Daffodil International University
Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Ramadan and Fasting => Topic started by: ishaquemijee on August 18, 2012, 09:27:03 AM
-
পৃথিবীতে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব উত্সব রয়েছে, কারণ উত্সবের মাধ্যমে প্রাণের সজীবতা অক্ষুণ্ন থাকে এবং মানুষ খুঁজে পায় জীবন সাধনার সিদ্ধি। আর মুসলমানদের জাতীয় উত্সব হলো ঈদ। ঈদ মানে আনন্দ ও সুখের বারতা। ঈদ মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উত্সব। প্রতি বছর প্রতিটি মুসলমানের ঘরে এ বারতা আসে। রমজানের রোজার শেষে খুশির ঈদ ঈদুল ফিতর। একজন রোজাদার রমজানের এক মাস সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে কৃচ্ছ্রতা, সংযম, ধৈর্য ও মানবিক মূল্যবোধের প্রশিক্ষণ লাভ করে; তারই মূল্যায়নের দিন হলো ঈদুল ফিতর। রোজা মানুষের মনে উদারতা, সহমর্মিতা ও মানবপ্রীতি কতটা জাগিয়ে তুলতে পেরেছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় ঈদের দিনে। ঈদের নামাজে ধনী-নির্ধন, ইতর-ভদ্র, ছোট-বড় সব মানুষ যখন একই সমতলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায় ও ভক্তিভরে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে কল্যাণ ও শান্তির জন্য প্রার্থনা করে; তখন এক অপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়। ঈদগাহ হয়ে ওঠে সামাজিক মিলনমেলা। বছরে অন্তত ঈদের দিনে মানুষ সব ক্ষুদ্রতা, সঙ্কীর্ণতা, তুচ্ছতা, হিংসা ও বিদ্বেষ ভুলে পরস্পরকে ভালোবাসে। পারস্পরিক কুশল বিনিময়ের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সামাজিক ঐক্য ও সংহতির সৃষ্টি হয়। মুসলমানদের জীবনধারায় এর মূল্য বিশাল।
রমজানের রোজা তথা সাহরি, তারাবি ও ইফতার যারা যথাযথভাবে পালন করেছেন; পাপাচার ত্যাগ করার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, ঈদের আনন্দ তাদের জন্য। অপরদিকে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ছেড়ে দিয়েছে, দিনের বেলা পানাহার ও যৌন পরিচর্যায় লিপ্ত হয়েছে, তাদের জন্য ঈদ হলো দুঃখ ও হতাশার। ঝলমলে ও সুবাসিত নতুন জামা গায়ে দিলেও তাদের প্রাপ্তির ভাণ্ডার শূন্য। প্রবৃত্তির প্ররোচনাকে দমন করে যারা বিবেকের শক্তিকে জাগ্রত করতে পেরেছেন রমজান মাসে, ঈদের দিন আল্লাহ তায়ালা তাদের ক্ষমা করে দেন। ঈদের দিনে রোজাদারদের জন্য এটা বিরাট প্রাপ্তি।
ঈদের দিন বড়-ছোট সমাজের সব সদস্য নতুন জামা পরে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-পড়শিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সালাম, কোলাকুলি ও শুভেচ্ছা বিনিময় করে থাকে। ঈদের দিন ঘরে ঘরে সেমাই, পোলাও, বিরিয়ানি, পায়েশসহ নানা সুস্বাদু খাবার তৈরি হয়ে থাকে। ঈদের দিন শুধু নিজে ভালো খেলে ও ভালো পরলে ঈদের আনন্দ সম্পূর্ণ হয় না, অন্যদের খাওয়া-পরার সুযোগ করে দিতে হবে। সুস্বাদু খাবার কেউ একা খায় না—সবাইকে খাইয়ে আমরা আনন্দ ও তৃপ্তি লাভ করব। যার দান করার বা খাওয়ানোর সামর্থ্য নেই, তার মিষ্টি কথা বলে, স্নেহ-মমতা ও সহানুভূতি দেখিয়ে সবাইকে খুশি করা উচিত। এটাই ঈদের দিনের বিধান ও কর্তব্য। এর ফলে পরস্পর শত্রুতা ভাব বিদূরিত হয়ে সমাজের সদস্যদের মাঝে ভ্রাতৃত্বভাব জেগে উঠবে। ত্যাগের মাধ্যমে মানুষ মানুষের ভালোবাসা পায় এবং জীবন অমরত্ব লাভ করে। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদের আগে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত মানুষকে ফিতরা দান করা আর্থিকভাবে সচ্ছল প্রতিটি রোজাদারের ওপর ওয়াজিব। পবিত্র কোরআনের নির্দেশ অনুযায়ী ফিতরা সমাজের আট শ্রেণীর মানুষের মধ্যে বণ্টন করা হয়। নির্দিষ্ট হারে ফিতরা দানের ফলে সমাজের দারিদ্র্যক্লিষ্ট মানুষের আর্থিক কল্যাণ সাধিত হয়। ফিতরা হচ্ছে দুনিয়া-আখিরাত এবং ব্যক্তি-সমাজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার উত্কৃষ্ট উদাহরণ। ফিতরার প্রধান উদ্দেশ্য দুটি। ১. সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠী যাতে অপরাপর মুসলমানের সঙ্গে ঈদের আনন্দে শরিক হতে পারে। ২. রোজা পালনে সতর্কতা সত্ত্বেও যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে যায়, যেন তার প্রতিবিধান হয়। মাসব্যাপী পরিচালিত কঠোর সাধনায় রিপু ও কুপ্রবৃত্তিগুলোকে অবদমন করে যারা জয়ী হতে পেরেছেন, ঈদ তাদের জয়ের উত্সব।
ঈদ উত্সবের মূল বাণী হচ্ছে মানুষে মানুষে ভালোবাসা, সবার মাঝে একতা ও শান্তি। ভোগে নয়, ত্যাগেই সুখ—ঈদ একথা মনে করিয়ে দেয়। ঈদ নিছক উত্সব নয়, একটি গভীর অর্থ নিহিত আছে ঈদে। ঈদের মধ্যে সমাজ, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও মানুষে-মানুষে সম্পর্কের উপাদান লুকিয়ে আছে। ঈদ আমাদের সামাজিক চেতনার আনন্দমুখর অভিব্যক্তি ও জাতীয় সংস্কৃতির অন্যতম প্রাণপ্রবাহ। একথা আমাদের সবার মনে রাখা দরকার, ঈদ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান। ধর্ম পালনের মধ্য দিয়ে কেমন করে পবিত্র ও নির্মল আনন্দ পাওয়া যায়, সে শিক্ষা পাওয়া যায় ঈদ উত্সবে। নিছক আমোদ-প্রমোদ, হৈ-হুল্লোড়, পানাহার, নাচ-গান প্রভৃতি এ উত্সবের লক্ষ্য নয়। আনন্দ ও উত্সবের আতিশয্যে যেন ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।