Daffodil International University

Entertainment & Discussions => Sports Zone => Cricket => Topic started by: maruppharm on November 18, 2013, 10:57:11 AM

Title: উইকেটের সঙ্গে কথা বলছিলেন টেন্ডুলকার
Post by: maruppharm on November 18, 2013, 10:57:11 AM
বলতে গেলে সারা জীবনই অ্যালার্মে ঘুম ভেঙেছে। কাল সকালে অ্যালার্ম বাজেনি, তার পরও শরীরঘড়ি ঠিকই জাগিয়ে দিয়েছে ঠিক সোয়া ছয়টায়। ঘুম ভাঙার পর প্রথমেই মনে হলো, আজ আর তাড়াহুড়ো করে শাওয়ার নিয়ে মাঠে যাওয়ার তাড়া নেই।

নিজেই এক কাপ চা বানিয়ে খেলেন। পরে বউয়ের সঙ্গে আয়েশ করে নাশতা। ক্রিকেট-পরবর্তী জীবনের জন্য শুভকামনা জানিয়ে অসংখ্য এসএমএস এসেছে। উত্তর দিলেন সেসবের। শুরু হলো ‘সাবেক ক্রিকেটার’ শচীন টেন্ডুলকারের জীবন।

ক্রিকেট-পরবর্তী জীবনের প্রথম সকালের এই বর্ণনায় বিন্দুমাত্র ভুল বা অতিরঞ্জন নেই। সেটি যে দিচ্ছেন শচীন টেন্ডুলকার নিজেই। কাল বিকেলে মুম্বাইয়ের মেরিন ড্রাইভের পাশে সংবাদ সম্মেলনে উপচে পড়া ভিড়। চেয়ার না পেয়ে অনেকে সামনে মাটিতে বসে। দাঁড়িয়েও অনেকে। অত বড় একটা রুমেও গিজগিজে ভিড় বুঝিয়ে দিচ্ছিল ‘জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলন’ বলতে আসলে কী বোঝায়!

মঞ্চে ছোট্ট একটা টেবিল, একটাই চেয়ার। পেছনে ব্যানারে বড় করে লেখা শচীন টেন্ডুলকার, নিচে ‘সেলিব্রিটিং টোয়েন্টি ফোর ইয়ার্স।’ প্রশ্ন করার সুযোগ চেয়ে সাংবাদিকদের অবিশ্রাম ‘শচীন, শচীন’ চিৎকার আর চেঁচামেচির মধ্যেও প্রায় ৫০ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনের প্রায় পুরোটা জুড়ে মুখে প্রশান্ত হাসিমুখ শচীন টেন্ডুলকারকে দেখে মনে হলো, ক্রিকেট ছাড়ার দুঃখ ভুলে আসলেই ২৪ বছরের স্বপ্নযাত্রাকে ‘সেলিব্রেট’ করছেন।

সব প্রশ্নেরই বড় বড় উত্তর দিলেন। রসিকতাও করলেন অনেকবার। এ এক নতুন টেন্ডুলকার। যিনি নতুন জীবন শুরু করার কাজটা এই সংবাদ সম্মেলন দিয়েই শুরু করবেন বলে ঠিক করে এসেছেন।

পরনে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের ব্লেজার-টাই। এলেন স্ত্রী অঞ্জলিকে সঙ্গে নিয়ে। সংবাদ সম্মেলন শুরু হওয়ার আগেই অবশ্য অঞ্জলি দৃশ্যপট থেকে উধাও। ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত আইকনের পরিবার বরাবরই সংবাদমাধ্যমকে ছোঁয়াচে রোগের মতো এড়িয়ে চলেছে। বিদায়বেলায় দেখা দিলেও এখনো লাইমলাইটে আসতে চরম অনীহা।

টেলিভিশনে দেওয়া প্রথম সাক্ষাৎকারে অঞ্জলি বলেছেন, শচীনকে ছাড়া ক্রিকেট তিনি ভাবতে পারেন, কিন্তু ক্রিকেট ছাড়া শচীনকে নয়। শচীন নিজেও কি ভাবতে পারছেন? উত্তর শুনে মনে হলো তাঁরও ভাবতে কষ্ট হচ্ছে, ‘ক্রিকেটই আমার জীবন, একটা সাক্ষাৎকারে যেমন বলেছি ক্রিকেট আমার অক্সিজেন। ৪০ বছরের ৩০ বছরই তো ক্রিকেটের সঙ্গে। মানে আমার জীবনের ৭৫ শতাংশই ক্রিকেটে। ক্রিকেটের সঙ্গেই হয়তো থাকব, তবে নিকট ভবিষ্যতে নয়। অবসর নিলাম তো ২৪ ঘণ্টাও হয়নি, কী করব ভাবতে ২৪ দিন অন্তত যাক।’

‘২৪ ঘণ্টা’ কথাটা আবার এল, যখন এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, অলিম্পিকে ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত করার মিশনে নামবেন কি না। সবাইকে হাসিয়ে শচীন উত্তর দিলেন, ‘আরে বাবা, ২৪ ঘণ্টাও হয়নি অবসর নিয়েছি। এখনই আপনারা বড় বড় সব দায়িত্ব দিয়ে দিচ্ছেন!’ তা কেমন কেটেছে এই ২৪ ঘণ্টা? ‘কাল রাতে একা বসে ভাবছিলাম, আর কোনো দিন আমি ক্রিকেট খেলব না!’ বলেই দুষ্টুমির হাসি দিয়ে বললেন, ‘ঠিকই কোথাও না কোথাও খেলে নেব।’

দুই যুগের ক্যারিয়ারের শেষ দিনটিতেও মাঠে সেই প্রথম দিনের মতোই প্রাণোচ্ছল। রহস্যটা কী? রহস্য খেলাটির প্রতি অপার ভালোবাসা, ‘৪০ বছর বয়সেও খেলাটাকে আমি ২০ বছর বয়সের মতো উপভোগ করেছি। ক্রিকেটটাকে আমি পাগলের মতো ভালোবাসি। এত সব চ্যালেঞ্জ এসেছে, দেশের পক্ষে খেলাটা আমার কাছে অনেক বড় ছিল বলেই আমি সব জয় করতে পেরেছি।’ পেরেছেন বলেই ভারতীয় ড্রেসিংরুমে তিন প্রজন্মের আসা-যাওয়া দেখেছেন, ‘আমি যখন খেলা শুরু করি, ভুবনেশ্বরের জন্মই হয়নি। মাঝেমধ্যে ড্রেসিংরুমে মজা করতাম, ‘অ্যাই, তোরা সবাই আমাকে “স্যার” বলে ডাকবি!’

১৬ বছরের এক প্রতিশ্রুতিশীল কিশোর থেকে সর্বকালের সেরার দাবিদার হয়ে ওঠার পেছনে পরিবারের অবদানের স্বীকৃতি দিয়েছেন বারবারই। কালও যথারীতি এই প্রসঙ্গে আপ্লুত। খেলা ছাড়ার দিনই প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে পেয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ সম্মান ভারতরত্ন। সেটি উৎসর্গ করলেন মাকে। নিজের মায়ের কথা বলতে গিয়ে ব্যাপ্তিটাকে ছড়িয়ে দিলেন আরও, ‘সন্তানের জন্য মা-বাবার ত্যাগটা বড় না হলে বোঝা যায় না। আমার মা আমার জন্য যে কষ্ট করেছেন, সেটির তুলনা হয় না। ভারতজুড়ে এমন লাখ লাখ মা আছেন, তাঁদের সবাইকেই উৎসর্গ করছি এই সম্মান।’

মা কোনো দিন মাঠে বসে তাঁকে একটা বলও খেলতে দেখেননি বলেই বিসিসিআইকে অনুরোধ করে মুম্বাইয়ে শেষ টেস্টটা খেলেছেন। জীবনের শেষ টেস্টে মাকে মাঠে নিয়ে আসার পরিকল্পনাটা গোপনই রেখেছিলেন, ‘মাকে একটা সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আপনাদের জন্য তা আর পারলাম কই?’

বিচিত্র সব প্রশ্ন হলো। ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি আর আক্ষেপের কথা জানতে চাওয়াও থাকল অনুমিতভাবেই। দুটিই বিশ্বকাপকে ঘিরে। সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ২০১১ বিশ্বকাপ জয়, ‘এটা আমার একটা স্বপ্ন ছিল। ২২ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে এ জন্য।’ সবচেয়ে বড় আক্ষেপ ২০০৩ বিশ্বকাপ, ‘আমরা এত ভালো খেলছিলাম। কিন্তু শেষ ধাপটা পেরোতে পারলাম না।’

১৪ বছরের ছেলে অর্জুন টেন্ডুলকার মুম্বাইয়ের বয়সভিত্তিক দলে খেলছে, তাঁর কাছে প্রত্যাশার কথা জানতে চাওয়ায় একরকম আকুতিই করলেন, ‘বাবা হিসেবে আপনাদের কাছে চাইব, ওকে ওর মতো খেলতে দিন। বাবা এমন খেলেছে, তোমাকেও খেলতে হবে—এমন চাপ যেন কেউ না দেয়। এমন হলে তো আমার হাতে ব্যাট নয়, কলম থাকত। আমার বাবা ছিলেন অধ্যাপক, কিন্তু আমাকে কেউ বলেনি, কলমের বদলে তোমার হাতে ব্যাট কেন? অর্জুন খেলাটা খুব ভালোবাসে। ও উপভোগ করুক, সফল হবে কি ব্যর্থ সেটি পরের ব্যাপার।’

বিদায়বেলায় খণ্ড খণ্ড অসংখ্য ছবির মধ্যে শেষবারের মতো মাঠ ছেড়ে যাওয়ার আগে উইকেটকে প্রণাম করার ওই দৃশ্যটা সবার মনে গেঁথে আছে। টেন্ডুলকারের জন্যও সবচেয়ে আবেগময় মুহূর্ত ছিল ওটাই, ‘ওই ২২ গজেই আমার জীবন শুরু, ওই ২২ গজই আমাকে এত কিছু দিয়েছে। আমার কাছে এটি তাই মন্দিরের মতো। ক্রিকেটকে তাই ধন্যবাদ দিতে চেয়েছি। উইকেটের সঙ্গে যখন কথা বলছিলাম, আবেগ আমাকে গ্রাস করে নিল। অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ও এতটা আবেগে আক্রান্ত হইনি। মনে হলো, এই যে মাঠভরা দর্শক, এঁদের সামনে আমি আর কখনো ভারতের হয়ে ব্যাট করব না। আমার দুচোখ জলে ভরে এল। ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় এত জনের সঙ্গে হাত মেলালাম, এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাত মেলানোর সময়ও আমি মুখ তুলে তাকাইনি। ওই কান্নাভেজা মুখ কাউকে দেখাতে চাইনি।’

ওই কান্না যে আরও কোটি কোটি মানুষকে কাঁদিয়েছে, শচীন টেন্ডুলকার কি তা জানেন? জানেন হয়তো।