Daffodil International University
Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Hadith => Topic started by: Noman_1450 on July 20, 2012, 08:50:21 AM
-
হযরত হুযাইফাহ রদিয়াল্লহু আ’নহু (حذيْفة رضى الله عنْه) হইতে বর্ণিত আছে যে, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, মানুষের স্ত্রী, মাল, আওলাদ এবং প্রতিবেশী সম্পর্কিত হুকুম পালনে যে ত্রুটি বিচ্যুতি ও গুনাহ হয়, নামায সদকা আমর বিল মা’রুফ অ নাহী আনিল মুনকার উহার কাফফারা হইয়া যায়। (বুখারী)
-
হযরত ইবনে আ’ব্বাস রদিয়াল্লহু আ’নহুমা (ابْن عبّاس رضى الله عنْهما) বলেন, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, সেই ব্যক্তি আমাদের অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত নহে, যে আমাদের ছোটদের প্রতি দয়া করে না, আমাদের বড়দের সম্মান করে না, সৎকাজের আদেশ করেনা এবং অসৎ কাজের নিষেধ করে না। (তিরমিযী)
-
হযরত আবু সাঈ’দ রদিয়াল্লহু আ’নহু (أبىْ سعيْد رضى الله عنْه) বর্ণনা করেন যে, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, তোমরা রাস্তার উপরে বসিও না। সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুম আরজ করিলেন, ইয়া রসুলুল্লহ! আমাদের জন্য রাস্তার উপরে না বসিয়া উপায় নাই, আমরা সেখানে বসিয়া কথাবার্তা বলিয়া থাকি। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিলেন, যদি বসিতেই হয় তবে রাস্তার হকসমূহ আদায় করিবে। সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুম আরজ করিলেন, ইয়া রসুলুল্লহ! রাস্তার হকসমূহ কি? তিনি এরশাদ করিলেন, দৃষ্টি অবনত রাখা, কষ্টদায়ক জিনিস রাস্তা হইতে সরাইয়া দেওয়া, (অথবা স্বয়ং কাহাকেও কষ্ট না দেওয়া) সালামের উত্তর দেওয়া, সৎ কাজে আদেশ করা অসৎ কাজের নিষেধ করা। (বুখারী)
ফায়দাঃ সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুমদের উদ্দেশ্য ছিল রাস্তায় বসা হইতে বাঁচিয়া থাকা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়, কেননা আমাদের এমন কোন স্থান নাই যেখানে আমরা মজলিস করিতে পারি। এইজন্য যখন আমরা কয়েকজন একত্রিত হই তখন সেখানে রাস্তার উপরেই বসিয়া যাই এবং নিজেদের দ্বীনী ও দুনিয়াবী বিষয়ে পরস্পর পরমর্শ করি। একে অন্যের অবস্থা জিজ্ঞাসা করি। কেহ অসুস্থ হইলে তাহার জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করি পরস্পর কোন মনোকষ্ট থাকিলে উহা দূর করিয়া আপো্ষ করি।
-
হযরত আবু বকর রদিয়াল্লহু আ’নহু (أبىْ بكر رضى الله عنْه) বলিয়াছেন, লোকেরা, তোমরা এই আয়াত পড়িয়া থাক
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا عَلَيْكُمْ أَنفُسَكُمْ ۖ لَا يَضُرُّكُم مَّن ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ ۚ إِلَى اللَّـهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيعًا فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ, নিজেদের ফিকির কর, যখন তোমরা সোজা পথে চলিতেছ তখন যে ব্যক্তি পথভ্রষ্ট হয় তাহার দ্বারা তোমাদের কোন ক্ষতি নাই। (সূরা মায়েদাহঃ ১০৫)
আর আমি রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে এই এরশাদ করিতে শুনিয়াছি যে, যখন লোকেরা জালেমকে জুলুম করিতে দেখিয়াও তাহাকে জুলুম হইতে বাধা দিবে না, তখন অতিসত্ত্বর আল্লহ তায়া’লা তাহাদের সকলকে স্বীয় ব্যাপক আযাবে লিপ্ত করিয়া দিবেন (তিরমিযী
-
হযরত জারীর রদিয়াল্লহু আ’নহু (جريْر رضى الله عنْه) বলেন, একবার আমি রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অভিযোগ করিলাম যে, আমি ভালভাবে ঘোড়ায় সওয়ার হইতে পারি না। তিনি আমার বুকের উপর হাত মারিয়া দোয়া করিলেন, হে আল্লহ, ইহাকে ভাল ঘোড়সওয়ার বানাইয়া দিন এবং নিজে সরল পথে চলিয়া অন্যদেরও সরল পথ প্রদর্শনকারী বানাইয়া দিন। (বুখারী)
-
(http://forum.daffodilvarsity.edu.bd/index.php?action=dlattach;topic=10030.0;attach=1500)
-
হযরত সাহল ইবনে সা’দ রদিয়াল্লহু আ’নহু (سهْل بْنن سعْد رضى الله عنْه) বলেন, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, এই কল্যাণ অর্থাৎ দ্বীন ভান্ডার। অর্থাৎ দ্বীনের উপর আ’মাল করা আল্লহ তায়া’লার অফুরন্ত নিয়ামাতের ভান্ডার হইতে উপকৃত হওয়ার উপায় এই সমস্ত ভান্ডারের জন্য চাবি রহিয়াছে। সুসংবাদ সেই বান্দার জন্য যাহাকে আল্লহ তায়া’লা কল্যাণের চাবি (ও) অকল্যাণের তালা বানাইয়া দেন। অর্থাৎ–যাহাকে হিদায়াতের উসিলা বানাইয়া দেন। আর ধ্বংস সেই বান্দার জন্য যাহাকে আল্লহ তায়া’লা অকল্যাণের চাবি (ও) কল্যাণের তালা বানাইয়া দেন। অর্থাৎ–যে গোমরাহীর উসিলা হয়। (ইবনে মাজাহ)
-
হযরত জারীর রদিয়াল্লহু আ’নহু (جريْر رضى الله عنْه) বলেন, একবার আমি রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অভিযোগ করিলাম যে, আমি ভালভাবে ঘোড়ায় সওয়ার হইতে পারি না। তিনি আমার বুকের উপর হাত মারিয়া দোয়া করিলেন, হে আল্লহ, ইহাকে ভাল ঘোড়সওয়ার বানাইয়া দিন এবং নিজে সরল পথে চলিয়া অন্যদেরও সরল পথ প্রদর্শনকারী বানাইয়া দিন। (বুখারী)
-
হযরত আবু সাঈ’দ রদিয়াল্লহু আ’নহু (أبىْ سعيْد رضى الله عنْه) বর্ণনা করেন যে, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, তোমাদের মধ্যে কেহ নিজেকে হেয় মনে না করে। সাহাবাহ রদিয়াল্লহু আ’নহুম আরজ করিলেন, নিজেকে হেয় মনে করার কি অর্থ? এরশাদ করিলেন, এমন কোন বিষয় দেখে যাহার ব্যাপারে আল্লহ তায়া’লার পক্ষ হইতে তাহার উপর সংশোধনের দায়িত্ব দেওয়া হইয়াছে, কিন্তু সে উক্ত বিষয়ে কিছুই বলে না। আল্লহ তায়া’লা কিয়ামাতের দিন তাহাকে বলিলেন, কি জিনিস তোমাকে ওমুক ওমুক বিষয়ে কথা বলিতে বাধা দিয়াছিল? সে আরজ করিবে মানুষের ভয়ে বলি নাই যে, তাহারা আমাকে কষ্ট দিবে। আল্লহ তায়া’লা এরশাদ করিবেন, আমি ইহার বেশী উপযুক্ত ছিলাম যে, তুমি আমাকে ভয় করিতে। (ইবনে মাজাহ)
ফায়দাঃ আল্লহ তায়া’লার পক্ষ হইতে অসৎ কাজে নিষেধ করার যে দায়িত্ব দেওয়া হইয়াছে মানুষের ভয়ে সে দায়িত্ব পালন না করা হইল নিজেকে হেয় মনে করা।
-
হযরত আ’ব্দুল্লহ ইবনে মাসঊ’দ রদিয়াল্লহু আ’নহু (عبْد الله بنْ مسْعوْد رضى الله عنْه) হইতে বর্ণিত আছে যে, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, বনী ইসরাঈলের মধ্যে সর্ব প্রথম অধঃপতন এইভাবে আরম্ভ হইল যে, একজন যখন অপরজনের সহিত সাক্ষাত করিত এবং তাহাকে বলিত, হে অমুক, আল্লহ তায়া’লাকে ভয় কর, তুমি যে কাজ করিতেছ তাহা ছাড়িয়া দাও, কেননা উহা তোমার জন্য জায়েজ নাই। অতঃপর দ্বিতীয় দিন যখন তাহার সহিত সাক্ষাত হইত তখন তাহার না মানা সত্ত্বেও সেই ব্যক্তির সহিত নিজের সম্পর্কের দরুন তাহার সহিত খানাপিনা উঠাবসা পূর্বের মতই করিত। যখন ব্যাপকভাবে এইরূপ হইতে লাগিল এবং আ’মর বিল মা’রুফ ও নাহী আনিল মুনকার করা ছাড়িয়া দিল তখন আল্লহ তায়া’লা ফরমাবরদারদের দিল নাফরমানদের ন্যায় কঠিন করিয়া দিলেন। অতঃপর রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম নিচের আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করিলেন,
لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِن بَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَىٰ لِسَانِ دَاوُودَ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ۚ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَوا وَّكَانُوا يَعْتَدُونَ ﴿٧٨﴾كَانُوا لَا يَتَنَاهَوْنَ عَن مُّنكَرٍ فَعَلُوهُ ۚ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ﴿٧٩﴾ تَرَىٰ كَثِيرًا مِّنْهُمْ يَتَوَلَّوْنَ الَّذِينَ كَفَرُوا ۚ لَبِئْسَ مَا قَدَّمَتْ لَهُمْ أَنفُسُهُمْ أَن سَخِطَ اللَّـهُ عَلَيْهِمْ وَفِي الْعَذَابِ هُمْ خَالِدُونَ﴿٨٠﴾ وَلَوْ كَانُوا يُؤْمِنُونَ بِاللَّـهِ وَالنَّبِيِّ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مَا اتَّخَذُوهُمْ أَوْلِيَاءَ وَلَـٰكِنَّ كَثِيرًا مِّنْهُمْ فَاسِقُونَ ﴿﴾٨١
(প্রথম দুই আয়াতের তরজমা এই) বনী ইসারাঈলের উপর হযরত দাউদ ও হযরত ঈ’সা আলাইহিমাস সালামের যবানে লা’নত করা হইয়াছে। ইহা এই কারণে যে, তাহারা নাফরমানী করিত এবং সীমা অতিক্রম করিত। যে অন্যায় কাজে তাহারা লিপ্ত ছিল উহা হইতে তাহারা একে অপরকে নিষেধ করিত না। প্রকৃতই তাহাদের এই কাজ মন্দ ছিল। (সূরা মায়েদাহঃ ৭৮-৮১)
অতঃপর রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত তাকীদের সহিত এই হুকুম করিয়াছেন যে, তোমরা সৎ কাজের আদেশ কর এবং অসৎ কাজে বাধা প্রদান কর, জালেমকে জুলুম হইতে বিরত রাখিতে থাক এবং তাহাকে হক কথার দিকে টানিয়া আনিতে থাক আর তাহাকে হকের উপর ধরিয়া রাখ। (আবু দাউদ)
-
হযরত আবু উমাইয়্যাহ শা’বানী রহমাতুল্লহ আ’লাইহি বলেন, আমি হযরত আবু সা’লাবাহ খুশানী রদিয়াল্লহু আ’নহু (ابىْ ثعْلبة الْخشنيّ رضى الله عنْه) কে জিজ্ঞাসা করিলাম, আপনি আল্লহ তায়া’লার এই এরশাদ لَيْكُمْ أَنفُسَكُمْ ‘তোমরা তোমাদের নিজেদের ফিকির কর’ এই ব্যাপারে কি বলেন। তিনি বলিলেন, আল্লহর কসম, তুমি এমন ব্যক্তির কাছে এই বিষয় জিজ্ঞাসা করিয়াছ, যে এই ব্যাপারে খুব ভালভাবে অবগত আছে। আমি স্বয়ং রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে এই আয়াতের অর্থ জিজ্ঞাসা করিয়া ছিলাম। তিনি এরশাদ কইয়াছিলেন যে, (ইহার অর্থ এই নহে যে শুধু নিজের ফিকির কর) বরং একে অন্যকে সৎ কাজের আদেশ করিতে থাক এবং অসৎ কাজ হইতে বাধা দিতে থাক। অতঃপর যখন দেখিবে যে, লোকেরা ব্যাপক ভাবে কৃপণতা করিতেছে, খাহেশাতকে পূরণ করা হইতেছে দুনিয়াকে দ্বীনের উপর অগ্রাধিকার দেওয়া হইতেছে এবং প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের রায়কে পছন্দ করিতেছে (অন্যের রায়কে মানিতেছে না) তখন সাধারণ লোকদের ছাড়িয়া দিয়া নিজের সংশোধনে লাগিয়া যাইও। কেননা শেষ যামানায় এমন দিন আসিবে যখন দ্বীনের হুকুমসমূহের উপর অটল থাকিয়া আ’মাল করা জ্বলন্ত কয়লা হাতে লওয়ার ন্যায় কঠিন হইবে। সেই সময়ে আ’মালকারী তাহার একটি আ’মালের উপর এত পরিমাণ সওয়াব পাইবে, যত পরিমাণ পঞ্চাশজন উক্ত আ’মাল করিলে পায়। হযরত আবু সা’লাবাহ রদিয়াল্লহু আ’নহু বলেন, আমি আরজ করিলাম, ইয়া রসুলুল্লহ! তাহাদের মধ্য হইতে পঞ্চাশ জনের সওয়াব পাইবে (না আমাদের মধ্যে হইতে পঞ্চাশ জনের)? (কেননা সাহাবীদের আ’মালের সওয়াব অনেক বেশী) এরশাদ করিলেন, তোমাদের মধ্যে হইতে পঞ্চাশ জনের সওয়াব সেই একজন পাইবে। (আবু দাউদ)
ফায়দাঃ ইহার অর্থ এই নহে যে, শেষ যামানায় আ’মালকারী ব্যক্তি তাহার এই বিশেষ ফযীলতের কারণে সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুম দের অপেক্ষা মর্যাদায় বাড়িয়া যাইবে। কেননা সাহাবাহ রদিয়াল্লহু আ’নহুম সর্বাবস্থায় সমস্ত উম্মত হইতে উত্তম।
এই হাদীস শরীফ দ্বারা জানা গেল যে, আ’মর বিল ম’রুফ নাহী আনিল মুনকার করিতে থাকা জরুরী। অবশ্য যদি হক কথা গ্রহণ করার যোগ্যতা একেবারেই খতম হইয়া যায় তবে সেই সময়ে পৃথক থাকার হুকুম রহিয়াছে। আল্লহ তায়া’লা মেহেরবাণীতে এখনও সেই সময় উপস্থিত হয় নাই, কেননা এখনও উম্মতের মধ্যে হক কথা কবুল করার যোগ্যতা বিদ্যমান রহিয়াছে।
-
الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ ۗ وَلِلَّـهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ
এই মুসলমানগণ এইরূপ যে, যদি আমি তাহাদিগকে দুনিয়ার রাজত্ব দান করি তবে তাহারা নিজেরাও নামাযের পাবন্দী করিবে এবং যাকাত প্রদান করিবে এবং (অন্যদেরকেও) নেক কাজ করিতে বলিবে এবং অসৎ কাজ হইতে নিষেধ করিবে। আর সমস্ত কাজের পরিণাম তো আল্লহ তায়া’লারই ক্ষমতাধীন (সুরা হাজ্জঃ ৪১)
-
হযরত ইবনে আ’ব্বাস রদিয়াল্লহু আ’নহুমা (ابْن عبّاس رضى الله عنْهما) বলেন, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, সেই ব্যক্তি আমাদের অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত নহে, যে আমাদের ছোটদের প্রতি দয়া করে না, আমাদের বড়দের সম্মান করে না, সৎকাজের আদেশ করেনা এবং অসৎ কাজের নিষেধ করে না। (তিরমিযী)
-
হযরত আবু সাঈ’দ রদিয়াল্লহু আ’নহু (أبىْ سعيْد رضى الله عنْه) বর্ণনা করেন যে, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, তোমরা রাস্তার উপরে বসিও না। সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুম আরজ করিলেন, ইয়া রসুলুল্লহ! আমাদের জন্য রাস্তার উপরে না বসিয়া উপায় নাই, আমরা সেখানে বসিয়া কথাবার্তা বলিয়া থাকি। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিলেন, যদি বসিতেই হয় তবে রাস্তার হকসমূহ আদায় করিবে। সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুম আরজ করিলেন, ইয়া রসুলুল্লহ! রাস্তার হকসমূহ কি? তিনি এরশাদ করিলেন, দৃষ্টি অবনত রাখা, কষ্টদায়ক জিনিস রাস্তা হইতে সরাইয়া দেওয়া, (অথবা স্বয়ং কাহাকেও কষ্ট না দেওয়া) সালামের উত্তর দেওয়া, সৎ কাজে আদেশ করা অসৎ কাজের নিষেধ করা। (বুখারী)
ফায়দাঃ সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুমদের উদ্দেশ্য ছিল রাস্তায় বসা হইতে বাঁচিয়া থাকা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়, কেননা আমাদের এমন কোন স্থান নাই যেখানে আমরা মজলিস করিতে পারি। এইজন্য যখন আমরা কয়েকজন একত্রিত হই তখন সেখানে রাস্তার উপরেই বসিয়া যাই এবং নিজেদের দ্বীনী ও দুনিয়াবী বিষয়ে পরস্পর পরমর্শ করি। একে অন্যের অবস্থা জিজ্ঞাসা করি। কেহ অসুস্থ হইলে তাহার জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করি পরস্পর কোন মনোকষ্ট থাকিলে উহা দূর করিয়া আপো্ষ করি।
-
হযরত আবু উমাইয়্যাহ শা’বানী রহমাতুল্লহ আ’লাইহি বলেন, আমি হযরত আবু সা’লাবাহ খুশানী রদিয়াল্লহু আ’নহু (ابىْ ثعْلبة الْخشنيّ رضى الله عنْه) কে জিজ্ঞাসা করিলাম, আপনি আল্লহ তায়া’লার এই এরশাদ لَيْكُمْ أَنفُسَكُمْ ‘তোমরা তোমাদের নিজেদের ফিকির কর’ এই ব্যাপারে কি বলেন। তিনি বলিলেন, আল্লহর কসম, তুমি এমন ব্যক্তির কাছে এই বিষয় জিজ্ঞাসা করিয়াছ, যে এই ব্যাপারে খুব ভালভাবে অবগত আছে। আমি স্বয়ং রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে এই আয়াতের অর্থ জিজ্ঞাসা করিয়া ছিলাম। তিনি এরশাদ কইয়াছিলেন যে, (ইহার অর্থ এই নহে যে শুধু নিজের ফিকির কর) বরং একে অন্যকে সৎ কাজের আদেশ করিতে থাক এবং অসৎ কাজ হইতে বাধা দিতে থাক। অতঃপর যখন দেখিবে যে, লোকেরা ব্যাপক ভাবে কৃপণতা করিতেছে, খাহেশাতকে পূরণ করা হইতেছে দুনিয়াকে দ্বীনের উপর অগ্রাধিকার দেওয়া হইতেছে এবং প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের রায়কে পছন্দ করিতেছে (অন্যের রায়কে মানিতেছে না) তখন সাধারণ লোকদের ছাড়িয়া দিয়া নিজের সংশোধনে লাগিয়া যাইও। কেননা শেষ যামানায় এমন দিন আসিবে যখন দ্বীনের হুকুমসমূহের উপর অটল থাকিয়া আ’মাল করা জ্বলন্ত কয়লা হাতে লওয়ার ন্যায় কঠিন হইবে। সেই সময়ে আ’মালকারী তাহার একটি আ’মালের উপর এত পরিমাণ সওয়াব পাইবে, যত পরিমাণ পঞ্চাশজন উক্ত আ’মাল করিলে পায়। হযরত আবু সা’লাবাহ রদিয়াল্লহু আ’নহু বলেন, আমি আরজ করিলাম, ইয়া রসুলুল্লহ! তাহাদের মধ্য হইতে পঞ্চাশ জনের সওয়াব পাইবে (না আমাদের মধ্যে হইতে পঞ্চাশ জনের)? (কেননা সাহাবীদের আ’মালের সওয়াব অনেক বেশী) এরশাদ করিলেন, তোমাদের মধ্যে হইতে পঞ্চাশ জনের সওয়াব সেই একজন পাইবে। (আবু দাউদ)
ফায়দাঃ ইহার অর্থ এই নহে যে, শেষ যামানায় আ’মালকারী ব্যক্তি তাহার এই বিশেষ ফযীলতের কারণে সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুম দের অপেক্ষা মর্যাদায় বাড়িয়া যাইবে। কেননা সাহাবাহ রদিয়াল্লহু আ’নহুম সর্বাবস্থায় সমস্ত উম্মত হইতে উত্তম।
এই হাদীস শরীফ দ্বারা জানা গেল যে, আ’মর বিল ম’রুফ নাহী আনিল মুনকার করিতে থাকা জরুরী। অবশ্য যদি হক কথা গ্রহণ করার যোগ্যতা একেবারেই খতম হইয়া যায় তবে সেই সময়ে পৃথক থাকার হুকুম রহিয়াছে। আল্লহ তায়া’লা মেহেরবাণীতে এখনও সেই সময় উপস্থিত হয় নাই, কেননা এখনও উম্মতের মধ্যে হক কথা কবুল করার যোগ্যতা বিদ্যমান রহিয়াছে।
-
হযরত যায়নাব বিনতে জাহ’শ রদিয়াল্লহু আ’নহা (زيْنب بنْت جحْش رضى الله عنْها) বলেন, আমি রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের জিজ্ঞাসা করিলাম, ইয়া রসুলুল্লহ! আমাদের মধ্যে নেককার লোক থাকা অবস্থায়ও কি আমরা ধ্বংস হইয়া যাইব? তিনি এরশাদ করিলেন, জ্বি হ্যাঁ যখন অসৎ কাজ ব্যাপক হইয়া যাইবে। (বুখারী)
-
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّـهِ ۗ وَلَوْ آمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُم ۚ مِّنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ
তোমরা উত্তম উম্মত, যাহাদিগকে মানুষের কল্যাণের জন্য পাঠানো হইয়াছে, তোমরা নেককাজের আদেশ কর এবং মন্দ কাজ হইতে নিবৃত রাখ এবং আল্লহ তায়া’লার প্রতি ঈমান রাখ। (সূরা আল-ইমরনঃ ১১০)
-
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّـهَ وَرَسُولَهُ ۚ أُولَـٰئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّـهُ ۗ إِنَّ اللَّـهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
আর মুসলমান পুরুষ ও মুসলমান নারীগণ হইতেছে পরস্পর একে অন্যের দ্বীনী সাহায্যকারী, তাহারা নেক কাজের আদেশ করে এবং তাহারা অসৎ কাজ হইতে বারণ করে এবং যাকাত আদায় করে এবং আল্লহ তায়া’লার এবং তাঁহার রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের আদেশ মানিয়া চলে, এই সমস্ত লোকেরাই যাহাদের উপর আল্লহ তায়া’লা অবশ্যই রহমত বর্ষণ করিবেন, নিঃসন্দেহে আল্লহ তায়া’লা অতিশয় ক্ষমতাবান ও হিকমাতওয়ালা।
(সূরা তওবাঃ ৭১)
-
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّـهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنتُمْ تُوعَدُونَ ﴿٣٠﴾ نَحْنُ أَوْلِيَاؤُكُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ ۖ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِي أَنفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ ﴿٣١﴾ نُزُلًا مِّنْ غَفُورٍ رَّحِيمٍ ﴿٣٢﴾ وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّـهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ ﴿﴾٣٣
সেই ব্যক্তি অপেক্ষা কাহার কথা উত্তম হইতে পারে যে (লোকদিগকে) আল্লহ তায়া’লার দিকে আহবান করে এবং নিজেও নেক আ’মাল করে এবং (আনুগত্য প্রকাশার্থে) বলে যে আমি অনুগতদের মধ্যে আছি। আর সৎ কাজ ও অসৎ কাজ সমান হয় না, (বরং প্রত্যেকটির পরিণতি ভিন্ন) অতএব আপনি (এবং আপনার অনুসারীগণ) সদ্ব্যাবহার দ্বারা (অসদ্ব্যাবহারের) প্রত্যুত্তর দিন। (যেমন রাগের উত্তরে সহানশীলতা, কঠোরতা জবাবে নম্রতা) অনন্তর এই সদ্ব্যাবহারের পরিণতি এই হবে যে, আপনার সহিত যাহার শত্রুতা ছিল সে অকস্মাৎ এমন হইয়া যাইবে যেমন একজন অন্তরঙ্গ বন্ধু হইয়া থকে। আর ইহা সহানশীল লোকদেরই নসীব হয় এবং ইহা মহাভাগ্যবান লোকদেরই ভাগ্যে জোটে। (এই আয়াত দ্বারা বুঝা গেল যে, যে ব্যক্তি আল্লহ তায়া’লার দিকে দাওয়াত দিবে তাহার জন্য সবর ধৈর্য্য ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া জরুরী) (সূরা হা-মীম সিজদাহঃ ৩০-৩৩)
-
হযরত আবু সাঈ’দ খুদরী রদিয়াল্লহু আ’নহু (أبى سعيْدٍ الْخدْرىّ رضى الله عنْه) হইতে বর্ণিত আছে যে, আমি রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে এই এরশাদ করিতে শুনিয়াছি যে, তোমাদের মধ্যে যে কেহ কোন খারাপ কাজ হইতে দেখে তাহার উচিত উহাকে নিজের হাত দ্বারা পরিবর্তন করিয়া দেয়। যদি (হাত দ্বারা পরিবর্তন করার) শক্তি না থাকে তবে যবান দ্বারা উহাকে পরিবর্তন করিয়া দিবে। আর যদি এই শক্তিও না থাকে তবে অন্তর দ্বারা উহাকে খারাপ জানিবে, অর্থাৎ সেই খারাপ কাজের কারণে অন্তরে দুঃখ হয়। আর ইহা ঈমানের সর্বাপেক্ষা দুর্বল অবস্থা। (মুসলিম)
-
হযরত আবু হুরইরহ রদিয়াল্লহু আ’নহু (أبىْ هريْرة رضى الله عنْه) বলেন, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আপন চাচা (আবু তালেব) কে (তাহার মৃত্যুর সময়) এরশাদ করিয়াছেন, লা-ইলাহা ইল্লাল্লহ বলুন। কিয়ামাতের দিন আমি আপনার জন্য সাক্ষী হইব। আবু তালেব জবাবে বলিলেন, যদি কুরাইশের এই খোঁটা দেওয়ার আশংকা না হইত যে, আবু তালেব শুধু মৃত্যু ভয়ে কালেমা পাঠ করিয়াছে, তবে আমি কালেমা পড়িয়া তোমার চক্ষু শীতল করিতাম। এই পরিপেক্ষিতে আল্লহ তায়া’লা এই আয়াত নাযিল করিলেন–
إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَـٰكِنَّ اللَّـهَ يَهْدِي مَن يَشَاءُ
অর্থঃ আপনি যাহাকে চাহিবেন হিদায়াত দিতে পারিবেন না, বরং আল্লহ তায়া’লা যাহাকে চান হিদায়াত দান করিবেন। (সূরা কাসাসঃ ৫৬) (মুসলিম)
-
হযরত আনাস রদিয়াল্লহু আ’নহু (أنسْ رضى الله عنْه) বলেন, এক ইয়াহুদী ছেলে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমত করিত। সে অসুস্থ হইলে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাহাকে দেখিতে গেলেন। তিনি তাহার মাথার নিকট বসিলেন এবং বলিলেন, মুসলমান হইয়া যাও। সে তাহার পিতার দিকে দেখিল। পিতা সেখানেই উপস্থিত ছিল। পিতা বলিল, আবুল কাসেম (রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কথা মানিয়া লও। অতএব সে ছেলে মুসলমান হইয়া গেল। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বাহির হইয়া আসিলেন তখন বলিতেছিলেন, সমস্ত প্রসংশা আল্লহ তায়া’লার জন্য, যিনি এই ছেলেকে জাহান্নামের আগুন হইতে বাঁচাইয়া লইলেন। (বুখারী)
-
ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ
আল্লহ তায়া’লা আপন রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কে সম্বোধন করিয়া এরশাদ করিয়াছেন,–আপনি আপনার রবের পথের দিকে দাওয়াত দিন জ্ঞানগর্ভ কথা ও উত্তম উপদেশসমূহের দ্বারা। (সূরা নাহ্লঃ ১২৫)
-
وَاللَّـهُ يَدْعُو إِلَىٰ دَارِ السَّلَامِ وَيَهْدِي مَن يَشَاءُ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
এবং আল্লহ তায়া’লা শান্তির ঘর–অর্থাৎ জান্নাতের দিকে দাওয়াত দেন, এবং তিনি যাহাকে ইচ্ছা সরল পথ দেখান। (সূরা ইউনুসঃ ২৫)
-
هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ
আল্লহ তায়া’লা তিনি, যিনি উম্মী লোকদের মধ্যে তাহাদেরই মধ্য হইতে একজন রসূল প্রেরণ করিয়াছেন,–অর্থাৎ সেই রসূল উম্মী ও নিরক্ষর–যিনি তাহাদিগকে আল্লহ তায়া’লার আয়াতসমূহ পড়িয়া শুনান,–অর্থাৎ কুরআন কারীমের দ্বারা তাহাদিগকে দাওয়াত দেন, নসীহাত করেন এবং তাহাদিগকে ঈমান আনয়নের জন্য উৎসাহিত করেন, (যদ্দ্বারা তাহারা হিদায়াত লাভ করে) এবং তাহাদের চরিত্র সংশোধন ও সুন্দর করেন। তাহাদিগকে কুরআন পাক শিক্ষা দেন এবং সুন্নাত ও সঠিক জ্ঞান বুঝ শিক্ষা দেন, আর নিঃসন্দেহে ইহারা এই রসূল প্রেরণের পূর্বে প্রকাশ্য ভ্রান্তির মধ্যে ছিল (সূরা জুমুআহঃ ২)
-
وَلَوْ شِئْنَا لَبَعَثْنَا فِي كُلِّ قَرْيَةٍ نَّذِيرًا ﴿٥١﴾ فَلَا تُطِعِ الْكَافِرِينَ وَجَاهِدْهُم بِهِ جِهَادًا كَبِيرًا ﴿﴾٥٢
যদি আমরা (আরবীতে সম্মান বুঝাতে এক বচন কর্তার ক্ষেত্রে বহু বচন ব্যবহার করা হয়) চাহিতাম তবে (এই যুগেই আপনি ব্যতীত) প্রত্যেক বস্তিতে একজন করিয়া পয়গম্বর প্রেরণ করিতাম (এবং একা আপনার উপর সমস্ত দায়িত্ব অর্পন করিতাম না, কিন্তু যেহেতু আপনার সওয়াব বৃদ্ধি করা উদ্দেশ্য সেহেতু এরূপ করি নাই। এইভাবে একা আপনার উপর সমস্ত কাজের ভার দেওয়া আল্লহ তায়া’লার নিয়ামাত। অতেন এই নিয়ামাতের শুকরিয়া হিসাবে) আপনি কাফেরদের আনন্দদায়ক কাজ করিবেন না,–অর্থাৎ কাফেররা তো আপনি তাবলীগ না করিলে বা কম করিলে আনন্দিত হইবে; আর কুরআন (এ হকের পক্ষে যেসকল দলীল প্রমাণ রহিয়াছে উহা) দ্বারা কাফেরদের জোরেশোরে মুকাবিলা করুন, সকলকে বলুন এবং বারবার বলুন, আর হিম্মতকে মজবুত রাখুন। (সূরা ফুরক্বনঃ ৫১-৫২)
-
فَلَا تَذْهَبْ نَفْسُكَ عَلَيْهِمْ حَسَرَاتٍ
আল্লহ তায়া’লা রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি এরশাদ করিয়াছেন–থাদের ঈমান না আনার দরুন, অনুতাপ করিতে করিতে প্রাণ না বাহির হইয়া যায়। (সূরা ফাতিরঃ ৮)
-
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ
নিঃসন্দেহে তোমাদের নিকট এমন একজন রসূল আগমন করিয়াছে, যিনি তোমাদের মধ্য হইতেই একজন, যাঁহার নিকট তোমাদের কোন কষ্টকর বিষয় অতি দুর্বহ মনে হয়, তিনি তোমাদের অতিশয় হিতাকাঙ্খী (তাঁহার এই অবস্থা তো সকলের জন্য) বিশেষ করিয়া মুমিনদের প্রতি বড়ই স্নেহশীল, করুণাপরায়ণ। (সূরা তওবাহঃ ১২৮)
-
لَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ أَلَّا يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ
রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কে সম্বোধন করিয়া আল্লহ তায়া’লা এরশাদ করিতেছেন–মনে হয় আপনি ইহাদের ঈমান না আনার কারণে চিন্তায় চিন্তায় নিজের জীবন দিয়া দিবেন, (সূরা শু’আরাঃ ৩)
-
يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ ﴿١﴾قُمْ فَأَنذِرْ ﴿٢﴾وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ ﴿﴾٣
আল্লহ তায়া’লা আপন রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলিতেছেন–হে বস্ত্রাবৃত! উঠুন, অতঃপর ভীতি প্রদর্শন করুন এবং আপন রবের বড়ত্ব বর্ণনা করুন (সূরা মুদ্দাস্সিরঃ ১-৩)
-
وَذَكِّرْ فَإِنَّ الذِّكْرَىٰ تَنفَعُ الْمُؤْمِنِينَ
আর বুঝাইতে থাকুন, কেননা বুঝানো ঈমানদারগণকে সুফল প্রদান করে। (সূরা যারিয়াতঃ ৫৫)
-
إِنَّا أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوْمِهِ أَنْ أَنذِرْ قَوْمَكَ مِن قَبْلِ أَن يَأْتِيَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ ﴿١﴾ قَالَ يَا قَوْمِ إِنِّي لَكُمْ نَذِيرٌ مُّبِينٌ ﴿٢﴾ أَنِ اعْبُدُوا اللَّـهَ وَاتَّقُوهُ وَأَطِيعُونِ ﴿٣﴾ يَغْفِرْ لَكُم مِّن ذُنُوبِكُمْ وَيُؤَخِّرْكُمْ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ إِنَّ أَجَلَ اللَّـهِ إِذَا جَاءَ لَا يُؤَخَّرُ ۖ لَوْ كُنتُمْ تَعْلَمُونَ ﴿٤﴾ قَالَ رَبِّ إِنِّي دَعَوْتُ قَوْمِي لَيْلًا وَنَهَارًا ﴿٥﴾ فَلَمْ يَزِدْهُمْ دُعَائِي إِلَّا فِرَارًا ﴿٦﴾ وَإِنِّي كُلَّمَا دَعَوْتُهُمْ لِتَغْفِرَ لَهُمْ جَعَلُوا أَصَابِعَهُمْ فِي آذَانِهِمْ وَاسْتَغْشَوْا ثِيَابَهُمْ وَأَصَرُّوا وَاسْتَكْبَرُوا اسْتِكْبَارًا ﴿٧﴾ ثُمَّ إِنِّي أَعْلَنتُ لَهُمْ وَأَسْرَرْتُ لَهُمْ إِسْرَارًا ﴿٩﴾ فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا ﴿١٠﴾يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُم مِّدْرَارًا ﴿١١﴾ وَيُمْدِدْكُم بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَل لَّكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَل لَّكُمْ أَنْهَارًا ﴿١٢﴾ مَّا لَكُمْ لَا تَرْجُونَ لِلَّـهِ وَقَارًا ﴿١٣﴾ وَقَدْ خَلَقَكُمْ أَطْوَارًا ﴿١٤﴾ أَلَمْ تَرَوْا كَيْفَ خَلَقَ اللَّـهُ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقًا ﴿١٥﴾ وَجَعَلَ الْقَمَرَ فِيهِنَّ نُورًا وَجَعَلَ الشَّمْسَ سِرَاجًا ﴿١٦﴾ وَاللَّـهُ أَنبَتَكُم مِّنَ الْأَرْضِ نَبَاتًا ﴿١٧﴾ ثُمَّ يُعِيدُكُمْ فِيهَا وَيُخْرِجُكُمْ إِخْرَاجًا ﴿١٨﴾ وَاللَّـهُ جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ بِسَاطًا ﴿١٩﴾ لِّتَسْلُكُوا مِنْهَا سُبُلًا فِجَاجًا ﴿﴾٢٠
নিশ্চয়ই আমি নূহ (আ’লাইহিস সালাম) কে তাঁহার কওমের প্রতি এই হুকুম দিয়া পাঠাইয়াছিলাম যে, স্বীয় কওমকে ভয় প্রদর্শন করুন, ইহার পূর্বে যে, তাহাদের প্রতি যন্ত্রণাময় আযাব আসিয়া পড়ে। অতএব তিনি আপন কওমকে বলিলেন, হে আমার কওম, আমি তোমাদেরকে স্পষ্টরূপে নসীহাত করিতেছি যে, তোমরা আল্লহ তায়া’লার ইবাদাত কর এবং তাহাকে ভয় করিতে থাক এবং আমার কথা মান, (এইরূপ করিলে) আল্লহ তায়া’লা তোমাদের গুনাহসমূহ মাফ করিয়া দিবেন এবং মৃত্যুর নির্ধারিত সময় পর্যন্ত আযাবকে পিছাইয়া দিবেন–অর্থাৎ দুনিয়াতেও আযাব হইতে রক্ষা করিবেন আর আখেরাতে আযাব না হওয়া তো সুস্পষ্ট। আল্লহ তায়া’লার নির্ধারিত সময় যখন আসিয়া পড়ে, তখন উহাকে আর পিছনে হঠানো যায় না–অর্থাৎ ঈমান ও তাকওয়ার বরকতে আযাব হইতে তো রক্ষা হইয়া যাইবে, কিন্তু মৃত্যু অবশ্যই আসিবে, যদি তোমরা ইহা বুঝিতে। (যখন দীর্ঘদিন পর্যন্ত কওমের উপর এই সকল কথার কোন আছর হইল না, তখন) নূহ (আ’লাইহিস সালাম) দোয়া করিলেন, আমার রব, আমি আমার কওমকে রাত্রি দিন দাওয়াত দিয়াছি। কিন্তু আমার দাওয়াতের দরুন তাহারা দ্বীন হইতে আরও দূরে সরিয়া যাইতেছে। আর আমি যখনই তাহাদের ঈমানের দাওয়াত দিতাম, যেন তাহাদের ঈমানের কারণে আপনি তাহাদিগকে ক্ষমা করিয়া দেন তখনই তাহারা নিজ নিজ কর্ণসমূহে স্বস্ব আঙ্গুল ঢুকাইয়া লইত এবং তাহাদের বস্ত্রসমূহ নিজেদের উপর জড়াইয়া লইত, (যেন তাহারা আমাকে দেখিতে না পায় এবং আমি তাহাদিগকে দেখিতে না পাই।) আর তাহারা (অন্যায়ের উপর) হটকারিতা করিল এবং সীমাহীন অহংকার করিল। তারপর (ও আমি তাহাদিগকে বিভিন্ন উপায়ে নসীহাত করিতে রহিয়াছি, সুতরাং) আমি তাহাদিগকে উচ্চস্বরে দাওয়াত দিয়াছি। অতঃপর আনি তাহাদিগকে প্রকাশ্যেও বুঝাইয়াছি এবং গোপনেও বুঝাইয়াছি–অর্থাৎ তাহাদের হিদায়াতের যে কোন উপায় হইতে পারে কোনটাই ছাড়ি নাই। প্রকাশ্য জনসমক্ষে আমি তাহাদিগকে দাওয়াত দিয়াছি আবার বিশেষভাবে তাহাদের ঘরে ঘরে যাইয়াও প্রকাশ্যে বিস্তারিত ভাবে বলিয়াছি। এবং গোপনে চুপি চুপি তাহাদিগকে লাভ ক্ষতি সম্পর্কে অবহিত করিয়াছি। আর (এই বুঝাইতে যাইয়া) আমি তাহাদিগকে বলিয়াছি যে, তোমরা আপন রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিঃসন্দেহে তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। এই ক্ষমা প্রার্থনার ফলে তিনি তোমাদের উপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করিবেন। এবং তোমাদের মাল আওলাদে বরকত দান করিবেন এবং তোমাদের জন্য বাগানসমূহ লাগাইয়া দিবেন এবং তোমাদের জন্য নহরসমূহ প্রবাহিত করিয়া দিবনে। তোমাদের কি হইল যে, আল্লহ তায়া’লার মহত্ত্বের খেয়াল রাখিতেছ না? অথচ তিনি তোমাদিগকে বিভিন্ন ধাপে সৃষ্টি করিয়াছেন। তোমাদের কি জানা নাই যে, আল্লহ তায়া’লা সাত আসমানকে কিরূপে স্তরে স্তরে সৃষ্টি করিয়াছেন? আর সেই সমানে চন্দ্রকে জ্যোতিময় বানাইয়াছেন। আর আল্লহ তায়া’লা তোমাদিগকে (মৃত্যুর পর) যমীনেই ফিরাইয়া নিবেন এবং (কিয়ামাতে) এই যমীন হইতেই তোমাদিগকে বাহিরে আনয়ন করিবেন। আর আল্লহ তায়া’লাই যমীনকে তোমাদের জন্য বিছানা বানাইয়াছেন, যেন তোমরা উহার প্রশস্ত পথসমূহে চলাফেরা কর–অর্থাৎ যমীনে চলাফেরা করিতে পথের কোন বাধা নাই। (সূরা নূহ: ১-২০)