Daffodil International University
Faculty of Allied Health Sciences => Pharmacy => Topic started by: Farhana Israt Jahan on December 02, 2013, 07:58:48 PM
-
ফার্মাসিউটিক্যালসের GMP গাইডলাইন
GMP’র পূর্ন রুপ হচ্ছে Good Manufacturing Practices. ফার্মাসিউটিক্যালস গুলোতে কোয়ালিটি সম্পন্ন ঔষুধ তৈরীর জন্য কিছু কোয়ালিটি মেইন্টেইন করতে হয়। কোয়ালিটি সম্পন্ন ঔষুধ প্রস্তুতির জন্য যে ধরনের Practice follow করতে হয়,তা-ই GMP গাইডলাইনে দেয়া থাকে। বিভিন্ন দেশ নিজেদের মত করে GMP গাইডলাইন করে নিয়েছে এবং ঐসব দেশের ঔষুধ শিল্পে অবশ্যই এই গাইডলাইন Follow করতে হয়। আমেরিকাতে কোন ড্রাগ বা ঔষুধ কোয়ালিটি সম্পন্ন হলেও তা ভেজাল বলে গণ্য হতে পারে, যদি এটি GMP গাইডলাইন Follow করে তৈরী না হয়।
আমেরিকার ঔষুধ শিল্পের দায়িত্ব নিয়োজিত কর্তৃপক্ষ ১৯৬৩ সালে সর্বপ্রথম GMP গাইডলাইন প্রস্তাব করেন। এরপর থেকে এটা বিভিন্ন দেশেও চালু হয়। তবে কোন GMP গাইডলাইন-ই চিরস্থায়ী নয়। এটা নিয়মিত পরিবর্তীত(Update) হয়।
GMP গাইডলাইন- উদ্দেশ্যঃ
১)জনসাধারনের কাছে সর্বোচ্চ কোয়ালিটি সম্পন্ন ঔষধ পৌঁছানো।
২)এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে সম্পূর্নরুপে নিশ্চিত হওয়া যায় যে সেখানে যতগুলো ঔষুধ প্রস্তুত হয়েছে সবই কোয়ালিটি সম্পন্ন।
৩)জনবান্ধব পরিবেশে ঔষুধ প্রস্তুতি নিশ্চিত করা।
৪)উপযুক্ত পরিবেশ ঔষুধ সংরক্ষন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
-ফার্মাসিউটিক্যলাস গুলোতে কয়েকটি বিভাগ থাকে। যেমন Q/C বা কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিভাগ প্রতিটি স্টেজে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখে ড্রাগের কোয়ালিটি কোন পর্যায়ে। আর প্রোডাকশন বিভাগ ড্রাগের কোয়ালিটি ঠিক রাখার জন্য কাজ করে। এক্ষেত্রে আবার কোন মেশিন ব্যবহার করতে হবে, কোথায় কিভাবে মেশিন স্থাপন করতে হবে, বিল্ডিং এ ডিজাইন কেমন হতে হবে এ কাজ গুলো করে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট। আর এসব নিজের খেয়াল খুশি মত করলে চলে না। এর সবগুলোই করতে হয় GMP গাইডলাইন অনুসারে।
GMP গাইডলাইন’ এ কি কি থাকে -
১) কর্মকর্তা-কর্মচারীঃ
ক) ফার্মাসিউটিক্যলসের জনশক্তিকে অবশ্যই প্রশিক্ষিত ও দক্ষ হতে হবে। তাদের উপযুক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। নিয়মিত তাদের প্রশিক্ষন দিতে হবে। এগুলো সব শ্রেনীর কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্যই প্রযোজ্য। হোক ফার্মাসিস্ট বা টেকনিশিয়ান বা সাপোর্টিং স্টাফ।
খ) বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাহিরের অন্য সংগঠনের প্রতি আগ্রহী হওয়া যাবেনা। কারন এটা তাদের কাজের গতিকে মন্থর করে দিবে।
২) Premises বা ফার্মাসিউটিক্যলাসের বিল্ডিংসমূহ ও আনুষঙ্গিক এলাকাঃ
ঔষুধ প্রস্তুতি, লেভেলিং ও টেস্ট করার জন্য উপযুক্ত জায়গা থাকতে হবে। একাজগুলো যে জায়গায় করা হয় সেখানকার নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট থাকতে হবে। যেমন-
• ঔষধের মধ্যে দুই ধরনের উপাদান থাকে। Active ingredient এবং Excipient. যে উপাদানের কারনে সে ঔষধ রোগ দমন করে তাকে Active ingredient বলে। আর Active ingredient কে সাপোর্ট করার জন্য যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয়, সেগুলোকে বলে Excipient. বিভিন্ন ঔষুধের ক্ষেত্রে Active ingredient গুলোর মধ্যে যদি সামঞ্জস্য থাকে, তাহলে তা একই রুমে বা পাশাপাশি রুমে ম্যানুফেকচারিং কাজ করা যেতে পারে।
• প্রতিটি রুমে পর্যাপ্ত জায়গা থাকতে হবে যাতে করে বিভিন্ন মেশিন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সহজেই সেখানে স্থাপন করা যায় এবং সেখান থেকে সরানো যায়।
-ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রত্যেক বিভাগের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ থাকতে হবে এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এটা পর্যবেক্ষন করবেন।
- Active ingredient and Excipient মিশ্রনের সময় কোন প্রকার কনফিউশন থাকা যাবেনা।
-Cross contamination বা এক ড্রাগের সাথে অন্য ড্রাগ মিশে যাওয়ার যেকোন পথ বন্ধ করে দিতে হবে।
• বিল্ডিং’র ডিজাইন প্রোডাকশনের উপযুক্ত হতে হবে।
• ভিতরের দেয়াল, মেঝে ও ছাদ মসৃন হতে হবে।
• উপযুক্ত ড্রেইনেজ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
• উপযুক্ত আলো বাতাস সরবরাহের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এবং যেমন তাপমাত্রা ও আলো প্রয়োজন তেমন তাপমাত্রা ও আলোর ব্যবস্থা করতে হবে।
• পেনিসিলিন, সেপালোসপোরিন ইত্যাদি প্রস্তুতির জন্য অবশ্যই অন্যদের থেকে আলাদা রুম এমনকি সম্ভব হলে আলাদা বিল্ডিং’র ব্যবস্থা করতে হবে।
• যেখানে ড্রাগ স্টোর বা জমা রাখা হবে সেখানে পর্যাপ্ত জায়গা থাকতে হবে এবং প্রত্যেকটি ড্রাগের আলাদা আলাদা লেভেলিং থাকতে হবে, যাতে করে একটি ড্রাগকে অন্যটি থেকে আলাদা করা যায়।
• একটা জায়গা থাকতে হবে, যাকে বলা হয় Quarantine area, ঔষুধ তৈরীর কাঁচামাল বাহির থেকে এসে প্রথমে এখানে জমা করতে হবে। এবং এখান থেকে Q/C ডিপার্টমেন্ট তার কোয়ালিটি টেস্ট করে উপযুক্ত মনে করলেই তা ঔষুধ প্রস্তুতির উপযুক্ত কাঁচামাল বলে গণ্য হবে। তা নাহলে এগুলো দিয়ে ঔষুধ প্রস্তুত করা যাবেনা।
• যেসব ড্রাগ অল্প তাপমাত্রায় সংরক্ষন করতে হয় সেগুলোকে, এবং বিষাক্ত ও চেতনানাশক ঔষুধগুলোকে অবশ্যই আলাদা স্থানে সংরক্ষন করতে হবে।
• প্রোডাকশন এরিয়ার পাশে অবশ্যই চেইঞ্জ রুম থাকতে হবে। কারন স্বাভবিক পোশাক পরিবর্তন করে এখানে প্রোডাকশনের কাজ উপযোগী এমন পোশাক পরতে হবে যা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শরীরিক কোন ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে এবং ঔষুধকেও বাহিরের জীবানু থেকে রক্ষা করবে।
• প্রত্যেক প্রোডাকশন রুমের পাশে অবশ্যই সেকশন রুম থাকতে হবে যেখানে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ধৌত করা হবে।
• যেখানে তরল ঔষুধ প্রস্তুত করা হবে সেখানে উপযুক্ত ড্রেনেজ সিস্টেম থাকতে হবে।
• ক্যাপসুল তৈরীর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট আদ্রতা বজায় রাখতে হবে। (৪০% বা তার চেয়ে কম)
• অপ্রত্যাশিত ধূলাবালি বের করে দেয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
• যেসব ঔষুধ মুখ ভিন্ন অন্য কোন রুটে প্রয়োগ করা হয় (যেমন ইনজেকশন) সেসব ক্ষেত্রে তা অবশ্যই স্টেরাইল হতে হবে। অর্থাৎ ব্যক্টেরিয়া ও অন্যান্য অনুজীব মুক্ত হতে হবে। এসব ক্ষেত্রে এগুলোর প্রস্তুতির রুমও স্টেরাইল হওয়া প্রয়োজন।
৩) যন্ত্রপাতিঃ
ক)গঠন ও ডিজাইনঃ
• প্রতিটি মেশিন ম্যানুফেচারিং কাজের জন্য সর্বাধিক উপযোগী হতে হবে এবং এটি এমন হতে হবে যেন তা সহজে পরিষ্কার করা যায়।
• এমন জিনিস দিয়ে মেশিন প্রস্তুত করতে হবে যেন তা ঔষুধের কোন উপাদানের সাথে বিক্রিয়া না করে।
খ) স্থাপনঃ
• বিভিন্ন মেশিন এমনভাবে দূরত্ব বজায় রেখে স্থাপন করতে হবে যাতে Cross Contamination না হয়।
• প্রতিটি মেশিন যখন স্থাপন করা হবে, তখন সাথে একটি সনাক্তকারী নাম্বারও দিতে হবে।
গ) পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাঃ মেশিন ও যন্ত্রপাতি সুন্দরভাবে নির্দেশনা অনুসারে পরিষ্কার করতে হবে। এবং যদি প্রয়োজন হয় তবে স্টেরাইল করতে হবে।
৪) সেনিটেশন
• প্রোডাকশন রুম, আঙ্গিনা, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
• ফার্মাসিউটিক্যালসে ঔষুধ উৎপাদনে যারা প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করবে, তাদের অবশ্যই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে।
• ম্যানুফেকচারিং এরিয়াতে প্রবেশের পূর্বে সবাইকে অবশ্যই যথাযথ পোশাক পরিধান করতে হবে।
• পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন টয়লেটের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
• ম্যানুফেকচারিং এরিয়াতে কোন কিছু খাওয়া বা পানকরা সম্পূর্নরুপে নিষিদ্ধ।
৫) প্রয়োজনীয় কাঁচামাল
• ঔষুধ প্রস্তুতিতে যে যে কাঁচামালের প্রয়োজন সেগুলোকে অবশ্যই উতপাদন শুরুর পূর্বেই সংগ্রহ করতে হবে।
• যাদের কাছ থেকে কাঁচামাল আনা হবে তাদের নৈতিকতা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল থাকতে হবে।
• কোন কাঁচামাল তখনই ব্যবহার করা যাবে, যখন Q/C ডিপার্টমেন্ট এটাকে ব্যবহার করার অনুমতি প্রদান করবে।
৬) ম্যানুফেকচারিং অফারেশন
• কোন ধাপের পর কোন ধাপ, তার একটা লিখিত ডকুমেন্ট থাকতে হবে।
• যেকোন অপারেশন শুরুর পূর্বে সুপারভাইজারকে অবশ্যই দেখতে হবে যে মেশিন ঠিকঠাকভাবে পরিষ্কার করা হয়েছে কিনা।
• ম্যানুফেকচারিং কাজে ব্যবহৃত সব পাত্র ও যন্ত্রপাতিকে অবশ্যই লেভেলিং করে নিতে হবে যাতে করে সহজেই সনাক্তকরণ করা যায়।
• একই সময়ে একই রুমে বিভিন্ন ঔষুধের ম্যানুফেকচার করা যাবেনা।
• অপারেশনের প্রতিটি ধাপের ফলাফল রেকর্ড করতে হবে।
• অপারেশন চলাকালীন প্রতিটি ধাপের ফলাফল চেক করতে হবে। একে বলে In Process Control.
৭) প্যাকেজিং এবং লেভেলিং
• প্যাকিং করার পর যদি দেখা যায় কিছু প্যাকেজিং কাঁচামাল অবশিষ্ট রয়ে গেছে, তাহলে তা পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য স্টক/জমা করে রাখা যাবেনা।
• একই রকম দেখতে যে ঔষুধগুলো সেগুলোকে একই সময়ে একই রুমে প্যাকিং বা লেভেলিং করা যাবেনা।
৮) কোয়ালিটি কন্ট্রোল সিস্টেম
• Q/C ডিপার্টমেন্টের পর্যাপ্ত পরিমাণ স্টাফ, ল্যাবরেটরি থাকতে হবে প্রডাক্টের কোয়ালিটি টেস্ট করার জন্য।
• ম্যানুফেকচারিং এরিয়ার Environment যথাযথ আছে কিনা, তাও চেক করার দায়িত্ব Q/C ডিপার্টমেন্টের।
• কোন ঔষুধ কতদিন ভালো থাকবে তা নির্নয় করে Q/C ডিপার্টমেন্ট, এবং এভাবে তারা ঔষুধের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ দেয়, যার পরে এটাকে আর ব্যবহার করা যাবেনা। এছাড়াও কোন পরিবেশে (তাপমাত্রায়) ঔষুধটি ভালো থাকবে তা নির্নয় করার দায়িত্বও Q/C ডিপার্টমেন্টের।
• In Process Control ও নিয়ন্ত্রন করে এ ডিপার্টমেন্ট।
• বিভিন্ন ধাপে বিভিন্ন টেস্টের যে রিপোর্ট পাওয়া যায়, তা এ ডিপার্টমেন্টকে সংরক্ষন করে রাখতে হয়।
৯) ডকুমেন্টেশন
• প্রতিটি ধাপের কার্যপদ্ধতি ও ফলাফল ডকুমেন্ট আকারে রাখতে হবে।
• প্রতিটি ব্যাচ সাইজ (একসাথে কতগুলো ট্যাবলেট/ ক্যাপসুল ইত্যাদি প্রস্তুত করা হয়েছে), তারিখ ইত্যাদি ডকুমেন্ট আকারে জমা রাখতে হবে।
১০) রিকলিং
• মার্কেট থেকে যদি ঔষুধের ব্যাপারে কোন অভিযোগ আসে, তবে তা যাচাই বাছাই করে দেখতে হবে।
• এমন একটা ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে করে যে কোন সময় যেকোন ঔষুধকে মার্কেট থেকে সরিয়ে ফেলা যায়।
এগুলো GMP’র সাধারন গাইডলাইন। বিভিন্ন দেশ/সংস্থাভেদে এগুলো সামান্য এদিক সেদিক হতে পারে। তবে প্রত্যেক ফার্মাসিউইক্যাল কোম্পানিকে অবশ্যই GMP’র গাইডলাইন মেনে চলতে হয়।
-collected