হালখাতা কী?
(http://paimages.prothom-alo.com/resize/maxDim/340x1000/img/uploads/media/2013/04/11/2013-04-11-17-49-19-5166f79fafd07-untitled-26.jpg)
বাংলা নববর্ষকে উৎসব হিসেবে পালন শুরু হয় আকবরের সময় থেকেই। ওই সময় নববর্ষ পালিত হতো ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে। এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কৃষিকাজের, আর কৃষিকাজ হলো ঋতুনির্ভর। সে সময় বাংলার কৃষকেরা চৈত্র মাসের শেষ দিন অবধি জমিদার, তালুকদার ও অন্য ভূস্বামীদের খাজনা শোধ তাঁদের। পরদিন নববর্ষে ভূস্বামীরা তাঁদের মিষ্টিমুখ করাতেন। এ উপলক্ষে তখন মেলা ও অন্যান্য আয়োজন করা হতো। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত পয়লা বৈশাখ পালন হতো খাজনা আদায়ের উৎসব হিসেবে। পরে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে দিনটি হয়ে ওঠে আনন্দময় এক উৎসব। নববর্ষ পালিত হতে থাকে শুভদিন হিসেবে।
জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। এটা ছিল পুরোপুরিই ব্যবসায়িক ব্যাপার। ব্যবসায়ীরা তাঁদের পুরোনো হিসাবপাতি সম্পন্ন করে নতুন হিসাবের খাতা খুলতেন। এ অনুষ্ঠানের নাম ছিল হালখাতা (নতুন খাতা)। হালখাতা উপলক্ষে তাঁরা নতুন-পুরোনো খদ্দেরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টিমুখ করাতেন ও নতুন করে তাঁদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন করতেন। চিরাচরিত এই উৎসব আজও ভারতের কলকাতা আর বাংলাদেশের গ্রাম এলাকায় প্রচলিত আছে।
কালে কালে নববর্ষের সঙ্গে জড়িত হয়েছে আনুষঙ্গিক বিষয়। সেসবের বেশির ভাগই হারিয়ে গেলেও কোনো কোনোটি অঞ্চলবিশেষে টিকে আছে। হারিয়ে যাওয়া এমন একটি অনুষ্ঠান হলো পুণ্যাহ। পুণ্যাহ ছিল বাংলার খাজনা আদায়ের বার্ষিক বন্দোবস্তের একটি উৎসব। এটি কবে থেকে শুরু হয়েছিল, তা সঠিকভাবে জানা যায় না। তবে ইংরেজ শাসনামলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বিলুপ্ত হওয়ার আগ অবধি এ অনুষ্ঠান চালু ছিল। এ দিন প্রজারা ভালো পোশাক পরে জমিদারের কাচারিতে যেতেন খাজনা-নজরানা দিতে।
মৃদুল চৌধুরী
Source: http://prothom-alo.com/detail/date/2013-04-12/news/344282