Daffodil International University
Health Tips => Protect your Health/ your Doctor => Women => Topic started by: Sultan Mahmud Sujon on September 04, 2012, 05:26:23 PM
-
জানালা দিয়ে বৃষ্টির পরের হিমেল হাওয়া আর মাটির সোঁদা গন্ধ আসছিল। এই বাতাসে কী যেন আছে! মন ফুরফুরে কিশোরীর মতো হাওয়ায় ভাসে। অনেক স্মৃতি জাগায়।
আবার মাঝেমধ্যে মনের ভেতরটা বড্ড ফাঁকা লাগে। কেন লাগে? কিসের অভাব? কেন কান্না পায়? মনে হয়, বিশ্বচরাচরে যেন কেউ নেই, কিছু নেই। অনন্ত শূন্যতা। সূর্য ডোবা দেখলে যেন মনে হয়, সূর্যের সঙ্গে তাঁরও বুঝি যাওয়ার সময় হলো। চোখ ভিজে যায় মনের অজান্তেই। ৫০ পেরিয়ে যাওয়া রোকসানা বেগমের সকাল-সন্ধ্যা-রাতে মন যেন ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায়।
স্থির থাকে না। অকারণেই বেদনার্ত হয়।
আজকাল আরও যা হয়েছে, অল্প কিছুতেই মেজাজ চড়ে যায়। ধৈর্য থাকে না। একসময়ের তুখোড় ছাত্রী, ট্রেকের খেলোয়াড়, কোমর আর পায়ের ব্যথায় মাঝেমধ্যেই হাঁটতে অসুবিধা হয়। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করলে পা ফুলে ওঠে। শরীর মাঝেমধ্যেই ঘামে ভিজে যায়। মাথা দিয়ে গরম ভাপ বের হয়। কোথায় কী যে রাখেন, মনে করে খুঁজে পেতে সময় লেগে যায়। বিরক্তি ধরে যায় নিজের ওপরই। দুঃখ লাগে তখনই, যখন এই অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলগুলো, সমস্যাগুলো, মনের এই আনন্দ-বেদনার ঢেউগুলো কেউ বুঝতে চায় না। ছেলেমেয়ে, স্বামী কিংবা চারপাশের আত্মীয়-অনাত্মীয়রা বুঝতে চায় না। রোকসানা বেগম এমন ছিলেন না কদিন আগেও। প্রতিদিন কেন তিনি বদলে যাচ্ছেন ক্রমশ!
পরিবারের কেউ না বুঝলেও ডাক্তার বুঝতে পারেন রোকসানা বেগম কেন বদলে গেলেন।
আর এর কিছু কম বা বেশি বয়সী রোকসানা বেগমেরা কেন বদলে যান। মেনোপজ বা মাসিক স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার সঙ্গে হরমোন (ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরোন) খুবই জড়িত। শরীরে এই হরমোনের ঘাটতিই মনের স্থিরতা নষ্ট করে দেয়। কখনো আনন্দ কখনো দুঃখে ভাসায়। মেজাজ খিটখিটে করে দেওয়ার পেছনেও রয়েছে এর হাত। হরমোনের অভাবে হাড়ের ক্ষয় হতে থাকে, আর এতে শুরু হয় কোমরে বা হাত-পায়ে ব্যথা, শিরদাঁড়ায় ব্যথা। হঠাৎ গরম লেগে মাথা ঘেমে যাওয়া বা অস্থির লাগা।
এ কারণে ঘুম ভেঙে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে হরমোনের অভাবেই। সব মিলিয়ে একটা বিষণ্নতা পেয়ে বসে এসব নারীকে। পরিবার, বিশেষ করে স্বামী-সন্তানেরা তাঁকে যদি বুঝতে চেষ্টা না করে বা তাঁর প্রতি সহমর্মিতা ও সহযোগিতার হাত না বাড়িয়ে দেয়, সে ক্ষেত্রে তাঁদের কাছে জীবন অর্থহীন মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক।
এই জীবনের অনেক অনেক সময় যিনি পরিবারের জন্য ব্যয় করেছেন, প্রয়োজনে তাঁর পাশে সহানুভূতি নিয়ে ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেবে পরিবারের সব সদস্য—এই আশা তিনি করতেই পারেন। এ ছাড়া ডাক্তার তো থাকলেন চিকিৎসা-সহায়তা দেওয়ার জন্য।
রওশন আরা খানম
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২০, ২০১১