Daffodil International University
Faculty of Allied Health Sciences => Public Health => Topic started by: Jeta Majumder on April 20, 2014, 05:00:12 PM
-
ব্লাড প্রেসার (Blood pressure) নামে অতিপরিচিত রোগটিই আসলে হাইপারটেনশন। হাইপারটেনশন রোগটি সকলের না থাকলেও সুস্থ্য অসুস্থ প্রতিটি মানুষেরই ব্লাড প্রেসার থাকে, আসলে হৃদপিন্ড রক্তকে ধাক্কা দিয়ে ধমনীতে পাঠালে ধমণীর গায়ে যে প্রেসার বা চাপ সৃষ্টি হয় তাই হলো ব্লাড প্রেসার। এই চাপ এর একটি স্বাভাবিক মাত্রা আছে আর যখন তা স্বাভাবিক মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তখনি তাকে বলা হয় হাইপারটেনশন (Hypertension) বা উচ্চ রক্তচাপ।
স্বাভাবিক প্রেসারঃ ধরে নেয়া হয় পূর্ণ বিশ্রামে থাকা একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তের চাপ বা ব্লাড প্রেসার হবে ১২০/৮০ মিলি মিটার পারদ চাপ। এক্ষেত্রে ১ম সংখাটি (১২০) দ্বারা হার্ট এর সংকোচনের সময় ধমণীর ব্লাড প্রেসার এবং ২য় সংখাটি দ্বারা হার্ট এর প্রসারণের সময়ে ধমণীর ব্লাড প্রেসার কে নির্দেশ করা হয়। এই ১ম প্রেসার সংখাটি যা সিস্টোলিক প্রেসার নামে ডাকা হয় সবসময়ই ২য় টি থেকে বেশি এবং এর স্বাভাবিক মাত্রা ১৪০ মি.মি এর নীচে এবং ৯০ মি.মি এর উর্ধে । অন্য দিকে ২য় প্রেসার সংখাটি কে ডায়াস্টোলিক প্রেসার ডাকা হয় এবং এর স্বাভাবিক মাত্রা ৯০ মি.মি এর নীচে এবং ৬০ মি.মি এর উর্ধ্বে। তাই যখন উপড়ের প্রেসার টি ১৪০ বা তার উর্ধ্বে অথবা নীচের প্রেসার টি ৯০ বা তার উর্ধ্বে পাওয়া যায় তখন ধরে নিতে হবে রোগীর ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক এর উর্ধ্বে অর্থাৎ তিনি উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন রোগে ভূগছেন। তবে বয়সের উপর ভিত্তি করে এই মাত্রার কিছুটা তারতম্য হতে পারে।
রোগের কারণঃ হাইপারটেনশন রোগের শতকরা ৯৫ ভাগ কারনই বলতে গেলে এখনো সঠিকভাবে জানা হয়ে উঠেনি এবং একে বলা হয় এসেনশিয়াল হাইপারটেনশন, বাকী ৫% হলো সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন এর মধ্যে কিছু আছে কিডনির রোগ, কিছু হরমোনের সমস্যা জনিত রোগ তাছাড়া ধমনীর রোগ, অসুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং গর্ভাবস্থা ও এর জন্য দায়ী হতে পারে।
লক্ষনঃ রোগের প্রাথমিক অবস্থায় অনেক সময়ই রোগীর কোনো অভিযোগ থাকেনা। তবে কিছু রোগী মাথার পিছনের দিকে ব্যাথা, বেশী প্রসাব হওয়া, হঠাৎ হঠাৎ ঘেমে যাওয়া, বুক ধড়ফর করা ইত্যাদি উপসর্গ অনুভব করতে পারে। ব্লাড প্রেসার খুব বেশী হলে উপসর্গ ও বৃদ্ধি পেতে পারে। দীর্ঘ দিন ব্লাড প্রেসার অনিয়ন্ত্রিত থাকলে তা বিভিন্ন গুরুত্ব পূর্ণ অংগের স্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে এবং সেই জাতীয় সমস্যা নিয়েও রোগী অসুস্থ্য হতে পারেন।
রোগ নির্ণয়ঃ ব্লাড প্রেসার মাপার যন্ত্র দিয়ে মাপলে কারো প্রেসার যদি বেশি পাওয়া যায় সেটাই হাইপারটেনশন নির্ণয় করার জন্য যথেস্ট। তবে দীর্ঘ দিন অনিয়ন্ত্রিত হাইপারটেনশন বিভিন্ন গুরুত্ব পূর্ণ অংগের ক্ষতির কারণ হয়ে থাকলে সেসকল অংগের কার্যকারীতা দেখার পরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে।
জটিলতাঃ অনিয়ন্ত্রিত হাইপারটেনশন ষ্ট্রোক, এনকেফালোপ্যাথি, চোখের রেটিনার প্রভুত ক্ষতি সাধন ও অন্ধত্ব, হৃদপিন্ডের দেয়ালের পুরুত্ব বাড়ানো, হার্ট এটাক ও হার্ট ফেইলুর,কিডনী ফেইলুর সহ বিভিন্ন জটিল জটিল রোগের কারণ হতে পারে।
চিকিৎসাঃ হাইপারটেনশন চিকিৎসার প্রথম স্তরটিই হলো জীবনযাত্রার ধারা পরিবর্তন (lifestyle modification) করা। এর মধ্যে আছে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা- যেমন খাবারে লবনের পরিমান কমিয়ে আনা, আতিরিক্ত শর্করা বা চর্বি জাতীয় খাবার না খাওয়া, ধুমপান বা এলকোহলের অভ্যাস থাকলে তা সম্পুর্ণ রুপে ত্যাগ করা, শরীরের বাড়তি ওজন কমানো, ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রন করা, নিয়মিত হাল্কা শরীরচর্চা করা, উপাসনা বা প্রার্থনা করা ইত্যাদি। অনেক সময় শুধু এইসব পরামর্শ মেনে চলার মাধ্যমেই হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রন করা যায়। এর পরেও যদি নিয়ন্ত্রন করা না যায় সেক্ষেত্রে কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শঅনুযায়ী অসুধ খাওয়া লাগতে পারে। কার্ডিওলজিস্টগণ সাধারনত ডায়েরুটিক্স, বিটা ব্লকার, ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার, এসিই ইনহিবিটর, এআরবি ব্লকার, আলফা ব্লকার বা মস্তিস্কের কেন্দ্রে কাজ করে প্রেসার কমানোর এমন অসুধ গুলো বিভিন্ন মাত্রায় রোগীর অবস্থা অনুযায়ী ব্যবহার করে উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রন করেন।