Daffodil International University
Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Quran => Topic started by: arefin on January 25, 2013, 06:49:03 PM
-
‘বলো, আমি আশ্রয় চাই ভোরের প্রতিপালকের কাছে’, ‘সমস্ত সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে’, ‘নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের ক্ষতি থেকে’, ‘সেই জাদুকরীর নিরবচ্ছিন্ন জাদুর প্রভাব থেকে’, ‘ঈর্ষা পরায়ণের ঈর্ষা থেকে’ (সূরা ফালাক, আক্ষরিক অনুবাদ নয়)।
ফালাক মানে ভোর, ঊষালগ্ন।
কুচকুচে কালো মেঘে ঢাকা আকাশ যখন অন্ধকারের ওপর অন্ধকার বিছিয়ে এতোটাই ঘন হয়ে আসে যে তা বুকের ওপর চেপে বসে, যখন মনে হয় কোনোদিন এই অন্ধকার কাটবেনা, যখন আলো না দেখতে দেখতে চোখ দু`টো দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে কিনা তাই নিয়েই সন্দেহ হতে থাকে, যখন অন্ধকারের শক্তিমত্তা আমার ভেতর বাইরের সব আলো শুষে নিয়ে তমসার প্রলয় নাচন নাচতে থাকে উন্মত্ত আস্ফালনে, তখন আমার প্রতিপালক আমাকে কানে কানে বলেন, "আশ্রয় চাও, সেই প্রতিপালকের কাছে, কুয়াশা পেরিয়ে মেঘের শঙ্কা কাটিয়ে রূপালি আলোর আল্পনা আঁকেন যিনি!"
ভোরের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি মনে করিয়ে দেন আমাকে বিশাল এক আকাশের কথা, যার এতো এতো কালি গোলা আঁধার নেই হয়ে গেছে সূর্যের সামান্য সম্ভাবনায়।
রূপালি আলো দিয়ে যেদিনের সূত্রপাত, নরম হলুদ থেকে আস্তে আস্তে মিষ্টি লালচে আভা, তারপর এক এক করে তীব্র কমলা তেজোদ্দীপ্ত সে রোদের কথাও মনে পড়ে `ফালাক` শব্দের উত্থাপনে। ফালাক- অন্ধ কালোর গর্ভ ফুঁড়ে এক নতুন কিছু সৃষ্টির নাম ফালাক।
আমার প্রতিপালক আমায় জানান, সৃষ্ট জগতে কতো রকমের বিপদই না হতে পারে! বন্যা, ঝড়, ভূমিকম্প, পাহাড় ধস, আগুন শুধু নয়, জলবায়ু পরিবর্তন, অন্য গ্রহের আকর্ষণ বলয়ের কাছাকাছি আসা, শক্তির খনিজ উৎস ফুরিয়ে আসা, এতোসব বিপদ থেকে উত্তরণে আশ্রয় চাও তাঁর কাছে, যাঁর নির্দেশিত নিয়মে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড চালিত হয়। সড়ক দুর্ঘটনা, ডাকাতি, দুর্নীতিসহ মানুষের দ্বারা সৃষ্ট সব বিপদের থেকে আশ্রয় চাও তাঁরই কাছে। তিনিই সৃষ্টি করেন, নিয়ন্ত্রণ করেন, প্রতিপালনও কেবল তাঁরই পক্ষে সম্ভব।
বিপদ মানেই হতাশা, ভয়। সমস্যায় পড়লে কেউ কেউ আক্ষরিক অর্থেই চোখে অন্ধকার দেখেন। অন্ধকারের সঙ্গে নিরাশা, আর আলোর সঙ্গে সম্ভাবনার এই উপমা সবাই জানেন। আল্লাহ বলেছেন, অন্ধকার যখন গাঢ় হয়ে আসে, তখনকার অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাইতে। আমি নিশ্চিত, প্রত্যেকেই এমন এক সময়ের কথা মনে করতে পারবেন, যখন মনে হয়েছে চারপাশের জানালাগুলো একটা একটা করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, পাশে থাকা মানুষগুলো সরে যাচ্ছে, দেয়ালটা ক্রমশ চেপে আসছে, পিষে ফেলবে যেন বুকের পাঁজর, মাথার খুলি, বুদ্ধিবৃত্তি ও হৃদয়বৃত্তির এই হোক শেষ, তখন পরিপার্শ্বের ক্ষতির পাশাপাশি মনেও যে বড়সর ক্ষতের সৃষ্টি হয়- তার সমস্ত প্রভাব থেকে আশ্রয় চাইতে বলেছেন আল্লাহ সূরা ফালাকের মাধ্যমে।
আল্লাহ জানেন, ঈর্ষা, দ্বেষ, ঘৃণার অনুভূতি কতো প্রলয়ংকরী হতে পারে। প্রচণ্ড বিদ্বেষ কীভাবে যেকোনো ধরনের অনিষ্ট করাকে সহজ করে দেয়। কীভাবে আবেগ নষ্ট করে দেয় যুক্তিবোধকে। কীভাবে ঘৃণা বদলে যায় হিংস্রতায়। আল্লাহ জানেন, তাঁর প্রিয় বান্দা, রাসুলুল্লাহ (সা.) আলোর আহ্বান ছড়াতে গিয়ে কদর্যতার সবটুকুই দেখবেন। যে মানুষটি সবার কাছে উত্তম চরিত্রের জন্য প্রশংসিত ছিলেন, সবার বিশ্বাসের পাত্র ছিলেন, মুহূর্তে তিনিই হয়ে গেলেন উপহাসের বস্তু। শরীরের ওপর আঘাত, চরিত্রের ওপর আঘাত, এমনকি তাঁর সন্তানের মৃত্যুও তাদের জন্য আরো এক নতুন হাস্যরসের জোগান দিয়েছিল।
আল্লাহ শিখিয়ে দিয়েছেন, মানুষের মনের অন্ধকার থেকে আশ্রয় চাইতে সেই প্রতিপালকের কাছে, যিনি সমস্ত আলোর উৎস। শুদ্ধ আলো উৎসরিত হয় যে স্বত্ত্বা থেকে- তিনিই পারেন হতাশার অন্ধকার, হিংসার অন্ধকার, অন্যায়ের অন্ধকার, বিপদের অন্ধকারকে দূর করতে। নিজ আলোর মহিমায় আল্লাহই কেবল পারেন জমাট বাঁধা অন্ধকার ঘোচাতে।
-
thanks for such a good information...