-
তরুণেরাই পারবে দেশকে এগিয়ে নিতে
মোশাহিদা সুলতানা, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
‘সুখি-সমৃদ্ধিময় ও বৈষম্যহীন একটি বাংলাদেশ আমি সব সময় প্রত্যাশা করি। পত্রিকার পাতায় আর কোনো সহিংসতার খবর থাকবে না, জ্বালাও-পোড়াও থাকবে না, থাকবে শুধু সাফল্যের খবর—এমন একটি স্বপ্ন আমি প্রতিনিয়ত দেখি। আশা করি, দেশের তরুণেরা এমন একটি দেশ আমাদের দেবেই।’ কেমন বাংলাদেশ চান? এ প্রশ্নের উত্তরে এভাবেই নিজের স্বপ্নের কথা বলছিলেন মোশাহিদা সুলতানা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিসটেমসের এই সহকারী অধ্যাপক বলেন, ‘এত দিন পর এসে যেমন শহীদদের ঋণ শোধ করতে পারছি, তেমনি এমন স্বপ্নের সোনার বাংলাও গড়া সম্ভব।’
শিক্ষকতা পেশায় থেকে এই স্বপ্নের বীজ আরও বেশি করে ছড়িয়ে দেওয়া যায় বলে তিনি মনে করেন। ‘যারা তারুণ্যে পা দিয়েছে, তাদের সবার আগে আমরা কাছে পাই। তাই ওদের চেতনা তৈরিতে আমরা অনবদ্য ভূমিকা রাখতে পারি। যে যার জায়গা থেকে কাজ করলে অবশ্যই অনেক ভালো কিছু করা সম্ভব।’ তাঁর জায়গা থেকে বর্তমানে কতটুকু দায়িত্ব পালন করছেন? হাসতে হাসতে উত্তর দেন মোশাহিদা সুলতানা, ‘ক্লাসে গিয়ে যতটা পারি দেশ নিয়ে আলোচনা করি। তরুণদের চাওয়াটুকু শুনি। চেষ্টা করি, চারদিকের অবস্থা সম্পর্কে ওদের সজাগ করতে। দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অবদান রাখার অনুরোধ করি। আমার মনে হয়, এই সময়ের তরুণেরা এ ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন। তারা তাদের কাজটি সঠিকভাবে সঠিক সময়ে করবেই।’
কথা প্রসঙ্গে তিনি হতাশাও ব্যক্ত করেন, ‘আমরা তরুণদের পাশে আছি বলে বিশ্বাস করি, কিন্তু দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে কাজ দিচ্ছি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে। এই কাজগুলো যদি দেশের তরুণদের হাতে দেওয়া হয়, আর যদি সঠিক নির্দেশনা দিয়ে পাশে দাঁড়ানো যায়, তাহলে বিদেশিদের চেয়েও অনেক ভালো কাজ তাদের পক্ষে করা সম্ভব।’
মোশাহিদা সুলতানা শিক্ষকতার পাশাপাশি লেখালেখির সঙ্গেও যুক্ত। বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশ পাচ্ছে অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়ন নিয়ে তাঁর লেখা প্রবন্ধ। লেখালেখি সম্পর্কে বলেন, ‘দেশের মানুষকে সচেতন করার আরও একটি মাধ্যম লেখালেখি। আমার লেখা পড়ে দেশ-বিদেশ থেকে অনেকে যোগাযোগ করেন। মতামত প্রকাশ করেন। তখন মনে হয়, লেখালেখি করাটা সার্থক।’
source: Prothom Alo
-
অপরাধমুক্ত একটি দেশের জন্য কাজ করছি
মাহরুফা হোসেন, সহকারী পুলিশ কমিশনার
প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড ইন্টারনাল ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ
২০১০ সালে ২৮তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশ ক্যাডারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে যুক্ত হন মাহরুফা হোসেন। তাঁর সঙ্গে যখন কথা হয় তখন ছিল হরতাল, তিনি রাজধানীর সচিবালয় এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। কাজের ফাঁকে কিছুক্ষণের জন্য সময় দিলেন।একজন নারী হিসেবে কাজটা কি কঠিন মনে হয়? প্রশ্ন শুনে যেন একটু অবাকই হলেন, ‘কাজ তো দিব্যি করেই যাচ্ছি। নারী বলে আলাদা করে দেখার কিছুই নেই। নিজের মেধা আর যোগ্যতা দিয়েই তো আমি এখানে এসেছি। আমার মনে হয়, নারীদের আলাদা করে দেখার দিন শেষ হয়ে গেছে। নিজের মনোবল থাকলেই যেকোনো মেয়ে সেটার প্রমাণ দিতে পারবে।’
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে ঢাকায় ভর্তি হন এইচএসসিতে। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন ২০১০ সালে। পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়ার পর নিজের চেয়ে যেন পরিবারের অন্যরাই বেশি খুশি হলেন। এর মধ্যে মা মাহবুবা হোসেনের অনুপ্রেরণা ছিল সবচেয়ে বেশি। নিজেও উৎ সাহ নিয়ে যোগদান করলেন চাকরিতে। দেশের জনগণের জন্য সরাসরি কাজ করতে পারাটা বেশ পছন্দ করেন মাহরুফা হোসেন। চাকরির প্রথম দেড় বছর ডিএমপির তেজগাঁওয়ের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগে কাজ করেছেন। এই সময় অনেক নারীর আইনি সহায়তা দেওয়া এবং হারানো শিশুদের তার অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজটা অনেক আনন্দ নিয়ে করতেন সহকর্মীদের সঙ্গে।
মাহরুফা হোসেন বলেন, ‘দেশের জনগণকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়াই পুলিশের কাজ। আমার বর্তমান ডিভিশনে সহকর্মীদের সঙ্গে জনগণের জন্য সুন্দর একটি বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছি। দেশের প্রতি অনেক বেশি দায়বদ্ধতা আমার। কারণ, সারা জীবন সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেছি। এগুলো তো জনগণের অর্থেই পরিচালিত। এখানে মানুষের জন্য, দেশের জন্য কাজ করতে পারার আনন্দ সহকর্মীদের সঙ্গে ভাগ করে নিই আমরা।’
অনেক সময় রাস্তায় দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় ককটেল ফুটল, অথবা মারামারি শুরু হলো। সেই সময়গুলোতেও কাজ করতে হয় তাঁকে। সাধারণ মানুষের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে সতর্ক থাকতে হয়। তাই প্রতিটি মুহূর্তকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে কাজ করে চলেছেন মাহরুফা হোসেন।
লেখা: হাসান ইমাম ও মো: রুবেল
source: Prothom Alo
-
ছবিতেই তুলে ধরি দেশকে
সুলেখা চৌধুরী, চিত্রশিল্পী
নিজের চারপাশের বিষয়গুলোকেই তুলে ধরেন ছবির ক্যানভাসে। তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলেন বাংলাদেশের নারীদের। এই শিল্পীর নাম সুলেখা চৌধুরী।
ঢাকার কদমতলী হাইস্কুল থেকে এসএসসি আর বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি শেষ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। ছোটবেলার শখে আঁকা ক্যানভাসকে এখানেই জড়িয়ে নেন নিজের সঙ্গে। চারুকলা থেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন ২০০৩ সালে। এর পর থেকে কাজ করছেন একজন ফ্রিল্যান্স চিত্রশিল্পী হিসেবে।
ছবি আঁকায় সুলেখা চৌধুরীর পছন্দের বিষয় প্রিয় বাংলাদেশের বিভিন্ন দিক। এর মধ্যে নারীই মুখ্য।
সুলেখা চৌধুরী বলেন, ‘আমার জন্ম হয়েছে একটা স্বাধীন দেশে। তবে নানা ধরনের মিথ্যা ইতিহাস বিভিন্ন সময়ে পড়তে হয়েছে। এই সময় পরিবার থেকে জেনেছি আসল সত্য। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করা এই দেশ নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে প্রতিদিন। তাই নিজের সবচেয়ে ভালোবাসার জায়গায় কাজ করছি প্রিয় দেশকে নিয়ে। নিজের পরিশ্রম দিয়ে এঁকে চলেছি আপন আনন্দে।’
দেশটাকে ভালোবাসেন বলেই সব সময় তাঁকে ভাবায় দেশের নানা বিষয়। তবে আশাহত হন না—‘আমার বিশ্বাস, এই দেশ ভবিষ্যতে হয়ে উঠবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যুদ্ধাপরাধমুক্ত একটি সুন্দর দেশ। যেখানে অপার সম্ভাবনাগুলো জেগে উঠবে মাথা উঁচু করে।’
বর্তমানে কাজ করছেন ছাপচিত্রের ওপর। এখানেও বিষয়বস্তুতে আছে বাংলাদেশের নারী।
Source: Prothom Alo
-
বিনা মূল্যে আইনি সহায়তা দিতে চাই
তারানা আফরোজ, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
ছোটবেলা থেকেই আইনজীবী হওয়ার ইচ্ছে ছিল তারানা আফরোজের। আর তাই দেশের গণ্ডি পেরিয়ে উড়ে যান যুক্তরাজ্যে। সেখান থেকে এলএলবি শেষ করেন। এরপর আইনে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ও ব্যারিস্টার ইন ল (কল টু দ্য বার) শেষ করে ফিরে আসেন নিজের দেশে। কারণ হিসেবে তারানা জানান, ‘বৈচিত্র্যময় জ্ঞানের জন্যই দেশের বাইরে পড়তে গিয়েছিলাম। তবে সেখান থেকে শেখা বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন দেখতাম বাংলাদেশে। আর তাই পড়াশোনা শেষ করে নিজের দেশে ফিরে বসলাম বার কাউন্সিলের পরীক্ষায়। এখানে অ্যাডভোকেট হিসেবে নিবন্ধনের পর শুরু হলো আমার আইনি লড়াই।’
তারানা আফরোজ এখন কাজ করছেন হাইকোর্ট ডিভিশনে। নিজের প্রতিটি মামলায় তিনি সমানভাবে লড়াই করেন মক্কেলের জন্য। সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতেই কাজ করেন সব সময়। নিজের কাজটাকে তারানা কতটা ভালোবাসেন সেটা বোঝা গেল তাঁর মুখোমুখি হওয়ার পরই।
১৩ ডিসেম্বর বিয়ের পিঁড়িতে বসে এক দিন পরই (১৫ ডিসেম্বর) চলে এসেছেন চেম্বারে।সেখানেই কথা বলতে বলতে জানালেন, কয়েক দিনের মধ্যে দেশের বাইরে যাবেন। তাই জরুরি বেশকিছু কাজ শেষ করে রাখছেন। বলেন, ‘শুধু পরিচিত নয়, অপরিচিতরাও যেকোনো সমস্যায় পড়লে ফোন করেন। তখনই তাঁকে আইনি সহায়তা বা পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, অনেকেই সঠিকভাবে সব ধরনের আইন জানেন না। নিজের ওপর নির্যাতন হলেও যে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন, সেটা সব নারীর জানা দরকার। এসব বিষয়ে কাউকে সাহায্য করতে পারলে বেশ ভালো লাগে।’
তা ছাড়া, বিপদের সময়েই তো সাধারণত মানুষ আইনের আশ্রয় নিতে আসে। তাই তার পাশে দাঁড়াতে পারলে আলাদা একটা ভালো লাগা কাজ করে।
সমাজের সব ধরনের মানুষকে আইনি সহায়তা দিতে পারলেই তৃপ্ত হন এই আইনজীবী। দেশের মানুষের উপকার করা মানে তো দেশের জন্যই কাজ করা। আর এই দেশকে ভালোবাসেন বলেই তাঁর ভাবনায় থাকে দেশের মানুষ। আন্তর্জাতিক কোনো আইনি লড়াই হলেও দেশের জন্য কাজ করতে চান নিজের স্থান থেকে। জানালেন, ‘ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষের জন্য বিনা মূল্যে আইনি সহায়তা সেবাকেন্দ্র চালু করতে চাই।
Source: Prothom Alo
-
Lots of like...