Daffodil International University
Entertainment & Discussions => Sports Zone => Cricket => Topic started by: maruppharm on October 10, 2013, 10:05:21 AM
-
পরনে শর্টস আর হাতকাটা টি-শার্ট। বাহুতে বিচিত্র সব উল্কি তাতে পূর্ণ মহিমায় প্রকাশিত। হাতে বক্সিং গ্লাভস এবং পাঞ্চিং ব্যাগে একের পর এক ঘুষি পড়ছে। যেন কদিন পরই হেভিওয়েট শিরোপা লড়াই।
কাল সন্ধ্যায় হোটেল আগ্রাবাদের জিমনেসিয়ামে ওই মুষ্টিযোদ্ধাকে দেখে উল্টো মনে হলো, ঘুষিগুলো সব নিজেকেই মারছেন! দিনের শেষ দুই ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে প্রতিপক্ষকে সমতায় ফিরিয়ে আনলে কোনো অধিনায়কের মেজাজ ঠিক থাকে নাকি! তার ওপর শেষ উইকেটটা যদি হয় নিজের!
মাঠ থেকে হোটেলে ফিরে রুমে ব্যাগটা রেখেই বক্সিং গ্লাভস নিয়ে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম যখন নেমে এলেন, লিফটের সামনে অপেক্ষমাণ বাংলাদেশ দল। আগের দিনও সাকিবের মুখে ছিল দাড়ির জঙ্গল, এ দিন তিনি ক্লিন শেভড্। কেকেআর সতীর্থের সঙ্গে ‘হাই-হ্যালো’ও অবশ্য হলো না। মুষ্টিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে না!
টেস্ট ম্যাচের সঙ্গে মুষ্টিযুদ্ধের তুলনাটা বেমানান। আবার চাইলে মেলানোও যায়। হেভিওয়েট বাউটের মতো টেস্টেও তো পনেরো রাউন্ড। এখানে রাউন্ডের নাম সেশন, এই যা! প্রথম দিনের তিন রাউন্ডের মধ্যে প্রথম দুটিতে বাংলাদেশ নাকেমুখে এমন ঘুষি খেল যে, মনে হলো এটির নিষ্পত্তি না নকআউটেই হয়ে যায়! তৃতীয় রাউন্ডে মোক্ষম তিনটি পাঞ্চে দিন শেষে মনে হচ্ছে পয়েন্টে এখন সমতা। বাকি ১২ রাউন্ডে যেকোনো কিছুই হতে পারে।
সাড়ে ছয় ফুট লম্বা বলে যাঁর নাম হয়ে গেছে ‘টু মিটার পিটার’, সেই পিটার ফুলটন দুঃখভরা গলায় বলছিলেন, ‘৮৫ ওভার পর্যন্ত সব দারুণ ছিল। এরপর...’। ৮৫ নয়, আসলে ৮৮.১ ওভার পর্যন্তও ‘দারুণ’ ফুলটনের দল। রান ২৭৬, উইকেটের ঘরে মাত্র ‘৩’। ১০ বলের মধ্যে ‘৩’-এর জায়গায় ‘৫’ এবং দ্বিতীয় দিনের শুরুতে অপরাজিত দুই ব্যাটসম্যানই শুরু করবেন শূন্য থেকে। যে কারণে নাসির হোসেন বলে ফেলতে পারলেন, ‘ম্যাচটা এখন আমাদের হাতে।’
এই দাবি তর্কযোগ্য। তবে প্রথম দিনের শেষ আধঘণ্টায় ম্যাচের রং যে বদলে গেছে, এটি একদমই তা নয়। তবে উইকেট কতটা বদলাবে, বদলালেও সেই বদলের ধরনটা কী হবে, এটি অবশ্য কঠিন এক ধাঁধা। নিউজিল্যান্ডের জন্য এমন হওয়াই স্বাভাবিক। সমস্যা হলো, বাংলাদেশের জন্যও তা-ই। জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামের এই উইকেট তো বাংলাদেশের জন্যও নতুন। প্রথম দিন সেই ‘নতুন’ যে রূপে দেখা দিল, তা নিয়ে বাংলাদেশ দলে তীব্র অসন্তোষ। সংবাদ সম্মেলনে যেটি আনুষ্ঠানিকভাবেই প্রকাশ করে গেলেন নাসির হোসেন। এটাকে যদি ব্যতিক্রমী মনে হয়, এর চেয়েও বেশি ব্যতিক্রমী তো স্বাগতিক হয়েও স্বাগতিকের সুবিধা নিতে বাংলাদেশের অক্ষমতা। বাংলাদেশের মূল শক্তি স্পিন, নিউজিল্যান্ডের আপাতদুর্বলতাও। এই টেস্টের আগে ‘স্পিন’, ‘টার্নিং উইকেট’ শব্দগুলো তাই স্বাভাবিকভাবেই উড়ে বেড়িয়েছে বাতাসে। অথচ কিউরেটর কিনা বানিয়ে রেখেছেন ‘পাকা রাস্তা!’
এর যেমন কোনো ব্যাখ্যা হয় না, তেমনি ব্যাখ্যা হয় না এমন উইকেটেও ষষ্ঠ ওভারেই অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের স্পিন নিয়ে আসা। দলে দুজন পেস বোলার, অথচ ৮ ওভার শেষে দুই প্রান্ত থেকেই স্পিন! মাত্র ২ ওভার করিয়েই সরিয়ে নেওয়া হলো রুবেলকে। এত দিন পর টেস্ট ম্যাচ, একজন পেসারের ছন্দ পেতেই তো ৪-৫ ওভার লেগে যায়। সেখানে দুটি মেডেনসহ মাত্র ৪ রান দেওয়ার পরও ৪ ওভারেই থামিয়ে দেওয়া হলো রবিউলের প্রথম স্পেল। বৈরী উইকেটের সঙ্গে অধিনায়কের এমন আস্থাহীনতার প্রকাশ—পেসারদের আত্মবিশ্বাস নড়বড়ে করে দিতে আর কী চাই!
‘লো অ্যান্ড স্লো’ এই উইকেটে স্ট্রোক খেলাটা হয়তো সহজ নয়, তবে ব্যাটসম্যান ভুল না করলে উইকেট পাওয়াও কঠিন। বাংলাদেশ সেই ‘ভুলে ভুলে’ই উইকেট পেল। বিশেষ করে পিটার ফুলটন নাসিরের যে বলে আউট হলেন, স্কুল ক্রিকেটে কড়া কোচরা এ জন্য ব্যাটসম্যানকে শাস্তি হিসেবে মাঠে ১০ চক্কর দিতে বলবেন। দর্শকদের অবশ্য তা ব্যাপক বিনোদন জোগাল। ১২৬ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি ভাঙার চেয়েও যেটির বড় কারণ, উইকেট পাওয়ার পর বোলারের বিব্রত হওয়ার ব্যতিক্রমী দৃশ্য।
এই মাঠে সাকিব আল হাসানের ইনিংসে ৭ উইকেট আছে। কিন্তু মাত্রই চোট থেকে ফেরায় তাঁর বোলিং নিয়ে সংশয়ের কারণেই টেস্ট ক্যারিয়ার পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ পেয়েছেন আবদুর রাজ্জাক। দিনের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি বল তিনিই করলেন। রান দেওয়ার সেঞ্চুরি হয়ে গেছে, তবে উইকেটও পেয়েছেন ২টি। মাত্র ৮ ওভার বোলিং করেও পথের আসল ‘কাঁটা’টাকে অবশ্য সাকিবই সরালেন। কেন উইলিয়ামসন স্পিনটা যে ভালো খেলেন, টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরিটিই এর বড় সার্টিফিকেট। কারণ সেটি ভারতের মাটিতে। ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডের দুঃস্বপ্নের ওই সিরিজেও একটা সেঞ্চুরি করেছিলেন। কাল সাড়ে চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে উইলিয়ামসন বুঝিয়ে গেলেন, এই সিরিজে বাংলাদেশের বোলারদের সবচেয়ে প্রার্থিত উইকেট হবে এটিই।
www.prothom-alo.com
-
hmmmm...