Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - Anuz

Pages: [1] 2 3 ... 47
1
আগামী ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আজ সোমবার বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। এ ঘোষণার ফলে একাটানা ১০ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি কর্মচারিরা। কারণ ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে সরকারি ছুটি। ২৭ ও ২৮ মার্চ শুক্র ও শনিবার ছুটি। আগামী ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল সাধারণ ছুটি। আর ৩ ও ৪ এপ্রিল শুক্র ও শনিবার ছুটি। ৫ এপ্রিল থেকে আবার অফিস শুরু হবে।

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ার পরই সাধারণ ছুটির ঘোষণা দেওয়া হল। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করবে সশস্ত্র বাহিনী। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য এ সহায়তা করবে সশস্ত্র বাহিনী।

2
করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আজ সোমবার শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান।  এদিকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় শিক্ষার্থীদের গ্রীষ্মকালীন ছুটি এগিয়ে নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ১৮ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস–পরীক্ষা সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। ৩৬ জন শিক্ষকের অভিমতের প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমন আতঙ্কে রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উপস্থিতি কমে আসছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, চুয়েটসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন শুরু করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকেরাও বিবৃতি দিয়ে ছুটি ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এত দিন বলে আসছিল এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু গতকাল রোববার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হবে নাকি বন্ধ রাখা হবে, সেটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিষয়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা মত দিয়েছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত বন্ধ করে দেওয়া উচিত। ইতিমধ্যে করোনা–আতঙ্কে স্কুল–কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বড় অংশ ক্লাসে যাওয়া থেকে বিরত থাকছেন।

গতকালও রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি কম ছিল। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম গতকাল তাঁর প্রতিষ্ঠানে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ উপস্থিতির কথা জানান। অনেক অভিভাবক সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফওজিয়া বলেন, গতকাল চতুর্থ শ্রেণির প্রভাতি শাখায় উপস্থিতি কম ছিল। আর দিবা শাখায় উপস্থিতি ছিল ৫০ শতাংশের বেশি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৬টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের মধ্যে অন্তত ৪০টির শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন। বুয়েটের শিক্ষার্থীরা আগের দিনের মতো গতকালও কোনো ক্লাস করেননি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাস বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সব বর্ষের শিক্ষার্থীরা আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও (রুয়েট) শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আজ থেকে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদের শিক্ষার্থীরাও ক্লাস বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

3
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে না খোলা রাখা হবে, সেই সিদ্ধান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় নেবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ ছাড়া ধর্ম, শিল্প, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। আজ রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ এবং দিকনির্দেশনা দিতে আয়োজিত এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ১৮টি মন্ত্রণালয়ের সচিব বা তাঁদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের সভার বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কথা জানান।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সভা থেকে শিল্প এবং শ্রম মন্ত্রণালয়কে শ্রমিকদের করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাস, ট্রেন বা নৌযানে চলাচলের সময় যাত্রীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। যাত্রীরা নেমে যাওয়ার পর যানবাহন যেন জীবাণুমুক্ত করা হয়, সে জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারও জ্বর থাকলে কোনোভাবেই যানবাহনে যাতায়াত না করতে বলা হয়েছে। দেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়।

এই তিনজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে গতকাল শনিবার জানান সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা। গতকাল আইইডিসিআর জানায়, আরও দুজন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশের কোনো উড়োজাহাজ বাংলাদেশে আসবে না বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইউরোপ থেকে বাংলাদেশে আসা ফ্লাইট বন্ধের এই নিষেধাজ্ঞা ৩১ মার্চ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। আজ রোববার মধ্যরাত থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ যেসব দেশের নাগরিকদের অন অ্যারাইভাল বা আগমনী ভিসা দিয়ে থাকে, তা ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

4
৫০ কোটি ২৪ লাখ টাকার বকেয়া ভ্যাট অনাদায়ি থাকায় একটি ভবন নির্মাতা (বিল্ডিং স্ট্রাকচার) কারখানার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কর্তৃপক্ষ। ভ্যাট আইন অনুসারে বৃহস্পতিবার ৬১টি ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানটির নামে থাকা সব ধরনের অ্যাকাউন্ট অপরিচালনযোগ্য (ফ্রিজ) করার নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির নাম মেসার্স বিলট্রেড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, কালামপুর, ধামরাই, মানিকগঞ্জ। এর ভ্যাট নিবন্ধন নম্বর ০০০২৯৯০২৯০৪০৪। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হলেন এনায়েতুর রহমান। ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কর্তৃপক্ষের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আগে দুটি মামলা হয়। এর একটিতে ২৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা এবং অন্যটিতে ২৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ করা হয়। প্রথম মামলায় ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানটি চারটি ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে ২ কোটি টাকা জমা দেয়। তবে বাকি ৫০ কোটি ২৪ লাখ টাকা জমা না দিয়ে তারা কাস্টমস অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে আপিল করে। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল তাদের আপিল খারিজ করে দেয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই টাকা পরিশোধ করার জন্য ভ্যাট আইন অনুসারে পৃথকভাবে পরপর দুবার নোটিশ দেওয়া হয় ওই প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে। নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতেও বকেয়া টাকা জমা না দেওয়ায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী, তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অপরিচালনযোগ্য করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বৃহস্পতিবার ৬১টি ব্যাংকে এই সংক্রান্ত নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশের অনুলিপি এনবিআরের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ-কে বিষয়টি মনিটর করার জন্যও অনুরোধ জানানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের নামে অ্যাকাউন্ট থাকলে ১৫ দিন অপরিচালনযোগ্য থাকবে মর্মে নোটিশে উল্লেখ করা হয়। এ সময়ের মধ্যে ওই বকেয়ার টাকা পরিশোধ না করলে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কর্তন করে নির্ধারিত হিসাবে সরকারি কোষাগারে জমা করে ভ্যাট কর্তৃপক্ষকে জানাতেও অনুরোধ করা হয়। ভ্যাট আইন অনুযায়ী, এই প্রক্রিয়ায় বকেয়া ভ্যাট আদায় না হলে প্রতিষ্ঠানের নামে ইস্যু করা বিআইএন লক করাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

5
পাঁচ মাস পর ভারত থেকে পেঁয়াজ আসল দেশে। আজ রোববার দুপুরে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ নিয়ে ৯টি গাড়ি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। প্রতিটি গাড়িতে ২০ টন করে পেঁয়াজ রয়েছে। ভোমরা স্থলবন্দরের তত্ত্বাবধায়ক ইমাম হোসেন এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আজ বেলা দেড়টার দিকে পেঁয়াজবাহী ৯টি গাড়ি ঢুকেছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার মধ্যে আরও কিছু পেঁয়াজের গাড়ি আসবে। এভাবে পেঁয়াজ আসা অব্যাহত থাকবে।

উৎপাদন সংকটে পড়ে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় ভারত। সাতক্ষীরা ভোমরা বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে সর্বশেষ পেঁয়াজের গাড়ি ঢোকে গত ১০ অক্টোবর। ভারত রপ্তানি বন্ধ করলেও আগে এলসি থাকায় ওই চালান আসে। পাঁচ মাস পর ফেব্রুয়ারির শেষে পেঁয়াজ রপ্তানিতে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ভারত সরকার। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে আজ ৯টি পেঁয়াজের গাড়ি বাংলাদেশে ঢুকল।

অন্যদিকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে এখনো ভারত থেকে কোনো পেঁয়াজের গাড়ি ঢোকেনি। এই বন্দর দিয়ে করোনাভাইরাসের কারণে যাত্রী আসা যাওয়া বন্ধ থাকলেও পণ্য আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম চলছে। বন্দরের প্রোগ্রামার আখতারুজ্জামান এ তথ্য জানান। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, আজ রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও যা ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৫০ থেকে ৭০ টাকা।

6
কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশন। গত মঙ্গলবার সকাল সোয়া ছয়টা। আন্তনগর এগারসিন্দুর ট্রেনের প্রথম শ্রেণির কামরায় মোড়া পাতা। প্রতিটি মোড়ার ভাড়া ১০০ টাকা হাঁকছেন কামরাটির অ্যাটেনডেন্স। ঢাকাগামী একজন যাত্রী ৮০ টাকা সাধেন। তখন অ্যাটেনডেন্স বলেন, ‘আরে ভাই, আপনি তো ফার্স্ট ক্লাসে যাবেন। যেখানে ২০০ টাকার আসন ভাড়া, সেখানে আরামে মোড়ায় বসে ১০০ টাকায় ঢাকায় যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।’ সেই যাত্রী ১০০ টাকা অ্যাটেনডেন্সের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমার টিকিট দেন।’ অ্যাটেনডেন্স বলেন, ‘আরে ভাই, টিকিট কীসের! আপনি মোড়ায় আরামে বসেন। নিশ্চিন্তে ঢাকায় যান। ঢাকায় যাওয়ার পর আপনি যে স্টেশনে নামবেন, সে স্টেশনের গেট পার করে দেওয়া আমার দায়িত্ব।’

এ সময় ট্রেনের প্রথম শ্রেণির বগির ভেতরে দরজা ও শৌচাগারের সামনের ফাঁকা জায়গায় সারি করে সাজানো প্লাস্টিকের মোড়া দেখা যায়। একই অবস্থা অন্যান্য বগিতেও। এ বিষয়ে প্রথম শ্রেণির দায়িত্বরত অ্যাটেনডেন্সকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি সটকে পড়েন। মো. শাহিনুর নামের একজন যাত্রী বলেন, টিকিটবিহীন যাত্রী আসতেই তাঁদের সঙ্গে প্রতিটি বগির দায়িত্বে থাকা অ্যাটেনডেন্সের দর–কষাকষি আর মোড়া নিয়ে টানাটানি প্রতিদিনকার চিত্র। যেসব যাত্রী গন্তব্যে যেতে চান, তাঁরা সাময়িকভাবে উপকৃত হলেও এই টাকার কোনো অংশই সরকার পাচ্ছে না। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিতের পাশাপাশি যেসব যাত্রী টিকিট কেটে একটু আরামে গন্তব্যে যেতে চান, তাঁদেরও ভোগান্তির শিকার হতে হয়। অথচ দিনের পর দিন এই ঘটনা ঘটছে। রেল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে কিশোরগঞ্জের স্টেশনমাস্টার মো. জয়নাল মিয়া বলেন, কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসা-যাওয়ার আন্তনগর এগারসিন্দুর ট্রেনের ৭২০টির মতো আসন আছে। এর মধ্যে অনলাইনে প্রায় অর্ধেক আসন ঘরে বসেই যাত্রীরা বুকিং দিয়ে দেন। বাকি অর্ধেক টিকিট কাউন্টার থেকে দেওয়া হয়। তবে ৭২০টি আসন থাকলেও গড়ে প্রতিদিন এই ট্রেনে প্রায় দেড় হাজার যাত্রী যাতায়াত করে থাকেন। তিনি বলেন, অ্যাটেনডেন্সদের মোড়া ভাড়ার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তবে অনেক আসনবিহীন টিকিটের রোগী যাত্রীদের সুবিধার্থে খাবারের বগিতে কয়েকটি প্লাস্টিকের মোড়া রাখা থাকে।

7
১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি শুরু হওয়া প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের পর গতকাল সোমবারই আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম এক দিনের কেনাবেচায় সর্বোচ্চ কমেছে। গতকাল এক দিনেই জ্বালানি তেলের দাম কমেছে ৩৩ শতাংশ। করোনা মহামারির প্রভাব যেন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্ব তেলের বাজারে।

গতকাল তেলের বাজারে দিনভরই অস্থিরতা ছিল। একপর্যায়ে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম কমে ২৭ দশমিক ৩৪ ডলারে নেমে আসে। ২০১৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারির পর এটি বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের সর্বনিম্ন দর। লেনদেনের এর আগে-পরে অবশ্য ব্যারেলপ্রতি কখনো ৩৩ দশমিক ৮৯ ডলার, কখনোবা ৩১ দশমিক শূন্য ২ ডলার, কখনো ৩০ দশমিক ১৬ ডলারে কেনাবেচা হয়। শেষ লেনদেন হয় ৩৩ দশমিক ১৫ ডলারে।

সিএনএনের এক বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, বিশ্বের অন্যতম তেল উৎপাদনকারী দেশ সৌদি আরব গত সপ্তাহে শেষে তেলের ‘দাম-যুদ্ধ’ শুরু করায় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গত শুক্রবার তেলের দাম বাড়ানোর জন্য উৎপাদন কমাতে ওপেক ও রাশিয়া কোনো চুক্তিতে না পৌঁছাতে পারায় পরদিন সৌদি আরব তাদের তেলের দাম কমিয়ে দেয়। শুরু হয় তেলের ‘দাম-যুদ্ধ’। এমনিতেই কয়েক মাস ধরে করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বব্যাপীই জ্বালানির চাহিদা কমে গেছে। করোনার কারণে চীন থেকে প্রতিদিন এক কোটি ব্যারেল তেলের চাহিদা কমে গেছে।

ক্রমহ্রাসমান চাহিদা কমার কারণে দাম কমায় কে যে লাভবান হবে, তা বলা মুশকিল। প্রধান তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর তেল কোম্পানিগুলো বাজারে শেয়ারের দর হারাতে শুরু করেছে। রাশিয়ার দাবি, দাম কমে যাওয়ায় তাদের অর্থনীতিতে তেমন প্রভাব পড়বে না। কারণ, ব্যারেলপ্রতি ৪০ ডলার ধরে বাজেট পরিকল্পনা করে রাশিয়া।

উপসাগরীয় দেশগুলো, যেমন: সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত তেলনির্ভর অর্থনীতি। এসব দেশের সরকারি ব্যয় অনেক বেশি। নিজেদের আয়–ব্যয়ের হিসাব মেলাতে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম অন্তত ৭০ ডলার হওয়া প্রয়োজন তাদের জন্য। এ ছাড়া তেল রপ্তানিনির্ভর দেশ, যেমন: ইরাক, ইরান, লিবিয়া ও ভেনেজুয়েলাকে চড়া মূল্য দিতে হবে। পার পাবে না যুক্তরাষ্ট্রও। কম দাম দেশটির তেল কোম্পানিগুলোকে ভালোই আঘাত করবে।

8
মধ্যবিত্তের আরেকটি ভরসার জায়গা কমল। অনেক মধ্যবিত্ত সঞ্চয়পত্রের পাশাপাশি ব্যাংকে স্থায়ী আমানত বা এফডিআর করে মুনাফার টাকায় দৈনন্দিন খরচ চালান। আমানতে সুদের হার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনায় এই মধ্যবিত্তরা বিপাকে পড়বেন। নতুন সুদের হারে বছর শেষে টাকার অঙ্কে হয়তো লাভ হবে। সেই লাভের টাকা মূল্যস্ফীতি খেয়ে ফেলবে। ফলে তাঁরা ব্যাংকে টাকা রাখার বদলে সঞ্চয়পত্রে যেতে পারেন। যদিও তাঁরা সঞ্চয়পত্রে আগের মতো উৎসাহ দেখাচ্ছেন না। কেউ কেউ জমি, বাড়ি কেনার মতো অনুৎপাদনশীল খাতেও বিনিয়োগ করতে পারেন। অন্য বিকল্প এখন ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ। বেশি মুনাফার আশায় কেউ কেউ স্থানীয় সমবায় সমিতি কিংবা এমএলএম ব্যবসার খপ্পরে পড়তে পারেন। ইতিমধ্যে এই প্রবণতা দেখাও দিয়েছে। আর অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, এই পথে সাদা টাকা কালো হয়ে যাবে। সরকার ব্যাংক সুদের হারে ‘নয়-ছয়’ পদ্ধতি অনুসরণ করছে। আগামী এপ্রিল থেকে ঋণের ওপর সুদের হার ৯ শতাংশ পর্যন্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আমানতের ওপর সুদ ৬ শতাংশ নির্ধারণ করেছে ব্যাংকগুলো।

ব্যাংক আমানতে কত লাভ
স্থায়ী আমানত (এফডিআর) করলে আসলে মুনাফা কত হবে—এর উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ধরুন, আপনার কাছে ১ লাখ টাকা আছে। আপনি ব্যাংকে এক বছরের জন্য রাখলে ৬ শতাংশ সুদ পাবেন। এক বছর পর আপনার হিসাবে ৬ হাজার টাকা যোগ হয়ে ১ লাখ ৬ হাজার টাকা থাকবে। কিন্তু আপনি এই টাকা পুরোটা হাতে পাবেন না।
প্রথমেই আপনার সুদের টাকার ওপর ১০ শতাংশ উৎসে কর কেটে রাখা হবে। শর্ত হলো, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকতে হবে। টিআইএন না থাকলে ১৫ শতাংশ উৎসে কর বসবে। টিআইএন থাকলে আপনার কাছ থেকে উৎসে কর হিসেবে ৬০০ টাকা কেটে রাখা হবে। তখন আপনার টাকা কমে হয়ে যাবে ১ লাখ ৫ হাজার ৪০০ টাকা। এখানেই শেষ নয়, আপনার স্থায়ী আমানত হিসাবে সুদের ৬ হাজার টাকা যুক্ত হওয়ার কারণে আপনার হিসাব থেকে আবগারি শুল্কও কেটে রাখা হবে। কোনো ব্যাংক হিসাবে বছরের যেকোনো সময়ে একবার টাকার অঙ্ক ১ লাখ টাকা পেরোলেই আবগারি শুল্ক ১৫০ টাকা কাটবে। আপনি হাতে পাবেন আসল ও সুদসহ ১ লাখ ৫ হাজার ২৫০ টাকা। ব্যাংকে ১ লাখ টাকা রেখে এক বছরে এই হলো আপনার লাভ।

লাভের টাকা খাবে মূল্যস্ফীতি
এক বছর পর ১ লাখ টাকার এফডিআর ভাঙানোর পর হাতে যে লাভ পাবেন, সেটিও মূল্যস্ফীতি খেয়ে ফেলবে। মূল্যস্ফীতির কারণে আপনার ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে।চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য সাড়ে ৫ শতাংশ। গত জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত অর্থাৎ গত এক বছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আগামী এক বছরে যদি গড়ে সাড়ে ৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়, তবে আপনার ব্যাংকে টাকা রেখে লাভবান হওয়ার সুযোগ কম। মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার খরচ বাড়ে। এখন আপনি ১ লাখ টাকা দিয়ে গড়ে যেসব পণ্য ও সেবা কিনতে পারেন, মূল্যস্ফীতির বর্তমান ধারা বজায় থাকলে এক বছর পরে ওই পণ্য ও সেবা কিনতে ১ লাখ ৫ হাজার ৫০০ টাকা লাগবে। কিন্তু ব্যাংকে রাখলে বছর শেষে ওই পরিমাণ টাকা পাবেন না।
এ বছর আবার মূল্যস্ফীতির চাপ বৃদ্ধির দুটি উপলক্ষ তৈরি হয়ে গেছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির শঙ্কা আছে। আবার করোনাভাইরাসের কারণে বাজারে বহু পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এই বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মধ্যবিত্তরা এখন আর লাভের আশায় ব্যাংকে এফডিআর করবেন না। নিরাপত্তার কারণে হয়তো ব্যাংকে টাকা রাখবেন। ব্যাংকের বাইরে তাঁদের প্রথম পছন্দের জায়গা হবে সঞ্চয়পত্র। এ ছাড়া বেশি লাভের আশায় অনেক মধ্যবিত্ত স্থানীয় সমবায় সমিতির মতো ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন। কেউ কেউ জমি, বাড়ির মতো অনুৎপাদনশীল খাতেও টাকা খরচ করে ফেলবেন। আবার অনেকেই বছরজুড়ে ভোগেও উৎসাহিত হতে পারেন।’ তবে তিনি মনে করেন, শেয়ারবাজারের বর্তমান সংকটে মধ্যবিত্তরা সেখানে উৎসাহিত হবেন না।

স্থায়ী আমানত ছাড়াও ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাবে টাকা রাখার সুযোগ আছে। সঞ্চয়ী হিসাবে সাধারণত দৈনন্দিন লেনদেন করা হয়। এই হিসাবে সুদের হার বড়জোর ৪-৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সঞ্চয়ী হিসাবে টাকা রাখলে আরও লোকসানে পড়তে হবে। সুদের টাকার সঙ্গে মূল্যস্ফীতি সমন্বয়, আবগারি শুল্ক, হিসাবের বিপরীতে সেবা মাশুল কেটে রাখলে আসলের কিছু অংশ উধাও হয়ে যেতে পারে। ব্যাংকের এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি আলী রেজা ইফতেখার প্রথম আলোকে বলেন, আমানতের সুদের হার কমানোর ফলে মধ্যবিত্তদের একটু কষ্ট হবে। তবে আমানতে সুদ নির্দিষ্ট করার বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। তাই ব্যাংকগুলো চাইলে এই হার হ্রাস-বৃদ্ধি করতে পারে।

তাহলে বিকল্প কী
এবার দেখা যাক, ব্যাংকের বিকল্প কী। সঞ্চয়পত্র প্রধান বিকল্প। এই সঞ্চয়পত্র এখন সাধারণ মানুষের উৎসাহ ও আস্থা হারাতে চলেছে। বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র মুনাফার হার ১১ শতাংশের বেশি। ব্যাংক থেকে মুখ ফিরিয়ে অনেকেই এখন সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন, সেই জো নেই। তবে সেখানেও বিপত্তি। ইতিমধ্যে সঞ্চয়পত্রের গড় সুদের হার কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ফলে সীমিত আয়ের মানুষ ও মধ্যবিত্তরা অনেকেই সঞ্চয়পত্র কেনায় উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন। দুঃসময়ের সঙ্গী এই নিরাপদ বিনিয়োগ খাতটি থাকছে না। সুদের হার কমানোর ঘোষণাসহ নানা ধরনের বিধিনিষেধের কারণে ইতিমধ্যে সঞ্চয়পত্র কেনা ব্যাপক হারে কমে গেছে। গত জুলাই-ডিসেম্বর মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি হয়েছে মাত্র ৫ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা। আগের বছরের ছয় মাসে এর পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা।
গত মাসে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমে এখন সুদের হার কমানো হয়েছে। সাধারণ স্কিমে সাড়ে ৭ থেকে ৫ শতাংশ এবং তিন বছর মেয়াদের ক্ষেত্রে ১১ দশমিক ২৮ থেকে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী এই সুদের পুনর্বিবেচনার ঘোষণা দিয়েছেন। আর থাকল শেয়ারবাজার। তবে এ বাজারের প্রতি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট আছে। সর্বশেষ বিকল্পটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ও বেআইনি। ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীদের সামনে স্থানীয় পর্যায়ে গড়ে ওঠা সমবায় সমিতি, বহুস্তর বিপণন কোম্পানিতে (এমএলএম) বিনিয়োগের প্রলোভন আসবে। ফাঁদে পড়তে পারেন তাঁরা। এ নিয়ে সরকার এরই মধ্যে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিও ছেপেছে। অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানোর ঘোষণায় মধ্যবিত্তরা ইতিমধ্যে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। শেয়ারবাজারের প্রতি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আস্থা কম। এই সুযোগে স্থানীয় পর্যায়ে গড়ে ওঠা সমবায় সমিতিগুলো এখন উচ্চ মুনাফার প্রলোভন দেখাবে। এমএলএম কোম্পানি গড়ে উঠবে। বেশি মুনাফার আশায় ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীরা এসব প্রতিষ্ঠানে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন। অতীতে এমন কিছু প্রতিষ্ঠান গরিব মানুষের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেছে।

9
সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে আসা এক দম্পতির শরীরে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, কাশির লক্ষ্মণ থাকায় তাঁদের বাংলাদেশ–কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ভোরবেলা একটি ফ্লাইটে করে তাঁরা সৌদি আরব থেকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন। এর পরপরই তাঁদের দুজনকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়।

বিমানবন্দর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহারিয়ার সাজ্জাদ প্রথম আলোকে বলেন, এই দম্পতির মধ্যে স্বামীর বয়স ৭০ বছর। আর স্ত্রীর বয়স ৬০ বছর পেরিয়েছে। দীর্ঘদিন তাঁরা ছেলের সঙ্গে সৌদি আরবে ছিলেন। সেখানে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন তাঁরা। তাই তাঁদের শ্বাসকষ্ট ছিল। সৌদি আরবে চিকিৎসা করানোর পরও ভালো হচ্ছিলেন না। এই শ্বাসকষ্ট নিয়েই তাঁরা দেশে চলে আসেন। সৌদি আরব থেকে এই দম্পতির সঙ্গে তাঁদের ছেলেও বাংলাদেশে এসেছেন। তবে ছেলের শরীরে জ্বর বা অন্য কোনো লক্ষণ ছিল না।

বিমানবন্দর স্বাস্থ্য ডেস্ক থেকে জানা গেছে, ঢাকায় বিমানবন্দরে আসার পর এই দম্পতির দুজনের শরীরে তাপমাত্রা ছিল ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট। ছয় দিন ধরে তাঁদের জ্বর রয়েছে। এর সঙ্গে তাঁরা দুজনেই কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে গত ২১ জানুয়ারি থেকে ঢাকার শাহজালাল, চট্টগ্রামের শাহ আমানত এবং সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়। এরই অংশ হিসেবে বিদেশফেরত সব যাত্রীর থার্মাল স্ক্যানারে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, হ্যান্ডহেল্ড থার্মোমিটারে শরীরের তাপমাত্রা মাপা, হেলথ ডিক্লারেশন ফরম পূরণ করা হচ্ছে। শাহজালাল বিমানবন্দরে ২১ জানুয়ারি থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২ লাখ ১৬ হাজার ৭৩৮ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জন যাত্রীকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।

10
করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। বিশ্বের ১০৫টি দেশ এ ভাইরাসে আক্রান্ত। করোনার আঁতুড়ঘর চীনে এ মুহূর্তে মৃত মানুষের সংখ্যা ৩ হাজার ১৩৬। ইতালি কার্যত স্তব্ধ হয়ে গেছে ৪৬৬ জনের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে। ইরানে মৃত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩৭। বিশ্বে এ সংখ্যা চার হাজার পেরিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে চীনের ১০০ বছরের এক বৃদ্ধের করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের পর সুস্থ হওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। করোনার আতঙ্কে সুখের খবরই হতে পারে এটি।

অভূতপূর্ব এই ঘটনা ঘটেছে করোনাভাইরাসের আঁতুড়ঘর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরেই। করোনাভাইরাসের আক্রমণ কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তার প্রমাণ চীন থেকে ইতালির সাম্প্রতিক পরিস্থিতি। শোনা যাচ্ছে, বয়স্ক বা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এই ভাইরাস থেকে প্রবল সমস্যা হতে পারে। এমন সমস্ত বক্তব্যের মধ্যেই চীনের ওই ঘটনা ঘটল।

চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, গত মাসেই পরিবারের লোকদের নিয়ে নিজের শততম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন করেছিলেন উহানের ওই ব্যক্তি। এর কয়েক দিন পরই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। শারীরিক পরিস্থিতির ক্রমে অবনতি হওয়ায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পরিবারের লোকেরা তাঁকে হুবেইয়ের ম্যাটারনিটি অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরীক্ষা করার পর তাঁর শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। পাশাপাশি তাঁর আলঝেইমার, হাইপার টেনশন ও হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা আছে বলে জানান চিকিৎসকেরা। রোগ ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু হয় ওই ব্যক্তির। ওষুধ ও চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠেন ওই শতবর্ষী। গত শনিবার আরও ৮০ জন মানুষের সঙ্গে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।


11
চীনের হুবেই প্রদেশে গত বছরের শেষে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া রুখতে কিছুদিনের মধ্যেই প্রদেশজুড়ে অধিবাসীরা মুখে মুখোশ বা মাস্ক পরতে শুরু করে। এতে দেখা দিল আরেক সমস্যা। মাস্ক পরিধানকারীকে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার পক্ষে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, চেহারা শনাক্তকরণসহ ইলেকট্রনিক সারভেইলেনস বা নজরদারির কাজে বিশ্বসেরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে চীন। তবে তাদের সেসব প্রযুক্তি কোনো কাজেই এল না। এখানেই কাজ শুরু করে হানওয়াং টেকনোলজি লিমিটেড।

চীনা প্রতিষ্ঠানটির ইংরেজি নাম হানভন। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হলো, মাস্ক পরিধানকারীকেও তাদের প্রযুক্তি শনাক্ত করতে পারবে। আর টেম্পারেচার সেন্সরের সঙ্গে যুক্ত করা হলে মানুষের নাম জানানোর পাশাপাশি তাপমাত্রাও জানাতে পারবে। তাপ মাত্রাতিরিক্ত মনে হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন হানওয়াংয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট হুয়াং লেই। বেইজিংভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করেন ২০ জন কর্মী।

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে গত জানুয়ারিতে কাজ শুরু করে হানওয়াং। এক মাসের মধ্যেই প্রযুক্তিটি বাজারজাত শুরু করে তারা। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মূলত দুই ধরনের নিরাপত্তা পণ্য বিক্রি করছে হানওয়াং। একক চ্যানেল ও একাধিক চ্যানেল। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, একক চ্যানেলটি কোনো কার্যালয়ের প্রবেশমুখে স্থাপন করা যেতে পারে। মাল্টি চ্যানেলে একাধিক ক্যামেরা ব্যবহার করে একসঙ্গে সর্বোচ্চ ৩০ জনকে শনাক্ত করতে পারবে বলে দাবি প্রতিষ্ঠানটির।

হানওয়াংয়ের বড় গ্রাহকদের একটি হলো চীনের জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয়। পুলিশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণও এই মন্ত্রণালয়ের। হানওয়াংয়ের প্রযুক্তির সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের ডেটাবেইসে থাকা নাম, ছবি ও অন্যান্য তথ্য মিলিয়ে দেখতে পারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। তবে কেউ যদি একই সঙ্গে মাস্ক এবং রোদচশমা পরে থাকে, সে ক্ষেত্রে শনাক্ত করতে হিমশিম খেয়ে যায় এই প্রযুক্তি। তা ছাড়া হানওয়াংয়ের প্রযুক্তিকে চীনারা কীভাবে নিচ্ছে, তা জানার সুযোগ হয়নি এখনো।

12
করোনাভাইরাসের আতঙ্কে ভুগছে গোটা দুনিয়া। এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশসহ এ ভাইরাসে আক্রান্ত একশরও বেশি দেশ। বিশ্বব্যাপী অনেক জায়গাতেই খেলাধুলার আয়োজন স্থগিত হয়ে যাচ্ছে। গতকাল বাংলাদেশে করোনা-আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর আগামী ২৬ মার্চ বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচটি নিয়ে দেখা দিয়েছিল সংশয়। আজ সেটি স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। ফিফা-এএফসির নির্দেশনা অনুযায়ীই ম্যাচটি স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।

বাছাইপর্বে একই গ্রুপে থাকা ভারতও ২৬ মার্চ ভুবনেশ্বরে কাতারের বিপক্ষে ম্যাচটি স্থগিত ঘোষণা করেছে। শুধু আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটিই নয়, আগামী মার্চ ও জুনে বাংলাদেশের সবগুলো ম্যাচই স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। ২৬ মার্চ আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোম ম্যাচের পর ৩১ মার্চ দোহায় কাতারের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলার কথা ছিল বাংলাদেশের। এ ব্যাপারে বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম বলেন, ‘এএফসি থেকে এ নির্দেশনা এসেছে। সব ম্যাচ জুন পর্যন্ত স্থগিত করেছে তারা। স্থগিত হতে পারে কাতারের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচটিও।’

বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইপর্বে এশিয়া অঞ্চলের ‘ই’ গ্রুপে খেলছে বাংলাদেশ। গত বছর সেপ্টেম্বরে তাজিকিস্তানের দুশানবেতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচটি খেলেছিল বাংলাদেশ। এরপর অক্টোবরে কাতারের বিপক্ষে হোম ও কলকাতায় ভারতের বিপক্ষে আরও দুটি অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলে তারা। নভেম্বরে ওমানের বিপক্ষেও একটি অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ মাসকাটে। এ বছর বাকি চারটি ফিরতি খেলার তিনটিই দেশের মাটিতে খেলার কথা বাংলাদেশের।

13
দেশে করোনাভাইরাসে তিনজন শনাক্ত হয়েছেন। আজ রোববার সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা এ ঘোষণা দেন। সেব্রিনা বলেন, এ তিনজনের মধ্যে দুজন ইতালি থেকে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। তাঁদের কাছে থেকে একজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

সেব্রিনা বলেন, আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে উৎপত্তি হয় করোনাভাইরাসের। পরে চীনের অন্যান্য প্রদেশ এবং বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে ভারত ও পাকিস্তানেও করোনায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়।

কিন্তু বাংলাদেশে রোগী শনাক্ত হওয়ার ঘটনা এই প্রথম। আজ মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ার মতো কোনো পরিস্থিতি হয়নি। স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি।’ তবে করোনা প্রতিরোধে প্রয়োজন না হলে জনসমাগমে না যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন সেব্রিনা। তিনি বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া আছে। আইসোলেশেন ইউনিট করা হয়েছে।’ সেব্রিনা বলেন, ‘আশঙ্কা করছি না আরও ছড়িয়ে পড়বে। প্রত্যেকের মাস্ক পরে ঘুরে বেড়ানোর কোনো দরকার নেই।’


আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২০,১৬:১৫, প্রথম আলো

14
নোংরা ব্যাংক নোট থেকে করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে বলে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ২০২০ সালের ৩ মার্চ সোমবার দিবাগত রাতে জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থাটির পক্ষ থেকে এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে লোকজনের প্রতি নোটের বিকল্প ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিকল্প বলতে নোটের বদলে ‘কন্টাক্টলেস পেমেন্ট’-এর কথা বলা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন মুখপাত্র বলেছেন, সংক্রমণ এড়াতে লোকজনের উচিত যেখানে সম্ভব যোগাযোগহীন প্রযুক্তি বা কন্টাক্টলেস টেকনোলজি ব্যবহার করা।

ব্যাংক নোট স্পর্শ করার পর লোকজনকে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। কেননা, এসব নোটে কয়েক দিন পর্যন্ত মানব দেহে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মতো উপাদান থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ব্যাংক অব ইংল্যান্ড’ও নোটগুলো ‘ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস বহন করতে পারে’ বলে স্বীকার করেছে। তাদের তরফে লোকজনকে নিয়মিত হাত ধোয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দিনে দুই বার স্মার্টফোনের স্ক্রিন পরিষ্কারের অনুরোধ করা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ডগুলোও মুছে রাখার অনুরোধ জানিয়েছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড। এতে করে কার্ডগুলোতে জমে থাকা জীবাণু মেরে ফেলা সহজ হবে।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ব্যবহৃত ব্যাংক নোটের জীবাণু নাশে উদ্যোগী হয়। আক্রান্ত রোগীদের আলাদা রাখার পাশাপাশি ব্যবহৃত ব্যাংক নোটগুলোও বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। জীবাণু নাশের জন্য অতি বেগুনী আলো বা উচ্চ তাপমাত্রা ব্যবহার করে ১৪ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণের পর এসব নোট ফের বাইরে ছাড়া হয়। ৩ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৬০টি দেশে ছড়িয়েছে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। চীনের পর সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। ইতালি ও ইরানের পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক। যুক্তরাষ্ট্রেও অন্তত ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। আর বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৮৬ হাজার মানুষ। আক্রান্ত ও মৃতদের বেশিরভাগই চীনের নাগরিক। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস গোটা বিশ্বে যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মাসখানেক আগে তারা ঠিক এই আশঙ্কাই প্রকাশ করেছিল। তখন তারা জানিয়েছিল, অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলিতে ভাইরাস ছড়িয়ে গেলে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। এখন দৃশ্যত পরিস্থিতি সেদিকেই মোড় নিচ্ছে। আর এটা ঠেকানো না গেলে সামনে অপেক্ষা করছে আরও বড় দুঃসময়!

এদিকে করোনা ভাইরাস আতঙ্কে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশে বদলে যেতে শুরু করেছে মানুষের অভিবাদন জানানোর অভ্যাস। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্কে কর্মস্থল, বাড়ি ও প্রার্থনার জায়গায় মানুষ করমর্দন, আলিঙ্গন ও গালে চুমু দেওয়ার মতো অভ্যাস বাদ দিচ্ছে। এর বদলে সরাসরি দৃষ্টি বা হাত দিয়ে ইশারায় অভিবাদন জানানো শুরু হয়েছে। চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে মানুষকে করমর্দন না করতে বলা হচ্ছে। এ বিষয়ক একটি নির্দেশনায় বলা হচ্ছে, করমর্দনের বদলে নিজেদের দুই হাত একত্রিত করে অভিবাদন জানাতে। মাইক ও লাউড স্পিকারে বলা হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গং শো ভঙ্গি দেখিয়ে অভিবাদন জানানোর জন্য। এই রীতি অনুসারে, বিপরীত হাতে তালুতে মুষ্ঠি রাখা হয়।

ফ্রান্সে দৈনিক পত্রিকায় পাতায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বলা হচ্ছে গালে চুমু ও কাজে সাধারণ আনুষ্ঠানিকতা করকমর্দনের বদলে কীভাবে প্রতিদিন অভিবাদন জানানো যাবে। শিষ্টাচার বিশেষজ্ঞ ফিলিপ লিখটফুসের বক্তব্য গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হচ্ছে। তিনি বলছেন, করমর্দন মধ্যযুগে শুরু হওয়া অভিবাদনের ধরণ। সাধারণভাবে মানুষের চোখে তাকানোই অভিবাদনের জন্য তা যথেষ্ট। ব্রাজিলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাগরিকদের লাতিন আমেরিকার পানীয় পানের সময় ধাতব স্ট্র একে অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি না করার পরামর্শ দিয়েছেন। জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হোর্স্ট সিহফার দেশটির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে করমর্দন করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ম্যার্কেল করমর্দন করতে হাত বাড়ালে তিনি হেসে নিজের হাত দুটো নিজের কাছেই রাখেন। এ সময় চ্যান্সেলরও হেসে উঠেন। আসন গ্রহণের আগে ম্যার্কেল তার হাত আকাশের দিকে উঁচু করে নেন।

ইরানে করোনা ভাইরাসে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে সচেতনতামূলক একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এতে পাঁচ বন্ধুকে দেখা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে তিন জনের হাত পকেটে রাখা এবং দুই জনের মুখে মাস্ক পরা। তারা অভিবাদন জানাতে একে অন্যের পায়ে টুকাটুকি করছে। লেবাননেও এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা গেছে মুখে চুমুর ভঙ্গি করে সংগীতশিল্পী রাগেব আলামা ও কৌতুক অভিনেতা মাইকেল আবু স্লেইমান একে অন্যের পায়ে টুকাটুকি করছেন।

15
ডায়াবেটিস একটি ঘরোয়া রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন কারণে ডায়াবেটিকস হতে পারে। বয়স, লিঙ্গ, দৈহিক স্থূলতা, রোগের পারিবারিক ইতিহাস, শারীরিক শ্রম, খাদ্যাভ্যাস (বিশেষত চিনি খাওয়া) অন্যান্য সংশ্লিষ্ট রোগের উপস্থিতি, বর্ণ, ওষুধ সেবনসহ বিভিন্ন কারণে ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ‘হু’-এর মতে, ৬৫ শতাংশ মানুষই বুঝতে পারে না ডায়াবেটিসের উপসর্গ। আর তাতেই বাড়ে সমস্যা। দেরি করে রোগ নির্ণয় করলে রোগ নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ে।তবে চিকিৎসকদের মতে, সতর্কতাই এ ধরনের সমস্যা সমাধানের প্রধান উপায়। ডায়াবেটিস আক্রমণের আগে এর কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। এসব লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন হলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে।

আসুন জেনে নিই যেসব লক্ষণে বুঝবে শরীরে ডায়াবেটিস বাসা বেঁধেছে-

১. রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়লে তাকে শরীর থেকে বার করে দেয়ার জন্য কিডনির ওপর চাপ পড়ে। তাই ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। আবার অতিরিক্ত প্রস্রাবের কারণে শরীরের পানি বেরিয়ে তেষ্টাও পায় প্রবল।

২. ডায়াবেটিস হলে শরীরের কোনো প্রদাহ সহজে শুকোতে চায় না। এমন হলে সচেতন হোন।

৩. চোখে ঝাপসা দেখলেও সচেতন হোন। ডায়াবেটিস প্রভাব পড়ে চোখেও পড়ে।

৪. অল্পতেই দুর্বল হয়ে পড়া। রক্তে শর্করা বাড়লে দুর্বল হয়ে পড়া খুব স্বাভাবিক। তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য শর্করা পরীক্ষা করে নিন।

৫. হঠাৎ অনেকটা ওজন কমে গেলে বা অত্যধিক বেড়ে গেলেও ডায়াবেটিস পরীক্ষা করিয়ে রাখুন।

৬. হাত-পা কিংবা হাত-পায়ের কোনো আঙুল কি অবশ হয়ে পড়ছে? এমন হলে দ্রুত সতর্ক হোন। রক্তে শর্করা বাড়ার এটি অন্যতম লক্ষণ।

৭. শরীরের ঘা সহজে শুকোতে না চাইলেও সচেতন হোন।

Pages: [1] 2 3 ... 47