Daffodil International University
Career Development Centre (CDC) => Job Satisfaction & Skills => Career Guidance => Be a Leader => Topic started by: Narayan on May 17, 2012, 09:24:32 AM
-
চারোতার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি খুব আনন্দিত। আমি অভিবাদন জানাচ্ছি স্নাতকদের, তাদের শিক্ষাগত শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য। আরও অভিনন্দন জানাই তাঁদের শিক্ষকদের, যাঁরা এই তরুণ আত্মাগুলোকে পরিপূর্ণ করে তুলেছেন।
‘অসাধারণ গবেষণা একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে মহৎ করে তোলে’—এ বিষয়ে আজ আমি আমার কিছু অভিমত তুলে ধরব।
তৃতীয় বর্ষে বৈমানিক প্রকৌশলবিদ্যা পড়ার সময় পাঁচজন সহপাঠী নিয়ে আমার ওপর দায়িত্ব দেওয়া হলো একটি নিম্নস্তরবর্তী আঘাত হানার ক্ষমতাসম্পন্ন যুদ্ধবিমানের নকশা তৈরি করার। সিস্টেম নকশা প্রণয়ন এবং সমন্বয় সাধনের গুরুদায়িত্ব আমার। প্রকল্পটির আনুষঙ্গিক, বিমানের গতির হিসাব এবং কাঠামোগত নকশাও আমাকে দেখতে হবে। বাকি দলের কর্মীরা দেখবে বিমানের পরিচালনক্ষমতা, নিয়ন্ত্রণ, নেতৃত্বের ভূমিকাসহ অন্যান্য যান্ত্রিক বিষয়গুলো। আমাদের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন মাদ্রাজ প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক শ্রীনিবাস। আমাদের কাজ দেখে তিনি ঘোষণা দিলেন, প্রকল্পটির পুরোটাই হতাশাজনক। এতজনের নকশা একত্র করে এ পর্যন্ত উপস্থাপন করতে আমরা যে কতটা পরিশ্রম করেছি এবং কতটা বাধাবিপত্তি পেরিয়ে এসেছি, সেটা তিনি কানেও তুললেন না। আমি এক মাস সময় চাইলাম। অধ্যাপক শ্রীনিবাস জবাব দিলেন, ‘দেখো, ইয়ং ম্যান! আজ শুক্রবার দুপুরবেলা। আমি তোমাকে তিন দিন সময় দিচ্ছি। সোমবার সকালের মধ্যে এই নকশার কনফিগারেশন হাতে না পেলে তোমার স্কলারশিপ বন্ধ।’ আমার পুরো জীবনটাই যেন কেঁপে উঠল। স্কলারশিপই আমার বেঁচে থাকার প্রধান মাধ্যম। নয়তো আমার পড়াশোনাই হয়তো থেমে যাবে। তাই এ প্রকল্পটি শেষ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। পুরো দল আমরা দিন-রাত কাজ করার প্রয়োজন অনুভব করলাম। রাতে ঘুমাতাম না। খাওয়ারও ঠিক নেই। শনিবার নিলাম এক ঘণ্টার ছুটি। রোববার সকালে আমাদের কাজ প্রায় শেষের দিকে। হঠাৎ মনে হলো, ল্যাবরেটরিতে কারও শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে ছিলেন অধ্যাপক শ্রীনিবাস, যিনি আমাদের কাজের অগ্রগতি দেখছিলেন। কিছুক্ষণ বাদে আমার পিঠ চাপড়ে জড়িয়ে ধরলেন, ‘আমি জানতাম আমি তোমাকে খুব চাপের মধ্যে রেখেছি। কিন্তু তুমি তোমার নকশা প্রণয়নে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছ।’ অধ্যাপক শ্রীনিবাসের দিকনির্দেশনায় আমি এবং আমার দলের প্রত্যেকেই সময়ের প্রয়োজনীয়তা ভালোভাবে বুঝতে শিখেছি। আমি বুঝলাম যখন কোনো মানুষ চরমভাবে ঠেকে যায়, তখন তাঁর ক্ষমতা ও চিন্তাশক্তি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায়। সেটাই আমাদের ক্ষেত্রে হয়েছিল। আমাদের শিক্ষাটি ছিল, আমাদের বিশেষ দক্ষতা যেটাই হোক না কেন, শিক্ষার্থীদের পদ্ধতি ও প্রকল্পের প্রয়োজনে প্রস্তুত হতে হবে, যা তাদের নতুন উদ্ভাবন, যন্ত্রনির্মাণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করাতে সচেষ্ট করবে। একজন মহান শিক্ষক সেটাই শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্তস্থ করে দেন।
বন্ধুরা, বিগত বছরগুলোতে আমি বলে চলেছি তরুণ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা কীভাবে উন্নয়নের স্তম্ভ নির্মাণে ভূমিকা রাখতে পারে। ‘পিলারস অব ইন্ডিয়ান ডেভেলপমেন্ট প্রোফাইল-২০২০’-এর মধ্যে কী কী আছে—
একটি জাতি, যেখানে শহর ও গ্রামের মধ্যে কোনো বিভক্তিরেখা থাকবে না। জ্বালানি ও বিশুদ্ধ পানি সমানভাবে বণ্টনের সুযোগ থাকবে; যেখানে কৃষি, শিল্প, চাকরির ক্ষেত্র একই সঙ্গে কাজ করছে। এমন একটি জাতি যেখানে সামাজিক বা অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে মেধাবীকে মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হতে হবে না। একটি জাতি যেখানে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিভাশালী বিদ্বান, বিজ্ঞানী এবং বিনিয়োগকারী অবস্থান করে। যেখানে শাসনপদ্ধতি হবে স্বচ্ছ এবং দুর্নীতিমুক্ত। যেখানে দারিদ্র্য সম্পূর্ণরূপে উৎপাটন করা হয়েছে, অশিক্ষাকে দূর করা হয়েছে এবং নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করা হয়েছে। জাতি হিসেবে এটি উন্নত, স্বাস্থ্যকর, নিরাপদ, সন্ত্রাসবাদমুক্ত, শান্তিপূর্ণ, সুখী এবং টেকসই উন্নতির পথে ধাবমান এবং পৃথিবীতে বাস করার শ্রেষ্ঠ দেশ এবং যে জাতি তার নেতৃত্বদানে গর্বিত।
এমন ভারতকে পেতে কৃষি এবং খাদ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, নির্ভরযোগ্য ও মানসম্পন্ন বৈদ্যুতিক শক্তি এবং নিজস্ব উৎপাদন ও কারিগরি প্রযুক্তি—এই পাঁচটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে হবে। বন্ধুরা, অনুগ্রহ করে এ স্তম্ভগুলো মনে রেখো। তাহলে তোমরা নিজেদের পছন্দসই চ্যালেঞ্জ খুঁজে পাবে। প্রতিটি স্তম্ভই বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা এবং প্রযুক্তি প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা বহন করে।
বিজ্ঞানের বিভিন্ন রূপান্তর একটি আরেকটির পরিপূরক। সম্প্রতি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি তাদের গবেষণাগারগুলো ঘুরে দেখছিলাম, যেখানে পৃথিবীর স্বনামধন্য অধ্যাপকেরা নিয়োজিত থাকেন। আমি দেখছিলাম, কীভাবে অধ্যাপক হংকুন পার্ক তাঁর ‘ন্যানো নিডলস’ উদ্ভাবন-প্রক্রিয়া বর্ণনা করছিলেন। যা দিয়ে ক্ষুদ্রাতিস্তম্ভ প্রতিটি সেলকে আলাদা করে কাটা কিংবা বিভক্ত করা যায়। এটির সঙ্গে জৈববিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগ আছে। আমার দেখা হয়েছিল অধ্যাপক বিনোদ মনোহরণের সঙ্গে, যিনি জৈববিজ্ঞানের সঙ্গে ‘ন্যানো ম্যাটেরিয়াল’ প্রযুক্তির সংগতি নিয়ে কাজ করছেন। আমি দেখছিলাম, কীভাবে একটি গবেষণাগারে দুটি ভিন্ন বিজ্ঞানের শাখা একে অপরকে প্রযুক্তিগত মেলবন্ধন তৈরি করার পথ খুলে দিচ্ছে। এমনটাই আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উদ্ভাবনের আশা করি। নতুন একটি পথ আজ উন্মোচনের পথে। তা হলো বাস্তুসংস্থানবিদ্যা, সারা পৃথিবীতে যার প্রয়োজন নতুনভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। একুশ শতকে এর নতুন মাত্রা আমাদের বিজ্ঞান ও পরিবেশকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার প্রেরণা জোগায়। তাতে কি আমরা প্রস্তুত?
বন্ধুরা, আমি গত ১০ বছরে প্রায় দেড় শ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ মিলিয়নেরও বেশি তরুণ শিক্ষার্থীর সঙ্গে মিশেছি। তাদের সঙ্গে আমার কথোপকথনে আমার কাছে মনে হয়েছে, একুশ শতাব্দীর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কিছু নতুন দর্শনের জোগান দরকার। জাতির প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের অগ্রপথিক হিসেবে গড়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজেদের সংশোধন করতে হবে, যাতে তা মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হতে পারে। একজন ভালো শিক্ষক পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় থাকতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত ভার্চুয়াল ক্লাসরুমের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একাত্ম করে দেওয়া। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রযুক্তির আদান-প্রদানের সুযোগ করে দেওয়া।
সবশেষে, আমি তোমাদের জিজ্ঞেস করতে চাই, তোমরা নিজেদের কীভাবে স্মরণীয় করে রাখতে চাও? তোমাদের উচিত, নিজেদের বিশ্লেষণ করে জীবনকে প্রকাশ করা। একটি কাগজে লিখেও রাখতে পারো। সেই কাগজটাই হয়তো মানব ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় হয়ে থাকবে। তোমাদের জাতির ইতিহাসেও হয়তো ওই একটি পাতা স্মরণীয় হয়ে থাকবে, সেটা হতে পারে কোনো উদ্ভাবনের জন্য, কোনো কিছু নতুন করে পরিবর্তনের জন্য, আবিষ্কারের জন্য, সমাজে পরিবর্তন আনার জন্য, দারিদ্র্য নির্মূলে অবদান রাখার জন্য, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য, স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য। আমি নিশ্চিত, তোমরা অবশ্যই অভিনব কিছু করবে। সেগুলো হবে, ধরাবাঁধা গতানুগতিক ধারা থেকে ভিন্ন। সুতরাং কী হবে সেই অভিনব অবদানগুলো?
সবার জন্য আমার শুভকামনা রইল।
-এ পি জে আবদুল কালাম
Taken From Prothom-Alo
-
good post