Daffodil International University
Faculty of Humanities and Social Science => Law => Topic started by: Ferdousi Begum on December 13, 2013, 10:53:52 AM
-
গত এক দশকে বিশ্বে ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোর ব্যবসা ও অর্থনীতিতে ই-কমার্স সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার অংশ হয়ে উঠেছে। ই-কমার্সের এই জনপ্রিয়তার কারণ হচ্ছে, আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি, জাপান অথবা সুইডেনে সাধারণ জনগণের পক্ষে তাদের চাকরি, সংসার ও ব্যস্ত দৈনন্দিন জীবনের অন্য কর্মকাণ্ডের চাপে কেনাকাটার জন্য সময় বের করা খুব দুরূহ হয়ে ওঠে। আর সে জন্য মাত্র ২৪ ঘণ্টার একটি দিনে সময় বাঁচানোর তাগিদে তারা সকালের নাশতার রুটি-মাখন থেকে শুরু করে গাড়ি-বাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ সব কেনাকাটার ক্ষেত্রেই এখন ই-কমার্সের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে দিনের পর দিন।
আমেরিকা ও ইউরোপে লাক্সারি ডিজাইনের ব্র্র্যান্ড পণ্যের প্রতিষ্ঠানগুলো তো বটেই এবং এর সঙ্গে জনগণের জীবনযাত্রায় প্রযুক্তিগত সহায়তাদানকারী প্রতিষ্ঠান, এমনকি খাবারের রেস্টুরেন্টগুলোও এখন অনলাইনে তাদের পণ্য, গ্রাহকসেবা আর ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের বিবরণ দিয়ে গ্রাহকের মন জয়ের চেষ্টা করছে। নানা পরিসংখ্যানেও দেখা গেছে, অনলাইনে তথ্যসমৃদ্ধ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুব দ্রুত বেশিসংখ্যক গ্রাহকের কাছে পৌঁছতে সক্ষম হচ্ছে অনলাইনে পণ্যতথ্য না থাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায়। উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির দেশগুলোর কথা। যেমন চীন, ব্রাজিল, রাশিয়া ও ভারতের ছোট ও মাঝারি মানের কম্পানিগুলো তাদের পণ্য প্রদর্শন ও যথাযথ পণ্য প্রদানের গ্যারান্টি দিয়ে অনলাইনেই বিদেশি বড় কম্পানিগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হচ্ছে। alibaba.com, e-bay, amazon.com- এসব বড় অনলাইন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শুধু ই-কমার্সের মাধ্যমে সফল ও জনপ্রিয় ব্যবসা করে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে অন্য ধরনের এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। যার সাফল্য বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতিবিদকে বিস্মিত হতে বাধ্য করেছে।
বিশ্বের প্রেক্ষাপটে এবার যদি আমরা বাংলাদেশের ই-কমার্স সাফল্যের দিকটি বিবেচনা করি, তাহলে দেখা যায়, বাংলাদেশও কিছুটা এগিয়েছে ই-কমার্সে। কিন্তু উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে আমরা দেখি, বাংলাদেশ অনেক অনেক পিছিয়ে আছে এ ক্ষেত্রে। যদিও ২০১৩ সালে বাংলাদেশে ই-কমার্স ১৫০ শতাংশ বেশি বেড়েছে ২০১২ সালের তুলনায়। ২০১০-১১ সালে বাংলাদেশে ই-কমার্সে মোট ব্যবসার পরিমাণ ছিল ৮০ কোটি টাকা। আর ২০১০-১১ সালে বাংলাদেশে ই-কমার্সে মোট ক্রেতার সংখ্যা ছিল দুই মিলিয়ন, যেটি বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১.৩ শতাংশ। বাংলাদেশে বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ৩.৫ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। যেখানে ২০০৯-১০ সালে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র .৪ শতাংশ। তবে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল কম্পানিগুলো কর্তৃক থ্রিজি ইন্টারনেট প্রযুক্তি চালু করার সুবাদে ও মোবাইলের প্রাপ্তি সহজ শর্তে হওয়ায়, সে সঙ্গে ব্যাংকগুলোর ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ই-কমার্সসেবা গ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা খুব দ্রুত বাড়ছে। তা ছাড়া বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় অনলাইনে অর্থ পরিশোধের নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান PAYPAL, বাংলাদেশে তাদের শাখা খোলায় বাংলাদেশে ই-কমার্স বিস্তারে বড় রকমের সহায়তা করবে আগামী দিনগুলোতে।
বাংলাদেশে এখন যাঁরা ই-কমার্স ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের বেশির ভাগই দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী। যেটি বাংলাদেশে ই-কমার্স বিস্তারের ক্ষেত্রে আরো একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। বাংলাদেশে বর্তমানে কেনাকাটায় যেসব সাইট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তার মধ্যে অন্যতম www.bikroy.com ও www.sellbazar.com; যেখানে ক্রেতা ও বিক্রেতা পণ্য কেনা ও দাম পরিশোধের ক্ষেত্রে নিজেরাই দায়-দায়িত্ব বহন করে থাকেন; ওয়েবসাইট কোনো দায়িত্ব নেয় না। অপরদিকে www.chaldal.com ও www.akhoni.com এসব সাইট নিজেদের দায়িত্বে কেনাবেচার দিকটি দেখে।
www.e-brandsworld.com-এর পরিকল্পনা হচ্ছে আগামী পাঁচ বছরে এ প্রতিষ্ঠানটিকে আন্তর্জাতিক বাজারে একটি উচ্চ গ্রাহক সন্তুষ্ট মানে পৌঁছে দেওয়া।
অনেকে অবশ্য প্রশ্ন করতে পারেন যে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর কেনাবেচায় দেশের কী লাভ? উত্তর হচ্ছে, এই পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেমন ই-কমার্স নিজ নিজ দেশের জিডিপি বা প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে, বাংলাদেশেও তেমনি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো জিডিপি বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে যেটি গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হলো, বাংলাদেশে ইন্টারনেট সংযোগকে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা। বাংলাদেশকে এখনো পৃথিবীতে খুব ব্যয়বহুল ইন্টারনেট সেবার দেশ বলা যায়, যেখানে ইন্টারনেট সেবা গ্রহণকারীকে আমেরিকা, কানাডা বা ব্রিটেনের চেয়েও বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হয় এবং এই একমাত্র কারণে বাংলাদেশে ই-কমার্স একটি ক্ষুদ্র পরিসরের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে আছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায়। এর সঙ্গে আমরা যদি ব্যাংকিং সেক্টরের দিকে বিবেচনা করি, তাহলে দেখা যায়, বাংলাদেশে ই-কমার্স বিস্তারের বিরোধী হিসেবে এসব দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোও বহুলাংশে দায়ী। ব্যাংক ছাড়া ই-কমার্সের লেনদেন সম্ভব নয় বলে এ সুবিধাটিকে অস্ত্র হিসেবে, তাদের অর্থ উপার্জনের উপায় হিসেবে নিয়েছে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো।
যদিও বাংলাদেশে বর্তমানে ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও সাম্প্রতিক সময়ে সিটি ব্যাংকও যোগ দিয়েছে ই-কমার্স প্রসারে। তবে সমস্যা হচ্ছে গ্রাহকদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের গেটওয়ে হিসেবে ব্যাংক দরকার হয়, শুধু এ সুবিধার জন্য ব্যাংকগুলো এক লাখ টাকা জামানত নিচ্ছে বাংলাদেশে, যেটি একেবারেই অযৌক্তিক। কারণ ই-কমার্সে পণ্য ক্রেতা ও বিক্রেতার লেনদেনে মাধ্যম ব্যাংক। এ জন্য তারা প্রতি লেনদেন বাবদ ফি কেটে নিচ্ছে এবং এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর আগ্রাসী মনোবৃত্তির কথাও উল্লেখ করা দরকার। ব্রিটেনে প্রতি ২৭টি লেনদেন বাবদ ব্যাংকগুলো যেখানে ফি রাখে পাঁচ পাউন্ড, সেখানে বাংলাদেশে প্রতি লেনদেন বাবদ কেটে রাখা হয় ৩ থেকে ৪ শতাংশ। বাংলাদেশে লেনদেনের এই ফি উন্নত বিশ্বের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে এটাকে বরং দিনের আলোয় ডাকাতি হিসেবে অভিহিত করাই সংগত। এ ক্ষেত্রে আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংকেরও কোনো নিয়মকানুন নেই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে।
শেষ কথা বলব, সরকার যদি নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তা করে ই-কমার্সের মতো একটি দ্রুত বিস্তৃত ব্যবসা প্রসারে, তবে এটি জাতীয় জিডিপি বৃদ্ধিতে ভূমিকা তো রাখবেই এবং সেই সঙ্গে এটি নতুন নতুন কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতেও সহায়তা করবে।
-
good post. Thanks for the information.