Daffodil International University

Faculty of Humanities and Social Science => Law => Topic started by: Md. Al-Amin on August 17, 2013, 03:13:08 PM

Title: Arrest,Remand and Our Rights
Post by: Md. Al-Amin on August 17, 2013, 03:13:08 PM
গ্রেফতার, রিমান্ড ও আমাদের  অধিকার
অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক



মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমান খানের রিমান্ড আদেশ স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। গত সোমবার বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ও বিচারপতি কাশিফা হোসেন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ এক আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন।
এর আগে গত শনিবার রাতে রাজধানীর গুলশান থেকে আদিলুর রহমান খানকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন রোববার বিকেলে তাঁকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায় পুলিশ।

ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক অমিত কুমার দে তাঁর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওই রিমান্ড আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন অধিকারের সাধারণ সম্পাদক।

শুনানি নিয়ে আদালত রুলও জারি করেন। ওই রিমান্ড আদেশ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
পাঠক, এবার আসল কথায় আসি। মূলা চুরির অভিযোগে গ্রেফতারকৃতকেও রিমান্ডে নেয়ার ক্ষমতা আছে পুলিশের। এক্ষেত্রে পুলিশের ক্ষমতা অবারিত। ৫৪ ধারায় গ্রেফতারকৃত এমনকি আদালতে আত্মসমর্পণকারীকে রিমান্ডে নেয়ার ক্ষমতাও চর্চা করছে পুলিশ।

আদালতে ডিমান্ড করলেই ম্যাজিস্ট্রেট রিমান্ড দিতে অনেকটা বাধ্য। পুলিশের ডিমান্ডে মঞ্জুরকৃত রিমান্ডের কমান্ডিংও থাকে পুলিশেরই হাতে। যদিও ম্যাজিস্ট্রেটের কোনো আসামিকে পুলিশ রিমান্ডে দেওয়া না দেওয়ায় ক্ষমতা দু`টোই আছে।

তবে রিমান্ডে দেওয়ার ক্ষমতা যতো বেশি, না দেওয়ার ক্ষমতা ততো নয়। এক্ষেত্রে পুলিশের ডিমান্ডই বেশি কার্যকর। বলা যায়, এ কাজে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা পুলিশের।আমাদের দেশে যুগের পর যুগ শুধু ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেপ্তারের ক্ষমতা স্বেচ্ছাচারভাবে প্রয়োগ হয়ে আসছে।
পুলিশের উড়ো খবর, সন্দেহ, শত্রুতার বশবর্তী হয়ে কিংবা প্রশাসনের ওপর রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব আমাদের দেশে যুগের পর যুগ চলে আসছে।
কিন্তু অন্যায় গ্রেপ্তার ও আটকাদেশ সংবিধানের উল্লিখিত বিধানের সঙ্গে সম্পূর্ণ অসঙ্গতিপূর্ণ।

১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিকের নির্বিচারে গ্রেপ্তারের যে ক্ষমতা পুলিশের উপর অর্পণ করা হয়েছে, তা সংবিধানের চেতনার পরিপন্থী, এর প্রয়োগও ব্যক্তি স্বাধীনতায় আঘাত হানার শামিল।

ওয়ারেন্ট ছাড়া কিংবা কোনোরুপ অন্যায় ছাড়াই  আমলযোগ্য অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে সন্দেহ হলেই কোনো ব্যক্তিকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
এ ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করার জন্যই উপমহাদেশের বিভিন্ন আদালতের মতো বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগও সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন দিয়েছেন, যা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও অধস্থন আদালতগুলোর জন্য মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

২০০৩ সালে বিচারপতি হামিদুল হক এবং সালমা মাসুদের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ ব্লাষ্ট এর দায়ের করা রিট মামলার রায়ে এ ব্যাপারে বিস্তারিত মতামত, সুপারিশ ও নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বিরামহীন প্রচষ্টার পরও সরকার আজ পর্যন্ত ওই রায়ের আলোকে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি কিংবা করতে পারেনি।
উল্লেখ্য, ওই রায়ে সরকারকে আইন সংশোধন সুপারিশ গ্রহণের জন্য ছয় মাস সময় দেয়া হয়েছিল, যা আপিল বিভাগ স্থগিত করে রেখেছেন।
কিন্তু রায়ে যে মতামত দেয়া হয়েছে তা পুলিশ প্রশাসন ও অধস্তন আদালতের ওপর বাধ্যকারী বটে।

উল্লিখিত রায়ে ৫৪ ধারার অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতাকে অসাংবিধানিক ও মৌখিক মানবাধিকারের পরিপন্থী বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
আদালত রায়ে বলেন, ‘৫৪ ধারার ক্ষমতা প্রয়োগে চরমভাবে স্বেচ্ছাচারিতা লক্ষ্য করা যায়।

এ ধারার ভাষাতেও অস্পষ্টতা আছে। তবে কেবল সন্দেহের বশবর্তী হয়ে যে কোনো নাগরিকের ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করে আটক বা প্রহরায় নেয়া অন্যায়, বেআইনি ও অসাংবিধানিক।
কারণ ৫৪ ধারায় ওয়ারেন্ট ছাড়া আটক এর যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তা সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে বর্ণিত মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত বিধানগুলোর পরিপন্থী।
৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার যদি করতে হয় তা হতে হবে সুনির্দিষ্ট, বিশ্বাসযোগ্য ও যুক্তিসঙ্গত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে।
কোনোক্রমেই নাগরিকের ব্যক্তি স্বাধীনতা অন্যায়ভাবে হরণ করা যাবে না। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারার ক্ষমতাবলে যখন তখন রিমান্ড চাওয়া ও মঞ্জুর করা সংবিধানের চেতনার পরিপন্থী।’
এ অবিচার বন্ধ করা অত্যাবশ্যক।

আইনের শাসন ও মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় এ জাতি বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিল।
কিন্তু আমরা আজও আইনের মাধ্যমে নির্যাতন বন্ধ করতে পারিনি। এটি খুবই হতাশ ও দুঃখজনক বটে।

উল্লিখিত রায়ে আরো বলা হয় ‘পুলিশ সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে আমলযোগ্য কোনো অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করেই কেবল কোনো অভিযুক্ত বা সাক্ষীকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে পারবে।

এক্ষেত্রেও গ্রেপ্তারের কারণ বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করতে হবে। ডায়েরি সংরক্ষণ করতে হবে। গ্রেপ্তারের তারিখ, স্থান উল্লেখ করতে হবে। ডায়েরিতে অবশ্যই সন্দেহের কারণের ব্যাখ্যা লিপিবদ্ধ করা জরুরি।

কে তথ্য দিল, তার পরিচয় সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। গ্রেপ্তারের পরপরই গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনকে সংবাদ দিতে হবে। গ্রেপ্তারের সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকেও কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে।’
উল্লিখিত রায় এ দেশে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। হাইকোর্ট প্রত্যাশা করেছিলেন, মাসদার হোসাইন মামলার রায়ের সুপারিশের মাধ্যমে বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ায় ২০০৩ সালের উল্লিখিত রিট মামলার রিমান্ড ও ৫৪ ধারা সংক্রান্ত সুপারিশের আলোকেও এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা হবে।
কিন্তু অদ্যাবধি তা হয়নি। এটি খুবই দুঃখজনক। যার কারণে জনগণের অধিকার প্রতিনিয়ত ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।
মানুষের ব্যক্তি অধিকার ও সম্মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

আমাদের সংবিধানের ৩৪ অনুচ্ছেদেও গ্রেপ্তার ও আটকের ব্যাপারে পদ্ধতিগত সুরক্ষা দিয়েছে যেমন ‘গ্রেপ্তারকৃত কোনো ব্যক্তিকে যথাশীঘ্র গ্রেপ্তারের কারণ জ্ঞাপন না করিয়া পুনরায় আটক রাখা যাবে না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তার মনোনীত আইনজীবীর সহিত পরামর্শের ও তার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হইতে বঞ্চিত করা যাবে না।’
আমাদের পবিত্র সংবিধানের বিধান প্রতিনিয়ত লংঘন হচ্ছে অথচ আমার সুশাসনের কথা বলছি।

পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আদিলুর রহমানকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তিনি তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার ১ ও ২ উপধারায় অপরাধ করেছেন।

অপরাধটি হচ্ছে, গত ৫ মে রাতে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের ঘটনার ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ করে এনজিও হিসেবে নিবন্ধিত তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘অধিকার’। এতে কাল্পনিকভাবে ৬১ জন মারা গেছে বলে দাবি করা হয়। প্রতিবেদনের প্রচ্ছদে ফটোশপের মাধ্যমে ছবি বিকৃত করে তা জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করা হয় এবং মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা হয়।

তবে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসত্য হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় বা রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে অপরাধ।"

কোনো ব্যক্তি এর অধীন অপরাধ করলে তিনি অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ডে অথবা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’
আইনের যথাযথ প্রয়োগ সবাই চায়, অপপ্রযোগ নয়।
লেখকঃ সাংবাদিক, আইনগ্রন্থ প্রণেতা, এম.ফিল গবেষক ও আইনজীবী জজ কোর্ট, কুষ্টিয়া।
www.banglanews.com