Daffodil International University

Health Tips => Health Tips => Psychological Disorder => Topic started by: Jannatul Ferdous on June 14, 2016, 11:06:00 AM

Title: শিশুর জিদ কীভাবে সামলাবেন
Post by: Jannatul Ferdous on June 14, 2016, 11:06:00 AM
শিশুর জিদ কীভাবে সামলাবেন

নয় বছর বয়সের ছেলে তারিফ। ইদানীং সে কথায় কথায় মা-বাবার সঙ্গে রাগারাগি করে। তার জিদ যেন দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। তার যখন যা চাই, তা না পেলে সে রাগ করে, কখনো চুপ করে ঘাড় বাঁকা করে বসে থাকে, কখনো চিৎকার করতে থাকে। মাঝেমধ্যে হাতের কাছে যা পায়, তা ছুড়তে থাকে।
সারিকার বয়স মাত্র ছয়। তারও জিদ খুব বেশি। যা চাইছে তা সঙ্গে সঙ্গে না পেলে চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তোলে। ইদানীং দেখা যাচ্ছে রাগ করলে সে ঘরের মেঝেতে গড়াগড়ি খায়। মা-বাবা এর জন্য তাকে প্রতিদিনই চড়-থাপ্পড় দিয়ে থাকেন; কিন্তু কিছুতেই কিছু নয়। সারিকার জিদকে মা-বাবা ইদানীং ভয় পান। শিশুদের মধ্যে বায়না থাকে। মা-বাবার সঙ্গে তাদের মতের মিল না হলে, তার চাহিদা পূরণ না হলে সে রাগ করতেই পারে, মন খারাপ করতেই পারে। কিন্তু কখনো দেখা যায়, তার রাগ আর মন খারাপটি জিদের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এতে তার আচরণ হয়ে পড়ছে অসংযত। কখনো চিৎকার, কখনো মাটিতে গড়াগড়ি, কখনো জিনিসপত্র ভাংচুর, কখনো ঘাড় শক্ত করে মা-বাবার কথা না শোনার চেষ্টা। কেউ দেখা যাচ্ছে জিদ করে খাবার খাচ্ছে না, বিছানায় না ঘুমিয়ে মাটিতে শুচ্ছে, কেউ বা ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে।
দু-তিন বছর বয়সে শিশুর এই জিদকে বলা হয় টেম্পার টেন্রট্রাম। সেই বয়সে এই জিদ খুব অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু বয়স বাড়তে থাকলে যদি এই জিদ নিরসন না হয়, তখন তা শিশুর বিকাশ ও আচরণে নানা সমস্যা তৈরি করে। প্রথম দিকে শিশুরা এই জিদের মাধ্যমে অভিভাবক, বিশেষ করে মা-বাবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাদের মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। খুব ছোট বয়সে এই জিদ করেই সে তার প্রাপ্য বুঝে নেয়। কিন্তু মা-বাবা যদি বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শিশুর জিদকে উপক্ষো করতে না পারেন, যদি সব সময় তার জিদকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন, তখন শিশুর মধ্যে একটা শর্তাধীন অবস্থা বা কন্ডিশনিং তৈরি হয়।
নিজের অজান্তে তার অবচেতন মনের গড়ন এমনটা হয় যে সে জিদ না করে কিছু পেতে চায় না। অনেক সময় শিশুর এই অনাকাঙ্ক্ষিত জিদ কমাতে মা-বাবা রাগ করেন, শিশুকে বকাবকি করেন, তাকে মারধরও করেন! কিন্তু এভাবে শিশুর জিদ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। শিশুর জিদ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মা-বাবাকে শিশুর প্রতি তাদের আচরণ পরিবর্তন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মা-বাবারা যা করতে পারেন :
• শিশুর চাহিদা বুঝতে শিখুন :
শিশু কী চাইছে, তা বোঝার চেষ্টা করুন। আপনার কাছে যেটা শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় মনে হচ্ছে, সেটা তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নাও হতে পারে। তাকে কাছ থেকে দেখুন।
• জিদকে গুরুত্ব নয় :
শিশুর জিদকে প্রাধান্য দেবেন না। তার যুক্তিগ্রাহ্য ও বাস্তবসম্মত চাহিদা যথাসম্ভব পূরণ করুন। কিন্তু তার জিদকে গুরুত্ব দিতে থাকলে সে একসময় জিদনির্ভর হয়ে পড়বে। তখন সে সামান্য কিছুতেই জিদ করবে। শিশুর জিদকে অগ্রাহ্য করতে শিখুন।
• হতবিহ্বল নয় :
অনেক মা-বাবা শিশুর জিদের বহিঃপ্রকাশে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। ভয় পেয়ে যান। ভাবেন যেনতেন প্রকারেই হোক শিশুর কান্না থামাতে হবে, রাগ-জিদ কমাতে হবে। কিন্তু ভেবে দেখুন, ‘আপনি কি কেবল আজকের দিনের জন্য তার কান্না কমাতে চান, নাকি আপনি চান সে সারা জীবন জিদমুক্ত থাকুক।’ যদি দীর্ঘদিনের জন্য শিশুর ভালো চান, তবে আজকে, কালকে বা কত কত দিনের জন্য তাকে কাঁদতে দিন, তার জিদের কাছে নতিস্বীকার নয়।
• শিশুকে অন্য বিষয়ে মনোযোগী করুন :
শিশুটি যে বিষয়ে জিদ করছে, সে বিষয় থেকে তাকে অন্যদিকে মনোযোগী হতে সাহায্য করুন।
• নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন :
শিশুর জিদ বাড়লেও আপনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন। শান্ত থাকুন। রাগ করবেন না, চিৎকার করবেন না।
• ব্যাখ্যা দিন :
শিশুকে কেন তার চাহিদার বস্তুটি দিচ্ছেন না, তা বুঝিয়ে বলুন। ব্যাখ্যা দিন। ব্যাখ্যাটি সে গ্রহণ করছে কি-না, সেটির চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে আপনি ব্যাখ্যা দিচ্ছেন কি না।
• শিশুকে ব্যঙ্গ করবেন না :
 শিশুর জিদ বা অন্য কোনো বিষয় নিয়ে তাকে ব্যঙ্গ করবেন না।
• শিশুকে গুণগত সময় দিন :
শিশুর সঙ্গে খেলুন, তার সঙ্গে কথা বলুন। তাকে গুণগত সময় দিন।
• অপরাপর কারণ জানার চেষ্টা করুন :
অনেক সময় যৌন নির্যাতন, স্কুলে উত্ত্যক্ত হওয়ার ঘটনা, কারো দ্বারা প্রতিনিয়ত হুমকি পাওয়া, বীভৎসতা প্রত্যক্ষ করা ইত্যাদি বিষয় শিশুর জিদ বাড়িয়ে দিতে পারে। এ ধরনের কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে কি না যাচাই করুন।
• প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক :
কোনো কোনো সময় কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডারসহ বেশ কিছু মানসিক সমস্যায় শিশুর জিদ বাড়তে পারে। শিশুর জিদ নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হলে অথবা শিশুর মধ্যে যদি নিজের ক্ষতি করার প্রবণতা বা আত্মহত্যার প্রবণতা লক্ষ করে থাকেন, তবে দেরি না করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, শিশু-কিশোর ও পারিবারিক মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।