Daffodil International University
Faculty of Humanities and Social Science => Law => Topic started by: Ferdousi Begum on December 08, 2013, 01:05:40 PM
-
রাজনৈতিক কারনে গ্রেফতার বা নিপীড়নের সম্ভাবনা দেখা দিলে যদি কেউ তার স্বীয় দেশকে অনিরাপদ ভেবে ঐ গ্রেফতার বা নিপীড়ন এড়ানোর জন্য অন্য কোন দেশের কাছে আশ্রয় চায় এবং ঐ দেশ যদি আশ্রয় দিয়ে থাকে তবে তখন ঐ আশ্রয়কে বলা হয় রাজনৈতিক আশ্রয়। প্রত্যেক ব্যক্তিই অন্য রাষ্ট্রের কাছে এই রাজনৈতিক আশ্রয় আদায়ের প্রার্থনা করতে পারে এবং ভোগ করতে পারে। এটা এক ধরনের অধিকারও বটে। কেননা, মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ১৪(ক) অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে যে, “নিজ রাষ্ট্রে রাজনৈতিক বা আদর্শগত কারনে নিপীড়ন বা গ্রেফতার এড়ানোর জন্য প্রত্যেক ব্যক্তির অন্য রাষ্ট্রে আশ্রয় প্রার্থনা ও ভোগ করার অধিকার রয়েছে”।
রাজনৈতিক আদর্শগত বা ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের জন্য কোন ব্যক্তিযদি তার নিজ রাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত হয় অথবা যদি তাকে পশ্চাদ্ধাবন করা হয় তাহলে ঐ ব্যক্তি অন্য রাষ্ট্রে প্রবেশ ও বসবাসের জন্য যে অনুমতি প্রার্থনা করে তাই রাজনৈতিক আশ্রয়ের অধিকার।
নির্যাতন, যন্ত্রণা, ক্লেশ, রাজনৈতিক উত্তেজনা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই কেবল রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে পারবে। কিন্তু, কোন অরাজনৈতিক কাজ করে অভিযুক্ত হলে, রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলে তা পাওয়া যাবে না। আবার, জাতিসংঘের নীতির বিরুদ্ধে কোন কাজে কেউ অভিযুক্ত হলে সেও রাজনৈতিক আশ্রয় নাও পেতে পারে। রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদান করাটা আশ্রয়দানকারী রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের বহিঃপ্রকাশ, যা ঐ রাষ্ট্র নিজস্ব বিবেচনায় দিয়ে থাকে। এই আশ্রয় বিভিন্ন উপায়ে দেওয়া হয়। যেমন, কাস্টম বা প্রথার ভিত্তিতে, ট্রিটি বা চুক্তির ভিত্তিতে ইত্যাদি। তবে, ট্রিটি বা চুক্তির মাধ্যমে রাজনৈতিক আশ্রয় সবচেয়ে বেশী প্রচলিত।
আশ্রয়দানকারী রাষ্ট্রের আশ্রয় দানের ক্ষমতাকে অঞ্চলের ভিত্তিতে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
1. Territorial Asylum
2. Extra-territorial Asylum
Territorial Asylum: এই ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি কোন রাজনৈতিক বা ধর্মীয় কারনে গ্রেফতার, নির্যাতন, যন্ত্রণা ইত্যাদির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে, সেই ব্যক্তি অন্য কোন রাষ্ট্রে প্রবেশ করে সেই রাষ্ট্রের কাছে আশ্রয় চাইতে পারেন। তখন ঐ রাষ্ট্র উক্ত ব্যক্তিকে তাদের নিজ ভূখণ্ডে আশ্রয় প্রদান করতে পারেন। তবে, এই ক্ষেত্রে আবারো বলতে হয়, রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদান করাটা আশ্রয়দানকারী রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের বহিঃপ্রকাশ, যা ঐ রাষ্ট্র নিজস্ব বিবেচনায় দিয়ে থাকে। আশ্রয় প্রদানকারী রাষ্ট্র তাদের জাতীয় নিরাপত্তাজনিত কারনে আশ্রয় দিতে অস্বীকার জ্ঞাপন করতে পারে। আবার জনসংখ্যার মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যায় আশ্রয় প্রার্থী থাকলে, তখনও নিজ রাষ্ট্রের জনগণের জন্য হুমকি সৃষ্টি হতে পারে এমনটা ভেবে আশ্রয় নাও দিতে পারে। যেমন, গত বৎসর মায়ানমারে যখন মুসলিম রুহিঙ্গারা নিজ দেশে নির্যাতিত হচ্ছিল, তখন তারা আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে পাড়ি জমায়। বাংলাদেশ প্রথমে তাদের আশ্রয় দিলেও যখন তা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছিল, তখন তা স্থানীয় জনগণের জন্য হুমকি স্বরূপ ভেবে বাংলাদেশ সরকার আশ্রয় প্রদানে অস্বীকার করেন। তবে, এই ক্ষেত্রে আশ্রয় দিতে না পারলেও ঐ রাষ্ট্রের উচিত অন্য কোন উপায়ে যেমন- সামরিক আশ্রয় প্রদান করে বা অন্য রাষ্ট্রে যেতে বা আশ্রয় লাভ করতে সাহায্য করা। এই ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। তবে, ১৯৬৭ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত ভূখণ্ডগত আশ্রয় সংক্রান্ত ঘোষণায় বলেছে, নিপীড়ন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আশ্রয় প্রার্থীকে রাষ্ট্রীয় সীমানায় চেকপয়েন্টে প্রত্যাখ্যান করা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যদি ভূখণ্ডে প্রবেশ করেই থাকে তাহলে তাকে ফেরত পাঠানো যাবে না। এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের মধ্যে কিছু চুক্তি বা ট্রিটি করাই থাকে যে, রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হবে। ঐ সব চুক্তি অনুসারে নিজ ভূখণ্ডে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া নিয়ে কোন প্রকার প্রশ্ন থাকে না।
Diplomatic Asylum/Extra- territorial Asylum: রাজনৈতিক আশ্রয়ের ক্ষেত্রে নিজ ভূখণ্ডের বাহিরে গিয়ে আশ্রয়ের সাথে আমরা বেশ পরিচিত নই। শুধু নিজ ভূখণ্ডে নয় এর বাহিরে গিয়েও একটি রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের কোন ব্যক্তিকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে পারে। যার কারনে একে ইংরেজিতে বলা হয় Diplomatic Asylum/Extra- territorial Asylum. এই ক্ষেত্রে একটি রাষ্ট্র তার রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার এখতিয়ারকে কিছুটা বৃদ্ধি বলা যায়। কেননা, Diplomatic Asylum এর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীকে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদানকারী রাষ্ট্রে প্রবেশ করার প্রয়োজন হয় না। যে রাষ্ট্র তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে প্রস্তুত, সেই রাষ্ট্রের দূতাবাসে প্রবেশ করলে ঐ দূতাবাস তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে পারবে। কেননা, প্রত্যেক দেশে নিযুক্ত হাই-কমিশনাররা যে দূতাবাসতে অবস্থান করেন তা তাদের রাষ্ট্রের ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই, নিজ দেশে থেকেও অন্য দেশের দূতাবাসতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়া সম্ভব। Diplomatic Asylum এর ক্ষেত্রে একটি বিখ্যাত মামলা রয়েছে, মামলাটির নামও অবশ্য Asylum Case. এই মামলাটি হয়েছিল Colombia vs Peru ‘র মধ্যে। এই মামলাটি হয়েছিল ১৯৫০ সালে International Court of Justice(ICJ) এ। এই মামলায় পেরুর ঐ অভিযুক্ত ব্যক্তি রাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল সামরিক অভ্যুত্থানের। ঐ ব্যক্তি কলম্বিয়ার দূতাবাসে আশ্রয় নেয়। কিন্তু International Court of Justice এই মামলার রায়ে আশ্রয় দেওয়া থেকে বিরত থাকতে কলম্বিয়াকে অর্ডার দেয়। এখানে, উল্লেখ্য যে দূতাবাসে আশ্রয়কে আদালত প্রশ্নবিদ্ধ করে নি, তবে অভিযুক্ত ব্যক্তির অপরাধ কোন সাধারণ অপরাধ ছিল না বিধায় তাকে আশ্রয় দিতে অস্বীকারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে, এটি একটি কাস্টম বা প্রথা, যা ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে বেশী প্রচলিত। দক্ষিণ এশিয়া তথা এশিয়াতেও এমন কাস্টম এখনো খুব একটা প্রচলন পায়নি। আর, আইনে সবসময় সেই কাস্টমকেই প্রাধান্য দেওয়া হয় যা অনেক দিন ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। তাই, এই প্রথাটি আমাদের দেশের জন্য কার্যকর নয় বললেই চলে।
আবার, ব্যবসায়িক জাহাজ কিংবা যুদ্ধ জাহাজেও রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার নজির রয়েছে। জাহাজের ক্ষেত্রে যে রাষ্ট্রের পতাকা ব্যবহার করা হয়, সেই রাষ্ট্র যদি কোন ব্যক্তিকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে সম্মত হয়, তবে উক্ত জাহাজে আশ্রয় প্রার্থীকে আশ্রয় দেওয়া যাবে। স্থায়ীভাবে রাজনৈতিক আশ্রয় না দেওয়া হলেও সাময়িক আশ্রয় দেওয়ার অধিকার আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের রয়েছে। এইসব আশ্রয় মূলত মানবিক বিবেচনা দেওয়া হয়।
রাজনৈতিক আশ্রয়ে ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যেই বিষয়টি কাজ করে সেটি হচ্ছে আশ্রয় প্রার্থনা কারী কি সত্যিকার অর্থে রাজনৈতিক আদর্শগত বা ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত আবার তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ কি সত্যি কিনা। কেননা, রাজনৈতিক আশ্রয় তাদেরই প্রাপ্য যারা কোন দলের নেতা ছিলেন বা আছেন, এখন তাকে রাজনৈতিক ভাবে হয়রানি, গ্রেফতার, নিপীড়ন করার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বা মামলা করা হয়েছে বা সে যে ধর্মাবলম্বী সেই ধর্মের লোকের উপর তার দেশে নিপীড়ন চলছে ঠিক এমন ব্যক্তিদের। সত্যিকার অর্থে একজন অপরাধীকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হলেও আন্তর্জাতিক আইনও সব সময় অপরাধীর শাস্তি কামনা করে। তাই, অরাজনৈতিক ব্যক্তি, কিংবা গুরুতর অপরাধীরা বা রাষ্ট্র বা জাতিসংঘের নীতি লঙ্ঘনকারীরা এই আশ্রয়ের সুযোগ সুবিধার আওতামুক্ত।
লেখকঃ তানভির চৌধুরী (Law-yer)