Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - Md. Siddiqul Alam (Reza)

Pages: 1 ... 3 4 [5] 6 7 ... 17
61
মানুষ সামাজিক জীব হওয়ার কারণে পরিবার, সমাজ আর রাষ্ট্র নিয়ে বসবাস করে। আর এরকম অবস্থায় মানুষের জীবন বিধান কিরূপ হবে তা আল্লাহ তায়ালা কোরআন এবং রাসূল (সা.)-এর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন।

তবে অধিকাংশ মানুষ তা জেনেও গাফেল থাকে আর বাকী অংশ কখনো জানার চেষ্টা করে না। ফলে অজ্ঞতা আর নাফরমানী গোটা মানব জাতিকে গ্রাস করে নিচ্ছে। ব্যক্তিগত জীবনে বিপদাপদ : পাঁচ ওয়াক্ত নামায আল্লাহ তায়ালা ফরয করেছেন। যখন কেউ নিয়মিতভাবে ফরয নামায আদায় করে তখন সে আল্লাহ তায়ালার জিম্মায় চলে যায়। অপরদিকে বান্দা যখন ইচ্ছাকৃত ও জেনে বুঝে ফরয নামায ছেড়ে দেয় তখন সে আল্লাহর জিম্মা তথা দায়িত্ব থেকে বেরিয়ে যায় এবং তখন সে নিজের ও সৃষ্টির দায়িত্বে থেকে যায়। ফলে এই অবস্থায় তার যেকোনো দুরবস্থা ঘটতে পারে। হাদিসে এসেছে, ‘কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ফরয নামায ছেড়ে দিলে তার ওপর থেকে আল্লাহ তায়ালার দায়িত্ব উঠে যায়। (ইবনে মাজাহ)। সুতরাং বিপদ আপদ থেকে মুক্তি পেতে সবার আগে পাঁচ ওয়াক্ত নামায সময় মতো আদায় করতে হবে।

নতুন নতুন রোগ-ব্যাধি : হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, যে জাতি-স¤প্রদায়ে (তথা সমাজে) প্রকাশ্যে অশ্লীল কর্ম সম্পাদিত হতে থাকবে, তাদের মাঝে অবশ্যেই প্লেগ বিস্তার লাভ করবে এবং এমন ধরনের রোগ-ব্যাধি ব্যাপকভাবে প্রকাশ পাবে, যা তাদের বাপ দাদাদের মাঝেও কখনো হয়নি। (ইবনে মাজাহ)। বর্তমান পৃথিবী তার অন্যতম উদাহরণ। আমাদের সংস্কৃতি থেকে শুরু করে চাল-চলন, জীবন-যাপন সব কিছুতে অশ্লীলতা। অশ্লীলতা এখন আর গোপনে নয় বরং প্রকাশ্যে বিলবোর্ডে, টেলিভিশনে, পার্টিতে সব জায়গায়। নগ্ন হওয়াকে বলা হয় সাহসিকতা, যিনাকে বলা হয় স্বাধীনতা আর নিজেকে অন্যের কাছে বিলিয়ে দেয়াকে বলা হয় সৌন্দর্য চর্চা। আর এত কিছুর ফলাফল কি হচ্ছে তা আমাদের চোখের সামনেই দৃশ্যমান। সুতরাং কঠিন এবং মহামারী রোগ-ব্যাধি থেকে বাঁচতে হলে প্রথমে অশ্লীলতা আর বেহায়াপনাকে দূর করতে হবে।

দুর্ভিক্ষ এবং আতঙ্ক : হযরত আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে জাতির মাঝে ব্যভিচার বিস্তার লাভ করে, তাদেরকে দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে পাকড়াও করা হয়, আর যাদের মাঝে উৎকোচ (ঘুষ) বিস্তার লাভ করে, তাদেরকে পাকড়াও করা হয় ভীতি ও আতঙ্কের মাধ্যমে। (মুসনাদে আহমদ)। এই হাদিসটি দ্বারা একসাথে দুটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেল। অর্থাৎ দুর্ভিক্ষের কারণ ব্যভিচার, আর আতঙ্কের কারণ ঘুষ। সুতরাং এসব বিপদ থেকে মুক্তি পেতে হলে এসব খারাপ কাজ পরিহার করতে হবে।

বিপদাপদের কারণ এবং মুক্তির উপায় : আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য করলে আল্লাহ তায়ালা বান্দার প্রতি দয়া এবং অনুগ্রহ করেন। আমাদের জীবনে বিপদাপদ আসার অন্যতম কারণ আল্লাহর অবাধ্যতা। তবে কিছু কিছু বিপদাপদ আসে মুমিন বান্দাকে পরীক্ষা করার জন্য। যাই হোক একজন মুসলমান হিসেবে অবশ্যই বিপদাপদ থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা মুমিন বান্দাকে বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করে। আর এসব বিপদাপদ মুমিনের জন্য রহমত স্বরূপ।

বিপদাপদ থেকে মুক্তির জন্য করণীয় : বেশি বেশি দান-সদকা এবং নেসাব পরিমাণ সম্পদ হলে যাকাত আদায় করা। নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত করা। নিয়মিত তওবা-ইস্তেগফার করা। আল্লাহর জিকির করা। নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা। ফরয হুকুম পালনের পাশাপাশি নফল আদায়ে গুরুত্ব দেয়া। সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ করা। দোয়া কান্না-কাটি করা। ইসলামের সকল হুকুম পালন করা।


62
ইসলামী আরবি চান্দ্র বর্ষের অষ্টম মাস ‘শাবান’। শাবান শব্দে পাঁচটি অক্ষর আছে। চান্দ্র বর্ষের প্রথম মাস হলো মুহাররম। দেখা যায় মুহাররম শব্দেও পাঁচটি বর্ণই আছে।

তাছাড়া চান্দ্র বর্ষের নবম মাস রামাদানেও রয়েছে পাঁচটি বর্ণ। এই পাঁচ বর্ণ বিশিষ্ট চান্দ্র বর্ষের তিনটি মাসের ফযিলত ও তাৎপর্য ইসলামের ইতিহাসে একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। যা কালের খাতায় ইতিহাসের পাতায় রোজ কেয়ামত পর্যন্ত আপন মহিমায় ভাস্বর হয়ে থাকবে। এর কোনো ব্যত্যয় হবে না। শাবান মাসকে মুয়াজ্জাম বা মহিমান্বিত এই বিশেষণে বিভ‚ষিত করা হয়েছে। সহি হাদিসসমূহে রাজাব মুদারের পরই এই মাসের স্থান দেখতে পাওয়া যায়। ভারতীয় উপমহাদেশে ও মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র এই মাসের মধ্যবর্তী রজনীকে লাইলাতুল বারায়াত বা শবে বরাত নামে আখ্যায়িত করা হয়।

আচেহ ইন্দোনেশিয়ার একটি দ্বীপ। এই দ্বীপ দেশে বসবাসকারী আচেনীয়গণ এই রাতকে কুন্দুরী বলে অভিহিত করেন। এই রাতে পরোলোকগত ব্যক্তিদের জন্য রূহানি মঙ্গলের উদ্দেশ্যে রাতভর দোয়া ও মোনাজাত করেন। কবরস্থানগুলো পরিষ্কার করা হয় ও কান্দুরী নামক খাদ্য ও নিয়াজ বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়। এসব মঙ্গলক্রিয়ার শুভফল দ্বারা মৃত ব্যক্তিগণ রূহানিভাবে উপকৃত হন বলে সাধারণ মানুষ মনে করে থাকেন।

আর জাভার অধিবাসীগণ এই রাতকে ‘রূয়াহ’ বলে আখ্যায়িত করেন। তাদের ভাষায় রূয়াহ শব্দটির বহুবচন হলো আরওয়াহ। রূহানিভাবে পরলোকগত লোকদের উপকার সাধনই তার লক্ষ্য। আর দ্বীপদেশে বসবাসকারী চিন্নেগোত্রের লোকেরা এই রাতকে ‘মাদ্দাগেন’ বলে অভিহিত করেন। তাদের ভাষায় মাদ্দাগেন শব্দের অর্থ হলো সে রাত রজব মাসের অনুমান করে ও বিশেষ মর্যাদার অধিকারী।

এই রাত্রির বিশেষ নফল সালাতকে বলা হয় ‘সালাত আল হা-জাহ।’ এই চান্দ্রমাসের শেষ কয়েক দিবসে এই দেশের রাজধানীতে একটি বিশাল জমায়েত অনুষ্ঠিত হয়। তা ছাড়া আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিম প্রান্তের দেশ মরক্কোর শাবান মাসের সমাপ্তি দিবসে একটি উৎসব পালিত হয়। পাশ্চাত্য লেখক এল. বুনটের রচনায় এই উৎসবের বিবরণ পাওয়া যায়।

প্রাচীন আরবে তাৎপর্যের দিক দিয়ে রমজান মাসের সাথে শাবান মাসের সাদৃশ্য রয়েছে বলে মনে করা হতো। কেননা, শাবান শব্দে পাঁচটি বর্ণ রয়েছে। অনুরূপভাবে রামাজান শব্দেও রয়েছে পাঁচটি বর্ণ। রামাজান শব্দের মূল ধাতু হচ্ছে ‘রমজ’। এর অর্থ জ্বালিয়ে দেয়া। শাবান শব্দের মূল ধাতু হচ্ছে ‘শায়াব’। এর অর্থ হচ্ছে বিরতি। মোট কথা, বিরতিসহ ইবাদতের মাধ্যমে গোনাহসমূহ জ্বালিয়ে দেয়াই হলো শাবান ও রমজানের মূল চেতনা। এই চেতনা জাগ্রত না হলে সময়ক্ষেপণ হয়তো হবে। কিন্তু কাক্সিক্ষত ফল লাভ করা যাবে না।

সহি হাদিসের বর্ণনা হতে জানা যায়, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সা. অন্যান্য মাস অপেক্ষা শাবান মাসেই অধিকতর নফল রোজা রাখতেন। (সহি বুখারি : কিতাবুস সাওম, অধ্যায় ৫২; জামে তিরমিজী : কিতাবুস সাওম, অধ্যায় ৩৬)। উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা রা. পূর্ববর্তী রামাজানের পরিত্যক্ত রোজা শাবান মাসে আদায় করতেন।
প্রাচীন আরবীয় সৌরবর্ষে শাবান এবং রামাজান এই উভয় মাসই গ্রীষ্মকালে পড়েছিল। এ সময়টির কেন্দ্র ছিল শাবানের ১৫ তারিখ। এ দিবসটি মুসলিম সমাজে আজ পর্যন্ত নববর্ষের সমারোহ বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেছে। জনসাধারণ বিশ্বাস করে যে, পনেরই শাবানের পূর্ব রাত্রিতে জীবন তরুতে একটি ঝাঁকুনি দেয়া হয়। ওই তরুর পত্রসমূহে সমস্ত জীবিত ব্যক্তির নাম লিখিত রয়েছে।

ঝাঁকুনির ফলে সেসব পত্র শাখাচ্যুত হয়ে নিম্নে পতিত হয়, তাতে যাদের নাম লিখিত রয়েছে আগামী বর্ষে তাদের মৃত্যু ঘটবে। সহি হাদিসে বলা হয়েছে, এই রাতে (অর্থাৎ, শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে) আল্লাহপাক সর্বনিম্ন আকাশে অবতরণ করেন এবং মরণশীল মানবমন্ডলীকে তাদের পাপের মার্জনা প্রার্থনার আহ্বান জানান। (জামে তিরমিজী : ফাযায়েল অধ্যায় ৩৯)।

ইরান ও ভারত উপমহাদেশসহ বিশ্ববাসী মুসলমানগণ ১৪ শাবানের দিবাগত রাতে মৃত ব্যক্তিদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষভাবে দোয়া ও মোনাজাত করেন। দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করেন, পাড়া প্রতিবেশীদের গৃহে পাঠান। আত্মীয়-স্বজনকে উপহার দেন। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এই দিনে নফল রোজা রাখতে ও রাত্রিতে নফল ইবাদত করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি এই রাত্রে ‘জান্নাত আল বাকী’ কবরস্থান গমন করে মৃত ব্যক্তিদের রূহের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করেছেন।

এই রাত্রিকে বলা হয় ‘লাইলাতুল বারাআত’ অর্থাৎ নিষ্কৃতির রাত্রি, পাপ মার্জনার রাত্রি বা শব-ই বরাত অর্থাৎ সৌভাগ্য রাজনী। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সা. আল্লাহপাকের দরবারে এই প্রার্থনাও করেছেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শা’বান ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’ এতসব আয়োজন ও উপকরণের জন্যই শাবান মাসের ফযিলত ও তাৎপর্যের অঢেল সমারোহ, তা সহজেই অনুমান করা যায়।

63
বিশ্বায়নের যুগে পৃথিবী অনেক দূর এগিয়েছে। বিজ্ঞানের আশির্বাদে বিশ্ব আজ ছুটে চলেছে দুর্দমনীয় গতিতে। তাই বলে এটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই যে, মানুষ অসীম শক্তির অধিকারী হয়ে গেছে। মানুষ আল্লাহর এক ক্ষুদ্র সৃষ্টি মাত্র।

মানুষ ঠিক ততটুকুই জানতে পারে, যতটুকু আল্লাহ তাদের জানান। মানুষ ততটুকু শক্তিই প্রয়োগ করতে পারে, যতটুকু শক্তি আল্লাহ দান করেন। এর বাইরে মানুষের বিন্দু পরিমাণ কোনো ক্ষমতা নেই। বর্তমান পৃথিবীর পরিস্থিতি আমাদের সেই জিনিসটিই আবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। ‘করোনা’ নামের নতুন একটি ভাইরাস এসে আমাদের সে কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। এই ভাইরাসে এ পর্যন্ত বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এই ভাইরাস প্রথমে চীনে মহামারী আকার ধারণ করার পর এখন বিশ্বের অনেক দেশেই মহামারীরূপে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশেও ‘করোনা’য় মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, এই রোগের কোনো প্রতিষেধক এখনো তৈরি করা সম্ভব হয়নি।

কিছুদিন পর পর নতুন নতুন রোগ-ব্যাধি ও ভাইরাস এসে এ বিষয়টি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা যত উন্নতিই করি, মহান আল্লাহর রহমত ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। এ কারণেই আমাদের উচিত, আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করা এবং সব পাপ থেকে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করা। কারণ আমাদের পাপের কারণেই আমাদের ওপর বিভিন্ন আজাব নেমে আসে।

রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০১৯)।

সার্স বা ইবোলার মতোই প্রাণঘাতী ভাইরাস হলো এই ‘করোনা’ ভাইরাস। তবে বাস্তবতা হলো এটি সার্স বা ইবোলার চেয়েও অনেক বেশি বিপজ্জনক। করোনাভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি শরীরে ছড়ায়।

এই ভাইরাস এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে দেখা যায়নি। তবে ২০০২ সালে চীনে সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামের একটি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল, যাতে সংক্রমিত হয়েছিল ৮ হাজার ৯৮ জন। মারা গিয়েছিল ৭৭৪ জন। সেটিও ছিল এক ধরনের ভাইরাস। করোনাভাইরাসের লক্ষণগুলো হলো কাশি, জ্বর, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, নিউমোনিয়া।

এই মুহূর্তে আমাদের সবার উচিত, মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকা, সর্বদা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থাকা। কারণ কিয়ামতের নিদর্শনগুলোর একটি হলো মহামারী।

রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের আগের ছয়টি নিদর্শন গণনা করে রাখো। আমার মৃত্যু, অতঃপর বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়, অতঃপর তোমাদের মধ্যে ঘটবে মহামারী, বকরির পালের মহামারীর মতো, সম্পদের প্রাচুর্য, এমনকি এক ব্যক্তিকে একশ’ দিনার দেওয়ার পরও সে অসন্তুষ্ট থাকবে। অতঃপর এমন এক ফিতনা আসবে, যা আরবের প্রতিটি ঘরে প্রবেশ করবে। অতঃপর যুদ্ধবিরতির চুক্তি, যা তোমাদের ও বনি আসফার বা রোমকদের মধ্যে সম্পাদিত হবে। অতঃপর তারা বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং ৮০টি পতাকা উড়িয়ে তোমাদের বিপক্ষে আসবে; প্রতিটি পতাকার নিচে থাকবে ১২ হাজার সৈন্য। (বুখারি, হাদিস : ৩১৭৬)।

হাদিসের ভাষ্যের সঙ্গে আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি অনেকাংশেই মিলে যায়। বিশ্বব্যাপী মানুষের মধ্যে প্রাচুর্য বেড়েই চলছে। নতুন নতুন রোগ আত্মপ্রকাশ করছে। এগুলো বন্ধ করার সাধ্য কারো নেই। তবে এই পরিস্থিতিতে আমরা রাসূল (সা.)-এর দেখানো পথ অনুসরণ করতে পারি।

মহামারী মূলত আল্লাহর গজব। মহামারী প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, এটি আল্লাহর গজব বা শাস্তি বনি ইসরাঈলের এক গোষ্ঠীর ওপর এসেছিল, তার বাকি অংশই হচ্ছে মহামারী। অতএব, কোথাও মহামারী দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা থেকে চলে এসো না। অন্যদিকে কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গায় যেয়ো না। (তিরমিজি, হাদিস : ১০৬৫)।

তাই আমাদের উচিত, যেখানে এ ধরনের রোগের প্রকোপ দেখা দেবে, সেখানে যাতায়াত থেকে বিরত থাকা। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ সরকারিভাবে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোতে যাতায়াতে সতর্কতা জারি করেছে। যেহেতু চিকিৎসকদের মতে এ ভাইরাসটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। সাধারণত ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার মতো তীব্র নিউমোনিয়া সিনড্রোমের মতো করেই এ ভাইরাস ছড়ায়।

মহামারী আল্লাহর গজব হলেও এতে আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিকে পাপী-জাহান্নামি মনে করা যাবে না। রাসূল (সা.)-এর ভাষায় মহামারীতে মারা যাওয়া ব্যক্তিও শহীদ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, পাঁচ প্রকার মৃত শহীদ: মহামারীতে মৃত, পেটের পীড়ায় মৃত, পানিতে ডুবে মৃত, ধ্বংসস্তুপে চাপা পড়ে মৃত এবং যে আল্লাহর পথে শহীদ হলো। (বুখারি, হাদিস : ২৮২৯)।

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, মহামারীতে মৃত্যু হওয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য শাহাদাত। (বুখারি, হাদিস : ২৮৩০)। অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তিনবার বলবে ‘বিসমিল্লা-হিল্লাজী লা ইয়াদ্বুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিস সামা-ই, ওয়াহুয়াস সামী‘উল আলীম’, অর্থ : ‘আল্লাহর নামে যাঁর নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী’; সকাল হওয়া পর্যন্ত তার প্রতি কোনো হঠাৎ বিপদ আসবে না। আর যে তা সকালে তিনবার বলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার ওপর কোনো হঠাৎ বিপদ আসবে না। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৮৮)। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সব ধরনের মহামারী ও গুনাহ থেকে রক্ষা করুন। আমিন।


64
ঈমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো নামাজ। আর নামাজ আদায় করতে হবে একাগ্রচিত্তে, খুশু-খুজুর সাথে। একবার হযরত হাতেম আসম রহ.-কে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কিভাবে নামাজ আদায় করেন। তিনি জবাবে বললেন, আমি প্রথম খুব ভালোভাবে ওযূ করে নিই। ওযূর দ্বারা আল্লাহ তাআলা বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সগীরা গোনাহগুলো মাফ করে দেন। এরপর আমি যখন নামাজে দাঁড়াই তখন মনে করি, যেন আমি পুলসিরাতের উপর দাঁড়িয়ে আছি। একটু নড়াচড়া করলেই নিচে জাহান্নামের আগুনে পড়ে যাব। মনে করি, কাবা ঘর আমার সামনে। আমার ডানে জান্নাত আর বামে জাহান্নাম। পেছনে মালাকুল মউত দাঁড়িয়ে আছে। আর মনে করি, এটাই আমার জীবনের শেষ নামাজ।
তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, এভাবে আপনি কতদিন যাবৎ নামাজ আদায় করছেন?
বললেন, ৩০ বছর যাবৎ আমি এভাবেই নামাজ আদায় করে আসছি।
এ কথা শুনে প্রশ্নকারী কেঁদে ফেললেন। বললেন, আমি তো জীবনে এক ওয়াক্ত নামাজও এভাবে আদায় করতে পারিনি।
আমাদের দাদা শায়খ হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. নামাজে ধ্যান-খেয়াল ও খুশু-খুজু সৃষ্টির পাঁচটি উপায় বর্ণনা করেছেন। এগুলো অবলম্বন করলে একাগ্রচিত্তে পূর্ণ মনোযোগসহ নামাজ আদায় করা সম্ভব।
এক. যারা অর্থ বোঝে তারা অর্থের প্রতি পূর্ণ খেয়াল রেখে কেরাত পড়বে। প্রতিটি তাকবীর, তাহমীদ, তাসবীহ ও অন্যান্য দুআ পাঠের সময় অর্থের প্রতি লক্ষ রাখবে। এর দ্বারাও মন অন্য কিছুর প্রতি ধাবিত হওয়া থেকে বিরত থাকবে।
দুই. কখনো কোরআনে কারীমের এমন অংশ তেলাওয়াত করা হয় যার অর্থ আমার জানা নেই কিংবা মুসল্লী যদি সাধারণ মানুষ হয় তা হলে এ ক্ষেত্রে নামাযের কেরাত, তাকবীর, তাহমীদ, দুআ ও তাসবীহ পাঠের সময় শব্দের প্রতি পূর্ণ খেয়াল রাখবে। উদাহরণত, আল্লাহু আকবার উচ্চারণের সময় প্রতিটি অক্ষর পূর্ণ খেয়াল করে উচ্চারণ করবে। প্রথম হামযা তারপর দুইটি লাম এরপর হা এভাবে প্রতিটি অক্ষর খেয়াল করে উচ্চারণ করবে। অর্থ জানা না থাকলে এভাবে প্রতিটি অক্ষরের প্রতি খেয়াল করে নামাজ আদায় করবে।
তিন. এই ধ্যান-খেয়ালের সাথে নামাজ আদায় করবে যেন আমি আল্লাহ পাককে দেখছি। আমার রব আমার খালেক আল্লাহ তাআলা আমার সামনে রয়েছেন। হাদীসে জিব্রাইলে উল্লেখ রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, এমনভাবে তুমি ইবাদত করবে যেন তুমি আল্লাহ তাআলাকে দেখছ। এটাকে তাসাওউফের পরিভাষায় বলা হয়, ‘মরতবায়ে মুশাহাদা’। এ ধ্যান-খেয়াল জাগ্রত রেখে কেউ নামাজ আদায় করলে তার মন অন্য দিকে যাওয়া সম্ভব নয়। আল্লাহ তাআলা তো আমাদের সর্বদাই দেখছেন। আমাদের সবকিছু তার কাছে একেবারে সুস্পষ্ট। আমার বাহ্যিক সকল কর্মকান্ড তো দেখছেনই এমনকি আমার অন্তর কী কল্পনা করে তাও তিনি জানেন।
হাদীসে ‘তুমি আল্লাহকে দেখছ’ না বলে ‘যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ’ বলা হয়েছে। কারণ, আল্লাহ পাককে সরাসরি দেখা সম্ভব নয়; বরং আল্লাহ পাককে দেখার ধ্যান করতে হবে। এই অবস্থা অন্তরে সৃষ্টি করে নামাজ আদায় করতে পারলে ইনশাআল্লাহ নামাজে মন বসবে। কোনো গোলাম মনিবকে দেখতে পেলে সে কি কোনো অন্যায় করতে পারবে? মনিবের নাফরমানি করতে পারবে? কখনোই না।
চার. যদি এ ধ্যান অন্তরে সৃষ্টি করা সম্ভব না হয়, তা হলে এ কথা খেয়াল করবে, আল্লাহ তাআলা আমাকে দেখছেন। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, এমনভাবে তুমি ইবাদত করবে যেন তুমি আল্লাহ তাআলাকে দেখছ। তাঁকে দেখার এ ধ্যান সৃষ্টি করা সম্ভব না হলে তিনি তো অবশ্যই তোমাকে দেখছেন।
এটাকে তাসাওউফের পরিভাষায় ‘মরতবায়ে মুরাকাবাহ’ বলা হয়। আল্লাহ তাআলা আমাকে দেখছেন এ ধ্যানে নামাজ আদায় করলে অবশ্যই নামাজে মন বসবে। কোনো গোলাম মনিবকে দেখতে না পেলেও যদি তার জানা থাকে, মনিব তাকে দেখছেন, তা হলে এ অবস্থায় কি তার পক্ষে কোনো অন্যায়-অপরাধে লিপ্ত হওয়া সম্ভব? এমনিভাবে মুসল্লী যখন ‘আল্লাহ আমাকে দেখছেন’ এ ধ্যানের সঙ্গে নামাজ আদায় করবে তখন তার অন্তরে অন্য কোনো ধ্যান-খেয়াল আসবে না।
পাঁচ. নামাজে দাঁড়ানোর সময় মনে মনে এই খেয়াল করা, হতে পারে এটাই আমার জীবনের শেষ নামাজ। এ নামাজের পর আমি হয়তো আর নামাযের সুযোগ পাব না। পরবর্তী নামাজের ওয়াক্ত আসার পূর্বেই আমার মৃত্যু হতে পারে। কেউ নামাজ আদায়ের সময় এই ধ্যান-খেয়াল সৃষ্টি করতে পারলে তার নামাজে ভিন্ন কোনো খেয়াল আসা সম্ভব নয়।
উল্লিখিত পাঁচটির যেকোনো একটি পরিপূর্ণরূপে অবলম্বন করতে পারলে পূর্ণ ধ্যান-খেয়াল ও খুশু-খুজুর সঙ্গে নামাজ আদায় করা সম্ভব হবে।


65
মহান আল্লাহ তাঁর বহু সৃষ্টির মধ্যে বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক রেখে দিয়েছেন। তিনি যেমন রোগ সৃষ্টি করেছেন, রোগের প্রতিষেধকও সৃষ্টি করেছেন। এমন অনেক খাবার রয়েছে, যেগুলোর ঔষধি গুণ নিয়ে প্রিয় নবী (সা.) থেকে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এর কয়েকটি তুলে ধরেছেন মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা
 
আজওয়া খেজুর :

মদিনার উত্কৃষ্টতম খেজুর আজওয়া। পবিত্র হাদিস শরিফে এই ফলটিকে জান্নাতের ফল আখ্যায়িত করা হয়েছে। রাসুল (সা.)-এর প্রিয় ফল ছিল খেজুর। এর উপকারিতা অপরিসীম। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালবেলা সাতটি আজওয়া (উত্কৃষ্ট) খেজুর খাবে, সেদিন কোনো বিষ ও জাদু তার ক্ষতি করবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৪৪৫)। হৃদেরাগে আক্রান্তদের জন্যও এটি মহা উপকারী ওষুধ। রাসুল (সা.) তাঁর এক সাহাবিকে হৃদেরাগের জন্য আজওয়া খেজুরের তৈরি ওষুধ খেতে পরামর্শ দিয়েছেন। সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি অসুস্থ হলে রাসুল (সা.) আমাকে দেখতে আসেন। এ সময় তিনি তাঁর হাত আমার বুকের ওপর রাখলে আমি তার শৈত্য আমার হৃদয়ে অনুভব করি। এরপর তিনি বলেন, তুমি হৃদেরাগে আক্রান্ত। কাজেই তুমি সাকিফ গোত্রের অধিবাসী হারিসা ইবনে কালদার কাছে যাও। কেননা সে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক। আর সে যেন মদিনার আজওয়া খেজুরের সাতটা খেজুর নিয়ে বিচিসহ চূর্ণ করে তোমার জন্য তা দিয়ে সাতটি বড়ি তৈরি করে দেয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৩৫)

এই হাদিস থেকে আরেকটি জিনিস বোঝা যায়, তা হলো—কোনো ওষুধ গ্রহণ করার আগে অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ মহান আল্লাহ তাঁর বহু সৃষ্টিতে ঔষধি গুণ রেখেছেন, তবে রোগভেদে তার প্রয়োগেরও ভিন্ন ভিন্ন পন্থা রেখেছেন, যাঁরা তা নিয়ে গবেষণা করেন, তাঁরাই তা জানতে পারেন।

কালিজিরা :

বিস্ময়কর এই জিনিসটির প্রশংসা করেছেন খোদ রাসুল (সা.)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, কালিজিরায় সব ধরনের রোগের উপশম আছে, তবে ‘আস্সাম’ ব্যতীত। আর ‘আস্সাম’ হলো মৃত্যু। এর ‘আল হাব্বাতুস্ সাওদা’ হলো (স্থানীয় ভাষায়) ‘শূনীয’ (অর্থাৎ কালিজিরা)। (মুসলিম, হাদিস : ৫৬৫৯)

তাই যেকোনো রোগ নিরাময়ে, রোগ থেকে নিরাপদ থেকে অন্যান্য সতর্কতার পাশাপাশি অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে কালিজিরা সেবন করা যেতে পারে। আয়ুর্বেদিক, ইউনানি ও কবিরাজি চিকিৎসায় এর ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে। তাই যারা এসব চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা করে, তাদের কাছে রোগ অনুযায়ী সঠিক ব্যবহারবিধি পাওয়া যাবে। কারণ একেক ধরনের রোগের জন্য কালিজিরার ব্যবহারবিধিও একেক রকম।

জয়তুন :


প্রিয় নবী (সা.)-এর পছন্দের ফলগুলোর একটি ছিল জয়তুন। এর তেলও শরীরের জন্য বেশ উপকারী। রাসুল (সা.) তা নিজে ব্যবহার করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও ব্যবহার করার তাগিদ দিতেন। হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা (জয়তুনের) তেল খাও এবং তা শরীরে মালিশ করো। কেননা এটি বরকত ও প্রাচুর্যময় গাছের তেল।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৮৫১)

কোরআনে বর্ণিত ফলগুলোর অন্যতম একটি ফল জলপাই বা জয়তুন। সুরা ত্বিনের প্রথম আয়াতে মহান আল্লাহ যে ফলের কসম খেয়েছেন। সুরা নুরের ২৪ নম্বর আয়াতে তিনি এই ফলের গাছকে আখ্যা দিয়েছেন মুবারক গাছ হিসেবে। রাসুল (সা.)-এর একটি হাদিস থেকেও জানা যায় যে আগের নবীরাও এই বরকতময় গাছের ফল ও তেল ব্যবহার করতেন। মিসওয়াক হিসেবে ব্যবহার করতেন এই গাছের ডালকে। (আল মুজামুল আওসাত)

জমজমের পানি :

জমজমের পানি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পানি। পবিত্র জমজম নিয়ে রাসুল (সা.)-এর বহু হাদিস রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো ইবনে আব্বাস (রা.) কর্তৃক বর্ণিত। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ পানি হলো জমজমের পানি। তাতে রয়েছে তৃপ্তির খাদ্য ও ব্যাধির আরোগ্য।’ (আল-মুজামুল আওসাত, হাদিস : ৩৯১২)। রাসুল (সা.) জমজমের পানি ভীষণ পছন্দ করতেন। বেশির ভাগ সময় তিনি জমজমের পানি পান করার চেষ্টা করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি জমজমের পানি সঙ্গে করে নিয়ে আসতেন, আর বলতেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তা বহন করে আনতেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৬৩)

 

মহান আল্লাহ এই পানিতে এতটাই বরকত রেখেছেন, যে কেউ (আল্লাহর ওপর পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে) কোনো উপকার লাভের আশায় এই পানি পান করলে মহান আল্লাহ তাঁর আশা পূরণ করেন। জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, জমজমের পানি যে উপকার লাভের আশায় পান করা হবে, তা অর্জিত হবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩০৬২)

মধু :

মধুর ঔষধি গুণ সবারই কমবেশি জানা। মহান আল্লাহ মধুর মধ্যে বহু রোগের আরোগ্য রেখেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তার (মৌমাছির) পেট থেকে নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয়, যাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য। অবশ্যই তাতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৬৮-৬৯)। রাসুল (সা.) মধু বেশ পছন্দ করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মিষ্টি ও মধু খুব ভালোবাসতেন। (বুখারি, হাদিস : ৫২৭০)। এ ছাড়া তিনি অন্যদের বিভিন্ন রোগের জন্য মধু পান করার পরামর্শ দিতেন। মহানবী (সা.)-এর কাছে এক সাহাবি এসে তাঁর ভাইয়ের পেটের অসুখের কথা বললে রাসুল (সা.) তাঁকে মধু পান করানোর পরামর্শ দেন এবং এতে সে সুস্থ হয়ে ওঠে। (বুখারি, হাদিস : ৫৩৬০)

66
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী এবং দেশের অন্যান্য কর্মীদের জন্য সরকারের বিশেষ প্রণোদনা দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘মার্চ মাস থেকে যারা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ করছেন, আমি তাদের পুরষ্কৃত করতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ১৫টি জেলার জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্যকালে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘সরকার তাদের উৎসাহ দেয়ার জন্য বিশেষ প্রণোদনা দেবে। এছাড়াও দায়িত্ব পালনের সময় কেউ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে তাদের জন্য ৫-১০ লাখ টাকার একটি স্বাস্থ্য বীমা থাকবে। কেউ মারা গেলে স্বাস্থ্য বীমার পরিমাণ পাঁচগুণ বেশি হবে।’

‘তবে মনে রাখবেন, এগুলো মার্চ মাসের পর থেকে যারা জীবন বাজি রেখে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে কাজ করছেন তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে,’ উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।


 
সূত্র : ইউএনবি

67
অসুখ হলেই আমরা ছুটি সিঙ্গাপুর, লন্ডন, যুক্তরাষ্ট্রে। কেউবা আবার সামর্থ্য অনুযায়ী পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। কিন্তু মহামারি আকার ধারণ করা করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ এমন এক রোগ যার ভয়ে তটস্থ বিশ্বের তাবড় তাবড় দেশ। নিস্তার নাই কারো। করোনার সংক্রমণে প্রাণ গেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চিকিৎসক থেকে শুরু করে আইনপ্রণেতাদেরও। আক্রান্ত হয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীও। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা তো আরও নাজুক। এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় সংক্রমণের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। ইউরোপের দেশ ইতালিতেই প্রাণ গেছে ১০ হাজারের বেশি মানুষের। সারা বিশ্বে সংক্রমিত হয়েছে ৬ লাখ ৬২ হাজার ৯৬৭ জন।

কিন্তু বাংলাদেশ? যেখানে মানুষ যত্র-তত্র থুতু আর পানের পিক ফেলে, চায়ের দোকানের মামা সর্দি ঝেড়ে কাপড়ে হাত মুছে চা দেয়, মৌসুমী ইনফ্লুয়েঞ্জার এই সময়ে প্রতিদিন কাউকে না কাউকে রাস্তাঘাটে নাক আঙুল ঢুকিয়ে শুকনো সর্দি পরিষ্কার করতে দেখা যায়, লোকজন মানুষের মুখের সামনে খোলা হাঁচি দিয়ে বসে- সেই বাংলাদেশে আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষিত মহামারি করোনাভাইরাসের নতুন কোনো সংক্রমণ নেই! যে ভাইরাস কিনা করোনা সংক্রমিত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির জলীয় কণা থেকে ছড়ায়। আবার এমনও নয়, এই দেশে করোনা আক্রান্ত কোনো রোগী নেই কিংবা আক্রান্ত দেশ থেকে ভাইরাস নিয়ে এ দেশে কেউ আসেনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাত্র সপ্তাহখানেক আগে বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসের বিস্তার আরও দ্রুত ও বিস্তৃত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছে।

তাহলে, কীভাবে এত দ্রুত সংক্রমণ ও মৃত্যু শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব হলো বাংলাদেশে? প্রশ্ন আর সংশয় থেকেই যায়। সেইসঙ্গে ভীতিও। সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের অধীন জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) তাদের সর্বশেষ ব্রিফিংয়ে গতকাল শনিবার জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নতুন কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। সেইসঙ্গে সংক্রমিত ৪৮ জনের মধ্যে ১৫ জন এইমধ্যে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছেন। মৃতের সংখ্যা আগের পাঁচই আছে।

এমন খবরে দেশবাসীর খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু তার বদলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। দেশে নতুন সংক্রমণ নেই- এই খবরে মানুষ আতঙ্কিত। কেউ কেউ বলছেন, কবে দেশের মানুষ এত সভ্য হলো যে নিয়মমতো সরকারি নির্দেশনা মেনে চলে দেশ আজ সংক্রমণ মুক্ত! যেখানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সবাইকে ঘরে থাকার কথা বলার পরও হাজার হাজার মানুষ গাদাগাদি করে বাসে-ট্রেনে-লঞ্চে করে গ্রামে ছুটে গেছে। প্রবাসীরা ভাইরাস নিয়ে দেশে এসে হোম কোয়ারেন্টিন না মেনে যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়িয়েছেন।

আবার কেউ ক্ষোভ ঝাড়ছেন- করোনাভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে বারবার আইইডিসিআরে ফোন করলেও তারা সাড়া দিচ্ছে না। পরীক্ষা তো পরের কথা।

এক ফেসুবক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘নো টেস্ট, নো রেজাল্ট, নো করোনা, সাবাশ বাংলাদেশ।’

আরেকজন বলছেন, ‘যাদের পরীক্ষা করা প্রয়োজন তাদেরকে কি পরীক্ষা করা হচ্ছে?’

মিস্টার কক্স নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘আমার মনে হয় করোনা আক্রান্তের রেজাল্ট পরিকল্পিত। সঠিক রেজাল্ট প্রকাশ করছে না।’

কৌশিক নামে একজন লিখেছেন, ‘করোনা পরীক্ষা করার কিট নাই৷ করোনা পরীক্ষা না করলে আক্রান্ত লোক শূন্যই পাবেন।’

...এই হলো সাধারণ মানুষের মনের অবস্থা। ২৪ ঘণ্টায় ৪২ জনকে পরীক্ষা করে কী করে বলা সম্ভব বাংলাদেশে নতুন কোনো সংক্রমণ নেই! এ নিয়ে মানুষের মধ্যে অবিশ্বাসের সুর আছে। তাদের ধারণা আক্রান্ত অনেক, কিন্তু তথ্য গোপন করা হচ্ছে। এমনটাই হয়ে থাকলে মহাবিস্ফোরণ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

আর যদি সরকার তথ্য গোপন না করে থাকে, এটিই যদি সত্য হয়- তবে বাংলাদেশ করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে উন্নত বিশ্বের কাছে রোল মডেল হতে পারে। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশের করোনা সংক্রমণের প্রথম ঘোষণা দেওয়ার মাত্র ২১ দিনের মাথায় দেশে নতুন কোনো সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি। তাহলে বলতেই হয় সাবাশ বাংলাদেশ।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমিয়ে মৃত্যুর হার কমাতে বহুদিন লেগেছে, সেখানে বাংলাদেশের লেগেছে মাত্র এই কদিন। এই ২১ দিনের মাথায় গতকাল শনিবার বাংলাদেশের কোভিড-১৯ রোগে কারও মৃত্যু হয়নি, কেউ সংক্রমিতও নয়। বরং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

এক নজরে দেখে নেই বিশ্বের নামীদামি দেশের চিত্র-

যুক্তরাষ্ট্র : করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে গত ২০ জানুয়ারি। এরইমধ্যে দেশটিতে সংক্রমণ লাখ ছাড়িয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১৭শ’র বেশি মানুষের। সংক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এখন দেশটি।

ইতালি : সংক্রমণ শুরুর ২ মাসের মাথায় মৃত্যু হয়েছে ১০ হাজারের বেশি মানুষের। প্রতিদিন শত শত মানুষ মারা যাচ্ছেন ইউরোপের এই উন্নত দেশটিতে। আক্রান্তের সংখ্যায় ৯২ হাজারের বেশি।

চীন : গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় চীনের উহানে। প্রযুক্তির দিক থেকে এগিয়ে থাকা এই দেশে মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজারের বেশি মানুষের। সংক্রমণও ছড়িয়েছে ৮১ হাজার ৪৩৯ জনের মধ্যে। তবে করোনা মোকাবিলায় চীনকে এখন সফল বলা চলে। তারা মৃত্যুর হার কমিয়ে এনেছে, সঙ্গে সংক্রমণও।

স্পেন : স্পেনে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। দেশটিতে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৯৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে।এ ছাড়া লাগামহীনভাবে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ৭৩ হাজারের বেশি। স্পেনে ভাইরাসটির এত বিস্তার ঘটার সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে  ভাইরাসজনিত মহামারি মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকার কথা বলা হচ্ছে। পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য সেবার সরঞ্জামের অসম বণ্টনও একটা কারণ হিসেবে গণমাধ্যমের খবরে উল্লেখ করা হয়।

ভারত : ভারতে সংক্রমণের সংখ্যা হাজার ছুঁই ছুঁই। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৪ জনের। গতকালের খবর-দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ পাঞ্জাবের কর্তৃপক্ষ সেখানকার ২০টি গ্রামের অন্তত ৪০ হাজার বাসিন্দাকে কোয়ারেন্টিনে আটক রেখেছে। কারণ সন্দেহ করা হচ্ছে, তাদের সবার দেহে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে মাত্র একজনের কাছ থেকে। ইতোমধ্যেই ৭০ বছর বয়সী বলদেব সিং নামে ওই ব্যক্তি সম্প্রতি করোনা ভাইরাসে মারা গেছেন। তিনি ইতালি ও জার্মানি সফর করে এসে কোয়ারেন্টিন না মেনে জনসমাবেশ করেছিলেন।

ইরান : ইরানের ৩১টি প্রদেশে করোনাভাইরাস ছড়াতে সময় নিয়েছে মাত্র ১৬ দিন। অন্যদিকে, ১৬টি দেশ দাবি করেছে ইরান থেকে তাদের দেশে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনী ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথমবার ঘোষণা দেন করোনাভাইরাস নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই, এটা নিয়ে ইরানের শত্রুরা বাড়িয়ে বলছে। এক সপ্তাহ পরে ইরানে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকে যখন, তখন দেশটির প্রধানমন্ত্রী হাসান রুহানি একই কথা আবারও বলেন।

বিবিসির পারস্য বিভাগের তদন্তে জানা গেছে, একটি নির্দিষ্ট দিনে যে পরিমাণ মানুষ মারা গছে বলে সরকার বলছে তার তুলনায় সংখ্যা ছয়গুণ বেশি। এ পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে ৩৫ হাজার মানুষ। আর মৃত্যু হয়েছে আড়াইহাজার মানুষের।

সৌদি আরব : ব্যাপক সতর্কতা অবলম্বন করার পরও করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত ১২০৩ জন সংক্রমিত হয়েছে। এরই মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের।

কসোভো : করোনাভাইরাস সংকটে প্রথমবারের মতো সরকার পতন হয়েছে ইউরোপের দেশ কসোভোয়। কসোভা স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়, দেশটিতে এ পর্যন্ত ৯১ জন করোনাভাইরাসে রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া ৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে।

http://www.dainikamadershomoy.com/

68
সর্বজনবিদিত প্রবাদ, ‘সাবধানের মাইর নাই’ বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রাণঘাতী করোনা থেকে রক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখিত প্রবাদের বাস্তবায়ন যথোপযুক্ত, কারণ করোনার দুঃসংবাদ ঊর্ধ্বমুখী এবং থামবে কোথায় এখনো অজানা। এই প্রাণঘাতী ভাইরাস ছাড় দিচ্ছে না কাউকে; ধর্ম, বর্ণ, জাতি, কুল, দেশভেদে সবাই এর ছোবলের শিকার। প্রায় তিনমাস আগে চীনের উহান শহরে আঘাতহানার পর, এটি এখন বিশ্বব্যাপী শব্দহীন তাণ্ডব চালাচ্ছে।

কেউ কেউ এর ভেতর ষড়যন্ত্র দেখছেন এবং তথ্য গোপন করা নিয়ে সংবাদ ছাপা হচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। এ নিয়ে আর আলোচনায় না যাই, সময়ই বলে দিবে কোভিড-১৯ কি ষড়যন্ত্র? অথবা তথ্য গোপনের বিষয়টি কি আসলেই সত্য! করোনার তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হচ্ছে চিকিৎসা, অর্থনীতি, বিনোদন, যোগাযোগ, শিক্ষা ইত্যাদিসহ অন্যান্য খাত। উন্নত থেকে অনুন্নত সকল দেশে, সরকার থেকে শুরু করে জনগন সবাই আতঙ্কগ্রস্ত এবং বন্ধ হয়ে আছে দৈনন্দিন জীবনের অতিপ্রয়োজনীয় বিষয় ছাড়া বাকি কর্মযজ্ঞ; রঙ্গমঞ্চ নিভে গিয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য।

কিছু উন্নত দেশ যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে আক্রান্ত হওয়ার কিছুকাল পর, ফলে  আনবিক, পারমাণবিক, হাইড্রোজেন বোমা অথবা অস্ত্রের চেয়ে কঠিন ভাইরাস মোকাবেলায় যুদ্ধরত এবং বিধ্বস্ত অবস্থায় আছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদশের অধিকাংশ কাজকর্মও স্থবির হয়ে আছে এবং এ দেশের মানুষজন আতঙ্কগ্রস্ত আবার অসতর্কও বললেও অতিরঞ্জিত হবে না। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনার ভয়াবহতা নিয়ে পরিষ্কারভাবে বলা মুশকিল। অন্যান্য দেশে এই ভাইরাসের ছোবলের ভয়াবহতা পর্যালোচনা করে, বাংলাদেশেও অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সরকারি-বেসরকারি অথবা আংশিকভাবে চালু রাখা হয়েছে মানুষের অতিপ্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য।

খ্যাতিমান বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের আক্রান্তের সংখ্যা এবং মৃতের সংখ্যা নিয়ে যে প্রতিবেদন দিয়েছে তা রীতিমতো শিউরে উঠার মতো। প্রতিবেদনগুলো মূলত করা হয়ছে জনসংখ্যার ঘনত্বের হার, শিক্ষার হার, সচেতনতার হার, আর্থসামাজিক অবস্থা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে। এই প্রতিবেদনগুলোর যদি কিছুটা সত্যতাও থাকে, তাহলে এই দেশ বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে এটা অনুমেয়।

প্রথমদিকে সরকারের সিদ্ধান্তের পর শহরের অধিকাংশ শ্রমজীবী মানুষ শহর থেকে হয়েছিল গ্রামমুখী, যথাযথভাবে দূরত্ব বজায় রাখার বাধ্যবাধকতা মানা হয়নি এবং এখনো নির্ধারিত সময়ের আগেই ফিরছে, মানছেই না দূরত্ব বজায় রাখার বাধ্যবাধকতা। কোনো অদৃশ্যশক্তির বলে নির্ধারিত সময়ের আগেই শ্রমজীবী মানুষেরা শহরমুখী হচ্ছে, পায়ে হেঁটে অথবা ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনে গাদাগাদি করে  ফিরছে এটা নিশ্চিত করে না বলা গেলেও, এর পরিণতি সুখকর হবে না এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। অন্যান্য দেশের তুলনায়, বাংলাদেশে অল্পকয়েকজনকে করোনা পরীক্ষা করা হলেও, এর মাঝেই আক্রান্তের এবং মৃতের পরিমাণ বাড়ছে।

অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে এটা বলা বাড়াবাড়ি হবে না যে, অতি শিগগিরই বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। গত তিনমাস থেকে বিশ্বের সবগুলো নামকরা ওষধ/চিকিৎসাশাস্ত্র গবেষণা প্রতিষ্ঠান করোনার ওষধ এবং টিকা আবিষ্কারের জন্য কাজ করে গেলেও আশানুরূপ সাফল্য এখনো অর্জন করতে পারেনি। সম্ভাব্য অনেক ওষধ এবং টিকা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, পরীক্ষামূলকভাবে এগুলোর কার্যকারিতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা খুব শিগগিরই এর নির্দিষ্ট ওষধ এবং টিকা আবিষ্কারের সম্ভাবনা দেখছে না, বলা হচ্ছে সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। যদিও, অতি শিগগিরই এটি নির্মূল করা যাবে না কিন্তু এর ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ কমানো যাবে অনেকাংশে।

এখন প্রাণঘাতী করোনা মোকাবিলা করার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হল সচেতনতা এবং সতর্কতা। মানুষকে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন না করতে পারলে সরকার সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেওয়ার পরেও, সর্বাঙ্গে সফল হওয়া সম্ভবপর হবে না। সতর্কতা নির্ভর করে সচেতনতার ওপর।  জনগণ করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন না হলে, সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবেনা। সম্প্রতি কিছু ঘটনার উদ্ভব হয়েছে, যেমন ঝুঁকিপূর্ণভাবে যানবাহনে গাদাগাদি করে শহরে ফেরা, গাদাগাদি করে ত্রাণ গ্রহণ অথবা বিতরণ; যেগুলো মারাত্মকভাবে অসচেতনতাকে নির্দেশ করছে। সচেতন না হলে, সতর্কতা অবলম্বন করা প্রায় অসম্ভব এবং সতর্কতা অবলম্বন না করলে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও মারাত্মকভাবে বেকায়দায় পরে যাবে। যদিও নিরক্ষরতা, অপশিক্ষা, ধর্মীয় গোড়ামী এবং আর্থসামাজিক কারণে মানুষকে অতিদ্রুত সচেতন কর সম্ভব হচ্ছে না, তারপরেও থেমে নেই চেষ্টা।

সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে সরকারি, বেসরকারি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছামূলক প্রতিষ্ঠান/সংগঠন। মানুষকে করোনার ভয়াবহরূপ সম্পর্কে সচেতন করতে না পারলে, দীর্ঘ মেয়াদে সবাই এর কুফল ভোগ করবে। এখন প্রাণঘাতী করোনা মোকাবিলার প্রধান ওষধ হলো সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সর্বোচ্চ সতর্কতা নিশ্চিত করা। 

লেখক : মো. জহির উদ্দিন, সহ-প্রধান গবেষক, বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রাম (বিসিসিপি)।

69
নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগ কোভিড–১৯। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি এখন বিশ্বব্যাপী সংক্রমণ ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। করোনার কারণে বদলে গেছে পৃথিবীর চিরচেনা রূপ। থমকে গেছে মানুষের দৈনন্দিন স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।

আতঙ্ক তৈরি করা এই ভাইরাসটিকে মানুষ এখনও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। এর প্রতিষেধক তৈরিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বিশ্বের গবেষক ও চিকিৎসকরা।

করোনাভাইরাস শনাক্ত করতে আমরা সাধারণত থার্মাল স্ক্যানার মেশিনের ব্যবহার লক্ষ্য করেছি। যা ইতিমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন, থার্মাল স্ক্যানার দিয়েই করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়। বিষয়টি আসলে তা নয়, এটি দিয়ে শুধুমাত্র শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় করা হয়।

জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা যায়। করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার ২-১৪ দিনের মাঝে অসুস্থজনিত উপসর্গ (যেমন- জ্বর, কাশি ইত্যাদি) দেখা যায়। তখন থার্মাল স্ক্যানারের সাহায্যে ওই জ্বরাক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা যায়। তবে করোনায় আক্রান্ত কিন্তু জ্বরের উপসর্গ নেই, এমন ব্যক্তিকে এই ডিভাইস দিয়ে শনাক্ত করা সম্ভব নয়।

http://www.dainikamadershomoy.com

70
মহামারির এই সময়ে প্রত্যেকেরই করোনাভাইরাসের ঝুঁকি রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হাত পরিষ্কার রাখা খুবই জরুরি। চিকিৎসকরা ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান এবং পানি দিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এদিকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের পর আগুনের কাছে গেলে সেখান থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে, এমনটা শুনেছেন নিশ্চয়ই?

সম্প্রতি ভারতের এক বাসিন্দা রান্নাঘরে ওভেনের সামনে অ্যালকোহল বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে গিয়ে তার পোশাকে আগুন লেগে যায়। আগুনে তার মোট ৩৫ শতাংশ শরীর জ্বলে গেছে, পুড়ে গেছে হাত, গলা, পেট। আসুন জেনে নেওয়া যাক কেন আমাদের সাবধানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা প্রয়োজন।

হাত ধোয়ার থেকে স্যানিটাইজারের ব্যবহার খুব বেশি হচ্ছে। এটি দিয়ে হাতকে জীবাণুমুক্ত করা সহজ, এক্ষেত্রে তবে সাবধান হওয়া খুবই জরুরি। সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অনুসারে, প্রত্যেককে অ্যালকোহল বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা উচিত। আর এতে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল থাকা জরুরি।

স্যানিটাইজারে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত অ্যালকোহল থাকে এবং এটি দহনযোগ্য হয়। তাই এটি ব্যবহার করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। সব কিছু স্যানিটাইজ করার কোনো দরকার নেই। হাত স্যানিটাইজ করুন, কারণ হাত দিয়েই নাক এবং মুখ স্পর্শ করা হয়। এটি শিশুর থেকে দূরে রাখুন কারণ এটি মুখে গেলে বিষ হিসেবেও কাজ করতে পারে। ঘরে থাকলে এটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। পরিবর্তে, পানি এবং সাবান ব্যবহার করুন।

হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো সব সময় মনে রাখা জরুরি

১। স্যানিটাইজারে অনেকরকম ক্ষতিকারক রাসায়নিক রয়েছে। তাই, খাওয়ার আগে সব সময় হাত ধুয়ে ফেলুন।

২। আপনি যখনই কোনো স্যানিটাইজার কিনবেন, তখন দেখবেন এটিতে ট্রাইকোলসন নামে কিছু আছে কি না। এটি শরীরের ইমিউনিটি অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এতে অ্যালার্জিও হতে পারে। এছাড়াও দেহের হরমোনগুলোকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্যানিটাইজারে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।

৩। স্যানিটাইজারে আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল ব্যবহৃত হয়। এটি মদে ব্যবহৃত অ্যালকোহলের থেকে অনেকটাই আলাদা। আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল শরীরে গেলে সমস্যা দেখা দেয়। তাই এটি থেকে শিশুদের থেকে দূরে রাখা উচিত।

৪। স্যানিটাইজার লাগানোর পরে হাত চোখ থেকে দূরে রাখুন। তবে করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে স্যানিটাইজার কার্যকর। তাই আপনি যদি জরুরি কাজের জন্য বাইরে যান তখন এটি আপনার কাছে রাখুন। তবে ঘরে ফিরে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধোবেন।

http://www.dainikamadershomoy.com/

71
করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্ব যখন লড়াই করছে, তখন অন্যতম প্রধান উদ্বেগ হয়ে দাঁড়িয়েছে সম্মুখ লড়াইয়ে থাকা পেশাদার চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের (পিপিই কিট) অভাব। বিশ্বের কিছু অংশ থেকে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে মাস্কের ঘাটতির বিষয়গুলো সামনে আসছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অন্যান্য সরঞ্জামের সঙ্গে মাস্ক অনুদান দিচ্ছেন। এবারে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বিশেষ মুখের শিল্ডের (ফেস শিল্ড) নকশা ও সরবরাহের কথা জানিয়েছে।

টুইটারে এক ভিডিও পোস্ট করে অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক বলেছেন, ‘আমরা কোম্পানি থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ফেস শিল্ড নকশা, উত্পাদন ও সরবরাহের জন্য আমাদের পণ্য নকশাবিদ, ইঞ্জিনিয়ারিং অপারেশন, প্যাকেজিং দল এবং আমাদের সরবরাহকারীদের একত্র করার জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা শুরু করেছি।’

টিম কুক বলেছেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মোকাবিলার প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানিয়ে যাবে অ্যাপল। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে এসব ফেস শিল্ডের সরবরাহ বিস্তৃত করা হবে। প্রথম শিপমেন্ট পাবে যুক্তরাষ্ট্রের সান্তা ক্লারা ভ্যালির হাসপাতাল।


এসব শিল্ডের উৎপাদন হবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনে। ভিডিওতে একটি ফেস শিল্ড দেখিয়ে তিনি বলেন, এটি ইতিমধ্যে চিকিৎসকদের কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। এটি সহজে প্যাক ও সংযোজন করা যাবে। প্রতিটি শিল্ড দুই মিনিটেরও কম সময়ে একত্র করা যায় এবং পুরোপুরি সামঞ্জস্যযোগ্য।

এ সপ্তাহের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে ১০ লাখ ফেস শিল্ড উন্মুক্ত করবে অ্যাপল। এরপর থেকে প্রতি সপ্তাহে ১০ লাখ ফেস শিল্ড বাজারে আনতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্রের পেশাদার চিকিৎসক ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে যেসব অঞ্চলে জরুরি প্রয়োজন সেখানে এ শিল্ড দেওয়ার কথা ভাবছে প্রতিষ্ঠানটি।

https://www.prothomalo.com/technology/article/

72
রোবাস্ট ল্যাব নামের একটি সফটওয়্যার কোম্পানির সহপ্রতিষ্ঠাতা আবু হায়দার সিদ্দিক। তাঁদের গ্রাহক যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় ধাক্কা লেগেছে তাঁদের প্রতিষ্ঠানটিতে। গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে নতুন কাজ পাচ্ছেন না। যেসব অর্ডার (সফটওয়্যার তৈরির কাজ) পেয়েছিলেন, তা-ও স্থগিত হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে রোবাস্ট ল্যাবের ১২ কর্মীর বেতন-ভাতা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।


আগামী মে মাস পর্যন্ত বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে দেশের সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন এ খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার এ শিল্পকে বাঁচাতে বিশেষ উদ্যোগ না নিলে আগামী দুই মাসের মধ্যে অন্তত ৫০ শতাংশ কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাবে। এখনই দেশের বাইরের অনেক গ্রাহক সফটওয়্যারের কাজ বাতিল করছেন, বিল দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন। বিভিন্ন কোম্পানির প্রকৌশলী ও কর্মীরা বসে আছেন। এ অবস্থায় বেসিসের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারি সহায়তা দিতে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদের কাছে চিঠি দিয়েছেন তাঁরা।

শুধু সফটওয়্যার কোম্পানি নয়, তথ্যপ্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট (আইটি) খাতের সব সংগঠনও এখন আর্থিক সংকটে পড়েছে। কারওয়ান বাজারের সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই বন্ধ। ফিফোটেক নামে একটি আইটি প্রতিষ্ঠানের (কল সেন্টার) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ হোসেন বলেন, ১৫০ জন কর্মী কাজ করেন তাঁর প্রতিষ্ঠানে। আতঙ্কে অনেকে ছুটি নিয়েছেন। এখন কাজ করছেন ৫০ জনের মতো। আবার যাঁরা কাজ করছেন, প্রতিষ্ঠানের খরচে তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। অনেককে বাসায় রেখে কাজ করানো হচ্ছে। সংকটের এই সময়ে একদিকে ব্যয় বেড়ে গেছে, অন্যদিকে নতুন কাজের অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে না।

দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত মানুষের সংখ্যা এখন প্রায় ১০ লাখ

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ প্রথম আলোকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে সহায়তা করা যায়, তা নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বেসিসের তথ্য অনুযায়ী, দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত মানুষের সংখ্যা এখন প্রায় ১০ লাখ। এই খাতের বাজার হিস্যা ২১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় বাজার ১১ হাজার ৫০ কোটি টাকা। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বছরে রপ্তানির পরিমাণ ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিপদে পড়েছে মোবাইল, কম্পিউটারসহ হার্ডওয়্যার খাতও। এই খাতে দেশে মাসে বিক্রির পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকা বলে জানান বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি শাহিদ–উল–মুনীর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে হার্ডওয়্যার খাতের ছোট–বড় সব ব্যবসায়ী সংকটে পড়েছেন।

আগামী দুই মাস এমন পরিস্থিতি থাকলে দেশের ৮০ শতাংশ কল সেন্টার বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্কো) সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে জানান, দেশে ১৫০টি কল সেন্টার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ খাতে প্রায় ৫০ হাজার জনবল কাজ করে। সরকারের বিশেষ প্রণোদনা ছাড়া এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।

অনলাইনে বিভিন্ন পণ্যের ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা ই-কমার্স খাতও সংকটে পড়েছে। গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর মানুষ এ খাতের ওপর নির্ভরশীল হয়েছে বেশি। কিন্তু পণ্য সরবরাহের জন্য লোকবলের (ডেলিভারিম্যান) সংকটে পড়েছে খাতটি। যে কারণে অর্ডার পেলেও পণ্য সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানান ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি শমী কায়সার।

তবে আইটি খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন ফ্রিল্যান্সাররা (যাঁরা কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত না থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করেন)। এর কারণ, সরকার কোনো প্রণোদনা দিলেও সেটি বেসিস, বাক্কো, ই-ক্যাবসহ সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে দেবে বলে শোনা যাচ্ছে। বিলাস সিদ্দিকী নামের একজন ফ্রিল্যান্সার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ইউরোপ-আমেরিকা যেহেতু লকড ডাউন, তাই আগামী ছয় মাস কোনো প্রজেক্ট (কাজ) পাব কি না, জানি না। বিগত বছরগুলোতে সরকারকে ন্যায্য ট্যাক্স দিয়েছি। এখন কি সরকারের উচিত না আমার মতো ক্ষুদ্র লোকেদের প্রণোদনা দেওয়া?...’


https://www.prothomalo.com/technology/articl

73
নতুন করোনাভাইরাস আর্থিক খাত ও অর্থনীতিতে এক গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। একই কথা বিপরীতভাবেও সত্য। এই চক্র ভাঙা সহজ নয়; তবে অসম্ভবও নয়।

বর্তমানে আমরা যে উদ্বেগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, তার উৎস একটি নয় দুটি মহামারি। প্রথমটি হচ্ছে কোভিড-১৯ মহামারি, যা আমাদের নিজেদের বা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে থাকা আমাদের প্রিয়জনদের হঠাৎ ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়া এমনকি মৃত্যু নিয়ে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, প্রথমটির কারণে অর্থনীতিতে পড়া প্রভাব নিয়ে তৈরি হওয়া উদ্বেগের মহামারি।


এই দুই মহামারিই পরস্পর সংযুক্ত হলেও একই রকম নয়। দ্বিতীয় মহামারিটির ক্ষেত্রে শঙ্কার গল্পগুলো ভাইরাসের মতোই ছড়িয়ে পড়ছে, যা নিয়ে আমরা খুব কমই ভাবছি। ভারী পাথরের মতো নেমে যাচ্ছে শেয়ারবাজার। কোভিড-১৯ সম্পর্কিত গল্পগুলোর প্রভাবেই সম্ভবত আমরা কোনো উদ্যোগ নেওয়ার বদলে জীবনের সঞ্চয়গুলো ফুরিয়ে ফেলছি। কোভিড-১৯ ছাড়াও আমাদের উদ্বেগের আরেকটি উৎস হচ্ছে অনিশ্চয়তা। আমরা জানি না ঠিক কী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

এটি খুবই বড় দুঃসংবাদ যে দুটি মহামারি একযোগে কাজ করছে। এর একটি আরেকটিকে প্রকট করতে পারে। বন্ধ ব্যবসা, বেকারত্ব বৃদ্ধি ও আয় হারানোর ধারা আর্থিক উদ্বেগ বৃদ্ধির জ্বালানি হিসেবে কাজ করছে, যা আবার রোগটি মোকাবিলায় যথেষ্ট পূর্বসতর্কতা গ্রহণ ছাড়াই লোকেদের কাজ যোগ দিতে মরিয়া করে তুলতে পারে।

এর চেয়েও বাজে সংবাদ হচ্ছে, দুটিই (কোভিড-১৯ ও আর্থিক খাতের উদ্বেগ) সংক্রামক ব্যাধির মতো বৈশ্বিক মহামারি সৃষ্টি করছে। চাহিদার অবনমন যখন কোনো একটি দেশে আবদ্ধ থাকে, তখন তার আংশিক প্রভাব পড়ে বাইরে। যেহেতু ওই দেশের রপ্তানি চাহিদায় বড় ধস নামে না। কিন্তু এখন এই স্বাভাবিক নিরাপত্তা ভাল্‌ভটি কাজ করছে না। কারণ, মন্দা প্রতিটি দেশকেই চোখ রাঙাচ্ছে।

অনেকেই মনে করছেন, আর্থিক খাতের উদ্বেগটি কোভিড-১৯ সংকটের একটি সরাসরি সহ-উৎপাদন (বাইপ্রোডাক্ট) ছাড়া আর কিছু নয়। এটিকে এমনকি সংক্রামক ব্যাধির কারণে সৃষ্ট মহামারির একটি যৌক্তিক প্রতিক্রিয়া হিসেবেও দেখা হচ্ছে। কিন্তু এই উদ্বেগ পুরোপুরি যৌক্তিক নয়। পণ্যমূল্য কমে যাওয়া বা আখ্যান বদলের মতো আর্থিক খাতে যে উদ্বেগের মহামারি চলছে, তার নিজস্ব একটি সত্তা আছে।

পুঁজিবাজারে যে আর্থিক উদ্বেগ প্রভাব ফেলছে, তা বুঝতে হলে আমাদের এমন একটি ধারণার শরণ নিতে হবে, যাকে ওরেগন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী পল স্লোভিক ও তাঁর সহকর্মীরা বলছেন, ‘অ্যাফেক্ট হিউআরিস্টিক’ (মানুষের অনুসন্ধান স্পৃহায় পড়া প্রভাব)। যখন নানা বিয়োগান্ত ঘটনায় মানুষ হতাশ হয়ে পড়ছে, তখন তারা এমন অনেক ঘটনায় ভীত হয়ে পড়ছে, যেখানে আদতে ভয়ের কিছুই নেই।

উইলিয়াম গোয়েটজম্যান ও ড্যাসল কিমের সঙ্গে এক যৌথ গবেষণায় আমরা দেখেছি, কাছাকাছি কোথাও ভূমিকম্প হলে লোকেদের মধ্যে এই শঙ্কা তৈরি হয় যে শেয়ারবাজারে ১৯২৯ কিংবা ১৯৮৭ সালের মতো ধস নামবে। দেখা গেছে, ৩০ দিনের মধ্যে আশপাশের ৩০ মাইল এলাকার মধ্যে কোথাও ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটলে শেয়ারবাজারে ধসের আশঙ্কা করা লোকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। এটিই হচ্ছে সেই ‘অ্যাফেক্ট হিউআরিস্টিক’। (অর্থাৎ মানুষ এ সময় শঙ্কার যুক্তি অনুসন্ধান না করেই শঙ্কিত হয়।)

ভূমিকম্পের বদলে মহামারি রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে শেয়ারবাজারে ধসের আশঙ্কাকে অনেক বেশি যৌক্তিক মনে হতে পারে। তবে এটি সাম্প্রতিক অতীতের মতো অত বড় হবে, এমন আশঙ্কার কারণ নেই। যদি বিশ্বাস করা যেত যে কয়েক মাসের মধ্যেই কোভিড-১৯ মহামারির প্রকোপ ঠেকাতে ওষুধ আবিষ্কার করে ফেলা যাবে কিংবা এক বা দু বছরের বেশি এটি স্থায়ী হবে না, তবে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের জন্য শেয়ারবাজারে বিদ্যমান ঝুঁকিকে খুব বড় মনে হতো না। সে ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনে সংকট উত্তরণ পর্যন্ত তা ধরে রাখার পরিকল্পনা করতে পারতেন।

কিন্তু আর্থিক উদ্বেগের সংক্রমণ রোগের সংক্রমণের চেয়ে ভিন্নভাবে কাজ করে। এটি চালিত হয় চেইন রি-অ্যাকশনের মতো করে। মানুষের একাংশের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি যখন অন্যদের দৃষ্টিগোচর হয়, তখন পণ্যমূল্য অবনমন হয়। আর এটি অন্যদের মধ্যে আবেগময় প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। শেয়ারবাজারে নেতিবাচক বুদবুদটির সৃষ্টি হয় তখন, যখন মানুষ দেখে শেয়ারের দরপতন হচ্ছে। তারা তখন এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দরপতনের কারণগুলোর নতুন নতুন ব্যাখ্যা হাজির করে, যার একটি অন্যটির চেয়ে ভয়াবহ। আর এটিই নিয়ে আসে টানা দরপতনের বাস্তবতা।

শেয়ারের টানা দরপতন সেসব মানুষের মধ্যে ভয়াবহ হতাশার সৃষ্টি করে, যারা তাদের কাছে থাকা শেয়ার এখনো বিক্রি করেনি। একই সঙ্গে এটি এমন এক শঙ্কার সৃষ্টি করে, কোনো কোনো ব্যক্তি একেবারে কম দামে শেয়ার বিক্রি করে দেয়। এই হতাশা ও ভয় মহামারি-সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যাখ্যার প্রতি মানুষকে আগ্রহী করে তোলে। বাজার শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা মুখ্যত নির্ভর করে এই প্রবণতা ও এর বিবর্তনের ওপর।

উদাহরণস্বরূপ, ১৯১৮ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সময়ে মার্কিন শেয়ারবাজারে তেমন কিছু অনুভূত হয়নি। যদিও মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোতে স্প্যানিশ ফ্লুর খবর প্রচারিত হয়েছিল। ওই মহামারিতে ৬ লাখ ৭৫ হাজার মার্কিন মারা পড়েছিল (সারা বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ৫ কোটি ছাড়িয়েছিল)। কিন্তু এর মধ্যেও ১৯১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত মার্কিন শেয়ারবাজারে ছিল ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা।

ওই ভয়াবহ মহামারিতেও শেয়ারবাজারে পতন হয়নি কেন? এর একটি ব্যাখ্যা হতে পারে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, ১৯১৮ সালের জুলাই-আগস্টে মারনেতে দ্বিতীয় যুদ্ধের পর যা শেষ হবে হবে করছিল। এই খবরে ইনফ্লুয়েঞ্জার গল্প আর হালে পানি পায়নি। যুদ্ধের গল্প ফ্লুয়ের গল্পের চেয়ে বেশি সংক্রামক ছিল।

আরেকটি কারণ হতে পারে মহামারি-সংক্রান্ত বিদ্যা তখনো শিশু বলা যায়। মহামারি তখন এখনকার মতো পূর্বাভাসযোগ্য ছিল না এবং মানুষেরা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শকে পুরোপুরি বিশ্বাস করত না। ফলে সামাজিক দূরত্ব মানার মতো পদক্ষেপগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা ছিল কম। এ ছাড়া সাধারণভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, অর্থনৈতিক সংকট মানে ব্যাংকিং খাতের সংকট। আর যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক খাতে সে সময় কোনো সংকট ছিল না, যেহেতু কয়েক বছর আগে ১৯১৩ সালেই গঠন করা হয়েছিল ফেডারেল রিজার্ভ, যা খাতটির ঝুঁকি অপসারণের দায়িত্বে নিয়োজিত হয়।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণটি ছিল, ১৯১৮ সালের ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারির সময় আর্থিক খাত সম্পর্কিত তথ্য এতটা প্রচারের আলোয় ছিল না। একই সঙ্গে এক শতক আগে খুব কম লোকের হাতেই ছিল শেয়ারের মালিকানা। একইভাবে অবসরোত্তর জীবনের জন্য সঞ্চয়ের দিকেও আজকের মতো মানুষের এত মনোযোগ ছিল না। এ ছাড়া মানুষের আয়ুষ্কাল এত বেশি ছিল না এবং পরিবারের ওপর নির্ভরশীলতা খুবই সাধারণ বিষয় ছিল।

এই সময়টি নিশ্চিতভাবেই একেবারে আলাদা। আমরা স্থানীয় মুদি দোকানগুলোতেও আতঙ্কিত মানুষের আনাগোনা দেখছি, যেমনটা দেখা যায়নি ১৯১৮ সালে। কারণ যুদ্ধের কারণেই সে সময় পণ্য সরবরাহের সংকট নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মহামন্দার তাজা অভিজ্ঞতা থাকায় সম্পদ-মূল্যের বড় অবনমনের বিষয়ে আমরা এই সময়ে অনেক বেশি সচেতন। বিয়োগান্ত বিশ্বযুদ্ধের বদলে যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে নিজের রাজনৈতিক মেরুকরণ দ্বারাই বেশি আক্রান্ত। আর সংকট মোকাবিলায় ফেডারেল সরকারের ব্যর্থতা সম্পর্কিত বহু রাগী ব্যাখ্যা তো বাজারেই রয়েছে।


https://www.prothomalo.com/economy/article

74
কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস নিয়ে আমরা ইতিমধ্যেই টিভি, সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে বিভিন্ন রকম তথ্য ও পরামর্শ জানতে পারছি। করোনাভাইরাস নিয়ে ব্র্যাকের সচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রধানেরা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর, তথ্য ও পরামর্শ দিয়েছেন। কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ।


তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, সবার কি করোনা পরীক্ষা করার দরকার আছে? অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘সবার ঢালাওভাবে করোনা পরীক্ষা করানোর দরকার নেই। যাঁর লক্ষণ নেই বা বিদেশফেরত নন বা বিদেশ থেকে এসেছেন, এমন কারও সংস্পর্শে আসেননি, তাঁদের করোনা পরীক্ষা করানোর কোনো দরকার নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাস পরীক্ষা করাতে হলে আগে লক্ষণ যেমন সর্দি, কাশি, জ্বর হতে হবে। পরীক্ষার জন্য মুখের লালা স্যাম্পল হিসেবে নিতে হয়। যাঁর কাশিই হয়নি, তাঁর তো স্যাম্পলই নেওয়া যাবে না, পরীক্ষা করলেও কিছু পাওয়া যাবে না।’ তাহলে পরীক্ষা কারা করাবেন? এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘যাঁরা বিদেশ থেকে এসেছেন বা বিদেশফেরত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন। এসেই জ্বর, সর্দি, কাশিতে ভুগছেন, তখন তাঁরা পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন।’ তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, অন্য জ্বরের সঙ্গে করোনার লক্ষণের পার্থক্য কোথায়? তিনি বলেন, ‘করোনার লক্ষণের মধ্যে পড়ে জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট বা একটু বেশি জটিল হলে নিউমোনিয়া ইত্যাদি। কিন্তু সাধারণ জ্বর সর্দি কাশির সঙ্গে শুধু লক্ষণ দেখে বলা যাবে না যে এটাই করোনাভাইরাস বা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নয়। পরীক্ষা না করিয়ে কোনোভাবেই সেটা বলা যাবে না।’

করোনাভাইরাস নিয়ে চিকিৎসকদের করণীয় সম্পর্কেও তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সন্দেহ হলে আইইডিসিআরে যোগাযোগ করতে হবে, হটলাইন নম্বর আছে, সেখানেও যোগাযোগ করতে পারবেন। আর চিকিৎসকদের অবশ্যই রোগীকে চিকিৎসা দিতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে সুরক্ষার ব্যবস্থা নিয়ে যেমন গাউন পরা, মাস্ক, মাথার টুপি, হাতের গ্লাভস পরে নিয়ে রোগীর চিকিৎসা করতে হবে, রোগীকে অবহেলা করা যাবে না। সঙ্গে নিজের সুরক্ষার কথাও ভাবতে হবে।’

তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় করোনাভাইরাসে শিশুরা কি কম আক্রান্ত হয়? তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত দেখা গেছে বিশ্বব্যাপী শিশুদের আক্রান্তের হার কম। করোনাভাইরাসে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের বেশির ভাগেরই বয়স ৪০ বছরের ওপরে। তবে শিশুরা যে একদম আক্রান্ত হবেই না, সেটা বলা যায় না। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে তাপমাত্রার কি কোনো সম্পর্ক আছে? তিনি বলেন, ‘আগে ভাবা হতো শীতকালে ঠান্ডা-সর্দি বেশি লাগে। দক্ষিণ চীনে যখন করোনাভাইরাসের প্রকোপ হলো, তখন সেখানে তাপমাত্রা কম ছিল। এরপর সিঙ্গাপুর, মিডল ইস্ট, সৌদি আরবেও করোনার প্রকোপ হলো, যেসব দেশে তাপমাত্রা অনেক বেশি। তাই তাপমাত্রা বেশি থাকলে করোনাভাইরাস ছড়াবে না, সেটা ভেবে বসে থাকলে হবে না। প্রতিরোধের জন্য নিয়ম মেনে চলতে হবে।’

করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হোন। নিজে সতর্ক থাকুন এবং অন্যকেও জানান।

https://www.prothomalo.com/life-style/artic

75
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে ভ্যাকসিন ও ওষুধের খোঁজ চলছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার ছোট বায়োটেক কোম্পানি ইনোভিও ফার্মাসিউটিক্যাল করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য একটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করছে। চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রকদের কাছ থেকে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার অনুমোদন পাওয়ার পর সুস্থ স্বেচ্ছাসেবকদের শরীরে এ ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করছে প্রতিষ্ঠানটি। ইনোভিও তাদের ভ্যাকসিন তৈরির প্রচেষ্টায় বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন ও কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনসের কাছ থেকে অর্থ নিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসাবিষয়ক ওয়েবসাইট বিজনেস ইনসাইডার এক প্রতিবেদনে বলেছে, করোনাভাইরাসের চিকিৎসা বা ভ্যাকসিনের জন্য দ্রুত চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। ইতিমধ্যে দেশটির শীর্ষ ১২টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এ মহামারি রোধে প্রচেষ্টা শুরু করেছে। এর মধ্যে ইনোভিওর তৈরি ‘আইএনএ-৪৮০০’ ভ্যাকসিনটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মানব পরীক্ষা শুরু করার জন্য দ্বিতীয় সম্ভাব্য করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন হিসেবে দেখা হচ্ছে। মার্চের মাঝামাঝি সময়ে ম্যাসাচুসেটসের বায়োটেক প্রতিষ্ঠান মর্ডানা তাদের ভ্যাকসিন নিরাপদ কি না তা পরীক্ষা শুরু করে।


যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজেসের পরিচালক অ্যান্থনি এস ফাউসি বলেছেন, ভাইরাসটির বিরুদ্ধে কোনো ভ্যাকসিন নিরাপদ এবং কার্যকর কি না, তা জানতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার হওয়ার ভ্যাকসিন খুঁজে পাওয়ার জন্য গবেষকদের ওপর চাপ বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বায়োটেক প্রতিষ্ঠান মর্ডানা গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভ্যাকসিন পরীক্ষার জন্য সরকারি গবেষকদের কাছে পাঠিয়েছিল। এ মাসের শুরুর দিকে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম ডোজ স্বেচ্ছাসেবকদের দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের জেনিফার হলারের ওপর করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। সিয়াটলের কায়সার পার্মানেন্তে ওয়াশিংটন রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে প্রথম ইনজেকশনের মাধ্যমে টিকা নেন হলার।

ইনোভিও ভ্যাকসিন পরীক্ষার ক্ষেত্রে ফিলাডেলফিয়ার ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া মেডিকেল স্কুল ও মিসৌরির কানসাস সিটির সেন্টার ফর ফার্মাসিউটিক্যাল রিসার্চে ৪০ জন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি অংশ নিচ্ছেন। প্রতিজন স্বেচ্ছাসেবক চার সপ্তাহের ব্যবধানে দুই ডোজ ভ্যাকসিন পাবেন। ইনোভিও পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা দ্রুত পরীক্ষা শেষে গ্রীষ্মের শেষের ফলাফল প্রত্যাশা করছে। যদি ফলাফল ইতিবাচক আসে তবে তারা ভাইরাসটির বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা মূল্যায়নের দিকে লক্ষ্য রেখে আরও একটি গবেষণা শুরু করবে।

অভূতপূর্ব বৈশ্বিক চাহিদা বিবেচনায় কোনো ভ্যাকসিন নিরাপদ এবং কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হলে তা উৎপাদন ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। ইনোভিও বলছে, তাদের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে, যাতে ২০২০ সালের মধ্যে ১০ লাখ ডোজ তৈরির সক্ষমতা অর্জন করা যায়। জরুরি প্রয়োজনের সময় বাড়তি ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় এসব ভ্যাকসিন ব্যবহার করা যেতে পারে।

https://www.prothomalo.com/northamerica/article

Pages: 1 ... 3 4 [5] 6 7 ... 17