Daffodil International University

Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Allah: My belief => Topic started by: Mrs.Anjuara Khanom on March 24, 2019, 06:00:12 PM

Title: হে আল্লাহ আমাদের বিনয়ী বানিয়ে দিন
Post by: Mrs.Anjuara Khanom on March 24, 2019, 06:00:12 PM
ঘরে-বাইরে সর্বত্র আজ বিনয়ের অভাব। দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে মানবিকতা। আমরা অনেক কিছু শিখছি, কিন্তু মানুষ হওয়ার দীক্ষা নিচ্ছি না। সত্য মেনে নেওয়াকে আজ পরাজয় মনে করা হয়।
যার গলা যত উঁচু, তাকেই বড় বীর ভাবে মানুষ। আমরা এটা ভুলে গেছি যে, মুসলমান হিসেবে এসব আমাদের আচরণ হতে পারে না। স্বার্থবিহীন উদার ও লৌকিকতামুক্ত অকৃত্রিম বিনয় এবং সবার সঙ্গে মার্জিত ব্যবহার করা ইসলামের প্রথম শিক্ষা। কারণ এমন গুণাবলি দিয়েই আল্লাহ সর্বপ্রথম নবীদের সুশোভিত করেছেন। তারপর দায়িত্ব দিয়েছেন নবুয়তের। মানুষকে কাছে টানার জন্য নবীদের হতে বলেছেন বিনয়ী ও কোমল ব্যক্তিত্বের অধিকারী। আল্লাহ বলেন, ‘আপনি আপনার অনুসারী মুমিনদের জন্য নিজেকে কোমল রাখুন। ’ সূরা শুয়ারা, আয়াত ২১৫। আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আপনি যদি কঠোর হতেন তবে মানুষ আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যেত। আপনি তাদের ক্ষমা করুন এবং তাদের জন্য আমার কাছে ক্ষমা চান। আর তাদের সঙ্গে পরামর্শ করুন। ’ সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৫৯। বিনয়ের অর্থ হচ্ছে সত্যকে দ্বিধাহীন চিত্তে মেনে নেওয়া। এর আরেকটি অর্থ নিজেকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে না করা। হজরত হাসান বসরি (রহ.) বলেছেন, ‘নিজের ঘর থেকে বের হওয়ার পর যে কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তাকে নিজের চেয়ে ভালো মনে করার নামই হলো বিনয়। ’ ইয়াজ (রা.) বর্ণনা করেছেন, একদিন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বললেন, ‘আল্লাহ আমার কাছে নির্দেশনা পাঠিয়েছেন যাতে তোমরা বিনয়ী হও। একে অন্যের ওপর গর্ব না কর এবং রাগও না কর। ’ মুসলিম। হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম বলতেন, এ পৃথিবীতে যারা বিনয়ীর জীবনযাপন করবে, কিয়ামতের মাঠে তাদের জন্য কতই না আনন্দ অপেক্ষা করছে। তারা সেদিন আসনে বসে থাকবে। যারা আজ মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলিয়ে তাদের মিলিয়ে দেয়, তারাই তো সর্বোচ্চ জান্নাত ফিরদাউসের প্রকৃত মালিক হবে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর জন্য যে যত বেশি  নিচু হবে, নিজেকে বিনয়ী করবে, আল্লাহ তাকে তত বেশি বড় করবেন। অর্থাৎ মানুষের কাছে সম্মানিত করবেন। ’ আহমদ। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘দানসদকায় কখনো সম্পদ কমে না, এতে আল্লাহ দাতার সম্মান বাড়িয়ে দেন। আর যে আল্লাহর জন্য বিনয়ী হবে, তার সম্মান আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ’ মুসলিম। এমন লোকদের প্রশংসা করে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আর পরম দয়াময়ের বান্দারা তো নম্র হয়ে হাঁটাচলা করে এবং কোনো মূর্খের সঙ্গে দেখা হলে সালাম দিয়ে চলে যায়। ’ সূরা ফুরকান, আয়াত ৬৩। এখানে ওখানে বাগ্বিতণ্ডা কিংবা কারও সঙ্গে রেগে যাওয়া তাদের স্বভাব নয়। আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন, ‘এই জান্নাত তো তাদের জন্য তৈরি করে রেখেছি যারা পৃথিবীতে অনেক সম্মান ও বড়ত্বের জন্য লোলুপ ছিল না। ছিল বিনয়ী এবং কোমল। তারা সেখানে হাঙ্গামা করত না। শুভ পরিণাম তো মুত্তাকিদের জন্যই। ’ সূরা কাসাস, আয়াত ৮৩। ইবনে মাজাহ থেকে বর্ণিত হাদিসে জানা যায়, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে দাঁড়িয়ে ঠকঠক করে কাঁপছিল এক গ্রাম্য বেদুইন। সে ভাবছিল, কত প্রতাপশালী শাসক না জানি আবদুল্লাহর ছেলে মুহাম্মদ। প্রিয় নবী তাকে অভয় দিয়ে বললেন, ‘তুমি শান্ত হও। আমি কোরাইশ বংশের এক সাধারণ মহিলার সন্তান, যে মহিলা রোদে শুকানো মাংসের টুকরা খেয়ে দিন কাটাতেন। ’

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।