Daffodil International University
General Category => Common Forum => Topic started by: Nahian Fyrose on June 07, 2013, 02:20:20 AM
-
দুই দশক আগেও বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা এত উন্নত ছিল না। ছিল না এত রোগ নির্ণয়কারী অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্র। তখন রোগ নির্ণয় করা হতো অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু কিছু নমুনা ও উপসর্গের ওপর ভিত্তি করে। আর এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোগ নির্ণয়কেই বলা হয় প্রাকৃতিক উপায়ে রোগ নির্ণয়।আমারা প্রতিদিন ছুটছি ডাক্তার দের কাছে আর নানান টেস্ট এর জন্য গুনতে হছে শত শত টাকা ।মধ্যবিত্ত আর দরিদ্র মানুষের জন্য এই কাজ টা অনেক কষ্টকর ।ডাক্তার আলমগির মতি তুলে ধরেছেন কিভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে রোগ নির্ণয় করা যায় ।
ডায়াবেটিস
অতি প্রাচীনকাল থেকে আজ অবধি মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মূলত রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া হচ্ছে ডায়াবেটিস । ইনসুলিন নামক হরমোনের উৎপাদনের সমস্যা অথবা ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ করতে না পারার কারণে এটি হতে পারে।
ডায়াবেটিস নির্ণয় করা হয় বেশ কিছু উপসর্গ ও লক্ষণের ভিত্তিতে। বারবার পানির পিপাসা ও মুখ শুকিয়ে যাওয়া, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, শরীর দুর্বল লাগা, ওজন কমে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া এবং সকালের প্রথম প্রস্রাব একটি স্বচ্ছ পাত্রে রেখে রোদে দিলে যদি ৪ ঘণ্টার মধ্যে তলানি (প্রায় ৭০ ভাগ) জমে, তবে বুঝতে হবে এটি ডায়াবেটিস ইনসিপিডাসের লক্ষণ।
খোলা জায়গায় প্রস্রাব করলে পোকামাকড়ের প্রস্রাবের কাছে আনাগোনা। বিশেষ করে পিপীলিকা জাতীয় প্রাণীর আসা, ডায়াবেটিস মেলিটাস নির্দেশ করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেÑ তেলাকুচা, তুলসী, করলা, জারুল, মেথি, মেহগনি, নয়নতারা, ডুমুর, জামবীজ ইত্যাদি অত্যন্ত উপকারী এবং কার্যকরভাবে ফলপ্রদ।
জন্ডিস
আসলে জন্ডিস কোনো রোগ নয়, রোগের লক্ষণ, তবুও আমরা প্রচলিত ভাষায় জন্ডিসকে রোগ হিসেবেই মূল্যায়ন করি। জন্ডিস কোনো জীবাণুর সংক্রমণ অথবা শারীরিক সমস্যার কারণে হতে পারে। এ রোগে রক্তে মোট বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে যায়।
জন্ডিসের ক্ষেত্রেও নানা উপসর্গ পরিলক্ষিত হয়, যেমন শরীর ফ্যাকাসে হলুদ হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবের রঙ হলুদ হয়ে যাওয়া, শরীর খুব ক্লান্ত লাগা, চোখের রঙে হলদে ভাব আসা, চর্বিজাতীয় বা গুরুপাক জাতীয় (বিরিয়ানি, কাবাব, কোর্মা, টিকিয়া, ফাস্টফুড ইত্যাদি) খাবার খাওয়ার পর পেট ব্যথা এবং হজম না হওয়া, জিহ্বার রঙ হলুদাভ হয়ে যাওয়া, খাবারে অরুচি দেখা দেয়া। এসব উপসর্গ থাকলে রোগীকে প্রচুর পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে। এ ছাড়া ভূঁই আমলা, অর্জুন ছালের গুঁড়া, কালোমেঘ ও ঘৃতকুমারীর রস সকাল-বিকাল খেলে জন্ডিস নিরাময় হয়। পেঁপে, কলা, স্যুপ, বিভিন্ন ফলের জুস এবং দই জন্ডিস রোগীর জন্য খুবই উপকারী।
গ্যাস্ট্রাইটিস বা পাকস্থলীর প্রদাহ
সাধারণত সঠিক সময়ে খাবার না খাওয়া, ভেজালযুক্ত খাবার খাওয়া, গুরুপাকজাতীয় খাবার খাওয়া এবং অতিরিক্ত ভোজন গ্যাস্ট্রাইটিস রোগের কারণ। খাবারে বেশি পরিমাণে মসলা ও তেলের ব্যবহার গ্যাস্ট্রাইটিস সৃষ্টি করে। এর উপসর্গগুলো হলোÑগলা ও বুক জ্বালাপোড়া করা, টক টক ঢেঁকুর ওঠা, বমি বমি ভাব ও বমি করা, খাবার আগে বা পরে পেটে ব্যথা করা, পেট ফেঁপে যাওয়া ইত্যাদি।
টকজাতীয় খাবার এসিডিটি বৃদ্ধি করে। এসব উপসর্গযুক্ত রোগীদের নিয়মিত সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া এবং অতিরিক্ত তেল বা চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করা বাঞ্ছনীয়।
পেপটিক আলসার
দীর্ঘদিন গ্যাস্ট্রাইটিস থাকলে তা কালক্রমে পাকস্থলী ও অন্ত্রে ক্ষতের সৃষ্টি করে। আর সেই ক্ষতকেই আমরা পেপটিক আলসার অথবা ডিওডেনাল আলসার বলি। পেপটিক আলসার রোগীদের ক্ষেত্রে নিচের উপসর্গগুলো লক্ষ করা যায়, খাবার আগে বা পরে প্রচন্ড পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব এমনকি মাঝে মাঝে বমি হওয়া, খাবারে অরুচি, পেট ফাঁপা, পেট থেকে পিঠ পর্যন্ত ব্যথা, মলের রঙ পরিবর্তিত হয়ে যাওয়া (কালচে রঙের মল হতে পারে)।
গ্যাস্ট্রাইটিস ও গ্যাস্ট্রিক আলসারে আমলকী, হরতকী, বহেড়া, ষষ্ঠিমধু, খয়ের, মঞ্জিষ্টা, হলুদ, আদা, গোলমরিচ, ইসপগুল, বাবলাগাম ইত্যাদি খুবই কার্যকর।
মূত্রনালীর সংক্রমণ ও যৌন রোগ
সাধারণত বাংলাদেশে নিসেরি, গনোকক্কাস, ইকলি, বিকলি ইনফেকশন ও জীবাণু গঠিত সংক্রমণের মধ্যে মূত্রনালীর সংক্রমণ ও যৌন রোগ অন্যতম। বিশেষ করে ১৫ থেকে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত এই সংক্রমণের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। মূত্রনালী সংক্রমণে নিম্নোক্ত উপসর্গ লক্ষ করা যায়, একটু পরপর প্রস্রাবের বেগ পাওয়া এবং ধীরগতিতে প্রস্রাব নির্গত হওয়া, প্রস্রাব করার সময় মূত্রনালীতে ব্যথা ও জ্বালাপোড়া, প্রস্রাবের রঙ গাঢ় বাদামী হওয়া, প্রস্রাবের সাথে রক্ত গেলে প্রস্রাবের রঙ লালচে হওয়া, দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব ইত্যাদি।
যদি কোনো নারীর যৌনরোগবাহিত সংক্রমণ হয় তবে তার যৌনাঙ্গ দিয়ে স্রাব ও পুঁজ নিঃসৃত হওয়া, চুলকানি, দুই নালে প্রস্রাব বের হওয়া, জ্বর হওয়া ও বমি বমি লাগা, এমনকি বমি হওয়া, তলপেটে ও ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেবে।
মূত্রনালীর সংক্রমণ প্রতিকারে গুরকাটা, পাথরকুচি পাতা, গুলঞ্চ, নিম তেল, শ্বেত চন্দন ইত্যাদি খুবই কার্যকর।
হৃদরোগ
স্থূলতা, হাইপারটেনশন, হাইপার কোলেস্টেরলেমিয়া, ডায়াবেটিস, জন্মগত বা বংশগত ত্রুটি, ইত্যাদির কারণে হৃদরোগ হয়ে থাকে। হৃদরোগের উপসর্গগুলো হলো, বুকে ব্যথা (মনে হবে কেউ সূচালো সুই দিয়ে হৃদপিন্ডে খোঁচা দিচ্ছে), নাড়ির গতি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, শ্বাস-প্রশ্বাসে অস্বাভাবিকতা শরীরের রং ধূসর বা নীলাভ হয়ে যাওয়া, চোখের চারপাশ ফুলে যাওয়া, অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন ইত্যাদি।
এ ধরণের উপসর্গ দেখা দিলে রোগীকে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে। রসুন, পেঁয়াজ, মাছ, জলজ উদ্ভিদ, বাদাম, কালোজিরার তেল, জয়তুন তেল, সূর্যমুখীর তেল, অর্জুন ছাল, ডালিম, সয়া প্রোটিন, স্ট্রবেরি, গোলাপ ইত্যাদি হৃদরোগ প্রতিরোধে উপকারী। গুরুপাকজাতীয় খাবার (বিরিয়ানি, টিকিয়া, কাবাব, ফাস্টফুড) লাল মাংস, কলিজা, চিংড়ি, ইলিশ মাছ ইত্যাদি খাদ্য শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে বিধায় এগুলো পরিত্যাজ্য।
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সঠিক রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের যথেষ্ট অভাব রয়েছে এবং একই সাথে রোগ নিরাময় কেন্দ্রের খরচও অনেক।
দেশের বেশির ভাগ মানুষই যেখানে গরিব এবং তিনবেলা খাবার জোটানোই তাদের জন্য কষ্টকর, সেক্ষেত্রে তাদের রোগ নির্ণয়ের খরচ জোগানো অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। তাই প্রাকৃতিক উপায়ে উপসর্গ দেখে রোগের প্রাথমিক অবস্থা নির্ণয় একটি কার্যকর পদ্ধতি। এ সম্পর্কে আমাদের সবার সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন।