Daffodil International University
Health Tips => Health Tips => Topic started by: Badshah Mamun on November 01, 2012, 03:12:53 PM
-
ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের সমীক্ষা মতে ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সার হচ্ছে, বাংলাদেশের নারীদের জন্য দ্বিতীয় ঘাতক ক্যান্সার। সকল বয়সের মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি আছে, যদিও কারও পক্ষেই সঠিক ভাবে বলা সম্ভব না কে কখন এই রোগে আক্রান্ত হবে। তবে এই রোগের ঝুঁকি সম্পর্কে আগেই আঁচ করা যায়। ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি সমূহ ও এই ঝুঁকি হ্রাসের কিছু পদক্ষেপ সম্পর্কে, এখানে আলোকপাত করা হলো।
স্তন ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে সহজে প্রতিরোধ করা যায় স্তন ক্যান্সার যত তাড়াতাড়ি সনাক্ত করা যাবে তত তাড়াতাড়ি এর চিকিত্সা ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
গত পাঁচ বছরের সমীক্ষায় দেখা গেছে টিউমার বের করার মাধ্যমে ৯৮ ভাগ রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়। যদি স্তনের টিস্যুতে টিউমারটি নিরাপদ স্থানে এবং আকারে ছোট অবস্থায় সনাক্ত হয়। কিন্তু যদি টিউমারটির আকার বড় হয় এবং স্তন বা শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে তবে রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
যদি স্তন ক্যান্সার পরিবারের অন্য কারো থেকে থাক যদি পরিবারের অন্য কারো স্তন ক্যান্সার হয়ে থাকে তাহলে ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় কিন্তু এটা যে হবেই তা নয়। গবেষণায় দেখা গেছে শুধু মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ স্তন ক্যান্সার হয় বংশগত কারণে।
স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিসমূহ
যে কোনো নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু নিচের কারণগুলো ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
++৫০ বছর বা তার বেশি বয়স হলে
++পরিবারের অন্য কারো যদি স্তন ক্যান্সার থাকে
++রজঃনিবৃত্তি বা মেনোপোজের পর হরমোন পিল ব্যবহার করলে
++মাসিকের শুরু ১২ বছর বয়সের আগে হলে
++যদি দেরিতে মেনোপজ হয় (৫৫ বছর বয়স বা এর পরে)
++নিঃসন্তান হলে বা সন্তান দেরিতে হলে (৩০ বছরের পরে)
যদিও উপরোক্ত বিষয়গুলো কোন নারীর নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না, তবে জীবনধারা পবিবর্তন করে স্তন ক্যান্সারের কিছু ঝুঁকি কমানো যায়। যে কোন ধরনের শারীরিক কার্যকলাপ যেমন হাঁটা, সাঁতার কাটা, বাগান করা, বাড়ির কাজ করা ইত্যাদি হালকা ব্যায়াম নারীদের স্তন ক্যান্সার হওয়া থেকে মুক্তি দিতে পারে। প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা প্রয়োজন, যদি আপনার শারীরিক অবস্থা ভাল হয় তবে ৬০ মিনিট পর্যন্ত ব্যায়াম করা যেতে পারে। এছাড়াও দেখা গেছে, মেনোপজের পর অতিরিক্ত শারীরিক ওজন ব্রেস্ট ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। বয়সন্ধিকালে শরীরের ওজন বেড়ে গেলে বা কোমরের ওজন বেড়ে গেলেও মেনোপজের পরে নারীদের এই রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। নিয়মিত ভাবে সুষম খাবার গ্রহণ করে এবং আনন্দের সাথে প্রাত্যহিক কাজ করে সুস্থ জীবন যাপন করা সম্ভব।
স্তন ক্যান্সার ঝুঁকি কমানোর জন্য
খাদ্য তালিকায় চর্বি জাতীয় খাবারের পরিমাণ ২০ শতাংশেরও কম হতে হবে। চর্বি জাতীয় খাবার শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ বাড়ায় যা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া অধিক চর্বির কারণে ব্রেস্টের টিস্যুগুলোর ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার ফলে ম্যামোগ্রাফির ফলাফল অস্পষ্ট আসে বিধায় রোগ সনাক্তকরণে দেরি হতে পারে।
খাদ্য তালিকায় সবজি, ফল, গম এবং মটরশুটি ইত্যাদি আঁশযুক্ত খাবার যোগ করা উচিত, কেননা তা অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার কার্যক্ষমতা কমিয়ে শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমায়। এছাড়াও এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, বেটা কেরোটিন ও ভিটামিন এ যুক্ত খাবার ক্যান্সার সৃষ্টিকারক ফ্রি রেডিকেলকে দূর করতে পারে। শিশুকে মাতৃদুগ্ধ বা ব্রেস্ট ফিডিং করালেও নারীর ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকির মাত্রা কমে। প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্তকরণ ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে জীবন বাঁচায় নারীদের স্তনের মধ্যে পিন্ড বা ফোলা দেখা দিলে নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা বা ব্রেস্ট সেল্ফ এক্সাম পদ্ধতিতে নিজে নিজেই তা নির্ণয় করতে পারেন। প্রতিমাসে নিজে নিজে পরীক্ষা করায় কোন ক্ষতি নেই কিন্তু নিয়মিত ভাবে আপনাকে একজন প্রশিক্ষিত চিকিত্সক বা সার্জন দ্বারা ক্লিনিক্যালি স্তন পরীক্ষা করাতে হবে। আপনার বয়স ২০ বছর থেকে ৩৯ বছরের মধ্যে হলে প্রতি ৩ বছর অন্তত: এক বার চিকিত্সক দ্বারা স্তনের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা করুন। চল্লিশ বা তার কাছাকাছি বয়স হলে এই পরীক্ষা প্রতি বছর করুন। ম্যামোগ্রাম সম্পর্কে অনেক ভিন্নমত থাকলেও ম্যামোগ্রাম হচ্ছে দ্রুত স্তন ক্যান্সার সনাক্ত করনের অন্যতম কার্যকরী পন্থা। ম্যামোগ্রাম দ্বারা অনেক ছোট এমনকি পুরোনো টিউমার সনাক্ত করা সম্ভব, যা শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে অনুভব করা যায়। স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ে প্রশিক্ষিত চিকিত্সক দ্বারা স্তন পরীক্ষার ফলাফল নিশ্চিত করার জন্য ম্যামোগ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৪০ বছর বয়স থেকে সার্জনের পরামর্শ ব্যাতিরেকেই প্রতি ১ হতে ২ বছর অন্তর ম্যামোগ্রাম করুন।
লেখক :
প্রফেসর ডাঃ আনিসুর রহমান
সিনিয়র কনসালটেন্ট এন্ড কো-অর্ডিনেটর
জেনারেল ও ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি বিভাগ
এ্যাপোলো হসপিটালস, ঢাকা
Source: http://new.ittefaq.com.bd/news/view/155253/2012-11-01/24