Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - mahmudul_ns

Pages: 1 [2] 3 4 ... 9
16
Is it your suggestion Or has taken it from a source? I have told here from my hearing point of view and i didn't urge any suggestion. thanks.

17
Bangladesh Civil Service-BCS / Re: IS or not, how does it matter?
« on: October 12, 2015, 06:36:23 PM »
Some clue were found and the group of intelligence are still working on the matter, hope there is real scenario that they will get by proper investigation.

18
স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া কোনো কঠিন বিষয় নয়। এরজন্য দরকার ভালো অভ্যেস।

খেতে ভালোবাসেন, তবে স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হলে পছন্দের অনেক খাবারই এড়িয়ে চলতে হয়। আর তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা কঠিন হয়ে যায়। তবে কিছুটা নিয়ম করে প্রতিদিনের স্বাস্থ্যকর খাবারের একটি তালিকা তৈরি করে নিলে আর এতটা কঠিন মনে হবে না।

দৈনন্দিন জীবনে খাদ্যাভ্যাসে কিছুটা পরিবর্তন আনা গেলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে।

অভ্যাস নিয়ে প্রকাশিত হতে যা্ওয়া ‘বেটার দেন বিফোর’ বইয়ের লেখক গ্রেচেন রুবিন বলেন, “আমি ভালো অভ্যাসের গোপন রহস্য উপলব্ধি করতে পেরেছি। পুষ্টি বা অন্যকিছুর জন্য আগে নিজেকে জানতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কিছু মানুষ সব ধরনের লোভ ত্যাগ করে ভালো থাকে আবার অনেকেই পরিমিতভাবে ইচ্ছাপূরণের মাধ্যমে ভালো থাকে। কোন পদ্ধতি ভালো কাজ করবে তা নিজেকেই ভেবে বের করতে হবে।”

প্রকাশিত প্রতিবেদনে সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু অভ্যাসের বিষয় উল্লেখ করা হয়।

স্বাস্থ্যকর খাবারের মজুদ রাখা :

শহুরে জীবনে বাড়ির আশপাশে যা পাওয়া যায় তাই সাধারণত আমারা খেতে অভ্যস্ত। তাই বাজার থেকে টাটকা খাবার বাসায় মজুদ করে রাখা ভালো।

যেসব খাবার সহজে যোগাড় করা যায় সেগুলো সংগ্রহ করা উচিত। সেটা হতে পারে সবজি এবং ফলমূল।

এছাড়া সাদা রুটিরজাতীয় খাবারের চাইতে শস্য বা আঁশজাতীয় খাবার খা্ওয়ার অভ্যেস করতে হবে। এসব খাবারের মধ্যে আছে ওটমিল, বাদামি চাল, গমের রুটি।

প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য বাদাম ও বীজজাতীয় খাবার (ডাল) এবং ডিম কেনা যেতে পারে।

সোডা, বিস্কুট ও চিনি যুক্ত সিরিয়াল ঘরে না রাখাই ভালো।

বসে খাওয়া :

সাধারণত বসে খাবার খেলে, ধীরে খাওয়া হয়। এতে খাওয়ায় তৃপ্তি আসে। আর কম খেয়েও খা্ওয়া শেষ করা যায়।

তবে দাঁড়িয়ে খেলে প্রায় সময়ই মনে হয় খাবার খাচ্ছি না। যদি আইসক্রিমও খান তবে কোথাও বসে সেটা উপভোগ করুন। আর অনেকের সঙ্গে খাওয়া হলে এক ধরনের সামাজিকতাও রক্ষা হয়।

তরল ক্যালোরির পরিবর্তে পানি :

কোমল পানীয়তে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি থাকে। যা নিয়মিত পান করা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আবার ডায়েট কোমল পানীয় শরীরের কোনো কাজে আসে না। ওজনও কমায় না। তাই শুধু মিষ্টি স্বাদের জন্য এই ধরনের পানীয় পান করার কী দরকার!

এর চেয়ে সাধারণ পানি খাওয়ার অভ্যেস করুন। এতে শরীর আদ্র থাকবে। আর খাবার বা স্ন্যাক্স খাওয়ার আগে অন্তত এক গ্লাস পানি পান করা ভালো। এতে কম খেয়েও পেট ভরানো যাবে।

চিপসের পরিবর্তে ফল :

হাতের কাছে থাকলে ফল খাওয়া খুবই ভালো। তাই হালকা খাবার হিসেবে চিপসের পরিবর্তে ফল খা্ওয়ার অভ্যেস করা উচিত। তবে হাতের কাছে পাওয়া যায় বলে চিপস খাওয়া হয় বেশি। এজন্য ফল কোথায় ভালো পাওয়া যায় সেটা জেনে রাখা দরকার। পাশাপাশি বাসায় ফেরার পথে ফল কিনে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন।

বাড়ি থেকে বের হলে, অফিস যাওয়ার সময় একটি আপেল বা কমলা ব্যাগে নিয়ে বের হন। মধ্য বেলা বা বিকালের নাস্তায় ফল খাওয়ার অভ্যেস তৈরি হয়ে যাবে।

রঙিন শাকসবজি ও সালাদ :

সালাদ খাওয়ার অভ্যেস করুন। শরীর ক্যালরি ছাড়াই পুষ্টি পাবে। বিভিন্ন রঙের শাকসবজিতে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি রয়েছে। তাই রঙিন সবজি খাওয়া খুবই ভালো।

বাড়তি খাবার এড়িয়ে চলা

খাবারের সামনে বসে থাকা মানেই, খাবার বলবে ‘আমাকে খাও!’ খাবারের সামনে বসে থেকে এরকম ‘প্রলুব্ধ’ হওয়ার কি দরকার।

তাই বেঁচে যাওয়া খাবারের সামনে বসে না থেকে উঠে পড়ুন।

19
Life Style / Re: Lifestyle changes to boost your health
« on: October 12, 2015, 12:49:34 PM »
In most cases sugar has vitiated our body so we should avoid it.

20
Necessary to all travelers like me, though I haven't fall yet any problem similar to this.For precautions it is significant.

21
Green vegetables meet most of the requirements. so all of us should keep it in our daily food list.

22
It's very similar to thinking process of Sir Isaac Newton.

23
Nice article. Most of us face this problem, it's easy to recover the problem by reading and implementing it in our life.

24
Discussion on Creative Problem Solving / Re: GUN POLITICS IN THE US
« on: October 12, 2015, 12:19:13 PM »
Second amendment of US constitution gave this power to have gun with them and now-a-days they vex each other abusing that power. 

25
ICT / Re: ICT and Education in Bangladesh
« on: October 08, 2015, 06:08:48 PM »
It's too hard to keep concentrate to read full materials but necessary for everyone.

26
ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বা টিপিপি বলে একটি চুক্তি সই হয়েছে গত সোমবার। এই চুক্তি সইয়ের যেসব খবর বের হয়েছে, তাতে অনেক গণমাধ্যমে এই চুক্তিকে ‘বিতর্কিত’ বা ‘বহুল বিতর্কিত’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। চুক্তিটি সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য হচ্ছে, এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১২টি দেশ এই চুক্তিতে সই করেছে। এই দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ব্রুনাই দারুস সালাম, কানাডা, চিলি, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, পেরু, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম। চুক্তিটির ফলে এই দেশগুলো বিনা শুল্কে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য-সুবিধা পাবে। এই ১২টি দেশ বর্তমানে বিশ্ব বাণিজ্যের ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। এসব তথ্য থেকে আমরা চুক্তির গুরুত্ব সম্পর্কে অনেকটাই আঁচ-অনুমান করতে পারি।

আরও তথ্য হচ্ছে এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ, এই শিল্পে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রে তার তৈরি পোশাক পাঠানোর ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা, অর্থাৎ শুল্ক ছাড়া প্রবেশের সুযোগ পাবে। শুধু তা-ই নয়, টিপিপিতে ‘বাণিজ্য-সংক্রান্ত মেধা’ যুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশ বিপদে পড়বে। কারণ, এর ফলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে উন্নত প্রযুক্তি কিনতে হবে। বাংলাদেশের কৃষি খাত ও ওষুধশিল্প এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাণিজ্য ও অর্থনীতির এই দিকগুলো নিয়ে নিশ্চয়ই সামনে আরও বিশ্লেষণ হবে, আমাদের বিশেষজ্ঞদের মতামতও পাব। আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকেরা এসব বিবেচনায় নিয়েই হয়তো কৌশল নির্ধারণ করবেন।

সাধারণভাবে টিপিপি একটি বাণিজ্য বা ‘মুক্ত বাণিজ্য’ চুক্তি হিসেবে বিবেচিত। সে কারণেই এই চুক্তি সইয়ের খবরটি আমরা পড়েছি প্রথম আলোর বাণিজ্য পাতায়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকা এই চুক্তির ব্যাপারে মূল সমালোচনা হচ্ছে এটা আসলে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নয়। এর খসড়া নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। টিপিপির বিরোধিতা করে ‘এক্সপোজ দ্য টিপিপি’ নামে একটি বৈশ্বিক আন্দোলনও দাঁড়িয়ে গেছে। তারা বলে আসছে, টিপিপির খসড়ায় যে ২৯টি অধ্যায় রয়েছে, তার মধ্যে মাত্র পাঁচটি প্রথাগত বাণিজ্য-বিষয়ক। তারা বলছে, টিপিপি নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ওপর হামলা হিসেবে বিবেচিত হবে, কারণ চুক্তি সই করা দেশগুলোর দেশীয় আইনকে টিপিপির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। তারা বলে আসছে, টিপিপি কার্যকর হলে একটি পরিবারের গার্হস্থ্য বিষয়াদিকেও টিপিপির নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে—খাদ্যনিরাপত্তা, ইন্টারনেটের স্বাধীনতা, ওষুধের দাম, আর্থিক বিধিবিধানসহ আরও অনেক কিছু।

বড় আরও এক বিপদের তথ্য হচ্ছে টিপিপি ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, ইন্টারনেটের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে এক বড় হুমকি হিসেবে হাজির হতে যাচ্ছে। এই চুক্তি ইন্টারনেটের ওপর ‘সবচেয়ে বড় নজরদারির’ পরিস্থিতি তৈরি করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন এর সমালোচকেরা। আগেই বলেছি, এই আইনের খসড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা ও তর্ক-বিতর্ক চলেছে। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের সান্ড্রা ফুলটন বেশ আগেই এই আইনকে ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মেধাস্বত্বের ওপর নজিরবিহীন হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

টিপিপি অনুযায়ী, ইন্টারনেটে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রাহকদের ওপর সব ধরনের নজরদারির কাজে লাগানো যাবে। তারা গ্রাহকদের গতিবিধি খেয়াল রাখবে এবং তাদের ইন্টারনেটের সব ধরনের তথ্য সংরক্ষণ করতে পারবে। এমনকি কোনো গ্রাহককে তাঁর তৈরি কোনো কনটেন্ট (তথ্য উপাদান, যেকোনো ডকুমেন্ট, অডিও বা ভিডিও) ব্যবহার করা থেকেও তারা বিরত রাখতে পারবে। দরকার পড়লে গ্রাহককে ইন্টারনেট সংযোগ থেকে বঞ্চিতও রাখা যাবে। সহজভাবে বললে, এই চুক্তির ফলে মানুষ ইন্টারনেট বা নিজের কম্পিউটারে বসে কী করছে, তার ওপর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ করা আইনগতভাবে আরও সহজ হয়ে যাবে।

এই চুক্তির সূত্র ধরে সামনে নানা বিপদের কথা আলোচিত হচ্ছে। অনেকে বলছেন, ফেসবুক বা ইউটিউবের মতো মাধ্যমে দেওয়া কোনো কনটেন্ট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আপত্তি করলে তা তাদের তুলে নিতে হবে। কারণ, এসব প্রতিষ্ঠানের অফিস যুক্তরাষ্ট্রে। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে কার্যত ইন্টারনেটের মতো একটি বৈশ্বিক মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি জোরদারের বিষয়টিই প্রতিষ্ঠিত হবে।

এই চুক্তির সূত্র ধরে সামনে নানা বিপদের কথা আলোচিত হচ্ছে। অনেকে বলছেন, ফেসবুক বা ইউটিউবের মতো মাধ্যমে দেওয়া কোনো কনটেন্ট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আপত্তি করলে তা তাদের তুলে নিতে হবে। কারণ, এসব প্রতিষ্ঠানের অফিস যুক্তরাষ্ট্রে
কপিরাইটের বিষয়টি জোরালো হওয়ায় ব্যক্তিগত বা শিক্ষামূলক কোনো কাজে অন্য ভিডিও থেকে ক্লিপ নিয়ে তৈরি করা ভিডিও আইন লঙ্ঘনের আওতায় পড়বে। এবং তা অনলাইন থেকে সরিয়ে ফেলা যাবে। অথবা কপিরাইট করা উপাদান অবাণিজ্যিক কারণে ডাউনলোড করা হলেও তার জন্য বাধ্যতামূলক জরিমানা গুনতে হবে। ‘এক্সপোজ দ্য টিপিপি’-এর মতে এসব কারণে নতুন কিছু সৃষ্টি ও সৃষ্টিশীলতার বিনিময় কঠিন হয়ে পড়বে, সৃজনশীলতার পথে বড় বাধা তৈরি হবে। তারা বলছে, বৈধ কারণে ডিজিটাল লক ভাঙা হলেও (যেমন লিনাক্স ব্যবহার) ব্যবহারকারীদের বাধ্যতামূলকভাবে জরিমানা দিতে হবে। ডিজিটাল লকের কারণে অডিওযুক্ত বিষয়বস্তু ও ক্লোজড ক্যাপশনে প্রবেশ বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং সে কারণে অন্ধ ও বধির মানুষেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। টিপিপি অনুযায়ী কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানের তৈরি করা যেকোনো বিষয়বস্তু ১২০ বছরের জন্য কপিরাইটের সুরক্ষা পাবে।

বলা হচ্ছে, বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষা ও নানা বিপদ থেকে তাদের বাঁচানোই এই চুক্তির লক্ষ্য। টিপিপি অনুযায়ী, ‘কম্পিউটার সিস্টেমের মাধ্যমে’ কোনো নাগরিক কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানের অপকর্ম প্রকাশ করলে তা এই আইনে দেওয়া ‘ট্রেড সিক্রেট’-এর সুরক্ষা ভঙ্গ করার দায়ে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। গত মে মাসে কয়েক শ টেক কোম্পানি ও ডিজিটাল অধিকার গ্রুপ এই আইনের বিরুদ্ধে কংগ্রেসে যে চিঠি লিখেছে, তাতে বলা হয়েছে, এ ধরনের বিধানের ফলে জনগণকে ক্ষতি করছে এমন কোনো জরুরি ইস্যুতেও গণমাধ্যমে তাৎক্ষণিক প্রতিবেদন প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

টিপিপির ফলে সদস্য ১২টি দেশের জনগণ কিসের মধ্যে পড়তে পারে তার একটি ভাষ্য দিয়েছেন উইকিলিকসের জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। বলেছেন, ‘চুক্তি হয়ে গেলে টিপিপির আইপি (ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি) ব্যক্তি অধিকার ও মুক্তবাককে পায়ে মাড়িয়ে যাবে, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সৃজনশীল সাধারণ মানুষের জন্য তা হবে নির্মম অত্যাচারের শামিল। আপনি যদি পড়েন, লেখেন, কোনো কিছু প্রকাশ করেন, চিন্তা করেন, নাচেন, গান করেন বা আবিষ্কার করেন, যদি আপনি চাষ করেন বা ভোগ করেন, যদি আপনি এখন অসুস্থ হন বা ভবিষ্যতে কোনো দিন অসুস্থ হন, তাহলে আপনি টিপিপির বন্দুকের নিশানার মধ্যে চলে আসবেন।’

টিপিপির ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে সরাসরি এর কী প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সরাসরি বাণিজ্যের বিষয় নয়, এমন দিকগুলোও আমাদের জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। মেধাস্বত্ব বিষয়টি সব পর্যায়ে আমাদের জন্য বড় এক সমস্যা হয়ে দেখা দেবে। এর আরও কী প্রভাব আমাদের ওপর পড়তে পারে, তা হয়তো সামনের দিনগুলোয় আরও পরিষ্কার হবে। তবে ইন্টারনেটে ‘নজিরবিহীন’ নজরদারির উদ্যোগ বা ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’র সমস্যাটিকে শুধু চুক্তি স্বাক্ষরকারী ১২ দেশের নাগরিকদের জন্য বিপদের কারণ বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। আমরাও এর বাইরে থাকতে পারব না। আর খারাপ বাতাস ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগে না।

এ কে এম জাকারিয়া: সাংবাদিক।

27
কতটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হলে সাইনবোর্ডে, প্যাডে ও ভিজিটিং কার্ডে গ্রুপ বা গ্রুপ অব কোম্পানিজ ব্যবহার করা যায়—এ বিষয়ে কোনো নিয়ম নেই। কোম্পানি আইনে গ্রুপ বলতে কোনো শব্দও নেই। দেশে কী পরিমাণ ব্যবসা ও শিল্প গ্রুপ বা গ্রুপ অব কোম্পানিজ আছে, এমনকি সেই হিসাবও নেই সরকারের কাছে।
যৌথ মূলধন কোম্পানিজ ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয় (আরজেএসসি) সূত্রে জানা গেছে, একটি বা দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েও একশ্রেণির ব্যবসায়ী গ্রুপের মালিক হিসেবে দাবি করছেন। ব্যাংকঋণ পেতে বা সমাজে প্রভাব খাটানোর প্রবণতা থেকে তাঁরা এ পথ বেছে নিয়েছেন বলে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা মনে করছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকও এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ও আনোয়ার গ্রুপের পরিচালক হোসাইন খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনও দেখা গেছে, কোম্পানির নিবন্ধন হয়েছে, কার্যক্রম নেই। কিন্তু একশ্রেণির ব্যবসায়ী নিবন্ধন পাওয়া কোম্পানিটিরই মালিক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। এটা অনৈতিক।’ আর্থিক খাতের এক সংস্থার তথ্যের সঙ্গে আরেক সংস্থার তথ্যের সংযোগ না থাকার কারণেই এ ধরনের কাজ হতে পারছে বলে মনে করেন তিনি।
এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণে অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক চিন্তা করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সভাপতিত্বে বছরে চারবার আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর যে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়, একাধিক সভায় বিভিন্ন গ্রুপ এবং গ্রুপ অব কোম্পানিজের যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গ্রুপের সব কোম্পানির তথ্য নেওয়া এবং সেই তথ্য ঋণ প্রদানকারী ব্যাংককে দেওয়াসহ কাজটি স্বচ্ছতার সঙ্গে করতে সভাগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংক তাগিদ দিয়েছে আরজেএসসিকে।
ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পেতে চাইলে কোম্পানিকে তার পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের ব্যাংকঋণ-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য দিতে হয়। তথ্য সত্যায়িত হতে হয় আরজেএসসি থেকে। কিন্তু কাজটি যথাযথভাবে হচ্ছে না। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) তথ্যভান্ডার সংশোধনের কাজেও সমস্যা হচ্ছে বলে বৈঠকগুলোতে প্রসঙ্গ তোলে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ঋণ নেওয়ার পর কোম্পানির কোনো পরিচালক পদত্যাগ করতে চাইলে বা শেয়ার বিক্রি করতে চাইলে এ তথ্য ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে জানানোর নিয়ম রয়েছে। আবার ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক একই তথ্য পাঠিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে, যা সংরক্ষিত থাকে সিআইবিতে। ব্যাংকের পর্ষদ অনুমোদন করার পর পদত্যাগ বা শেয়ার বিক্রির তথ্য কোম্পানির পরিচালকদের জমা দিতে হয় আরজেএসসিতে। তবে দুটি বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা যাচ্ছে, আরজেএসসির তথ্য ও ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকের তথ্যের মধ্যে ব্যাপক গরমিল রয়েছে। এতে সিআইবির তথ্যভান্ডার সংশোধনের কাজে সমস্যা হচ্ছে। আরজেএসসির উচিত হবে কেউ জালিয়াতি বা ভুয়া স্বাক্ষর দিয়ে শেয়ার বিক্রি বা হস্তান্তর করছে কি না, সে ব্যাপারে আরও বেশি সতর্ক থাকা।
সমন্বয় সভার একটি বৈঠকে আরজেএসসির নিবন্ধক বিজন কুমার বৈশ্যর কাছে জানতে চাওয়া হয়, কোনো গ্রুপের শুধু একটি কোম্পানির তথ্যের পরিবর্তে পুরো গ্রুপের তথ্য দেওয়া সম্ভব কি না। জবাবে আরজেএসসির নিবন্ধক বৈঠকে জানান, সফটওয়্যার সমস্যার কারণে তা সম্ভব নয়। তা ছাড়া তাদের জনবলও নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক তখন এ ব্যাপারে আরজেএসসিকে সফটওয়্যার দিয়ে সহযোগিতা করবে বলে অঙ্গীকার করে।
জানতে চাইলে বিজন কুমার বৈশ্য প্রথম আলোকে বলেন, কোম্পানি আইনে গ্রুপ বলতে কিছু নেই। তবে জাল-জালিয়াতি রোধে তাঁরা আগের চেয়ে সতর্ক। আর সফটওয়্যার পাওয়া গেলে দেশের সব শিল্প ও ব্যবসায়ী গ্রুপের একটি তালিকা করা যাবে।
সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আরজেএসসি সফটওয়্যার চেয়ে এখনো কোনো আবেদন করেনি। আর সমন্বয় সভার আগামী বৈঠকে গ্রুপ বা গ্রুপ অব কোম্পানিজ শব্দগুলোর ব্যবহার ও অপব্যবহার নিয়ে বিশদ আলোচনা হবে এবং একটা সমাধানও বেরিয়ে আসবে।

ফখরুল ইসলাম | অক্টোবর ০৮, ২০১৫ the daily prothom alo

28
দীর্ঘদিনের এক তাত্ত্বিক বিতর্কের অবসান ঘটাতে চাইছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বিতর্কটি মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ে। বিশেষ করে মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা হলে রপ্তানিতে কী প্রভাব পড়ে, তা নিয়ে নানা মতভেদ আছে। থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ, অনেক আগেই উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন, ‘দুজন অর্থনীতিবিদ থাকলে সর্বদা দুটি মত পাওয়া যাবে। আর যদি সেখানে জন মেনার্ড কেইনস থাকেন, তাহলে মতামত পাওয়া যাবে তিনটি।’
অর্থনীতির তত্ত্ব বলে, অবমূল্যায়ন হলে রপ্তানি বাড়ে। আর অতিমূল্যায়ন হলে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু বাস্তবে কী পরিমাণ এর লাভ-ক্ষতি, তা নিয়ে নানা মতভেদ ছিল। আইএমএফ এ নিয়ে গবেষণা করে এর ফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে। আইএমএফ বলছে, একটি দেশের মুদ্রামানের ১০ শতাংশ অবমূল্যায়ন করা হলে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৫ শতাংশ রপ্তানি বৃদ্ধি পায়।
বিশ্ব অর্থনীতি এখন টালমাটাল অবস্থায়। বিশ্বজুড়ে এখন চলছে মুদ্রাযুদ্ধ। চীন গত আগস্টে হঠাৎ করে তাদের মুদ্রা ইউয়ানের বড় ধরনের অবমূল্যায়নের পর শুরু হয় এই মুদ্রাযুদ্ধ। বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে দেশগুলো যখন যার যার মুদ্রার অবমূল্যায়নের প্রতিযোগিতায় নামে, তখনই শুরু হয় মুদ্রাযুদ্ধ। ইউয়ান ও ডলারের এই মুদ্রাযুদ্ধ ২০০৯ সাল থেকে শুরু হলেও এটি জোরালো হয়েছে মূলত গত আগস্ট থেকেই।
বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তি চীন তাদের রপ্তানির প্রবৃদ্ধি টিকিয়ে রাখতে আগস্টে পরপর দুই দিন ইউয়ানের অবমূল্যায়ন ঘটায়। অন্যদিকে এক নম্বর অর্থনীতির দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট শক্তিশালী থাকায় দেশটির ডলারও তেজি। ফলে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে অনেক দেশকেই মুদ্রার মান কমাতে হয়েছে।
২০০৪ থেকে এই সময় পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে ইউরো ও ইউয়ানের বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হয়েছে। এর বাইরে এই মুদ্রাযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে ভারতের রুপি, রাশিয়ার রুবলসহ প্রায় সব দেশের মুদ্রাই। মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা হলে রপ্তানি বাড়াতে উৎসাহ পান উদ্যোক্তারা। এতে আগের চেয়ে ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা বেশি পান তাঁরা। ফলে সব দেশই আগ্রহী অবমূল্যায়নে। আর এমনই এক সময়ে আইএমএফ সুনির্দিষ্ট করে জানাল অবমূল্যায়নের লাভ-ক্ষতি। বিশ্বজুড়ে মুদ্রাযুদ্ধের এই সময়ে বাংলাদেশই কেবল এর বাইরে।
গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান বেড়েছে ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আর ডলারের বিপরীতে ভারতের রুপির অবমূল্যায়ন হয়েছে ৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ। বিজিএমইএ বলছে, ডলার ও ইউরোর ওঠানামার কারণে বাংলাদেশ গত অর্থবছরে ৩৮ কোটি ডলারের রপ্তানি হারিয়েছে।
ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধরে রাখার কাজ পরোক্ষভাবে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক গত এক বছরে ডলারের চাহিদা ধরে রাখতে ৩৫০ কোটি ডলার কিনেছে। এতে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত যেমন বেড়েছে, তেমনি টাকা রয়ে গেছে তেজি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর মজুত ছিল ২ হাজার ৬৩৭ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। এর ফলে ডলারের দর এখন ৭৭ টাকা ৮০ পয়সায় ধরে রাখা হয়েছে।
স্থানীয় মুদ্রা শক্তিশালী হলে আমদানিকারকেরা লাভবান হন। কারণ আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য কিছুটা কম দামে তাঁরা ডলার কিনতে পারেন। যেমন, এখন যদি ডলার কিনতে হয় প্রায় ৭৮ টাকায়, অবমূল্যায়ন হলে সেটি ৭৯ বা ৮০ টাকা হতে পারে। প্রতি ডলার কিনতে তখন আমদানিকারকদের বাড়তি অর্থ ব্যয় হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানি ব্যয় কমানোর দিকেই বেশি আগ্রহী। এমনিতেই বিশ্বব্যাপী প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম কমে গেছে। টাকা শক্তিশালী রেখে আমদানিতে আরও বাড়তি সুবিধা নেওয়া হচ্ছে। ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ কমানোর লক্ষ্যও এর মাধ্যমে অর্জিত হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের।
বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে ভারত ও চীন থেকে। আর দেশ দুটিতে রপ্তানি করে সামান্যই। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানি ছিল ৬৫০ কোটি ডলার, রপ্তানি প্রায় ৫৩ কোটি ডলার। একই সময়ে চীন থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৮২২ কোটি ডলারের পণ্য, রপ্তানি করেছে মাত্র ৭৯ কোটি ডলারের পণ্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, এ অবস্থায় আমদানিতেই বেশি লাভবান হচ্ছে বাংলাদেশ।
যদিও অর্থনীতিবিদদের বড় অংশ এবং ব্যবসায়ীরা চান দ্রুত টাকার অবমূল্যায়ন হোক। বিশেষ করে চলতি অর্থবছরে রপ্তানি ও প্রবাসী-আয়ের প্রবৃদ্ধিতে ওঠানামার কারণে দাবিটি জোরালো হয়ে উঠেছে। এখন পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশেরও কম। জুলাই-আগস্ট সময়ে প্রবাসী-আয়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হলেও ঈদের কারণে সেপ্টেম্বরে বেড়েছে। ফলে অবমূল্যায়নকে একেবারেই বাতিলের খাতায় ফেলতে হয়তো পারবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশেষ করে আইএমএফের গবেষণার পর বাংলাদেশ ব্যাংক কী করবে সেটাই এখন প্রশ্ন।

শওকত হোসেন  অক্টোবর ০৮, ২০১৫ the daily prothom alo

29
একটি দেশে কেন জঙ্গিবাদ বা সহিংস উগ্রপন্থা বিস্তার লাভ করে, কেন এ ধরনের আদর্শ মানুষকে আকর্ষণ করে, কারা জঙ্গিবাদের প্রতি আকর্ষিত হয়? কয়েক দশক ধরেই সমাজবিজ্ঞানী, নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও নীতিনির্ধারকেরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন। প্রকৃতপক্ষে এই প্রশ্নগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে গত শতকের ষাটের দশকে, যখন সমাজতান্ত্রিক আদর্শের প্রতি মানুষের আকর্ষণ তৈরি হয় এবং বিভিন্ন দেশে কমিউনিস্ট পার্টি সশস্ত্র বিপ্লবের পথে সাধারণ মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। কিন্তু তার আগেও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অংশ হিসেবে সহিংসতার ব্যবহারকে (যেমন: আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি, বাস্ক গেরিলাদের সংগঠন) বোঝার জন্যও একই ধরনের প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। সত্তরের দশকে ইতালির রেড ব্রিগেড, জার্মানির বাদের-মেইনহফ, জাপানে রেড আর্মিকে যাঁরা অনুসরণ করেছেন, সেসব গবেষকও এই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন। ফলে এ বিষয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে কখনোই ঘাটতি ছিল না।
এই প্রশ্নগুলো নতুন করে শক্তিশালী হয়ে ওঠে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের পর; আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আল-কায়েদার আবির্ভাব, আফগানিস্তানে তালেবানের গ্রহণযোগ্যতা এই প্রশ্নগুলোতে নতুন মাত্রা যোগ করে দেয়। এই পর্যায়ে রাজনৈতিক আদর্শের প্রশ্নের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে ধর্মের প্রশ্ন। কেউ কেউ এই প্রশ্নও তোলেন যে রাজনৈতিক আদর্শ ও ধর্মের মধ্যে কোনো বিভাজন টানা উচিত হবে কি না।
রাজনৈতিক ইসলামের মধ্য থেকে একটি ধারা আগেও সহিংসতাকে তাদের কৌশল হিসেবেই শুধু বেছে নিয়েছিল তা নয়, তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় একেই একমাত্র পথ বলেও বিবেচনা করে সে পথেই অগ্রসর হয়েছে। তালেবান সেই ধারার প্রতিনিধিত্ব করে। ২০০১ সালের ঘটনাবলির কারণে তাদের প্রতি মনোযোগ আকর্ষিত হয়। এই ধারার লক্ষ্য সীমিত বলেই বিবেচিত হওয়া দরকার, কেননা নিজস্ব রাষ্ট্রের মধ্যেই তারা তাদের আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং চেয়েছে। অন্যপক্ষে, আমরা দেখতে পাই ইসলামের রাজনৈতিক দিককে আশ্রয় করে আরও সংগঠনের আবির্ভাব বা পুনরুত্থান ঘটে, যাদের লক্ষ্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত রাষ্ট্রসীমাকে অস্বীকার করে তাদের ভাষায় ‘খেলাফত’ প্রতিষ্ঠা। একই সঙ্গে প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক কাঠামোকে তারা চ্যালেঞ্জ করতে উৎসাহী হয়ে ওঠে। কৌশল ও কর্মপদ্ধতি তাদের জন্য গৌণ বিষয়। হিযবুত তাহ্‌রীর সেই ধারার প্রতিনিধি।
এই ঘটনাপ্রবাহ ইসলামপন্থী রাজনীতির মধ্যে যেমন বিভিন্ন ধারার জন্ম দেয়, তেমনি এসব ধারার আবেদন বোঝার তাগিদ তৈরি হয়। অবশ্যই এই ঘটনাপ্রবাহ নিজের মতো করে স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়নি। চলমান আন্তর্জাতিক ঘটনাবলি, অর্থনীতির বিশ্বায়ন, প্রযুক্তির উৎকর্ষ—সবই তাকে প্রভাবিত করেছে। ২০১০ সাল নাগাদ আমরা দেখতে পাই যে আরও একধরনের সংগঠনের আবির্ভাব ঘটে, যারা যুদ্ধবিধ্বস্ত কিংবা সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত অঞ্চলগুলোয় তাদের নিজস্ব কর্তৃত্ব স্থাপনের মাধ্যমে নিজেদের রাষ্ট্র, যাকে তারা ‘খেলাফত’ বলে বর্ণনা করে, প্রতিষ্ঠা করে এবং সারা পৃথিবীর মুসলিমদের প্রতিনিধিত্বের দাবিদার হয়ে ওঠে। নাইজেরিয়ার বোকো হারাম ও ইরাকে ইসলামি রাষ্ট্র এর উদাহরণ।

এই ঘটনাপ্রবাহের পাশাপাশি ২০০১ সাল থেকে ইসলামপন্থী সহিংস চরমপন্থী সংগঠনগুলো নিয়ে গবেষণার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এসব গবেষণার ফলাফলের দিকে দৃকপাত না করে অনেক বিশ্লেষক, রাজনীতিবিদ সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদের কারণ হিসেবে তাঁদের ধারণাকে প্রকৃত কারণ বলে বর্ণনা করতে শুরু করেন। এই প্রবণতার সবচেয়ে বড় দিক হলো এই যে তাঁরা ধরে নিলেন যে দারিদ্র্যই হচ্ছে সহিংস চরমপন্থার কারণ এবং সুযোগবঞ্চিত মানুষেরা জঙ্গি সংগঠনের আদর্শের প্রতি আকর্ষিত হয়। তালেবান নেতৃত্ব, পাকিস্তানের বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাংগঠনিক কাঠামো ও আফগান যুদ্ধে পাকিস্তানি কয়েকটি মাদ্রাসার ভূমিকার ওপরে নির্ভর করে অনেকে মাদ্রাসাকেই ইসলামপন্থী সহিংস চরমপন্থার উৎস বলে প্রচার করতে থাকে। এসব ধারণা শিগগিরই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে শুরু করে; কেননা দেখা যায় যে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের অধিকাংশ নেতা কিংবা আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীরা দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত কিংবা ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষিত নয়।

পরবর্তী কয়েক বছরে গবেষকেরা তাঁদের অতীত গবেষণা, সংগৃহীত তথ্য ইত্যাদির আলোকে কিছু সাধারণ উপসংহারে উপনীত হন। যাতে ধারণা দেওয়া হয় যে সন্ত্রাসবাদের কিছু ভিত্তিগত (ইংরেজিতে আন্ডারলায়িং), অন্যভাবে বললে সামাজিক ও অর্থনৈতিক মূল কারণ রয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে আরও সুনির্দিষ্ট, বাস্তবতানির্ভর ও তথ্যসমৃদ্ধ গবেষণাকাজের পরে দেখা যাচ্ছে যে এই ধরনের মূল কারণ চিহ্নিত করার বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন একই রকমের আর্থসামাজিক অবস্থা সবাইকে সন্ত্রাসী করে তুলছে না। তা ছাড়া যারা এই ধরনের সন্ত্রাসী কাজে যুক্ত হয়, তারা কেবল পরিস্থিতির চাপে যোগ দেয় না, ক্ষেত্রবিশেষে কিছুর আকর্ষণে যুক্ত হয়। সেটা বিশেষ করে কোনো নেতার আকর্ষণ হতে পারে, হতে পারে যে এই ধরনের সংগঠন তাকে এমন কিছু দিতে পারে, যা তাকে সমাজের অন্য কোনো সংস্থা, পরিবার বা বন্ধু দিতে পারছে না। তা ছাড়া মানুষ স্বেচ্ছায় অনেক কিছু করে, কেবল পরিস্থিতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে করে না। সন্ত্রাসের মূল কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টার একটা বড় দুর্বলতা হচ্ছে যে, ধরে নেওয়া হয় যে সম্ভাব্য সন্ত্রাসীরা কেবল দেশের অভ্যন্তরীণ অবস্থা দিয়ে প্রভাবিত হয়।

এসব দুর্বলতার প্রেক্ষাপটে গবেষকেরা গত কয়েক দশকে বিভিন্ন দেশে যেখানে জঙ্গিবাদ প্রসারিত হয়েছে, যেসব ব্যক্তি জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হয়েছে, যেসব জঙ্গি সংগঠন শক্তি সঞ্চয় করতে পেরেছে, তাদের ওপর গবেষণা করে এই উপসংহারে পৌঁছেছেন যে জঙ্গি হয়ে ওঠা এবং জঙ্গিবাদের প্রসারের ক্ষেত্রে কতিপয় বিষয় চালকের ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ এই বিষয়গুলো ব্যক্তিকে সন্ত্রাসের পথে ঠেলে দেয়, সমাজে জঙ্গিবাদের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করে এবং সন্ত্রাসী সংগঠন তৈরি করে। এই ড্রাইভার বা চালিকাগুলোকে ভাগ করা হয়েছে চারটি ভাগে: অভ্যন্তরীণ সামাজিক-অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বৈশ্বিক।

অভ্যন্তরীণ চালকের মধ্যে রয়েছে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্নতা বা প্রান্তিকতা অনুভব করা, সামাজিকভাবে বৈষম্যের শিকার হওয়া, হতাশার বোধ, অন্যদের তুলনায় বঞ্চিত অনুভব করা। রাজনৈতিক চালকগুলোর মধ্যে আছে রাজনৈতিক অধিকার ও নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া, সরকারের কঠোর নিপীড়ন ও সুস্পষ্টভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, সর্বব্যাপী দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের দায়মুক্তির ব্যবস্থা, স্থানীয়ভাবে অব্যাহত সংঘাত, সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এলাকা তৈরি হওয়া। সাংস্কৃতিক চালকের মধ্যে আছে এই ধারণা বিরাজ করা বা তৈরি হওয়া যে ইসলাম আক্রমণের বা বিপদের মুখোমুখি, নিজের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য হুমকির মুখে এবং ক্ষেত্রবিশেষে নিজের ইসলামি সংস্কৃতির বিকাশ বা সমাজে অন্যদের ওপরে নিজের ইসলামি সংস্কৃতিকে চাপিয়ে দেওয়া।

বৈশ্বিক চালকের মধ্যে আছে নিজেদের ভিকটিম বলে মনে করা। একার্থে এটি সাংস্কৃতিক চালকের সঙ্গে যুক্ত। ইসলাম বিপদের মুখে—এই ধারণার সঙ্গে যখন যুক্ত হয় যে মুসলিম জনগোষ্ঠী অন্যত্র অন্যায় ও বৈষম্যের শিকার, যদি এই ধারণা সৃষ্টি হয় যে বিশ্বব্যবস্থা মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য অন্যায্য, তাহলে তা এক শক্তিশালী চালকের ভূমিকা পালন করতে পারে।

এ ছাড়া বৈশ্বিক চালকের আরেকটি হচ্ছে ‘কাছের শত্রু-দূরের শত্রু’র ধারণা। যখন অভ্যন্তরীণভাবে দেশের ভেতরে নিপীড়ন বৃদ্ধি পায়, যখন ‘কাছের শত্রু’কে পরাজিত করতে সক্ষম হয় না, তখন দেশের বাইরে ‘দূরের শত্রু’র বিরুদ্ধে তাদের অভিযান চালানোর আগ্রহ তৈরি হয়। অধিকাংশ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে শত্রু বলে বিবেচনা করে, তার কারণগুলোর মধ্যে নিপীড়ক সরকারগুলোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সমর্থন অন্যতম বলেই তাদের দলিলপত্র, প্রচারণা ও সদস্য সংগ্রহের প্রচারণায় স্পষ্ট। এই চালকগুলো একক ও সম্মিলিতভাবে কাজ করে এবং সব জায়গায় সবগুলো না থাকলেও তার কার্যকারিতা অক্ষত থাকে বলেই দেখা গেছে।

আজ যখন বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট বা আল-কায়েদার মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সে সময় বোঝা দরকার কোন ধরনের পরিস্থিতিতে কোন ধরনের চালক দেশীয় বা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের জন্য অনুকূল অবস্থার জন্ম দেয়। জঙ্গিবাদ কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে চাইলে এসব বিষয় বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।  (শেষ)

আলী রীয়াজ: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক।

30
I used to take coffee but without sugar I can't imagine it. What should i do? How much amount of sugar would be tolerable?

Pages: 1 [2] 3 4 ... 9