রাষ্ট্রসীমাকে অস্বীকার করে তাদের ভাষায় ‘খেলাফত’ প্রতিষ্ঠা। একই সঙ্গে প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক কাঠামোকে তারা চ্যালেঞ্জ করতে উৎসাহী হয়ে ওঠে। কৌশল ও কর্মপদ্ধতি তাদের জন্য গৌণ বিষয়। হিযবুত তাহ্‌রীর সেই ধারার প্রতিনিধি।
এই ঘটনাপ্রবাহ ইসলামপন্থী রাজনীতির মধ্যে যেমন বিভিন্ন ধারার জন্ম দেয়, তেমনি এসব ধারার আবেদন বোঝার তাগিদ তৈরি হয়। অবশ্যই এই ঘটনাপ্রবাহ নিজের মতো করে স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়নি। চলমান আন্তর্জাতিক ঘটনাবলি, অর্থনীতির বিশ্বায়ন, প্রযুক্তির উৎকর্ষ—সবই তাকে প্রভাবিত করেছে। ২০১০ সাল নাগাদ আমরা দেখতে পাই যে আরও একধরনের সংগঠনের আবির্ভাব ঘটে, যারা যুদ্ধবিধ্বস্ত কিংবা সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত অঞ্চলগুলোয় তাদের নিজস্ব কর্তৃত্ব স্থাপনের মাধ্যমে নিজেদের রাষ্ট্র, যাকে তারা ‘খেলাফত’ বলে বর্ণনা করে, প্রতিষ্ঠা করে এবং সারা পৃথিবীর মুসলিমদের প্রতিনিধিত্বের দাবিদার হয়ে ওঠে। নাইজেরিয়ার বোকো হারাম ও ইরাকে ইসলামি রাষ্ট্র এর উদাহরণ।

এই ঘটনাপ্রবাহের পাশাপাশি ২০০১ সাল থেকে ইসলামপন্থী সহিংস চরমপন্থী সংগঠনগুলো নিয়ে গবেষণার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এসব গবেষণার ফলাফলের দিকে দৃকপাত না করে অনেক বিশ্লেষক, রাজনীতিবিদ সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদের কারণ হিসেবে তাঁদের ধারণাকে প্রকৃত কারণ বলে বর্ণনা করতে শুরু করেন। এই প্রবণতার সবচেয়ে বড় দিক হলো এই যে তাঁরা ধরে নিলেন যে দারিদ্র্যই হচ্ছে সহিংস চরমপন্থার কারণ এবং সুযোগবঞ্চিত মানুষেরা জঙ্গি সংগঠনের আদর্শের প্রতি আকর্ষিত হয়। তালেবান নেতৃত্ব, পাকিস্তানের বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাংগঠনিক কাঠামো ও আফগান যুদ্ধে পাকিস্তানি কয়েকটি মাদ্রাসার ভূমিকার ওপরে নির্ভর করে অনেকে মাদ্রাসাকেই ইসলামপন্থী সহিংস চরমপন্থার উৎস বলে প্রচার করতে থাকে। এসব ধারণা শিগগিরই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে শুরু করে; কেননা দেখা যায় যে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের অধিকাংশ নেতা কিংবা আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীরা দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত কিংবা ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষিত নয়।

পরবর্তী কয়েক বছরে গবেষকেরা তাঁদের অতীত গবেষণা, সংগৃহীত তথ্য ইত্যাদির আলোকে কিছু সাধারণ উপসংহারে উপনীত হন। যাতে ধারণা দেওয়া হয় যে সন্ত্রাসবাদের কিছু ভিত্তিগত (ইংরেজিতে আন্ডারলায়িং), অন্যভাবে বললে সামাজিক ও অর্থনৈতিক মূল কারণ রয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে আরও সুনির্দিষ্ট, বাস্তবতানির্ভর ও তথ্যসমৃদ্ধ গবেষণাকাজের পরে দেখা যাচ্ছে যে এই ধরনের মূল কারণ চিহ্নিত করার বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন একই রকমের আর্থসামাজিক অবস্থা সবাইকে সন্ত্রাসী করে তুলছে না। তা ছাড়া যারা এই ধরনের সন্ত্রাসী কাজে যুক্ত হয়, তারা কেবল পরিস্থিতির চাপে যোগ দেয় না, ক্ষেত্রবিশেষে কিছুর আকর্ষণে যুক্ত হয়। সেটা বিশেষ করে কোনো নেতার আকর্ষণ হতে পারে, হতে পারে যে এই ধরনের সংগঠন তাকে এমন কিছু দিতে পারে, যা তাকে সমাজের অন্য কোনো সংস্থা, পরিবার বা বন্ধু দিতে পারছে না। তা ছাড়া মানুষ স্বেচ্ছায় অনেক কিছু করে, কেবল পরিস্থিতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে করে না। সন্ত্রাসের মূল কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টার একটা বড় দুর্বলতা হচ্ছে যে, ধরে নেওয়া হয় যে সম্ভাব্য সন্ত্রাসীরা কেবল দেশের অভ্যন্তরীণ অবস্থা দিয়ে প্রভাবিত হয়।

এসব দুর্বলতার প্রেক্ষাপটে গবেষকেরা গত কয়েক দশকে বিভিন্ন দেশে যেখানে জঙ্গিবাদ প্রসারিত হয়েছে, যেসব ব্যক্তি জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হয়েছে, যেসব জঙ্গি সংগঠন শক্তি সঞ্চয় করতে পেরেছে, তাদের ওপর গবেষণা করে এই উপসংহারে পৌঁছেছেন যে জঙ্গি হয়ে ওঠা এবং জঙ্গিবাদের প্রসারের ক্ষেত্রে কতিপয় বিষয় চালকের ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ এই বিষয়গুলো ব্যক্তিকে সন্ত্রাসের পথে ঠেলে দেয়, সমাজে জঙ্গিবাদের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করে এবং সন্ত্রাসী সংগঠন তৈরি করে। এই ড্রাইভার বা চালিকাগুলোকে ভাগ করা হয়েছে চারটি ভাগে: অভ্যন্তরীণ সামাজিক-অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বৈশ্বিক।

অভ্যন্তরীণ চালকের মধ্যে রয়েছে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্নতা বা প্রান্তিকতা অনুভব করা, সামাজিকভাবে বৈষম্যের শিকার হওয়া, হতাশার বোধ, অন্যদের তুলনায় বঞ্চিত অনুভব করা। রাজনৈতিক চালকগুলোর মধ্যে আছে রাজনৈতিক অধিকার ও নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া, সরকারের কঠোর নিপীড়ন ও সুস্পষ্টভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, সর্বব্যাপী দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের দায়মুক্তির ব্যবস্থা, স্থানীয়ভাবে অব্যাহত সংঘাত, সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এলাকা তৈরি হওয়া। সাংস্কৃতিক চালকের মধ্যে আছে এই ধারণা বিরাজ করা বা তৈরি হওয়া যে ইসলাম আক্রমণের বা বিপদের মুখোমুখি, নিজের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য হুমকির মুখে এবং ক্ষেত্রবিশেষে নিজের ইসলামি সংস্কৃতির বিকাশ বা সমাজে অন্যদের ওপরে নিজের ইসলামি সংস্কৃতিকে চাপিয়ে দেওয়া।

বৈশ্বিক চালকের মধ্যে আছে নিজেদের ভিকটিম বলে মনে করা। একার্থে এটি সাংস্কৃতিক চালকের সঙ্গে যুক্ত। ইসলাম বিপদের মুখে—এই ধারণার সঙ্গে যখন যুক্ত হয় যে মুসলিম জনগোষ্ঠী অন্যত্র অন্যায় ও বৈষম্যের শিকার, যদি এই ধারণা সৃষ্টি হয় যে বিশ্বব্যবস্থা মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য অন্যায্য, তাহলে তা এক শক্তিশালী চালকের ভূমিকা পালন করতে পারে।

এ ছাড়া বৈশ্বিক চালকের আরেকটি হচ্ছে ‘কাছের শত্রু-দূরের শত্রু’র ধারণা। যখন অভ্যন্তরীণভাবে দেশের ভেতরে নিপীড়ন বৃদ্ধি পায়, যখন ‘কাছের শত্রু’কে পরাজিত করতে সক্ষম হয় না, তখন দেশের বাইরে ‘দূরের শত্রু’র বিরুদ্ধে তাদের অভিযান চালানোর আগ্রহ তৈরি হয়। অধিকাংশ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে শত্রু বলে বিবেচনা করে, তার কারণগুলোর মধ্যে নিপীড়ক সরকারগুলোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সমর্থন অন্যতম বলেই তাদের দলিলপত্র, প্রচারণা ও সদস্য সংগ্রহের প্রচারণায় স্পষ্ট। এই চালকগুলো একক ও সম্মিলিতভাবে কাজ করে এবং সব জায়গায় সবগুলো না থাকলেও তার কার্যকারিতা অক্ষত থাকে বলেই দেখা গেছে।

আজ যখন বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট বা আল-কায়েদার মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সে সময় বোঝা দরকার কোন ধরনের পরিস্থিতিতে কোন ধরনের চালক দেশীয় বা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের জন্য অনুকূল অবস্থার জন্ম দেয়। জঙ্গিবাদ কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে চাইলে এসব বিষয় বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।  (শেষ)

আলী রীয়াজ: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক।

14
মানসিক চাপ বা উদ্বেগে ভুগছেন? মনোযোগ দিয়ে বাসন-কোসন মাজতে শুরু করতে পারেন। সাম্প্রতিক এক গবেষণার ফল বলছে, বাসন মাজলে মানসিক চাপ কমে গিয়ে ফুরফুরে লাগতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা এ গবেষণা করেছেন।
রান্নাঘরে যাঁরা বাসন-কোসনের বোঝা দেখে উঁকিঝুঁকি মারতে ভয় পান, তাঁরা এবার লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে কাজে নেমে যেতে পারেন। ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক অ্যাডাম হ্যানলে দাবি করেছেন, পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে বাসন-কোসন ধুলে মন শান্ত হয় ও চাপ কমে যায়।
বাসন মাজার বিষয়টির সঙ্গে ধ্যানমূলক পদ্ধতির কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা খুঁজে দেখতে এ গবেষণা চালান তাঁরা। ‘মাইন্ডফুলনেস’ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাসংক্রান্ত নিবন্ধ।
গবেষণা নিবন্ধের অন্যতম লেখক হ্যানলি বলেন, ‘আমার আগ্রহের জায়গায় ছিল কীভাবে আমাদের সাংসারিক কাজকর্মকে মন প্রশান্তির জায়গা হিসেবে তুলে ধরা যায়, তা নিয়ে কাজ করা।’
গবেষক হ্যানলি বলেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে আমাদের গবেষণায় অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের ক্ষেত্রে আমরা ইতিবাচক ফল পেয়েছি। ৫১ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে এ গবেষণা চালানো হয়। এতে দেখা যায়, যাঁরা বাসন মাজার সময় সাবানের গন্ধ, পানির উষ্ণতা কিংবা বাসনের স্পর্শে মনোযোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ২৭ শতাংশ পর্যন্ত স্নায়ুচাপ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে এবং ২৫ শতাংশ পর্যন্ত উৎসাহ ফিরে পেয়েছেন। সূত্র: আইএএনএস।

15
বিশ্বজুড়ে অতিদরিদ্রের সংখ্যা কমছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, চলতি বছর শেষে প্রথমবারের মতো বিশ্বের অতিদরিদ্রের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের নিচে নেমে আসবে। অর্থাৎ প্রথমবারের মতো অতিদারিদ্র্যের হার একক অঙ্কে নেমে আসতে যাচ্ছে।

বিশ্বব্যাংক গত রোববার এক পূর্বাভাস দিয়ে বলেছে, ২০১৫ সাল শেষে সারা বিশ্বে অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৭০ কোটি ২০ লাখে। ২০১২ সালে সারা বিশ্বে অতিদরিদ্রের সংখ্যা ছিল ৯০ কোটি ২০ লাখ। সেই হিসাবে তিন বছরের ব্যবধানে বিশ্বজুড়ে ২০ কোটি মানুষ অতিদারিদ্র্য অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসে।

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসটি একজন ব্যক্তির দৈনিক আয়ের নতুন হিসাবে দেওয়া হয়েছে। নতুন হিসাব অনুযায়ী, যে ব্যক্তির দৈনিক আয় ১ দশমিক ৯০ ডলারের কম, তিনিই অতিদরিদ্র হিসেবে বিবেচিত। ২০০৫ সাল থেকে ১ দশমিক ২৫ ডলারের নিচে দৈনিক আয়ের মানুষকে অতিদরিদ্র ধরা হতো। বিশ্বব্যাংক এও বলেছে, এখন থেকে আন্তর্জাতিক পরিসরে দৈনিক ১ দশমিক ৯০ ডলার আয় বিবেচনায় ধরে এ ‘দারিদ্র্যসীমা’ নির্ধারণ করা হবে।

তবে নতুন হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে অতিদারিদ্র্য পরিস্থিতির উন্নতি হবে কি না তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। কারণ নতুন হিসাবে এখনো বাংলাদেশকে যুক্ত করা হয়নি বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।

এদিকে, বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর শেষে দক্ষিণ এশিয়ায় অতিদরিদ্রের সংখ্যা কমে আসবে সাড়ে ১৩ শতাংশে। অর্থাৎ চলতি বছর শেষে দক্ষিণ এশিয়ার মোট জনসংখ্যার সাড়ে ১৩ শতাংশ লোক অতিদারিদ্র্যসীমার নিচে থাকবে। অথচ ২০১২ সালে দক্ষিণ এশিয়ার মোট জনসংখ্যার ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ লোক অতিদারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল। সেখান থেকে চলতি বছর শেষে তা প্রায় ৫ শতাংশ কমে আসবে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, ২০১৪ সাল শেষে দক্ষিণ এশিয়ার মোট জনসংখ্যা ছিল ১৭২ কোটি।

পূর্বাভাস প্রকাশের দিন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বেশ ভালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে, যা মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করেছে। তিনি বলেন, ‘মানব ইতিহাসে আমরাই প্রথম প্রজন্ম, যাদের সামনে পৃথিবী থেকে অতিদারিদ্র্য শেষ করে দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।’

 প্রসঙ্গ বাংলাদেশ: ব্যক্তি পর্যায়ে অতিদারিদ্র্য নির্ধারণে বিশ্বব্যাংকের নতুন হিসাবে (দৈনিক আয় ১ দশমিক ৯০ ডলারের কম) বাংলাদেশের যুক্ত না হওয়ার কারণ হিসেবে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তথ্য-উপাত্তসংক্রান্ত গরমিলের কারণে নতুন হিসাবে এখনো বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বাংলাদেশের দারিদ্র্য পরিমাপের ক্ষেত্রে এখনো মাথাপিছু ১ দশমিক ২৫ ডলারের দৈনিক আয়কে বিবেচনায় ধরা হচ্ছে।

জাহিদ হোসেন আরও বলেন, আন্তর্জাতিক তুলনা কর্মসূচির (আইসিপি—ইন্টারন্যাশনাল কম্পারিজন প্রোগ্রাম) আওতায় দাম সূচকের যে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে, তার সঙ্গে পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভোক্তা পর্যায়ের দাম সূচকের তথ্যের বড় ধরনের গরমিল পাওয়া গেছে। এ কারণে বিশ্বব্যাংক এখনো বাংলাদেশকে নতুন হিসাবে যুক্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। 

Pages: [1] 2 3