Daffodil International University

Entertainment & Discussions => Sports Zone => Topic started by: maruppharm on November 18, 2013, 11:05:29 AM

Title: রূপকথার নায়কের রূপকথার মতোই বিদায়
Post by: maruppharm on November 18, 2013, 11:05:29 AM
‘টেন্ডুলকার’শচীন, শচীন’ চিৎকারটাকে তখন আর ‘আওয়াজ’ বলে বোঝানো যাচ্ছে না। দু-তিন কিলোমিটার দূরত্বের আরব সাগর কি মাঝখানের সবকিছু ভাসিয়ে দিয়ে ওয়াংখেড়েতে এসে উপস্থিত! জলকল্লোলের মতো সেই গর্জন ছাপিয়েও কী শোনা যাচ্ছে ওটা! শঙ্খের আওয়াজ না!

শঙ্খই! বুকে-পিঠে তেরঙ্গায় ‘টেন্ডুলকার’ সেজে একটা মূর্তি মিছিলটার সামনে পাগলের মতো ঘুরে ঘুরে এগোচ্ছে আর একটু পরপর ফুঁ দিচ্ছে শঙ্খে। দুপুরের খররোদে চোখের সামনেই ঘটছে সব। তার পরও কেমন যেন অবাস্তব মনে হচ্ছে। ওই গর্জনের সঙ্গে শঙ্খের ফুঁ মিলিয়ে পুরো ব্যাপারটায় কেমন যেন একটা আধিদৈবিক ব্যাপার আছে!

তা কাল দুপুরে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে যা যা হলো, তা তো আধিদৈবিকই। এত বছরের ক্রিকেট ইতিহাসে কত ক্রিকেটার এল-গেল, এমন কিছু কে দেখেছে কবে! তিনি সুধীর গৌতম; যাঁর শয়নে-স্বপনে, নিদ্রায়-জাগরণে টেন্ডুলকার ছাড়া কিছু নেই, সেই কত বছর ধরে যেখানে টেন্ডুলকার, সেখানেই সারা গায়ে রং মেখে শঙ্খ নিয়ে হাজির...বিদায়বেলায় তাঁর অমন রূপ একদমই অবাক করার মতো নয়। যেটি ক্রিকেটের ‘অবাক গল্প’ হয়ে থাকবে, তা হলো দল ছাপিয়ে শুধুই ওই ব্যক্তিপূজা। না, ক্রিকেট এমন কিছু আগে দেখেনি। আর দেখবেও না কোনো দিন।

খেলা শেষ হয়ে যাওয়ার পর ঘণ্টা খানেক চলে গেছে, গ্যালারি থেকে একটা লোকও বেরিয়ে যায়নি—এতেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। ক্রিকেট মহানায়কের বিদায়লগ্নটার সাক্ষী হয়ে থাকবেন বলেই তো এসেছেন মাঠে। প্রথম দুই দিনেই প্রায় মীমাংসা হয়ে যাওয়া এই মরা ম্যাচ তো উপলক্ষমাত্র। সেই দর্শকেরা ‘শচীন, শচীন’ বলে চিৎকার করছে। অনেকেরই গলা ভাঙা। সেটি শুধু টানা চিৎকারের কারণে নয়, কান্নাভেজা গলায় চিৎকারটা অমনই শোনায়।


না, এতেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। শচীন টেন্ডুলকারের বিদায় তো শুধুই একজন ক্রিকেটারের চলে যাওয়া নয়। একটা সুখস্বপ্নের সমাপ্তি। সমাপ্তি অমর এক প্রেমকাহিনির, দুই যুগ আগে ১৬ বছরের এক কিশোরের সঙ্গে যেটির শুরু ভারতের কোটি জনতার। যেটি অবাক হওয়ার মতো, এত আগে থেকে জানার পরও আসল সময়টা যখন এল, সমবেত জনতার অমন ভেঙে পড়া।

না, এমন কিছু ক্রিকেট দেখেনি। আর কোনো দিন দেখবেও না। কার সাধ্য আছে ওয়াংখেড়ের মূল গেটের সামনে ওই দৃশ্যটার জন্ম দেওয়ার। চার ঘণ্টারও বেশি শেষ হয়ে গেছে খেলা। শচীন টেন্ডুলকার স্টেডিয়াম ছেড়ে গেছেন, আসলে ক্রিকেট ছেড়েই, সেটিও ঘণ্টা আড়াই হতে চলল। তখনো ‘শচীন, শচীন’ বলে চিৎকার করে যাচ্ছে বিশাল এক জটলা। কাছে গিয়ে দেখা গেল, হাতে বিশাল একটা ব্যানার। নিচে লেখা ‘ক্রিকেট আর কখনো আগের মতো থাকবে না।’ ওপরে ক্রিকেট ইতিহাসকে দুই ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে—বিএস: বিফোর শচীন, এএস: আফটার শচীন। পাশেই একটা দাড়িপাল্লার ছবি। যার এক দিকে হাস্যমুখ শচীন টেন্ডুলকার, অন্য দিকে ভারতের বাকি সব খেলোয়াড়। টেন্ডুলকারের পাল্লাটা মাটি ছুঁয়ে আকাশে তুলে দিয়েছে অন্য দিকটাকে। মাঠে মঞ্চস্থ অবিশ্বাস্য সব দৃশ্যকেও যেন ম্লান করে দিল ওই শেষের ছবিটা।


মাঠে যা হলো, সেটি আসলে লিখে বোঝানোর নয়। কার সাধ্য আবেগের ওই জোয়ারকে শব্দে ফুটিয়ে তোলে! খেলা শেষে ভারতীয় দল টেন্ডুলকারের জন্য একটা কিছু করবে, এটা অনুমিতই ছিল। সবার সঙ্গে হাত মেলানো শেষে টেন্ডুলকার যখন বেরিয়ে যাচ্ছেন, ধোনিদের গার্ড অব অনার দিতে দাঁড়িয়ে যাওয়ায় তাই অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। কিন্তু এমন গার্ড অব অনার কে দেখেছে কবে! টেন্ডুলকার এগিয়ে যাচ্ছেন আর দুই পাশের মনুষ্যসারিও লাফিয়ে লাফিয়ে এগোচ্ছে তাঁর সঙ্গে!

স্টেডিয়ামের বিশাল পর্দায় তখন ভেসে উঠেছে ‘লিজেন্ডস ডোন্ট রিটায়ার।’ একটু পরই তাতে এক দর্শকের দোলানো প্ল্যাকার্ডের ছবি। ‘লিজেন্ডস’-এর বদলে যেখানে ‘গড’—গড ডোন্ট রিটায়ার!

কিন্তু এই ‘গড’ যে সত্যিই ‘রিটায়ার’ করছেন, এই মর্মান্তিক সত্যটাই যেন মেনে নিতে পারছে না কেউ। টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার যখন টেন্ডুলকারের দ্বিতীয় দিনের ব্যাটিং দেখাচ্ছে, বড় পর্দায় তখন ড্রেসিংরুমের ছবি। টেন্ডুলকারের পাশে ব্রায়ান লারা। ক্ষণে ক্ষণে পাল্টে যাচ্ছে ছবিটা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়েরা যে একের পর এক এসে টেন্ডুলকারের সঙ্গে ছবি তুলতে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন।

আবেগের চূড়ান্ত বিস্ফোরণ ঘটল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে। ক্রিকেট ইতিহাসে সম্ভবত এই প্রথম শুরুতেই ম্যাচসেরা আর সিরিজ-সেরাকে পুরস্কার দেওয়ার ‘ঝামেলা’ সেরে ফেলা হলো। স্ত্রী-সন্তানের পাশে দাঁড়ানো টেন্ডুলকারের দৃষ্টি তখন বারবার মাঠ ঘুরে আসছে। আজ থেকে ২৫ বছর আগে এই মাঠেই রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেকে সেঞ্চুরি দিয়েই তো শুরু ক্রিকেটীয় রূপকথার। আসলেই কি ‘নটেগাছটি মুড়াল’ অবশেষে! মাঠের অন্যপাশে মাইক্রোফোন হাতে দাঁড়িয়ে থাকা সৌরভ গাঙ্গুলী, রাহুল দ্রাবিড়, ভেঙ্কট লক্ষ্মণদেরও কেমন যেন বিহ্বল দেখাচ্ছে। বিহ্বলতা আসলে ছড়িয়ে পড়েছে পুরো স্টেডিয়ামেই। এমনই যে, রবি শাস্ত্রীর মতো দুঁদে ভাষ্যকারও দু-দুবার ভুল করে ফেললেন। একই পুরস্কার দুবার ঘোষণা করলেন, ড্যারেন স্যামির সাক্ষাৎকার নিয়ে ফেলার পরও ভুল করে আবারও ডেকে বসলেন তাঁকে!

শেষটা টেন্ডুলকারের জন্য বরাদ্দ থাকবে স্বাভাবিক। শাস্ত্রীর কাছ থেকে মাইক্রোফোন হাতে নিলেন। বক্তা হিসেবে কখনোই সুনাম ছিল না। ব্যাট হাতে সারা জীবন বিস্ময় ছড়িয়েছেন, বিদায়বেলায় বিস্ময় উপহার দিলেন মাইক্রোফোন হাতেও। অসাধারণ এক বক্তৃতা আবার সবাইকে মনে করিয়ে দিল, ক্রিকেটার টেন্ডুলকারের চেয়ে মানুষ টেন্ডুলকারও কম বড় নন। শুধু ক্রিকেটীয় দক্ষতার কারণেই তিনি শচীন টেন্ডুলকার হননি, হয়েছেন সবটা মিলেই।


সেই কৈশোর থেকে ক্রিকেট-তীর্থযাত্রায় পথে সামান্যতম অবদান রাখা কেউই বাদ গেলেন না তাঁর কৃতজ্ঞতা-প্রাপকের তালিকা থেকে। স্ত্রীর ত্যাগের কথা যখন বলছেন, রোদচশমাও আড়াল করতে পারল না অঞ্জলির চোখের জলকে। সেই কান্না এমনই ছোঁয়াচে যে প্রেসবক্সে কঠিন পেশাদারি মনের সাংবাদিকেরাও তখন চোখ মুছছেন।

পুরো মাঠে একটা ল্যাপ অব অনার দেবেন অনুমিতই ছিল। কিন্তু তাঁকে ঘিরে প্রবল হুড়োহুড়িতে সেটি প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াল। নিরাপত্তাকর্মীদের তৎপরতায় শেষ পর্যন্ত যখন তা সম্ভব হলো, বিশ্বকাপের স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়ে ধোনি আর বিরাট কোহলি কাঁধে তুলে নিলেন তাঁকে। কাঁধ বদল হলো কয়েকবার, ভেতরের ঝড় চাপা দিয়ে টেন্ডুলকার হাসিমুখেই হাত নেড়ে গেলেন।

সেই শোভাযাত্রা যখন শেষ হলো, তখনই যেন বুঝতে পারলেন, আসলেই সব শেষ! ভিড় থেকে বেরিয়ে একা হেঁটে এলেন মাঠের মাঝখানে। সেই ২২ গজে, যে ২২ গজেই কেটেছে তাঁর জীবন। নিচু হয়ে প্রথমে এক হাতে ছুঁলেন উইকেটটা, তারপর দুই হাতে। ২২ গজকে প্রণাম করে ফিরে যাওয়ার সময়ই জন্ম হলো দিনের সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্তটার। ফ্লপি হ্যাটের নিচে মাথা নিচু করে আড়াল করতে চাইলেন দুচোখে নেমে আসা আবেগের স্রোতকে। পারলেন কই!

যে ক্রিকেট তাঁর জীবন, যে ক্রিকেট মিশে আছে তাঁর নিঃশ্বাসে, সেই ক্রিকেটের সঙ্গে বন্ধন ছিন্ন করে কাঁদতে কাঁদতে মাঠ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন টেন্ডুলকার। যত দিন ক্রিকেট থাকবে, অমর হয়ে থাকবে এই ছবিটাও।
Title: Re: রূপকথার নায়কের রূপকথার মতোই বিদায়
Post by: monirulenam on March 02, 2016, 01:31:24 PM
Right