Daffodil International University

Health Tips => Health Tips => Topic started by: Badshah Mamun on November 01, 2012, 03:19:51 PM

Title: প্রস্রাব নিয়ে ভাবনা, দুর্ভাবনা
Post by: Badshah Mamun on November 01, 2012, 03:19:51 PM

অনেকে ভাবেন যে বেশিরভাগ লোক রাতে ওঠেন ঘুম থেকে প্রস্রাব করার জন্য। তা ঠিক নয়। বেশিরভাগ মানুষ ৬-৮ ঘন্টা নির্বিবাদে ঘুমুতে পারেন প্রস্রাব না করেও। তবে রাতে প্রস্রাবের জন্য কেউ যদি ওঠেন এতেও দুর্ভাবনার তেমন কারণ নেই। এমন হতেই পারে। ঘুমুতে যাবার আগে আগে বা কাছাকাছি সময় চা-কফি পান করলে বা খুব বেশি পানি পান করলে রাতে প্রস্রাবের বেগ হতেই পারে। তবে রাতে বারবার ঘুম থেকে যদি উঠতে হয় প্রস্রাবের জন্য তাহলে ডাক্তার দেখানো উচিত। রাতে বারবার বেশি প্রস্রাব হলে তা হতে পারে ওষুধের জন্য বা ডায়াবেটিস, কিডনি, হূদযন্ত্র বা প্রোস্টেটের সমস্যার কারণে। তাই একে চেকআপ করে নেয়াই সমীচীন।

কি পরিমাণ পানি পান করা উচিত
অনেকে মনে করেন শরীর ভালো রাখতে হলে কঠোর নিয়ম হলো দিনে ৮ গ্লাস পানি পান করা। শরীরকে সচল রাখার জন্য ও শরীর থেকে বর্জ্য নিষ্কাশন সুষ্টু রাখার জন্য পানি পান প্রয়োজন। তবে ৮ গ্লাসই প্রতিদিন পানি পান করতে হবে তাও নয়। কি পরিমাণ পানি পান যথেষ্ট হবে। যদি দেখা যায় প্রস্রাবের রং হালকা হলুদ বা প্রায় স্বচ্ছ ও পরিষ্কার, তাহলে বুঝা যাবে যথেষ্ঠ পরিমাণ পানি পান করা হয়েছে। যথেষ্ঠ পানি পান না করলে প্রস্রাব কড়া ও গাঢ় বর্ণ হতে পারে।

প্রস্রাবের রং
প্রস্রাবের রং পিংক হলে, বীট বা ব্লাকবেরি ও খাওয়া হয়নি, তবুও বর্ণিল হলে ডাক্তার দেখানো ভালো। ভিটামিন ও ওষুধ খেলেও প্রস্রাবের নানা রং হতে পারে। প্রস্রাবের রং হতে পারে প্রস্রাবের সাথে রক্ত গেলেও। ঘোলাটে হতে পারে সংক্রমণ হলে। এসব ক্ষেত্রে ডাক্তার দেখানো ভালো।

প্রস্রাব জীবানুমুক্ত নয়
প্রস্রাব মূত্রাশয়ে যখন থাকে তখন প্রস্রাব কিছুটা জীবানু মুক্ত থাকে। তবে মূত্রনালী দিয়ে যাওয়ার সময় এটি জীবানুর মুখোমুখি হয়। সেজন্য প্রস্রাব পান করা বা এর স্বাদ নেওয়ার যে অভ্যাস বা প্রথা অনেক সমাজে বা ব্যক্তির চর্চার পর্যায়ে রয়েছে তা ঠিক নয়। অন্যদিকে প্রস্রাব ঘরে, অন্যান্য লোকের সাধারণ প্রস্রাব ঘরে প্রস্রাব করতে অনেক লজ্জা পান। গণ-সৌচাগার বা পাবলিক টয়লেটে প্রস্রাবে সংকোচবোধ করেন। একে বলে Shy bladder. চিকিত্সা বিজ্ঞানে ‘paruresis’ এর সঠিক কারণটি বিতর্কের পর্যায়ে রয়েছে। তবে একে একধরণের আতংক বা সামাজিক এ্যাংজাইটি ডিস অর্ডার বলেন অনেকে। তবে চিকিত্সক এর সমাধান কিছুটা দিতে পারবেন। প্রস্রাব অনেক ক্ষণ সময় ধরে রাখলে মূত্র থলিতে হতে পারে সংক্রমণ। বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে। তাই প্রস্রাবের তাগিদ হলে প্রস্রাব করে নেওয়াই সমীচীন।

(http://new.ittefaq.com.bd/uploads/news_image/2012-10-12_1350050180.jpg)

শৌচাগারের কিছু কিছু অভ্যাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলে

++ প্রতিদিন প্যান্টি লাইনার বা প্যাড ব্যবহার করলে।
++ পেছন দিক থেকে সামনের দিকে শৌচ করলে মলদ্বার থেকে জীবানু স্থানান্তরিত হয়ে মূত্রনালীতে।
++ বেশি বেশি বাথরুমে যাওয়া হতে পারে। খুব পিপাসা পেলো, কয়েক বোতল পানি পান করলাম, খুব ব্যায়াম করলাম। এরপর বাথরুমে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু বারবার পিপাসা লাগছে, প্রচুর পানি পান করা হচ্ছে এবং এজন্য বেশি বেশি প্রস্রাব হচ্ছে কয়েক সপ্তাহ ধরে। এক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের লক্ষণ হতে পারে। ডায়াবেটিসের অন্যান্য লক্ষণও যদি থাকে যেমন- খুব ক্লান্ত বোধ হওয়া, কাটা-ছেড়া সহজে না সারা, হাতে পায়ে অবশভাব বা ঝিন্ ঝিন্ তখন অবশ্য ডাক্তার দেখাতে হবে।
++ স্বাভাবিক ভাবে দিনে ক’বার বাথরুমে যায় মানুষ। দিনে ৬-৮ বার। তবে প্রচুর পানি পান করলে দিনে ৮ থেকে ১০ বারও যাওয়া হতে পারে। কিছু কিছু ওষুধ যেমন- উচ্চ রক্তচাপের জন্য ডাইইউরেটিকস্ ওষুধ খেলেও বেশি প্রস্রাব হতে পারে।
++ নারীদের মূত্রনালী সংক্রমণ বেশি হলেও পুরুষেরও হয় মূত্রসংক্রমণ। নারীদের মূত্রপথ মলদ্বারের খুব কাছাকাছি থাকার কারণে রোগ জীবানু সহজে পৌছাতে পারে মূত্রথলিতে। তবে পুরুষদের কম ঝঁকি থাকে। পুরুষদেরও মূত্রনালী সংক্রমণ হয় এবং যখন হয় তখন পুন:পুন: হয়। কারণ জীবানু প্রোস্টেট টিস্যুর অনেক গভীরে লুকিয়ে থাকতে পারে।
++ মূত্রথলিতে সংক্রমণ ক্রানবেরি জুস খেয়ে ঠেকানো যায় এমন কথা আছে। তবে এর পেছনে বৈজ্ঞানিক সত্যটি হলো এই জুসটি ক্ষতিকর নয়, তবে ইতিমধ্যে মূত্রপথে সংক্রমণ হয়ে গেলে  ক্রানবেরি জুস খেয়ে লাভ নেই। খেতে হবে এন্টিবায়োটিক ওষুধ। প্রচুর পানিও পান করতে হবে।
++ প্রস্রাব করার সময় ব্যথা লাগলে বা কষ্ট লাগলে কেবল মূত্রনালী সংক্রমণের জন্যই তা হয়ে থাকে তাও নয়। হতে পারে  অন্যান্য কারণেও
++ কোন কোন যৌনবাহিত রোগ হলেও প্রস্রাব করতে কষ্ট হয় বা জ্বালা-পোড়া করে।
++ মূত্রথলির প্রবেশ পথে একটি কিডনির পাথর আটকে থাকতে পারে।
++  হতে পারে মূত্রথলির দেয়ালে প্রদাহ। ইত্যাদি কারণে দেখাতে হবে ডাক্তার।
++ অনেক লোক বিশেষ করে মহিলাদের হাচি দেয়ার সময় সামান্য প্রস্রাব হয়ে যায়, কাশি দেয়ার সময় বা খুব ভারি কিছু তোলার সময়ও এমন হতে পারে। একে বলে (Stress Incontinence) অর্থাত্ মূত্রথলি চাপে থাকার কারণে এসব ঘটে। মহিলা গর্ভবতী হলেও এমন হতে পারে। আবার সন্তান প্রবসের পর চলে যায়। ঋতু বন্ধের পরও এমন ঘটতে পারে। সুসংবাদ হলো এটি প্রায়ই চিকিত্সা সাধ্য। ফিমেল ব্যায়াম করে একে উপশম করা যায়। আছে আরো ব্যায়াম। শরীরে ওজন বেশি থাকলে, ওজন কমালেও এতে বেশ আরাম পাওয়া যায়।
++ চা, কফি ও এলকোহল বেশি  পান করলে প্রস্রাব বেশি হয়। এগুলো হলো ডাই-ইউরেটিকস বা মূত্রবর্ধক। পানি পড়ার শব্দ শুনলে প্রস্রাবের ইচ্ছা হয়, তবে এসবের আরও কারণ আছে। যেমন- কিছু  ওষুধ খেলে, প্রস্রাবের তাগিদ হয়, হতে পারে থাইরয়েড সমস্যা হলে, ডায়াবেটিস হলে, স্নায়ুতন্ত্রের অসুখ হলে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে কারণও খুজে পাওয়া যায় না।

লেখক :
অধ্যাপক ডা:শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক
ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস
বারডেম, ঢাকা


Source: http://new.ittefaq.com.bd/news/view/155257/2012-11-01/24