কালিজিরা
বৈজ্ঞানিক নাম : Nigella sativa
ইংরেজি নাম : fennel flower, nutmeg flower, Roman coriander, blackseed or black caraway।
অন্যান্য বাংলা নাম : কালজিরা, কালোজিরা, কালিজিরা।
(http://www.onushilon.org.bd/plant/image/kalijira.JPG)
Ranunculaceae গোত্রের উদ্ভিদ। লম্বায় ২০-৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর আদি নিবাস দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া। পত্রদণ্ডের উভয় দিকে যুগ্মপত্র হয়। পাতাগুলো ছোটো ফলকের মতো বিভাজিত অবস্থায় দেখা যায়।
সাধারণত এর ফুলের রঙ হয় সাদা বা নিষ্প্রভ নীল। তবে পীতবর্ণের ফুলের কালিজিরা গাছও দেখা যায়। ফুলের পাঁচটি পাপড়ি থাকে। পুংকেশরের সংখ্যা অনেক। এর গর্ভকেশর বেশ লম্বা হয়। বাংলা কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে এর ফুল ফোটে এবং শীতকালে ফল ধরে। ফলের আকার গোলাকার। এর বীজ কালো বর্ণের এবং প্রায় ত্রিকোণাকার। এর বীজগুলো একটি খোলসের ভিতরে থাকে। খোলসের ভিতরে অনেক বীজ থাকে। এর বীজগুলোতে তেল থাকে। এই উদ্ভিদের বীজ ব্যবহার করা হয়। মূলত এই বীজকেই কালিজিরা বলা হয়।
ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা কালিজিরাকে একটি অব্যর্থ রোগ নিরাময়ের উপকরণ হিসাবে বিশ্বাস করে। এর সাথে একটি হাদিস জড়িত আছে। হাদিসটি হলো— '..আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: “এ কালিজিরা সাম ব্যতীত সমস্ত রোগের নিরাময়। আমি বললাম: সাম কি? তিনি বললেন: মৃত্যু!” [বুখারী: ৫৬৮৭]
কালিজিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে, বহুমুত্র রোগীদের রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং নিম্ন রক্তচাপকে বৃদ্ধি করে ও উচ্চ রক্তচাপকে হ্রাস করে। এছাড়া মস্তিস্কের রক্ত সঞ্চলন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণ শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
আয়ুর্বেদ এবং ইউনানি মতে কালিজিরা নানাবিধ রোগ-নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। ইউনানি মতে— নারীর ঋতুস্রাবজনীত সমস্যায় কালিজিরা বাটা খাওয়ার বিধান আছে। এছাড়া প্রসূতির স্তনে দুগ্ধ বৃদ্ধির জন্য, প্রসবোত্তর কালে কালিজিরা বাটা খাওয়ার বিধান আছে। তবে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত কালিজিরা খেলে গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া প্রস্রাব বৃদ্ধির জন্য কালিজিরা খাওয়া হয়। তিলের তেলের সাথে কালিজিরা বাঁটা বা কালিজিরার তেল মিশিয়ে ফোড়াতে লাগলে, ফোড়ার উপশম হয়। মধ্যপ্রাচ্যে প্রচলিত আছে যে, কালিজিরা যৌন ক্ষমতা বাড়ায় এবং পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে।
এছাড়া অরুচি, উদরাময়, শরীর ব্যথা, গলা ও দাঁতের ব্যথা, মাইগ্রেন, চুলপড়া, সর্দি, কাশি, হাঁপানি নিরাময়ে কালিজিরা সহায়তা করে। ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসাবে কালিজিরা সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
কালিজিরা মশলা হিসাবে ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে। এটি পাঁচ ফোড়নের একটি উপাদান। এর বীজ থেকে পাওয়া তেল পাওয়া যায়। তবে পুরানো কালিজিরা তেল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
তথ্যসূত্র :
ভারতীয় বনৌষধি। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০২
http://en.wikipedia.org/wiki/Nigella_sativa
http://seudolab.com/bn/2805