Daffodil International University
Entertainment & Discussions => Sports Zone => Topic started by: maruppharm on May 26, 2014, 12:11:56 PM
-
যেন ক্রমশ প্রকাশ্য কোনো রোমাঞ্চকর উপন্যাস। বিশ্বকাপের আগের ১৯টি আসর নিয়ে কত গল্পগাথা। প্রথম আলো অনলাইনের নতুন এই ধারাবাহিকে ফিরে দেখা হবে বিশ্বকাপের আগের আসরগুলো। আজ থাকছে ১৯৫৮ বিশ্বকাপ—
‘আমি আমার জীবনের সেরা ওয়ান-টুটা ডোনার সঙ্গে খেলেছিলাম।’ পেলের বাবা নাকি কৌতুক করে এমনটাই বলেছিলেন। আর সেই ‘ওয়ান-টু’র ফসল হিসেবেই ১৯৪০ সালে জন্ম এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তোর! পেলে নামেই যাঁকে চিনেছেন সবাই। আর নিজেকে চেনানোর এই কাজটা পেলে প্রথম করেছিলেন ১৯৫৮ বিশ্বকাপে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে।
বিশ্বকাপটা হতে পারত জাস্ট ফন্টেইনের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই বিশ্বকাপটি পেলের আবির্ভাবের বিশ্বকাপ হিসেবেই মনে রেখেছে সবাই। ১৯৪০ নয়, আসল ‘পেলে’র জন্ম ১৯৫৮ সালেই!
সেবার ফুটবলের বিশ্ব আসর সুইডেনের মাঠে। ২৪ বছর পর মূল পর্বে ফিরেছিল আর্জেন্টিনা। যদিও প্রথম আসরের রানার্স আপদের ফেরাটা সুখকর হয়নি। তিন ম্যাচে ১০ গোল হজম করে ফিরতে হয়েছিল দেশে। সোভিয়েত ইউনিয়নের সেবারই প্রথম বিশ্বকাপের মাঠে নামা। বাছাইপর্বে না টেকার একমাত্র বাজে রেকর্ডটা ইতালি করেছিল সেবারই।
সেবারে ব্যাক বেঞ্চারের কাতারে ছিল উরুগুয়ে, স্পেন আর বেলজিয়ামের মতো দল। আর উড়ছিল ফ্রান্স। ফন্টেইন যে অবিশ্বাস্য ফর্মে ছিলেন। প্যারাগুয়ের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকসহ গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচেই ৬ গোল। মাঝে গ্রুপে দ্বিতীয় হওয়া যুগোস্লাভিয়া অবশ্য কিঞ্চিত্ ধাক্কা দিয়েছিল ফ্রান্সকে, ৩-২ গোলে পরাজয় উপহার দিয়ে। তবে গ্রুপ পর্বে অঘটন বলতে গেলে প্লে-অফে ওয়েলসের সঙ্গে আগের বিশ্বকাপের চমক হাঙ্গেরির হেরে গিয়ে গ্রুপ পর্বেই বিদায়। অবশ্য হাঙ্গেরির সোনালি প্রজন্মের কেউই ছিলেন না সেই দলে। আগের বিশ্বকাপের দল থেকে এবারের দলে ছিলেন মাত্র একজন, তা-ও গোলরক্ষক।
কোয়ার্টার ফাইনালেও যথারীতি চলল ফন্টেইনের গোল-বন্যা। উত্তর আয়ারল্যান্ডের জালে চারবার বল জড়িয়ে সোজা সেমিফাইনালে ফ্রান্স। আর দুটো বাধা পেরোলেই প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন জুলে রিমের দেশ।
কিন্তু শুধু ফ্রান্স নয়, উড়ছিল যে ব্রাজিলও। সবচেয়ে বড় কথা, ফুটবল বিশ্বই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল সম্রাটের অভিষেকের। অবশেষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বিশ্বকাপ অভিষেক হলো পেলের। তবে অভিষেকটা স্মরণীয় করে রাখার মতো কিছু করলেন না। করার প্রয়োজনই আসলে পড়ল না। ভাভার জোড়া গোল ব্রাজিলকে পৌঁছে দিল শেষ আটে।
নকআউট পর্ব থেকেই পেলের জাদু শুরু। ওয়েলসকে হারাতে ব্রাজিলকে বেগ পেতে হলো যথেষ্ট। ৬৬ মিনিটে পেলের একমাত্র গোলই উদ্ধার করল। তবে চোখেমুখে তখনো কিশোরের ঘোর লেগে থাকা পেলের আসল জাদু দেখল ফ্রান্স। দেখতে বাধ্য হলো। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ফ্রান্স বনাম ব্রাজিল। ফন্টেইন বনাম পেলে। সেই লড়াইয়ে ফন্টেইন হারলেন ১: ৩ গোলে। আর ফ্রান্স হারল ৫-২ ব্যবধানে। ফন্টেইনের একমাত্র গোলের জবাবে পেলে বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই করলেন হ্যাটট্রিক।
এই বালক-বালক চেহারার তরুণটি যে বড় মঞ্চেই নিজেকে মেলে ধরতে ভালোবাসেন, সেটা টের পেল স্বাগতিক সুইডেনও। ফাইনালে পেলে করলেন জোড়া গোল। দুই গোল করেছেন ভাভাও। ১৯৫০-এর দুঃখ মুছে দিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতল ব্রাজিল। তখনো জানা যায়নি, ইউরোপে আয়োজিত বিশ্বকাপে আমেরিকা মহাদেশের কোনো দলের সেটাই হয়ে থাকবে প্রথম ও শেষবারের শিরোপা।
সতেরো বছরের বিস্ময়-বালক ততক্ষণে বিশ্বকাপজয়ী দলের কনিষ্ঠতম সদস্য, বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল করা কনিষ্ঠতম ফুটবলার। অন্যদিকে মাচের প্রথম গোল করেই অবশ্য সুইডেন দলের নিলস লিডহম ফাইনালে গোল করা জ্যেষ্ঠতম খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। দুই দল মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি গোল হওয়া ফাইনালের রেকর্ডও হলো। ফন্টেইনে করা ১৩ গোলও এখনো এক আসরে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড হয়ে আছে।
কিন্তু সব ছাপিয়ে আলোর মঞ্চে কেবল এক তরুণ। যে তরুণকে ব্রাজিলিয়ানরা ভালোবেসে ‘ও রেই’ নামে ডাকবে আর কিছু দিনের মধ্যে। ১৯৫৮, পেলের আবির্ভাবের বছর।
-
Excellent Post :) :)