Recent Posts

Pages: [1] 2 3 ... 10
1
আবু বকর সিদ্দীক (রা:) এর এই ঘটনাটি মোটামুটি আমরা সবাই জানি, কিন্তু ঘটনাটির মাঝে একটি গুরত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে যা আমাদের অনেকেরই নজর এড়িয়ে গেছে। ইনশাল্লাহ, সেই বিষয়েই এখানে আলোকপাত করব। আহমদ ইবনে হাম্বল রহিমাহুল্লাহ কর্তৃক বর্ণিত, জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রা:) এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

রাসূল (ﷺ) মিরাজ থেকে ফিরে এসেছেন। সকালবেলা তিনি যখন মক্কার কুরাইশদের মিরাজের ঘটনাটি বললেন তখন কুফ্ফার সম্প্রদায় হাসি-তামাশায় লিপ্ত হয়েছিল। মক্কার এই কুরাইশ সম্প্রদায়ের কুফ্ফারগণ ছিলেন অনেকটা বস্তুবাদি। যা দেখা, যায় ধরা যায়, ছোয়া যায় শুধু তাই তারা আমলে নিত। রাসূল (ﷺ) এর মিরাজের ঘটনাটিকে তারা একটা হাতিয়ার হিসেবে ধরে নিল আর এর মাধ্যমে মিরাজের ঘটনাটিকে মিথ্যা প্রমাণ করতে চাইল। কুফ্ফার সম্প্রদায়ের কিছু লোক আবু বকর সিদ্দীক (রা:) এর নিকট গেলেন। তিনি বাণিজ্য থেকে কিছুক্ষণ আগে ফিরে এসেছেন, তাই তখনও রাসূল (ﷺ) এর সাথে দেখা করতে পারেননি। কুফ্ফার সম্প্রদায় তাকে বলল, শুনেছ কি তোমার সঙ্গী কি সব বলা শুরু করেছে? সে বলছে, সে নাকি এক রাতের মধ্যে মক্কা থেকে বাইতুল মাকদাস(জেরুজালেম) যেয়ে আবার মক্কায় ফিরে এসেছে।

আবু বকর (রা:) বললেন, এই কথাগুলো কি তিনি বলেছেন? তারা জবাব দিল, হ্যাঁ। এরপর আবু বকর (রা:) বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, যদি তিনি সত্যিই বলে থাকেন, তাহলে তিনি সত্য বলেছেন। কুফফার সম্প্রদায়ের বিস্ময়ে চোখ কপালে উঠে গেল। তারা বলল, তুমি বিশ্বাস কর সে বৃহত্তর সিরিয়ায় যেয়ে আবার এক রাতের মধ্যে ফিরে এসেছে! আবু বকর (রা:) বললেন, আমি তাকে বিশ্বাস করি বরং এর চেয়েও বেশী বিশ্বাস করি ঐসব বিষয়ে যেগুলো তাঁর নিকট ওহী হিসেবে এসেছে। মোটামুটি এই ঘটনাটুকু আমরা সবাই জানি, কোন বইতে পড়ে কিংবা কারো নিকট থেকে এই ঘটনা শুনে আমরা পুলকিত হই কিন্তু এই ঘটনার মাঝে গুরুত্বপূর্ণ একটি হিকমা রয়েছে যা আমাদের অনেকেরই নজর এড়িয়ে গেছে।

কুফ্ফার সম্প্রদায় যখন আবু বকর (রা:) কে রাসূল (ﷺ) এর মিরাজ সম্পর্কিত কথাটি বলল তখন, আবু বকর (রা:) এর যদি দূর্বল ঈমান থাকত তাহলে তিনি বলতেন, না এই ঘটনাটি সত্য নয় অথবা, আবু বকর (রা:) যদি এমন হতেন যাকে খুব সহজেই কথার চাতুরী দ্বারা অভিভূত করা যায় তাহলে তিনি বলতেন ঘটনাটি সত্য। আবু বকর (রা:) চমৎকারভাবে উত্তর দিয়েছিলেন, মাশাল্লাহ। তিনি ঘটনাটি শুনেছেন কুফ্ফারদের নিকট থেকে আর তাই আবু বকর (রা:) বললেন, যদি তিনি সত্যিই বলে থাকেন, তাহলে তিনি সত্য বলেছেন।

এর দুইটি অংশ রয়েছে, প্রথমত, ‘যদি তিনি সত্যিই বলে থাকেন’ – হাদীস বিশেষজ্ঞগণ এই পদ্ধতীতে কাজ করেন, অর্থাৎ যদি উৎস সত্যিই রাসূল (ﷺ) এর নিকট থেকে আসে- দ্বিতীয়ত, তাহলে তা সত্য। সেটা হচ্ছে ওহী, আল্লাহর নিকট থেকে রাসূল (ﷺ) এর উপর নাযিলকৃত। অর্থাৎ সহীহ হাদীস পাওয়া গেলে তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা, সেই অনুযায়ী কর্তব্য পালন করা ঈমানী দায়িত্ব, কারণ সেটা ওহী। এমন কথা বলা যাবে না যে, এটা তো আমার যুক্তিতে টিকল না বা আমার বাপ-দাদাদের কখনও এমন কিছু বলতে বা করতে দেখিনি কিংবা আমার মাযহাবে এমনটি সমর্থন করে না’।

আবু বকর সিদ্দীক (রা:) এর এই ঘটনা থেকে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এটাই, রাসূল (ﷺ) এর কথা সহীহভাবে আমাদের নিকট পৌছালে বিনা বাক্য ব্যয়ে তা মেনে নিতে হবে, তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী কর্ম পালন করতে হবে। সেটা আমার নিকট যুক্তিতে টিকুক আর না টিকুক, আমার চারপাশে লোকজন সেটা মানুক আর না মানুক আমাকে রাসূল (ﷺ) এর কথায় বিশ্বাস স্থাপন করতেই হবে এবং তার যথাসাধ্য অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের রাসূল (ﷺ) এর সাহাবীদের মতো করে দ্বীন ইসলামকে বুঝার তৌফিক দান করুন এবং সেই অনুযায়ী আমল করার তৌফিক দান করুন।

আমীন!!

Source:https://quraneralo.net/story-of-as-siddique/
2
একবার তিনজন লোক পথ চলছিল, এমন সময় তারা বৃষ্টিতে আক্রান্ত হ’ল। অতঃপর তারা এক পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিল। হঠাৎ পাহাড় হ’তে এক খন্ড পাথর পড়ে তাদের গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেল। তখন তারা একে অপরকে বলল, নিজেদের কৃত কিছু সৎকাজের কথা চিন্তা করে বের কর, যা আললাহর সন্তুষ্টির জন্য তোমরা করেছ এবং তার মাধ্যমে আললাহর নিকট দো‘আ কর। তাহ’লে হয়ত আল্লাহ্‌ তোমাদের উপর হ’তে পাথরটি সরিয়ে দিবেন।

তাদের একজন বলতে লাগল, হে আল্লাহ্‌! আমার আববা-আম্মা খুব বৃদ্ধ ছিলেন এবং আমার ছোট ছোট সন্তানও ছিল। আমি তাদের ভরণ-পোষণের জন্য পশু পালন করতাম। সন্ধ্যায় যখন আমি বাড়ি ফিরতাম তখন দুধ দোহন করতাম এবং আমার সন্তান্দের  আগে আমার আববা-আম্মাকে পান করাতাম। একদিন আমার ফিরতে দেরী হয় এবং সন্ধ্যা হওয়ার আগে আসতে পারলাম না। এসে দেখি তারা ঘুমিয়ে পড়েছেন। আমি দুধ দোহন করলাম, যেমন প্রতিদিন দোহন করি। তারপর আমি তাঁদের শিয়রে (দুধ নিয়ে) দাঁড়িয়ে রইলাম। তাদেরকে জাগানো আমি পছন্দ করিনি এবং তাদের আগে আমার বাচ্চাদেরকে পান করানোও সঙ্গত মনে করিনি। অথচ বাচ্চাগুলো দুধের জন্য আমার পায়ের কাছে পড়ে কান্নাকাটি করছিল। এভাবে ভোর হয়ে গেল। হে আল্লাহ্‌! আপনি জানেন আমি যদি শুধু আপনার সন্তুষ্টির জন্যই এ কাজটি করে থাকি তবে আপনি আমাদের হ’তে পাথরটা খানিক সরিয়ে দিন, যাতে আমরা আসমানটা দেখতে পাই। তখন আল্লাহ পাথরটাকে একটু সরিয়ে দিলেন এবং তারা আসমান দেখতে পেল।

দ্বিতীয় ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্‌! আমার এক চাচাতো বোন ছিল। পুরুষরা যেমন মহিলাদেরকে ভালবাসে,আমি   তাকে  তার চেয়েও অধিক ভালবাসতাম। একদিন আমি তার কাছে চেয়ে বসলাম (অর্থাৎ খারাপ কাজ করতে চাইলাম)। কিন্তু তা সে অস্বীকার করল যে পর্যন্ত না আমি তার জন্য একশ’ দিনার নিয়ে আসি। পরে চেষ্টা করে আমি তা যোগাড় করলাম (এবং তার কাছে এলাম)। যখন আমি তার দু’পায়ের মাঝে বসলাম (অর্থাৎ সম্ভোগ করতে তৈরী হলাম) তখন সে বলল, হে আললাহর বান্দা! আল্লাহকে ভয়  কর। অন্যায়ভাবে মোহর (পর্দা) ছিঁড়ে দিয়ো না। (অর্থাৎ আমার সতীত্ব নষ্ট করো না)। তখন আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। হে আল্লাহ! আপনি জানেন আমি যদি শুধু আপনার সন্তুষ্টির জন্য এ কাজটি করে থাকি, তবে আপনি আমাদের জন্য পাথরটা সরিয়ে দিন। তখন পাথরটা কিছুটা সরে গেল।

তৃতীয় ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্‌! আমি এক ‘ফারাক’ চাউলের বিনিময়ে একজন শ্রমিক নিযুক্ত করেছিলাম। যখন সে তার কাজ শেষ করল আমাকে বলল, আমার পাওনা দিয়ে দাও। আমি তাকে তার পাওনা দিতে গেলে সে তা নিল না। আমি তা দিয়ে কৃষি কাজ করতে লাগলাম এবং এর দ্বারা অনেক গরু ও তার রাখাল জমা করলাম। বেশ কিছু দিন পর সে আমার কাছে আসল এবং বলল, আল্লাহকে ভয় কর (আমার মজুরী দাও)। আমি বললাম, এই সব গরু ও রাখাল নিয়ে নাও। সে বলল, আল্লাহকে ভয় কর, আমার সাথে ঠাট্টা কর না। আমি বললাম, আমি তোমার সাথে ঠাট্টা করছি না, ঐগুলো নিয়ে নাও। তখন সে তা নিয়ে গেল। হে আল্লাহ! আপনি জানেন, যদি আমি আপনার সন্তুষ্টি লাভের জন্য এ কাজটি করে থাকি, তবে পাথরের বাকীটুকু সরিয়ে দিন। তখন আল্লাহ পাথরটাকে সরিয়ে দিলেন।

[আব্দুললাহ  ইবনু  ওমর  (রাঃ)  হ’তে  বর্ণিত,  বুখারী  হা/২৩৩৩,  ‘চাষাবাদ’  অধ্যায়, অনুচেছদ-১৩; মুসলিম হা/২৭৪৩, মিশকাত হা/৪৯৩৮]।
শিক্ষা:

    বান্দা সুখে-দুঃখে সর্বদা আল্লাহকে ডাকবে।
    বিপদাপদের সময় আল্লাহকে ব্যতীত কোন মৃত ব্যক্তি বা অন্য কাউকে ডাকা শিরকে আকবর বা বড় শিরক।
    সৎ আমলকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করতে হবে।
    পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে হবে এবং স্ত্রী ও সন্তানদের উপর তাদেরকে প্রাধান্য দিতে হবে।
    শ্রমিককে তার ন্যায্য পাওনা প্রদান করতে হবে।

Source:https://quraneralo.net/stories-from-hadith-20/
3
আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: “ক্বিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে ব্যক্তির বিচার করা হবে, সে হবে একজন (ধর্মযুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী) শহীদ। তাকে আল্লাহ্‌র নিকট উপস্থিত করা হবে। অতঃপর আল্লাহ্‌ পাক তাকে (দুনিয়াতে প্রদত্ত) নেয়ামতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। আর সেও তা স্মরণ করবে। এরপর আল্লাহ্‌ তাআলা তাকে জিজ্ঞেস করবেন, দুনিয়াতে তুমি কি আমল করেছ? উত্তরে সে বলবে, আমি তোমার সন্তুষ্টির জন্য (কাফেরদের সাথে) লড়াই করেছি। এমনকি শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়েছি। তখন আল্লাহ্‌ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ, বরং তোমাকে যেন বীর-বাহাদুর বলা হয়, সেজন্য তুমি লড়াই করেছ। আর (তোমার অভিপ্রায়  অনুযায়ী)  তোমাকে  দুনিয়াতে তা  বলাও  হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে আদেশ দেওয়া হবে। তখন তাকে উপুড় করে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

অতঃপর সে ব্যক্তিকে বিচারের জন্য উপস্থিত করা হবে, যে নিজে দ্বীনী ইলম শিক্ষা করেছে এবং অপরকে শিক্ষা দিয়েছে। আর পবিত্র কুরআন অধ্যয়ন করেছে (এবং অপরকে শিক্ষা দিয়েছে)। তাকে আল্লাহ্‌ পাকের দরবারে হাযির করা হবে। অতঃপর তিনি তাকে নেয়ামতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন এবং সেও তা স্মরণ করবে। অতঃপর আল্লাহ্‌ তাআলা তাকে জিজ্ঞেস করবেন, এই সমস্ত নেয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপনের জন্য তুমি কি আমল করেছ? উত্তরে সে বলবে, আমি স্বয়ং দ্বীনী ইলম শিক্ষা করেছি এবং অপরকে  শিক্ষা  দিয়েছি এবং তোমার সন্তুষ্টির নিমিত্তে কুরআন তেলাওয়াত করেছি। তখন আল্লাহ্‌ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। আমার সন্তুষ্টির জন্য নয়, বরং তুমি এজন্য ইলম্ শিক্ষা করেছ, যেন তোমাকে ‘বিদ্বান’বলা হয় এবং এজন্য কুরআন অধ্যয়ন করেছ, যাতে তোমাকে‘ক্বারি’ বলা হয়। আর (তোমার অভিপ্রায় অনুযায়ী ) তোমাকে বিদ্বান ও ক্বারীও বলা হয়েছে। অতঃপর (ফেরেশতাদেরকে) তার সম্পর্কে নির্দেশ দেওয়া হবে। সুতরাং তাকে উপুড় করে টানতে টানতে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

অতঃপর এমন এক ব্যক্তিকে বিচারের জন্য আল্লাহ্‌র দরবারে উপস্থিত করা হবে, যাকে আল্লাহ্ তাআলা বিপুল ধন-সম্পদ দান করে বিত্তবান করেছিলেন। তাকে আল্লাহ্‌  তাআলা প্রথমে প্রদত্ত নেয়ামতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। আর সে তখন সমস্ত নেয়ামতের কথা অকপটে স্বীকার করবে। অতঃপর তিনি তাকে জিজ্ঞেস করবেন, এই সমস্ত নেয়ামতের  শুকরিয়ায় তুমি কি আমল করেছ? উত্তরে সে বলবে, যে সমস্ত ক্ষেত্রে ধন- সম্পদ ব্যয় করলে তুমি সন্তুষ্ট হবে, তোমার সন্তুষ্টির জন্য সেসব খাতের একটি পথেও ব্যয় করতে ছাড়িনি। আল্লাহ্‌  তাআলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। আমার সন্তুষ্টির জন্য নয়; বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে দান করেছিলে, যাতে তোমাকে বলা হয় যে, সে একজন ‘দানবীর’। সুতরাং (তোমার অভিপ্রায় অনুসারে দুনিয়াতে) তোমাকে ‘দানবীর’বলা হয়েছে। অতঃপর (ফেরেশতাদেরকে) তার সম্পর্কে নির্দেশ দেওয়া হবে। নির্দেশ মোতাবেক তাকে উপুড় করে টানতে টানতে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।” [মুসলিম হা/১৯০৫  ‘নেতৃত্ব’অধ্যায়,  অনুচেছদ-৪৩;  মিশকাত-আলবানী  হা/২০৫,  ‘ইলম’অধ্যায় ]
শিক্ষা:

লোক দেখানো আমলের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। কাজেই সর্বদা আমাদের নিয়তকে পরিশুদ্ধ রাখতে হবে এবং প্রতিটি কাজ একমাত্র আল্লাহ্‌ পাকের সন্তুষ্টির জন্যই করতে হবে।

Source:https://quraneralo.net/stories-from-hadith-9/
4
Hadith / উয়াইস কারনীর মর্যাদা
« Last post by Mrs.Anjuara Khanom on Yesterday at 02:57:56 PM »
উসাইর ইবনু জাবির (রা:) বলেন, ইয়ামানে বসবাসকারীদের পক্ষ থেকে ওমর (রা:)-এর নিকট সাহায্যকারী দল আসলে তিনি তাদেরকে প্রশ্ন করতেন, ‘তোমাদের মাঝে কি উয়াইস ইবনু আমির আছে’? অবশেষে (একদিন) উয়াইস (রহঃ) এসে গেলেন। তাকে ওমর প্রশ্ন করলেন, ‘আপনি কি উয়াইস ইবনু আমির’? সে বলল, হ্যাঁ। ওমর (রা:) আবার বললেন, ‘মুরাদ’ সম্প্রদায়ের উপগোত্র ‘কারনের’লোক? তিনি বললেন, হ্যাঁ । তিনি বললেন, ‘আপনার কি কুষ্ঠরোগ হয়েছিল, আপনি তা হতে সুস্থ হয়েছেন এবং মাত্র এক দিরহাম পরিমাণ স্থান বাকী আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, ‘আপনার মা জীবিত আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ।

ওমর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘ইয়ামানের সহযোগী দলের সাথে উয়াইস ইবনু আমির নামক এক লোক তোমাদের নিকট আসবে। সে ‘মুরাদ’জাতির উপজাতি ‘কারনের’লোক। তার কুষ্ঠরোগ হবে এবং তা হ’তে সে মুক্তি পাবে, শুধুমাত্র এক দিরহাম পরিমাণ স্থান ছাড়া। তার মা বেঁচে আছে, সে তার মায়ের খুবই অনুগত। সে (আল্লাহ্‌র উপর ভরসা করে) কোন কিছুর শপথ করলে তা আল্লাহ্‌ তা’আলা পূরণ করে দেন। তুমি যদি তাকে দিয়ে তোমার গুনাহ মাফের জন্য দোআ করাবার সুযোগ পাও, তাহলে তাই করবে।

ওমর (রা:) বলেন, ‘কাজেই আমার অপরাধ ক্ষমার জন্য আপনি দোআ করুন। তখন তিনি (উয়াইস) ওমরের অপরাধের ক্ষমা চেয়ে দোআ করলেন। ওমর (রা:) তাকে বললেন, ‘আপনি কোথায় যেতে চান? তিনি বললেন, ‘কূফায়। তিনি (ওমর) বলেন, ‘আমি সেখানকার গভর্নরকে আপনার (সাহায্যের) জন্য লিখে দেই? তিনি বললেন, ‘আমার নিকট গরীব-মিসকিনদের মাঝে বসবাস করাই বেশী পছন্দনীয়। পরের বছর কূফার এক নেতৃস্থানীয় লোক হজ্জে এলো। তার সাথে ওমরের দেখা হলে তিনি উয়াইস সম্পর্কে তাকে প্রশ্ন করলেন। সে বলল, ‘আমি তাকে এরকম অবস্থায় দেখে এসেছি যে, তার ঘরটা অত্যন্ত জীর্ণ অবস্থায় আছে এবং তার জীবন-যাপনের উপকরণসমূহ খুবই নগণ্য।

ওমর (রা:) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘উয়াইস ইবনু আমির নামক এক লোক ইয়ামানের সাহায্যকারী দলের সাথে তোমাদের নিকট আসবে। সে ‘মুরাদ’জাতির উপজাতি ‘কারন’বংশীয় লোক। তার কুষ্ঠ রোগ হবে এবং তা থেকে সে মুক্তি পাবে, শুধুমাত্র এক দিরহাম পরিমাণ স্থান ছাড়া। তার মা বেঁচে আছে এবং সে তার মায়ের খুবই অনুগত। সে (আল্লাহ্‌র উপর ভরসা করে) কোন কিছুর শপথ করলে তা আল্লাহ্‌ পূরণ করে দেন। তুমি যদি তোমার গুনাহ মাফের জন্য তাকে দিয়ে দোআ করানোর সুযোগ পাও, তাহলে  তাই  করবে।  লোকটি  ফিরে  এসে উয়াইসের নিকট গিয়ে বলল, ‘আমার অপরাধ ক্ষমার জন্য আপনি দোআ করুন।

তিনি (উয়াইস) বললেন, ‘এইমাত্র আপনি মঙ্গলময় সফর (হজ্জ) থেকে প্রত্যাবর্তন করেছেন; বরং আপনিই আমার অপরাধ ক্ষমার জন্য দোআ করুন।  তিনি  বললেন,  ‘আপনি  কি  ওমরের  সাথে  সাক্ষাৎ করেছেন। সে বলল, হ্যাঁ। তার জন্য উয়াইস দোআ করলেন। উয়াইসের মর্যাদা সম্পর্কে লোকেরা সচেতন হলে সেখান থেকে উয়াইস অন্য স্থানে চলে গেলেন। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ওমর (রা:)-এর নিকট কূফার অধিবাসীরা একটি সাহায্যকারী দল পাঠায়। দলের এক লোক উয়াইসকে বিদ্রূপ করত। ওমর (রা:) বললেন, ‘এখানে ‘কারন’বংশীয় কেউ আছে কি? ঐ ব্যক্তিটি উঠে আসলে ওমর (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘ইয়ামান থেকে উয়াইস নামে এক লোক তোমার নিকট আসবে। সে তার মাকে ইয়ামানে একা রেখে আসবে। তার কুষ্ঠরোগ হবে। সে আল্লাহ্‌র নিকট দোআ করবে, আল্লাহ্‌ তার রোগমুক্তি দান করবেন, শুধুমাত্র এক দীনার অথবা এক দিরহাম পরিমাণ স্থান ছাড়া। তোমাদের মধ্যে যে কেউ তার দেখা পাবে, তাকে দিয়ে সে যেন তার গুনাহ মাফের জন্য দোআ করায়। ওমর (রা:) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘পরবর্তীদের (তাবেঈ) মধ্যে উয়াইস নামে এক সৎ লোক হবে। তার মা বেঁচে আছে। তার শরীরে কুষ্ঠের চিহ্ন থাকবে। তার নিকট গিয়ে নিজের গুনাহ মাফের জন্য তাকে দিয়ে প্রার্থনা করাও। [মুসলিম হা/২৫৪২, ‘ছাহাবীগণের মর্যাদা’অধ্যায়, অনুচেছদ-৫৫]

শিক্ষা: পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহারকারী ব্যক্তি দুনিয়া ও আখেরাতে মর্যাদাবান হবেন।

Source:https://quraneralo.net/stories-from-hadith-10/
5
মুজাহিদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রা:) বলতেন, আল্লাহ্‌র কসম, যিনি ছাড়া কোন (হক) ইলাহ নেই। আমি ক্ষুধার যন্ত্রণায় উপুড় হয়ে পড়ে থাকতাম।আর কখনও পেটে পাথর বেঁধে রাখতাম। একদা আমি তাঁদের (রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং ছাহাবীদের) রাস্তায় বসেছিলাম, যেখান দিয়ে তারা বের হ’তেন। আবূ বকর (রা:) রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি তাঁকে কুরআনের একটি আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম।আমি এ উদ্দেশ্যেই তা করলাম, যেন তিনি আমাকে কিছু খেতে দিয়ে পরিতৃপ্ত করেন। কিন্তু তিনি চলে গেলেন, কিছুই করলেন না। এরপর ওমর (রা:) আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁকেও সেই একই উদ্দেশ্যে কুরআনের একটি আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। কিন্তু তিনিও চলে গেলেন, কিছুই করলেন না।

অতঃপর আবুল কাসেম [অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)] আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, আমাকে দেখে তিনি মুচকি হাসলেন। তিনি আমার চেহারা দেখে মনের কথা বুঝতে পারলেন এবং বললেন, ‘হে আবূ হুরায়রা (রা:)! আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ্‌র  রাসূল (সাঃ)! আমি উপস্থিত। তিনি বললেন, ‘তুমি আমার সঙ্গে চল’! অতঃপর তিনি চললেন, আমি তাঁর অনুসরণ করলাম। তিনি বাড়ীতে প্রবেশ করলেন। অতঃপর আমি ভিতরে  প্রবেশের অনুমতি চাইলাম। তিনি অনুমতি দিলে আমি প্রবেশ করলাম। তিনি ঘরে প্রবেশ করে একটি পেয়ালায় কিছু দুধ দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ দুধ কোথা থেকে এসেছে’?বাড়ির লোকজন উত্তর দিল, ‘অমুক পুরুষ অথবা অমুক মহিলা আপনার জন্য হাদিয়াস্বরূপ দিয়েছে’। তিনি বললেন, ‘হে আবূ হুরায়রা (রা:)’! আমি বললাম, ‘আমি হাযির হে আল্লাহ্‌র  রাসূল’! তিনি বললেন, ‘আহলে ছুফ্ফার লোকদেরকে গিয়ে এখানে ডেকে আন’।

(রাবী বলেন) ‘আহলে ছুফফা’ ছিল ইসলামের মেহমান। তাদের পরিবার- পরিজন, ধন-সম্পদ কিছুই ছিল না। আর এমন কেউ ছিল না, যার উপর ভরসা করা যায়। যখন কোন ছাদাকার মাল রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট আসত, তখন তিনি তাদের জন্য পাঠিয়ে দিতেন। নিজে সেখান থেকে কিছুই গ্রহণ করতেন না। আর যদি কোন হাদিয়া (উপঢৌকন) আসত, তিনি সেখান থেকেও এক অংশ  তাদের জন্য পাঠিয়ে দিয়ে এতে তাদেরকে শরীক করতেন এবং নিজে এক অংশ  গ্রহণ করতেন। (আবু হুরায়রা বলেন) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আদেশ শুনে আমি হতাশ হয়ে পড়লাম। (মনে মনে) বললাম, এতটুকু দুধ দ্বারা ‘আহলে ছুফফা’র কি হবে? আমিই এ দুধ পানের বেশী হকদার। আমি তা পান করলে আমার শরীরে শক্তি ফিরে পেতাম। যখন তারা এসে গেলেন, তখন তিনি আমাকে আদেশ দিলেন, আমিই যেন তাদেরকে দুধ পান করতে দেই। আর আমার আশা রইল না যে, এ দুধ থেকে আমি কিছু পাব।

কিন্তু আল্লাহ্‌ ও তার রাসূল (সাঃ)-এর আদেশ মান্য করা ছাড়া আমার কোন গত্যন্তর ছিল না।সুতরাং আমি ‘আহলে ছুফ্ফার নিকট গিয়ে তাদেরকে ডেকে আনলাম’। তারা এসে (ঘরে প্রবেশের) অনুমতি চাইলে তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলেন। তারা ঘরে এসে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করলেন। তিনি বললেন, হে আবূ হুরায়রা! আমি বললাম, আমি হাযির হে আল্লাহ্‌র রাসূল! রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বললেন, এটি তাদেরকে দাও। আমি (দুধের) পেয়ালা হাতে নিয়ে দিতে শুরু করলাম। এক ব্যক্তির হাতে দিলাম, সে পান করে পরিতপ্তৃ হ’ল এবং আমাকে পেয়ালা ফেরত দিল।

অতঃপর আমি অন্য একজনকে দিলাম, সেও তৃপ্তি সহকারে পান করে পেয়ালা ফেরত দিল। তৃতীয় জনকে দিলে সেও তাই করল। এভাবে আমি (সর্বশেষে) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট পৌছলাম। সবাই পরিতৃপ্ত হ’ল। তিনি পেয়ালা নিলেন এবং আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, ‘হে আবূ হুরায়রা’! আমি বললাম, ‘আমি হাযির হে আল্লাহ্‌র রাসূল’! তিনি বললেন, ‘এখন আমি আর তুমি বাকী’। আমি বললাম, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন হে আল্লাহ্‌র রাসূল’। তিনি বললেন, ‘বসে পড় এবং পান কর’। আমি বসে পান করলাম। তিনি (পুনরায়) বললেন, ‘পান কর’। আমি পান করলাম। তিনি একথা বলতেই থাকলেন, অবশেষে আমি বলতে বাধ্য হ’লাম যে, ‘আল্লাহ্‌র শপথ! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন, আমার পেটে আর জায়গা নেই’। তিনি বললেন, ‘তাহলে আমাকে দাও’। আমি তাঁকে দিলে তিনি আল্লাহ্‌র প্রশংসা করলেন এবং বিসমিল্লাহ বলে বাকী দুধ পান করলেন (ছহীহ বুখারী হা/৬৪৫২, ‘রিকাক’অধ্যায়, অনুচেছদ-১৭, মিশকাত হা/৪৬৭০ ‘শিষ্টাচার’অধ্যায়, ‘অনুমতি’অনুচেছদ)।
শিক্ষা:

    রাসূল (সাঃ) ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ। তিনি তাঁর ছাহাবীদের মুখ দেখেই তাদের অন্তরের অবস্থা বুঝতে পারতেন।
    বসে পান করা সুন্নত।
    বিসমিল্লাহ বলে পান করতে হবে।
    আমন্ত্রিত ব্যক্তি অনুমতি না নিয়ে বাড়ীতে প্রবেশ করবে না।
    পরস্পর ভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধির জন্য হাদিয়া বা উপঢৌকন প্রদান করা সুন্নত।
    বিপদগ্রস্ত বা অভাবগ্রস্তে ক সাহায্য করা মুমিনের অবশ্য কর্তব্য।

Source:https://quraneralo.net/stories-from-hadith-6/
6
হযরত আনাস (রা:) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এরশাদ করেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন মুমিনগণকে (হাশরের ময়দানে স্ব স্ব অপরাধের কারণে) বন্দী রাখা হবে। তাতে তারা অত্যন্ত চিন্তিত ও অস্থির হয়ে পড়বে এবং বলবে, ‘যদি আমরা আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্‌ তা‘আলার নিকট কারো মাধ্যমে সুপারিশ কামনা করি, যিনি আমাদের বর্তমান অবস্থা থেকে স্বস্তি দিবেন ।’সেই লক্ষ্যে তারা আদম (আঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলবে, ‘আপনি মানবজাতির পিতা আদম, আপনাকে আল্লাহ্‌ নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন, জান্নাতে বসবাস করিয়েছেন, ফেরেশতা মন্ডলীকে দিয়ে আপনাকে সিজদা করিয়েছিলেন এবং তিনিই যাবতীয় বস্তুর নাম আপনাকে শিক্ষা দিয়েছিলেন।আপনি আমাদের জন্য আপনার রবের নিকট সুপারিশ করুন, যেন তিনি আমাদেরকে এই কষ্টদায়ক স্থান হ’তে মুক্ত করে প্রশান্তি দান করেন ।’তখন  আদম  (আঃ)  বলবেন,  ‘আমি  তোমাদের  এই  কাজের মোটেই উপযুক্ত নই’।

নবী করীম (সাঃ) বলেন, তখন তিনি গাছ হ’তে ফল খাওয়ার অপরাধের কথা স্মরণ করবেন, যা হ’তে তাঁকে নিষেধ করা হয়েছিল। [আদম (আঃ) বলবেন] ‘বরং  তোমরা  মানবজাতির  জন্য  আল্লাহ্‌  তা‘আলার  প্রেরিত  সর্বপ্রথম নবী নূহ (আঃ)-এর নিকট যাও’। তারা নূহ (আঃ)-এর কাছে গেলে  তিনি  তাদেরকে  বলবেন,  ‘আমি  তোমাদের  এ  কাজের  জন্য একেবারেই যোগ্য নই ।’ সাথে সাথে তিনি তাঁর ঐ অপরাধের কথা স্মরণ করবেন, যা অজ্ঞতাবশত: নিজের (অবাধ্য) ছেলেকে পানিতে  না ডুবানোর জন্য আল্লাহ্‌ কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। (তিনি বলবেন) ‘বরং তোমরা আল্লাহ্‌ খলীল হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকটে যাও’।রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন, এবার তারা হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকটে যাবে। তখন তিনি বলবেন , ‘আমি তোমাদের এ কাজের জন্য কিছুই করার ক্ষমতা রাখি না ।’ সাথে সাথে তাঁর তিনটি মিথ্যা উক্তির কথা স্মরণ করবেন এবং বলবেন, ‘বরং তোমরা মূসা (আঃ)-এর কাছে যাও। তিনি আল্লাহ্‌র এমন এক  বান্দা,  যাকে  আল্লাহ্‌  তাওরাত  দান  করেছেন,  তার  সাথে বাক্যালাপ করেছেন এবং গোপন কথাবার্তার মাধ্যমে তাঁকে নৈকট্য দান করেছেন’।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, তখন তারা সকলে হযরত মূসা (আঃ) এর নিকটে আসলে তিনি বলবেন, ‘আমি তোমাদের জন্য সুপারিশের ক্ষেত্রে অপারগ।’তখন তিনি সেই প্রাণনাশের অপরাধের কথা স্মরণ করবেন, যা তাঁর হাতে সংঘটিত হয়েছিল এবং বলবেন, ‘বরং তোমরা আল্লাহ্‌র বান্দা ও তাঁর মনোনীত রাসূল, তাঁর কালেমা ও রূহ হযরত ঈসা (আঃ)-এর কাছে যাও।’নবী করীম (সাঃ) বলেন, তখন তারা সবাই হযরত ঈসা (আঃ)-এর কাছে গেলে তিনি বলবেন, ‘আমি তোমাদের এ কাজের উপযুক্ত নই।বরং তোমরা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর কাছে যাও।তিনি আল্লাহ্‌ তা‘আলার এমন এক  বান্দা,  যার  আগের  ও  পরের  সমস্ত  গোনাহ  আল্লাহ্‌  ক্ষমা  করে দিয়েছেন।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘তারা আমার কাছে আসবে।আমি তখন আমার রবের কাছে তাঁর দরবারে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা  করব।অতঃপর আমাকে তাঁর নিকট যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে।আমি যখন তাঁকে দেখব, তখনই তাঁর উদ্দেশ্যে সিজদায় পড়ে যাব।আল্লাহ্‌  আমাকে যতক্ষণ চাইবেন সিজদা অবস্থায় রাখবেন’।অতঃপর বলবেন, ‘হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও।আর যা বলার বল, তোমর কথা শুনা হবে। শাফা‘আত কর, কবুল করা হবে।তুমি চাও, তোমাকে দেওয়া হবে ।’ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘তখন আমি মাথা উঠাব এবং আমার রবের এমনভাবে প্রশংসা বর্ণনা করব, যা তিনি আমাকে শিখিয়ে দিবেন। অতঃপর আমি শাফা‘আত করব। তবে এ ব্যাপারে আমার জন্য একটি সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।তখন আমি আল্লাহ্‌র দরবার হতে উঠে আসব এবং ঐ নির্ধারিত সীমার লোকদেরকে জাহান্নাম হ’তে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাব।তারপর আমি পুনরায় ফিরে এসে আমার প্রতিপালকের দরবারে হাযির হওয়ার জন্য আল্লাহ্‌ কাছে অনুমতি প্রার্থনা করব।আমাকে অনুমতি  দেওয়া হবে।আমি যখন তাঁকে দেখব, তখনই তাঁর উদ্দেশ্যে সিজদায় পড়ে যাব এবং আল্লাহ্‌ যতক্ষণ চাইবেন আমাকে সিজদা অবস্থায় থাকতে দিবেন ।’ তারপর আল্লাহ্‌ বলবেন, ‘হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও। আর যা বলার বল, তোমার কথা শুনা হবে, সুপারিশ কর, কবুল করা হবে। তুমি প্রার্থনা কর, যা প্রার্থনা করবে তা দেওয়া হবে’।

রাসূল (সাঃ) বলেন, তখন আমি মাথা উঠাব এবং আমার রবের এমনভাবে প্রশংসা ও গুণকীর্তন বর্ণনা  করব, যা আমাকে শিখিয়ে দেওয়া হবে। এরপর আমি শাফা‘আত করব। তবে এ ব্যাপারে আমার জন্য একটি নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দেওয়া হবে। তখন আমি আমার রবের দরবার হ’তে উঠে আসব এবং ঐ নির্দিষ্ট লোকগুলিকে জাহান্নাম হ’তে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাব।অতঃপর তৃতীয়বার ফিরে আসব এবং আমার প্রতিপালক আল্লাহ্‌র দরবারে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করব।আমাকে তাঁর কাছে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে।আমি যখন তাঁকে দেখব, তখনই সিজদায় পড়ে যাব।আল্লাহ্‌ যতক্ষণ ইচ্ছা আমাকে সিজদা অবস্থায় য় রাখবেন ।’ তারপর বলবেন, ‘হে মুহাম্মাদ!  মাথা উঠাও।তুমি যা বলবে তা শুনা হবে, সুপারিশ কর, কবুল করা হবে।প্রার্থনা কর, তা দেওয়া হবে।’রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘তখন আমি মাথা উঠাব এবং আমার রবের এমন হামদ ও ছানা বর্ণনা করব, যা তিনি আমাকে শিখিয়ে দিবেন।’ নবী করীম (সাঃ) বলেন, ‘তারপর আমি শাফা‘আত করব।এ ব্যাপারে আল্লাহ্‌ তা‘আলা আমার জন্য একটি নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দিবেন। তখন আমি সেই দরবার থেকে বের হয়ে আসব এবং তাদেরকে জাহান্নাম হ’তে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাব’।

অবশেষে  কুরআন  যাদেরকে  আটকিয়ে  রাখবে  (অর্থাৎ  যাদের  জন্য কুরআনের ঘোষণা  অনুযায়ী চিরস্থায়ী  ঠিকানা  জাহান্নামে নির্ধারিত  হয়ে গেছে) তারা ব্যতীত আর কেউ জাহান্নামে অবশিষ্ট থাকবে না। বর্ণনাকারী ছাহাবী হযরত আনাস (রা:) বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কুরআনের এই আয়াতটি ‘আশা করা যায়, আপনার  প্রতিপালক  অচিরেই  আপনাকে  ‘মাকা‍‌মে মাহমূদে’ পৌঁছিয়ে  দেবেন’ [বনী ইসরাঈল ৭৯] তেলাওয়াত করলেন এবং বললেন, এটাই সেই ‘মাকামে মাহমূদ’ যার প্রতিশ্রুতি তোমাদের নবীকে দেওয়া হয়েছে

[ছহীহ বুখারী হা/৭৪৪০ তাওহীদ’অধ্যায়, অনুচেছদ-২৪, মিশকাত হা/৫৫৭২ ‘কিয়ামতের অবস্থা ও সৃষ্টির সূচনা’অধ্যায়, ‘হাওযে কাওছার ও শাফা‘আত’অনুচেছদ]
শিক্ষা:

(১) সকল নবী-রাসলের উপর মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর শ্রেষ্ঠত্ব।
(২) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর শাফা‘আতে পরকালে কিছু জাহান্নামীকে আল্লাহ্‌ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। এজন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘প্রত্যেক নবীর এমন একটি দো‘আ রয়েছে, যা (আল্লাহ্‌র্ নিকট) গৃহীত হয়, আর নবী সে দো‘আ করে থাকেন।আমার ইচ্ছা, আমি আমার সে দো‘আর অধিকার আখেরাতে আমার উম্মতের শাফা‘আতের জন্য মুলতবি রাখি’  (বুখারী হা/৬৩০৪, ‘দো‘আ সমূহ’অধ্যায়, অনুচেছদ-১)।
(৩) কোন পীর-ওলী পরকালে শাফা‘আতের অধিকার রাখবেন না।

Source:https://quraneralo.net/stories-from-hadith-3/
7
ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, রামাদানে নবীজি (সাঃ) খুব বেশি পরিমাণে ইবাদাত করতেন। সালাত, সাদাকা, যিকির, তিলাওয়াত, ইতিকাফ ও অন্যান্য ইবাদাতে সর্বোচ্চ সময় দিতেন। প্রতি রাতেই জিবরীল আলাইহিস সালাম-কে কুরআন শােনাতেন। নিজেও তার তিলাওয়াত শুনতেন। সব সময়ই অকাতরে দান করতেন। তবে জিবরীল আলাইহিস সালাম-এর সাক্ষাতের সময় হলে বদান্যতায় রহমতের বায়ুকেও ছাড়িয়ে যেতেন তিনি। তার এই অনন্য দান ও বদান্যতা সম্পর্কে একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে— তিনি সব সময়ই ছিলেন সর্বাপেক্ষা অধিক দানশীল। তবে রামাদানে বদান্যতায় তিনি নিজেকেও ছাড়িয়ে যেতেন। [1]

এছাড়াও নবীজি (সাঃ) ও অন্যান্য মাসের তুলনায় রামাদানকে অধিক গুরুত্ব দিতেন। এ মাসটিকে শুধুই ইবাদাতের জন্য বরাদ্দ রাখতেন। অনেক সময় ইফতার-সাহরী না খেয়ে একটানা সিয়াম পালন করতেন। রাত-দিন একাকার করে মহান আল্লাহর ইবাদাতে নিমগ্ন থাকতেন। তবে সাহাবীদের এভাবে সিয়াম পালন করতে বারণ করতেন।

সাহাবীগণ নিবেদন করতেন, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি যে একনাগাড়ে সিয়াম পালন করেন? তিনি বলতেন, “আমি তাে তােমাদের মতাে নই। আমি যখন আমার রবের উদ্দেশ্যে রাত্রিযাপন করি তখন তিনিই আমার পানাহারের [2] ব্যবস্থা করেন। [3]

উল্লেখ্য যে, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) যখন লাগাতার সিয়াম পালন করতেন তখন তার সামনে সৃষ্টির নিগূঢ় রহস্য উদঘাটিত হতাে, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার নতুন নতুন দুআর উন্মােচিত হতাে, রিসালাতের আলােক-ঝরনায় তার জ্ঞানসত্তা আলােকিত হতাে। এবং নবুওয়াতের অমিয় সুধায় তার ব্যক্তিসত্তা পরিতৃপ্ত হতাে। উপযুক্ত হাদীসে এই পরিতৃপ্তিকেই পানাহার বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। অবশ্য এর পেছনে যৌক্তিক কারণও আছে। কেননা, অব্যাহত সিয়ামের মধ্য দিয়ে নবী (সাঃ) মহান রবের নিকট-সান্নিধ্য অনুভব করতেন। প্রেমাস্পদের স্মরণে হৃদয় জুড়াতেন। তখন সঙ্গত কারণেই পার্থিব জগৎ ও পানাহারের কথা বেমালুম ভুলে যেতেন।

নবীজি (সাঃ) ছিলেন সবচেয়ে বড় আবিদ—তিনি সর্বদা মহান আল্লাহর ইবাদাত করতেন। তাঁর স্মরণে চিত্ত ও জিহ্বা সিক্ত রাখতেন। রামাদানকে সালাত, সিয়াম, যিকির, তিলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদাতের ভর মৌসুম মনে করতেন। রাতভর সালাতে দাঁড়িয়ে মহান রবের সাথে অন্তরাত্মার সম্পর্ক স্থাপনে মনােযােগি হতেন। নিবেদিত প্রাণ হয়ে তাঁর কাছে দয়া, অনুগ্রহ, সাহায্য, সফলতা ও বিজয়ের মিনতি জানাতেন। লম্বা লম্বা সূরা পড়তেন। রুকু-সিজদায় দীর্ঘসময় কাটিয়ে দিতেন। এরপরও তাঁর হৃদয়ে ইবাদাতের প্রতি এক প্রকার ক্ষুধা ও অতৃপ্তি কাজ করত।

নৈশকালীন ইবাদাত ছিল তাঁর চোখের শীতলতা, বুকের বল এবং জীবনের একমাত্র অবলম্বন। মহান আল্লাহ তাকে সম্বােধন করে বলেন— হে বস্ত্রাবৃত, আপনি রাতজেগে সালাত আদায় করুন—তবে কিছুঅংশ ব্যতীত [4]

আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ আদায় করুন। এটা আপনার অতিরিক্ত দায়িত্ব।শীঘ্রই আপনার পালনকর্তা আপনাকে উন্নীত করবেন প্রশংসিত স্থানে। [5]

আর দিনের বেলায় নবীজি (সাঃ) দাওয়াত, জিহাদ, আত্মশুদ্ধি, নসীহত, ফতােয়াপ্রদান ও মানুষের সমস্যা সমাধানে ব্যস্ত থাকতেন।

রামাদানে নবীজির কতিপয় সুন্নাহ

> নবীজি (সাঃ) সরাসরি চাঁদ না দেখে অথবা নির্ভরযােগ্য কারও সাক্ষ্য না পেলে রামাদানের সিয়াম পালন শুরু করতেন না।

> নবীজি (সাঃ) সাহরী খেতে পছন্দ করতেন। অন্যদেরও সাহরী খেতে উৎসাহিত করতেন। আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে বর্ণিত একটি হাদীসে তিনি বলেন— তােমরা সাহরী খাও; কারণ, তাতে বিরাট বরকত রয়েছে। [6]

সাহরীর সময় অত্যন্ত বরকতময়। কেননা, রাতের শেষ তৃতীয়াংশ দুআ ও ইস্তিগফারের সময়; অধিকন্তু এসময়ে মহান আল্লাহ নিকটতম আসমানে অবতরণ করেন। বান্দাদের ডেকে ডেকে তাদের প্রয়ােজন জিজ্ঞেস করেন এবং প্রয়ােজনপূরণের আশ্বাস দেন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে— রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করে। [7]

মহান আল্লাহ আরও বলেন— তারা ধৈর্যধারণকারী, সত্যবাদী, নির্দেশ সম্পাদনকারী, সৎপথে ব্যয়কারী এবং শেষরাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী। [8]

এছাড়াও সাহরী সিয়ামপালনে অত্যন্ত সহায়ক। এর দ্বারা শারীরিক ও আত্মিক শক্তি লাভ করা যায়; অধিকন্তু এতে আল্লাহপ্রদত্ত নিয়ামত তাঁরই ইবাদাতের কাজে ব্যয়িত হয়।

> নবীজি (সাঃ) সূর্যাস্তের পর দ্রুত ইফতারে করতেন। সূর্যাস্ত নিশ্চিত হওয়ার পর অন্যদেরও দ্রুত ইফতারে উৎসাহিত করতেন। তাজা বা শুকনাে খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করতেন। খেজুর না পেলে পানি দিয়ে। কারণ, খালি পেটে মিষ্টিদ্রব্য পাকস্থলীর জন্য অত্যন্ত উপকারী। সুতরাং, সিয়াম পালনের পর সারা দিনের ক্ষুধা নিবারণে উত্তম খাবার হচ্ছে খেজুর ও মিষ্টিদ্রব্য।

> ইফতারের পূর্বমুহূর্তে নবীজি (সাঃ) দুআয় মগ্ন হতেন। সহীহ সূত্রে আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেন — তিন ব্যক্তির দুআ বৃথা যায় না—এক. ন্যায়পরায়ণ বাদশার দুআ। দুই. ইফতারের সময় সিয়াম পালনকারীর দুআ। তিন. মাযলুম তথা নির্যাতিত ব্যক্তির দুআ। এই দুআ সরাসরি আসমানে পৌঁছে যায়। এর জন্য আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং মহান আল্লাহ অভয় দিয়ে বলেন, আমার বড়ত্বের কসম, আমি অবশ্যই তােমাকে সাহায্য করব—যদিও একটু বিলম্ব হয়। [9]

হাদীসে আরও এসেছে — ইফতারের পূর্বমুহূর্তে সিয়াম পালনকারীর দুআ ব্যর্থ হয় না। [10]

উল্লেখ্য যে, ইফতারের সময় নবীজি (সাঃ) দুনিয়া ও আখিরাতের সার্বিক কল্যাণ ও সফলতার জন্য দুআ করতেন।

> নবীজি (সাঃ) মাগরীবের সালাত আদায়ের পূর্বেই ইফতার করতেন। তিনি বলেন — যখন পূর্বদিক হতে সূর্য উদিত হয়ে পশ্চিম দিগন্তে অস্ত যায়, তখনই সিয়াম পালনকারীর ইফতারের সময়। [11]

> রামাদান মাসে সফর অবস্থায় নবীজি (সাঃ) কখনাে সিয়াম রাখতেন, আবার কখনাে বিরত থাকতেন। সফর অবস্থায় সাহাবীদেরও তিনি সিয়াম রাখা ও না রাখার ইচ্ছাধিকার দিয়েছেন। [12]

> সিয়াম পালন অবস্থায় শত্রুর মুখােমুখি হতে হলে নবীজি (সাঃ) সবাইকে সিয়াম ভেঙে ফেলার আদেশ করতেন। কারণ, যুদ্ধের ময়দানে আত্মিক ও সামরিক শক্তির পাশাপাশি শারীরিক শক্তিও প্রয়ােজন। [13]

উল্লেখ্য যে, রামাদান মাসে নবীজি (সাঃ) ছােট-বড় বেশ কয়েকটি যুদ্ধাভিযান পরিচালনা করেছেন। তবে সিয়াম ভঙ্গ করেছেন মাত্র দুটি যুদ্ধে। উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে ইমাম তিরমিযী ও ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ এমনটিই বর্ণনা করেছেন। রামাদানে পরিচালিত যুদ্ধের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য হচ্ছে বদর-যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আল্লাহ তাকে অভূতপূর্ব বিজয় দান করেন—যা ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

কতটুকু দূরত্বের সফরে বের হলে সিয়াম ভঙ্গ করা যাবে, তার সুস্পষ্ট বর্ণনা সরাসরি রাসূল (সাঃ) -এর পক্ষ থেকে পাওয়া যায় না। তবে প্রসিদ্ধ মতানুসারে যে-ব্যক্তি ৪৮ মাইল তথা ৭৭ কিলােমিটার ভ্রমণের উদ্দেশ্যে নিজের বাসস্থান ত্যাগ করে, তার জন্য সিয়াম ভঙ্গ করার এবং না রাখার অনুমতি রয়েছে। তবে কষ্ট সহনীয় পর্যায়ের হলে সিয়াম পালন করাই উত্তম। [14]

> রামাদান মাসে গােসল ফরয অবস্থায় যদি সুবহে সাদিক হয়ে যেত, তবে রাসূল (সাঃ) গােসল করে সিয়াম পালন শুরু করতেন। সিয়াম অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করার বর্ণনাও পাওয়া যায়। তবে আমাদের জন্য এমনটি না করাই শ্রেয়। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের মতাে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি আমাদের নেই। সিয়াম অবস্থায় গড়গড়া করে কুলি করা যেমন অনুচিত এবং সিয়ামের জন্য ক্ষতিকর, তদ্রুপ স্ত্রীকে চুম্বন করাও অনুচিত এবং ক্ষতিকর। [15]

> কোনাে ব্যক্তি সিয়াম অবস্থায় ভুলক্রমে পানাহার করলে নবীজি (সাঃ) তার ওপর কাযার বিধান দেননি। কেউ এমনটা করলে তিনি বলতেন, তাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে পানাহার করানাে হয়েছে। [16]

সিয়াম ভঙ্গের কারণ হিসেবে হাদীসে সরাসরি যে-সমস্ত বিষয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়, সেগুলাে হলাে-খাওয়া, পান করা এবং হিজামা [16] ও বমি করা। এছাড়া পবিত্র কুরআনে স্ত্রী সহবাসকেও সিয়াম ভঙ্গের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

> রামাদানের শেষ দশকে নবীজি (সাঃ) ইতিকাফ করতেন। [17] দুনিয়ার যাবতীয় ব্যস্ততা থেকে মুক্ত হয়ে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর হাতে সঁপে দিতেন। অন্তরচক্ষু দিয়ে উধ্বলােক পরিদর্শন করতেন। এজন্য রামাদানের শেষ দশকে তিনি মানুষের সাক্ষাৎ একেবারেই কমিয়ে দিতেন। রবের প্রতি একাগ্রতা ও আত্মনিবেদন বাড়িয়ে দিতেন। কায়মনােবাক্যে তাঁর দরবারে মিনতি জানাতেন। মানুষের হিদায়াতের জন্য দুআ করতেন। একমনে তাঁর নাম ও গুণাবলির ধ্যান করতেন। সৃষ্টিজগতের অনন্য নিদর্শন নিয়ে গভীর চিন্তায় নিমগ্ন হতেন। বিধাতার অপরূপ সৃষ্টি-কুশলতায় হারিয়ে যেতেন।

এককথায়, নবীজি মহান আল্লাহর সম্যক পরিচয় লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। হৃদয়ের গভীরে সর্বোচ্চ মাত্রায় ইলমের নূর ধারণ করেছিলেন এবং মরিচীকাময় এই দুনিয়ার তুচ্ছতা পরিপূর্ণরূপে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। এজন্য তিনি আল্লাহকে সর্বাধিক ভয় করতেন। তাঁর ওপর সর্বাপেক্ষা বেশি ভরসা করতেন এবং তাঁর জন্য সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করতেন।


Source:https://quraneralo.net/nobijir-siam-palon/
8
রমাদান মাস আল্লাহ তা‘আলা এক বিশেষ নিয়ামাত। সাওয়াব অর্জন করার মৌসুম। এ মাসেই কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, রহমাত, বরকত ও নাজাতের মাস-রমাদান মাস। আলকুরআনে এসেছে: ‘‘রমাদান মাস, যার মধ্যে কুরআন নাযিল করা হয়েছে লোকদের পথ প্রদর্শক এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনারূপে এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে’’ [সূরা আলবাকারাহ : ১৮৫]

রমাদান মাসের ফযিলাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘রমাদান- বরকতময় মাস তোমাদের দুয়ারে উপস্থিত হয়েছে। পুরো মাস রোযা পালন আল্লাহ তোমাদের জন্য ফরয করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। দুষ্ট শয়তানদের এ মাসে শৃংখলাবদ্ধ করে দেয়া হয়। এ মাসে আল্লাহ কর্তৃক একটি রাত প্রদত্ত হয়েছে, যা হাজার মাস থেকে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল, সে বঞ্চিত হল (মহা কল্যাণ হতে)’’ [সুনান আত-তিরমিযি: ৬৮৩]

এ মাসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে, যেগুলো পালন করার মাধ্যমে আমরা জান্নাতে যেতে পারি, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে পারি। নিম্নে রমাদান মাসের আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
তবে এ আমলগুলো করার জন্য শর্ত হলো:

এক:- ইখলাস অর্থাৎ ‘‘একনিষ্ঠতার সাথে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যে আমল করা। সুতরাং যে আমল হবে টাকা উপার্জনের জন্য, নেতৃত্ব অর্জনের জন্য ও সুনাম-খ্যাতি অর্জনের জন্যে সে আমলে ইখলাস থাকবে না অর্থাৎ এসব ইবাদাত বা নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হবে না বরং তা ছোট শির্কে রূপান্তরিত হতে পারে। আল-কুরআনে এসেছে: “আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ‘ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে” [সূরা আল-বাইয়্যেনাহ : ৫]

দুই:- ইবাদাতের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ। সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে সকল ইবাদাতের কথা উল্লেখ আছে সেগুলো পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো বাড়ানো বা কমানোর সুযোগ নেই। কারণ, ইবাদাত হচ্ছে তাই যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়ে দিয়েছেন। কুরআনে এসেছে:‘এবং রাসূল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও’ [সূরা হাশর: ৭]

এ বিষয়ে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে এমন ইবাদত করল যাতে আমাদের কোন নির্দেশনা নেই তা পরিত্যাজ্য হিসাবে গণ্য হবে’’। [সহীহ মুসলিম : ৪৫৯০]
রমাদান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো হলো:-

[১] সিয়াম পালন করা:  ইসলামের পাঁচটি রুকনের একটি রুকন হল সিয়াম। আর রমাদান মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ। সেজন্য রমাদান মাসের প্রধান আমল হলো সুন্নাহ মোতাবেক সিয়াম পালন করা। মহান আল্লাহ বলেন: “সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে, মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে” [সূরা আল-বাকারাহ : ১৮৫]

সিয়াম পালনের ফযিলাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ইখলাস নিয়ে অর্থাৎ একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য রমাদানে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’’ [সহীহ বুখারী : ২০১৪]

‘‘যে কেউ আল্লাহর রাস্তায় (অর্থাৎ শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশী করার জন্য) একদিন সিয়াম পালন করবে, তাদ্বারা আল্লাহ তাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে সত্তর বছরের রাস্তা পরিমাণ দূরবর্তীস্থানে রাখবেন’’। [সহীহ মুসলিম : ২৭৬৭]

[২] সময় মত সালাত আদায় করা: সিয়াম পালনের সাথে সাথে সময় মত নামায আদায় করার মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হয়। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে: ‘নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয।’ [সূরা নিসা : ১০৩]

এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে:আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! কোন আমল জান্নাতের অতি নিকটবর্তী? তিনি বললেন, সময় মত নামায আদায় করা। [সহীহ মুসলিম : ২৬৩]

[৩] সহীহভাবে কুরআন শেখা: রমাদান মাসে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। এ মাসের অন্যতম আমল হলো সহীহভাবে কুরআন শেখা। আর কুরআন শিক্ষা করা ফরয করা হয়েছে। কেননা কুরআনে বলা হয়েছে:‘‘পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন’’ [সূরা আলাক : ১]

 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন শেখার নির্দেশ দিয়ে বলেন:‘‘তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তিলাওয়াত কর’’ [মুসনাদ আলজামি : ৯৮৯০]

 [৪] অপরকে কুরআন পড়া শেখানো: রমাদান মাস অপরকে কুরআন শেখানোর উত্তম সময়। এ মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সাহাবীদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতেন। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই, যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়’’ [সহীহ আল-বুখারী : ৫০২৭]

‘যে আল্লাহর কিতাব থেকে একটি আয়াত শিক্ষা দিবে, যত তিলাওয়াত হবে তার সাওয়াব সে পাবে’ [সহীহ কুনুযুস সুন্নাহ আন-নবুবিয়্যাহ : ০৭]

[৫] সাহরী খাওয়া: সাহরী খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে এবং সিয়াম পালনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাদীসে এসেছে: ‘‘সাহরী হল বরকতময় খাবার। তাই কখনো সাহরী খাওয়া বাদ দিয়ো না। এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরী খেয়ে নাও। কেননা সাহরীর খাবার গ্রহণকারীকে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর ফেরেশতারা স্মরণ করে থাকেন’’ [মুসনাদ আহমাদ : ১১১০১, সহীহ]

[৬] সালাতুত তারাবীহ পড়া: সালাতুত তারাবীহ পড়া এ মাসের অন্যতম আমল। তারাবীহ পড়ার সময় তার হক আদায় করতে হবে। হাদীসে এসেছে: ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব হাসিলের আশায় রমাদানে কিয়ামু রমাদান (সালাতুত তারাবীহ) আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’ [সহীহ আল-বুখারী : ২০০৯]

তারাবীহ এর সালাত তার হক আদায় করে অর্থাৎ ধীরস্থীরভাবে আদায় করতে হবে। তারাবীহ জামায়াতের সাথে আদায় করা সুন্নাহ এর অন্তর্ভুক্ত। হাদীসে আছে: ‘‘যে ব্যক্তি ইমামের সাথে প্রস্থান করা অবধি সালাত আদায় করবে (সালাতুত তারাবীহ) তাকে পুরো রাত কিয়ামুল লাইলের সাওয়াব দান করা হবে’’ [সুনান আবূ দাউদ : ১৩৭৭, সহীহ]
তারাবীর রাকাত সংখ্যা নিয়ে বিস্তারিত জানতে এই লিংক গুলো দেখতে পারেন:

[৭] বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা: এটি কুরআনের মাস। তাই এ মাসে অন্যতম কাজ হলো বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ’’ [সুনান আত-তিরমিযী: ২৯১০, সহীহ]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাদান ব্যতীত কোন মাসে এত বেশি তিলাওয়াত করতেন না। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘‘রমাদান ব্যতীত অন্য কোনো রাত্রিতে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করতে, কিংবা ভোর অবধি সালাতে কাটিয়ে দিতে অথবা পূর্ণ মাস রোযা পালন করে কাটিয়ে দিতে দেখি নি’’ [সহীহ মুসলিম : ১৭৭৩]

 [৮] শুকরিয়া আদায় করা: রমাদান মাস পাওয়া এক বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। সেজন্য আল্লাহ তা‘আলার বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা এবং আগামী রমাদান পাওয়ার জন্য তাওফীক কামনা করা। রমাদান সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে: ‘‘আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।’’ [সূরা আলবাকারাহ : ১৮৫]

‘‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আজাব বড় কঠিন’।’’ [সূরা ইবরাহীম : ৭]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ামাতের শুকরিয়া আদায় করে বলতেন অর্থাৎ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য [সুনান আত-তিরমিযী : ২৭৩৮]

[৯] কল্যাণকর কাজ বেশি বেশি করা: এ মাসটিতে একটি ভাল কাজ অন্য মাসের চেয়ে অনেক বেশি উত্তম। সেজন্য যথাসম্ভব বেশি বেশি ভাল কাজ করতে হবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘এ মাসের প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে আহবান করতে থাকে যে, হে কল্যাণের অনুসন্ধানকারী তুমি আরো অগ্রসর হও! হে অসৎ কাজের পথিক, তোমরা অন্যায় পথে চলা বন্ধ কর। (তুমি কি জান?) এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তায়ালা কত লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন’’ [সুনান আত-তিরমিযী : ৬৮৪]

 [১০] সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়া: রমাদান মাস ছাড়াও সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়ার মধ্যে বিরাট সাওয়াব এবং মর্যাদা রয়েছে। রমাদানের কারণে আরো বেশি ফজিলত রয়েছে। যেহেতু সাহরী খাওয়ার জন্য উঠতে হয় সেজন্য রমাদান মাসে সালাতুত তাহাজ্জুদ আদায় করার বিশেষ সুযোগও রয়েছে। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাতের সালাত অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সালাত’’ [সহীহ মুসলিম : ২৮১২]

[১১] বেশি বেশি দান-সদাকাহ করা: এ মাসে বেশি বেশি দান-সাদাকাহ করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। ইয়াতীম, বিধবা ও গরীব মিসকীনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ও বেশি বেশি দান খয়রাত করা। হিসাব করে এ মাসে যাকাত দেয়া উত্তম। কেননা রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে বেশি বেশি দান খয়রাত করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল আর রমাদানে তাঁর এ দানশীলতা আরো বেড়ে যেত’’ [সহীহ আল-বুখারী : ১৯০২]

[১২] উত্তম চরিত্র গঠনের অনুশীলন করা: রমাদান মাস নিজকে গঠনের মাস। এ মাসে এমন প্রশিক্ষণ নিতে হবে যার মাধ্যমে বাকি মাসগুলো এভাবেই পরিচালিত হয়। কাজেই এ সময় আমাদেরকে সুন্দর চরিত্র গঠনের অনুশীলন করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোযা রাখে, সে যেন তখন অশস্নীল কাজ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। রোযা রাখা অবস্থায় কেউ যদি তার সাথে গালাগালি ও মারামারি করতে আসে সে যেন বলে, আমি রোযাদার’’ [সহীহ মুসলিম : ১১৫১]

[১৩] ই‘তিকাফ করা: ই‘তিকাফ অর্থ অবস্থান করা। অর্থাৎ মানুষদের থেকে পৃথক হয়ে সালাত, সিয়াম, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া, ইসতিগফার ও অন্যান্য ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার সান্নিধ্যে একাকী কিছু সময় যাপন করা। এ ইবাদাতের এত মর্যাদা যে, প্রত্যেক রমাদানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাদানের শেষ দশ দিন নিজে এবং তাঁর সাহাবীগণ ই‘তিকাফ করতেন। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: ‘‘প্রত্যেক রমাযানেই তিনি শেষ দশ দিন ই‘তিকাফ করতেন। কিন্তু জীবনের শেষ রমযানে তিনি ইতিকাফ করেছিলেন বিশ দিন’’ । দশ দিন ই‘তেকাফ করা সুন্নাত। [সহীহ আলবুখারী : ২০৪৪]

[১৪] দাওয়াতে দ্বীনের কাজ করা: রমাদান মাস হচ্ছে দ্বীনের দাওয়াতের সর্বোত্তম মাস। আর মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকাও উত্তম কাজ। এজন্য এ মাসে মানুষকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসার জন্য আলোচনা করা, কুরআন ও হাদীসের দারস প্রদান, বই বিতরণ, কুরআন বিতরণ ইত্যাদি কাজ বেশি বেশি করা। আলকুরআনের ঘোষণা : ‘‘ঐ ব্যক্তির চাইতে উত্তম কথা আর কার হতে পারে যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, নেক আমল করলো এবং ঘোষণা করলো, আমি একজন মুসলিম’’ [সূরা হা-মীম সাজদাহ : ৩৩]

হাদীসে এসেছে:‘‘ভাল কাজের পথ প্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারী অনুরূপ সাওয়াব পাবে’’ [সুনান আত-তিরমীযি : ২৬৭০]

 [১৫] সামর্থ্য থাকলে উমরা পালন করা: এ মাসে একটি উমরা করলে একটি হাজ্জ আদায়ের সমান সাওয়াব হয়। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘রমাদান মাসে উমরা করা আমার সাথে হাজ্জ আদায় করার সমতুল্য’’ [সহীহ আলবুখারী : ১৮৬৩]

[১৬] লাইলাতুল কদর তালাশ করা: রমাদান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আল-কুরআনের ঘোষণা: ‘‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম’’ [সূরা কদর : ৪]

হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াব পাওয়ার আশায় ইবাদাত করবে তাকে পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’’ [সহীহ আল-বুখারী : ৩৫]

এ রাত পাওয়াটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। এক হাদীসে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য সময়ের তুলনায় রমদানের শেষ দশ দিনে অধিক হারে পরিশ্রম করতেন’’ [সহীহ মুসলিম : ১১৭৫]

 লাইলাতুল কদরের দো‘আ: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, হে আল্লাহর নবী ! যদি আমি লাইলাতুল কদর পেয়ে যাই তবে কি বলব ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বলবেঃ ‘‘হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।’’ [সুনান আত-তিরমিযী : ৩৫১৩]

[১৭] বেশি বেশি দো‘আ ও কান্নাকাটি করা: দো‘আ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। এজন্য এ মাসে বেশি বেশি দো‘আ করা ও আল্লাহর নিকট বেশি বেশি কান্নাকাটি করা। হাদীসে এসেছে: ‘‘ইফতারের মূহূর্তে আল্লাহ রাববুল আলামীন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়াটি রমাদানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে’’ [আল জামিউস সাগীর : ৩৯৩৩]

অন্য হাদীসে এসেছে: ‘‘রমযানের প্রতি দিবসে ও রাতে আল্লাহ তা‘আলা অনেককে মুক্ত করে দেন। প্রতি রাতে ও দিবসে প্রতি মুসলিমের দো‘আ কবূল করা হয়’’ [সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব : ১০০২]

 [১৮] ইফতার করা: সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা বিরাট ফজিলাতপূর্ণ আমল। কোন বিলম্ব না করা । কেননা হাদীসে এসেছে: ‘‘যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করবে, সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে, খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা পানি হলো অধিক পবিত্র ’’ [সুনান আবু দাউদ : ২৩৫৭, সহীহ]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন : “পিপাসা নিবারিত হল, শিরা উপশিরা সিক্ত হল এবং আল্লাহর ইচ্ছায় পুরস্কারও নির্ধারিত হল।” [সুনান আবূ-দাউদ: ২৩৫৯, সহীহ]

অপর বর্ণনায় যে এসেছে- “হে আল্লাহ! তোমার জন্য রোযা রেখেছি, আর তোমারই রিযিক দ্বারা ইফতার করছি।” এর সনদ দুর্বল। আমাদের উচিত সহীহ হাদীসের উপর আমল করা। [সুনান আবু দাউদ :২৩৫৮]

 [১৯] ইফতার করানো: অপরকে ইফতার করানো একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। প্রতিদিন কমপক্ষে একজনকে ইফতার করানোর চেষ্টা করা দরকার। কেননা হাদীসে এসেছে: ‘‘যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে তার সমপরিমাণ সাওয়াব লাভ করবে, তাদের উভয়ের সাওয়াব হতে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না’’ [সুনান ইবন মাজাহ : ১৭৪৬, সহীহ]

 [২০] তাওবাহ ও ইস্তেগফার করা: তাওবাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ ফিরে আসা, গুনাহের কাজ আর না করার সিদ্ধান্ত নেয়া। এ মাস তাওবাহ করার উত্তম সময়। আর তাওবাহ করলে আল্লাহ খুশী হন। আল-কুরআনে এসেছে: ‘‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, খাটি তাওবা; আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত’’ [সূরা আত-তাহরীম : ৮]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘হে মানবসকল! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবাহ এবং ক্ষমা প্রার্থনা কর, আর আমি দিনে তাঁর নিকট একশত বারের বেশি তাওবাহ করে থাকি’’ [সহীহ মুসলিম : ৭০৩৪]

 তবে তাওবাহ ও ইস্তেগফারের জন্য উত্তম হচ্ছে, মন থেকে সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার পড়া, আর তা হচ্ছে ‘‘হে আল্লাহ, তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া প্রকৃত এবাদতের যোগ্য কেউ নাই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ, আর আমি তোমার গোলাম আর আমি সাধ্যমত তোমার সাথে কৃত অঙ্গীকারের উপর অবিচল রয়েছি। আমার কৃত-কর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমাকে যত নেয়ামত দিয়েছে সেগুলোর স্বীকৃতি প্রদান করছি। যত অপরাধ করেছি সেগুলোও স্বীকার করছি। অত:এব, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারণ, তুমি ছাড়া ক্ষমা করার কেউ নেই।’’

ফযিলাত: ‘‘যে কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে দিনের বেলা এই দু‘আটি (সাইয়েদুল ইসতিগফার) পাঠ করবে ঐ দিন সন্ধ্যা হওয়ার আগে মৃত্যু বরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে এবং যে কেউ ইয়াকিনের সাথে রাত্রিতে পাঠ করবে ঐ রাত্রিতে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে।’’ [সহীহ আল-বুখারী : ৬৩০৬]

 [২১] তাকওয়া অর্জন করা: তাকওয়া এমন একটি গুণ, যা বান্দাহকে আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় পাপকাজ থেকে বিরত রাখে এবং তাঁর আদেশ মানতে বাধ্য করে। আর রমাদান মাস তাকওয়া নামক গুণটি অর্জন করার এক বিশেষ মৌসুম। কুরআনে এসেছে: ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা এর মাধ্যমে তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো’’ [সূরা আলবাকারাহ : ১৮৩]

যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। [সূরা তালাক : ০২]

 [২২] ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা:ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা। এটি একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি ফজর জামাআত আদায় করার পর সূর্য উদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করবে, অতঃপর দুই রাকাআত সালাত আদায় করবে, সে পরিপূর্ণ হাজ্জ ও উমারাহ করার প্রতিদান পাবে। [সুনান আত-তিরমিযী : ৫৮৬]

 [২৩] ফিতরাহ দেয়া: এ মাসে সিয়ামের ত্রুটি-বিচ্যুতি পূরণার্থে ফিতরাহ দেয়া আবশ্যক। ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের সালাত আদায়ের পুর্বে ফিতরাহ আদায় করার আদেশ দিলেন। [সহীহ আল-বুখারী :১৫০৩]

 [২৪] অপরকে খাদ্য খাওয়ানো: রমাদান মাসে লোকদের খাওয়ানো, বিশেষ করে সিয়াম পালনকারী গরীব, অসহায়কে খাদ্য খাওয়ানো বিরাট সাওয়াবের কাজ । কুরআনে এসেছে: তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীকে খাদ্য দান করে। [সূরা আদ-দাহর: ৮]

এ বিষয়ে হাদীসে বলা হয়েছে: ‘‘আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, একজন লোক এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইসলামে উত্তম কাজ কোনটি? তিনি বললেন, অন্যদেরকে খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়া’’ [সহীহ আল-বুখারী : ১২]

অপর বর্ণনায় বর্ণিত আছে যে :‘‘যে কোনো মুমিন কোনো ক্ষুধার্ত মুমিনকে খাওয়াবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। [বাইহাকী, শু‘আবুল ইমান : ৩০৯৮, হাসান]

 [২৫] আত্মীয়তার সম্পর্ক উন্নীত করা: আত্মীয়তার সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর তা রক্ষা করাও একটি ইবাদাত। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘‘আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চাও। আরও তাকওয়া অবলম্বন কর রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক। [সূরা আন-নিসা: ১]

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:“সালাম বিমিয়ের মাধ্যমে হলেও আত্নীয়তার সম্পর্ক তরতাজা রাখ।” [সহীহ কুনুযুস সুন্নাহ আন-নবওয়িয়্যাহ : ১৩]

 [২৬] কুরআন মুখস্থ বা হিফয করা: কুরআন হিফয করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা নিজেই কুরআন হিফযের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি এ দায়িত্ব মূলত বান্দাদেরকে কুরআন হিফয করানোর মাধ্যমেই সম্পাদন করেন। কুরআনে এসেছে: ‘‘নিশ্চয় আমি কুরআন নাযিল করেছি, আর আমিই তার হিফাযতকারী’’ [সূরা আল-হিজর: ৯]

যে যত বেশি অংশ হিফয করতে পারবে তা তার জন্য ততই উত্তম।আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘‘কুরআনের ধারক-বাহককে বলা হবে কুরআন পড়ে যাও, আর উপরে উঠতে থাক, ধীর-স্থিরভাবে তারতীলের সাথে পাঠ কর, যেমন দুনিয়াতে তারতীলের সাথে পাঠ করতে। কেননা জান্নাতে তোমার অবস্থান সেখানেই হবে, যেখানে তোমার আয়াত পড়া শেষ হবে” [সুনান আত-তিরমিযী : ২৯১৪]

[২৭] আল্লাহর যিকর করা: এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘আল্লাহ তা’আলা চারটি বাক্যকে বিশেষভাবে নির্বাচিত করেছেন, তাহলো যে ব্যক্তি পড়বে, তার জন্য দশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি  পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি  পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে পড়বে, তার জন্য ত্রিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর ত্রিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়’’। [মুসনাদ আহমাদ : ১১৩৪৫]

[২৮] মিসওয়াক করা: মেসওয়াকের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। হাদীসে এসেছে: অর্থাৎ মেসওয়াক মুখের জন্য পবিত্রকারী, এবং রবের সন্তুষ্টি আনয়নকারী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা রেখেও মেসওয়াক করতেন বলে বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়। [সহীহ ইবন খুযাইমাহ : ১৩৫]

 [২৯] একজন অপরজনকে কুরআন শুনানো: রমাদান মাসে একজন অপরজনকে কুরআন শুনানো একটি উত্তম আমল। এটিকে দাওর বলা হয়। ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে: জিবরাইল আলাইহিস সালাম রমাদানের প্রতি রাতে রমাদানের শেষ পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং রাসূল তাকে কুরআন শোনাতেন। [সহীহ আল-বুখারী : ১৯০২]

ইবনে হাজার রাহেমাহুল্লাহ্ বলেন : জিবরাইল প্রতি বছর রাসূলের সাথে সাক্ষাৎ করে এক রমযান হতে অন্য রমযান অবধি যা নাযিল হয়েছে, তা শোনাতেন এবং শুনতেন। যে বছর রাসূলের অন্তর্ধান হয়, সে বছর তিনি দু বার শোনান ও শোনেন ।

[৩০] কুরআন বুঝা ও আমল করা: কুরআনের এ মাসে কুরআন বুঝা ও আমল করা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। কুরআন অনুযায়ী নিজের জীবনকে গড়ে তোলা। এ বিষয়ে কুরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে: ‘তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর’। [সূরা আল-আ‘রাফ : ৩]

কুরআনের জ্ঞানে পারদর্শী আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: ‘আমরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে কুরআনের দশটি আয়াত শিক্ষা গ্রহণ করতাম, এরপর ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা পরবর্তী দশটি আয়াত শিক্ষা করতাম না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা এই দশ আয়াতের ইলম ও আমল শিখতাম’ [শরহে মুশকিলুল আছার : ১৪৫০]
যা করণীয় নয়:

রমাদান মাসের ফজিলত হাসিল করার জন্য এমন কিছু কাজ রয়েছে যা থেকে বিরত থাকা দরকার, সেগুলো নিম্নে উপস্থাপন করা হলো :

1. বিলম্বে ইফতার করা
2. সাহরী না খাওয়া
3. শেষের দশ দিন কেনা কাটায় ব্যস্ত থাকা
4. মিথ্যা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা
5. অপচয় ও অপব্যয় করা
6. তিলাওয়াতের হক আদায় না করে কুরআন খতম করা
7. জামা‘আতের সাথে ফরয সালাত আদায়ে অলসতা করা
8. বেশি বেশি খাওয়া
9. রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদাত করা
10. বেশি বেশি ঘুমানো
11. সংকট তৈরি করা জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধির জন্য
12. অশ্লীল ছবি, নাটক দেখা
13. বেহুদা কাজে রাত জাগরণ করা
14. বিদ‘আত করা
15. দুনিয়াবী ব্যস্ততায় মগ্ন থাকা

রমাদান মাস পাওয়ার মত সৌভাগ্যের বিষয় আর কী হতে পারে! আমরা যদি এ মাসের প্রতিটি আমল সুন্নাহ পদ্ধতিতে করতে পারি তবেই আমাদের রমাদান পাওয়া সার্থক হবে।কেননা হাদীসে এসেছে: ‘‘যে ব্যক্তি রমাদান মাস পেলো অথচ তার গুনাহ মাফ করাতে পারল না সে ধ্বংস হোক।’’ [শারহুস সুন্নাহ : ৬৮৯] আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে রমাদান মাসের ফজিলত হাসিল করার তাওফীক দিন।
আমীন!

Source:https://quraneralo.net/30-amal-for-ramadan/
9
Department of Innovation & Entrepreneurship / Better Entrepreneurs
« Last post by Mushahid on March 16, 2024, 08:22:58 PM »

A better entrepreneurial mindset encompasses a range of attitudes, behaviors, and characteristics that enable individuals to navigate the challenges and opportunities of entrepreneurship effectively. Here are some key aspects of a better entrepreneurial mindset:

Creativity and Innovation: Entrepreneurs with a better mindset are creative thinkers who constantly seek innovative solutions to problems. They are not afraid to challenge the status quo and think outside the box to identify new opportunities for growth and improvement.

Resilience and Persistence: Building a successful business requires resilience and persistence in the face of setbacks, failures, and obstacles. Entrepreneurs with a better mindset maintain a positive attitude, learn from setbacks, and persevere through challenges with determination and resilience.

Adaptability and Flexibility: The business landscape is constantly evolving, and entrepreneurs must be adaptable and flexible to navigate changing market conditions, customer preferences, and technological advancements. A better entrepreneurial mindset embraces change, welcomes uncertainty, and adjusts strategies and plans accordingly.

Risk-taking and Courage: Entrepreneurship inherently involves taking risks, whether it's launching a new product, entering a new market, or making strategic decisions. Entrepreneurs with a better mindset are willing to take calculated risks, step outside their comfort zone, and embrace uncertainty with courage and confidence.

Vision and Goal-setting: Successful entrepreneurs have a clear vision of what they want to achieve and set ambitious yet achievable goals to turn their vision into reality. A better entrepreneurial mindset involves setting specific, measurable, and actionable goals and creating a roadmap to work towards them with purpose and determination.

Customer Focus: Entrepreneurs with a better mindset prioritize understanding and serving the needs of their customers. They listen actively to customer feedback, seek to understand their pain points and preferences, and continuously strive to deliver value and exceed customer expectations.

Resourcefulness and Creativity: Startups often face resource constraints, requiring entrepreneurs to be resourceful and creative in finding solutions with limited resources. A better entrepreneurial mindset involves thinking creatively, leveraging existing resources effectively, and finding innovative ways to overcome challenges.

Continuous Learning and Growth: Entrepreneurship is a journey of continuous learning and growth, requiring entrepreneurs to constantly acquire new knowledge, skills, and insights. A better entrepreneurial mindset embraces lifelong learning, seeks feedback and mentorship, and actively invests in personal and professional development.

Emotional Intelligence and Empathy: Effective entrepreneurship involves building relationships, inspiring teams, and understanding the emotions and motivations of oneself and others. Entrepreneurs with a better mindset demonstrate emotional intelligence, empathy, and strong interpersonal skills to connect with others, build trust, and foster collaboration.

Purpose and Impact: Beyond financial success, entrepreneurs with a better mindset are driven by a sense of purpose and a desire to make a positive impact on society. They align their business goals with their values, prioritize sustainability and social responsibility, and seek to create meaningful change in the world.
10
Department of Innovation & Entrepreneurship / Innovation For Better Future
« Last post by Mushahid on March 16, 2024, 08:20:20 PM »
"Innovation For Better Future" encapsulates the idea of harnessing human creativity and technological advancements to address global challenges and create a more sustainable, prosperous, and equitable world. Here are some key ways in which innovation can contribute to a better future:

Solving Complex Problems: Innovation enables us to tackle complex societal, environmental, and economic challenges, such as climate change, poverty, healthcare access, and resource scarcity. By developing new technologies, processes, and solutions, we can find more efficient and effective ways to address these issues.

Improving Quality of Life: Innovation has the potential to enhance the quality of life for people around the world by improving healthcare outcomes, providing access to clean water and sanitation, enhancing education opportunities, and creating safer and more sustainable communities.

Fostering Economic Growth: Innovation drives economic growth by stimulating entrepreneurship, creating new industries and jobs, and increasing productivity and competitiveness. It spurs investment, fosters creativity, and unlocks new sources of value and wealth creation.

Promoting Environmental Sustainability: Innovation plays a crucial role in advancing environmental sustainability by developing clean technologies, renewable energy sources, and sustainable production and consumption practices. It enables us to mitigate climate change, protect biodiversity, and conserve natural resources for future generations.

Empowering Individuals and Communities: Innovation empowers individuals and communities by providing access to information, resources, and opportunities. It democratizes knowledge, promotes inclusivity, and enables participation in decision-making processes, fostering social justice and equity.

Driving Technological Advancement: Innovation drives continuous technological advancement, leading to breakthroughs in areas such as artificial intelligence, biotechnology, nanotechnology, and quantum computing. These advancements have the potential to revolutionize industries, transform societies, and reshape the way we live and work.

Catalyzing Collaboration and Partnerships: Innovation thrives in environments that encourage collaboration and partnerships across sectors, disciplines, and geographical boundaries. By fostering open innovation ecosystems, we can leverage diverse perspectives, expertise, and resources to address complex challenges more effectively.

Promoting Ethical and Responsible Innovation: Innovation must be guided by ethical principles and considerations to ensure that its benefits are shared equitably and that potential risks and unintended consequences are minimized. Responsible innovation prioritizes the well-being of people and the planet, upholds human rights, and fosters transparency and accountability.

Encouraging Lifelong Learning and Adaptability: In a rapidly changing world, innovation encourages a culture of lifelong learning and adaptability, where individuals continuously acquire new skills, knowledge, and competencies to stay relevant and thrive in evolving industries and environments.

Inspiring Hope and Aspiration: Innovation inspires hope and aspiration by demonstrating humanity's capacity to overcome challenges, push boundaries, and create a brighter future. It ignites curiosity, imagination, and optimism, motivating individuals and societies to pursue bold ideas and ambitious goals.

By embracing innovation as a driving force for positive change, we can collectively work towards building a better future for all, guided by principles of sustainability, inclusivity, and shared prosperity.
Pages: [1] 2 3 ... 10