Daffodil International University

Faculty of Allied Health Sciences => Pharmacy => Topic started by: tahmina on October 11, 2017, 03:12:04 PM

Title: স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে জানুন, জীবন বাঁচান
Post by: tahmina on October 11, 2017, 03:12:04 PM

বাংলাদেশে প্রতি বছর ১০ অক্টোবর স্তন ক্যান্সার সচেতনতা দিবস হিসেবে পালন করা হলেও, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই পুরো অক্টোবর মাসই স্তন ক্যান্সার সচেতনতার মাস হিসেবে পালিত হয়। আর সচেতনার জন্য এই রোগের আদ্যপ্রান্ত জানা দরকার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ১৫ লক্ষাধিক নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং প্রতি লাখে ১৫ জন নারী মারা যান।

আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে (ক্যান্সার রেজিস্ট্রি) স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের সংখ্যা রেকর্ড করা না হলেও, পার্শ্ববর্তী দেশের তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায়, প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার নারী নতুন করে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

উন্নত বিশ্বে অধিকাংশ নারী যেখানে ৫০ বছরের কাছাকাছি বয়সে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, আমাদের দেশে সেখানে ৪০ শতাংশেরও বেশি নারী ৫০ বছর বয়সে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

অন্যদিকে, উন্নত দেশে নারীরা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে (স্ক্রিনিং’য়ের মাধ্যমে) ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে এবং চিকিৎসা নিয়ে থাকেন যা তাদের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে। তবে আমাদের দেশে অধিকাংশ নারী স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব, সামাজিক ও ধর্মীয় কারণে শেষ পর্যায়ে (চতুর্থ পর্যায়) ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে থাকেন, যখন রোগীকে আর কোনোভাবেই বাঁচানো সম্ভব হয়না।

আমাদের দেশে স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে আরও বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার মূল কারণ হল গড় আয়ু বেড়ে যাওয়া। কারণ বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আমাদের দেশে নারীদের গড় আয়ু ছিল ৪৭ বছর যা আজ বেড়ে ৭৫ বছর হয়েছে আর সিংভাগ ক্ষেত্রেই সেটি সম্ভব হয়েছে শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, মানে উল্লেখযোগ্যভাবে শিশু ও মাতৃ-মৃত্যুর হার কমানোর মাধ্যমে।

তাই মাতৃস্বাস্থ্যের এই উন্নয়ন আমাদেরকে কিছুটা স্বস্তি দিলেও, স্তন ক্যান্সার ও মৃত্যু আমাদের জন্য মর্মপীড়া ও অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমাদের দেশের নারীরা আজ প্রজনন স্বাস্থ্যের অমানিশা কাটিয়ে উঠলেও, অ-প্রজনন স্বাস্থ্যের, বিশেষ করে স্তন ক্যান্সারের চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আর এই ঝুঁকি থেকে মুক্তির প্রধান উপায় হল নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার মধ্যে স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে ব্যাপক সচেতনতা গড়ে তোলা।

তাই, স্তন ক্যান্সার কী কারণে হয়ে থাকে বা এর লক্ষণগুলো কী কী তা জানা জরুরি।

স্তন ক্যান্সার কেনো হয় তার নির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনও জানা যায়নি। তাই একাধিক কারণকে স্তন ক্যান্সারের জন্য দায়ী করা হয়ে থাকে, যেমন:

* যেসব নারীর বয়স ৪০ বছরের বেশি তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

* স্তন ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে অর্থাৎ মা-খালাদের থাকলে সন্তানদের হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

* অবিবাহিতা বা সন্তানহীনা নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

* যেসব মায়েরা সন্তানকে কখনও স্তন্যপান (breast feeding) করাননি তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

* ৩০ বছরের পরে যারা প্রথম মা হয়েছেন তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

* যাদের তুলনামূলক কম বয়সে মাসিক শুরু হয় ও দেরিতে মাসিক বন্ধ (menopause) হয় তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

* একাধারে অনেকদিন (১০ বছর বা বেশি) জন্ম নিরোধক বড়ি খেলেও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

তবে মনে রাখা প্রয়োজন যে, উপরের কারণগুলো স্তন ক্যান্সারের সহায়ক ভূমিকা পালন করে মাত্র, কোনোটি একক কারণ নয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে যেহেতু স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে থাকে, একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর থেকে (৩০ বছর) সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। আর সেজন্য স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো জানা খুবই প্রয়োজন। যেমন-

* স্তনের বোটা (breast nipple) থেকে কিছু বের হওয়া।

* স্তনের ভিতর চাকা (breast lump) অনুভব করা।

* স্তনে ব্যাথা অনুভব করা।

* স্তনের আকার পরিবর্তিত হওয়া।

* স্তনের ত্বকে ঘাঁ দেখা দেওয়া।

* স্তনের ত্বকে লালচে ভাব/দাগ দেখা দেওয়া।

উপরের লক্ষণগুলোর যেকোনো একটি দেখা দেওয়ার সাথে সাথে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরার্মশ অত্যন্ত জরুরি যা স্তন ক্যান্সারের ভয়াবহতা ও মৃত্যু থেকে রক্ষা করবে।

স্তন ক্যান্সার সাধারণত দুভাবে শনাক্ত করা যায়: ১) স্ক্রিনিং (screening)য়ের মাধ্যমে ২) রোগ নির্ণয়ের (diagnosis) মাধ্যমে।

স্ক্রিনিং আবার দুভাবে করা যায়: ১) নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করা। ২) ডাক্তার বা নার্সের সাহায্যে পরীক্ষা করা।

রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও প্রধানত দুটি পদ্ধতি রয়েছে: ১) মেমোগ্রাম বা স্তনের বিশেষ ধরনের এক্স রে। ২) স্তনের আলট্রাসনোগ্রাম।

তাছাড়া এমআরআই এবং বায়োপসি (breast tissue/fluid)-এর মাধমেও স্তন ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়ে থাকে।

স্তন ক্যান্সার শনাক্তকরণের পরবর্তী পর্যায় হল এর সঠিক চিকিৎসা করা। স্তন ক্যান্সারের যে চিকিৎসাগুলো প্রধানত রয়েছে তা হলো: সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ও হরমোন থেরাপি।

সার্জারির মধ্যে আবার বিভিন্ন ধরন রয়েছে। তবে কোন ধরনের চিকিৎসা রোগীর জন্য উপযুক্ত, তা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সিদ্ধান্ত নেবেন।

যেহেতু স্তন ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই, তাই ঝুঁকি এড়ানোর জন্য স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করা ভালো। এক্ষেত্রে ৩০ বছরের পর, প্রতিমাসে মাসিকের পর পর নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করা জরুরি।

যেসব নারী স্তন ক্যান্সারের অতিরিক্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, যেমন- যাদের পরিবারে স্তন ক্যান্সার রয়েছে/হয়েছে, তাদের প্রতিবছর (৪০ বছরের পর) মেমোগ্রাম করানো অত্যাবশ্যক।

এছাড়া যে বিষয়গুলি খেয়াল রাখা জরুরি তা হলো- ৩০ বছর বয়সের মধ্যে প্রথম সন্তান জন্ম দেওয়ার চেষ্টা করা, সন্তানকে বুকের দুধ পান করানো, কোনো ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে সাথে সাথে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া, ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করা, টাটকা শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া এবং নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম/পরিশ্রম করা।

উন্নতদেশে ডাক্তার বা নার্স কর্তৃক সর্বজনীন ফ্রি (population-based/national screening) স্ক্রিনিং’য়ের ব্যবস্থা ও উন্নতমানের চিকিৎসা-সেবা, প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার শনাক্তকরণ এবং মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে আমাদের দেশে সম্পদ ও কাঠামোগত স্বল্পতার কারণে সেই ধরনের সুযোগ কম।

অন্যদিকে, স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেক পরিবারের ক্ষেত্রে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়না। তাই, আমাদের দেশে স্তন ক্যান্সারের ভয়াবহতা থেকে মুক্তির প্রথম ও প্রধান উপায় হল নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা অভ্যাস তৈরির মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার শনাক্ত করা।

দ্বিতীয় যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হল, স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া ও সেগুলো এড়িয়ে চলা। গবেষণায় দেখা যায়, প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার শনাক্ত করা গেলে অনেকাংশেই রোগীকে বাঁচানো যায় অথবা মৃত্যুকে দীর্ঘায়িত করা যায়।


লেখক পরিচিতি: শিক্ষক ও গবেষক, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

যুক্ত আছেন: উইমেন্স হেল্থ রিসার্চ প্রোগ্রাম, মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া।
ট্যাগ :
লাইফস্টাইল দেহঘড়ি

Title: Re: স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে জানুন, জীবন বাঁচান
Post by: Nahian Fyrose Fahim on November 07, 2017, 01:24:46 PM
Thank you for sharing these important information.
Title: Re: স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে জানুন, জীবন বাঁচান
Post by: Sabreena Chowdhury Raka on November 15, 2017, 11:51:34 AM
Thank you, Madam.
Title: Re: স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে জানুন, জীবন বাঁচান
Post by: imran986 on December 31, 2017, 03:26:33 PM
Such an important information. Thanks for sharing.
Title: Re: স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে জানুন, জীবন বাঁচান
Post by: sharifa on April 23, 2018, 03:36:18 PM
Thanks Madam to share this important post.
Title: Re: স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে জানুন, জীবন বাঁচান
Post by: Farhana Israt Jahan on April 28, 2018, 01:25:05 PM
Very helpful post, thanks for sharing..