(http://a3.sphotos.ak.fbcdn.net/hphotos-ak-snc7/391241_403674576356669_580539845_n.jpg)
তারেক মাসুদ তার বাল্যকালের অধিকাংশ সময়ই কাটিয়েছিলেন মাদ্রাসায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার মাদ্রাসা শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। যুদ্ধের পর তিনি সাধারণ শিক্ষার জগতে প্রবেশ করেন এবং একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকেছেন এবং দেশে-বিদেশে চলচ্চিত্র বিষয়ক অসং
খ্য কর্মশালা এবং কোর্সে অংশ নিয়েছিলেন। তারেক মাসুদ ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন `মাটির ময়না` (২০০২) এবং মুক্তির গান (১৯৯৫) চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে। বিশেষ করে, মাটির ময়নার জন্য তিনি অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার পান। এগুলোর মধ্যে ২০০২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিকস অ্যাওয়ার্ড ও পরিচালনার জন্য তিনি পুরস্কার পান।
তিনি ইউনিসন, সে, ইন দ্য নেইম অফ সেফ্টি, ভয়েসেস অফ চিলড্রেন, আ কাইন্ড অফ চাইল্ডহুড, নারীর কথাসহ বেশ কয়েকটি ডকুমেন্টারি নির্মাণ করে মুভি বোদ্ধাদের শ্রদ্ধার আসনে স্থান করে নিয়েছেন। এছাড়াও তার নির্মাণ করা প্রামাণ্যচিত্র এবং চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে সোনার বেড়ি (১৯৮৫) আদম সুরত (১৯৮৯), মুক্তির গান (১৯৯৫), মুক্তির কথা (১৯৯৬), মাটির ময়না (২০০২) অন্তর্যাত্রা (২০০৬) রানওয়ে (২০১০) ও নরসুন্দর। মাটির ময়না প্রথম বাংলাদেশি সিনেমা হিসেবে অস্কার প্রতিযোগিতায় বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এডিবনার্গ, মন্ট্রিল, কায়রো উৎসবে মাটির ময়না প্রদর্শিত হয়। পাশাপাশি ২০০২ সালে মারাকেশ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার লাভ করে। ২০০৩ সালে করাচি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও সেরা ছবির পুরস্কার লাভ করে। ২০০৪ সালে ছবিটি ব্রিটেনের ডিরেক্টরস গিল্ড পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। তারেক মাসুদ বাংলাদেশের বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সংগঠন বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৮৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবের কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্ব পালন করেন।
মিশুক মুনীর। পুরো নাম আশফাক মুনীর মিশুক দীর্ঘদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ব্রডকাস্ট জার্নালিসম বিষয়ে শিক্ষকতায় নিযুক্ত ছিলেন। তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবী নাট্যকার মুনীর চৌধুরীর ছেলে। শিক্ষকতার চেয়ে ক্যামেরা হাতে কাজ করাটাই ছিলো তার সবচেয়ে পছন্দের। যখন দেশে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বিকাশ হয়নি তখন সেই টানেই তিনি ছুটতেন দেশের বাইরে। তিনি দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও ইউরোপেরে বিভিন্ন জায়গায় বিবিসির ক্যামেরা পারসন হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। এছাড়া তিনি কানাডার রিয়েল টেলিভিশনের হেড অব ব্রডকাস্ট অপারেশন হিসেবে কাজ করেছেন। বাংলাদেশর প্রথম টেরিস্ট্রেরিয়াল চ্যানেল একুশে টেলিভিশন চালু হওয়ার সময় হেড অব অপারেশন্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। নিজের হাতে গড়ে তোলেন একুশের সংবাদ টিম। নাম পান বাংলার সায়মন ড্রিং। তিনি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস, চ্যানেল ফোর ও সিবিসি টেলিভিশনের ক্যামেরা অপারেটর হিসেবে কাজ করেন। 'রিটার্ন টু কান্দাহার', 'ওয়ার্ডস অব ফ্রিডম' প্রামাণ্যচিত্রগুলোতে কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু বিদেশের জন্য নয় দেশের জন্যই দেশে ব্রডকাস্ট জার্নালিজমের বিকাশেই কাজ করতে চাইতেন মিশুক মুনীর। সেকারণে গত বছর দেশে ফিরে এটিএন নিউজের সিইওর দায়িত্ব নেন।
এদেশে গুণীদের কদর নেই বলে গুণী জন্মায় কম। তাই আজ থেকে এক বছর আগে আজকের এইদিনে সড়ক দুর্ঘটনায় এই দুই ক্ষণজন্মা গুণীর বিদায়ে আমাদের কত ক্ষতি হল তা হিসাব করার মত ক্যাল্কুলেটর নেই। যাদের গাফিলতিতে রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ফিটেনেসহীন যানবাহন, ভুয়া লাইসেন্স নিয়ে বনে যাচ্ছে গাড়ীর চালক, অবৈধ টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজিতে সড়কের হচ্ছে না সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ – তারাই দায়ী তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর সহ এ যাবত সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হাজার হাজার মানুষ হত্যাকান্ডের। ক্ষোভে, দুঃখে, বেদনায় চোখের জল গড়িয়ে পড়ে এই ভেবে যে, এই অভিশপ্ত দেশে যতদিন না যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হয় ততদিন আমরা থাকবো অভিশপ্ত। অভিশাপ নিয়ে এভাবে চলতে হলে বার বার হোঁচট খেয়ে পড়বো, আর হারাবো প্রাণ প্রিয় সব আদর্শের সৈনিকদের, বন্ধুদের, পথপ্রদর্শকদের। সেই দিন আসবে কবে এই অভিশাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করে একমুঠো পবিত্র বাংলার মাটি ছিটিয়ে দিতে পারবো মিশুক মুনীর ও তারেক মাসুদের কবরে যা তাদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ছিলো?
মূল তথ্যঃ http://www.somewhereinblog.net/blog/onlyrakib/29431138
এবং Google.