Daffodil International University

Health Tips => Health Tips => Blood Pressure => Topic started by: Badshah Mamun on November 01, 2012, 04:17:32 PM

Title: নীরব ঘাতক: উচ্চ রক্তচাপ
Post by: Badshah Mamun on November 01, 2012, 04:17:32 PM

উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো এবং এই ব্যাধিমুক্তির কাজে জনগণকে উত্সাহিত করাই এর উদ্দেশ্য। ২০১২ সালের বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবসের প্রতিপাদ্য ছিলো “স্বাস্থ্যোপযোগী জীবনমাত্রা-স্বাস্থ্যোপযোগী রক্তচাপ”। রক্তনালী বা ধমনীর দেয়ালের বিপরীততে রক্ত প্রবাহের ধাক্কাকেই রক্তচাপ বলে। রক্তচাপ খুব বেড়ে গেলে তা হূদপিন্ডের কাজ অস্বাভাবিক ভাবে বাড়িয়ে দেয় এবং রক্তনালীর মারাত্মক ক্ষতি করে। ১২০/৮০ এর অধিক রক্তচাপকে উচ্চ রক্তচাপ বলে। উপরের মাত্রাটিকে সিস্টোলিক চাপ বলে, যা হূদযন্ত্রের স্পন্দনের সময়কার রক্তচাপ। নীচের মাত্রাকে ডায়াস্টোলিক চাপ বলে যা হূদস্পন্দনের অন্তবর্তীকালীন সময়ের রক্তচাপ যখন হূদযন্ত্রে রক্ত এসে জমা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের কারণ জানা যায় না। উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনকে নীরব ঘাতক বলা হয়, কেননা বছরের পর বছর এটি উপসর্গহীন থাকতে পারে। প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন জানে না যে, তাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে। এটি হূিপন্ড, ফুসফুস, রক্তনালি, মস্তিষ্ক এমনকি কিডনিরও ক্ষতি করতে পারে, যদি এর চিকিত্সা না করা হয়।

প্রি-হাইপারটেনশনের লক্ষণ
যাদের রক্তচাপ ক্রমাগতভাবে স্বাভাবিক মাত্রার সামান্য উপরে থাকে; অর্থাত্ সিস্টোলিক মাত্রা ১২০ থেকে ১৩৯ এর মধ্যে এবং ডায়াস্টোলিক মাত্রা ৮০ থেকে ৮৯ এর মধ্যে থাকলে তাকে প্রি-হাইপারটেনশন বলে। এদের উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হবার ঝুঁকি অনেক বেশি। চিকিত্সকেরা তাদেরকে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে রক্তচাপ কমানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

উচ্চ রক্তচাপের বিপদসীমা
গড়ে রক্তচাপ ১৪০/৯০ বা এর উপরে থাকলে কোন উপসর্গ না থাকলেও ধরে নিতে হবে, আপনি রক্তচাপে ভূগছেন।

রক্তচাপ ১৮০/১১০ বা এর উপরে হলে তা উচ্চ রক্তচাপের বিপজ্জনক পর্যায়, অস্থির না হয়ে এ অবস্থায় কয়েক মিনিট বিশ্রাম নিয়ে আবার রক্তচাপ মাপুন। এর পরও রক্তচাপ বেশি থাকলে দ্রুত হাসপাতালে যাবার জন্য এম্বুলেন্স ডাকুন। এই অবস্থা থেকে স্ট্রোক, হার্ট এ্যাটাক, কিডনি ফেইলিয়র, জ্ঞান হারানোর  মতো মারাত্মক কিছু হয়ে যেতে পারে। এয়াড়াও অসহ্য মাথা ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, নাক দিয়ে রক্তপাত, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ যাদের হতে পারে
৪০-৪৫ বত্সর বয়স পর্যন্ত পুরুষের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি নারীর চেয়ে বেশি। তবে পঁয়তাল্লিশোর্ধ বয়সে নারী-পুরুষ উভয়েরই উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা বাড়তে থাকে। ডায়াবেটিস থাকলে বা পরিবারের অন্যদের উচ্চ রক্তচাপ থাকলে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।

প্রয়োজনীয় পরামর্শ
হেলদি লাইফস্টাইল বা স্বাস্থ্যবান্ধব জীবনমাত্রার মাধ্যমে কিভাবে রক্তচাপকে মাত্রার ভিতরে রাখা যায়, আসুন তা এবার জেনে নেই:

১. সোডিয়াম নিয়ন্ত্রণ: লবণের প্রধান উপাদান সোডিয়াম শরীরে পানি ধরে রেখে রক্তচাপ বাড়ায়, যা হূদযন্ত্রের জন্য অতিরিক্ত বোঝা বাড়িয়ে তোলে। খাবারের সাথে কাঁচা লবণ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা বর্জন করা জরুরি। ক্যানজাত স্যুপ বা অন্যান্য খাবারেও প্রচুর সোডিয়াম থাকে। এই ধরনের খাবার পরিহার করতে হবে।

২. স্ট্রেস বা চাপ নিয়ন্ত্রণ: মানসিক চাপ বেড়ে গেলে রক্তচাপ হঠাত্ তীব্র হয়ে যেতে পারে,  স্ট্রেসের কারনে অন্য কিছু অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস, যেমন মদ্যপান বা ধূমপান, খাওয়া দাওয়ায় অনিয়ম, রাত জাগা ইত্যাদি ত্যাগ করা উচিত।

৩. শারীরিক ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত শারীরিক ওজন হূদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ-দুইয়েরই ঝুঁকি বাড়াতে পারে। খাদ্য তালিকায় চর্বিযুক্ত খাবার ও বাড়তি মিষ্টি জাতীয় খাবার কমিয়ে ফল, শাক-সবজি, আমিষ ও আঁশযুক্ত খাবার বাড়িয়ে শরীরের ওজন কমাতে হবে, এমনকি ১০ পাউন্ড  ওজন কমালেও রক্তচাপে সুনিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব।

৪. গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ: কারও কারও গর্ভাবস্থার দ্ব্বিতীয় ভাগে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। একে জেস্টেশনাল হাইপারটেনশন বলে। এই অবস্থা থেকে প্রি-এক্লাম্পশিয়া হতে পারে। এর ফলে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হতে পারে, মায়ের কিডনি ও মস্তিষ্কে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। কাজেই গর্ভাবস্থায় নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা খুবই জরুরী।

৫. উচ্চ রক্তচাপ উদ্রেককারী ওষুধ পরিহার: কিছু কিছু কফ সিরাপ, ব্যথানাশক, স্টেরয়েড, ডায়েট পিল, জন্মনিরোধক বড়ি ও বিষন্নতার ওষুধ খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। কাজেই চিকিত্সকের  পরামর্শ ছাড়া এসব ওষুধ সেবন করবেন না।

৬. খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন: ফলমূল, সবজি, কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার, মাছ, পোল্ট্রিজাত খাবার, বাদাম ইত্যাদি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন। গরু বা খাসীর মাংস, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, মিষ্টি এসব কম খাবেন।

৭.ব্যায়াম: একজন পূর্ণ বয়ষ্ক লোকের প্রতি সপ্তাহে ১৫০ মিনিটের মতো মাঝারি মাপের ব্যয়াম করা জরুরী। এটা যে কোন ধরনের কাজ যেমন বাগান করা, সাইকেল চালানো, হাঁটা বা অন্যান্য এ্যারোবিক এক্সারসাইজের মাধ্যমে করা যেতে পারে। হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন, স্বাস্থ্যোপযোগী জীবনযাত্রা মেনে চলুন।


লেখক:
ডাঃ শাগুফা আনোয়ার
জেনারেল ম্যানেজার বিজনেস ডেভেলপমেন্ট
এ্যাপোলো হসপিটালস ঢাকা 

Source: http://new.ittefaq.com.bd/news/view/148115/2012-11-01/24
Title: Re: নীরব ঘাতক: উচ্চ রক্তচাপ
Post by: Mohammed Abu Faysal on November 10, 2012, 09:52:39 AM
কোনও লক্ষণ উপসর্গ থাকেনা। রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার জন্য হূদযন্ত্রকে কঠোর শ্রম করতে হয়। শরীরের সর্বত্র রক্ত পাম্প করে ছড়িয়ে দিতে কষ্ট বাড়তে থাকে হূদযন্ত্রের। এদিকে শরীরের ক্ষতি হতেই থাকে অজান্তে। প্রেশার চেকআপ না করলে সব এরকম চলতে থাকলে পরিনতিতে এক সময় হতে পারে হার্ট এ্যাটাক বা স্ট্রোক। তবে সঠিক দেখভাল, ব্যবস্থাপনা করলে একে চিহ্নিত করা যায়। এবং সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। দেহের সর্বত্র রক্তকে ছড়িয়ে দিতে হূদযন্ত্রের যে বল প্রয়োগ করতে হয় প্রকারান্তরে তাই হলো রক্তচাপ।

রক্তচাপ অর্থাত্ কি পরিমাণ বল প্রয়োগ করে হার্ট পাম্প করছে এটি নির্ধারিত হয় কি পরিমাণ রক্ত হার্ট পাম্প করে এবং ধমনীতে রক্ত প্রবাহ কতটুকু বাঁধা পায় এদুটো বিষয়ের মাধ্যমে। হার্টকে যত সজোরে কাজ করতে হয় তত উচুতে থাকে রক্তচাপ। উচ্চ রক্তচাপের সচরাচর কিছু কারণও আছে। যেমন- বেশি বয়স, স্থূলতা এবং সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার। ঘনিষ্ট স্বজনদের যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তাহলে রক্তচাপের  সম্ভাবনা বেশি থাকে। মানসিক চাপ ও উচ্চ রক্তচাপ ঘটার পেছনে একটি কারণ হতে পারে। যাদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি আছে তারা যদি ধূমপান করেন তাহলে তাদের অবস্থা আরও শোচনীয় হতে পারে।

তবে উচ্চ রক্তচাপ একট উপসর্গ হিসেবে রোগীর কাছে উপস্থিত নাও হতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যা, আর তা হলো উচ্চ রক্তচাপের প্রায়শই কোনও লক্ষণ বা উপসর্গ থাকেনা। প্রথম উপসর্গটি তত ভালো নাও হতে পারে। কোনও কোনও লোকের মাধা ধরা থাকতে পারে। আবার মাথা ধরা অন্য কারণেও হতে পারে। কারো কারো দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে, কারো হতে পারে শ্বাসকষ্ট আবার কারো ব্যায়াম করতে গিয়ে কষ্ট-এমন সব উপসর্গ হতে পারে।

এভাবে উচ্চ রক্তচাপ চিহ্নিত না হয়ে থাকার পরিনতিতে অনেকের ক্ষেত্রে হতে পারে মারাত্মক। বেশ কিছু দিন উচ্চ রক্তচাপ সুপ্ত থেকে গেলে হূদযন্ত্র হতে পারে নিষ্ক্রিয় (হার্ট ফেইলিওর)। হার্ট এই বেশি চাপ, রক্ত সজোরে পাম্প করার ভার সইতে পারেনা। এক্ষেত্রে এই ভারকে কিছুটা কমাতে পারলে বেশ কাজ হয়।

অথচ উচ্চ রক্তচাপ আছে কি না তা জানা বেশ সহজ। আমরা যদি নিয়মিত রক্তের চাপ চেকআপ করি এবং বেশি রক্তচাপ পাই, তাহলে একে নিয়ন্ত্রণে আনা ও রাখা কঠিন কাজ নয়। ডাক্তারের কাছে নিয়মিত গেলেই তা সম্ভব। প্রথমে লাইফস্টাইল পরিবর্তন আনা এবং এতেও কাজ না হলে নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছে নানা রকমের কার্যকর ওষুধ।

ডাক্তাররা হয়ত ডাইইউরেটিকস দিয়ে শুরু করেন, যাকে বলা হয় (ওয়াটার পিল)। রেচক ওষুধ রক্তচাপ কমানের জন্য। প্রয়োজনে আরো ওষুধ যেমন- ওষুধ যা হূদঘাত হার একটু শ্লথ করতে সহায়তা করে। যেমন-বিটা-ব্লকারস বা ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকারস। যা কাজ করে ধমনীর চারপাশে বৃত্তাকার পেশীগুলোর উপর। ডাক্তাররা কখনও কখনও ব্যবহার করেন এনজিওটেনসিন-কনভারটিং এনযাইম ইনহিবিটারস, সংক্ষেপে বলা হয় এসিই ইনহিবিটারস। ফুসফুসে অবস্থিত সক্রিয় যে প্রোটিন ক্ষুদ্র রক্তনালীদের সংকুচিত করে রক্তচাপ বাড়ায় সেই প্রোটিনের উত্পাদন রোধ করে এই ওষুধ রক্তচাপ কমায়।

অনেকের প্রয়োজন হয় দুটো বা তিনটা ওষুধ। কারো চারটি ওষুধও লাগতে পারে। কারো কারো জীনগত প্রোগ্রাম এমন তালগোল পাকিয়ে যায় যে এদের রক্তচাপ বাগে আনা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে খাদ্যবিধি ও ব্যায়াম যত বেশি মেনে চলা যাবে তার ওষুধ লাগবে তত কম। রোগীর জন্য শ্রেষ্ঠ দাওয়াই হলো রোগ প্রতিরোধ। পারিবারিক চিকিত্সক, প্রয়োজনে কার্ডিওলজিস্টকে দিয়ে নিয়মিত চেকআপ করা চাই। উচ্চ রক্তচাপে চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হলো কিনা ও দৃষ্টি শক্তি পরীক্ষা করিয়েও তা জেনে নেওয়া উচিত।

যারা ডায়াবেটিস রোগী তাদের রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কিত জটিলতা যাতে এড়ানো যায়। এসবগুলো রোগ পরস্পর সম্পর্কিত, হূদরোগ ও স্ট্রোকের জন্য এটি হলো সবচেয়ে বড় ঝুঁকিগুলোর অন্যতম।


Ref: http://new.ittefaq.com.bd