Daffodil International University

Bangladesh => Positive Bangladesh => Topic started by: Badshah Mamun on September 01, 2012, 09:55:25 AM

Title: স্বাবলম্বী হওয়ার মডেল!
Post by: Badshah Mamun on September 01, 2012, 09:55:25 AM
স্বাবলম্বী হওয়ার মডেল!

নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। কিছুটা টানাটানির সংসার বলে এসএসসি পাসের পর ভাগ্য ফেরাতে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণে অনেক জায়গায় ঘোরাঘুরি করেও কোনো কাজ হয়নি। পরে শুরু করেন চাকরির খোঁজ। তাও মেলেনি। তাই নিজের বাড়ির পাশের একখণ্ড পতিত জমিতে লিচুর চারা লাগান। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে লিচু বিক্রি শুরু করলে তাঁকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। নিজের চেষ্টাতেই স্বাবলম্বী হন তিনি। পাশাপাশি যেন পরিণত হন স্বাবলম্বী হওয়ার মডেলে।

(http://paimages.prothom-alo.com/resize/maxDim/340x1000/img/uploads/media/2012/08/31/2012-08-31-18-39-23-504104db97982-untitled-5.jpg)

এই তিনি হলেন আমিনুল হক (৩৮)। ডাকনাম জুয়েল। টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার ফুলতলা গ্রামের ছেলে আমিনুল বাগান করে ছোটখাটো বিপ্লব ঘটিয়েছেন। তাঁর বাগান দেখে উৎসাহিত হয়ে এখন অনেকেই ফলের বাগান করছেন। ফুলতলাসহ আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অন্তত ১০০ ফলের বাগান। এসব বাগানে আম, লিচু ও পেয়ারার গাছই বেশি।
শুরুর গল্প: ছোটবেলা থেকেই আমিনুল দেখেছেন, আশপাশের অনেকেই বিদেশে গিয়ে কাজ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাচ্ছেন। তাঁরও ইচ্ছা ছিল বিদেশে যাওয়ার। ১৯৯২ সালে গ্রামের বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাসের পর বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা শুরু করেন। এর কাছে যান, ওর কাছে যান। কয়েক বছরের চেষ্টায়ও ভাগ্যের শিকে ছিঁড়ে না। তাই বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা বাদ দেন। এর মধ্যে পড়াশোনায়ও ছেদ পড়ে। তাই ছোটখাটো একটা চাকরি খুঁজতে থাকেন, যাতে নিজে অন্তত চলা যায়। কিন্তু চাকরি জোটে না।
১৯৯৬ সালের কথা। কোনো এক কারণে ফুলতলার পাশের বাঁশি গ্রামে যান আমিনুল। সেখানে এক বাড়িতে কয়েকটি গাছে প্রচুর লিচু দেখে বিস্মিত হন। এত লিচু ধরে! তখনই তাঁর মাথায় আসে, তিনিও তো লিচুর গাছ লাগাতে পারেন। করতে পারেন ফলের বাগান। বাড়ি ফিরে বাবা মো. আফাজউদ্দিনের কাছে সেই কথা পাড়লেন। প্রথমে বাবা কিছুটা দ্বিমত করলেও পরে রাজি হন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে ৩০টি লিচুর চারা এনে বাড়ির পাশের পতিত জমিতে লাগান।
লিচুর চারা লাগানোর পর থেকে প্রতিবেশীদের অনেকে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করা শুরু করেন। আমিনুল বলেন, ‘আমার বাগান করা দেখে অনেকেই বলতেন, “মাথা খারাপ হয়েছে”, “গাছ লাগিয়ে জমি নষ্ট করছে”, “সবজি আবাদ করলেই ভালো হতো” ইত্যাদি। অনেকেই এসে মনে করিয়ে দিতেন, কথায় আছে, “যে বুনে লিচু, তার থাকে না কিছু”।’ কিন্তু ১৯৯৯ সালে যখন গাছে লিচু ধরা শুরু করে, তখন অনেকেরই ধারণা পাল্টে যায়। লিচু বিক্রি শুরু হলে সবাই যেন উৎসাহ দিতে থাকলেন। প্রথমবারই বেশ কিছু লাভও হলো আমিনুলের। উৎসাহ বেড়ে গেল তাঁর।
বাড়ল বাগানের পরিধি: ’৯৯ সালেই আমিনুল লিচুর গাছের পাশাপাশি ছয়টি আম্রপলি জাতের আমের চারা রোপণ করেন। পরের বছরই সেই গাছ থেকে আম পেলেন। ফল পাওয়ায় এবার যেন আমের প্রতি আকৃষ্ট হন। স্থানীয় কৃষি বিভাগে প্রশিক্ষণ নিয়ে কলম করা শুরু করলেন। বাড়াতে থাকেন বাগানের পরিধি। সেই ছয়টি আমের চারা থেকে কলম করে আস্তে আস্তে ৩০০ চারা করে রোপণ করেন। বাগানে লাগালেন পেয়ারা ও কুলের চারাও। বর্তমানে আমিনুলের বাগানের ১৪ বিঘা জমিতে রয়েছে ৩০০ আম, ১০০ লিচু, ২০০ পেয়ারা ও ১০০ কুলের গাছ। এ ছাড়া আমলকী, লটকনসহ আরও বেশ কিছু ফলের চারা লাগানো হয়েছে। বাগান থেকে ফল বিক্রির পাশাপাশি কলমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করেও বিক্রি করছেন আমিনুল। চলতি বছর তিনি ফল ও চারা বিক্রি করে প্রায় ১০ লাখ টাকা আয় করেছেন।
উৎসাহী হন অনেকে: ফলের বাগান করে আমিনুলের সাফল্যে আশপাশের অনেকেই উৎসাহিত হয়ে বাগান করা শুরু করেন। এমনকি লিচুর চারা লাগানোর পর আমিনুলকে যাঁরা বাঁকা কথা শুনিয়েছিলেন, তাঁদেরও কেউ কেউ বাগান করার দিকে ঝুঁকে পড়েন।
ফুলতলার পাশের গ্রাম ঘরিয়ার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমিনুলের বাগান দেখে উৎসাহিত হয়ে প্রায় এক একর জমিতে আম ও লিচুবাগান করেছি। বাগান করার ব্যাপারে আমিনুল বিভিন্ন সময় চারা ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন।’ সহদেবপুর গ্রামের মজনু খান জানালেন, আমিনুলের পরামর্শ নিয়ে গত বছর দুই একর জমিতে ফলের বাগান করেন। আশা করছেন, সফল হবেন। বাগান করেছেন ফুলতলার মঞ্জুরুল হক, ভাঙাবাড়ীর আহমেদ শরীফ, নারান্দিয়ার শামসুল আলম ও প্রদীপ কুমার, ভূঞাপুরের কুঠিবহেরা গ্রামের বাদল খন্দকার প্রমুখ।
সেই বাগানে একদিন: সম্প্রতি এক সকালে আমিনুলের বাগান দেখতে ফুলতলা গ্রামে যাওয়া। বেশ বড় ওই বাগানে ঢুকে সারি সারি আম, লিচু, পেয়ারা ও কুলগাছ থেকে অন্য রকম এক অনুভূতি হলো। বাগানেই পাওয়া গেল আমিনুলকে। চারজন শ্রমিক গাছ থেকে আম পাড়ছেন। তার তদারকি করছেন তিনি। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বাগান ঘুরে দেখানোর পাশাপাশি আজকের অবস্থানে পৌঁছার আদি-অন্ত জানালেন। বললেন, তাঁর গ্রাম ছাড়াও কালিহাতী-ভূঞাপুর এলাকায় ছোট-বড় প্রায় দেড় শ বাগান গড়ে উঠেছে। অনেকেই তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে বাগান করছেন। পরামর্শ দিতে তাঁর কোনো কার্পণ্য নেই।
তাঁদের কথা: ছেলের বাগানের কথা জানতে চাইলে আমিনুলের মা হাজেরা বেগম (৬৫) বলেন, ‘শুরুতে বাগান করাকে ছেলের পাগলামি ভেবেছিলাম। কিন্তু গাছে ফল আসার পর এই ভুল ভেঙেছে। এখন তো খুব ভালো লাগে।’
স্থানীয় ফুলতলা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, বিদেশে না গিয়ে এবং চাকরির পেছনে না ঘুরেও যে স্বাবলম্বী হওয়া যায়, তার অন্যতম প্রমাণ আমিনুল। তাঁকে অনুসরণ করে এই এলাকার অনেকেই বাগান করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
কালিহাতী উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল মজিদ খান বলেন, আমিনুলের সাফল্য দেখে এ অঞ্চলে ছোট-বড় ১০০ বাগান তৈরি করা হয়েছে। এসব বাগান এ অঞ্চলের ফলের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বেকারত্ব দূর করতে ভূমিকা রাখছে।
কালিহাতী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান ইমাম খান বলেন, ফলের বাগান করে আমিনুল বেকারত্ব ঘুচিয়েছেন। তিনি এই এলাকার বেকারদের কাছে স্বাবলম্বী হওয়ার মডেল।
স্বীকৃতি: বিভিন্ন সময় কালিহাতী উপজেলা পর্যায়ে ও টাঙ্গাইল জেলা পর্যায়ে বৃক্ষ ও ফল মেলায় অংশ নিয়ে পুরস্কার লাভ করেন আমিনুল। ২০০৬ সালে জাতীয় পর্যায়ে ফলদ বৃক্ষ রোপণ ও পরিচর্যায় ব্যক্তিগত শ্রেণীতে বিশেষ পুরস্কার লাভ করেন।
স্বপ্ন তাঁর মহান: নিজের স্বপ্নের কথা জানাতে গিয়ে আমিনুল বলেন, ‘একদিন আমাদের এই এলাকা “ফলের অঞ্চল” হিসেবে পরিচিতি পাবে। সবাই বিষমুক্ত ফল খেতে পারবে। বাগানের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর হবে।’ সবার প্রতি তাঁর পরামর্শ, ‘যাঁর যতটুক জায়গা আছে, সেখানে ফলের গাছ লাগান। গাছ থেকে নানাভাবে লাভবান হওয়া যায়।’

Source: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-09-01/news/285568