Daffodil International University
Faculty of Humanities and Social Science => Journalism & Mass Communication => Topic started by: Md. Khairul Bashar on January 23, 2013, 12:32:58 PM
-
ফেসবুকে মেয়ের প্রোফাইল পিকচারে দেখা গেল যুগল একটি ছবি। সেই ছেলের সঙ্গেই কোনো রেস্তোরাঁয় মেয়েটিকে দেখে ফেললেন কোনো আত্মীয়। মেয়ের মুঠোফোন ঘাঁটতে না চাইলেও সন্দেহ আর চেপে রাখা গেল না। ইনবক্সের প্রায় সব মেসেজই এসেছে একটি বিশেষ নাম থেকে, মেসেজের ভাষাও আবেগপ্রবণ। মন না মানতে চাইলেও ব্যাপারটা সত্যি। আপনার মেয়ের জীবনে কেউ এসেছে। তার আবেগ-অনুভূতি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে সেই বিশেষ ছেলেকে ঘিরেই। এখন কী করবেন মা? মুঠোফোনটা কেড়ে নিয়ে ঘরবন্দী করে রাখবেন? নাকি ছেলেটির ঠিকানা জোগাড় করে তার বাড়িতে গিয়ে বকাঝকা করে আসবেন? হয়তো আপনার প্রথম প্রতিক্রিয়া তেমনই হবে। কিন্তু তা করলেন তো ভুল করলেন!
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সময়ের ছেলেমেয়েকে বকাঝকা করে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তাদের সঙ্গে মিশতে হবে বন্ধুর মতো। জীবনের নানা অলিগলি চিনিয়ে দিতে হবে। তবে কোন পথে সে হাঁটবে, সেই সিদ্ধান্ত কিন্তু তারই। এমন পরিস্থিতির আগেই মেয়ের সঙ্গে গড়ে তুলতে হবে বন্ধুর মতো সম্পর্ক যাতে সে আপনাকে গোপন করে কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়। কিশোর বয়সে মেয়েটির মধ্যে নিজস্ব মতামত দেওয়ার ক্ষমতা তৈরি হয়। সে যা দেখে, তা-ই ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে। বাইরের রূপই যে সব নয়, এটা সে বোঝে না। নিজের সম্পর্কটাকে তার খুব সুন্দর একটা সময় বলেই মনে হয়। ভবিষ্যতে কী হবে এটা নিয়ে সে চিন্তা করতে পারে না। মেয়ের এই সময়কার অনুভূতিটা মাকে বুঝতে হবে। কী করবেন তার আগে জানতে হবে কী করবেন না।
প্রথমত, সমালোচনা, চেঁচামেচি একদমই করা যাবে না। তাকে বাধা দেওয়াও ঠিক হবে না। তাহলে সে আপনার সঙ্গে লড়াই করতেই বেশি সময় ব্যয় করবে, সম্পর্কটার ভালোমন্দ তলিয়ে দেখার সুযোগ সে পাবে না। কিছুদিন পরে হয়ে তো সে নিজেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে সরে আসবে। এ সময় মাকে মাথা ঠান্ডা রেখে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পরিস্থিতি সামলাতে হবে। আবার বাধা না দিলেও তার স্বাধীনতার সীমারেখাটুকুও তাকে দেখিয়ে দিতে হবে। ছেলেটির সঙ্গে মেয়েটি কতটুকু মিশবে, তা যেন সে বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নেয়। যেমন তাকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না বলেই সে ছেলেটির সঙ্গে দূরে কোথাও বেড়াতে যেতে পারে না। দৃঢ় কিন্তু কঠিন নয়, এমন হবে মায়ের আচরণ। এমনটাই মনে করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মেখলা সরকার।এ নিয়ে আরও পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেম আর স্কুল পর্যায়ের প্রেম কি এক?
কোন বয়সের প্রেম আসলে মেনে নেওয়ার মতো? এ নিয়ে সমাজে একটা দ্বন্দ্ব তো আছেই। মাহবুবা নাসরীনের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়া একটি মেয়ের নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়। সে নিজের সঙ্গী বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিজে নিতেই পারে। সে ব্যাপারে মা-বাবার হস্তক্ষেপ করার তেমন কিছু নেই। তবে স্কুল বা কলেজে পড়া মেয়েটি কার সঙ্গে মিশছে, কী করছে, সেই খোঁজ অবশ্যই রাখতে হবে।
স্বামীকে কীভাবে বলবেন?
এটা নির্ভর করে পরিবারের গঠনের ওপর। যে পরিবারের বাবা খুব রাগী ও কর্তৃত্বপরায়ণ, তাঁকে মেয়ের প্রেমের ব্যাপারটা বললে বরং হিতে বিপরীত হতে পারে। আপনার স্বামী হয়তো শুনে রেগে যাবেন, চেঁচামেচি করবেন, তাতে মেয়ের জেদ আরও বেড়ে যেতে পারে। শুরুতে মা বরং ব্যাপারটি ভেবে দেখুন। মেয়ের সঙ্গে মা-বাবার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলে খোলাখুলি আলাপ করতে পারেন।
ছেলেটির বাড়িতে কি যোগাযোগ করবেন?
শুরুতে এটা করা একদমই ঠিক হবে না। অনেক মা-ই মেজাজ ঠিক রাখতে না পেরে মেয়ের অগোচরে ছেলেটিকে বকাঝকা করেন। এমনকি তার বাড়িতে গিয়ে নালিশও করে আসেন। এটা জানতে পারলে বরং মেয়ের সঙ্গে মায়ের সম্পর্কই খারাপ হয়ে যেতে পারে। তার বন্ধুর কাছেও সে ছোট হয়ে থাকবে। তাই প্রথমে ছেলেটির সঙ্গে যোগাযোগ না করাই ভালো। বরং মেয়েকে বলুন, ছেলেটির সঙ্গে আপনার পরিচয় করিয়ে দিতে। মনে রাখুন, সম্পর্কটা গড়েছে দুজন মিলেই। শুধু ছেলেটিকে একতরফা দোষারোপ করা উচিত নয়। যদি মনে হয় এই সম্পর্ক একটি সুন্দর পরিণতি পেতে পারে, ছেলেটির পরিবারও যদি আপনাদের মতোই হয়, তবে তার মা-বাবার সঙ্গে দুজনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলাপ করে রাখতে পারেন।
মেয়ে ভুল সঙ্গী নির্বাচন করলে কী করবেন?
এমনও হতে পারে, আপনি বুঝতে পারছেন, ছেলেটি আপনার মেয়ের জন্য একদমই উপযুক্ত নয়। সেটা আপনি বুঝলেও মেয়েটি আবেগপ্রবণ অবস্থায় বুঝতে পারছে না। সে ক্ষেত্রে সম্পর্ক ভাঙার কথা মেয়েকে বলা মোটেও ঠিক নয়। তাতে সে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। তাকে নিজের জীবনের নানা অভিজ্ঞতার কথা বলুন। ক্যারিয়ার, পড়াশোনায় বেশি মনোযোগ দিতে বলুন। একটা সময় হয়তো সে নিজেই নিজের ভুল বুঝতে পারবে।
ছেলেটির সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন হবে?
মেয়েটি তার পছন্দের ছেলেটিকে বাড়িতে এনে আপনার সঙ্গে পরিচয়ও করিয়ে দিল। আপনি কি তার সঙ্গে মেয়ের অন্য বন্ধুদের মতো মিশতে পারবেন? সেটা করাটাই আপনার আর আপনার মেয়ের জন্য সবচেয়ে ভালো। একজন অভিভাবকের মতো ছেলেটির সঙ্গে মিশুন। তাকে যতটা সম্ভব পরামর্শ দিন, সাহায্য করুন। তাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে দেখার কোনো প্রয়োজন নেই।
Source: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-01-23/news/323543