Daffodil International University
Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Zakat => Topic started by: ishaquemijee on August 06, 2012, 08:40:43 AM
-
জাকাত ইসলামী শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান, প্রেম ও পুরস্কারের বাহন। কেননা জাকাতের মাধ্যমে একদিকে মানবতার প্রতি প্রেম-ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও হৃদ্যতার প্রকাশ ঘটে, অন্যদিকে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকেও মিলে বিশাল প্রতিদান ও পুরস্কার। এ জাকাতের বিধান প্রবর্তনের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে, ধনী ও দরিদ্রের মধ্যকার বৈষম্য দূরীকরণ এবং সমাজে শান্তি ও সমতা প্রতিষ্ঠিত করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং আমি যা তোমাদের জন্য ভূমি থেকে উত্পন্ন করি তা ব্যয় কর (সূরা-বাকারা : ২৬৭)। জাকাত সম্পদে প্রবৃদ্ধি আনে। অনেকের ধারণা, সম্পদ থেকে জাকাত হিসেবে ব্যয় করলে সম্পদ কমে যাবে। অথচ এ ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল ও কোরআনবিরোধী। আল্লাহর পথে নিষ্ঠার সঙ্গে জাকাত আদায়কারীদের আশ্বাস দিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য যে জাকাত দান করে থাকো তা অবশ্যই বেড়ে ওঠে (সূরা-রূম : ৩৯) এবং এ জাকাতের মাধ্যমে সম্পদ এবং সম্পদের মালিক আত্মিকভাবে পরিশুদ্ধি লাভ করে। এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন, তাদের সম্পদ থেকে জাকাত গ্রহণ করুন, যার দ্বারা আপনি তাদের পবিত্র ও পরিশোধিত করবেন এবং আপনি তাদের জন্য দোয়া করবেন’ (সূরা-তওবা : ১০৩)।
জাকাত সবসময় আদায়যোগ্য। রমজানে জাকাত প্রদানে সওয়াব অনেক বেশি। কেননা রমজানে অন্য সব আমল ও ইবাদতে সত্তর গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। জাকাতও সে সওয়াব থেকে খালি নয়। রমজানে জাকাত প্রদানে সামর্থ্য না হলে অন্য যে কোনো মাসে তা আদায় করতে হবে। কেউ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও এ জাকাত আদায় না করলে মারাত্মক গোনাহগার হবে। পক্ষান্তরে জাকাতের বিধানকে অস্বীকার করলে মুমিনের তালিকা থেকেই সে ছিটকে পড়বে এবং তার পরিণাম হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। সে ব্যক্তি পুরস্কারের স্থলে তিরস্কৃত হবে। এজন্যই হজরত আবু বকর সিদ্দিক ও ওমর (রা.) স্বীয় যুগে জাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। হজরত মুসার (আ.) যুগে জাকাত অস্বীকার করার কারণে বিশাল ধন-সম্পদের মালিক কারূণ ধ্বংস হয়েছিল। সে তার ধন-সম্পদসহ জমিনে পুঁতে গিয়েছিল। এজন্য নবী করিম (সা.) ও তার সাহাবায়ে কেরাম অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে জাকাত আদায়ের কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন।
জাকাত অনাদায়ের শাস্তির পরিণতি বর্ণনা করে সূরা তওবায় আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যারা স্বর্ণ-রুপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদের কঠোর আজাব দেয়া হবে। জাহান্নামের আগুন উত্তপ্ত করে তাদের ললাটে, পার্শ্বে ও পিঠে দাগ দেয়া হবে।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছ থেকে ধন-সম্পদ পেয়েছে, কিন্তু সে তা থেকে জাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন সে ধনসম্পদ এমন বিষধর সাপে পরিণত হবে, যার মাথার ওপর হবে দুটো কালো দাগ। এ সাপ সে ব্যক্তির গলায় ঝুলে তার দু’গাল কামড়াতে থাকবে আর বলতে থাকবে, আমি তোমার মাল, আমি তোমার গচ্ছিত সম্পদ (বুখারি)।
ইসলামী শরিয়তে জাকাতের গুরুত্ব এত বেশি এজন্য যে, জাকাতের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর হয়। কেননা দারিদ্র্য মানবজীবনের জন্য একটি অভিশাপ। দারিদ্র্যের দুঃসহ জ্বালায় মানুষের স্বভাবে সুন্দর জীবনধারা ব্যাহত হয়। দারিদ্র্যের কারণে মানুষের স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষা বিনষ্ট হয়। জীবনের সুখ-শান্তি ও আনন্দকে নষ্ট করে। এ জন্যই মহানবী (সা.) দরিদ্রতা থেকে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কুফরি ও দরিদ্রতা থেকে পরিত্রাণ চাচ্ছি’ (আবু দাউদ)। জাকাতের মাল সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে বণ্টন করা জরুরি। যে কোনো মুসলমান নর-নারীর মৌলিক ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সম্পদ ব্যতিরেকে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার পর চাঁদের হিসেবে পরিপূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হলে তার ওপর পূর্ববর্তী বছরের জাকাত প্রদান করা ফরজ। এ জন্য পবিত্র কোরআনে বর্ণিত নির্ধারিত খাতে বিশুদ্ধ নিয়ত ও নিষ্ঠার সঙ্গে জাকাত দেয়াই বিধিসম্মত। আসুন, জাকাতের মাধ্যমে ইসলামী সমাজের রূপরেখা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হই। সমাজে বৈষম্য দূরীকরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করি। প্রতিষ্ঠা করি প্রেম-ভালোবাসায় সিক্ত একটি দেশ ও জাতি। পুরস্কৃত হই মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।