Daffodil International University
Entertainment & Discussions => Sports Zone => Cricket => Topic started by: mustafiz on November 19, 2013, 11:24:19 AM
-
ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম জুটি তাঁরা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৪৭ ইনিংসে দুজনের জুটিতে এসেছে ১২৪০০ রান, গড়েছেন ৩৮টি শতরানের জুটি। মাঠের বাইরের জুটি এত পোক্ত না হলেও একসঙ্গে কাটিয়েছেন অনেকটা সময়। এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সৌরভ গাঙ্গুলী কথা বললেন মাঠের বাইরের শচীন টেন্ডুলকারকে নিয়ে
অন্য খেলার গ্রেটদের সঙ্গে তুলনা...
সৌরভ গাঙ্গুলী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আইকনদের মধ্যে শচীনের তুলনা কেবল ডিয়েগো ম্যারাডোনা। ম্যারাডোনা আমার খুব প্রিয় ছিল, শচীনও তা-ই। দুজনই জিনিয়াস।
বাংলা শেখানো প্রসঙ্গে...
শচীনকে বাংলা শেখানোর অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। ওর বাংলা অবিশ্বাস্যরকমের বাজে! পরে আমি শচীনকে অনুরোধ করেছি আর বাংলা বলার চেষ্টা না করতে। কারণ আমাদের অসাধারণ ভাষাটির বারোটা বাজিয়ে ছাড়ছিল ও!
দুরন্ত টেন্ডুলকার...
শচীনের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা ১৪ বছর বয়সে, ইন্দোরে একটি ক্যাম্পে। ওই ক্যাম্পের সময়ই একদিন রোববার বিকেলে আমি আর আমার এক বন্ধু রুমে ঘুমাচ্ছিলাম। ঘুম ভাঙার পর দুজন দেখি, আমাদের ব্যাগ সব পানিতে ভাসছে। প্রথমে ভেবেছিলাম বাথরুমে কোথাও
কোনো ফুটো হয়েছে। কিন্তু বাথরুমে গিয়ে দেখলাম সব ঠিক। বুঝতেই পারছিলাম না, ঘটনা কী! পরে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে দেখি, পানির বালতি হাতে দাঁড়িয়ে শচীন ও কাম্বলি। ওরাই রুমে পানি দিচ্ছিল। শচীন তখন এমনই দুষ্টু ছিল!
রসনাবিলাস...
শ্রীলঙ্কায় আমরা এক বন্ধুর ওখানে অনেকবার গিয়েছি যেখানে দুর্দান্ত কাঁকড়া পাওয়া যেত। কেনিয়ায় আমরা মজা করে মুরগির মাংসের দারুণ একটি ডিশ খেলাম। খাওয়ার পর শচীন বলল, ওটা ছিল কুমিরের মাংস!
প্রসঙ্গ অর্জুন টেন্ডুলকার...
২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলছিলাম। আমার রুম খোলা ছিল, অর্জুন একটি ব্যাট হাতে আমার রুমে এল। জানতে চাইল, কাভার ড্রাইভ কীভাবে খেলতে হয়। আমি বললাম, ‘গিয়ে তোমার বাবাকে জিজ্ঞেস করো!’ শুনে অর্জুন বলল, ‘আমার বাবা ডানহাতি। আপনি যেহেতু বাঁহাতি, আমি আপনার কাছ থেকেই শিখতে চাই।’ অর্জুন যদি ওর বাবার অর্ধেকও অর্জন করতে পারে, ও সফল হবে।
টেন্ডুলকারের অবসর...
মুহূর্তটি ছিল প্রচণ্ড আবেগময়। আমি ভিভিএস লক্ষ্মণকে কাঁদতে দেখেছি, ওর চোখে পানি দেখেছি। যে বিদায় সংবর্ধনা শচীন পেয়েছে, আমাদের সবার হূদয় ছুঁয়ে গেছে। এত ভালো, এত অসাধারণ, এত বিশাল একজনের জন্য এমন বিদায়ী আয়োজনই উচিত ছিল। আমি আগেও বলেছি, টেন্ডুলকারের বিদায় নেওয়া উচিত ব্যাট উঁচু করে। সেটাই হয়েছে, বিদায়ী ইনিংসটি গত তিন বছরে ওর সেরা ইনিংস।
টেন্ডুলকারের বিদায়ী বক্তৃতা...
রাহুল দ্রাবিড় ও ভিভিএস লক্ষ্মণের পাশাপাশি আমার নামও উল্লেখ করেছে ও। আমাদের সবাইকে এটি দারুণভাবে গর্বিত করেছে। ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময় আমরা একসঙ্গে খেলেছি, বিদায়বেলায় ওর কণ্ঠে আমাদের নাম শোনা ছিল বিশেষ কিছু। নিজের পরিবারের চেয়েও বেশি সময় আমরা একসঙ্গে কাটিয়েছি। ক্রিকেটটা আমরা শুধু সংখ্যা, রান বা রেকর্ডের জন্য খেলি না, খেলি অসাধারণ কিছু মুহূর্তের জন্যও। ভারতীয় ক্রিকেটের দারুণ সুখী একটি সময়ে আমরা একসঙ্গে খেলেছি। ভ্রমণটি ছিল সত্যি, সত্যিই বিশেষ কিছু। শচীনের কথাগুলো শুনে আবেগে সবাই কথা হারিয়ে ফেলেছিল। সত্যিই ছিল অসাধারণ!
অবসর-পরবর্তী টেন্ডুলকার...
অনেকেই আমাকে এই প্রশ্নটি করেছে, করছে। জীবনটা ধারাভাষ্যের চেয়ে অনেক বড়, শচীন সব দরজাই খোলা রেখেছে। ধারাভাষ্যকার হলেও খুব ভালো করবে ও, তবে আমি চাইব এতে খুব বেশি সময় না দিক। ভারতীয় ক্রিকেটকে ওর কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার আছে। তবে খেলা ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই এমন কিছু করা ঠিক হবে না, ও করবেও না বলে আমার ধারণা। তিন-চার বছর পর শচীনের উচিত নিজে থেকে এগিয়ে এসে ভারতীয় ক্রিকেটকেও সামনে এগিয়ে নেওয়া।
টেন্ডুলকারের মূল্যবোধ...
শচীন যখন সবার কথা বলল...ওর ভাই, বাবা-মা, স্ত্রী...এটাই বলে দিচ্ছিল ও কত বড় মাপের মানুষ। সবার জীবনেই এই মূল্যবোধগুলো থাকা প্রয়োজন। ২২ গজে গিয়ে ও উইকেটকে স্পর্শ করল, অসাধারণ মুহূর্ত ছিল সেটি। শচীনের এই দিকটা আমরাও কখনো দেখিনি, জানতে পারিনি।
টেন্ডুলকার-দ্রাবিড়-লক্ষ্মণদের নেতৃত্ব দেওয়া...
রাহুল, ভিভিএস, শচীন বা কুম্বলেদের নেতৃত্ব দেওয়া কখনোই খুব কঠিন ছিল না। কারণ মানুষ হিসেবে ওরা সবাই খুব ভালো, সৎ। কেউ কখনো আমার জায়গাটি নিতে চায়নি। যেকোনো সমস্যায় নিশ্চিন্তে ওদের ওপর নির্ভর করতাম। আমার ভাগ্য ভালো যে গ্রেগ চ্যাপেল যুগের পর শচীনকে পাশে পেয়েছিলাম। ও যদি সত্যিটা প্রকাশ্যে না বলত, তাহলে হয়তো আর কখনো ক্রিকেটই খেলতে পারতাম না।