তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের এই যুগে এসে গোটা বিশ্বের নিয়ন্ত্রণ যেন গ্রহণ করে নিয়েছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেট যেন গোটা পৃথিবীকে একটি সুতায় বেঁধে রেখেছে। তবে পৃথিবীর সীমানা পেরিয়ে এবার ইন্টারনেট যাত্রা শুরু করেছে পৃথিবীর বাইরেও। হ্যাঁ, গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে যোগাযোগ নিশ্চিত করতেও ইন্টারনেটের উপরেই নির্ভর করতে যে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন গবেষকরা, তা দেখল আলোর মুখ। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন থেকে একজন মহাকাশচারী ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীতে অবস্থিত একটি রোবটকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নির্দেশনা পাঠানোর মাধ্যমে এই আন্তঃগ্রহ ইন্টারনেটের যাত্রা শুরু হলো। ডিসরাপশন টলারেন্ট নেটওয়ার্কিং (ডিটিএন) প্রটোকল নামক পরীক্ষামূলক এই প্রযুক্তির মাধ্যমেই ভবিষ্যতে মঙ্গলগ্রহ বা মহাশূন্যের অন্যান্য স্থানে অবস্থানরত মহাকাশচারীদের সাথে যোগাযোগ করা হবে বলে আশা করছেন গবেষকরা। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইসা) এবং নাসা এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। গত মাসের শেষের দিকেই তারা পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন থেকে এক্সপেডিশন ৩৩ কমান্ডার সুনিতা উইলিয়ামস ডিটিএন প্রযুক্তিসমৃদ্ধ একটি ল্যাপটপ ব্যবহার করেন এবং এর মাধ্যমে জার্মানীর একটি রোবটকে নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা পাঠাতে থাকেন। আর রোবটটিও সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে থাকে। ইসা’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডিটিএন প্রযুক্তি মূলত পৃথিবীতে ইন্টারনেট ব্যবহারের যেসব প্রচলিত প্রটোকল রয়েছে, তার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তবে পৃথিবীর মধ্যে যে দূরত্বে কাজ করে এই প্রযুক্তি, তার চাইতে অনেক বেশি দূরত্বে কাজ করতে সক্ষম ডিটিএন। মহাশূন্য থেকে ইন্টারনেটের এই সিগন্যাল পৃথিবীতে আসতে গিয়ে নানাভাবে দেরি হয়ে যেতে পারে। সৌরঝড়ের কারণেও এই দেরি হতে পারে। আবার কোনো গ্রহের পেছনে স্পেসক্র্যাফট থাকলেও তা দেরি হতে পারে। এখন পর্যন্ত মহাশূন্য থেকে যেসব প্রযুক্তিতে তথ্য পাঠানো হয়, তাতে করে এসব দেরি হওয়ায় তথ্যগুলো সঠিকভাবে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। মঙ্গলগ্রহ থেকে পৃথিবীতে পাঠানো এমন অনেক তথ্যই হারিয়ে গেছে মহাশূন্যে। তবে ডিটিএন প্রযুক্তি ব্যবহার করায় আর এভাবে তথ্য হারিয়ে যাবে না। এই প্রসঙ্গে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে ইসা’র কিম নারগার্ড বলেছেন, ‘এটি মূলত বিশাল দূরত্বকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসে যোগাযোগের একটি প্রযুক্তি।’ ডিটিএন-এর এই প্রযুক্তির প্রাথমিক প্রস্তাব অবশ্য করা হয় প্রায় এক যুগ আগে। ইন্টারনেটের অন্যতম প্রবক্তা ভিনসেন্ট কার্ফ নিজেই এর প্রস্তাব রাখেন। ২০০৮ সালে প্রথম এটি নিয়ে একটি পরীক্ষা চালায় নাসা। এবারে এসে এটি মূলত সফল প্রযুক্তি হিসেবে গণ্য হতে যাচ্ছে।
(http://new.ittefaq.com.bd/uploads/news_image/2012-11-12_1352727440.jpg)
Ref: Ittafaq