পড়ছি আবার চাকরিও দিচ্ছি
(http://paimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/350x0x1/uploads/media/2013/10/23/5266c2a29af18-Untitled-3.jpg)
লেখার শিরোনাম দেখে ভ্রুজোড়া কিঞ্চিৎ কুঞ্চিত? ‘পড়ছি আবার চাকরি করছি’—এই শিরোনামের লেখা আশা করাই বেশি যুক্তিযুক্ত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ‘পড়ছি আবার চাকরি দিচ্ছি’র মতো শিরোনাম কি হয়? উত্তর খুঁজতে আমরা যাই সাইফুল ইসলামের কাছে। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রনিকস ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগে স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষে পড়েন তিনি।
সাইফুলের গল্পটা বেশ মজার, ‘কদিন আগে আমার এক বন্ধু আমাকে একটা চাকরির প্রস্তাব দিল। মজার ব্যাপার হলো, তার কিছুদিন পর আমি আমার প্রতিষ্ঠানে ওই একই বেতনে একজনকে চাকরি দিলাম!’ বুঝতেই পারছেন সাইফুল পড়াশোনা করছেন, পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকও! হ্যাঁ, ইন্টারনেটে আমারগ্যাজেট ডটকম নামের দোকান মানে ই-শপের মুখ্য নির্বাহী এই তরুণ। অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি যেমন: কম্পিউটার, মুঠোফোন, ইলেকট্রনিকস উপহারসামগ্রী বিক্রি করছেন প্রায় এক বছর হলো। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের ভার্চুয়াল দোকানটাও বেশ সামলাচ্ছেন সাইফুল।
সাইফুলের মতো আরও এ সময়ের অনেক তরুণই আছেন, যাঁরা পড়শোনাও করছেন আবার ব্যবসা করছেন অনলাইনে। যেমন বলা যায় ইউনিভার্সিটি অব অল্টারনেটিভ ডেভেলপমেন্টের (ইউওডা) কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের আসাদ ইকবালের কথা। ক্লাস-পরীক্ষা সামলানোর ফাঁকে ফাঁকে গদিঘরেও নিয়মিত বসছেন এই নবীন উদ্যোক্তা! গদিঘর ডটকম নামের অনলাইন দোকানের প্রধান নির্বাহী আসাদ। গদিঘরে কী করেন? আসাদের মুখে হাসি, ‘গদিঘরে মূলত বিভিন্ন কারুপণ্য বিক্রি করি আমরা। গ্রামগঞ্জে হাতে তৈরি নানান কিছু পাওয়া যায় আমাদের ওয়েবসাইটে। আর পড়াশোনার পাশাপাশি ই-কমার্সে যুক্ত হওয়া সহজ কিছু নয়। এর জন্য দরকার অভিজ্ঞতা, কারিগরি দক্ষতা আর অনেক ধৈর্য। আর এ ধরনের ব্যবসায় খুব বেশি মূলধন লাগে না। ফলে পরিবারকে চাপ না দিয়েও অনেক কিছু করা সম্ভব। একসময় ব্যবসা দাঁড়িয়ে গেলে উল্টো পরিবারকেই সহযোগিতা করা যায়।’
আসাদ জানালেন, ছাত্রাবস্থায় ই-কমার্স শুরু করতে কী কী দরকার। কিন্তু এই প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো মিলবে কোথায়? যাঁরা ই-বাণিজ্য করছেন, তাঁদের প্রায় বেশির ভাগই সব জেনেবুঝেই আসছেন। আর না জেনেবুঝে এলে ফলাফল শূন্য! আমও যাবে ছালাও যাবে! এখানে আম হলো পড়াশোনা, ছালা হলো ব্যবসা! তো কী করা চাই?
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ সম্পন্ন করার দ্বারপ্রান্তে আছেন আশিকুল ইসলাম খান। স্নাতক প্রথম বর্ষে থাকতেই পরিকল্পনা করেছিলেন প্রিয়শপ ডটকম নামের একটি ওয়েবসাইট করবেন। যেখানে থাকবে জীবনযাপনের নানা পণ্য। দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে মাথায় পরিকল্পনার পোকা নিয়ে কেবল অভিজ্ঞতার পেছনেই ছুটেছেন এই তরুণ। যখন মনে হয়েছে, না, অভিজ্ঞতার ঝুলি বেশ ওজনদার, তখনই জানালা খুলেছেন প্রিয়শপ ডটকমের। অভিজ্ঞতা আসবে কোত্থেকে? আশিকুলের মতে, পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হলে খুব ভালো হয়। সেখানে কী করে কেনাবেচা হয়, কী করে ক্রেতাদের সঙ্গে কাজ করতে হয়, তা বোঝা যাবে। আর কোথা থেকে পণ্য আসবে, কীভাবে কিনব, কত দামের কিনব—এই বিষয়গুলো শিখতে চাইলে অনেক ঘুরতে হবে, দেখতে হবে, মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। আর বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে কাজটা করলে ব্যবসাটা আরও দীর্ঘস্থায়ী ও মজবুত হতে বাধ্য।
আশিকুলের এই কথার সূত্র ধরে আমরা কথা বললাম আতাউর রহমানের সঙ্গে। ই-কমার্স ওয়েবসাইট আমার দেশ আমার গ্রামের সহপ্রতিষ্ঠাতা আতাউর বললেন, ‘তরুণেরা যে পড়াশোনার পাশাপাশি এখন ই-কমার্সে আসছে, এটা খুব ভালো লক্ষণ। আমি বলব, এমন উদ্যোগে একা একা কিছু না করে চার-পাঁচজন বন্ধুকে নিয়ে করলে সবচেয়ে ভালো। কারণ, একটা অনলাইন শপের জন্য বিভিন্ন সেক্টরের অভিজ্ঞ লোক দরকার। যেমন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, দরকার ব্যবসাগত দিকগুলো সামলানোর মতো একজন, আবার বিপণনের বিষয়গুলোও একজনকে সামলাতে হবে। বন্ধুরা মিলে করলে বেতন দিয়ে বাইরের কাউকে ডাকতে হয় না।’ একা একা করলে সার্ভিস চার্জ বেড়ে যায়, পণ্যের মান নেমে যায়। আরেকটা ব্যাপার হলো সোর্সিং। এর জন্য গ্রামই হলো সবচেয়ে ভালো গন্তব্য। অর্থাৎ যে জায়গায় পণ্যটি উৎপাদিত হচ্ছে, সেখান থেকে কিনলে কিন্তু অনেক কম দামে কেনা যায়। আবার ওই একই পণ্য আড়তদারদের কাছ থেকে কিনলে দাম বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এতে উদ্যোক্তাদের ক্ষতি, কৃষকেরাও ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন। তাই তরুণেরা এই সিন্ডিকেট বাজারটাও ভেঙে দিতে পারেন অনায়াসে। তবে সবকিছুর জন্যই অভিজ্ঞতা খুব জরুরি, যে বিষয়ে কাজ করবেন, সে বিষয়ে পারদর্শী হয়ে ওঠাও বাধ্যতামূলক। আর সরকার যদি এই তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে আমাদের অর্থনীতিতে এর বিরাট ইতিবাচক প্রভাব পড়বে নিশ্চিত।
Source: http://www.prothom-alo.com/we_are/article/57100