Daffodil International University

Career Development Centre (CDC) => Job Satisfaction & Skills => Career Guidance => Be a Leader => Topic started by: Narayan on March 24, 2013, 03:30:12 PM

Title: Let started by small initiative
Post by: Narayan on March 24, 2013, 03:30:12 PM
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যে কজন সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশ করে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন মার্ক টালি তাঁদের অন্যতম। ব্রিটিশ সাংবাদিক মার্ক টালি ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। বিবিসির সাংবাদিক হিসেবে তিনি প্রায় তিন যুগ ভারতে কাজ করেছেন। তিনি ভারতের পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ ও ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক নাইট উপাধি লাভ করেন। বাংলাদেশ সরকার ২০১২ সালে তাঁকে ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার’ সম্মাননা প্রদান করে। ২০১১ সালের ৮ ডিসেম্বর তিনি ভারতের ইনস্টিটিউট অব স্মল এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে এই বক্তব্য দেন।

প্রিয় বন্ধুরা, সবাইকে স্বাগত ও শুভেচ্ছা। আমি খুবই আনন্দিত আজ এখানে আসতে পেরে। আমি আসলেই ভাগ্যবান। এই সুযোগটাও কিন্তু দারুণ। আমি এই বিকেলের সময়টাতে তোমাদের মতো আগামীর যোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাব। আমি প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ ই এফ শুমাখারের ‘ক্ষুদ্রতেই সৌন্দর্য’ ধারণাকে বেশ পছন্দ করি। বিন্দু বিন্দু জলে বিশাল সিন্ধুর সৃষ্টি, তাই নয় কি? আমার মনে হয়, স্রষ্টা আমাদের সবাইকে সমতা দিয়ে তৈরি করেছেন। কে বড়, কে ক্ষুদ্র তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এ ধরনের একটা কথাই অর্থনীতিবিদ ই এম শুমাখার আমাদের শিখিয়েছেন। ‘অর্থনীতির মূলে থাকবে মানুষ’—ক্ষুদ্র মানুষই গড়ে তুলবে বৃহৎ অর্থনীতি।
আমার সীমিত পড়াশোনায় এই মহৎ ধারণাকে ব্যাখ্যা করতে চাই। যদিও আমার সামনে বিখ্যাত সব অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা আছেন, তার পরও আমি একটু নবিশ হিসেবে সাহস দেখাতে পারি। আমি ভারতবর্ষে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার মাহাত্ম্য সব সময়ই আলাদা। আমি কিন্তু এ জন্য বৃহৎ উদ্যোগকে খাটো করে দেখছি না। বিশাল আকারের ব্যবসা বা কর্মকাণ্ডকে আমি বিপজ্জনক বলছি না। কিন্তু ক্ষুদ্র উদ্যোগের মধ্যেই আমি সৌন্দর্য দেখতে পাই। বিন্দু বিন্দু উদ্যোগেই সৃষ্টি হয় সিন্ধুসম কল্যাণ। বৃহৎ প্রচেষ্টার মাঝপথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় সরকারি নিয়মকানুনের জাল। যেকোনো উদ্যোগের মাঝপথ সব সময় গুরুত্বপর্ণূ। পথের মাঝে এসে দাঁড়ালে দেখা যায়, আপনি সফলতা থেকে কত দূরে দাঁড়িয়ে।
ব্যবসা ও অর্থনীতিতে বিন্দুর গুরুত্ব কী হতে পারে? বিন্দুসম ক্ষুদ্র উদ্যোগে আপনি সরাসরি অনেক মানুষকে একত্র করতে পারেন কিন্তু! ক্ষুদ্র উদ্যোগের ফলাফল খুব দ্রুতই দেখা যায়। এ ধরনের কাজে মানুষের সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ থাকে অতিমাত্রায়। যাঁরা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাঁদের মনেও থাকে অংশগ্রহণের সুখ। অপরদিকে বড় বড় ব্যবসাগুলোতে মানুষের অংশগ্রহণ তার মনে তেমন অনুভূতি সৃষ্টি করে না বললেই চলে।
আমি যখন বিবিসিতে যোগদান করি, বিবিসির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজের ক্ষেত্র হিউম্যান রিলেশন্স ডিপার্টমেন্টে কাজ শুরু করি। কাজের শুরুর দিকেই আমি প্রচণ্ড রকমের ধাক্কা খাই। আমি দেখলাম বিবিসি তার অধিকাংশ কাজই নিজে করে না! আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বিবিসি তার কাজ অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। যার জন্য বিবিসিতে হিউম্যান রিলেশন্স ডিপার্টমেন্টকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। এই বিভাগের মাধ্যমেই তো সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়। যদি কোনো কারণে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন কী হবে?
আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এখন যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে আলোচিত ইস্যু। কারণটা বোধ হয় আমি জানি। অঞ্চলভিত্তিক অর্থনীতিতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে বেশি। সাধারণ মানুষকে কেন্দ্রবিন্দু ধরেই এ ধরনের অর্থনৈতিক ধারণাকে জোর দেওয়া হয়। এ ধরনের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষুদ্র উদ্যোগের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পারস্পরিক যোগাযোগ ও স্থিতিশীলতা আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ। বড় বড় ব্যবসার ক্ষেত্রে পারস্পরিক যোগাযোগকে তেমন গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয় না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা মানুষ মাত্রই পারস্পরিক যোগাযোগ ও ভ্রাতৃত্ববোধে উদ্বুদ্ধ। আঞ্চলিক অর্থনীতিতে পারস্পরিক যোগাযোগ ও সহযোগিতার মাত্রা ও প্রকৃতি বৃদ্ধি পেলে অন্য এলাকার পণ্য কেনই বা কিনবে মানুষ। এ জন্যই যৌক্তিক কারণে আঞ্চলিক অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র উদ্যোগ-ব্যবসা পারস্পরিক যোগাযোগের ওপর নির্ভর করেই বিস্তার লাভ করে। অনেকগুলো ক্ষুদ্র উদ্যোগ মিলেই তৈরি হয় বৃহত্তর অর্থনৈতিক সমাজব্যবস্থা।
বর্তমান সমাজব্যবস্থায় গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসনের হার একটি ভয়াবহ প্রতিবন্ধকতা। উন্নয়ন ব্যবস্থাপনায় পারস্পরিক যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ বিধায় ক্ষুদ্র উদ্যোগ কিন্তু এই অভিবাসন হ্রাস করে। এটা কিন্তু আমার কথা নয়, অহিংস আন্দোলনের প্রদর্শক মহাত্মা গান্ধীই আমাদের এই কথা জানিয়েছেন।
ক্ষুদ্র উদ্যোগ ও আঞ্চলিক অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্ক কোথায়? ক্ষুদ্র উদ্যোগ এমনই এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, যেখানে ব্যক্তি পরিপূর্ণভাবে নিজেকে কাজে লাগাতে পারে। পরিশ্রমই পুরস্কার নির্ধারণ করে দেয়। আমাদের অর্থনীতিবিদেরা মাঝেমধ্যে ক্ষুদ্র উদ্যোগ নিয়ে বাঁকা কথা বলেন। কেন বলবেন না! তাঁদের মনোযোগ থাকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর। ক্ষুদ্র উদ্যোগনির্ভর অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাত্রা সন্ধানে সচরাচর ব্যর্থ হন আমাদের অর্থনীতিবিদেরা। যার কারণে তারা একটু হতাশই বলা চলে। ক্ষুদ্র উদ্যোগ নির্ভর অর্থনীতিতে শতকরা হার বৃদ্ধি, প্রচলিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সূচকের পরিবর্তন না ঘটলেও সাধারণ মানুষের জীবনমানে আসে নজরকাড়া পরিবর্তন। আমাদের উচিত এ ধরনের প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি জানানো। আমরা এ ক্ষেত্রে ভুটানের সফলতার কথা উদাহরণ হিসেবে ধরতে পারি। ক্ষুদ্র অর্থনীতিনির্ভর উন্নয়নের বিকাশ আকারে ক্ষুদ্র দেশ ভুটানে লক্ষণীয়। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, ভুটানে নেই কোনো প্রচলিত মোট জাতীয় উৎপাদন বা জিডিপি সূচকমান। তারা কোন সূচক ব্যবহার করে জানো তোমরা? জিএনএইচ! যার অর্থ গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস বা মোট জাতীয় তৃপ্তি বা সুখের সূচক! কী ক্ষুদ্র বিন্দুতেই সুখ, তাই না!
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিভিন্ন সূচক কখনোই মানুষকে কাজে মনোযোগী করে তোলে না। এ ধরনের প্রবৃদ্ধির পেছনে কাজ করে লোভ-লালসা। লোভ-লালসার কারণেই অসুখের সৃষ্টি—সুখের বিলোপ, আমাদের হা-হুতাশ। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলো ভিন্ন কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি যেখানে মানুষ বুঝতে পারে—না সে কিছু করছে, তার অবদান আছে। ক্ষুদ্র উদ্যোগই বৃহত্তর স্বার্থে ব্যাপক কাজ করতে পারে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাই পারে পৃথিবী বদলে দিতে। আমার প্রত্যাশা তোমাদের ক্ষুদ্র উদ্যোগ সফলতা লাভ করবেই। কারণ, ক্ষুদ্রতেই সিন্ধুসম সৌন্দর্য বিরাজমান।


courtesy: Prothom-alo