Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - dulal.lib

Pages: 1 [2] 3
16
Thank you.... for sharing this valuable information.

17
জেলায় জেলায় মডেল লাইব্রেরি এখন আমাদের সময়ের দাবি।।

18
দেশের পর্যটনশিল্পের হালহকিকত নিয়ে পরিচালিত জরিপের ফল প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। কোথাও ঘুরতে গিয়ে যাঁরা এক রাতের বেশি সময় বাইরে কাটিয়েছেন, জরিপে তাঁদেরই পর্যটক হিসেবে ধরেছে বিবিএস। ‘ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট’ শীর্ষক জরিপটিতে দেশে পর্যটকের সংখ্যা ও ভ্রমণ ব্যয়ের পরিমাণ, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) পর্যটন খাতের অবদান ইত্যাদি সম্পর্কে যেমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, তেমনই কোন কোন স্থানে মানুষ বেশি ঘোরেন, তারও তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে শুধু ভ্রমণের উদ্দেশ্যেই পর্যটকেরা গেছেন এমন ২৪টি স্থানের তালিকা রয়েছে। ছবির গল্পে থাকল প্রথম ১০টি জনপ্রিয় পর্যটনস্থানের কথা।

১০. বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা, ঢাকা
বনের বাঘ-সিংহ খাঁচায় এসে পেয়েছে বাহারি নাম। বেঙ্গল টাইগার দম্পতির নাম যেমন টগর আর বেলি, তেমনি ফাল্গুনী নামটি জলহস্তীর। তাদের দেখতেই বছরজুড়ে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে থাকে রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানায়। দুটি লেকসহ ১৮৬ একরের এই চিড়িয়াখানায় শতাধিক প্রজাতির প্রায় ৩ হাজার পশুপাখি আছে। করোনা সংক্রমণের আগে প্রতিদিন গড়ে দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল ১২ হাজারের মতো।

৯. সুন্দরবন
সুন্দরবনের সৌন্দর্য দেশের প্রকৃতি ও প্রাণীপ্রেমী মানুষকে সব সময় আকর্ষণ করে। তাই সমুদ্রের তীরবর্তী ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন দেখতে দেশের আনাচকানাচ থেকে পর্যটকেরা ছুটে যান।

৮. রাঙামাটি
রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ, ঝুলন্ত সেতু, রাজবন বিহারসহ জেলা সদরের বিভিন্ন পর্যটনস্থানে বছরজুড়েই পর্যটকেরা ভ্রমণ করেন।

৭. বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ
বাংলাদেশের লোকশিল্পের সংরক্ষণ, বিকাশ ও সর্বসাধারণের মধ্যে লোকশিল্পের গৌরবময় দিক তুলে ধরার জন্য ১৯৭৫ সালে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের উদ্যোগে সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে সরকার। এখানে সংরক্ষিত রয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কারুশিল্পীদের হাতে তৈরি ঐতিহ্যবাহী প্রায় পাঁচ হাজার নিদর্শন।

৬. সাজেক উপত্যকা, রাঙামাটি
সাজেক উপত্যকার অবস্থান রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় হলেও যেতে হয় খাগড়াছড়ি হয়ে। পাহাড়ের চূড়ায় সাদা মেঘের আনাগোনা সাজেককে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। পর্যটকদের জন্য এখানে শতাধিক রিসোর্ট ও কটেজ গড়ে উঠেছে।

৫. বান্দরবান
মেঘ জমে থাকা পাহাড়চূড়া আর ঝুরি ঝরনার প্রশান্ত সৌন্দর্যে ডুব দিতে বান্দরবানে যান পর্যটকেরা। এখানকার নীলাচল থেকে নীলগিরি, মেঘলা থেকে মিরিঞ্জা পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান।

৪. শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার
শ্রীমঙ্গলে সবুজ চা-বাগানের পাশাপাশি অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান যেমন আছে, তেমনি পাঁচ তারকা হোটেলসহ গড়ে উঠেছে অসংখ্য মানসম্পন্ন রিসোর্ট। বছরজুড়ে পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় থাকা শ্রীমঙ্গল জনপ্রিয়তায় চতুর্থ।

৩. কুয়াকাটা, পটুয়াখালী
একই স্থান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগের বিরল সমুদ্রসৈকত পটুয়াখালীর কুয়াকাটা। পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় জায়গাটি তিন নম্বরে রয়েছে।

২. পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম
সাগরের বুকে অস্তমিত সূর্যের ম্রিয়মাণ আলোর রূপ দেখতে কিংবা বিশুদ্ধ বাতাসে বুক ভরে শ্বাস নিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকে ছুটে যান চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে। সৈকতের পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় সৌন্দর্যবর্ধনের কারণে বেড়েছে পর্যটকও।

১. কক্সবাজার
দেশের পর্যটকদের মধ্যে সর্বাধিক মানুষ ভ্রমণ করেন কক্সবাজারে। কক্সবাজারকে এ কারণে ‘পর্যটন রাজধানী’ও বলা হয়। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের নোনাজলে পা ভেজাতে বছরজুড়েই পর্যটকদের আনাগোনা। টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কও অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষদের পছন্দের জায়গা। এ ছাড়া কক্সবাজারে আছে নানা পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র।

আরও যেসব জায়গায় বেশি যান মানুষজন
মেহেরপুরের মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ, কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন ও সিলেটের জাফলং, কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় অবস্থিত বাউলসম্রাট ফকির লালন শাহের মাজার, ঢাকার লালবাগ কেল্লা, দিনাজপুরের কান্তজিউ মন্দির, বগুড়ার মহাস্থানগড়, খাগড়াছড়ি, নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, সিলেটের সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর উপজেলার লালাখাল, সাভারের জাতীয়  স্মৃতিসৌধ, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রাতারগুল ও বিছনাকান্দি, বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ।

19
মুঠোফোনের ইন্টারনেট ডেটা প্যাক শেয়ার করার সুযোগ আছে অ্যান্ড্রয়েডে। সে ক্ষেত্রে স্মার্টফোনটিকে ওয়াই-ফাই হটস্পট বানানো হয়। আর অন্যান্য ডিভাইস যেমন মুঠোফোন, ট্যাব বা কম্পিউটার সেই হটস্পটের মাধ্যমে ইন্টারনেটে যুক্ত হতে পারে।

অর্থাৎ মুঠোফোনের থ্রি-জি বা ফোর-জি ডেটা প্যাক ওয়াই-ফাই সংযোগ হিসেবে শেয়ার করা যায় অন্যান্য ডিভাইসে। অনেক ফোনেই অবশ্য ওয়াই–ফাইয়ের পাশাপাশি ব্লুটুথ বা ইউএসবির মাধ্যমেও ইন্টারনেট ডেটা শেয়ার করা যায়।

যেভাবে হটস্পট চালু করবেন:
পর্দার ওপরের দিক থেকে সোয়াইপ করে নামালে শর্টকাট মেনু দেখাবে। সেখান থেকে হটস্পটে ট্যাপ করুন। আর ‘হটস্পট’না পেলে পেনসিল আইকন অর্থাৎ এডিট অপশনে ট্যাপ করে কুইক সেটিংসে হটস্পট আনতে পারবেন।
প্রথমবার ব্যবহারের আগে হটস্পট সেটআপ করে নিন। যথারীতি ওপর থেকে সোয়াইপ করে নিচে নামিয়ে হটস্পট আইকন কিছুক্ষণ হোল্ড করে থাকুন। এতে হটস্পট মেনু দেখাবে। মোর সেটিংস অপশনে ট্যাপ করে সেটআপ ওয়াই-ফাই হটস্পট নির্বাচন করুন। এবার নেটওয়ার্কের নাম দিন।

সিকিউরিটিতে ‘নান’ নির্বাচন করে দিলে হটস্পটে যুক্ত হতে কোনো পাসওয়ার্ড লাগবে না। আর ‘ডব্লিউপিএ২ পিএসকে’ নির্বাচন করলে হটস্পটে যুক্ত হওয়ার সময় পাসওয়ার্ড চাইবে। নিচের অংশে সেই পাসওয়ার্ড দিতে হবে। নিরাপত্তার জন্য সব সময় পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে বলা হয়। কিছু ক্ষেত্রে ব্যান্ড নির্বাচন করতে হতে পারে। বহুল ব্যবহৃত ২.৪ গিগাহার্টজ ব্যান্ড নির্বাচন করে দিতে পারেন। এরপর সেভ করুন।

যেভাবে হটস্পটে অন্যান্য ডিভাইস যুক্ত করবেন:
ওয়াই-ফাইয়ে যেভাবে যুক্ত হয়, ঠিক সেভাবেই যুক্ত করতে হবে। যে ডিভাইস থেকে যুক্ত হতে চান, সেটির ওয়াই–ফাই চালু করুন। এরপর হটস্পটের নাম নির্বাচন করুন, পাসওয়ার্ড দিন এবং ‘কানেক্ট’ করুন।

ইউএসবি কেব্‌লের মাধ্যমে ইন্টারনেট শেয়ার:
ইউএসবি কেব্‌লের মাধ্যমে অ্যান্ড্রয়েড ফোন থেকে অ্যাপলের ম্যাক কম্পিউটারে ইন্টারনেট শেয়ার করা যায় না। তবে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমচালিত কম্পিউটারে শেয়ার করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনটি ইউএসবি কেব্‌লের মাধ্যমে কম্পিউটারে যুক্ত করুন। মুঠোফোনে নোটিফিকেশন পাওয়ার কথা।

আগের মতোই ওপর থেকে সোয়াইপ করে নিচে নামিয়ে হটস্পট আইকন হোল্ড করে রাখুন কিছুক্ষণ। এরপর মোর সেটিংস থেকে ইউএসবি থেটারিং সচল করে দিন।

20
এই যা, এল বুঝি বৃষ্টি। এখন আবহাওয়াটা এমনই। এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে মহামারিকালের বিধিনিষেধ। বৃষ্টি নিয়ে আছে রোমান্টিসিজম, আবার সেই মুদ্রার উল্টো পাশে রয়েছে বিরক্তিও। বিশেষ করে যাদের ওপর কাপড় ধুয়ে শুকানোর দায়িত্ব পড়েছে। কেননা, বৃষ্টি কেবল ছাদ বা বারান্দার গাছগুলোকেই নয়, ভিজিয়ে দিচ্ছে শুকাতে দেওয়া কাপড়গুলোকেও। কিন্তু কাপড় তো কাচতেই হবে। কেচে শুকাতেও হবে। আর মহামারিকালে তা আরও বেশি অপরিহার্য।
অন্য সময় হলে দু–চার দিন জমিয়ে রেখে একবারে দুই বালতি কাপড় কাচলেও বিশেষ অসুবিধা ছিল না। কিন্তু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য, জীবাণুমুক্ত জীবনের জন্য এই বর্ষায় কাপড় ফেলে রাখার উপায় নেই। বাইরে থেকে এসেই সেটি ভিজিয়ে দিতে হবে ডিজারজেন্ট মেশানো পানিতে। তারপর কেচে সেটা শুকাতেও হবে। এই এক সমস্যা। তবে সমস্যা যেখানে আছে, তার আশপাশে একটু খোঁজাখুঁজি করলে সমাধান মশাইয়ের সঙ্গেও দেখা মিলবে। জেনে নেওয়া যাক বর্ষায় কাপড় শুকানোর ১০টি টিপস।

১. চুপুচুপি একটা আইডিয়া দিই। কাপড় পরার আগেই ভাবুন, সেই পোশাকটি ধুয়ে শুকানো ঝামেলা কি না। এমন পোশাক পরুন, সেটি ধোয়ার পর সহজেই শুকিয়ে যায়। জর্জেট, সুতি, ঘের বেশি না এমন টপস, শার্ট, পরুন। যেটা সহজেই কেচে শুকিয়ে আবার পরার জন্য তৈরি করা যাবে।

২. কাপড় দীর্ঘ সময় ভেজা থাকলে এর ওপর ফাঙ্গাস জমে। ওদিকে বৃষ্টিতে ভেজা কাপড় ধুয়ে শুকাতে না পারলে তিলা পড়ার ঝুঁকি থাকে। আবার ভেজা কাপড়ে জামা কাটার পোকারাও খুশি হয়, তাদের উপদ্রব বেড়ে যায়। সব মিলিয়ে ভেজা কাপড় শুকানো খুবই জরুরি। সে জন্য কাপড় ধোয়ার পর আগে কিছুক্ষণ ওয়াশরুমের হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখুন। তাতে প্রাথমিকভাবে অতিরিক্ত পানি ঝরে যাবে।

৩. যে বালতিতে আগে কাপড় ধুয়ে রাখবেন, সেখানে আগে একটা তোয়ালে রাখতে পারেন। তাতে ভেজা কাপড়গুলোর বাড়তি পানি তোয়ালেটা শোষণ করে নেবে। আর অন্য কাপড়গুলোর সঙ্গে তোয়ালেটাও শুকিয়ে নেবেন।

৪. বর্ষাকে তো আর কাপড় শুকানোর জন্য ঠেকানো যাবে না। ছাদে বা বারান্দায় কাপড় নাড়া যাবে না। তাই ঘরের এমন একটা জায়গায় কাপড় শুকানোর জন্য বেছে নিন, যেখানে মানুষের চলাচল কম। গেস্টরুম খালি থাকলে সেটিকেই সাময়িকভাবে বানিয়ে নিন কাপড় শুকানোর ঘর।

৫. দড়ি টানিয়ে নিতে পারেন। বাজারে এখন ঘরের ভেতর কাপড় শুকানোর নানা র‍্যাক পাওয়া যায়। সে রকম একটা কিছু কিনে নিতে পারলে আরও ভালো হয়। কেননা, দড়িতে কাপড় ছড়িয়ে দিলে কাপড়গুলোর এক পাশ অন্য পাশের সঙ্গে লেগে থাকে। ফলে কাপড়ের ভেতরে বাতাস চলাচল হয় কম। ফলে কাপড় শুকাতে দেরি হয়। হ্যাঙ্গারের ভেতর দিয়ে বাতাস চলাচল করায় কাপড় দ্রুত শুকায়।

৬. কাপড় নেড়ে ফ্যান ছেড়ে দিন। জানলাগুলো খুলে দিন। যে ঘরে ঘুমাবেন, সেখানে কাপড় না শুকানোই ভালো। তাতে অতিরিক্ত আর্দ্রতায় ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তা ছাড়া ভেজা কাপড়ের আর্দ্রতা থেকে হতে পারে সর্দি-কাশি। তবে যে ঘরে কাপড় শুকাবেন, সেখানে যদি আপনি বাটিতে খানিক লবণ নিয়ে রেখে দেন, তাহলে সেই লবণটুকু আর্দ্রতা শুষে নেবে। ফলে সহজেই কাপড় শুকিয়ে যাবে।

৭. কাপড় তুলে নেওয়ার পর ওই ঘরে একটু দুর্গন্ধ লাগে। সে রকম হলে ধূপ জ্বালিয়ে রেখে দিতে পারেন।

৮. কাপড় বেশিক্ষণ ভেজা থাকলে সেখানে ফাঙ্গাস জমতে পারে। রোদে জামাকাপড় শুকালে সূর্যের তাপে এই জীবাণু মারা যায়। তবে বর্ষাকালে শুকনা কাপড়, এমনকি হালকা ভেজা কাপড়গুলোকেও ইস্তিরি করে ফেললে ভালো হবে। এতে ছত্রাক জমার সম্ভাবনা থাকবে না। আবার কোঁচকানো ভাবটাও চলে যাবে। 

৯. রোদ না পেলে কাপড়ে একটা আর্দ্র গন্ধ থেকে যেতে পারে। সেটি এড়াতে কাপড় কাচার সময় ডিটারজেন্টের সঙ্গে একটু ভিনেগার বা বেকিং সোডা মিশিয়ে দিতে পারেন। চেষ্টা করুন এমন ডিটারজেন্ট ব্যবহার করতে, যাতে লেবু বা গোলাপের এসেন্স রয়েছে। লিকুইড স্যাভলন ব্যবহারেও বাজে গন্ধ হবে না।

১০. কাপড় আলমারি বা ওয়ার্ডরোবে রাখার পর মাঝে মাঝে পাল্লা বা দরজা খোলা রাখলে ভালো হবে। কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে দিন ন্যাপথলিন বা নিমের গুঁড়া।

21
পৃথিবীতে এক দেশ ছিল। ওই দেশে ছিলেন এক কর্মকর্তা। তিনি একবার এক এলাকা থেকে বদলি হয়ে অন্য এলাকায় গেলেন। গিয়েই সহকারীকে আগের কয়েক বছরে কী কী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে, তার একটা রিপোর্ট করার নির্দেশ দিলেন। নির্দেশমতো তদন্ত করে যথাসময়ে প্রতিবেদন পেশ করলেন সহকারী।

কর্মকর্তা ঘেঁটে দেখলেন, এলাকায় পানির সমস্যা নিরসনে একটি প্রশস্ত দিঘি খনন করার বাজেট দেওয়া হয়েছিল এবং রিপোর্টে উল্লেখ আছে, দিঘিটা যথাসময়ে খনন করা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা দাঁড়াল, যখন অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তিনি রিপোর্টে উল্লিখিত জায়গায় কোনো দিঘি পেলেন না।

কর্মকর্তার আর বুঝতে বাকি রইল না আসলে কী ঘটেছে। তিনিও এর সুযোগ নিলেন; ওপরের মহলে রিপোর্ট করলেন যে এই এলাকার মানুষ দিঘি থেকে পানি পান করে বলে এখানে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি, তাই অচিরেই যেন এই দিঘি ভরাট করে এখানে নলকূপ স্থাপনের বাজেট দেওয়া হয়।

যথাসময়ে বাজেট মিলল এবং ‘না কাটা’ দিঘি ভরাট হয়ে গেল; সেই সঙ্গে ওই কর্মকর্তা ও তাঁর সহযোগীদের পকেটও ভরল। তারপর সবাই সুখে–শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।


22
সমগ্র মানবজাতিকে মোটামুটি দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এক. যাঁরা ভুলোমনা। দুই. যাঁরা পাসওয়ার্ড ভুলোমনা। দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষেরা দুনিয়ার ৮৭ লাখ প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর খোঁজ রাখেন। কেবল ছয় অক্ষরের পাসওয়ার্ড ছয় চেষ্টার কমে মনে করতে পারেন না। সেই মহামানবদের উদ্দেশে এই দুই লাইনের নিবেদন।
পাসওয়ার্ড ভুলে যাওয়া কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা না। হয়তো সে কারণেই প্রায় সব ওয়েবসাইটে হারানো পাসওয়ার্ড পুনরুদ্ধারের সুবিধা থাকে। তা ছাড়া ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা দিন দিন যত বাড়ছে, তত বেশি পাসওয়ার্ড মনে রাখার ঝামেলা যুক্ত হচ্ছে। কারণ, এক ওয়েবসাইট বা অ্যাপের পাসওয়ার্ড দ্বিতীয় কোথাও যে ব্যবহার করা যাবে না, সে বিষয়ে মোটামুটি দুনিয়ার সব নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ একমত। এ সমস্যার একটি ভালো সমাধান হলো পাসওয়ার্ড ম্যানেজার সেবা ব্যবহার করা।

পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের কাজ হলো, আপনার হয়ে আপনার সব পাসওয়ার্ড মনে রাখবে। সেটা কম্পিউটারে হোক বা স্মার্টফোনে। প্রয়োজনে ওয়েব সেবার জন্য শক্তপোক্ত পাসওয়ার্ড প্রস্তাব করবে। পাসওয়ার্ড ম্যানেজার খুলতে হয় ‘মাস্টার পাসওয়ার্ড’ ব্যবহার করে। অর্থাৎ, একটি পাসওয়ার্ড মনে রাখলেই হলো, বাকিগুলো মনে রাখার ভার সফটওয়্যারের ওপর চাপানো যেতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, সে ভার চাপিয়ে নির্ভার হওয়া যাবে কি না। অর্থাৎ, পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের ওপর ভরসা করা উচিত হবে কি না।

এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নেই। তবে যথেষ্ট নিরাপত্তাব্যবস্থা মেনেই সফটওয়্যারগুলো তৈরি করা হয়, নিয়মিত নিরাপত্তা হালনাগাদের ব্যবস্থাও আছে। তবু জনপ্রিয়গুলোর বাইরে কোনো পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করা মোটেই উচিত হবে না। এখানে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা দেওয়ার চেষ্টা করা হলো। মোটামুটি সব পাসওয়ার্ড ম্যানেজার অর্থ পরিশোধ করে ব্যবহার করতে হয়। তবে ফ্রি সংস্করণ পাওয়া যায়, এমন সেবাগুলোর উল্লেখ করা হলো এখানে।

লাস্টপাস

ওয়েবসাইট: www.lastpass.com

লগ মি ওয়ান্স

ওয়েবসাইট: www.logmeonce.com

বিটওয়ারডেন

ওয়েবসাইট: bitwarden.com

এবার যে সেবা ব্যবহার করতে চান সেটির ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রয়োজন বুঝে কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের জন্য অ্যাপ নামিয়ে নিন।


23
সমাজের আদর্শ মানুষ হিসেবে শিক্ষকদের মর্যাদা অনেক এবং ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই তাদের কথা মেনে চলেন। শিক্ষকরা হলেন সমাজের মগজ। তাই হয়তোবা স্বাধীনতার পূর্ব মুহূর্তে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করার সময় অন্যান্য পেশাজীবীদের সঙ্গে শিক্ষকদেরও হত্যা করা হয়েছিলো।

শিক্ষকরা হলেন পথপ্রদর্শক। দেশের সমাজ, রাজনীতি কোন দিকে প্রবাহিত হবে সেটা উনারাই ঠিক করে দেন। শতশত ছাত্র ছাড়াও সমাজের আপামর জনসাধারণ তাদের আলোয় আলোকিত হন। শিক্ষকরা হলেন আলোর দিশারী। সুলেখক আহমদ ছফা এমনই একজন শিক্ষকের জীবনাচারের কিছু অন্তরঙ্গ প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইটিতে।

অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক সরাসরি লেখকের শিক্ষক ছিলেন না। পিএইচডির গবেষণার জন্য অন্য অনেকের পরামর্শে লেখক অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের কাছে গিয়েছিলেন তার থিসিসের সুপারভাইজার হওয়ার প্রস্তাব নিয়ে। সেই প্রথম পরিচয়। সত্যি বলতে প্রথম সাক্ষাতে রাজ্জাক স্যারকে লেখকের ভালো লাগেনি, তার চাঁচাছোলা ব্যবহারের কারণে।

কিন্তু সময় যতই গড়িয়েছে ঘনিষ্ঠতা ততই বেড়েছে। অবশ্য স্বাভাবিক নিয়মে সম্পর্কের মধ্যে এসেছে টানাপোড়েন এবং সেগুলো তারা অতিক্রমও করেছেন আপন মহিমায়। লেখকের ভাষায়- ‘প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে পরিচিত হওয়া আমার জীবনের অত্যন্ত ঘটনাসমূহের একটি’। লেখকের স্বভাবই এমন একজন মানুষ তিনি যতো বড় ব্যক্তিই হন তার আগ্রহ এবং কৌতূহল উদীপ্ত রাখতে পারেন না। লেখক দীর্ঘ সাতাশ বছর ধরে রাজ্জাক স্যারের সান্নিধ্য লাভ করেছেন, কিন্তু একটি দিনের জন্যও রাজ্জাক স্যার লেখকের কাছে পুরনো হয়ে যাননি।

প্রথম সাক্ষাতেই কোন এক অজানা কারণে লেখককে প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক ‘মৌলবি আহমদ ছফা’ বলে সম্বোধন করেছেন এবং সেটাই থেকে গেছে পরবর্তী দিনগুলোতে। রাজ্জাক স্যারের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে- ‘প্রথমত তার চোখের দৃষ্টি অসাধারণ রকম তীক্ষ্ণ। একেবারে মর্মে গিয়ে বেঁধে। দ্বিতীয়ত ঢাকাইয়া বুলি তিনি অবলীলায় ব্যবহার করেন, তার মুখে শুনলে এই ভাষাটি ভদ্রলোকের ভাষা মনে হয়’। এরপর সময় গড়িয়েছে তার আপন মহিমায় এবং লেখকের সঙ্গে রাজ্জাক স্যারের সম্পর্কও পেয়েছে বিভিন্ন মাত্রা।

রাজ্জাক স্যার সময়ে সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে তার মতামত ব্যক্ত করেছেন, কখনও সেটা লেখকের প্রশ্নের উত্তরে, আবার কখনও নিজে থেকে, আবার কখনও লেখক অন্য কারো সঙ্গে রাজ্জাক স্যারের আলাপের সময় উপস্থিত থেকে সেগুলো শুনেছেন। লেখক যেহেতু সাক্ষাৎকারের ঢংয়ে বইটা লিখেন তাই রাজ্জাক স্যারের কথাগুলো এসেছে স্মৃতিকথা হিসেবে। লেখকের ভাষায়-‘রাজ্জাক স্যারের ওপর কোনকিছু লিখে প্রকাশ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার। এই ঝুঁকি দুদিক থেকেই। রাজ্জাক স্যার নানা স্পর্শকাতর বিষয়ে এমন একতরফা মতামত দিয়ে বসেন, যেটা সমাজের মানুষ বরদাশত করতে অনেক সময়ই প্রস্তুত নয়। অন্যদিকে তার বক্তব্যের উপস্থাপনায় যদি সামান্য হেরফেরও ঘটে যায়, তিনি সেটা সহজভাবে নিতে রাজি হবেন না।’

বইয়ের পরবর্তী পাতাগুলোয় রয়েছে রাজ্জাক স্যারের চরিত্রের বিভিন্ন দিকের আলোকচ্ছটা। মাত্র ১১০ পৃষ্ঠার একটা বই, কিন্তু পড়লে মনে হবে কত না বিচিত্র বিষয়েরই অবতারণা করা হয়েছে এ বইতে। আর পড়া শেষ হলে মনে হবে বইটা কেন আরও বর্ধিত কলেবরের হলো না! বইটাতে বেশিরভাগ সময় রাজ্জাক স্যারের কথা এসেছে। পাশাপাশি লেখকের নিজস্ব কিছু মতামতও এসেছে, কিন্তু খুবই সীমিত আকারে।

রাজ্জাক স্যার কোন দেশের মানুষকে বিচার করার ক্ষেত্রে দুটো বিষয়কে প্রাধান্য দিতে বলেছেন- ‘যখন কোন নতুন জায়গায় যাইবেন, দুইটা বিষয় পয়লা জানার চেষ্টা করবেন। ওই জায়গার মানুষ কী খায় আর পড়ালেখা কী করে। কাঁচাবাজারে যাইবেন, কী খায় এইডা দেখনের লাইগ্যা। আর বইয়ের দোকানে যাইবেন পড়াশোনা কী করে হেইডা জাননের লাইগ্যা।’

কোন বই লেখা এবং পড়ার বিষয়েও রাজ্জাক স্যার দিয়েছেন অভিজ্ঞতালব্ধ মতামত। তার ভাষায়- ‘লেখার ব্যাপারটি অইল পুকুরে ঢিল ছোড়ার মতো ব্যাপার। যতো বড় ঢিল যতো জোরে ছুড়বেন পাঠকের মনে তরঙ্গটাও তত জোরে উঠব এবং অধিকক্ষণ থাকব। আর পড়ার কাজটি অইলো অন্যরকম। আপনে যখন মনে করলেন, কোন বই পইড়্যা ফেলাইলেন, নিজেরে জিগাইবেন যে- বইটা পড়ছেন, নিজের ভাষায় বইটা আবার লিখতে পারবেন কিনা। আপনের ভাষার জোর লেখকের মতো শক্তিশালী না অইতে পারে, আপনার শব্দভাণ্ডার সামান্য অইতে পারে, তথাপি যদি মনে মনে আসল জিনিসটা রিপ্রোডিউস না করবার পারেন, ধইর‍্যা নিবেন, আপনের পড়া অয় নাই।’

বই পড়ার বিষয়ে আরও একটা কথা বলেছেন সেটা হলো- ‘ক্ষেত চষবার সময় জমির আইল বাইন্ধ্যা রাখতে অয়।’ এর মানে হচ্ছে কোন একটা গুরুত্বপূর্ণ বই পড়ার সময় নোট রাখতে হয়। বিশ্বসাহিত্য এবং বাংলা সাহিত্যের কথাও এসেছে আলোচনা প্রসঙ্গে। শেক্সপিয়ারের প্রতিভাকে রাজ্জাক স্যার বলেছেন অঘটনঘটনপটীয়সী প্রতিভা। সেই কারণেই শেক্সপিয়ার ‘মার্চেন্ট অব ভেনিসে’ শাইলকের মাত্র একটা কথা ‘এ জ্যু’স ব্লাড অলসো রেড’ দিয়েই তিনি তামাম ইহুদিদের মনুষ্যসমাজের অংশ বলে প্রমাণ করলেন।

বাংলা সাহিত্যের বিকাশ নিয়ে বলেছেন, ‘আধুনিক বাংলা গদ্যের বিকাশই অইল নাইন্টিন্থ সবচাইতে মূল্যবান অবদান।’ রাজা রামমোহন রায় এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কথাও এসেছে। গৌড়ীয় বাংলা ব্যাকরণকে রামমোহন রায়ের বড় কাজ বলে অভিহিত করেছেন। আর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিষয়ে বলেছেন, ‘এন্টায়ার নাইন্টিন্থ সেঞ্চুরির মধ্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর অইল সর্বাংশে একজন বড় মানুষ। বাইফার হি ইজ দ্য বেস্ট।’ বঙ্কিমের বিষয়ে বলেছেন, ‘বঙ্কিমের একটা ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্স আছিল। তার পড়াশোনা অইছিল মুসলমানের টাকায়। মুহসিন ফান্ডের টাকায় তিনি লেখাপড়া করেছিলেন। মুসলমানের বিরুদ্ধে কলম ধইরা সেই ঋণ শোধ করেছিলেন। একবার রামকৃষ্ণ বঙ্কিমরে দেইখ্যা কইছিলেন, তোমার মনে এতো অহংকার কেন?’

বঙ্কিমের ব্যাপারে স্যারের আরও একটা মূল্যায়ন ছিলো। একটা কবিতা আছে, ‘আমি থাকি ছোট ঘরে বড় মন লয়ে, নিজের দুঃখের অন্ন খাই সুখি হয়ে। বঙ্কিমের ব্যাপারে জিনিসটা অইব একেবারে উল্টা, অর্থাৎ আমি থাকি বড় ঘরে ছোট মন লয়ে।’

রাজ্জাক স্যারের কথায় সমকালীন জীবনযাত্রা থেকে শুরু করে শিল্প-সাহিত্য সবকিছুই উঠে এসেছে। কাজী নজরুল ইসলামের প্রসঙ্গ আসতেই উনি শিশুর মতো উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠতেন। নজরুল প্রসঙ্গে উনি প্রেমেন মিত্তিরের একটা কবিতার লাইন আবৃত্তি করতেন, ‘বজ্র, বিদ্যুৎ আর ফুল এই তিনে নজরুল।’ আবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে বলেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথের প্রতিভা ঠিকই আছিল। বাংলা ভাষাটি ত রবীন্দ্রনাথের হাতেই পুষ্ট অইছে। এক হাতে বিচিত্র বিষয় নিয়ে লিখছেন, এইটাই রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে বড় ক্রেডিট। আদার দ্যান লিটারেরি ট্যালেন্ট অন্যান্য বিষয়ে রবীন্দ্রনাথরে যদি বিদ্যাসাগরের মতো মানুষদের সঙ্গে তুলনা করেন, হি কামস নো হেয়ার নিয়ারার টু দেম।’

রাজ্জাক স্যারের ভাষায়- ‘বড় লেখক আর বড় মানুষ এক নয়’। আর বাংলা ভাষা বিষয়ে স্যারের কথাটা খুবই সহজ, ‘বাংলা ভাষাটা বাঁচাইয়া রাখছে চাষাভুষা, মুটেমজুর- এরা কথা কয় দেইখ্যাই ত কবি কবিতা লিখতে পারে। সংস্কৃত কিংবা ল্যাটিন ভাষায় কেউ কথা কয় না, হের লাইগ্যা যখন সংস্কৃত কিংবা ল্যাটিন ভাষায় সাহিত্য লেখা অয় না।’

শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে রাজ্জাক স্যার বলেন, ‘বেঙ্গলের সবচাইতে মিসফরচুন ব্যাপার অইল, এইখানে সাপোর্টিং কলেজ অওনের আগে য়্যুনিভার্সিটি তৈয়ার অইছে। আর মিডল স্কুল তৈয়ার না কইরা কলেজ বানাইছে। শুরু থেইক্যাই বেঙ্গলের এডুকেশন সিস্টেমটা আছিল টপ হেভি।’ আরও বলেছেন, ‘বাঙালিদের যেরকম ডিগ্রির ক্রেজ, এইডা নতুন কোন কিছু নয়। কলেজ তৈরি করার আগে ইউনিভার্সিটি তৈয়ার করার কারণে এই ক্রেজ জন্মাইছে। বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির বাইরে ইন্ডিয়ার অন্য কোনো অঞ্চলে এই ক্রেজ পাইবেন না।’

বর্তমানে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দিকে তাকালে এ কথাটার মর্মাথ সহজেই অনুভব করা যায়। মিডল স্কুলের সূত্র ধরেই স্যার বলছিলেন, ‘গ্রেট ব্রিটেনে বাজেটে ডিফেন্সের চাইতে এডুকেশনে বেশি অর্থ এলট করা হয়।’ রাজ্জাক স্যার কথা বলেছেন সেক্যুলারিজম নিয়ে। তিনি বলেছেন, ‘ইউরোপীয় রেনেসাঁর আগে খ্রিস্টানজগৎ মনে করত মরণের পরে যে অনন্ত জীবন অপেক্ষা কইরা আছে হেইডা অইল আসল জীবন।...যিশুখ্রিস্ট ত এই নশ্বর দুনিয়াকে ভেল অব টিয়ার্স কইয়া গেছেন।...রেনেসাঁর সময় যখন ধীরে ধীরে জীবনের ডেফিনেশন তৈয়ার অইতেছিল, তখন পুরা দৃষ্টিভঙ্গিটাই পাল্টাইয়া গেল। রেনেসাঁর আগে পরকালটাই আছিল সব। রেনেসাঁর পর এই দুনিয়াটাই সব, পরকাল কিছু না।’

তিনি বলেছেন ইসলাম ধর্ম নিয়েও, ‘ইসলাম ধর্মের সঙ্গে অন্যান্য ধর্মের একটা বড় পার্থক্য এইখানে যে ইসলাম ধর্মেও পরকালের গুরুত্ব স্বীকার করা অইছে, কিন্তু ইহকালের গুরুত্বও অস্বীকার করা অয় নাই। ফিদ্দুনিয়া ওয়াল আখেরাতের কথা ইসলামে যেভাবে বলা অইছে, অন্য কোন ধর্মে সেরকম নাই।...সেক্যুলারাইজেশন ইফেক্ট অব ইসলাম ও ইন্ডিয়া ওয়াজ রিয়্যালি ইনরমাস।’

রাজ্জাক স্যার কথা বলেছেন সমাজতন্ত্র নিয়ে। একবার উনাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, সমাজতন্ত্রের কোন জিনিসটা আপনার ভালো লাগে? উত্তরে একটা গল্পের মাধ্যমে বলেছিলেন, ‘মেহনতি মানুষের ওপর এই যে জাগ্রত সহানুভূতি আমার মনে অইছে এইডাই সমাজতন্ত্রের সবচেয়ে বড় কন্ট্রিবিউশন।’

রাজ্জাক স্যার একটা কথা প্রায়ই বলতেন, ‘আমরা শিক্ষকেরা প্রতিবছরই বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু প্রতিটি নতুন বছরে আমাদের কাছে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এসে হাজির হয়। এই তরুণদের চাহিদা, চাওয়া-পাওয়ার খবর আমাদের মতো লোমচর্মের বৃদ্ধদের জানার কথা না। এটাই হলো শিক্ষক জীবনের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি।’

লেখকের মতে, ‘প্রফেসর রাজ্জাককে যদি একটা মাত্র পরিচয়ে সনাক্ত করতে হয়, আমার ধারণা ‘ঢাকার পোলা’ এর চাইতে অন্য কোন বিশেষণ তার সম্পৰ্কে প্রযোজ্য হতে পারে না।...খাওয়াদাওয়া, রান্নাবান্না, আচার-আচরণের ঢাকাইয়া বৈশিষ্ট্যগুলো প্রফেসর রাজ্জাক এবং তার পরিবার অতি সযত্নে রক্ষা করে আসছেন।...তিনি যখন বাজার করতে যেতেন, সব সময়ে লুঙ্গি-পাঞ্জাবি পড়তেন।...প্রথম দৃষ্টিতেই তাকে একজন মাঠের কৃষক আর কিছুই মনে হওয়ার কথা না।...নিজস্ব সামাজিক অবস্থানের উপর দাঁড়িয়ে এবং নিজের সামাজিক পরিচিতির আদি বৈশিষ্ট্যসমূহ গৌরবের সঙ্গে ধারণ করে একটা বিষদৃষ্টির অধিকারী হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়।’

অধ্যাপক রাজ্জাকের বিষয়ে লেখক লিখেছেন, ‘ইন্টেলেকচুয়াল বিউটি তথা মনীষার কান্তি কি জিনিস আমাদের সমাজে তার সন্ধান সচরাচর পাওয়া যায় না। রাজ্জাক সাহেবের প্রতি প্রাণের গভীরে যে একটা নিষ্কাম টান অনুভব করেছি, ও দিয়েই অনুভব করতে চেষ্টা করি এথেন্স নগরীর তরুণেরা দলে দলে কোন অমৃতের আকর্ষণে সক্রেটিসের কাছে ছুটে যেতো।...তিনি যে প্রজন্মের মানুষ, সেই প্রজন্মকে কতদূর পেছনে ফেলে এসেছেন। পরবর্তী অনেকগুলো প্রজন্মকে বুদ্ধিবৃত্তি এবং মানসকর্ষণের দীক্ষা দিয়েছেন। বলতে গেলে কিছুই না লিখে শুধু সাহচর্য, সংস্পর্শের মাধ্যমে কত কত আকর্ষিত তরুণচিত্তের মধ্যে প্রশ্নশীলতার অঙ্কুর জাগিয়ে তুলেছেন, একথা যখন ভাবি বিস্ময়ে অভিভূত না হয়ে উপায় থাকে না।’

ছোট কলেবরের এ বইটিতে অধ্যাপক রাজ্জাকের একটা অন্তরঙ্গ পরিচয় তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আর সেটা করতে গিয়ে অনেকের নামই এসেছে। বিখ্যাত দাবাড়ু নিয়াজ মোর্শেদ থেকে শুরু করে শিল্পী সুলতান ছাড়াও কাজী মোতাহার হোসেনের মতো মানুষেরাও উঁকি দিয়েছেন ক্ষণিকের জন্য। বইটা যেহেতু লেখা হয়েছে স্মৃতি থেকে তাই ঘটনার বর্ণনায় কিছু অগোছালো ভাব পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু সেটা লেখকের সম্মানবোধ প্রকাশের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি। এছাড়া যদি কোন বিষয়ে অধ্যাপক রাজ্জাকের সঙ্গে লেখকের দ্বিমত হয়েছে সেটাও বলতে লেখক দ্বিধাবোধ করেননি। সে কারণেই বইটা সুপাঠ্য।

24
করোভাইরাস মহামারীতে অনলাইনে যোগাযোগ রক্ষায় অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ভিডিও কনফারেন্স অ্যাপ জুম। এখন প্রতিষ্ঠানটি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে অন্য স্টার্টআপদের জন্য, সেইসঙ্গে সুবিধা তৈরি করে নিচ্ছে নিজের জন্যও।

দশ কোটি ডলারের নতুন তহবিল তৈরি করেছে জুম। যে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলো জুমের প্রযুক্তি অ্যাপে ব্যবহার করবে, সেগুলোতে ওই তহবিল থেকে বিনিয়োগ করবে প্রতিষ্ঠানটি।

মহামারীর এ সময়ে শুধু জুম নয়, প্রতিদ্বন্দ্বী ভিডিও কনফারেন্সিং সেবা নিয়ে মাঠে নেমেছে মাইক্রোসফট ও সিসকোর মতো বড় প্রতিষ্ঠান-ও। মাইক্রোসফটের ভিডিও কনফারেন্সিং সেবার নাম ‘টিমস’, অন্যদিকে সিসকো সিস্টেম ইনকর্পোরেটেডের সেবার নাম ওয়েবেক্স।
জুমের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা কেলি স্টেকেলবার্গ জানিয়েছেন, যারা “জুম অ্যাপস” তৈরি করছেন তাদের প্রতিষ্ঠানে বিশেষ এই তহবিল থেকে বিনিয়োগ করা হবে। এই অর্থের পরিমাণ হতে পারে দুই লাখ ৫০ হাজার ডলার থেকে শুরু করে ২৫ লাখ ডলার পর্যন্ত। যে অ্যাপগুলো প্রতিষ্ঠানের ভিডিও কনফারেন্সিং সফটওয়্যারে নতুন ফিচার হিসেবে যোগ করা যাবে তারাই এই বিনিয়োগের জন্য বিবেচিত হতে পারে।

স্টেকেলবার্গ জানিয়েছেন, জুমের হিসেবের খাতা থেকেই তহবিল পরিচালিত হবে, একক ব্যবসায়িক মূলধন স্বত্ত্বা হিসেবে নয়। ফলে বিনিয়োগ করা প্রতিষ্ঠানের
বোর্ডেও বসবে না জুম।

“এটি প্রাথমিক পর্যায়ে ডেভেলপারদের পেছনে বিনিয়োগ করতে সহায়তা করবে এবং শুরুর দিকেই বাজার আকর্ষণ করতে দেবে।” - বলেছেন স্টেকেলবার্গ।

25
অনলাইন কথোপকথনে অনেকেই এখন গুগল মিট ব্যবহার করছেন। এ সেবাকে আরেকটু সহজ করতে গুগল মিটের সঙ্গে ডটনিউ (.new) লিংক যুক্ত করে দিল প্রতিষ্ঠানটি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গুগল জি স্যুটের ব্যবস্থাপক ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেভিয়ার সলতেরো। তিনি বলেছেন, এখন থেকে মিট ডটনিউ (http://meet.new) লিংকটি কাজ করবে। আপনাদের স্বাগতম।’

কোনো ওয়েব ব্রাউজারে ইংরেজিতে মিট ডটনিউ লিখলে তা শর্টকাট লিংক হিসেবে কাজ করে গুগল মিটে নিয়ে যাবে। জিমেইলে ‘স্টার্ট আ মিটিং’ ক্লিক করলে যে লিংক সৃষ্টি হয়, এটা মূলত সেই লিংক হিসেবেই অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্স করার সুবিধা চালু করবে।

চলতি সপ্তাহে গুগল অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস প্ল্যাটফর্মের জিমেইল অ্যাপে গুগল মিট ভিডিও কল সেবার শর্টকাট যুক্ত করেছে। যাঁরা এখনো এ সুবিধা পাননি, তাঁরা শিগগিরই পেয়ে যাবেন। স্মার্টফোন ব্যবহারকারী এ সুবিধা পাওয়ার পর তাদের জিমেইল অ্যাপে মিট ট্যাব দেখতে পাবেন। ওই ট্যাবের মধ্যে ক্যালেন্ডারে সব গুগল মিট কল কখন কাকে করা হবে, তা তালিকাও পাবেন।

গুগল তাদের ভিডিও কনফারেন্সিং প্ল্যাটফর্মকে আরও সামনে এগিয়ে নিতে এ ধরনের নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করতে কাজ করছে।

গত এপ্রিল মাসে গুগল তাদের মিট সেবাটি সবার জন্য বিনা মূল্যে চালু করার ঘোষণা দেয়। এর আগে সেবাটি গুগল জি স্যুটের অংশ ছিল, যা মূলত ব্যবসায়ীদের জন্য উৎপাদনশীলতার বিভিন্ন সমাধান হিসেবে কাজ করে। গুগল বলেছে, বিনা মূল্যে এক ঘণ্টা কল করার সুযোগ থাকবে। তবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের কোনো বাঁধাধরা নিয়ম থাকছে না বলে জানিয়েছে গুগল।

গুগল মিটের নির্দিষ্ট অ্যাপও রয়েছে, যা প্লে স্টোরে ৫ কোটির বেশি ডাউনলোড হয়েছে।

 Information>Prothomalo>Online News

26
অফিসের চাপ বাড়ি বয়ে আনতে নেই। স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশের একটি পূর্বশর্ত হিসেবেই জানা ছিল এই নিয়ম। মহামারি করোনার কারণে ঘটছে এখন উল্টোটা। বাড়িতে থাকাই এখন স্বাস্থ্যনিরাপত্তার মূলমন্ত্র। এখন অফিস থেকে শুধু চাপ নয়, অনেক কাজও চলে আসছে বাড়িতে। সেই সঙ্গে সভাও সারতে হচ্ছে বাড়ি থেকেই।

তবে বাড়ি থেকে সভায় যোগ দেওয়া হলেও এ সময় আপনার অফিসের ন্যূনতম আদবকেতা বজায় রাখা উচিত। একেবারে বাড়ির আমেজে থাকা ঠিক নয় বলেই জানালেন অ্যাকশন এগেইনস্ট হাঙ্গারের জ্যেষ্ঠ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক তাসনিম ফারজানা।

তাসনিম ফারজানা বলেন, এই পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ মিটিং হচ্ছে অনলাইনে। অফিসে মিটিং হলে অফিসের সময়সূচি মেনে মিটিংয়ের সময় নির্ধারণ করা উচিত। সময়টি একটু আগে থেকেই সবাইকে জানিয়ে রাখলে ভালো। অনলাইন মিটিংয়ের বেলায়ও তাই। আগে থেকেই আলোচ্যসূচি বা বিষয় সম্পর্কে জানিয়ে রাখা উচিত সভায় অংশগ্রহণকারীদের। অংশগ্রহণকারীদের মানসিক প্রস্তুতি সফল মিটিংয়ের জন্য অপরিহার্য বলেই জানা গেল তাঁর কাছ থেকে।

অনলাইন মিটিংয়ে কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়

##যা করবেন

*  পেশাদার আচরণ করুন।

*  মিটিংয়ের আগেই ইন্টারনেট সংযোগ, আপনার যন্ত্রের মাইক্রোফোন, ক্যামেরা সব ঠিক আছে কি না, দেখে নিন।

*  হেডফোন বা এয়ারফোন ব্যবহার করলে অন্যরা আপনার কথা স্পষ্টভাবে শুনতে পাবেন।

*  ফোনের রিংটোন বন্ধ করে রাখুন।

*  নিজে যখন কথা বলছেন না, তখন মাইক্রোফোন নীরব (মিউট) করে রাখুন।

*  কথা বলতে চাইলে প্রথমে হাত তোলা বা নক করার মতো কোনে অপশনের সাহায্য নিন (মিটিংয়ে ব্যবহৃত সফটওয়্যারে এ ধরনের যে অপশন রয়েছে)।

*  ভিডিও কলে মিটিং হলে আপনি ক্যামেরা থেকে কত দূরে বসলে এবং মিটিংয়ের সময় ঘরের আলোর উৎসের কোন দিকে বসলে ঠিকভাবে আপনাকে দেখা যাবে, আগেই ঠিক করে রাখুন।

*  সভা শেষে এর সারসংক্ষেপ (সিদ্ধান্ত, কর্মপরিকল্পনা প্রভৃতি) সবাইকে পাঠিয়ে দেওয়ার রীতিটাও মেনে চলা উচিত।

##যা করবেন না

এমন কোথাও বসে মিটিং করবেন না, যেখানে বিঘ্ন ঘটতে পারে। ঘরের দরজা আটকানো সম্ভব না হলে পরিবারের সবাইকে আগে থেকেই জানিয়ে রাখুন, যাতে সেই সময় সেখানে কেউ না যায় বা আওয়াজ না করে। শিশু ও পোষা প্রাণীদেরও তখন কাছে রাখবেন না।

*  সভা চলাকালে ই–মেইল চেক করা বা অন্য কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

*  অডিও কলে সভা হলেও এমন পোশাক পরবেন না, যা আপনি সহকর্মীর সামনে পরতে অস্বস্তি বোধ করেন, আয়েশি ভঙ্গিতেও থাকবেন না। কারণ, আনুষ্ঠানিক ভঙ্গি মানসিকভাবে আপনাকে একটা ভিত্তি বা উৎসাহ দেবে। তা ছাড়া হঠাৎ ভিডিও চালু (অন) করার প্রয়োজনও হতে পারে।

*  ক্যামেরায় আপনাকে ছাড়া এমন কিছু যাতে দেখা না যায়, যা দৃষ্টিকটু হতে পারে বা অন্যদের মনোযোগ হারানোর কারণ হতে পারে।

Information-Prothomalo.


27
বারবার সতর্ক করা হচ্ছে, বাড়িতে থাকুন। বিনা কাজে, খুব জরুরি না হলে বাড়ির বাইরে বের হবেন না। সেটা কেবল ভাইরাস সংক্রমিত না হওয়ার জন্য। সময়টা ঘরে থাকার, মনকে শক্ত রাখার। এই শক্ত থাকার চেষ্টাকে কিছুটা শাণিত করবে কয়েকটি সিনেমা।

শুরুতেই ধরা যাক ‘ক্যাস্ট অ্যাওয়ে’র কথা। লোকটার তো মরেই যাওয়ার কথা ছিল। বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ভীষণ কঠিন। তবু কিছু অলৌকিক ঘটনা পৃথিবীতেই ঘটে। সে রকমই ঘটেছিল চাক নোল্যান্ড নামের মার্কিন এক কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানির প্রতিনিধির জীবনে। নতুন একটা জীবন পেলে সেটাকে আঁকড়ে ধরতে কিনা করে মানুষ। রবিনসন ক্রুসোর মতো একটা নির্জন দ্বীপে দীর্ঘদিন নিঃসঙ্গ কাটাতে হয়েছিল নোল্যান্ডকে।
করোনাভাইরাসের এই দিনগুলোতে আমাদের প্রত্যেকের ‘ক্যাস্ট অ্যাওয়ে’ সিনেমার নোল্যান্ড হয়ে যেতে হবে, যদি বাঁচতে হয়। কপাল ভালো হলে নোল্যান্ডের মতো নিঃসঙ্গ দ্বীপ থেকে আবার ফিরতে পারব সঙ্গী–সাথি পরিবেষ্টিত জীবনে। আজকের সিনেমাগুলো টিকে থাকার গল্প নিয়ে। সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত হয় ১৯৯৩ সালের ছবি ‘অ্যালাইভ’, ২০১২ সালের ‘কন–টিকি’ এবং ২০১০ সালের ছবি ‘১২৭ আওয়ার্স’। মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসার কাহিনি নিয়ে এ সিনেমাগুলো হয়তো আমাদের মনোবল খানিকটা বাড়িয়ে দিতে পারে। আতঙ্ক থেকে দিতে পারে খানিকটা স্বস্তি। স্বস্তির সবচেয়ে বড় জায়গাটি হচ্ছে, আমাদের থাকতে হচ্ছে না বরফ আচ্ছাদিত কোনো অচেনা জায়গায় বা কোনো জঙ্গলে খাদ্যহীন।

বেঁচে থাকার লড়াইয়ের গল্প নিয়ে ২০১৫ সালে নির্মিত হয় সিনেমা ‘দ্য মার্টেইন’ এবং ২০০৭ সালে ‘আই অ্যাম লিজেন্ড’। যে সিনেমাগুলোর কথা বলা হলো, এগুলোর কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলোর কেউ জঙ্গলে, কেউ মঙ্গলে, কেউ বরফের দেশে, আবার কেউ সাগরের জলে লড়াই করে টিকেছে। এই ছবিগুলো নিঃসন্দেহে মানুষের আত্মবিশ্বাসকে উজ্জীবিত করতে সাহায্য করবে। বাড়ির এফটিপি সার্ভার বা সিনেমার ওয়েব সাইটগুলোতে বিনা মূল্যেই সিনেমাগুলো দেখে নিতে পারবেন যে কেউ। এ ছাড়া রয়েছে নেটফ্লিক্সের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। আর সেসব জায়গা থেকে সংগ্রহ করতে না পারলে শেষ পর্যন্ত আছে বৈধ ডাউনলোডার!

28
কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে অনেক দিনই হয়তো ভেবেছেন, যদি কয়েক দিন ঘরে বসে থাকা যেত! সেই সময় যখন এল, তখন মনে নানা শঙ্কা, অনেক উৎকণ্ঠা। ঘরে আপনি থাকবেন। কারণ, আপনার জীবনটা অনেক মূল্যবান। আপনার এই জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরও অনেক জীবন, আরও অনেক মানুষ।

জর্জ বেইলির কথাই ধরি। ৩৮ বছরের বেইলি নিউইয়র্কে থাকতেন। ১৯৪৫ সালের একদিন তাঁর মনে হলো জীবনটা আসলে অর্থহীন, এই জীবনের কোনো প্রয়োজন নেই। আর তিনি বেঁচে না থাকলে এই দুনিয়ার কোনো ক্ষতি হবে না, কারও কিছুই যায় আসবে না। আসলেই কি তাই? জর্জ বেইলি যদি না জন্মাতেন, তাহলে যেভাবে সব চলেছে, সেভাবেই কি সব চলত?

ঘরে বসে থাকতে থাকতে যাঁদের মন খারাপ, তাঁরা যদি জীবনের মানে বুঝতে চান, তাঁদের জন্য সর্বকালের সেরা সিনেমা ইটস আ ওয়ান্ডারফুল লাইফ। বিশ্বাস করুন, কয়েক শ মোটিভেশনাল স্পিকার আপনাকে যতটা উদ্বুদ্ধ করতে পারবেন, তার চেয়ে অনেক বেশি উদ্বুদ্ধ করবে ১৯৪৬ সালে মুক্তি পাওয়া ফ্রাঙ্ক কাপরার এই সিনেমা। সর্বকালের সেরা ছবির যেকোনো তালিকায় সিনেমাটি থাকবেই।

ইটস আ ওয়ান্ডারফুল লাইফ দিয়েই যদি সিনেমা দেখা শুরু করেন, তাহলে আজ না হয় ক্ল্যাসিক সিনেমার ঘরানার মধ্যেই থাকি।

ম্যাট ড্রেইটন সংবাদপত্রের প্রকাশক। স্ত্রী ক্রিস্টিনাকে নিয়ে সুখী জীবন। তারা উদারমনা মা–বাবা, তাদের একমাত্র মেয়ে গেছে বেড়াতে। ২৩ বছরের জোয়ানা ফিরে এলেন ছেলেবন্ধু নিয়ে। ছেলেবন্ধু বিপত্নীক, বয়স ৩৮। সবচেয়ে বড় কথা, ছেলেবন্ধু ডা. জন প্রেন্টিক একজন আফ্রিকান-আমেরিকান।

সময়টা ১৯৬৭ সাল। সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ রাজ্যে সাদা-কালো বিয়ে ছিল অবৈধ। স্বাভাবিকভাবেই জোয়ানার মা–বাবা হতভম্ব হয় পড়েন। মেয়ে এই ছেলেকেই বিয়ে করবে এবং সে চায় মা–বাবা আশীর্বাদ করুক। কিন্তু জন অন্য রকম। জোয়ানার বাবাকে বলে আসেন, তারা অনুমোদন না দিলে এই বিয়ে হবে না।

স্পেনসার ট্রেসি, ক্যাথরিন হেপবার্ন ও সিডনি পটিয়ার অভিনীত গেজ হু ইজ কামিং টু ডিনার মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬৭ সালে। এ ছবি থেকে ক্যাথরিন হেপবার্ন সেরা অভিনেত্রীর অস্কার জিতেছিলেন। হলিউডে স্পেনসার ট্রেসি ও ক্যাথরিন হেপবার্নের প্রেম ছিল একসময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। ছবিটির শুটিং শেষ হওয়ার ১৭ দিন পর স্পেনসার ট্রেসি মারা যান। শুটিং চলার সময় সবাই জানতেন, এটাই ট্রেসির শেষ ছবি। এমনকি শেষ দৃশ্যে যখন ট্রেসি বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন ক্যাথরিন হেপবার্নের চোখে ছিল টলটলে অশ্রু। মুক্তি পাওয়ার পর ছবিটি কখনোই আর দেখেননি ক্যাথরিন। ঘরে বসে থাকার এই দিনে আপনারাই না হয় দেখে ফেলুন।

এবার আরেক লিজেন্ডের সিনেমা। অন গোল্ডেন পন্ড ১৯৮১ সালের ছবি। ক্যাথরিন হেপবার্ন তো ছিলেনই, সঙ্গে ছিলেন হেনরি ফন্ডা ও জেন ফন্ডা। হেনরি ফন্ডা ও ক্যাথরিন হেপবার্ন—দুজনই এই সিনেমার কারণে সেরা অভিনেতা ও অভিনেত্রীর অস্কার পেয়েছিলেন।

৭০ বছরের নর্মান (হেনরি ফন্ডা) ও ৬০ বছর উত্তীর্ণ ইথেল (ক্যাথরিন হেপবার্ন) প্রতি ছুটিতে গোল্ডেন পন্ড নামের এক লেকের পাশে কিছুদিন থাকেন। কিছুদিন পর নর্মানের ৭০তম জন্মদিন। তাদের একমাত্র মেয়ে চেলসি (জেন ফন্ডা) এসেছেন, সঙ্গে নতুন ছেলেবন্ধু বিল। বাবা ও মেয়ের সম্পর্ক উষ্ণ নয়। এটি মূলত বাবা ও মেয়ের সম্পর্কের ছবি।

যেমনটি দেখানো হয়েছে, বাস্তবেও বাবা-মেয়ের সম্পর্ক সে রকমই ছিল। বলে রাখি, সিনেমায় হেনরি ফন্ডা যে টুপি পরেছিলেন, সেটি আসলে স্পেনসার ট্রেসির। অনেকটাই ভিন্ন স্বাদের এই সিনেমা আপনাকে নতুন কিছু দেখার অভিজ্ঞতা দেবে।

29
চা, কফি পান করাতে নয়- সিঁড়িতে ওঠানামা করলে উৎসাহ ক্ষমতা দুটোই বাড়ে।
কাজের ফাঁকে আলসেমি, ঘুম, ক্লান্তি ইত্যাদি দূরে রাখতে সবাই বেছে নেন চা কিংবা কফি। এই দুই পানীয়তে থাকা ‘ক্যাফেইন’ই একাজের মুল নায়ক, যা বাড়ায় মনযোগ, মানসিক সতর্কতা ও কর্মশক্তি। তবে তা অতিরিক্ত গ্রহণের কুফলও আছে।

আবার চা-কফির প্রভাব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। আর একারণেই তা পান করার পরিমাণ বেশি হয়ে যায়।

বিশেষজ্ঞরা বের করেছেন আলসেমি কাটানোর আরও কার্যকর উপায়। তা হলো সিঁড়িতে ওঠানামা করা।

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে এবিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে জানানো হলো বিস্তারিত।

বিকল্প এই উপায়ের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে গবেষণা চালায় ইউনিভার্সিটি অফ জর্জিয়া’র গবেষকরা। এতে অংশ নেয় ১৮ জন নারী, যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৩ বছর। এদের প্রত্যেকেরই ছিল দীর্ঘদিনের ঘুমের ঘাটতি।

দুই ধরনের পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণকারীদের স্মৃতিশক্তি, মনযোগ, সাড়া দেওয়ার ক্ষিপ্রতা এবং কর্মস্পৃহার মাত্রা পরীক্ষা করেন গবেষকরা।

প্রথম পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের দুই দলে ভাগ করে একদলকে দেওয়া হয় ৫০ মিলিগ্রাম ‘ক্যাফেইন’ সমৃদ্ধ ক্যাপসুল আর বাকি অর্ধেককে দেওয়া হয় ‘প্লাসিবো’ বা কোনো কাজ করেনা এমন ওষুধ।

দ্বিতীয় পরীক্ষায় প্রত্যেককেই বলা হয় স্বাভাবিক গতিতে ১০ মিনিট সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে।

দেখা যায়, যে দলটি সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করেছেন তাদের কর্মশক্তির মাত্রা যারা ‘ক্যাফেইন’যুক্ত ক্যাপসুল সেবন করেছেন তাদের তুলনায় বেশি। তবে কোনো কিছুই অংশগ্রহণকারীদের স্মৃতিশক্তির ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।

আসল কথা হল

যারা কাজের প্রয়োজনের প্রতিদিন চা কিংবা কফির ওপর নির্ভরশীল তাদের জন্য এই গবেষণা অভাবনীয় উপকার বয়ে আনবে বলে আশাবাদী গবেষকরা। কারণ দিনভর কয়েক কাপ চা-কফি পান করার বদলে তারা ঘরে কিংবা কর্মক্ষেত্রে সিঁড়িতে ওঠানামা করেই শরীরের আলসেমি কাটাতে পারবেন। আর এই কারণে যে শারীরিক পরিশ্রম হবে তা সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতেও ভূমিকা রাখবে।

30
চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক ক্যাথরিন মাসুদের সঙ্গে বাংলার যোগাযোগ গত শতকের আশির দশক থেকে। এর আগ পর্যন্ত এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব পরিচিত ছিলেন না বাংলা ভাষার সঙ্গে, বাংলাদেশের সঙ্গে। কিন্তু ১৯৮৬ সালে সেই যে এলেন এই দেশে, বাংলা ভাষা হয়ে উঠল ক্যাথরিনের জীবনের অংশ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ক্যাথরিন মাসুদের বাংলা ভাষা শেখা ও বাংলার সঙ্গে বসবাসের গল্পটি তুলে ধরা হলো।


ক্যাথরিন মাসুদ। ছবি: কবির হোসেন
চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক ক্যাথরিন মাসুদের সঙ্গে বাংলার যোগাযোগ গত শতকের আশির দশক থেকে। এর আগ পর্যন্ত এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব পরিচিত ছিলেন না বাংলা ভাষার সঙ্গে, বাংলাদেশের সঙ্গে। কিন্তু ১৯৮৬ সালে সেই যে এলেন এই দেশে, বাংলা ভাষা হয়ে উঠল ক্যাথরিনের জীবনের অংশ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ক্যাথরিন মাসুদের বাংলা ভাষা শেখা ও বাংলার সঙ্গে বসবাসের গল্পটি তুলে ধরা হলো।

৩৪ বছর আগের কথা। ১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো পা রেখেছিলেন ক্যাথরিন। তখন তিনি ক্যাথরিন মাসুদ নন। নন প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার বা নির্মাতা। তখন তিনি ক্যাথরিন লুক্রেশিয়া শেপার নামের ২৩ বছরের এক মার্কিন তরুণী। উন্নয়ন অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক হয়েছেন। লাল–সবুজের এই দেশে আসবেন, দেশের ভাষা আর মানুষের প্রেমে পড়বেন, এমনটা কথা ছিল না। কীভাবে কী হলো, সেই গল্প শোনার জন্য ক্যাথরিন মাসুদের সঙ্গে শুরু হলো মেইল চালাচালি। একটু সময় মিলতেই ফেলে রাখা এমএফএ (মাস্টার্স ইন ফাইন আর্টস) করেই ফেললেন ক্যাথরিন। যুক্তরাষ্ট্রে কনেটিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা, ডকুমেন্টারি ফিচার ফিল্মের কাজ, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের একাধিক প্রকল্প ও অন্যান্য নানা ব্যস্ততায় দিন কাটছে তাঁর। সুদূর মার্কিন মুলুক থেকে এত কিছুর মধ্যেও নিয়মিত বিরতিতে ক্যাথরিন মাসুদের ঠিকানা থেকে আসতে থাকল মেইলের উত্তর, প্রত্যুত্তর। জানা হলো বাংলা ভাষার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ এবং এই ভাষার মায়ায় বাঁধা পড়ে যাওয়ার গল্প।

একটা মেইলে ওলটপালট
ক্যাথরিনের পড়াশোনায় ভৌগোলিকভাবে গুরুত্ব পেয়েছিল লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর আর্থসামাজিক অবস্থা। বাংলাদেশে আসবেন, এমন কোনো পরিকল্পনা তাঁর খসড়া বা প্ল্যান বি, সিতেও ছিল না। এমন সময় বাংলাদেশের একটি এনজিও থেকে একটি মেইল যায় ক্যাথরিনের কাছে। এক বছরের ইন্টার্নশিপের ওই নিমন্ত্রণপত্র কৌতূহলী করে ক্যাথরিনকে। তাঁর গবেষণার তত্ত্বাবধায়কও লুফে নিতে বললেন সেই সুযোগ। এনজিওর কাজের অভিজ্ঞতাও হবে, এগোবে গবেষণাও। তাই এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করতে ‘জাদুর শহরে’ শুরু হলো ক্যাথরিন লুক্রেশিয়া শেপার নতুন জীবন, যার নাম ঢাকা।


ক্যাথরিন মাসুদ। ছবি: কবির হোসেন
ক্যাথরিন মাসুদ। ছবি: কবির হোসেন
চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক ক্যাথরিন মাসুদের সঙ্গে বাংলার যোগাযোগ গত শতকের আশির দশক থেকে। এর আগ পর্যন্ত এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব পরিচিত ছিলেন না বাংলা ভাষার সঙ্গে, বাংলাদেশের সঙ্গে। কিন্তু ১৯৮৬ সালে সেই যে এলেন এই দেশে, বাংলা ভাষা হয়ে উঠল ক্যাথরিনের জীবনের অংশ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ক্যাথরিন মাসুদের বাংলা ভাষা শেখা ও বাংলার সঙ্গে বসবাসের গল্পটি তুলে ধরা হলো।

৩৪ বছর আগের কথা। ১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো পা রেখেছিলেন ক্যাথরিন। তখন তিনি ক্যাথরিন মাসুদ নন। নন প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার বা নির্মাতা। তখন তিনি ক্যাথরিন লুক্রেশিয়া শেপার নামের ২৩ বছরের এক মার্কিন তরুণী। উন্নয়ন অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক হয়েছেন। লাল–সবুজের এই দেশে আসবেন, দেশের ভাষা আর মানুষের প্রেমে পড়বেন, এমনটা কথা ছিল না। কীভাবে কী হলো, সেই গল্প শোনার জন্য ক্যাথরিন মাসুদের সঙ্গে শুরু হলো মেইল চালাচালি। একটু সময় মিলতেই ফেলে রাখা এমএফএ (মাস্টার্স ইন ফাইন আর্টস) করেই ফেললেন ক্যাথরিন। যুক্তরাষ্ট্রে কনেটিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা, ডকুমেন্টারি ফিচার ফিল্মের কাজ, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের একাধিক প্রকল্প ও অন্যান্য নানা ব্যস্ততায় দিন কাটছে তাঁর। সুদূর মার্কিন মুলুক থেকে এত কিছুর মধ্যেও নিয়মিত বিরতিতে ক্যাথরিন মাসুদের ঠিকানা থেকে আসতে থাকল মেইলের উত্তর, প্রত্যুত্তর। জানা হলো বাংলা ভাষার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ এবং এই ভাষার মায়ায় বাঁধা পড়ে যাওয়ার গল্প।

১৯৮৮ সালে ক্যাথরিন অংশ নিয়েছিলেন প্রথম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবে। সেখানে বক্তব্য দিচ্ছেন তিনি।
১৯৮৮ সালে ক্যাথরিন অংশ নিয়েছিলেন প্রথম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবে। সেখানে বক্তব্য দিচ্ছেন তিনি।
একটা মেইলে ওলটপালট
ক্যাথরিনের পড়াশোনায় ভৌগোলিকভাবে গুরুত্ব পেয়েছিল লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর আর্থসামাজিক অবস্থা। বাংলাদেশে আসবেন, এমন কোনো পরিকল্পনা তাঁর খসড়া বা প্ল্যান বি, সিতেও ছিল না। এমন সময় বাংলাদেশের একটি এনজিও থেকে একটি মেইল যায় ক্যাথরিনের কাছে। এক বছরের ইন্টার্নশিপের ওই নিমন্ত্রণপত্র কৌতূহলী করে ক্যাথরিনকে। তাঁর গবেষণার তত্ত্বাবধায়কও লুফে নিতে বললেন সেই সুযোগ। এনজিওর কাজের অভিজ্ঞতাও হবে, এগোবে গবেষণাও। তাই এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করতে ‘জাদুর শহরে’ শুরু হলো ক্যাথরিন লুক্রেশিয়া শেপার নতুন জীবন, যার নাম ঢাকা।


রবীন্দ্রনাথ আর ‘বেঙ্গলি ফর ফরেনার্স’
ক্যাথরিন মাসুদের দাদা আলফ্রেড বিংহাম ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভক্ত। গত শতকের িত্রশের দশকে মার্কিন নাগরিক আলফ্রেড বিংহাম তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতে আসেন। শান্তিনিকেতনে দেখা করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে। সেই ভ্রমণের গল্প শুনে এ অঞ্চল সম্পর্কে আবছা একটা ধারণা যা জন্মেছিল, সেটুকু পুঁজি করে এই বাংলায় এলেন ক্যাথরিন। প্লেন থেকে মাটিতে পা রেখে আশপাশে কে কী বলছিল, কিচ্ছু বুঝতে পারছিলেন না। এভাবে কিছুদিন চলল। আগে থেকেই ইংরেজি ছাড়া ফরাসি আর স্প্যানিশ জানতেন। সেটুকু যা আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল, তা–ই সম্বল করে একদিন হাঁটছিলেন ঢাকার নিউমার্কেটের পাশ দিয়ে। হঠাৎ-ই চোখে পড়ল ব্রাদার জেমসের বেঙ্গলি ফর ফরেনার্স বইটি। আগেও বই পড়ে বাংলা শেখার চেষ্টা করেছিলেন। তবে এই বই তাঁকে সত্যিই সাহায্য করেছিল। বাংলা শেখালেন গৃহকর্মী, দারোয়ান আর রিকশাওয়ালারা
সাঁতার শিখতে যেমন পানিতে নামতেই হবে, ভাষা শিখতে গেলে তেমনই মানুষের সঙ্গে সেই ভাষায় কথা বলা ছাড়া গতি নেই। কিন্তু বাংলা ভাষা অনুশীলনের জন্য প্রাথমিকভাবে ক্যাথরিন সঙ্গী পেয়েছিলেন খুব কমই। যেসব ‘মধ্য’ ও ‘নিম্নবিত্ত’ মানুষের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তাঁদের প্রায় সবাই কেবল তাঁর সঙ্গে নিজেদের ইংরেজিটা ঝালিয়ে নিচ্ছিলেন। অবশ্য তাঁদের দোষ দেন না মাটির ময়নার এই প্রযোজক। বরং নিজের উদ্ভট বাংলাকেই বানালেন ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’। এরপর? এই অংশটা শোনা যাক ক্যাথরিন মাসুদের বয়ানে, ‘তখন আমি অন্য শ্রেণিকে “তাক” করলাম বাংলার শেখার জন্য। যাঁরা বাংলা ছাড়া অন্য ভাষা জানে না। কাজের বুয়া, দারোয়ান, রিকশাওয়ালারা আমাকে খুবই সাহায্য করেছেন বাংলা শিখতে। আমার কিম্ভূত উচ্চারণের দাঁতভাঙা বাংলার সঙ্গে চালিয়ে নেওয়া ছাড়া ওদের কোনো বিকল্পও ছিল না।’

ফল ভয়ংকর!
কয়েক মাসের প্রাণান্ত চেষ্টায় বাংলাটা ‘ধরে ফেললেন’ বটে, তবে গোল বাধল অন্য জায়গায়। ক্যাথরিনের বাংলা শব্দভান্ডারের অর্ধেকজুড়ে তখন দেশি গালাগালি। ক্যাথরিনের ভাষায়, ‘ব্যাড ওয়ার্ডস’। আর সেগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে এখানে–সেখানে ভরা মজলিশে ব্যবহার করতে লাগলেন তিনি। প্রায়ই তাঁর ভাষা শুনে ‘ভদ্রলোকেরা’ হাসিতে ফেটে পড়তেন বা মুখ চাওয়া–চাওয়ির একপর্যায়ে একেবারে চুপ হয়ে যেতেন। সেকেন্ড পেরিয়ে মিনিট গড়িয়ে যেত, তাঁদের মুখে আর ‘রা’ নেই। ক্যাথরিনের ভাষায়, ‘শকে’ চলে যেতেন তাঁরা। আর সেটিই নাকি ছিল ক্যাথরিনের বাংলা পাঠের খুবই ভীতিকর অধ্যায়।

তারেক মাসুদ বলতেন, ‘রাস্তার বাংলা’
তত দিনে ক্যাথরিন মাসুদ প্রায় এক বছর কাটিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশে। বুঝে বুঝে নিজের কথায় একটু–আধটু বাংলা বাগ্​ধারাও ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। এ রকম কিছু বলার পর দুরু দুরু বুকে কয়েক সেকেন্ডের অপেক্ষা। আর যখনই বুঝতে পারতেন, ঠিকঠাক প্রয়োগ করতে পেরেছেন, শিশুর মতোই হাততালি দিয়ে উঠত হৃদয়। বুঝতেন, পারছেন, তাঁকে দিয়ে হচ্ছে। বাংলা ভাষাকে নিজের মতো করে আবিষ্কার করার অনুভূতি তাঁর কাছে নতুন প্রভাতে নবজন্মের মতো। সে রকমই একটি দিনে দেখা হলো তারেক মাসুদের সঙ্গে। দুজনের বন্ধুত্ব হওয়ার পর তারেক মাসুদ প্রায়ই ক্যাথরিনের বাংলাকে কটাক্ষ করে বলতেন, ‘রাস্তার বাংলা’।

‘বনলতা সেন’ মুখস্থ করলেন ক্যাথরিন
সবার আগে আগে ‘লো বাংলা’ (নিম্নবিত্তের বাংলা), তারপর ‘হাই বংলা’ (শুদ্ধ ও প্রমিত বাংলা) আর সবার শেষে ‘মধ্যবিত্ত বাংলা’ (কথ্য ও প্রচলিত বাংলা) শিখেছিলেন ক্যাথরিন মাসুদ। তারেক মাসুদ, আহমেদ ছফাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রে ক্যাথরিন মাসুদ পরিচিত হলেন শিল্প ও সাহিত্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত এমন অনেকের সঙ্গে। হু হু করে বাড়তে লাগল ক্যাথরিনের বাংলা শব্দভান্ডার। তারেক মাসুদই নাকি ক্যাথরিন মাসুদকে পরিচয় করিয়ে দেন জীবনানন্দ দাশের সঙ্গে। সেসব কবিতা এত ভালো লাগল ক্যাথরিনের! ‘বনলতা সেন’ পুরোটা মুখস্থ করে ফেললেন। স্মৃতি থেকে প্রায়ই আনমনে আবৃত্তি করতেন ‘বনলতা সেন’কে। আর রবীন্দ্রসাহিত্য তো ছিলই। নিয়ম করে কিছু সময় বরাদ্দ রাখতেন চোখ বন্ধ করে রবীন্দ্রনাথের গানকে দেওয়ার জন্য। ক্যাথরিনের ভাষায়, ‘তৃষ্ণার্ত স্পঞ্জের মতো করে এসব সাহিত্যের পুরোটা শুষে নিলাম।’ এভাবেই ‘লো বাংলা’র পর ক্যাথরিন শিখলেন ‘হাই বাংলা’। সবার পরে পরিচয় হয়েছিল মধ্যবিত্তের বাংলার সঙ্গে।

হরেক রকম বাংলা
এভাবেই বর্ণপরিচয় থেকে শুরু করে বাংলার নানা রকমফেরের সঙ্গে পরিচয় ঘটল চলচ্চিত্রকার ক্যাথরিন মাসুদের। ভাষণের বাংলা, সামাজিক আচারের শালীন বাংলা, দৈনন্দিন কাজের বাংলা আর বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণের সময় শিখলেন ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, কুমিল্লার বাংলা ও কলকাতার বাংলা। সব বাংলার সুরগুলো শিখে নিতে লাগলেন ধীরে ধীরে। হাতে–কলমে কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই তিনি বাংলা বলতে, পড়তে ও মোটামুটি লিখতে শিখে গেলেন।

বাংলা ভাষা শেখাটা পরিকল্পনা করে হয়নি ক্যাথরিন মাসুদের। কিন্তু এই ভাষাকে আপন করে নিতে সময় লাগেনি তাঁর। আপনা–আপনি মনের অজান্তেই ঘটেছে বাংলার সঙ্গে প্রেম। আজ বাংলা ভাষাকে নিজের করতে পেরে গর্ব হয় তাঁর। কারণ, এই ভাষা সব ভাষার প্রতি মানুষের ভালোবাসার প্রতিনিধিত্ব করে। বাংলা ভাষার সৌন্দর্যে তিনি মুগ্ধ হন বারবার। ভাষাশহীদদের আত্মত্যাগের ইতিহাস স্মরণ করে রোমাঞ্চিত হন। যে ইতিহাস অহংকারী না হয়ে বরং ভাষার বৈচিত্র্যকে শ্রদ্ধা জানায়, দুয়ার খুলে দেয় মানবতার। তাই সব কথার শেষে এসে ক্যাথরিন বললেন, ‘আমার বাংলা ভাষা শেখার সফরটা একসময় হুট করেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু একসময় এটাই হয়ে ওঠে আমার জীবনের এমনই এক অংশ, যাকে নিয়ে আমি গর্ব করতে পারি।

সূত্র>প্রথম আলো

Pages: 1 [2] 3