Daffodil International University

Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Ramadan and Fasting => Topic started by: ishaquemijee on August 07, 2012, 02:48:07 PM

Title: সিয়াম অর্থ আল্লাহর ডাকে সাড়া দেওয়া
Post by: ishaquemijee on August 07, 2012, 02:48:07 PM
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : 'যখন আপনাকে (হে প্রিয় নবী সা.) আমার সম্পর্কে আমার বান্দারা জিজ্ঞেস করে, (আপনি বলে দিন) আমি তাদের নিকটেই রয়েছি। যখনই আহ্বানকারী আমাকে আহ্বান করে, আমি তাদের ডাকে সাড়া দিই। সুতরাং তারাও যেন আমার ডাকে সাড়া দেয়, আমার প্রতি ইমান আনে, যাতে তারা সুপথ প্রাপ্ত হয়' (সুরা বাকারা : ১৮৬)।
আল্লাহ তায়ালা উপরোক্ত আয়াতে যা বলেছেন তার ভাবার্থ হলো, আমি আমার বান্দার সঙ্গেই থাকি এবং তাদের আমলগুলো প্রত্যক্ষ করি। যখন তারা আমাকে ডাকে, তখন আমি তাদের ডাক শুনতে পাই। সুতরাং তারাও যেন আমার ডাকে সাড়া দেয়। (সিয়ামের ডাক হচ্ছে আল্লাহর ডাক) এবং ইমানের সঙ্গে কর্ম করে সৎপথ প্রাপ্ত হয়।
সাধারণ মানুষের একটি ধারণা তখনো ছিল এখনো আছে যে আল্লাহ বুঝি সপ্ত আকাশে অবস্থান করেন। তাই হয়তো তারা আল্লাহকে চিল্লাচিল্লি করে ডাকে, যাতে আল্লাহ শুনতে পান। এটি একটি অলীক ধারণা। উপরোক্ত আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর সপ্ত আকাশে বা কোনো নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করার মতবাদটি খণ্ডন হয়ে যায়। শেখে আকবর হজরত মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবির 'ওয়াহাদাতুল অজুদ' বা আল্লাহ বিশ্বব্যাপী ব্যাপ্ত আছেন মতবাদটি পবিত্র কোরআনের এ রকম আয়াতগুলো থেকেই উদ্ভূত।
তাঁর 'ফতুহাতে মক্কি', 'ফুসুসুল হেকম' প্রভৃতি গ্রন্থে এ সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা আছে। তাঁর মতে, প্রত্যেক মানবের পরিপূর্ণতা রয়েছে। মানুষ সাধনা দ্বারা, আত্মচৈতন্যের দ্বারা স্বীয় পূর্ণ স্বরূপকে বিকশিত করতে সক্ষম। যিনি সাধনায় যে পরিমাণ সিদ্ধকাম, তিনি সে পরিমাণ সিদ্ধ পুরুষ বা পূর্ণ মানব। 'ইনসানে কামেল' হওয়ার মাধ্যমে মানুষ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয়। ইবনুল আরাবি, মওলানা রুমি ও অন্যান্য সুফি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কেই সর্বশ্রেষ্ঠ পূর্ণ মানব বলে স্বীকার করেন। তাঁদের মতে, পূর্ণ মানব বা ইনসানে কামেল সাধারণ মানুষ ও আল্লাহর মধ্যে সেতুবন্ধ। তিনিই মানবজাতির আধ্যাত্মিক উপদেষ্টা বা পথপ্রদর্শক। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ মহান ইরশাদ করেন, আল্লাহ যাকে সৎপথ দেখান সে সৎপথ প্রাপ্ত হয় আর যাকে পথভ্রষ্ট করেন সে পায় না কোনো অলি-মুর্শিদের সাহচর্য।
'আমি তাদের নিকটেই রয়েছি'- এ কথার অর্থ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সব সময় বান্দার সঙ্গে সুপ্ত অবস্থায় অবস্থান করেন। ডাকার মতো ডাকতে জানলে তিনি সে ডাকে সাড়া দিয়ে থাকেন। আল্লাহকে সর্বাবস্থায় সব জায়গায় হাজির-নাজির জেনে আমাদের প্রতিটি চিন্তা ও কর্ম তিনি প্রত্যক্ষ করছেন বলে বিশ্বাস রাখাই প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য।
এতে সদাসর্বদা নিজেকে আল্লাহর পাহারায় রাখা যায়। এ রকম একটি মানসিক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারলেই নিজের ভেতর সুপ্ত 'নূরে মুহাম্মদি' রব রূপে জেগে ওঠে এবং বান্দার সঙ্গে খোদার প্রত্যক্ষ সালাত প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে বান্দার প্রতিটি কর্ম আল্লাহর ইচ্ছায় হয় বিধায় বান্দার কর্ম আল্লাহর কর্মে পরিণত হয় (হাদিসে কুদসি)।
'আমার ডাকে সাড়া দাও'- এ কথার অর্থ আল্লাহ সব সময় তাঁর বান্দাকে তাঁর দিকে ডাকেন। ষড়্ঋপুর বেড়াজালে আবদ্ধ মানুষ আল্লাহর সে ডাক শুনতে পায় না। তাই এ মহান ডাক শ্রবণ করা, উপলব্ধি করার জন্য সিয়াম সাধনা নফসের ওপর, আমিত্বের ওপর আঘাত করে এবং একেকটি পর্দা ছিঁড়ে ফেলতে থাকে। যে যতটুকু পর্দা উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছে, সিয়াম সাধনায় সে ততুটুকু সফলতা অর্জন করেছে।