Daffodil International University

Entrepreneurship => Business Information => WIPO => Topic started by: Md. Alamgir Hossan on March 10, 2016, 02:01:22 PM

Title: রিজার্ভের অর্থ চুরির তদন্ত করছে বাংলাদেশ ব্যাংক চেষ্টা ছিল ৯৫ কোটি ডলার চুরির
Post by: Md. Alamgir Hossan on March 10, 2016, 02:01:22 PM
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ থেকে প্রায় ৯৫০ মিলিয়ন বা ৯৫ কোটি ডলার চুরির চেষ্টা হয়েছিল। প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮০ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা সরিয়ে নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফটের সংকেতলিপি (কোড) থেকে অর্থ স্থানান্তরের ৩৫টি ‘পরামর্শ বা অ্যাডভাইস’ পাঠানো হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে। সেখান থেকে কার্যকর হয়েছিল মোট ৫টি পরামর্শ।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ কোনো মন্তব্য করেননি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক থেকে রিজার্ভের মোট ১০১ মিলিয়ন বা ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার দেশের বাইরে থেকে ‘হ্যাকড’ করে শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনে স্থানান্তর করা হয়। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় গেছে ২০ মিলিয়ন বা ২ কোটি ডলার আর ফিলিপাইনে গেছে ৮১ মিলিয়ন বা ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। গত ৫ ফেব্রুয়ারি এ ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ‘হ্যাকড’ করে বিপুল অর্থ চুরি করার ঘটনায় নিজেদের কেউ জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অর্থ চুরির এ ঘটনার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, বিশ্বব্যাংকের সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি পরিচালক রাকেশ আস্তানা গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, মাঝপথে থাকা তদন্তে এখন পর্যন্ত যে তথ্য মিলেছে, তাতে বাইরে থেকেই ‘হ্যাকড’ করে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
তবে সুইফট কর্তৃপক্ষও গতকাল এক বার্তায় বলেছে, ‘তাদের নেটওয়ার্ক অপব্যবহার হয়েছে, এমন কোনো লক্ষণ এখনো পাওয়া যায়নি।’
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বেলজিয়ামভিত্তিক আন্তব্যাংক আর্থিক লেনদেনের নেটওয়ার্ক সুইফটের (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন) এক বিবৃতি উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘সুইফট কর্তৃপক্ষও বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। প্রেরণকারী ও গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যে বার্তা বিনিময় হয়েছে, সেটি ছিল বিশ্বাসযোগ্য (অথেনটিক)। এখন পর্যন্ত আমাদের নেটওয়ার্ক অপব্যবহার হয়েছে, এ রকম কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি।’
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার ২ কোটি ডলার এরই মধ্যে উদ্ধার করা গেছে। আর ফিলিপাইনের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। অচিরেই এসব অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হবে বলেও সাংবাদিকদের জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। ‘অর্থ পরিশোধের লেনদেন ব্যবস্থার সাইবার নিরাপত্তা’ নিয়ে দেশের তফসিলি সব ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী এবং প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজি হাসান, নির্বাহী পরিচালক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ রাকেশ আস্তানা। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গভর্নর নাজনীন সুলতানা।
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক নির্ভরশীল সূত্রে জানা গেছে, শ্রীলঙ্কা থেকে উদ্ধার করা দুই কোটি ডলার গিয়েছিল সে দেশের একটি ব্যাংকে নতুন খোলা এনজিও (বেসরকারি সংস্থা) হিসাবে। কনসালট্যান্সি বা পরামর্শক ফি হিসেবে ওই অর্থ স্থানান্তরের ‘পরামর্শ’ গিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সংকেতলিপি থেকে। কিন্তু শ্রীলঙ্কায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন শক্তিশালী হওয়ায় নতুন একটি হিসাবে বড় অঙ্কের অর্থের লেনদেনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সন্দেহের চোখে দেখে। তখন ওই ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিষয়টি শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরে আনা হলে সেই অর্থ আটকে দেওয়া হয়। তাতে ওই টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
সূত্রটি আরও জানায়, ফিলিপাইনেও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা ব্যাংক হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ব্যাংক থেকে অর্থ স্থানান্তর হয়ে জমা হয়। পরে সেখান থেকে অন্য হিসাবে সেসব অর্থ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফিলিপাইনের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের দুর্বলতা এবং ঘটনার সঙ্গে ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা জড়িত থাকায় বড় অঙ্কের বৈদেশিক লেনদেন সত্ত্বেও তা অনায়াসে এক হিসাব থেকে অন্য হিসাবে চলে যায়। ফিলিপাইনের সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, চুরি করা অর্থের বড় অংশই কয়েকটি ক্যাসিনোর হাত ঘুরে ফিলিপাইন থেকে বেরিয়ে হংকংয়ে চলে গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, চুরি যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষের বেশ সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও বাংলাদেশ ব্যাংকের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবারও এ দুই ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মতবিনিময়ের কথা রয়েছে। তবে সুইফটের কাছ থেকে যথাযথ সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে সুইফটের নিয়ন্ত্রণ হয় ভারত থেকে। অর্থ চুরির ঘটনার পরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের দিক থেকে ভারতে সুইফটের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের কর্মকর্তাদের দ্রুত এ দেশে আসার আহ্বান জানানো হয়। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের দিক থেকে অন অ্যারাইভেল ভিসার ব্যবস্থার কথা জানানো হয়। কিন্তু তাতেও প্রত্যাশিত সাড়া মেলেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য: ৭ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক লিখিত এক বিবৃতির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে আলোচিত এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। এরপর গতকাল বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এ সময় রাকেশ আস্তানা বলেন, ‘আমরা এখন তদন্তের মাঝপথে আছি। এ ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব লোক, নাকি বাইরের লোক জড়িত ইত্যাদি বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত যেসব নমুনা (সাইন) পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, বাইরে থেকে (এক্সটারনাল) এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তদন্ত মাঝপথে থাকায় এর বেশি কিছু আর বলা সম্ভব হচ্ছে না।’
এ সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘ফিলিপাইনে যে অর্থ গেছে, তার পুরোটাই অচিরেই ফেরত পাব, এ আশা রাখছি। কারণ, দেশটির অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা চুক্তি রয়েছে। এ ছাড়া ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। ফিলিপাইনের আদালতও অর্থ উদ্ধারে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণের আদেশ দিয়েছেন।’
আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সুইফট কোড হ্যাকড করা যায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘আমরা এখনো এটিকে “হ্যাকড” মনে করছি।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার পাসপোর্ট জব্দের কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ঘটনা বা খবর আমাদের জানা নেই।’
ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজি হাসান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের দিক থেকে যেসব অ্যাডভাইস গেছে, সেগুলো কার্যকরের ক্ষেত্রে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক যথাযথ প্রক্রিয়া বা ব্যবস্থা অনুসরণ করেছে কি না, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তা পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।