Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - Nayeem

Pages: [1]
1
Faculty Sections / অক্সিজেন নামা
« on: July 10, 2023, 05:20:49 AM »
অক্সিজেন ছাড়া এক মুহূর্তও আমাদের পক্ষে বাঁচা সম্ভব না। মহাবিশ্বের যেখানেই যাই, এই একটা জিনিসের পর্যাপ্ত যোগানের ব্যবস্থা না করে আমাদের এক পা বাড়ানোরও উপায় নেই। নানাভাবে শরীরের অক্সিজেন সাপ্লাই ব্যাহত হতে পারে। লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা কম হলে, বাতাসে অক্সিজেন কম থাকলে, কিংবা ফুসফুস যদি আর যতটুকু দরকার ততটুকু অক্সিজেন ধরতে না পারে। এখন করোনায় যেটা হচ্ছে, ফুসফুসের কোষ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, শরীর আর বাতাস থেকে অক্সিজেন ছেঁকে নিতে পারছে না। তাহলে কী করা যায়? শরীর যদি বাতাস থেকে তার প্রয়োজনীয় অক্সিজেন টেনে নিতে পারে, তাহলে তার মৃত্যু অবধারিত। বাতাসে অক্সিজেন আছে মাত্র ২১ ভাগ, বাকিটা প্রায় সব নাইট্রোজেন। স্বাভাবিক অবস্থায় মানুষ সেই ২১ ভাগ অক্সিজেন থেকেই তার প্রয়োজনীয়টুকু ছেঁকে নিতে পারে। কিন্তু যখন ফুসফুস সেটা আর পারছে না, তখন তাকে প্রায় ৯৯ ভাগ বিশুদ্ধ অক্সিজেন দিতে হবে যেটাকে আমরা বলি মেডিক্যাল অক্সিজেন। এখন এই অক্সিজেন কীভাবে পাওয়া যায়? আগেই বলেছি অক্সিজেন হচ্ছে এই গ্রহের সবচেয়ে সহজলভ্য বস্তু। বিশ্বাস হয় না? এই যে বিশাল বিশাল সমুদ্রে এত জল, তার দুই ভাগ হাইড্রোজেন আর এক ভাগ অক্সিজেন। কিন্তু সমুদ্রই তো সব না। সমুদ্রেরও তলা আছে, সেখানে থেকে শুরু করে পৃথিবীর বাইরের ভাগ যেটাকে ক্রাস্ট বলে, সেটার প্রায় পুরোটাই অক্সিজেনের বিভিন্ন অক্সাইড দিয়ে তৈরি। মাটি, বালি, এসিড, জৈব যৌগ, কোথায় নেই এই অক্সিজেন? ছোটবেলায় আমরা মনে হয় সবাই পড়েছি, যে লবন জলের মধ্যে কার্বনের কাঠি পুঁতে তাতে বিদ্যুৎ সাপ্লাই দিলেই জলের হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন ভেঙে গিয়ে কার্বনের দুই কাঠির মাথা দিয়ে বের হতে থাকে! তাহলে? জলের তো অভাব নেই, জলের মধ্যে কারেন্টের লাইন দিয়ে দিলেই অক্সিজেন পাওয়া যাবে? ভুলেও না! জল আর বিদ্যুৎ খুব একটা বন্ধু না, একটু এদিক সেদিক হলেই কপালে ভীষণ দুঃখ। বইয়ে আমরা ডিসি কারেন্ট দিয়েছি যেটা বেশ সহজ সরল, আমরা বাসার কারেন্টের লাইনে যেটা পাই সেটা এসি, সেটা এদিক সেদিক নাচতে থাকে সবসময়, মোটেই সোজাসাপ্টা না। আর এভাবে ডিসি কারেন্ট দিয়ে জল থেকে অক্সিজেন বানিয়ে সেটা ব্যবহারযোগ্য করতে যে পরিমাণ খরচ আর ঝামেলা তার থেকে সহজ উপায় হাতের কাছেই আছে! কোথায়, কোথায়? জ্বি, নাকের কাছে! মানে বাতাসে! মুখ চুপসানোর কিছু নেই, যদিও বাতাসের ৭৮ ভাগই নাইট্রোজেন আর মাত্র ২১ ভাগ অক্সিজেন, সেই একুশ ভাগই যথেষ্ট কারণ বাতাসের যোগান প্রায় অফুরন্ত। আমাদের শুধুতাকে ঠাণ্ডা করতে হবে! তা কতটুকু ঠাণ্ডা? তা ধরুন গিয়ে প্রায় মাইনাস ২০০ ডিগ্রী! এত ঠাণ্ডার কথা শুনে মাথা গরম হচ্ছে কি? কিন্তু বিশ্বাস করুন, এর থেকে সহজ আর কম খরচের উপায় এখনও মানুষের জানা নেই। বাতাসকে ভীষণ চাপে প্রথমে গরম ও সংকুচিত করে তাকে আবার চাপমুক্ত করা হয়, একই সাথে তরল নাইট্রোজেনের মধ্য দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তরল নাইট্রোজেন খুবই ঠাণ্ডা স্বভাবের, তার আসেপাশে দিয়ে যেই যায় তাকেই ঠাণ্ডা করে ফেলে। তো বাতাসকে এভাবে ঠাণ্ডা করতে থাকলে আমরা তরল বাতাস পেয়ে যাই। জিনিসটা কেমন তাই না? বলছি বাতাস, কিন্তু জলের মত তরল! সেই তরল বাতাসকে একটু কম ঠাণ্ডা করলেই (গরম করা বলছি না কারণ এখনও আমরা মাইনাসের প্রায় ১৯০ ডিগ্রি নীচে!) প্রথমে নাইট্রোজেন উড়াল দেয় -১৯৬ এর আসেপাশে, তারপর কিছুটা আর্গন গ্যাস উধাও হয়, আর পড়ে থাকে অক্সিজেন। অক্সিজেনও উড়াল দিতে শুরু করে -১৮২ ডিগ্রীর আসেপাশে, তখন তাকে খপ করে ধরা হয়। এরপর আরও কিছু কচলাকচলি করে পরিষ্কার করে প্রায় ৯৯ ভাগ বিশুদ্ধ অক্সিজেন পাওয়া যায়। অক্সিজেন কিন্তু তরল অবস্থায় বেশ সুন্দর নীলচে দেখতে। গ্যাস হয়ে গেলে আর রঙচঙ থাকে না। তবে পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর ও অপার্থিব একটা জিনিস যেটাকে বলে নর্দান লাইট বা অরোরা, সেটার কারণ কিন্তু অক্সিজেনের উত্তেজিত নাচানাচি! এক বিচিত্র কারণে অক্সিজেন চুম্বক দ্বারা আকর্ষিত হয় (সে এক আরেক ইতিহাস!)। সূর্যের সৌরঝড়, পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র সব মিলিয়ে অক্সিজেন সবুজ আর লাল আলোর বর্ণালী হয়ে নেচে ওঠে, আর শান্ত নাইট্রোজেন একটু নীলচে বা বেগুনী রঙ নিয়ে দুলতে থাকে। আমাদের প্রাণবায়ুহওয়ার পাশাপাশি অক্সিজেন আরেক বিশাল রক্ষাকবচ হয়ে আছে পৃথিবীর জন্য। তিনটা অক্সিজেন একসাথে হয়ে তৈরি করে একটা ওজন (Ozone), এমন অসংখ্য ওজনের একটা আবরণ প্রতিমুহূর্তে ঠেকিয়ে দিচ্ছে সূর্যের অতিবেগুনী আলোসহ আরও নানা মহাজাগতিক রশ্মি। এগুলো পৃথিবী পর্যন্ত সরাসরি পৌঁছালে আর দেখা লাগত না, কবে বিলীণ হয়ে যেতাম সব! যখন আমরা সব একসাথে দেখি, তখন মনে হয় কী চমৎকার একটা ব্যবস্থা, সবকিছু যেন খাপেখাপ মিলে যাওয়া। আমাদের যেমনটা দরকার ঠিক তেমনভাবেই যেন সব তৈরি করা। যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকুই এখানে সেখানে। যেন কেউ একজন সুনিপুণভাবে পরিকল্পনা করে তৈরি করেছেন এই ব্যবস্থা। অক্সিজেন বুকে টেনে নিয়ে আমি যতটুকু শান্তি পাই, আমার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নমতের হয়েও আপনি সেই একই শান্তি পাবেন প্রকৃতি থেকে। অক্সিজেনের অভাবে আমার মতই ছটফট করতে থাকবে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ। এই মৌলিক জায়গায় এসে সবাই এক হয়ে যায়, সবাই একই প্রকৃতির সন্তান, একটাই গ্রহ পৃথিবীর মানুষ। এই গ্রহের নিয়ম, আমরা মহাবিশ্বের যেখানেই যাই, কখনোই অগ্রাহ্য করতে পারব না।  [Collected]

নাঈম হাসান
ইলিনয় , ইউ এস এ

2
Faculty Sections / কোহ-ই-নূর এর ইতিহাস
« on: March 11, 2020, 03:28:45 PM »
যীশুর জন্মের প্রায় ৩০০০ বছর আগে অন্ধ্র প্রদেশের গোলকোণ্ডা নামক জায়গাটার ছোট্ট গ্রাম কল্লুরে কোন এক গরীব বালক কিভাবে ‘সাম্যন্তক’ নামে অদ্ভুত জেল্লা ছড়ানো, স্বচ্ছ সাদা পাথরটা পেয়েছিল তা আমাদের জানা নেই। তবে এর ‘অভিশাপ’ যুগের পর যুগ ধরে কতো যে অনাচার ঘটিয়েছে, কতো প্রাণ কেড়ে নিয়েছে তা আমাদের অনেকেরই জানা।

এই গরীব ছেলেটি ছিল আদি-ককেটু জাতির অধিবাসী। সে পাথরটা পেয়ে তাদের রাজার কাছে এটা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল, এবং রাজা এর বিনিময়ে তাকে নিজের পালক পুত্র করে নিয়েছিলেন। কিন্তু পাথরের ঐশ্বর্য্য বেশিদিন উপভোগ করতে পারেননি তিনি, অচিরেই সেই পালক পুত্র বড় হয়ে তার পিতাকে হত্যা করে নিজেই রাজা হয়ে বসে। তবে পুত্রেরও কপালে বেশিদিন সুখ সয়নি, কালান্তক ব্যাধিতে তার মৃত্যু হয়। পালক পিতার মতোই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে ‘সাম্যন্তক’ নামক পাথরটাকে পরম যত্নে লালন করেছিল।

সেই ছিল শুরু। এরপর থেকে আজ, এই পাঁচ হাজার বছরে প্রায় প্রত্যেক পুরুষ শাসকই এই পাথর ব্যবহারে অভিশাপে অপঘাতে মৃত্যুবরণ করেছে। অন্তত স্বাভাবিক মৃত্যু তাঁদের কারও হয়নি, এটা বলা যেতে পারে। আমরা ইতিহাস ঘুরে আসি, দেখা যাক এ কথাটা কতোটা সত্যি।




অবশ্য ব্যবহার শব্দটারও ব্যাখ্যা প্রয়োজন। যেসকল পুরুষ শাসকেরা তাঁদের পরিধানের অলঙ্কারের মধ্যে এ পাথরকে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন, কিংবা এর মাধ্যমে নিজের জৌলুস জাহির করতে চেয়েছেন, এর জন্যে যুদ্ধ-বিগ্রহে জড়িয়েছেন, তারাই মূলত মৃত্যুবরণ করেছেন অপঘাতে।

সাম্যন্তক পাথরের সবচেয়ে পুরনো, কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য এবং বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায় সম্রাট বাবুরের জীবনী ‘বাবুরনামা’-তে। সেই ককেটু জাতি থেকে মুঘল সাম্রাজ্যে কিভাবে পাথরটি এল তা ঐতিহাসিকদের কাছে বেশ ধোঁয়াটে ব্যাপার, তবে এ ব্যাপারে কিছু হাইপোথিসিস আছে।

তারমধ্যে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য ঘটনাটি হল- প্রায় ৩০০০ বছর সাম্যন্তক ককেটুদের সাম্রাজ্য কাকাটিয়াতেই ছিল। কিন্তু ১০০০ শতকের শেষদিকে এসে সেটা কাকাটিয়ার কোষাগার থেকে চুরি হয়ে চলে যায় মালওয়ার রাজার কাছে। ১৩০৬ সালে ককেটু রাজা প্রতাপরুদ্র পুনরায় সাম্যন্তক মালওয়া থেকে উদ্ধার করেন। প্রতাপরুদ্র ককেটুদের সাম্রাজ্যের যেমন বিস্তৃতি ঘটিয়েছিলেন, তেমনি রাজ্যকে সুসংহত করেছিলেন।

১৩২৩ সালে দিল্লীর সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক শাহ তাঁর সেনাপতি উলুঘ খানকে পাঠান কাকাটিয়া জয় করতে। প্রথমবার ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় উলুঘ খান কাকাটিয়া দখল করেন, এবং বিপুল পরিমাণ মণি-মাণিক্য কয়েকশ’ হাতি, উট, ঘোড়ার পিঠে করে দিল্লী নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে সাম্যন্তক মণিও ছিল।

এরপর থেকে ১৫২৬ সাল পর্যন্ত দিল্লী শাসন করে সৈয়দ ও লোদী বংশ। এর মধ্যে একবার পাথরটি হাতছাড়া হয়ে চলে যায় কচ্ছের রাজা বিক্রমাদিত্যের কাছে। তাঁকে পরাজিত করে সিকান্দার লোদী কচ্ছ জয় করেন ও সাম্যন্তক পুনরূদ্ধার করেন। পাথরটা মুঘল সাম্রাজ্যের স্থপতি বাবুরের কাছে আসে ১৫২৬ সালে। পানিপথের প্রথম যুদ্ধে লোদী সাম্রাজ্যের শেষ রাজা ইব্রাহিম লোদীকে পরাজিত করে দিল্লীতে মুঘল সাম্রাজ্যের সূচনা করেন বাবুর। এ যুদ্ধে বাবুরের সেনাপতি ছিলেন তাঁর ১৭ বছরের পুত্র হুমায়ূন, যে ইব্রাহিম লোদীর শয়নকক্ষে ঢুকে নিজ হাতে পাথরটা উদ্ধার করেন। খুশি হয়ে বাবুর পুত্রকেই পাথরটা পুনরায় উপহার দেন।

বাবুরনামায় কিন্তু একে ‘বাবুরের হীরা’ নামে অভিহিত করা হয়েছে, যেখান থেকে আমরা নিশ্চিতভাবে জানতে পারি সাম্যন্তক মূলত একটি হীরা, যে-সে পাথর নয়! বাবুরনামা অনুসারে, বাবুরের হীরার মূল্য দিয়ে সমস্ত পৃথিবীর আড়াইদিনের খরচাপাতি চালানো যাবে! বোঝাই যাচ্ছে মুঘলদের কাছে এর মূল্য কতো বেশি ছিল।

হুমায়ূনের পাথরটা বেশ প্রিয় ছিল, তিনি তাঁর চরম দুরাবস্থার সময়ও সেটা হাতছাড়া করেননি। রাজ্যহারা হুমায়ূন একবার এক রাজ্যে কিছুদিনের জন্যে আশ্রয় চাইলে সেখানকার রাজা আশ্রয়ের বিনিময়ে হীরাটা চান। তখন হুমায়ূন ক্রুদ্ধস্বরে বলেন, “এই অমূল্য রত্ন কোন কিছুর বিনিময়ে কেনা যায় না নির্বো্ধ, তলোয়ারের ঝলসানি দিয়ে একে জয় করতে হয়, কিংবা খোদার রহমতের মাধ্যমে এ রত্ন অর্জন করা যায়”।

তবে হুমায়ূন শেষ পর্যন্ত পাথরটা দিয়েছিলেন দুর্দিনে তাঁর সবচেয়ে বড় আশ্রয়দাতা পারস্যের রাজা শাহ তামাস্পকে, উপহার হিসেবে। তামাস্প এ হীরা নিয়ে তেমন আবেগী ছিলেন না, তিনি এটা উপহার দিয়েছিলেন আহম্মেদনগরের শাসক বুরহান নিজাম কে। তবে পাথরটা শেষ পর্যন্ত নিজামের কাছে পৌঁছায়নি; কেননা তার আগেই সেটার বাহক মেহতার জামাল পথিমধ্যে খুন হয়, এবং বাবুরের হীরা চুরি হয়ে যায়।

এভাবেই প্রথমবারের মতো মুঘলদের হাতছাড়া হয়ে যায় বাবুরের হীরা। এগুলো মোটামুটি ১৫৪৭ সালের দিকের ঘটনা। এরপর থেকে ১৬৩৯ সাল পর্যন্ত এর ইতিহাস কেবলই ধোঁয়াশা।

১৬৩৯ সালে বাবুরের হীরার পুনরায় আবির্ভাব এর জন্মস্থান গোলকোণ্ডা রাজ্যে, সেখানকার মন্ত্রী ও হীরক ব্যবসায়ী মীর জুমলার মাধ্যমে। গোলকোণ্ডার তৎকালীন রাজার মায়ের সাথে অবৈধ সম্পর্কের কারণে তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়, তিনি এসে পৌঁছান দিল্লীতে। গোলকোণ্ডার কোষাগার থেকে বহু মূল্যবান মণি-মুক্তা তিনি চুরি করে নিয়ে আসেন। দিল্লীতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর এক কর্মচারীর মাধ্যমে তিনি সম্রাট শাহজাহানের সাথে দেখা করেন, এবং তাঁকে ও শাহজাহান পুত্র আওরঙ্গজেবকে বহু মূল্যবান মণিমুক্তা উপহার দিয়ে প্রলুদ্ধ করেন গোলকোণ্ডা দখল করার জন্যে। তাঁর আশা ছিল গোলকোণ্ডা মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্গত করতে পারলে হয়ত তাঁকে সেখানকার শাসক বানিয়ে দেয়া হবে।

শাহজাহানকে দেয়া উপহারগুলোর মধ্যে ৬ মিশকাল ওজনের একটা হীরাও ছিল। সেটাই সম্ভবত বাবুরের হীরা। তবে গোলকোণ্ডার কোষাগারে এই হীরা কিভাবে গিয়েছিল, তার কোন সদুত্তর নেই। এবং মীর জুমলা সম্ভবত জানতেন, এই হীরাই সেই বহুমূল্য বাবুরের হীরা। যদিও তিনি শাহজাহানকে আলাদা করে এর নাম উল্লেখ করেননি।

শাহজাহান সেই হীরাকে বাবুরের হীরা নামে চিনতে পেরেছিলেন কিনা, তা এক বিরাট প্রশ্ন। তবে শাহজাহানের কাছে ১৬৩৭ সালে গোলকুণ্ডা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আনুগত্য স্বীকার করেন, এবং ১৬৮৭ সালে আওরঙ্গজেব গোলকোণ্ডা দখল করেন। শাহজাহান সেই হীরাটিকে তাঁর বিখ্যাত ময়ূর সিংহাসনে স্থাপন করেছিলেন, এবং আওরঙ্গজেব এটিকে তাঁর লাহোরের বাদশাহী মসজিদে সংরক্ষণ করেছিলেন।



শাহজাহান ও তাঁর ময়ূর সিংহাসন

শাহজাহান শেষ জীবনে পুত্র আওরঙ্গজেবের হাতে আগ্রার কেল্লায় বন্দী হন। তাঁর সমস্ত মণিমুক্তা আওরঙ্গজেবের কাছে গেলেও বাবুরের হীরাসহ আরও কিছু মূল্যবান হীরা শাহজাহান নিজের কাছে গচ্ছিত রেখেছিলেন। তবে তাঁর মৃত্যুর পূর্বে আওরঙ্গজেব সেগুলোও কেড়ে নিয়েছিলেন।

১৬৬৫ সালে ফ্রেঞ্চ পর্যটক ও পাথর বিশেষজ্ঞ জিন ব্যাপ্টিস্ট ট্যাভের্নিয়ার কে আওরঙ্গজেব একটি অতি চমৎকার হীরা দেখান যেটি ছিল এবড়োখেবড়ো, যার ওজন ৬ মিশকাল-এর মতো, যার ঔজ্জ্বল্য আকাশের তারার মতো, এবং যার আকৃতি প্রায় পায়রার ডিমের সমান। ট্যাভের্নিয়ার এই পাথরকে উল্লেখ করেন ‘দ্য গ্রেট মুঘল’ নামে। তবে এই পাথরই বাবুরের হীরা কিনা, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত ছিলেন না। আরও দুটি পাথরের দেখা তিনি আওরঙ্গজেবের দরবারে পান, যাদের নাম তিনি দেন ‘অর্লভ’ এবং ‘দ্য গ্রেট টেবল’। অর্লভ ছিল সবুজাভ নীল এবং দ্য গ্রেট টেবল ছিল হালকা গোলাপী রঙের। এ তিনটির ওজনও ছিল মোটামুটি একই রকম।



আওরঙ্গজেবের দরবারে দেখা ট্যাভের্নিয়ারের হীরাগুলো। প্রথম তিনটি যথাক্রমে দ্য গ্রেট মুঘল, অর্লভ এবং দ্য গ্রেট টেবল

এরপর বেশ কিছু সময় হীরাগুলো মুঘলদের কাছেই ছিল। ১৭৩৯ সালে পারস্যের রাজা নাদির শাহ ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন, এবং মুঘল সম্রাট মুহম্মদ শাহকে কর্ণালের যুদ্ধে পরাজিত করে উপমহাদেশে মুঘল শাসনের পতন ঘটান। ময়ূর সিংহাসন, দ্য গ্রেট মুঘল, দ্য গ্রেট টেবল, অর্লভ ইত্যাদি অতি মূল্যবান মুঘল সংগ্রহ তিনি পারস্যে নিয়ে যান।

নাদির শাহ তাঁর কনিষ্ঠা কন্যার কথা অনুযায়ী দ্য গ্রেট মুঘলের নাম রাখেন ‘কোহ-ই-নূর’ বা ‘জ্যোতির পর্বত’ এবং দ্য গ্রেট টেবলের নাম রাখেন ‘দরিয়া-ই-নূর’ বা ‘জ্যোতির সমুদ্র’।

এরপরের ইতিহাস শুধুই হানাহানির। পারস্যে ফিরে যাওয়ার পর অত্যাচারী, অহংকারী নাদির শাহ ক্ষমতাচ্যুত হন এবং মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর ভাতিজা আলী কুলী এরপর আদিল শাহ নাম নিয়ে সিংহাসনে বসেন, এবং তাঁর সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন, বিশেষ করে নাদির শাহ-এর ১৪ বছর বয়স্ক নাতি শাহ রুখ কে। কিন্তু অচিরেই আদিল শাহ তাঁর অন্ধ ভাই দ্বারা খুন হন(যাঁর চোখ তিনি নিজ হাতে উপড়ে নিয়েছিলেন) এবং শাহ রুখ মাত্র ১৬ বছর বয়সে সম্রাট হন। তিনি প্রায় ৫০ বছর সুষ্ঠুভাবে রাজত্ব পরিচালনা করেছিলেন। ধন-সম্পত্তির প্রতি তাঁর তেমন আকর্ষণ ছিল না, মৃত্যুর পূর্বে তিনি তাঁর সেনাপতি আহমেদ শাহ আবদালীকে বীরত্বের পুরস্কার হিসেবে কোহ-ই-নূর উপহার দেন। উল্লেখ্য, এ শাহ আবদালীই পরবর্তীতে কাবুল অধিপতি হন, এবং পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে মারাঠাদের পরাজিত করেন।

4
Faculty Sections / গ্রাফিন মায়াজাল
« on: February 26, 2020, 02:27:12 PM »
পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে শুক্রবার সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস।দুপুর থেকে সবার মন উড়ুউড়ু করে।অফিসের কাজের চাপ একটু কম থাকলে অনেকেই আগে আগে বাসার দিকে ছুট লাগান। পরিবার কিংবা বন্ধুদের সাথে একটু বেশি সময় কাটানোর আশায়।কিন্তু অজানাকে জানা ই যাদের একমাত্র তৃষ্ণা, জ্ঞান চর্চাই তাদের মনের খোরাক জোগাবে তাতে আর আশ্চর্য কি! তাই পৃথিবীর অনেক গবেষণাগারে বিজ্ঞানীরা শুক্রবার বিকালটা কে বেছে নেন, একটু ভিন্নধর্মী কিংবা পাগলাটে পরীক্ষা করার জন্য। তাঁরা এর নাম দিয়েছেন ‘ফ্রাইডে নাইট এক্সপেরিমেন্ট’। ধরেই নেয়া হয় এটা নিছক খেলা, কিন্তু খেলাচ্ছলে যদি চমৎকার কোন আবিষ্কার হয়ে যায়, তাতে মন্দ কি!
ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আন্দ্রে জেমস এবং অধ্যাপক কস্তা নোভোসেলভ প্রায় সপ্তাহেই এরকম ফ্রাইডে নাইট এক্সপেরিমেন্ট করতেন। তাঁদের এই পরিক্ষাগুলো সবসময়ই থাকত তাঁদের দৈনন্দিন গবেষনার কাজ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা বিষয় নিয়ে। ২০০৪ সালের কোন এক শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁরা খেলাচ্ছলে এমনি এক বিস্ময় বস্তুর সাথে পৃথিবীকে পরিচয় করিয়ে দেন, যার নাম ‘গ্রাফিন’। এর আগে যে বিজ্ঞানীদের গ্রাফিন সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিলনা, এমনটা নয়।প্রকৃতিতে গ্রাফিন পাওয়া যায় গ্রাফাইট রূপে। যে গ্রাফাইট আমরা পেন্সিলের শীষ হিসাবে ব্যাবহার করে থাকি।অনেকগুলো গ্রাফিন স্তর থরে থরে একটার উপর একটা সাজালে গ্রাফাইট হয়। এই তথ্য বিজ্ঞানীদের কাছে ছিল।কিন্তু গ্রাফিন কে গ্রাফাইট থেকে আলাদা করার কৌশল কেউ জানত না। কিংবা আলাদা করা গেলেও গ্রাফিন যে আলাদা অবস্থায় কারও সাথে বিক্রিয়া না করে ঠায় দাড়িয়ে থাকবে, এ বিষয়গুলো অজানা ছিল। সবচেয়ে বেশি অজানা ছিল, গ্রাফিনের গুনাগুন। জিনিসটাকে কাজে লাগানো না গেলে আলাদা করে আর লাভ কি!
প্রফেসর নভোসেলভ এবং প্রফেসর আন্দ্রে স্টিকি/স্কচ টেপ ব্যাবহার করে গ্রাফাইট এর পৃষ্ঠ থেকে গ্রাফিন আলাদা করার চেষ্টা করেন। ব্যাপারটা অনেকটা ওয়াক্সিং করে গায়ের লোম উঠানোর মত। প্রথমে তাঁরা লক্ষ করেন এক এক বারে কয়েক স্তর করে গ্রাফিন উঠে আসছে।এই কয়েক স্তর গ্রাফিনের উপর বারংবার স্টিকি টেপ প্রয়োগ করে তাঁরা একটা গ্রাফিন স্তরকে আলাদা করতে সক্ষম হন। গ্রাফিন আসলে বিশুদ্ধ কার্বনের তৈরি একটা শীট ছাড়া আর কিছুই না। যেখানে কার্বন পরমাণুগুলো এক জন আরেকজনকে সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে শক্ত করে ধরে রাখে আর মৌচাক সদৃশ ষড়ভুজাকৃতি আকার ধারন করে।এক একটা গ্রাফিন স্তর মাত্র ০.৩১৮ ন্যানোমিটার পাতলা, যা কিনা একটি কার্বন পরমানুর ব্যাসের সমান; অর্থাৎ খালি চোখে দেখাই যায়না। কিন্তু এই অদৃশ্য কার্বনের জাল যে বিপুল সম্ভবনা আর জাদুকরী গুনাগুন নিয়ে পৃথিবীকে নাড়া দিয়েছে তা অভূতপূর্ব!
গ্রাফিন এখনও পর্যন্ত বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে আবিষ্কৃত সবচেয়ে পাতলা বস্তু যা কিনা স্টিলের চেয়ে ২০০ গুন বেশি শক্তিশালী আর কপারের চেয়ে ১০ লক্ষ গুন বেশি বিদ্যুৎ পরিবাহী! তাই ইলেক্ট্রনিক্স এর জগতে গ্রাফিন এর সবচেয়ে বেশি কদর। ম্যাটেরীয়াল আর ইলেক্ট্রনিক্স সায়েন্টিস্ট দের কাছে গ্রাফিন যেন এক রুপকথার যাদুর কাঠি, যার স্বপ্ন তাঁরা আজীবন দেখে এসেছেন। সুপারকন্ডাক্টার, সুপার ক্যাপাসিটর আর সেন্সর হিসাবে গ্রাফিনকে ব্যাবহার করার জন্য গত দশ বছরে গবেষণা জগতে বিপ্লব ঘটে গেছে।বিশ্বের বড় বড় সব বিশ্ব বিদ্যালয়ে আলাদা গ্রাফিন রিসার্চ সেন্টার কিংবা নিদেন পক্ষে একটা করে গ্রাফিন রিসার্চ গ্রুপ গড়ে উঠেছে।
গ্রাফিনের শক্তিশালী সমযোজী বন্ধন কার্বনের অনুগুলিকে এমন নিবিড়ভাবে ধরে রাখে যে হিলিয়াম গ্যাসের মত ক্ষুদ্র অণুও এই গ্রাফিনস্তর ভেদ করতে পারেনা।তাই গ্রাফিন যেকোন কিছুর উপর চমৎকার প্রলেপ হিসাবে কাজ করে। কোন কিছুর উপর গ্রাফিনের আবরন থাকলে তা যেমন মরিচা ধরেনা একই সাথে বিদ্যুৎ পরিবহনেও কোন সমস্যা হয়না, বরং সাহায্য করে।
গ্রাফিনের সাথে অক্সিজেনকে যুক্ত করে তৈরি হচ্ছে গ্রাফাইট অক্সাইড। এই বস্তু আবার পানিকে প্রবাহিত হতে দেয়, কিন্তু পানির সকল আবর্জনা আর লবন আটকে দেয়। তাই পানি পরিশোধনের গবেষণায় গ্রাফিন অক্সাইড এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। আজকের বিজ্ঞান তাই সমুদ্রের পানিকে সহজে আর স্বল্প খরচে সুপেয় পানিতে পরিনত করার প্রযুক্তি বাজারজাত করার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে।
শক্তিশালী হবার পাশাপাশি গ্রাফিন খুবই নমনীয়। বড় বড় মোবাইল প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলি গ্রাফিন ব্যাবহার করে মোবাইল স্ক্রিন বানানোর কাজে অনেক এগিয়ে গেছে। সেদিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন মোবাইলটাকে যেভাবে খুশি ভাঁজ করে মানিব্যাগের ভিতর ফেলে পকেটে পুরে রাখা যাবে, আবার ভাঁজখুলে অবলীলায় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে!
গ্রাফিনের গুণগান করতে থাকলে বই লিখে ফেলা যাবে। আসলে গ্রাফিন নিয়ে বিজ্ঞানীরা বই লিখেছেন ও বেশকিছু। এখন শুরুতে যা বলছিলাম সে কথায় ফিরে আসি। অধ্যাপক আন্দ্রে জেমস এবং অধ্যাপক কস্তা নোভোসেলভ খেলতে খেলতে গ্রাফিন আবিষ্কার করলেও আবিষ্কারটা ছিল যুগান্তকারী। তাই তাঁরা গ্রাফিন আবিষ্কারের জন্য ২০১০ সালে পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পান। ব্যাপারটা তাঁরা আকস্মিক ভাবে আবিষ্কার করলেও কিভাবে সেটাকে কাজে লাগানো যায় সেই মেধা এবং বুদ্ধির জোর তাঁদের ছিল। তাইতো নভোসেলভ (৪৫ বছর) আর আন্দ্রে (৬০ বছর), এই দুই বিজ্ঞানি মৃত্যুর আগেই বলতে গেলে অমর হয়ে গেছেন।খেলাচ্ছলে যদি এত দারুন আবিষ্কার হয়, এমন ২/১ টা শুক্রবার দেরি করে বাসায় ফেরা যায় বৈকি!

5
A strange set of gravitational waves have been sent across space by a mysterious object. It could be the smallest black hole ever found or the largest neutron star.

Gravitational waves are ripples in space-time that are caused by the motion of massive objects. The Laser Interferometer Gravitational-Wave Observatory (LIGO) has detected these waves from many pairs of black holes colliding over the past few years, as well as one pair of neutron stars.

Now they have found a truly puzzling collision, LIGO team member Katerina Chatziioannou told a meeting of the American Astronomical Society in Hawaii on 6 January. A LIGO detector in Louisiana spotted signs of two objects colliding, but nobody is quite sure what one of the objects is.

In this smash-up, one of the objects was definitely a neutron star with a mass between 1.1 and 1.7 times the mass of the sun. While the other object is probably also a neutron star, months of analysis haven’t been able to prove this, says LIGO team member Nelson Christensen.

Its mass could be as high as 2.5 times that of the sun, which means it could be massive enough to be a black hole.


“We’ve never seen any neutron star with this large a mass,” says Christensen. “The question is, is it really a neutron star? If it is, then we’ve detected a really strange heavy neutron star, but if it’s a black hole it’s a really light black hole.”

While the idea of such a low-mass black hole is plausible, the lightest one anyone has found thus far is 3.3 times the mass of the sun. If it isn’t the smallest black hole ever found, but in fact a neutron star, this object is still unusual because it isn’t clear how a neutron star with a nearby partner could get so large.

“It’s clearly heavier than any other pair of neutron stars ever observed,” said Chatziioannou in a press conference. “The existence of a system like that challenges our current understanding of how those systems form binaries and merge to give off gravitational waves.”

We should get used to this kind of strange discovery, says Christensen. “We’re getting about one gravitational wave event a week now, and that’s a lot,” he says. “With a lot of events you inevitably see cool stuff every now and then.”




Pages: [1]