Daffodil International University
Famous => Place => Topic started by: Kanij Nahar Deepa on December 04, 2013, 10:42:48 AM
-
রাতারগুলের আবেশ তখনো কাটেনি। সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে। ফিরে চলেছি সিলেটের পথে। তবে মনে, প্রাণে জলাবন (সোয়াম্প ফরেস্ট) রাতারগুল রয়ে গেছে পুরোটাই। বর্ষার শুরুর দিকে গিয়েছিলাম। পানিতে থইথই রাতারগুল। সেই পানিতে বৃক্ষরাজি যেন নৃত্যরতা। আর পাখির শব্দ প্রকৃতিকে নতুন করে যেন চিনিয়ে নেয়। শ্যামল সিলেটে দেখার মতো প্রকৃতি এখানে-সেখানে অনেক রয়েছে। জাফলং, লালাখাল, সিলেট শহরের আশপাশ—কত কী। শুধু কি সিলেট? মৌলভীবাজারের চা-বাগান, লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চল, বড়লেখা উপজেলার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত—এই অঞ্চলে ঘুরে বেড়িয়ে দেখার মতো আছে অনেক কিছু। তার পরও মনে হয়, সিলেট শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরের ৫০৪ দশমিক ৫ একর জায়গাজুড়ে থাকা রাতারগুল অনবদ্য। এখন, মানে শীতকালে রাতারগুলের পুরোটাজুড়ে পানি নেই। ইতিউতি দু-একটা জলায় কিছুটা পানি। হেঁটে হেঁটেই ঘোরা যাবে রাতারগুল। হাঁটতে ভালোই লাগবে। গাছের ঝরে পড়া পাতাগুলো পায়ের নিচে বিছিয়ে রেখেছে পুরু নরম গালিচা।
লাউয়াছড়ার মধ্য দিয়ে রেলপথশহরে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়। সিলেটে আমাদের সাংবাদিক-আলোকচিত্রী উজ্জ্বল মেহেদী, আনিস মাহমুদ, মিসবাহ উদ্দিনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা আর গবেষণা হলো, সিলেটের আসল ‘কড়াই’ কোথায় খাওয়া যায়। সিলেটে এলে দুটি খাবারের খোঁজ বরাবরই করি। ও দুটোর স্বাদ না নিয়ে কখনোই সিলেট থেকে ফিরিনি। ‘কড়াই’ খাবারটা আসলে মাংস ভুনা। লোহার পাতলা ছোট কড়াইতে দেশি মুরগি ছোট ছোট টুকরা করে কেটে ভুনা করা হয়। ঝালটা একটু বেশি হলেই মজা। শুধু মুরগি নয়, খাসি ও গরুর মাংসের কড়াইও রান্না করা হয়। সিলেটের প্রায় সব হোটেলেই এ খাবার পাওয়া যায়।
বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের চা-বাগানে একটা খাবারের দেখা মেলে। শ্রীমঙ্গলের একটা চা-বাগানে এই বিশেষ খাবার খাওয়া হয়েছিল। পাতার চাটনি—চা-শ্রমিকদের দুপুরের খাবার। চালভাজার সঙ্গে কয়েকটা কাঁচা চা-পাতা, ধনেপাতা, কাঁচা মরিচ, সরিষার তেল ও লবণ দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে এটা খেতে হয়। একটুখানি নাগা মরিচ হলে পাতার চাটনি জমে ভালো। তবে নাগার ঝাল খুব বেশি—মনে রাখতে হবে।
সাতকড়ার আচার কয়েক বোতল কেনা হয়েছিল আগেই। সিলেট থেকে ফেরার আগের রাতে সাতকড়া কেনার পালা। আনিস ও মিসবাহ নিয়ে গেলেন বাজারে। সাতকড়ার সঙ্গে নতুন করে পরিচয়ের কিছু নেই। তবে নতুন দেখলাম আরও দুটি লেবুজাতীয় ফল। জারা লেবু, আদা জামিরা আর টোনা লেবু। জারা লেবু আকারে বেশ বড়। এর পুরোটাই খাওয়া যায়। কেটে সালাদ হিসেবে খেতেই মজা। আদা জামিরা লেবু সাধারণ লেবুর মতো দেখতে। এটি ইলিশ মাছের সঙ্গে খেতে হয়। টোনা লেবু আকারে ছোট, এর আছে সুগন্ধ।
সিলেটের সাতকড়া মাংস, ইলিশ মাছ আর ডালে দিয়ে খেতে ভালো। সাতকড়া কিনে এনে বাসায় রান্না করার পর বেশ কবার দেখেছি, তরকারিতে একটা তেতো ভাব চলে আসে। এই তেতো ভাব দূর করার টিপস নিয়ে এসেছি এবার। সাতকড়া প্রথমে লম্বা টুকরো করে কেটে নিতে হবে। এরপর ভালো করে ধুয়ে নিন। ধোয়ার পর টুকরাগুলোতে লবণ মাখিয়ে কচলে কচলে পানিটা ফেলে দিন। আবার ধুয়ে রেখে দিতে হবে। এরপর রান্নার সময় তরকারিতে ছেড়ে দিন।
চা-বাগান, পাহাড়-টিলা নানা কিছুর জন্য আছে সিলেটের পরিচিতি। আবার শুধু এই সাতকড়ার নাম শুনলেই মনে পড়ে সিলেটের দেশে। তাই সিলেট যেমন দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ, তেমনি সাতকড়ার দেশও সিলেট।