Daffodil International University
Entertainment & Discussions => Sports Zone => Cricket => Topic started by: maruppharm on November 13, 2013, 09:51:23 AM
-
পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ড, ম্যুরালে ছেয়ে গেছে পুরো শহর। রাস্তার পাশের চা-দোকান থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, সর্বত্র একটিই আলোচনা। সংবাদমাধ্যমের পাতাজুড়ে তিনি, টিভিপর্দায় বারবার ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখানো হচ্ছে তাঁর অসাধারণ সব কীর্তি। অনলাইনে টিকিট কাটার জন্য লাখো আগ্রহী একসঙ্গে হিট করায় ক্রাশ করেছে ওয়েবসাইট। কমপ্লিমেন্টারি টিকিটের জন্য পরিচিতজনদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন তাঁদের পরিচতরা। ক্রিকেটের মহানায়ক শেষবারের মতো মাঠে নামবেন এই শহরেই। সেই মহানায়ক আবার এখানকারই ঘরের ছেলে। শচীন টেন্ডুলকারের বিদায়ী টেস্টের আগে মুম্বাই তাই এখন আবেগের নগর।
এই আবেগের নগরে পরশু অন্য রকম একটা আবেগ ছুঁয়ে গেল স্বয়ং টেন্ডুলকারকেও। এক জীবনে খেতাব, সম্মাননা কম পাননি। ক্যারিয়ারের শেষ প্রহরে এসে তবু তাঁর হূদয় ছুঁয়ে গেছে নিজ শহরের ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের একটি সম্মাননা।
যে মাঠে শেষ টেস্ট খেলবেন, সেই ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের একটি প্যাভিলিয়নের নাম টেন্ডুলকারের নামে রাখা হয়েছে আগেই। এবার মুম্বাইয়ের কান্দিভিলি গ্রাউন্ডের নাম পাল্টে রাখা হয়েছে শচীন টেন্ডুলকার জিমখানা ক্লাব। এই সম্মানে অভিভূত টেন্ডুলকার।
নতুন নামকরণ উপলক্ষে পরশু জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (এমসিএ)। স্ত্রী অঞ্জলিকে নিয়ে অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন টেন্ডুলকার, ছিলেন ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের ক্রিকেটাররা। এমসিএ প্রেসিডেন্ট শারদ পাওয়ার, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চাভান, শিবসেনা মেয়রসহ অনুষ্ঠানে ছিলেন শ-পাঁচেক আমন্ত্রিত অতিথি। অনুষ্ঠানের বাইরে হাজারো মানুষ দাঁড়িয়ে ছিলেন ব্যানার, প্ল্যাকার্ড হাতে। গণপতির নাচ দিয়ে শুরু অনুষ্ঠানে পরে টেন্ডুলকারের প্রিয় শিল্পী কিশোর কুমারের পাঁচটি গান গেয়ে শুনিয়েছেন আরেক জনপ্রিয় শিল্পী শান। টেন্ডুলকারকে পুষ্পস্তবকে বরণ করে নেওয়ার পর উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হয়েছে একটি পেইন্টিং।
নিজের নামে নামকরণ হওয়া স্টেডিয়ামে সম্মাননা পেয়ে আবেগ ছুঁয়ে গেল টেন্ডুলকারকেও, ‘আজ যখন এখানে পা রাখলাম, সত্যিই অন্য রকম লাগছিল। আমি ঠিক এতে অভ্যস্ত নই, নিজেকে সম্মানিত মনে করছি।’ প্রতিভাবান উঠতি ক্রিকেটাররা বিনা খরচে ক্রিকেট শিখতে ও অনুশীলন করতে পারবেন এখানে। টেন্ডুলকারও নতুন প্রজন্মকে মনে করিয়ে দিলেন, সুযোগটি কত বড়, ‘পরবর্তী প্রজন্মের জন্য দারুণ একটি মঞ্চ হতে পারে এটি। ওদের উচিত এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলা। খেলাধুলার সংস্কৃতিটা তরুণদের মাঝে ধরে রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
সুযোগ পেয়ে এমসিএর প্রতি নিজের কৃতজ্ঞতাও আরেকবার জানিয়ে রাখলেন টেন্ডুলকার, ‘মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আমার পথচলা প্রায় ২৯ বছরের, সেই অনূর্ধ্ব-১৫ পর্যায় থেকে। যখনই আমি নেট করতে চাইতাম, এমসিএ সব সময়ই ছিল প্রস্তুত। তারা আমাকে স্বপ্নপূরণের পথটা খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে। ঠিকঠাক প্রস্তুতি নেওয়া ছাড়া কোনোভাবেই ভালো করা সম্ভব ছিল না। আজ যারা আমাকে সংবর্ধনা দিচ্ছে, সেই এমসিএর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’
নিজের শহর, শেষ টেস্টের শহর বলে মুম্বাইয়ের ছবিটাই সবচেয়ে বেশি প্রকাশ্য। নইলে টেন্ডুলকারের বিদায়ী আয়োজনে শামিল আসলে গোটা ভারতই। সব শহরেই কমবেশি চলছে টেন্ডুলকার-উন্মাদনা। চারপাশে স্তুতি আর প্রশংসার বন্যা। তাঁর বর্তমান-সাবেক সব সতীর্থ, পূর্বসূরি-উত্তরসূরি সবার কণ্ঠে বা লেখনীতে উঠে আসছে টেন্ডুলকারের ক্যারিয়ারের নানা সময়ের টুকরো টুকরো ছবি। বিদায়ী টেস্টে ওয়াংখেড়ের গ্যালারিতে থাকবেন টেন্ডুলকারের অতীত সতীর্থ, একসময়ের প্রতিপক্ষে থাকা অনেকে। থাকবেন আরেকজন বিশেষ অতিথি। এই প্রথম মাঠে বসে টেন্ডুলকারের খেলা দেখতে আসবেন তাঁর মা রজনী টেন্ডুলকার। তিনি মাঠে এলে ছেলের খেলা খারাপ হতে পারে, এই কুসংস্কার থেকে কোনো দিন মাঠে গিয়ে ছেলের খেলা দেখেননি টেন্ডুলকার জননী। কিন্তু শেষটায় না এসে পারছেন না। তাঁর জন্য হুইলচেয়ারে বসে খেলা দেখার বিশেষ ব্যবস্থা করেছে এমসিএ।
এত সব আয়োজন দেখে টেন্ডুলকারের সকৃতজ্ঞ উচ্চারণ, ‘এই ভালোবাসা, সম্মান ও সমাদরের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। ভারতের হয়ে খেলতে পারাটাই ছিল জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।’ ওয়েবসাইট।