Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - sadia.ameen

Pages: [1] 2 3 ... 12
1


যখন আপনি প্রথম ইতালির ভেনিসের poveglia দ্বীপের নাম শুনবেন তখন আপনার খুব অস্বাভাবিক কিছুই মনে হবে না। মনে হবে এটা আর ১০ টা সাধারণ দ্বীপের মতোই। শুধু তাই নয়, এটার কোন ছবি দেখানো হলে যে কারো মনে হবে এটা বেড়াতে যাবার জন্য বেশ সুন্দর একটি জায়গা। কিন্তু ঘটনা ভিন্ন! দ্বীপটি ইতালির ভেনিস ও লিডো শহরের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থিত। এখন পর্যন্ত এই দ্বীপের আদি মালিক কে সেটা জানা যায় নি ও কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। শুধুমাত্র আঙ্গুর উৎপাদনের সময়েই এই দ্বীপে মানুষজনকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। বেশ কিছুদিন আগে ইতালীয় সরকার দ্বীপটি কিনে নিলেও পরে একজন ব্যক্তির কাছে ১৯৬০ সালে বিক্রি করে দেয়। অতি সম্প্রতি একটি ধন্যাঢ্য পরিবার দ্বীপটি কিনে নেয় ও চেষ্টা করে সেটাকে অবকাশকেন্দ্ররূপে গড়ে তোলার। কিন্তু একদিনের মাথায় সে পরিবার দ্বীপ ছেড়ে পালিয়ে আসে। জনশ্রুতি আছে যে, দ্বীপটি যিনি কিনেছিলেন তার মেয়েকে কেউ একজন অদৃশ্য থেকে অনেক জোরে চড় মারে। ফলে তার গালে ১৪ টি ক্ষত হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, জেলেরাও এ দ্বীপটি এড়িয়ে চলে কারণ প্রায়ই তাদের জালে মানুষের লাশ আটকা পড়তো।

ফিরে যাওয়া যাক ইতিহাসের পাতায়। এই দ্বীপের কথার উল্লেখ আছে ৪২১ সালের নথিপত্রে। নবম শতকে এটা খুব ঘনবসতিপূর্ণ দ্বীপ ছিল। রোমান যুগে এই দ্বীপটি ব্যবহার করা হত প্লেগে আক্রান্ত রোগীদের রাখতে ও তাদের পুড়িয়ে মেরে ফেলতে। প্লেগ সেসময় ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়তো আক্রান্ত রোগীর দেহ থেকে। এজন্য অন্য জনসাধারণ থেকে প্লেগ রোগীদের পৃথক করে নিয়ে আসা হত দ্বীপে। বেশ কিছুদিন পর ব্ল্যাক ডেথ নামে প্লেগ রোগ যখন বিশ্বব্যপাঈ ছড়িয়ে পড়লো এই দ্বীপটিকে আবার একই কাজে ব্যবহার করা শুরু হলো। প্লেগে মারা যাওয়া মৃতদের তো এখানে এনে পুড়ানো হতোই, একই সাথে কারো দেহে প্লেগের সামান্যতম লক্ষণ দেখা দিলে তাদেরকেও এই দ্বীপে এনে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হতো। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, জীবিত-মৃত মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষকে এ দ্বীপে পুড়িয়ে মারা হয়। এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে পোড়ানোর কারণে এখনো দ্বীপের মাটিতে আঠালো ছাই সব খানে ছড়িয়ে আছে।

১৯২২ সালে এই দ্বীপে মানসিক রোগীদের একটি হাসপাতাল তৈরি করা হয়। সেখানকার রোগীরা প্রায়ই মৃতদের দেখতে পেত বলে দাবি করতো। সেটা হয়তো তাদের মানসিক সমস্যা। তবে এখানে একজন কুখ্যাত চিকিৎসকের কথা জানা যায় যিনি মানসিক রোগীদের উপর ভয়াবহ সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতেন। তার সঙ্গী ছিল হাতুড়ি, ড্রিল মেশিন ইত্যাদি! উদ্ভট বিষয় হচ্ছে, সেই চিকিৎসক নিজেও পরে বদ্ধ উন্মাদ হয়ে যান। যাই হোক, এখন পর্যন্ত দ্বীপটি নিয়ে মানুষের মনে ভীতি রয়েই গিয়েছে। অনেকের কাছেই এটা অশুভ শক্তির প্রতীক।

2
সময়টা ১৯৩৩ সাল। সদ্য নির্বাচিত জার্মান চ্যান্সেলর এডলফ হিটলার ভীষণ ব্যস্ততায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন জার্মানির মাঠ-ঘাট, রাজপথে। এর আগে অভ্যুথান করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে জেল খেটেছেন। এবার তাই তিনি ভীষণ সতর্ক। উৎসাহ-উদ্দীপনার অভাব নেই, তবে গায়ের জোরে নয়, কথার জাদুতেই জার্মানদের ভোলালেন চ্যান্সেলর হিটলার। যুক্তি অকাট্য, যেহেতু জার্মানরা জাতি হিসেবে অন্যদের তুলনায় শ্রেষ্ঠ, সেহেতু বসবাসের জন্য তাদের আরো বেশি ভুমির ( Lebensraum) প্রয়োজন।

হিটলারের এমন আগ্রাসী মনোভাবের ফলশ্রুতিতেই কিনা উৎসাহী জার্মানরা পোল্যান্ড আক্রমণ করে বসলো। এরপর ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরে জাপান আক্রমণ করলো পার্ল হারবার। মানচিত্রের অন্যান্য ভাগের হর্তাকর্তারা ভাবলেন- তারাই বা বসে থাকবেন কেন! তারা কি কারো চাইতে কম নাকি!

ব্যস, বেঁধে গেল বিশ্বযুদ্ধ। পার্ল হারবারের পর জাপানীরা মালয়-সিঙ্গাপুর দখল করে বার্মার (বর্তমান মায়ানমার) দিকে এগুতেই নড়ে বসলেন তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকরা। রেঙ্গুন পতনের পরপরই ব্রিটেনের ঘাঁটি উঠে আসে চট্রগ্রামে। অতপর অনেক শক্তিক্ষয়, ঘাত প্রতিঘাত আর রক্তক্ষরণের পর এল ১৯৪৫ এর এপ্রিল মাস। বিখ্যাত রেড আর্মি ক্রমশ ঘিরে ফেলেছে বার্লিন। ৩০ শে এপ্রিল সকালে জেনারেল হেলমুট ওয়েলডিং এসে হিটলারকে জানালেন যে সোভিয়েত বাহিনী তাদের বাঙ্কারের প্রায় ৫০০ মিটারের মধ্যে এসে পড়েছে, গোলা বারুদ যা আছে, তা দিয়ে চব্বিশ ঘণ্টাও ঠিকঠাক টেকা যাবেনা।

আতংকিত জেনারেল ওয়েলডিং আরো কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলেন জবাবের জন্য, তারপর ফিরে গেলেন যুদ্ধক্ষেত্রে। বলাবাহুল্য, ওয়েলডিং বেচারাকে নির্দেশনা দেবার জন্য কোন পটভূমি হিটলারের কাছে আর অবশিষ্ট ছিল না।
এ ঘটনার প্রায় ছয় ঘণ্টা পর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করলেন এডলফ হিটলার, পাশেই সায়েনাইড খেয়ে পড়ে রইলেন তার নব পরিণীতা স্ত্রী ইভা ব্রাউন। আর সাথে সাথে পর্দা পড়ে গেল ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষটির উপর। এরপর পার হয়ে গেছে আরো প্রায় ৬৮টি বছর। পর্দার ওপাশের দগদগে ক্ষত, রক্ত আর ধ্বংসচিহ্ন মোচনের দায়িত্ব নিয়েছে সময়।

ধ্বংসপাহাড়ের উপর করে নির্মিত হয়েছে নতুন সভ্যতা আর নিচের মৃতদেহগুলো মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে মাটিতেই। তবে পুরোপুরি বোধহয় মিলিয়ে যায়নি। নতুন সময়, নতুন দেশের মানুষেরা বিভিন্ন স্থানে ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনগুলো অবিকৃত রেখে দিয়েছে, গড়ে তুলেছে স্মৃতিসৌধ আর সমাধিক্ষেত্র। চট্রগ্রামে অবস্থিত কমনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রি ও এমন একটি স্থান যা আজো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত আর নির্মমতার কিছু চিহ্ন ধারন করে আছে।

বাংলাদেশ থেকে শত সহস্র মাইল দূরে কোথাকার কোন সম্রাট রণহুংকার দিলেন আর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বেধে গেল এখানটায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশ ছিল ব্রিটিশ রাজশক্তির অধীনে। যে কারনে তৎকালীন ভারতীয় সেনাবাহিনীসহ মিত্রবাহিনীর অজস্র সৈন্যকে অংশ নিতে হয়েছিল অহেতুক এই যুদ্ধে।

ক্ষমতালোলুপ সম্রাটদের বাসনা চরিতার্থ কিংবা প্রতিরোধ করার জন্য দলে দলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সৈন্যরা এসে জড়ো হয়েছিল এখানটায়, যাদের বেশিরভাগেরই আর ফিরে যাওয়া হয়নি, চিরকালের মত স্থান হয়ে গেছে এই বাংলাদেশের মাটিতে।

চট্রগ্রাম ওয়ার সিমেট্রিতে দাফন করা হয় মূলত আসামের লুসাই পাহাড়, কক্সবাজার, যশোর, খুলনা, রাঙ্গামাটি সহ বিভিন্ন স্থানের সমাধিক্ষেত্রে জড়ো হওয়া সৈন্যদের মৃতদেহগুলোকে। এতে আছে ব্রিটেন, কানাডা, অবিভক্ত ভারত, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড সহ বিভিন্ন দেশের ৭৫৫ জন সৈন্যের কবর। আছে সে সময়কার শত্রুপক্ষ জাপানের ১৯ জন সৈন্যর মৃতদেহ।

ব্রিটেনের রয়াল আর্টিলারির চব্বিশ বছর বয়সী গানার জে এফ হ্যালিডের কবরের ফলকে তার প্রেয়সী লিখেছিলেন- “Sleep in peace till we meet again”.

এরপর পেরিয়ে গেছে অনেকগুলো দিন। আশা করা যায়, এতো দিনে হ্যালিডের প্রেয়সীর প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে। অনেক ঝড়ঝঞ্জা পেরিয়ে অবশেষে তাদের দেখা হয়েছে।

এখানেই পাশাপাশি শায়িত রয়েছেন পাঞ্জাব ২ রেজিমেন্টের দুই সৈনিক অমর সিং আর গুলাম মোহাম্মদ। একজনের সমাধিফলকে হিন্দি আর অন্যজনের জন্য উর্দুতে স্বজনরা জানিয়েছেন অন্তিম শুভেচ্ছা।

উপরের সমাধি ফলক দুটির ভিন্ন ভাষা আর ধর্ম অবশ্য নিচে শায়িত দুই বন্ধুর বন্ধুত্বে কোন তফাৎ গড়তে পারেনি। একই মাটির নিচে দুই বন্ধু পাশাপাশি ঘুমিয়ে আছেন ভীষণ নিশ্চিন্তে। অমর সিং আর গুলাম মোহাম্মদদের তো তাও পরিচয় জানা গেছে, অনেক সেনার কবর এখানে আছে যাদের কোন পরিচয়ই জানা যায়নি। তারা কে, কোথা থেকে এসেছেন- সেসব জানার কোন উপায় থাকেনি।

রয়াল এয়ার ফোর্সের ফ্লাইট সার্জেন্ট জি কুপারের আকাসে ওড়ার সাধ থেমে গিয়েছিল মাত্র বাইশ বছর বয়সেই। যুদ্ধের দিনগুলিতে আকাশ থেকে তিনি দেখেছিলেন নরক সদৃশ এক মর্ত্যর স্বরূপ। অন্তরীক্ষ থেকে তিনি দেখেছিলেন নিচের গুচ্ছ অগ্নিকুণ্ড, ধ্বংস আর ভয়াবহ সব ব্রহ্মাস্ত্রের ছায়া।
সেই নিকষ ছায়াই একদিন তার ব্যোমযানটিকে গ্রাস করে নেয়, মৃত্যুতেই তিনি যেন খুঁজে পেলেন মুক্তি। তার স্বজনরাও আশা করেছেন, আর যাই হোক, মৃত্যুর পর তিনি যেন অন্তত শান্তি খুঁজে পান-

‘Resting where no shadows fall,
In perfect peace he awaits us all’

জীবিত অবস্থায় এরা কখনো একে অপরের বন্ধু হতে পারেনি, তবে মৃত্যুর পর শত্রুর পাশাপাশি একই মাটিতে সমাহিত হতে এরা আর আপত্তি করেননি। রাষ্ট্রনায়কদের অহংবোধ, স্বার্থপরতা আর অনমনীয় আচরণের কারনে আজ থেকে ৬৮ বছর আগে যে ভীষণ জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, অজস্র হত্যাকাণ্ড, ধ্বংস আর মৃত্যু পরবর্তী নিরবতাই শেষমেশ সে জটিল পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে পেরেছে।

চট্রগ্রাম ওয়ার সিমেট্রিতে আপনি সেই সুনসান নীরবতা আর ক্ষান্তভাবের কিছুটা অনুভব করতে পারবেন।
তবে নিরঙ্কুশ শান্তি আর সম্প্রীতি কি সম্পূর্ণ অর্জিত হয়েছে!অহেতুক যুদ্ধে মৃত সেনাদের রক্ত মাটিতে মিলিয়ে যেতে না যেতেই বারবার উঠে এসেছে স্বার্থ সিদ্ধির কথা। নতুন মানচিত্রের আকার আর ক্ষমতার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে মানুষ নতুন করে মেতে উঠেছে ধ্বংসযজ্ঞে।

চট্রগ্রাম ওয়ার সিমেট্রিতে শায়িত প্রতিটি সেনার সমাধি ফলক যেন সেই সব ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছে। শুধু প্রতিবাদই নয়, এতে রয়েছে নিহত সৈন্যর পিতার আকুতি, প্রেয়সীর কান্না।

3


প্রাচীন সময়ে মানুষ যে আমাদের মত ঘরবাড়ি তৈরি করে বাস করতো না সেটা আমরা জানিই। বইপত্রে আমরা জেনেছি “পাহাড়ের গুহায় এবং গাছের ওপরে” মানুষ আশ্রয় নিত। পরে তারা ঘরবাড়ি তৈরি করতে শুরু করে। জর্ডানের পেট্রা অনেকটা তার মাঝামাঝি একটা জায়গা, যেখানে মানুষ আর প্রকৃতি একে অপরের হাত ধরে টিকে ছিলো যুগ যুগ ধরে। পাথর কুঁদে পাহাড়ের মাঝে মানুষ তৈরি করে অলঙ্কৃত গুহা আর সেখানেই গড়ে তোলে সমৃদ্ধ এক সভ্যতা। প্রাচীন স্থাপত্যবিদ্যার এর চাইতে উৎকর্ষ নিদর্শন আর দেখা যায় না।

গ্রিক ভাষায় পেট্রার নাম হলো Πέτρα বা “পাথর” আর আরবিতে আল-বাত্রা। প্রাচীন পেট্রা নগরী অবস্থিত দক্ষিণ জর্ডানের বেলেপাথরে তৈরি খাড়াই পাহাড়ের গায়ে। আরব্য যাযাবর নাবাতিয়ান জাতির মানুষের তৈরি করা মন্দির, সমাধি, হল, বেদি অ্যাকুয়াডাক্ট রয়েছে এখানে। ২০ হাজার নাবাতিয়ানের এই শহরে ছিলো পানির সংকট। এ কারণেই তারা পাথর কেটে তৈরি করে পানি সরবরাহের এই প্রক্রিয়া অ্যাকুয়াডাক্ট। প্রাচ্যের মশলা বাণিজ্যের চলাচলের অন্যতম পথ ছিলো পেট্রার মধ্য দিয়ে। এখনও এই শহরের দেয়ালে দেয়ালে সেই সভ্যতার নিশ্বাস মেখে রয়েছে।

খ্রিষ্টের জন্মের কয়েক শতাব্দী পূর্বে , মোটামুটি খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে পত্তন হয় এই শহরের। বাণিজ্য, কৃষি, প্রযুক্তি এবং পাথর কেটে স্থাপত্য তৈরিতে বিশেষ পারদর্শিতা ছিলো তাদের। তার পরে ১৮০০ এর শুরুর দিকে এক সুইস অভিযাত্রী আবিষ্কার করে এই প্রাচীন নগরী। ডেড সি এবং রেড সি এর মাঝে এই নগরীকে অনে সময় রোজ সিটিও বলা হয়, কারণ যে পাথর থেকে এই শহর কেটে তৈরি করা হয়েছিলো, তার রংটাও লালচে। বাইবেলে এই নগরীর বর্ণনা রয়েছে, সেখানে একে উল্লেখ করা হয় “পাথরের মাঝে ফাটল” বলে। শহরের প্রবেশমুখ হলো দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী একটি ফাটল যাকে ‘সিক” বলে ডাকা হয় এখন। পেট্রার সবচাইতে উল্লেখযোগ্য স্থাপনা হলো "ফারাওর গুপ্তধন” নামের একটি স্মৃতিসৌধ।

এত সমৃদ্ধ একটি সভ্যতা হারিয়ে গেলো কেন? জানা যায়, ৩৬৩ সালের দিকে একটি বড় ধরণের ভূমিকম্প হয় এই অঞ্চলে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পেট্রার স্থাপনাগুলো। অনেকগুলো স্থাপনা ভেঙ্গে যায় এবং এই শহরের টিকে থাকার জন্য জরুরি পানি সরবরাহ প্রক্রিয়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর পরবর্তীতে লুটেরাদের আক্রমনে এর অনেক মূল্যবান ধনসম্পদ হারিয়ে যায়।

পেট্রার রহস্যের কিছুটা আভাস পাওয়া যায় এর ধোঁয়াটে ইতিহাসের মাঝে। Indiana Jones and the Last Crusade সিনেমায় সেই রোমাঞ্চ তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছে বটে, কিন্তু তার মাঝে সঠিক তথ্য তেমন নেই। একটি পাত্র আকৃতির কাঠামো তৈরি করা আছে এর প্রবেশমুখ “সিক” এর ওপরে। এতে রয়েছে অসংখ্য গুলির চিহ্ন। পেট্রার ভেতরে বাস করা কতিপয় বেদুইনের মতে, স্থানীয় মানুষ মনে করত এই পাত্র আসলে একটি গুপ্তধন রাখার স্থান এবং এটা ভেঙে ফেলার উদ্দেশ্যে তারা এর ওপর গুলিবর্ষণ করে। কিন্তু এই পাত্র আকৃতির কাঠামো আসলে নিরেট পাথরে তৈরি, সে ব্যাপারটা বুঝতে অনেক সময় লেগে যায় তাদের। আর পেট্রার ভেতরে রয়েছে অনেক অনেক সমাধি। এগুলোর প্রতিটির পেছনেই থাকতে পারে চমকপ্রদ কোনও কাহিনী। রোমান সাম্রাজ্যের পেটে ঢুকে যাওয়ার আগ পর্যন্ত নাবাতিয়ানরা অনেক প্রভাবশালী ছিলো। শুধু বানিজ্যই নয়, বরং প্রযুক্তিগত দিক দিয়েও। পানি সরবরাহ, সংরক্ষণ, সেচ ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাদের বিচক্ষণতার পরিচয় পাওয়া যায়। নাবাতিয়ান এবং রোমান-গ্রিক ধাঁচের স্থাপত্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পুরো এলাকায়।

এই পানি সরবরাহের প্রযুক্তি নিয়েই মূলত ধাধায় পড়ে গেছেন গবেষকেরা। বছরে মাত্র ছয় ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হতো যে অঞ্চলে, সেখানে এত মানুষের চাহিদা মেটানোর মতো উন্নত প্রযুক্তি এলো কোথা থেকে? শুধু তাই নয়, নাবাতিয়ানদের স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেন। তারা মুলত যাযাবর শ্রেণীর মানুষ ছিলো। সারাজীবন যারা তাঁবু খাটিয়ে বাস করে অভ্যস্ত, তাদের পক্ষে কি আসলেই এত উন্নত মানের পাথর খোদাই করা এমনকি তার মধ্য থেকে অনেকটা আধুনিক ধাঁচের একটি পরিকল্পিত শহর বের করে ফেলা সম্ভব? কোনও সঠিক উত্তর পাওয়া যায় না এই প্রশ্নের। তার ওপর এই সভ্যতার মানুষেরা নিজেদের ব্যাপারে কখনো কোনও লিখিত তথ্য রেখে যায়নি। তারা যে লেখা-পড়া করতে সক্ষম ছিলো, তার প্রমাণ পাওয় যায় দেয়ালে আঁকা বিভিন্ন গ্রাফিতিতে। কিন্তু অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতার মানুষেরা নিজেদের উৎকর্ষের কাহিনী যেভাবে লিপিবদ্ধ করে রেখে গেছে, নাবাতিয়ানরা সেটা করে নি। তার কারণ কি? এটা জানা না গেলেও, তারা যে গোপনীয়তা পছন্দ করত, সেটা বোঝাই যায়। এর একটি বড় উদাহরন হলো তাদের বাসস্থান। এত জায়গা থাকতে তারা পাহাড়ের গায়ে এমন দুর্গম একটি স্থানে আস্তানা গাড়ে। এ নগরী যখন সক্রিয় ছিলো তখনও নিজেদের বানিজ্য এবং প্রযুক্তির সব তথ্য তারা গোপন করেই রাখত। এখন আমরা অনেক কিছুই হয়তো ধারণা করে নিতে পারি। কিন্তু সত্যি এটাই যে পেট্রার অনেক রহস্য হয়তো বিলুপ্ত হয়ে গেছে নাবাতিয়ানদের সাথে সাথেই।

আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, এই নগরীর মাত্র ১৫ শতাংশ এখন পর্যন্ত এসেছে প্রত্নতাত্বিকদের গবেষণার আওতায়। বাকিটা রয়ে গেছে অজানা। পেট্রার ভূগর্ভের অনেক নিদর্শন এখন আছে মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। হয়তো সেগুলোই পেট্রার ইতিহাস জানতে সাহায্য করবে একদিন।

4
সময়টা ৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দ। আরাকানের দিগবিজয়ী চন্দ্রবংশীয় রাজা সু-লা-তাইং-সন্দয়া বের হয়েছেন বাংলা অভিযানে। কোন এক অনির্দিষ্ট কারনে রাজার মন মেজাজ খুব খারাপ হয়ে আছে। চোখ দুটো টকটকে লাল, নিঃশ্বাস পড়ছে ঘনঘন।

বিশাল আকৃতির সব রণঢাক বাজিয়ে সমরসাজে রাজা এগিয়ে যাচ্ছেন আর তাঁকে পথ দেখাচ্ছিলেন তাঁরই কজন যুদ্ধোন্মাদ সেনাপতি। চলতে চলতে এক পর্যায়ে রাজা হঠাৎ থেমে গেলেন। জায়গাটি ছিল মৌন সব পর্বতে ঘেরা, যেখানে দাড়িয়ে দেখা যায় পশ্চিমের সাগর।

পাহাড় আর সাগরের সেই অপার্থিব সৌন্দর্য দেখেই বোধহয় রাজার বোধদয় হল। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার চোখের রঙ আর নিঃশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে এল। হাত উচিয়ে তিনি তার যোদ্ধাদের আদেশ দিলেন থেমে যাবার জন্য। অতিউৎসাহী সেনাপতিদের মুখ কালো হয়ে গেল। তবে রাজার তন্ময়ভাবটি দেখে কেউ আর রাজাকে এভাবে হঠাৎ থেমে যাবার কারণটি জিজ্ঞেস করার সাহস পেলনা।

ঠিক কি কারনে রাজা সেদিন ওভাবে থেমে গিয়েছিলেন সেটি অবশ্য অবিলম্বেই জানা গেল। গহীন বনানীর যেখানটায় রাজা থেমেছিলেন, সেখানেই তিনি অতঃপর তৈরি করলেন একটি স্তম্ভ- যাতে লেখা ছিল “চেৎ-ত-গৌঙ্গ”, বাংলায় অনুবাদ করলে যার অর্থ দাঁড়ায়- “যুদ্ধ করা অনুচিৎ”।

রাজা সু-লা-তাইং-সন্দয়া’র বানানো সেই স্তম্ভখানি সময়ের গর্ভে হারিয়ে গেছে বহু আগে। তবে যে বনানীর অপার্থিব সৌন্দর্য দেখে রাজা স্তম্ভটি তৈরি করেছিলেন, সেখানটায় এসে সময় যেন নিজেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল মহাকাল থেকে। ধারণা করা হয়, স্তম্ভে লেখা “চেৎ-ত-গৌঙ্গ” থেকেই আজকের চট্রগ্রাম শব্দটির উৎপত্তি ঘটেছে। আর পশ্চিমের যে বিপুল সাগর দেখে তিনি থমকে গিয়েছিলেন, কালক্রমে সেটির নাম হয়ে গেছে বঙ্গোপসাগর।

আজো সেখানটায় এসে অজস্র মানুষের চলার গতি স্লথ হয়ে যায়। আর এভাবেই চট্রগ্রাম শহরের ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত হয়ে উঠেছে ভ্রমণকারীদের জন্য জনপ্রিয় এক গন্তব্যর নাম।
মূল শহর হতে এখানটায় যাবার জন্য সুবিধাজনক কোন বাস রুটের সন্ধান পাওয়া যায়নি, যেকারনে ভ্রমণকারীদের জন্য পরামর্শ থাকবে ট্যাক্সি কিংবা অটোরিকশা বেছে নেবার জন্য। তবে দক্ষিণ আগ্রাবাদ কিংবা পোর্ট কানেক্টিং সড়ক পার হয়ে বন্দর এলাকাতে ঢুকতেই আপনি বন্দর এলাকার ব্যস্ততার মুখোমুখি হয়ে যাবেন।

দানব আকৃতির বিশাল সব ট্রাক বিপদজনকভাবে হয়তো আপনাকে পাশ কাটিয়ে যাবে। কাস্টমস/ ইপিজেড সংলগ্ন এলাকাতে কিছুক্ষণ হয়তো যানজটে বসে থাকতে হতে পারে। কালো ধোঁয়ার হাত থেকে বাঁচার জন্য সাথে মাস্ক রাখুন।

অতখানি পথ পেরোলেই অতঃপর পৌঁছে যাবেন সি বিচ রোডে। সৈকতে পা রাখতেই বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী এবং হকাররা হয়তো আপনার পিছু নেবে। মেজাজ হারাবেননা, সমুদ্র দেখার অভিলাষে ছোটখাট বিড়ম্বনার বিষয়গুলো অগ্রাহ্য করুন। কোন কিছু ক্রয় করতে চাইলে দাম জেনে নিন।

মূল সৈকতে একটু ভিড় বেশীই থাকে, নিরিবিলিতে সূর্যাস্ত দেখতে চাইলে মূল প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকে হাতের বামপাশ ধরে বিএনএস নাভাল বেস সংলগ্ন এলাকাটির দিকে চলে যান। সূর্যাস্তের পরও চাইলে আপনি সেখানে অবস্থান করতে পারেন। তবে আজকাল সৈকত সংলগ্ন অস্থায়ী রেস্তোরাগুলো হতে অনেক দোকানিই অ্যালকোহলজাতীয় পানীয় বিক্রয় করেন, উচ্ছৃঙ্খল কিংবা মদ্যপ শ্রেণীর কারো মুখোমুখি পড়ে গেলে পাশ কাটিয়ে চলে যান।

পতেঙ্গা সৈকতের দৈর্ঘ্য প্রায় ২২ কিলোমিটার। সৈকতের সরু গড়নের জন্য এখানে সাতার কাটাকে নিরুৎসাহিত করেন বিশেষজ্ঞরা। সূর্যাস্তের পর ভিড়বাট্টা কিছু কমলে নির্জন বালুকাবেলায় চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে থাকতে পারেন। পাশে কেউ না থাকলে দূরের ধ্রুবতারা আপনাকে সঙ্গ দেবে।

সাগর হয়তো ক্লান্তভাবে ফেরত দিয়ে যাবে সারাদিন ধরে তার বুকে জমতে থাকা বর্জ্যের কিছু, পায়ের কাছটায় এসে হয়তো জমা হবে পানির বোতল, বিষাক্ত দুই নম্বুরী ডিজেল অথবা প্রাণহীন সামুদ্রিক মাছ। পেছনে হয়তো ভাগবাটোয়ারা নিয়ে হৈচৈ বাঁধিয়ে দেবে কিছু অবৈধ দখলদার, প্রশাসনের লোকজন আর মধ্যবয়সী সব ছাত্রনেতারা, তবে আশা হারাবেন না। এদের থেকেও ভয়াবহ এক নৃশংস নৃপতির বোধন হয়েছিল বহুকাল আগে, এই প্রকৃতির সামনে দাড়িয়েই। বিপুল সাগরের সামনে দাড়িয়ে একদিন হয়তো আমাদের নেতারাও পথ খুঁজে পাবেন।

এতোক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন প্রকৃতির তুলনায় মানুষ কত ক্ষুদ্র! এতোক্ষণে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন প্রকৃতির অসীম শক্তির কথা ...

5


পিরামিড তৈরির সময়কার রাজারাজড়াদের ইতিহাস তো জানা হয়েছে। এবার চলুন একটু চোখ দেওয়া যাক সাধারণ মানুষের দিকে। আর এর সাথে জড়িয়ে রয়েছে আরও একটি প্রসঙ্গ, আর তা হলো পিরামিডের প্রতিষ্ঠা।

পিরামিড নিয়ে জল্পনা কল্পনা রয়েছে অনেক। তবে সবচাইতে বেশি কৌতূহলের ব্যাপার হলো, এই বিশাল সব স্থাপনা কারা তৈরি করলো? বিভিন্ন তত্ব রয়েছে এর ব্যাপারে। একটা প্রচলিত তত্ব হলো, ইহুদী দাসেরা তৈরি করেছিলো এই পিরামিড এবং মুসা নবী পরে তাদেরকে স্বাধীন করেন। কিন্তু মুসা নবীর আসার আরও অনেক আগেই এসব পিরামিড তৈরি হয়েছিল। এ ধরণের সম্ভব তত্বের পাশাপাশি রয়েছে একেবারেই অদ্ভুতুড়ে তত্ব। অনেকের মনেই রয়েছে বদ্ধমূল ধারণা যে এসব পিরামিড তৈরি করার প্রযুক্তি সে সময়ের মানুষের ছিল না, এবং এগুলো তৈরির পেছনে রয়েছে এলিয়েনের হাত! হারানো নগরী আটলান্টিসের মানুষের দ্বারাও এটি তৈরি হতে পারে বলে ধারণা আছে। কিন্তু সত্যটা কী?

গ্রিক ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস এ ব্যাপারে লেখেন, এক লাখের মত মানুষ বিশ বছর ধরে পরিশ্রম করে খুফুর পিরামিড তৈরি করেন। তিনি আরও জানতে পারেন, খুফু ছিল খুবই অত্যাচারী এক শাসক যে কিনা একেবারে অমানুষের মত আচরণ করত এসব শ্রমিকের ওপর। তাদেরকে পেটানো হত নির্মমভাবে, খাবার দেওয়া হতো না পর্যাপ্ত এবং এসব অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অনেকেই পিরামিড প্রতিষ্ঠা হবার সময়কালে মারা যায়।

এই তথ্য নিয়ে বর্তমানের গবেষকদের মধ্যে রয়েছে যথেষ্ট মতভেদ। বেশিরভাগ এই মত ব্যক্ত করেন যে, হেরোডোটাস সে সংখ্যা বলেছিলেন তার মাত্র এক তৃতীয়াংশ পরিমাণ শ্রমিক দরকার হবার কথা একটা পিরামিড তৈরিতে। এদের বেশিরভাগই ছিল শ্রমিক। নীল নদের বন্যায় যখন ফসলি জমি ভেসে যেতো তখনই তাদেরকে এসব কাজে লাগানো হত। আর তাছাড়া, বন্যার পানির ওপর দিয়ে চুনাপাথর ভাসিয়ে নেওয়া সহজ হত তখন। নীল নদের পূর্ব পাড়ের পাথর কোয়ারি থেকে এসব পাথর নিয়ে যাওয়া হত পশ্চিম পাড়ের পিরামিড তৈরির এলাকায়। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, পিরামিড তৈরিতে ব্যবহৃত চুনাপাথরের চাঁই অনেক বড় হলেও সে সময়ে মিশরীয়দের প্রযুক্তি এতটাই উন্নত ছিল যে মাত্র ছয় জন মানুষ মিলে একটি চাঁই বয়ে নিয়ে যেতে পারতো। সুতরাং বর্তমান ধারণা হলো, ১০ হাজারের মত শ্রমিক কাজ করেছিলো পিরামিড তৈরিতে।

এসব শ্রমিকদের ওপর অত্যাচারের ব্যাপারটাও একেবারে ঠিক বলে ধরে নেওয়া যায় না। গিজার পিরামিডের পেছনে এক লুকানো সমাধীস্থল খুঁজে পাওয়া যায় ১৯৯০ সালে। এতে সংরক্ষিত মৃতদেহগুলো ছিল পিরামিড প্রস্তুতে নিয়োজিত শ্রমিকদের। গবেষণার পর ধারণা করা হয়, তারা দাস ছিল না বরং মিশরের দরিদ্র পরিবার থেকে আসা এসব শ্রমিকরা সাধারণ শ্রমজীবী ছিল। বেশ শ্রদ্ধার সাথে সমাধিস্থ করা হয় তাদেরকে এবং মিশরীয় ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী তাদের মরদেহের পাশে রাখা ছিল মদ এবং রুটির পাত্র। তারা নিম্নমানের দাস হলে এত সম্মানের সাথে তাদেরকে সমাধিস্থ করা হত না বলে মনে করেন গবেষকরা। তবে দাস না হলেও যথেষ্ট পরিশ্রমের জীবন কাটাতে হত এসব শ্রমিকের। তাদের শরীরের অবস্থা দেখে ভারী কায়িক পরিশ্রমের প্রমাণ পাওয়া যায় এবং এদের অনেকেরই ছিল আরথ্রাইটিসের সমস্যা।

6


পুরনো ঢাকার আর্মেনিয়ান গির্জা, এক ঐতিহ্যমন্ডিত আর স্মৃতি বিজড়িত স্থান। আর্মানিটোলায় অবস্থিত এই গির্জায় এক সময় প্রচুর লোকের সমাগম হতো। এখানে মূলত আর্মেনিয়ান অর্থোডক্স সম্প্রদায়ের মানুষজনই বেশি আসতেন, যারা এই এলাকাতেই শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বসবাস করে আসছিলেন। কিন্তু কালক্রমে তাদের সংখ্যা কমতে থাকে। আর আজ অনেক অনেক বছর পর পুরনো এই গির্জাতে সেই আর্মেনিয়ান সম্প্রদায়ের একজন মাত্র ব্যক্তিই রয়েছেন।

১৭৮১ সালে আর্মেনিয়ান এপোস্টলিক চার্চের অধীনে এই গির্জাটি নির্মিত হয়, যা কিনা বিশ্বের প্রাচীনতম জাতীয় গির্জা হিসেবে স্বীকৃত। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ সরকারের স্থাপত্য বিভাগের আওতাভুক্ত একটি গুরত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। এর রক্ষণাবেক্ষণ কাজে এখন একজন মাত্র ব্যক্তিই রয়েছেন, যার নাম মাইকেল জোসেফ মার্টিন। এখানে এখন দর্শনার্থী তেমন আসে না বললেই চলে। যেকারণে গির্জাটিও বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে। ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিও পালিত হয় কালেভদ্রে।

মার্টিন ১৯৪২ সালে তার বাবার পথ অনুসরণ করে এদেশে আসেন। আর যেসব আর্মেনীয়রা এই গির্জার দেখভাল করতেন হয়তো তাদের মাঝে তিনিই সর্বশেষ ব্যক্তি। মার্টিন এই প্রাচীন গির্জা আর তৎসংলগ্ন কবরস্থান দেখাশোনা করেন। এতে রয়েছে ৪০০ টি কবর-যার মাঝে একটি মার্টিনের প্রিয়তমা স্ত্রীর। বিশাল এই গির্জাতে মার্টিন একাই থাকেন। মাঝে মাঝে কানাডাতে তার মেয়েদের দেখতে যান।

তিনি জানেন না, তার মৃত্যুর পর কে এই গির্জার দেখাশোনার ভার নেবে। ২০০৯ সালে এএফপি-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন,হয়তো তার তিন মেয়ের কোন একজন এই দায়িত্ব নিতে পারে। আর এর সাথে বেঁচে থাকবে আর্মেনীয়দের স্মৃতি। কিংবা তাঁর বিশ্বাস পৃথিবীর অন্য কোন প্রান্ত থেকে আর্মেনীয়রা এসে গির্জার দায়িত্ব নেবেন। মার্টিন বলেন, ইশ্বর কখনোই এরকম একটি স্থানকে অরক্ষিত আর অযত্নে পড়ে থাকতে দিতে পারেন না। স্থানীয় এলাকাবাসীও এরকমই মনে করেন।

পুরনো ঢাকার আরমানিটোলা রোডে অবস্থিত এই গির্জার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেই এই বিশাল দরজায় লাগানো তালাটি আপনাকে স্বাগত জানাবে। এর ভেতরে কেউ আর এখন ঢোকেই না। ভেতরটা একদম জনমানবশূন্য। নেই গির্জার ঘন্টাধ্বনি কিংবা পাদ্রীর মুখ থেকে বাইবেলে বর্ণিত ইশ্বর, যীশু আর পবিত্র আত্মার কাহিনী ভেসে আসার শব্দ। যে কারোরই গির্জাতে ঢুকতে বিশেষ অনুমতি নিতে হয়। খ্রিস্ট ধর্মের বড় ধর্মীয় উৎসবের সময়ই এখানে কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ইতিহাস বলছে, সপ্তদশ শতকের কোন এক সময়ে আর্মেনীয়রা বাংলাদেশে আসে। এসময় তারা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে দক্ষিন এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। তারা প্রথমে ভারতের কলকাতা ও দিল্লীতে ব্যবসা শুরু করে। এরপর তারা বাংলাদেশের ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে যায়। তাদের মূল ব্যবসা ছিল মশলা, রত্ন-পাথর, মসলিন,সিল্ক ইত্যাদি। ধর্ম আর্মেনিয়দের জীবনের অংশ ছিল, তাই তারা যেখানেই যেত প্রয়োজনমত গির্জা বানিয়ে নিত। আর্মানিটোলা সেসময় ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল ছিল। যখন এই গির্জাটি তৈরি হয়, তখন চলছে দোর্দন্ড প্রতাপশালী মুঘল সম্রাট আকবরের রাজত্ব।

গির্জাটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য, এর পশ্চিম দিকে একটি টাওয়ার, যাতে ছিল বিশাল এক ঘড়ি। এতোটাই বিশাল যে এটি নারায়ণগঞ্জ থেকেও দেখা যেত। ১৮৯৭ সালের এক ভূমিকম্পে টাওয়ারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ঘড়িও নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে একটি ছোট টাওয়ার বানানো হয়, যাতে কোন ঘড়ি ছিল না। এক কথায় আজো এক ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন এই আর্মেনীয় গির্জা।

7
রমনের ব্যাপারে বাছবিচার থাকে অনেকেরই। কেউ সুন্দর সুন্দর শহর, স্থাপত্য, জাদুঘর দেখতে চান,কেউ বা প্রকৃতির কোলে হারিয়ে যেতে চান। প্রকৃতিপ্রেমীর মাঝেও রয়েছে কত ভাগ! কেউ হ্রদ, কেউ ঝর্ণা, কেউ পাহাড় আবার কেউ খোঁজেন বৃক্ষরাজি। কেউ বা ভাবেন, এই সবগুলোই যদি পাওয়া যেত একই সাথে! কিন্তু তা কি করে হবে? হবে, যদি তা হয় প্লিটভাইসের মত জায়গা!

মধ্য ক্রোয়েশিয়ার প্লিটভাইস লুকিয়ে ছিল এক নির্জন অরন্যের মাঝে। এই অরণ্যকে বলা হত “দ্যা ডেভিল’স গার্ডেন”, যে সাহস করে এই অরণ্যের মাঝে ঢুকতে পারবে তার ভাগ্যেই আছে প্লিটভাইসের সৌন্দর্য যা কল্পনাকেও হার মানায়! গাছের আড়ালে ঘুমিয়ে রয়েছে রত্নের মত ঝকঝকে রঙ্গিন সব হ্রদ, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাহাড় আর সুরেলা ঝর্নার এক রুপকথার দেশ!

প্লিটভাইস হল ক্রোয়েশিয়ার একটা ন্যাশনাল পার্ক। ১৯৪৯ সালে এটি স্থাপিত হয়। প্রতি বছর প্রায় বারো লাখ দর্শনার্থীর সমাগম হয় ৭৩,৩৫০ একর বিস্তৃত এই পার্কে। নীল এবং সবুজের চোখ ধাঁধানো সব মিশ্রণের ১৬ টা লেক আছে এখানে। গাড় নীল থেকে শুরু করে পান্না-সবুজ অথবা ধুসর রঙের স্বচ্ছ হ্রদগুলো সবসময় রঙ পরিবর্তন করছে। পানিতে কি পরিমাণে খনিজ বা কি কি প্রাণী আছে এবং পানিতে কিভাবে সূর্যরশ্মি পড়ছে তারই ওপরে নির্ভর করে এদের রঙ।

প্লিটভাইসের ঝর্ণাগুলো পৃথিবীবিখ্যাত। UNESCO World Heritage Sites এর মাঝে এদের খুঁজে পাওয়া যাবে। কয়েকটি ঝর্ণা মিলে তৈরি করেছে ২৫৫ ফুট অর্থাৎ ক্রোয়েশিয়ার সবচাইতে উঁচু জলপ্রপাত। আর এখানকার জলপ্রপাতের ধরনটাও ভীষণ অন্যরকম। একটা হ্রদ থেকে শুরু হয়ে সেই ঝর্ণা গিয়ে পড়ে আরেক হ্রদে, সেই হ্রদ থেকে আবার তৈরি হয় একাধিক জলপ্রপাত! আবার এসব হ্রদ, ঝর্ণা এবং গাছগাছালির মধ্য দিয়ে হেঁটে বেড়ানোর জন্য রয়েছে কাঠের রাস্তা।

শুধু মাটির ওপরেই নয় বরং মাটির নিচেও রয়েছে প্লিটভাইসের সৌন্দর্য। ঝর্নার পানির আঘাতে মাটির নিচে ফাঁকফোকর তৈরি হয়। রয়েছে পাথরের বিশাল সব গুহা এবং টানেল। ভঙ্গুর এবং স্পঞ্জের মত ফুটো ফুটো খনিজ পাথরে ভর্তি এলাকাটি।

গাছপালায় পূর্ণ পার্কের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা। ভালুক, নেকড়ে এবং লিনক্স এর অভয়ারণ্য এই পার্ক। হ্রদগুলোতে বাস করে প্রচুর মাছ এবং হাঁস। বছরের একে সময়ে একেক রকম রূপ নিয়ে আসে এই পার্কের প্রকৃতি।

স্থানীয় গাইড সাথে নিয়ে হেঁটে বেড়ানো বা বড় হ্রদে নৌকা ভ্রমণের মাধ্যমে উপভগ করা যেতে পারে এই পার্কের মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ। আর যদি অ্যাডভেঞ্চারের নেশা থাকে আপনার তাহলে পাহাড়ে চড়ার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। এত বৈচিত্র্য রয়েছে প্লিটভাইসে, যে কি করতে হবে সেটা বলে দেবার আর প্রয়োজন পড়ে না!

8


ধরুন, ঝকঝকে রৌদ্রজ্জ্বল একটি দিন। ব্যস্ত ভঙ্গিতে আপনি হেঁটে যাচ্ছেন ব্যস্ত রাজপথ দিয়ে। হঠাৎ খেয়াল করলেন আপনার ঠিক সামনেই পড়ে আছে পেটমোটা একটি মানিব্যাগ। মুহূর্তের জন্য আপনি ভড়কে গেলেন। মানিব্যাগে টাকা পয়সা ভালোই আছে বোঝা যাচ্ছে। আপনি একমুহূর্ত ডানে বায়ে দেখে নিলেন কেউ আপনাকে খেয়াল করছে কিনা। মানিব্যাগটা তখন হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসের মত করে কথা বলে উঠলো- ‘হা করে দেখছিস কিরে হাঁদারাম! তুলে ফেল! তুলে ফেল আমাকে, তারপর ঝটপট পকেটে ভরে নে’।

পথেঘাটে চলাফেরার সময় এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি আমরা অনেকেই কমবেশি হয়েছি। টাকা ভর্তি এমন একটি মানিব্যাগ হঠাৎ পথে কুড়িয়ে পেয়ে আমরা অনেকেই মুহূর্তের জন্য কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে পড়ি। কেউ মানিব্যাগটা উঠিয়ে নিই ফিরিয়ে দেবার অভিপ্রায়ে, কেউবা আবার ঝটপট একটি শপিং লিস্ট বানিয়ে ফেলি মনে মনে… কেউ কেউ তো আবার ভয় পেয়ে মানিব্যাগ ফেলে দিই ভোঁদৌড়।

পথে কুড়িয়ে পাওয়া মানিব্যাগ নিয়ে মানুষের আচরণ পর্যবেক্ষণের অভিপ্রায়ে সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন রিডার্স ডাইজেস্ট চারটি মহাদেশের মোট ষোলটি শহরজুড়ে একটি গবেষণা চালায়।

গবেষণার অংশ হিসেবে শহরের বিভিন্ন পার্ক, শপিং মল কিংবা সাইড ওয়াকে পঞ্চাশ ডলার, সেলফোন নাম্বার, বিজনেস কার্ড আর ফ্যামিলি ফটোগ্রাফ সমেত একটি মানিব্যাগ ফেলে রাখা হয়। উদ্দেশ্য- সে শহরের মানুষগুলোর সততা কিংবা দায়িত্ববোধ সম্পর্কে একটি ধারনা নেয়া।

সমীক্ষায় সবচেয়ে বেশি সততা দেখিয়েছেন ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি নগরীর বাসিন্দারা যারা পড়ে থাকা মোট বারোটি মানিব্যাগের এগারোটিই ফেরত পাঠান ব্যাগে থাকা ঠিকানা/ সেল নাম্বারটি ব্যবহার করে।

ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতন সংক্রান্ত ইস্যুতে ইমেজ সঙ্কটে ভুগলেও ভারতের মুম্বাই নগরীর বাসিন্দারা সততার তালিকাটিতে দ্বিতীয় স্থানটি দখল করে নেন, যেখানে মোট বারোটি মানিব্যাগের মধ্যে নয়টি মানিব্যাগই স্থানীয়রা প্রাপক বরাবর ফেরত পাঠান।

বন্ধুত্বভাবাপন্ন নয় বলে নিউ ইয়র্ক শহরের নাগরিকদের দুর্নাম থাকলেও সেখানকার নাগরিকরা নিজেদের সততার পরিচয় ঠিকই দিয়েছেন এই সমীক্ষায়। নিউ ইয়র্কের রাজপথে পড়ে থাকা মোট বারোটি মানিব্যাগের মধ্যে আটটিই ফেরত পাঠান এখানকার দায়িত্বশীল নাগরিকরা।

বারোটির মধ্যে ছয়টি মানিব্যাগ ফেরত পাঠান বার্লিন নগরীর মানুষেরা। তালিকায় এরপর যতই সামনে যাওয়া হয়েছে, ততই বেরিয়ে এসেছে বিব্রতকর সব চিত্র। পোল্যান্ডের নাগরিকরা মোট বারোটি মানিব্যাগের মধ্যে পাঁচটি মানিব্যাগ ফেরত পাঠান, বাকিগুলোর আর হদিস পাওয়া যায়নি।

অপ্রত্যাশিতভাবে সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরের নাগরিকরা মোট মানিব্যাগের থেকে মাত্র চারটি ফেরত পাঠান।
ম্যাঞ্জানারেস নদীর তীরে অবস্থিত মাদ্রিদ নগরী অবস্থানগত কারনেই আন্তর্জাতিক সংগঠকদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে। ‘World Tourism Organization’- এর সদর দপ্তর এ শহরেই অবস্থিত। তবে রিডার্স ডাইজেস্টের পরিচালিত গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী এখানকার সংগঠকদের বেশ বিব্রতই হতে হচ্ছে। মোট বারোটি মানিব্যাগের মধ্যে মাত্র দুটো মানিব্যাগ ফেরত পাঠিয়ে এ শহরের নাগরিকরা শহরের ভাবমূর্তি রীতিমত হুমকির মুখেই ফেলে দিয়েছেন।

পর্তুগালের লিসবনে সমীক্ষাটি চালাতে গিয়ে আয়োজকরা রীতিমত ঘাবড়ে গিয়েছিলেন যখন দেখা গেল- লিসবনের রাজপথে ফেলে আসা বারোটি মানিব্যাগের একটিও ফেরত আসেনি। তবে শেষ মুহূর্তে কোন একজন পর্তুগীজ নাগরিক তার খুঁজে পাওয়া মানিব্যাগটি ফেরত পাঠিয়ে কোনমতে শহরের মুখরক্ষা করেন।
রিডার্স ডাইজেস্টের গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা মানুষের সাইকলজি সম্পর্কে বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য আবিস্কার করেন। গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী দেখা গেছে সততার সাথে মানুষের বয়স এবং লিঙ্গের কোন নির্দিষ্ট যোগসূত্র নেই।

এর চেয়েও চমকপ্রদ আবিষ্কারটি হচ্ছে- মানিব্যাগ ফেরত পাঠানোর ব্যাপারটির সাথে সততা বিষয়টিরই সরাসরি কোন সম্পর্ক নেই। মানিব্যাগ ফেরত পাঠানো বেশিরভাগ মানুষই দাবি করেছেন তারা স্রেফ একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া দেখেছেন। এর সাথে সততা’র মত মানবিক গুণাবলীটির কোন সম্পৃক্ততা নেই। তবে রিডার্স ডাইজেস্টের অনেক অনলাইন পাঠকই গবেষণার এই ফলাফলটির সাথে একমত হতে পারেননি।
ডেট্রয়েটের এক রসিক পাঠক তো বলেই ফেললেন- যে ভাগ্যিস সংগঠকরা তার শহরে যায়নি। গেলে হয়তো রাস্তায় মানিব্যাগটি ফেলার আগেই ছিনতাইকারীরা এসে তাদের সর্বস্ব লুটে নিত।

9
ঢাকা শুধু বাংলাদেশের রাজধানী শহরই নয়, সামাজিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক বিভিন্ন দিক থেকে ঢাকা বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র। এর রয়েছে প্রায় চারশ’ বছরের পুরনো ইতিহাস! প্রাচীন ঢাকার রয়েছে হরেক রকম এলাকা-মহল্লা, অলি-গলি-তস্য গলি। সাথে রয়েছে তাদের বাহারি সব নাম।

আচ্ছা, জায়গাটার নাম ফার্মগেট কেন? এখানে কি এককালে মুরগীর ফার্ম ছিল? কাকরাইল, পিলখানা, তোপখানা, টিকাটুলি, সুক্কাটুলি- এসব অদ্ভুত নামেরই বা কি অর্থ! ধানমন্ডিতে কি এককালে প্রচুর ধানক্ষেত ছিল? পানিটোলায় কি ছিল? এলিফ্যানট রোডে কি এককালে এলিফ্যানট মানে হাতিরা ঘুরে বেড়াত? আর স্বামীবাগে বুঝি স্ত্রী হারা স্বামীরা বাস করতেন?

এখন আমাদের কাছে মজার মনে হলেও, আসলে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার নাম সুপ্রাচীন ঢাকারই ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সযত্নে বহন করে চলছে। আসুন, আজ জেনে নেই ঢাকার তেমন কিছু এলাকার নামকরনের ইতিহাস-

ইন্দিরা রোডঃ
বেশীর ভাগ মানুষের ধারণা ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নামে নামকরণ করা হয়েছে রাস্তাটির। আসলে তা নয়। এককালে এ এলাকায় দ্বিজদাস বাবু নামে এক বিত্তশালী ব্যক্তি বসবাস করতেন। তার ছিল বিশাল বাড়ি। বাড়ির কাছের এই রাস্তাটি তার বড় মেয়ে ইন্দিরার নামে নামকরণ করা হয় ইন্দিরা রোড।

পিলখানাঃ
ইংরেজ শাসনামলে যাতায়াত, মালামাল পরিবহন ও যুদ্ধের কাজে প্রচুর হাতি ব্যবহার করা হত। বন্য হাতিকে পোষ মানানো হত যেসব জায়গায় তাকে বলা হত পিলখানা। সে সময় ঢাকায় একটি বড় সরকারি পিলখানা ছিল। সরকারি কাজের বাইরেও ধনাঢ্য ঢাকাবাসীরা নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিয়ে তাদের হাতিগুলোকে এখানে পোষ মানানোর জন্য পাঠাতে পারতেন।

এলিফ্যানট রোডঃ
সে সময়ে রমনা এলাকায় মানুষজন তেমন বাস করত না। ছিল বিস্তৃর্ণ ফাঁকা এলাকা। এখানে পিলখানার হাতিগুলোকে চড়ানো হত। আর আশেপাশের খালে হাতিগুলোকে গোসল করানো হত। যে রাস্তা দিয়ে পিলখানার হাতিগুলোকে রমনার মাঠে আনানেয়া করা হত সে রাস্তাটাই আজকের এলিফ্যানট রোড।

কাকরাইলঃ
ঊনিশ শতকের শেষ দশকে ঢাকার কমিশনার ছিলেন মিঃ ককরেল। সম্ভবত তার নামে সে এলাকায় কোন রাস্তা ছিল। সে সময় ইংরেজ কমিশনারদের নামে রাস্তার নামকরণ করার রেওয়াজ ছিলো। সেই ককরেল রোড থেকে কালক্রমে এলাকার নাম হয়ে যায় কাকরাইল।

কাগজীটোলাঃ
ইংরেজ শাসনামলে ঢাকায় কাগজ তৈরি করা হত। যারা কাগজ তৈরি করতেন তাদের বলা হত ‘কাগজী’। কাগজীরা যে এলাকায় বাস করতেন আর যেখানে কাগজ উৎপাদন ও বিক্রি করতেন সে এলাকাই কাগজীটোলা নামে পরিচিতি লাভ করে।

গোপীবাগঃ
গোপীনাগ নামক এক ধনী ব্যবসায়ী এই এলাকার মালিক ছিলেন। তিনি স্থাপন করেছিলেন ‘গোপীনাথ জিউর মন্দির’। তখন থেকেই এই এলাকার নাম গোপীবাগ।

চাঁদনী ঘাটঃ
সুবাদার ইসলাম খাঁর একটা বিলাশবহুল প্রমোদতরী ছিল। প্রমোদতরীর নাম ছিল – চাঁদনী। ‘চাঁদনী’ ঘাটে বাধা থাকত। অন্য কোন নৌকা এই ঘাটে আসতে পারত না। সেখান থেকে এলাকার নাম চাঁদনী ঘাট।

টিকাটুলিঃ
এক সময় হুক্কা টানার বেশ চল ছিল বাংলা মুল্লুকে। আর ঢাকার এই এলাকা ছিল হুক্কার ‘টিকা’ তৈরির জন্য বিখ্যাত। ‘টিকা’ তৈরিকারকরা এই এলাকায় বাস করতেন ও ব্যবসা করতেন।

তোপখানাঃ
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর গোলন্দাজ বাহিনীর অবস্থান ছিল এখানে।

পুরানা পল্টন, নয়া পল্টনঃ
এ এলাকা ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর ঢাকাস্থ সেনানিবাস।

ধানমন্ডিঃ
এখানে এককালে বড় একটি হাট বসত। হাটটি ধান ও অন্যান্য শস্য বিক্রির জন্য বিখ্যাত ছিল।

পরীবাগঃ
পরীবানু নামে নবাব আহসানউল্লাহর এক মেয়ে ছিল। সম্ভবত পরীবানুর নামে এখানে একটি বড় বাগান করেছিলেন আহসানউল্লাহ।

পাগলাপুলঃ ১৭
শতকে এখানে একটি নদী ছিল, নাম – পাগলা। মীর জুমলা নদীর উপর সুন্দর একটি পুল তৈরি করেছিলেন। অনেকেই সেই দৃষ্টিনন্দন পুল দেখতে আসত। সেখান থেকেই জায়গার নাম পাগলাপুল।

পানিটোলাঃ
যারা টিন-ফয়েল তৈরি করতেন তাদের বলা হত পান্নিঅলা। পান্নিঅলারা যেখানে বাস করতেন সে এলাকাকে বলা হত পান্নিটোলা। পান্নিটোলা থেকে পানিটোলা।

ফার্মগেটঃ
কৃষি উন্নয়ন, কৃষি ও পশুপালন গবেষণার জন্য বৃটিশ সরকার এখানে একটি ফার্ম বা খামার তৈরি করেছিল। সেই ফার্মের প্রধান ফটক বা গেট থেকে এলাকার নাম ফার্মগেট।

শ্যামলীঃ
১৯৫৭ সালে সমাজকর্মী আব্দুল গণি হায়দারসহ বেশ কিছু ব্যক্তি এ এলাকায় বাড়ি করেন। এখানে যেহেতু প্রচুর গাছপালা ছিল তাই সবাই মিলে আলোচনা করে এলাকার নাম দেন শ্যামলী।

সূত্রাপুরঃ
কাঠের কাজ যারা করতেন তাদের বলা হত সূত্রধর। এ এলাকায় এককালে অনেক শূত্রধর পরিবারের বসবাস ছিলো।

সুক্কাটুলিঃ
১৮৭৮ সালে ঢাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হয়। এর আগে কিছু লোক টাকার বিনিময়ে চামড়ার ব্যাগে করে শহরের বাসায় বাসায় বিশুদ্ধ খাবার পানি পৌঁছে দিতেন। এ পেশাজীবিদেরকে বলা হত ‘ভিস্তি’ বা ‘সুক্কা’। ভিস্তি বা সুক্কারা যে এলাকায় বাস করতেন সেটাই কালক্রমে সিক্কাটুলি নামে পরিচিত হয়।

স্বামীবাগঃ
ত্রিপুরালিংগ স্বামী নামে এক ধনী এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এক ব্যক্তি এ এলাকায় বাস করতেন। তিনি সবার কাছে স্বামীজি নামে পরিচিত ছিলেন। তার নামেই এলাকার নাম হয় স্বামীবাগ।

মালিবাগঃ
ঢাকা একসময় ছিল বাগানের শহর। বাগানের মালিদের ছিল দারুণ কদর। বাড়িতে বাড়িতে তো বাগান ছিলই, বিত্তশালীরা এমনিতেও সৌন্দর্য্য পিপাসু হয়ে বিশাল বিশাল সব ফুলের বাগান করতেন। ঢাকার বিভিন্ন জায়গার নামের শেষে ‘বাগ’ শব্দ সেই চিহ্ন বহন করে। সে সময় মালিরা তাদের পরিবার নিয়ে যে এলাকায় বাস করতেন সেটাই আজকের মালিবাগ।

[তথ্যসূত্রঃ ঢাকাঃ স্মৃতি-বিস্মৃতির শহর – মুনতাসীর মামুন]

10


সবাই জানেন প্রোটিন আমাদের দেহের জন্য কতটা দরকারী। অনেকেই আছেন ওজন কমাবার জন্য ডায়েট থেকে প্রোটিন একেবারেই বাদ দিয়ে দেন। এই অভ্যাস শরীরের জন্যই মারাত্মক ক্ষতি করে। প্রোটিন যেমন অতিরিক্ত খাওয়া ভালো নয়, তেমনি না খাওয়াও একই রকমের ক্ষতিকর। কিন্তু ডায়েট করে ওজন কমাবার সময়ে যদি আপনি প্রোটিন খাওয়া বাদ দিয়ে দেন,তাহলে আপনার সৌন্দর্য যেমন হারিয়ে যাবে। অন্যদিকে আপনি হয়ে পড়বেন দুর্বল অসুস্থ, আবার ডায়েট ছেড়ে দিলেই হু হু করে ওজন বাড়তে শুরু করবে। তাই ডায়েট চলাকালীন সময়ে অবশ্যই খেতে হবে প্রোটিন। কিন্তু হ্যাঁ,সঠিক উপায়ে সঠিক প্রোটিন!

আসুন জেনে নেই প্রোটিনের উপকারিতা সম্পর্কে-

    - প্রোটিন আমাদের দেহের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ।
    - অ্যান্টিবডি তৈরিতে সাহায্য করে ।
    - প্রোটিন ছাড়া মাংস পেশীর সংকোচন সম্ভব না ।
    - প্রোটিন ছাড়া এনজাইম কাজ করতে পারে না ।
    - শরীরের এক অংশ থেকে আর এক অংশে নিউট্রিয়েণ্ট পৌঁছানোর জন্য প্রোটিন দরকারি ।

প্রোটিনের উপকারিতা তো জানলেন, এবার জেনে নিন ডায়েট করার সময় কী ধরনের প্রোটিন খাবেন।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের তো অভাব নেই। সব ধরনের মাছ,মাংস,ডিম,ডাল ও দুধে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন থাকে। আমিষ জাতীয় খাবারে প্রোটিনের পরিমান অনেক বেশি থাকে তবে তার সাথে ফ্যাটের পরিমাণও বেশি থাকে, আর ফাইবার থাকে না বললেই চলে। তাই রেড মিট বেশি না খাওয়াই ভালো। সসেজ এবং বিফও কম খান।কারণ এতে প্রোটিন থাকলেও ফ্যাটের পরিমান অনেক বেশি থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়।

এছাড়া বাকি সব খাবারই নিয়মিত খেতে পারেন। মনে রাখবেন, মুরগির মাংসের থেকে মাছ ও ডিম বেশি ভালো। মাছে আবার ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডও থাকে। তবে মনে রাখতে হবে আমিষ জাতীয় খাবার হজম করতে সময় লাগে, তাই আমিষ ও নিরামিষের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে হবে। যতটুকু আমিষ খাবেন তার চাইতে বেশি সবজি খাবেন, তাহলে হজমে সহায়তা হবে। এছাড়া সয়াবিনে প্রচুর পরিমান প্রোটিন থাকে, তাই খাবারের তালিকায় সয়াবিন রাখতে পারেন। তবে সয়াবিন বেশি খাওয়া চলবে না, কারণ অতিরিক্ত সয়াবিন খেলে ইস্ত্রজেন লেভেল বেড়ে যায়। দিনে একবার সয়াবিনের তরকারি খেতে পারেন। এছাড়া রুটির সাথে ডাল ও দিনে একবার টক দই খেতে পারেন। ডিমের সাদা অংশ দৈনিক খেলেও সম্পূর্ণ ডিম সপ্তাহে ৫টির বেশি খাবেন না।

একটা কথা মনে রাখবেন, মাছ মা মাংস তেল-মসলা দিয়ে রান্না করা খাওয়ার চাইতে গ্রিল বা সিদ্ধ করে খাওয়াতা ডায়েটের সময়ে অধিক উপকারী।

11
ঢাকাই পনির’ বললেই ফুটপাতের পাশে থরে থরে সাজানো পনিরের কথা মনে পড়ে তাই না? কোনোটা লবণ কম আবার কোনোটা একটু বেশি লবণ সহ পাওয়া যায় এই পনির গুলো। তবে অতিরিক্ত লবণের পনিরটাই বেশি জনপ্রিয়। কিছুটা ভেজাল থাকে যেগুলোতে, সেগুলোর ক্রীমি ভাব কিছুটা কম হয় এবং একটু বেশিই ঝুরঝুরে ধরণের হয়। আর অপেক্ষাকৃত খাঁটি পনিরগুলোতে ক্রীমিভাব বেশি থাকে। পুরান ঢাকায় বহু বছর যাবত রসনা বিলাসে অপরিহার্য এই পনিরের নামটাই এখন হয়ে গিয়েছে ‘ঢাকাই পনির’।

ঢাকাই পনির খেতে খুবই সুস্বাদু এবং দেখতে আকর্ষনীয় হয়। এই পনির বেশ সহজলভ্য, তবে তেমনই মূল্যবান। এতটুকুন একটি পনির চেখে দেখতে হালকা হয়ে যায় অনেকেরই পকেট। ঐতিহ্যবাহী এই ঢাকাই পনির কিন্তু খুব সহজেই বাড়িতে তৈরি যায়। খুব কম সময়ে আর স্বল্প খরচে নিজেই তৈরি করতে পারবেন ঢাকাই পনির আর সংরক্ষণ করতে পারবেন বেশ কিছুদিন। আসুন জেনে নেয়া যাক ঢাকাই পনিরের সহজ রেসিপিটি।

উপকরণঃ
৮কাপ গরুর খাঁটি দুধ
১/৪ লেবুর রস
পাতলা সুতি কাপড়
লবণ (ইচ্ছা)

প্রস্তুত প্রণালীঃ

    একটি বড় পাত্রে মাঝারী আঁচে দুধ জ্বাল দিন। জ্বাল দেয়ার সময় ক্রমাগত নাড়তে হবে না হলে দুধ পুড়ে যেতে পারে।
    লেবুর রস দিয়ে দিন এবং চুলার আঁচ কমিয়ে নাড়তে থাকুন। প্রায় সাথে সাথেই দেখবেন দুধ কিছুটা ছাড়া ছাড়া হয়ে গিয়েছে (দুধে যদি কোনো পরিবর্তন না আসে তাহলে আরো কিছু লেবুর রস দিন এবং চুলার আঁচ বাড়িয়ে ধীরে ধীরে নাড়তে থাকুন)।
    দুধ ছানা হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন এবং পাতলা সুতি কাপড়ে ঢেলে ঠান্ডা পানি ঢেলে ছানাগুলোকে ধুয়ে ফেলুন যেন লেবুর রস ধুয়ে যায়।
    এরপর লবণ যোগ করুন আপনার স্বাদমত। কতটা লবণ খেতে চান তার ওপরে নির্ভর করে লবণ দিন। তবে খুব বেশি দেবেন না, কেননা পড়ে আবার দিতে হবে। লবণ দিয়ে ছানাকে মাখিয়ে ছানা সহ কাপড়টিকে খুব শক্ত করে প্যাচ দিয়ে চিপে নিন যেন সব পানি বের হয়ে যায়।

    এরপর একটি বাঁশের বা প্লাস্টিকের ঝুড়িতে ছানা ঢেলে চেপে চেপে বসান ও ভারী কিছু দিয়ে চাপা দিয়ে রাখুন যেন সব পানি ঝরে যায়।
    সব পানি ঝরে গেলে ৪/৫ ঘণ্টা পর পনিরের বলটিকে ঝুড়ি থেকে বের করে ঠাণ্ডা কোনো স্থান বা ফ্রিজে রেখে দিন। পনির জমে গেলেই পরিবেশন করতে পারবেন। তবে সঠিক স্বাদ পেতে করতে হবে আরও কিছু কাজ। তৈরির কয়েক ঘণ্টা পর পনিরটি বেশ জমে গেলে ঝুড়ি থেকে বের করে নিন। এর গায়ে কাঠি দিয়ে কিছু ছিদ্র করে নিন। তারপর পনিরের সম্পূর্ণ শরীরে ভালো করে লবণ মাখিয়ে আবার ঝুড়িতে ভরে ফেলুন। এরপর একটি ঠাণ্ডা স্থানে রেখে দিন ঝুরি সহ। লবণ বেখি খেতে চাইলে পরপর কয়েকদিন এভাবে লবণ মাখান ও উল্টে পাল্টে দিন পনিরকে।
    লবণের প্রলেপ পনিরে ফাঙ্গাস জমা থেকে রক্ষা করবে। লবণ দিয়ে মাখিয়ে ফ্রিজেও রাখতে পারেন। তৈরির ২/৩ দিন পর খেলে মিলবে আসল ঢাকাই পনিরের স্বাদ! ঝুড়ি না থাকলে কাপড়ে বেঁধেও তৈরি করা যাবে।

12


ওজন কমানোর জন্য বেশিরভাগ মানুষ চিন্তিত থাকেন। কী করলে ওজন কমবে, কীভাবে চললে একটু কম মোটা দেখাবে, কী কী না খেলে ওজন কমবে আরও কত কি! ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় অনেক কাজ করে থাকেন ওজন কমানোর জন্য। অনেক বিধি নিষেধ মেনে চলেন। কিন্তু এত কিছুর পরও ওজন কমে না। যেন পিছুই ছাড়তে চায় না বাড়তি ওজন। এদিকে বিধি নিষেধ মানতে মানতে জীবন অস্থির। মজার ব্যাপার কি জানেন, আপনি আপনার খাবার তালিকায় কিছু খাদ্য যোগ করে অনায়াসেই কমিয়ে নিতে পারেন ওজন। অবাক হচ্ছেন? অবাক হলেও সত্য যে কিছু খাবার খেয়ে আপনি ওজন কমাতে পারেন সহজেই। আজকে আপনাদের জন্য রইল এরকমই একটি খাদ্যের তালিকা।
কাঠবাদাম

কাঠবাদাম স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো একটি খাদ্য। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ও মিনারেল আছে তা পুরো দিন শরীরে এনার্জি সরবরাহ করে। কাঠবাদামের ফাইবার ক্ষুধা কমায়। সকাল শুরু করুন একমুঠো কাঠবাদাম দিয়ে। ডাক্তাররা শরীরের সুস্থতার পাশাপাশি দেহের চর্বি নিয়ন্ত্রণে কাঠবাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে লবণাক্ত কাঠবাদাম এড়িয়ে চলুন।
ডিমের সাদা অংশ

অনেকেই মনে করেন ডিম খেলে ওজন বাড়ে। কথাটি সম্পূর্ণ ভুল। তবে ওজন কমাতে চাইলে ডিমের কুসুম এড়িয়ে চলাই ভালো। সকালে একটি/ দুটি ডিমের সাদা অংশ খেলে তা অনেকটা সময় ধরে পেটে থাকে এবং কম ক্ষুধার উদ্রেক করে। এতে অন্যান্য খাওয়া কম হয়। ডিম প্রোটিনের খুব ভালো একটি উৎস। এতে করে শরীরের জন্যও বেশ ভালো। ডায়েট যারা করেন তারা একটি ডিম রাখুন সকালের নাস্তায়। পুরো দিনটি শরীরে কাজ করার ক্ষমতা পাবেন। পাশাপাশি ওজন কমাতে পারবেন।
আপেল

আপেল সম্পর্কে একটি প্রচলিত কথা হল ‘দিনে মাত্র একটি আপেল খেলে ডাক্তারের প্রয়োজন হয় না’। কিন্তু আপনি জানেন কি, আপেল ওজন কমাতে অনেক বেশি কার্যকরী একটি খাবার? একটি আপেলে ৪-৫ গ্রাম ফাইবার থাকে। তা ক্ষুধার উদ্রেক কমায়। এবং শরীরে জমে থাকা ফ্যাট কাটতে সাহায্য করে। যখন হুটহাট ক্ষুধা লাগে তখন অনেকেই অস্বাস্থ্যকর হাবিজাবি খাবার খান যা শরীরের জন্য ভালো না এবং ওজনও বাড়িয়ে তোলে। সুতরাং মুটিয়ে যাওয়া দূর করতে একটি আপেল রাখুন সাথে।
দারুচিনি

মাঝে মাঝে আমরা কিছু খাবারে সামান্য চিনি দিয়ে থাকি খাবারটিকে হালকা মিষ্টি ও সুস্বাদু করার জন্য। পরবর্তীতে চিনির বদলে দারুচিনি গুঁড়ো দিয়ে দিন। খাবারে ভিন্ন স্বাদ যোগ করার পাশাপাশি এটা ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
ক্যাপসিকাম

ক্যাপসিকামে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি। এই ভিটামিন সি খুব সহজে ও খুব দ্রুত ওজন কমাতে সহায়তা করে। লাল, হলুদ কিংবা সবুজ যে কোন ধরণের ক্যাপসিকাম খেতে পারেন রান্নায় ব্যবহার করে। সব থেলে ভালো উপায় হচ্ছে সালাদে ক্যাপসিকাম খাওয়া। ওজন কমতে বেশ সাহায্য করবে।
ওটস

ওটস আমরা সবাই চিনি। কিন্তু খেতে খুব বেশি সুস্বাদু নয় তাই অনেকেই এড়িয়ে চলি। সকালের নাস্তায় এক বাটি ওটস খেলে ওজন খুব দ্রুত কমে যায়। ওটস হচ্ছে ওজন কমানোর খুব ভালো একটি খাদ্য উপাদান। ওটসে রয়েছে প্রচুর ফাইবার। ওজন সমস্যায় ভোগা সকল রোগীকে ডাক্তাররা ওটস খাবার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

13


চাইনিজ পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। রোজ রোজ ভাত,মাছ আর মাংসের ঝোল খেতে খেতে অনেকেই ক্লান্ত বোধ করি। এর জন্য চাই রুচি পরিবর্তন, আর রুচি পরিবর্তন করার জন্য চাইনিজ খাবারের চাইতে ভালো আর কী হতে পারে? বরং যে কোনো ফাস্টফুড শুধু নয়,আমাদের দেশি খাবারের চাইতেও অনেক বেশি স্বাস্থ্য চাইনিজ খাবার। কেননা তৈরি হয় কম তেলে ও মসলায় তাই স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ভালো, তেমনই ক্যালোরির ভয় কম। তবে চাইনিজ খাবার জন্য এখনই রেস্তরাঁয় যাওয়ার দরকার নেই। খুব সহজে বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন মজাদার সব চাইনিজ আইটেম ।

হাতে সময় কম,ফ্রাইড রাইস বা ভাতের সাথে চটপট মজাদার কিছু খেতে চান? তাহলে তৈরি করে ফেলুন সহজ অথচ সুস্বাদু চাইনিজ খাবার কুং পাও চিকেন। ফার্মের মুরগী কিছুদিন ফ্রিজে রাখা হলে খেতে ভালো লাগে না অনেকেরই, তাদের জন্যও এটা একটা চমৎকার রেসিপি। ফ্রিজে রেখে বিস্বাদ হয়ে যাওয়া মুরগিও রেসিপির জাদুতে হয়ে উঠবে দারুণ মুখরোচক। আসুন, জেনে নেই সহজ রেসিপিটি।
উপকরণ

হাড় ছাড়া মুরগীর মাংস– ৫০০ গ্রাম (কিউব করে কাটা। চাইলে হাড় সহ মাংসও ছোট করে কেটে নেয়া যেতে পারে)
ডিম – ১ টি ( সাদা অংশ )
লবন – স্বাদ মতো
কর্ণ ফ্লাওয়ার – ২ টেবিল চামচ
তিলের তেল – ১ চা চামচ
শুকনা মরিচ আস্ত – ৪/৫ টি
রসুন কুচানো – ১ চা চামচ
সয়া সস – ১ টেবিল চামচ
ভিনিগার – ১ চা চামচ
চিনি- সামান্য
পেঁয়াজ পাতা কুচি – সাজাবার জন্য

প্রনালি-

    -ডিমের সাদা অংশ,লবন ও ১ টেবিল চামচ কর্ণ ফ্লাওয়ার দিয়ে মুরগীর টুকরাগুলো মাখিয়ে ২/৩ মিনিট ম্যারিনেট করে রাখুন।
    -৩ মিনিট পর কড়াইয়ে তেল গরম করে মুরগীর টুকরাগুলোকে বাদামী করে ভেজে তুলে রাখুন।
    -অন্য প্যানে তেল গরম করে শুকনা মরিচ ও রসুন কুচি দিন। সুগন্ধ বের হলে ভাজা চিকেন, সয়াসস , চিনি , ভিনিগার , ও তিলের তেল পর পর মেশান।
    -২ মিনিট নেড়েচেড়ে বাকি কর্ণ ফ্লাওয়ার পানিতে গুলিয়ে নিয়ে চিকেনের সাথে দিয়ে দিন। ক্যাপ্সিকাম, টমেটো ইত্যাদি দিতে চাইলে এই পর্যায়ে দেয়া যায়।
    -সস ঘন হয়ে গেলে নামিয়ে ওপরে পেঁয়াজ পাতা কুচি ছড়িয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন ।


14


দোকান থেকে মোজারেলা চীজ কেনার কথা শুনলে অনেকেই আঁতকে ওঠেন। আর আঁতকে ওঠার কারণও আছে বটে। অতিরিক্ত দাম ও খুবই কম পরিমানের জন্য মোজারেলা চীজ কেনার ইচ্ছা থাকলেও সামর্থ্য হয় না অনেকেরই। কিন্তু কিছু বিশেষ খাবার যেমন পিজা, চিজ স্টিক ইত্যাদি খাবার তৈরি করতে তো মোজারেলার বিকল্প নেই। তাই ঘরেই মোজারেলা চীজ বানানোর রেসিপিটি হয়তো অনেকেই খোঁজেন।

খুব সহজেই ঘরেই বানানো যায় মোজারেলা চীজ। খুব বেশিক্ষন সময়ও লাগে না এতে। সব মিলিয়ে ৩০ মিনিট সময় হাতে থাকলেই বানিয়ে ফেলতে পারবেন মোজারেলা চীজ। খাঁটি দুধ দিয়ে যত্ন করে তৈরি করা হয় বলে খেতেও অসাধারণ হয় ঘরে তৈরি চীজ। আসুন জেনে নেয়া যাক বাড়িতেই মোজারেলা চীজ তৈরীর সহজ পদ্ধতি।
উপকরণঃ

খাঁটি গরুর দুধ ৪ লিটার
দেড় চা চামচ সাইট্রিক এসিড (১/৪ কাপ পানিতে গুলাতে হবে)
১/৪ কাপ তরল রেনেট অথবা ১/২ টি ট্যাবলেট রেনেট (১/৪ কাপ পানিতে গুলাতে হবে)
১ চা চামচ মিহি গুঁড়ো লবণ
খাবারের তাপমাত্রা মাপার থার্মোমিটার
লোহার পাত্র
(সাইট্রিক এসিড ও রেনেট বড় মশলার দোকান বা সুপার শপে খুঁজলেই পাবেন)
প্রস্তুত প্রণালীঃ

    বড় লোহার পাত্রে দুধ ঢেলে মাঝারি আঁচে জ্বাল দিন।
    দুধ নাড়তে নাড়তে কিছুক্ষন পড়ে তাপমাত্রা ৫৫ ডিগ্রি হলে দুধে সাইট্রিক এসিড দিয়ে নাড়তে থাকুন। এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ সাইট্রিক এসিড দিতে হবে।
    এরপর ধীরে ধীড়ে তাপমাত্রা আরেকটু বেড়ে ৮৮ হলে রেনেট-এর মিশ্রনটি ঢেলে দিন। এ সময়ে দুধটা কিছুটা ঘন হয়ে আসবে এবং হালকা ছানা হয়ে চামচে লেগে যাবে।
    তাপমাত্রা ৯০ তে উঠলে প্রায় পুরো দুধটাই ছানা হয়ে যাবে। এ সময়ে খুব ধীরে ধীরে নাড়তে হবে। নাহলে পনির ঠিকমত জমবে না।
    তাপমাত্রা ৯৫-১০৫ ডিগ্রি হলে পনিরটা ঘন যাবে এবং পানি আলাদা হয়ে যাবে।
    ঢাকনা দিয়ে ভালো করে ঢেকে রাখতে হবে কিছুক্ষণ।
    ১০৫ ডিগ্রিতে আরো কিছুক্ষন জ্বাল দেয়ার পর ঢাকনা তুলে জমে যাওয়া পনির আলাদা করে পানি ঝরানোর জন্য চালনিতে রাখুন।
    পনিরের পানিতে সামান্য লবণ দিয়ে চুলার আঁচ বাড়িয়ে জ্বাল দিন। তাপমাত্রা ১৭৫ হলে চালনি সহ পনিরটাকে কিছুক্ষন ডুবিয়ে রাখুন।
    এরপর চালনি থাকে পনিরটাকে তুলে ভালো করে চিপে পানি ছাড়িয়ে ফেলুন।
    পনিরটাকে ভালো করে মথে নিন এবং হাত দিয়ে গোল বলের মত আকৃতি দিন।
    বরফ পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন পনিরটিকে। এতে পনিরটি আরো ভালো করে জমবে।
    ব্যস হয়ে গেলো মজাদার মোজারেলা পনির।
    বাক্সে ভরে মুখ আটকে ফ্রিজে বেশ কিছুদিন সংরক্ষণ করা যায় এই পনির।


15


"ভবিষ্যতের চিকিত্‍সক রুগীকে ওষুধ না দিয়ে তাকে শেখাবেন শরীরের যত্ন নেয়া, সঠিক খাদ্য নির্বাচন, রোগের কারণ নির্ণয় ও তা প্রতিরোধের উপায়।" -টমাস আলভা এডিসন, মার্কিন আবিষ্কারক এডিসন যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তা আজ বাস্তবরূপ ধারণ করেছে। তবে শরীরের যত্ন, খাদ্যাখাদ্য বিচার ও রোগ ঠেকানোর ব্যাপারে আমরা এখনো ততটা সচেতন নই। রোগ সম্পর্কে জানা থাকলে এবং খাদ্য সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে সহজেই রোগকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, এমনকি প্রতিরোধও করা যায়। এ জন্য প্রয়োজন খাদ্য সম্পর্কে সচেতনতা। জেনে নিন নানান স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে শাকসবজির অবদান।
ডায়াবেটিসে :

ডায়াবেটিস রোগের প্রকোপ দিনকে দিন বেড়েই চলছে। এই রোগে কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ বেশি খাওয়া চলবে না। যেমন বীট, আলু, মিষ্টিআলু বা রাঙাআলু, ওল, কচু, খামালু ইত্যাদি।

তবে তেলকুচা, করলা, মেথি শাক, কচি নিমপাতা, হেলেঞ্চা শাক এ রোগের মহৌষধ। ডায়াবেটিস রোগে সাদা বেগুন দারুণ উপকারী। এছাড়া কলার থোড়, মোচা, ঢেঁরস, ডুমুর, পালং শাক ইত্যাদিও উপকারী। কাঁচা রসুন রক্তে সুগারের পরিমাণ কমিয়ে আনতে সক্ষম।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে :

পটাশিয়ামের রয়েছে রক্তচাপ কমানো বা নিয়ন্ত্রণের বিশেষ ক্ষমতা। তাই উচ্চ রক্তচাপ থাকলে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ শাকসবজি যেমন আলু, কচু, ঢেঁরস, ঝিঙে, বীট, গাজর, মিষ্টিআলু বা রাঙাআলু, মটরশুঁটি, পালং শাক, বাঁধাকপি, নটেশাক ইত্যাদি নিয়মিত আহারের তালিকায় রাখুন। এছাড়া সজনে পাতা সেদ্ধ ভাতের সাথে খেলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়। কাঁচা রসুনেরও উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে আনার ক্ষমতা রয়েছে। তাই নিয়মিত এক কোয়া করে কাঁচা রসুন ভাতের সাথে খেলে উপকার পাবেন।
চোখের সমস্যায় :

ভিটামিন এ চোখের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চোখের রেটিনা ও রড গঠনের জন্য এই ভিটামিন খুবই প্রয়োজন। ভিটামিন এ-এর অভাব থাকলে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস ও রাতকানা রোগ হয়। চোখের সমস্যা প্রতিরোধে শিশুদের প্রথম থেকেই ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো উচিত। গাজর, বাঁধাকপি, লেটুস, পালং শাক, টমেটো, নটে শাক, মেথি শাক, সরষে শাক, লাল শাক, সজনে ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে। এছাড়া দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর জন্য বথুয়া এবং গিমা শাক দারুণ উপকারী।
অ্যাসিডিটির সমস্যায় :

অ্যাসিডিটির সমস্যা এখন প্রতিটি ঘরে ঘরে। এর অন্যতম কারণ হলো নিয়ম না মেনে খাওয়া-দাওয়া করা এবং খাবার ঠিকমতো হজম না হওয়া। প্রতিদিনের আহারে কয়েকটি সবজি রাখলে অ্যাসিডিটির সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। কলার থোড় খেলে হজম শক্তি বাড়বে। গিমা শাক, পুদিনা, চিচিঙা, পটল, কাঁকরোল ইত্যাদি সবজি খেলে অ্যাসিডিটি ও গ্যাসের প্রকোপ কমবে। অ্যাসিডিটি ও গ্যাসজনিত পেট ফাঁপায় সরষে শাক ও থানকুনি শাক বেশ কার্যকরী।
চর্মরোগে :

চর্মরোগ হলো ত্বকসংক্রান্ত এমন এক সমস্যা যা নানান কারণে হতে পারে। তবে ত্বক পরিষ্কার ও রক্ত পরিশোধনের জন্য কিছু শাকসবজি বেশ উপকারে লাগে এবং চর্মরোগের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে। মেথি শাক, নুনিয়া শাক, নটে শাক, নিম পাতা, হেলেঞ্চা শাক, করলা, কাঁচা হলুদ ইত্যাদি খেলে চর্মরোগের বিরুদ্ধে দেহের ভেতরে একটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। খোসপাঁচড়া বা চুলকানি সারাতে নিমপাতা ভাজা, কাঁচা রসুন এবং হেলেঞ্চা শাক বেশ কার্যকরী।

Pages: [1] 2 3 ... 12