Daffodil International University
Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Hadith => Topic started by: arefin on April 23, 2013, 07:39:58 PM
-
এ বিশ্ব ভূমণ্ডলে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য পানির বিকল্প নেই। শুধু বেঁচে থাকা নয়, বরং আল্লাহ পাক যে ইবাদতের মহান উদ্দেশে আমাদের সৃষ্টি করেছেন সেটি তার কাছে গৃহীত হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত হলো পবিত্রতা।
পবিত্রতার প্রথম উপকরণ হচ্ছে পানি। আর তাই মানুষ হিসেবে পানি শুধু আমাদের জীবনধারণের জন্য নয়, বরং প্রকৃত মুসলমান হতেও পানির গুরুত্ব অপরিসীম।
আজকের পৃথিবীতে কল-কারখানার উৎপাদন এবং নানা কারণে পানি দূষিত হচ্ছে- পাশাপাশি আমরাও দিনদিন এ অমূল্য নেয়ামতের সঠিক ব্যবহার এবং সংরক্ষণ থেকে উদাসীন হয়ে যাচ্ছি। আজকের বিশ্ব পানি দিবসে শুধু একদিনের জন্য পানি বিষয়ক সচেতনতা নয়, বরং চৌদ্দশ’ বছর আগে থেকেই ইসলাম আমাদের এ মহান নেয়ামতের গুরুত্ব মনে করিয়ে দিয়ে এর ব্যবহারে নির্দেশনা দিয়ে আসছে।
আল্লাহ পাক যখন এ আকাশ-মাটি সৃষ্টি করলেন এবং তারপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করতে চাইলেন তখন প্রথমেই তিনি পানি সৃষ্টি করলেন। এ পানির মধ্যেই তিনি মানুষ এবং সমস্ত সৃষ্টজগতের প্রাণের সূচনা করেছেন। সূরা আম্বিয়ার ৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেন, ‘‘আর আমি তো পানি থেকেই সব প্রাণবান বস্তুকে সৃষ্টি করেছি’’।
যেসব নেয়ামত ছাড়া এ ভূমণ্ডল অস্তিত্বহীন হয়ে যেতে পারে সেগুলোর মধ্যে পানি অন্যতম। এ মহান নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে সর্বমোট ৪৬ বার পানির কথা উল্লেখ করেছেন।সূরা নাহল এর ১০ ও ১১ নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেন, ‘‘তিনিই তো আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তা তোমাদের জন্য পানীয়। এ থেকেই উদ্ভিদসমূহের জন্ম হয়, যেগুলোতে তোমরা পশুচারণ করে থাকো’’।
সূরা ক্বাফ এর ৯ নং আয়াতে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি আকাশ থেকে বরকতময় বারিধারা বর্ষণ করি এবং তা থেকে বাগান এবং তরতাজা শস্য সৃষ্টি করি’’। সূরা বাকারার ১৬৪ নং আয়াত এবং সূরা রূমের ২৪ নং আয়াতেও তিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি নামা এবং তারপর পানির ছোঁয়ায় বিশ্ব প্রকৃতির সজিবতাকে তার নেয়ামত হিসেবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
সূরা আরাফ ৫১ নং আয়াতে মহান আল্লাহ পাক পানিকে জান্নাতবাসীদের জন্য নেয়ামত এবং পানির অভাবকে জাহান্নামবাসীদের জন্য শাস্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আবার পানির মাধ্যমেই তিনি অবাধ্য অনেক জাতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার ঘটনা আমাদের জন্য শিক্ষণীয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন সূরা হুদের ৩৯ থেকে ৪৪ নং আয়াত পর্যন্ত। সূরা বাকারার ৬০ নং আয়াতে আল্লাহ পাক আমাদের আদেশ করেছেন, ‘‘তোমরা আল্লাহর রিজিক থেকে খাও এবং পান করো কিন্তু পৃথিবীর বুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে না’’। তিনি বারবার তার নেয়মাতসমূহ অপচয় করা থেকে আমাদের নিষেধ করেছেন। অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আমাদের দেশ এবং বর্তমান পৃথিবীর গবেষকরা সুপেয় পানির ক্রমবর্ধমান অভাব এবং দূষিত পানির পরিমাণ বৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কিত- অথচ এসবের মূলে রয়েছে দৈনন্দিন জীবনে পানি ব্যবহারে আমাদেরই অপচয় এবং উদাসীনতা। বর্তমান আধুনিক পৃথিবীতে পানির জন্য এ হাহাকার তো আমাদেরই কর্মফল।
প্রিয়তম রাসূল (সা.) বিভিন্ন হাদীসে পানি পান করার আদব শিখিয়েছেন। এগুলো শুধু সুন্নত নয়, বরং এর প্রতিটিতে নিহিত রয়েছে আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিধান। মুসলিম শরীফের হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘‘তোমার পানির পাত্রকে ঢেকে রাখো এবং বাসনগুলোকে উল্টে রাখো’’। আরেক হাদীসে তিনি পানির বড় পাত্র থেকে সরাসরি মুখ লাগিয়ে গড়গড় করে পান করতে নিষেধ করেছেন। বরং ছোট গ্লাস বা পেয়ালায় ঢেলে তারপর দেখে পান করতে শিখিয়েছেন।
নাসাঈ এবং ইবনে মাজাহ শরীফে বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা.) খাওয়া ও পান করা এবং কাপড় পরাসহ দান সদকায়ও অপচয় করতে নিষেধ করেছেন। একদিন সাহাবী হযরত সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস (রা.) বসে ওজু করছিলেন এবং ওই সময় রাসূল (সা.) তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তার পানির ব্যবহার দেখে রাসূল (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘এতো অপচয় কেন? সাহাবী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, অজুর মধ্যেও কি অপচয় হয়? রাসূল (সা.) বললেন, হ্যাঁ, এমন কি প্রবাহিত নদীর পাশে বসেও অজু করার সময় (পানি অযথা খরচ করলে অপচয় হিসেবে গোনাহ হবে)। (ইবনে মাজাহ)
কিয়ামতের মাঠে যেদিন সব নেয়ামত সম্পর্কে একে একে হিসাব চাওয়া হবে সেদিন কিন্তু বাদ যাবে না পানির কথাও। সামান্য কয়েক ফোঁটা পানির অপচয় আমাদের কাছে আজ খুব বড় গোনাহ মনে না হলেও মহান শক্তিমানের নিয়োজিত ফেরেশতারা সব লিখে রাখছেন। তাই পানি ব্যবহারে আমাদের সজাগ সচেতনতা শুধু বিবেকের দাবি নয়, বরং আমাদের ঈমান ও আমলের জন্যও তা অপরিহার্য। আসুন, এ মহান নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের পাশাপাশি এর হেফাজতেও আমরা উদ্যোগী হই।